দেবী পর্ব ৩৬ + ৩৭

0
274

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৬ঃ

নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে আগামীকাল সিরাজী মঞ্জিলের মানুষজন। দুলাল সিরাজী লতিফ আর এক প্রহরী রফিক কে দিয়ে মহীবুলের লাশ কাকনের কক্ষ থেকে সরিয়ে নেয়। তারপর সিরাজী মঞ্জিলের পিছনের দিকে লাশ ফালিয়ে রাখা হ্য। লতিফ আর রফিক কে স্পষ্ট ভাবে দুলাল সিরাজী জানিয়ে দেয় তারা কেউ যেন এগুলা পাচকান না করে। দুলাল সিরাজীর নিরব শাসানি তে দুজন ই স্বীকার করে তারা কাউ কে কিছুই বলবে না। তারপর এক প্রহরী কে পরকল্পনা মাফিক শিখিয়ে দেওয়া হয় সে যেন বলে লাশ এখানেই ফেলে রাখা হয়েছিল। সকালে ফজরের নামাজের পর উঠোন এবং বাগান ঝাড় দেওয়ার সময় তারা মহীবুল কে দেখতে পেয়েছে।

দুলাল সিরাজীর কথা শুনে লতিফ আর রফিক দুজনেই অবাক হয়। অন্দরমহলের গোপন কথা জানার আগ্রহ হয় তাদের মনে। কে খুন করলো মহীবুল কে। তবে তারা মুখে প্রকাশ করে না। মহীবুলের লাশ দেখে তারা দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। কি ভয়ংকর অপঘাতে মৃত্যু।

সকালে পরিকল্পনা মতো সিরাজপুরে জানানো হয় যে আজ ও সিরাজী মঞ্জিলে খুন হয়েছে। আর সেই খুনটি হয়েছে মহীবুলের। জানানো হয় মহীবুলের লাশ পাওয়া গেছে সিরাজী মঞ্জিলের পিছনে। সিরাজপুর বাসী মৃত্যুর খবর শুনেই ছুটে আসে সিরাজী মঞ্জিলে। থানা থেকে পুলিশ মরার খবর শুনে সকালেই ছ আসে । এসে কিছু জিজ্ঞাসা করে চলে যায়। আর মহীবুলের লাশ ও নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। দুলাল সিরাজী বাধা দেয় না।লেখিকা স্রোতস্বীনি। কিন্তু সকলের অগোচরে ঠিক ই পুলিশকে জানিয়ে দেয় লাশ যেন জোহরের আগেই দেওয়া হয়। দুলাল সিরাজীর কথার বরখেলাপ তারা করতে পারে না। তাই সকল কাজ শেষে দিয়ে যাওয়া হয় এবং লাশ ধুয়ে কাফন করে রাখা হয়। জানাজার উদ্দেশ্যে যখন কাধে তুলে নিয়ে যাবে ঠিক তখন ই রুহুল এসে হাজির হয়।

সামিয়ার থেকে সকল ঘটনা শুনে রাগে রুহুলের শরীরের রগ জেগে উঠেছে। রুহুল নির্বাক হয়ে গেছে মহীবুলের স্পর্ধা দেখে। তবে খারাপ লাগছে কাকনের জন্য। কত বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল তার স্ত্রী। যেখানে সে স্বামী হয়েই কাকনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো জোর করে না সেখানে তার অনুপস্থিতিতে তার বিবিজানকে মহীবুল জোর করেছে। রুহুলের রাগে চোখ যেন গরম হয়ে গেছে। রুহুল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো, ” আমার বিবিজান কোথায়? ”

সামিয়া সুভার দিকে চাইলো। তারপর বললো, “গোসলঘরে গোসল করতে গেছে। বড়াম্মা নিজে কইছে গোসল করতে। ”

রুহুল কক্ষ থেকে বেরিয়ে সোজা নিচতলায় গোসল খানার সামনে গেলো। দেখলো তড়িপা সেখানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো পাহারা দিচ্ছে কাকন কে। রুহুল কে দেখেই তড়িপা সেখান থেকে সড়ে এলো। রুহুল গোসল খানার দরজা খুলে সরাসরি ভিতরে ঢুকলো। যেয়ে কাকনের বিদ্ধস্ত রুপ দেখলো। টিউবওয়েল কাছে বসে আছে চুপটি করে কাকন। গায়ের শাড়িটি কেমন হয়ে আছে। চুলের বেনী আধখোলা অবস্থায়। রুহুল এগিয়ে যেয়ে কাকনের কাছে বসলো। কাকনের গালে হাত রেখে বললো, “বিবিজান!”

রুহুলের কন্ঠ পেয়েই যেন কাকনের জান ফিরে এলো। কাকন মুখ উঠিয়ে রুহুল কে দেখেই ঠোঁট উল্টিয়ে কাদতে শুরু করলো। রুহুল কাকন কে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাকন যে কাপছে রুহুল তা ঠিক ই উপলব্ধি করলো। রুহুল কাকনের পুরো মুখে চুমু খেলো। কাকন রুহুলের পিঠের শার্ট ঘামচে ধরে জড়িয়ে আছে।কাকন বললো, ” বলেছিলাম আমাকে রেখে যাবেন না। মেজো, মেজো ভাই আমাকে আমাকে অপবিত্র করে… ”

তার আগেই রুহুল ঠোঁটে হাত রেখে বাধা দিয়ে বললো, “চুপ , কিচ্ছু হয় নি আপনার। কিচ্ছু হয় নি। ”

–“না উনি আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছে।”
এই বলে কাকন নিজের দুহাত মেলে ধরলো রুহুলের সম্মুখে। শাড়ির আচল নামিয়ে দেখালো গলায় ও বেশ খানিকটা আচরের দাগ।রুহুল আলতো করে হাতের আর গলায় লাল হয়ে যাওয়া দাগে হাত রাখলেন। ফর্সা হাতে নখের আঁচড় লেগে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

রুহুল কাকন কে নিজের বুকে নিয়ে বললো, ” কাদবেন না,, কিচ্ছু হয় নি। আপনি আমার পবিত্র ফুল, পবিত্রই আছেন। নর্দমার কীট গায়ে পড়লেই কেউ অপবিত্র হয় না। আপনি আমার কাছে সারাজীবন সদ্য ফোটা ফুল ই থেকে যাবেন। ওর মতো পশুর জন্য নিজেকে অপবিত্র মনে করবেন না। ”

রুহুল নিজ হাতে কাকন কে গোসল করিয়ে দিলো।তারপর কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য গোসলখানা থেকে বের হলো। কাকন কে দেখেই দাদিমা অভিশাপ দিতে শুরু করলো। সেই সাথে নানা গালি গালাজ করলো। অপয়া,কুফা আরো নানা কিছু বলতে লাগলো। সিরাজপুরের সবাই কটু কটুবাক্য শুনালো। ভাবতে লাগলো বোধহয় কাকন আসলেই অপয়া যার কারনে আসার পর দুজন যুবক মরলো।

রুহুল কোনো কিছু না বলেই কাকন কে নিজের সাথে করে নিয়ে কক্ষে নিয়ে গেলো। সুভা এখনো সেখানে বসে আছে। রুহুল কাকন কে বিছানায় শুইয়ে দিলো। গায়ে কাথা ছেটে দিয়ে বললো, “আপনার কিচ্ছু হয়নি। আপনি বিশ্রাম করুন। ”

কাকন রুহুলের হাত টেনে ধরলো। রুহুল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাকনের হাতে হাত রেখে বললো, “আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। ”
কথাটি বলে রুহুল কক্ষ থেকে বের হবে তখন সুভা ডাকলো,”খোকা। ”

রুহুলের পদযুগল থেমে গেলো। কত বছর পর তার মা এত সুন্দর শান্ত সুরে ডাকলো। রুহুল পিছে ফিরে তার মায়ের দিকে তাকালো। সুভা আবারো বললো ” মহীবুল তার শাস্তি পেয়েছে খোকা। এই সিরাজী মঞ্জিলে আর কোনো খুন চাই না আমি। ”

–” আপনি শাস্তি দিয়েছেন আম্মা। আমার স্ত্রীর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি তো দেই নি। ”

–” সে মৃত তাকে ক্ষমা করে দাও। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া তাকে দাফন করো। আর এটা আমার আদেশ। ”

–“আম্মা,, এত কিছুর পরেও আমি চুপ থাকবো। মহীবুলের লাশ হয়তো দাফন করলে শেষ হবে। কিন্তু আপনার পাশে শুয়ে থাকা আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে তার ভাগিদার কে হবে। কাল রাতে যদি আপনি না আসতেন আজ মহীর জায়গায় আমার স্ত্রী থাকতো।
হয় মহী হত্যা করতো না হয় আমার স্ত্রী নিজে আত্মহত্যা করতো। ”

–“বললাম তো লাশ দাফন করে আয়। কাকনের এখন সব চেয়ে বেশি তোকে প্রয়োজন।”

–” আমি ভেবে পাচ্ছি না ওর লাশ আপনি কি করে নিয়ে যেতে দিলেন আম্মা। আর আমায় বলছেন ওকে শান্তি পুর্ণ ভাবে দাফন করতে ওর মতো পাপীর লাশ দাফন হতে দেওয়া ও পাপ।”

–” হ্যাঁ ও পাপী।পাপ করেছে কাকনের সাথে।শাস্তি ও পেয়েছে।ভয়াবহ মৃত্যুর চেয়ে বড় শাস্তি কি হতে পারে।”

–” মৃত্যু হলো মুক্তি যা মানুষকে জগৎ সংসারের সবচেয়ে বড় মুক্তি দেয়।মৃত্যু কখনো শাস্তি
হতে পারে না। ”
_______________________

অন্যদিকে রুহুল অন্দরমহলে যাওয়ার পর পর ই দুলাল সিরাজী সকল মানুষদের লাশ মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দেয়। অজ্ঞতা সকলেই লাশ নিয়ে মসজিদে যায়।
নামাজ শেষে মহীবুল কে দাফন করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় গোরস্থানে। সেখানেই হেলালের কবরের পাশে মহীবুলের কবর খোদাই করা হয়। মহীবুলের লাশ কবরে নামানো হয়। দুলাল সিরাজী সবার আগে মাটি দেবে তার আগেই রুহুল বাধা দেয় বলে, “দাড়ান দাদাজান। ”

রুহুলের ডাকে দুলাল সিরাজীর হাতের মাটি পড়ে যায়। সিরাজপুরের অধিকাংশ মানুষই এখানে বিদ্যমান। দুলাল সিরাজী বার বার আল্লাহর নাম নিচ্ছে রুহুল যেন মহীবুলের হত্যার বিবরণ এখানে উল্লেখ না করে।
রুহুল দুলাল সিরাজীর সম্মুখে এসে ডান হাতের মুঠোয় মাটি নিলো। তারপর বললো, ” সবার আগে আমি মহীবুলকে মাটি দেবো।”

রুহুলের এমন শান্ত রুপ দেখে ভয় যেন আরো ঘিরে ধরলো জামাল সিরাজীর। জামালের অন্তরাত্মা কেপে উঠলো। রুহুল এক মুঠ মাটি দিলো। তারপর ধীরে ধীরে সকলেই মাটি দিলো।
মাটি দিয়ে সকলেই মঞ্জিলে ফিরে এলো। মঞ্জিলে এসে রুহুল সবার আগে নিজের কক্ষে গেলো।
কাকন ঘরে ঘুমিয়ে আছে। আর তার পাশেই সামিয়া রয়েছে। লেখিকা স্রোতস্বীনি। সামিয়া কাকনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রুহুলকে দেখে সামিয়া আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। রুহুল কাকনের পাশে আধশোয়া হয়ে বসে কাকনের মাথায় হাত রাখলো। কপাল অত্যধিক গরম। রুহুল গলায় হাত দিয়ে দেখলো বেশ জ্বর। রুহুল একটা বাটিতে পানি আর কাপড় নিয়ে জলপট্টি দিয়ে দিলো।

ঠান্ডা পানি পেয়েই কাকনের ঘুম যেন হালকা হয়ে গেলো। কাকন জ্বরের ঘোরেই কথা বলছে,” আম্মা, আম্মা” কাকন বার বার কাপছে। কাকনের এমন অস্থিরতা রুহুলের সহ্য হচ্ছে না। তার প্রাণবন্ত স্ত্রী কে এমন অবস্থায় দেখে রুহুলের খুব কষ্ট হচ্ছে। না রুহুলের দ্বারা এ কষ্ট সহ্য করা সম্ভব না।

রুহুল কাকনের গায়ের কাথা ঠিক করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। নিচে আসতেই কান্নার আওয়াজ। মহীবুলের মায়ের কান্না দেখে রুহুলের এই মানুষ টার জন্য আফসোস হচ্ছে। যে ছেলে কোনোদিন মাকে ভালো অব্দি বাসলো না সেই ছেলের জন্য তার মা দিব্যি কেদে যাচ্ছে। রুহুল সুভার দিকে তাকালো ভাবলো সে মরলে কি তার আম্মা ও এভাবে কাদবে হয়তো কাদবে আবার হয়তো না। তার মা যে সিরাজী মঞ্জিলের পুরুষদের ঘৃণা করে। আর রুহুল ও তো সিরাজী মঞ্জিলের পুরুষ ই বটে।

রুহুল দুলাল সিরাজীর খোজ করলো। শুনলো দুলাল সিরাজী ভোজন কক্ষে খাচ্ছে।
রুহুল ভোজন কক্ষে যেয়ে দুলাল সিরাজীর পাশেই বসলো। দুলাল সিরাজীর খাবার যেন গলায় আটকে গেলো। দুলাল সিরাজী পানি দিয়ে খারাব গিললো। বললো, “রুহুল বইসো খাইয়া নেও তুমি। সেই কখুন ঢাকা থিকা আইছো।”

রুহুল একটি গ্লাসে পানি ঢেলে পান করলো তারপর বললো, ” আপনাকে দেখে সত্যিই খুব অবাক হই দাদাজান। এতটা অমানবিক কিভাবে হতে পারেন? ”

–” রুহুল মুখ সামলায়া কথা কও। ভুইলা যাইয়ো না তুমি কার লগে কথা কইতাছো। আমি অমানবিক?”

–“আমি ভুলিনি আমি কার সাথে কথা বলছি। আমি একজন মানুষ নামক অমানুষের সঙ্গে কথা বলছি যার কাছে নিজের বংশের নিয়ম জমিদারি সবার আগে।যার কাছে একজন মানুষের প্রাণের মুল্যও নেই।”

–” তুমি কি কইবার চাও? ”
–“আমার বলার মতো তো কিছু নেই দাদাজান। সব রাস্তা তো আপনি নিযে বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রী কে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার ছিল। কিন্তু আপনি সেটা করেন নি। ”

–” দেখো রুহুল আমি খাইয়া তোমার লগে সকল বিষয়ে কথা কইতাম। মহী যেইডা করছে সে তার সাজা পাইছে। তোমার আম্মায় নিজে তারে খুন করছে। এর পরেও আমার আর কি ই বা করার আছে কও? ”

–” আমার আম্মা ওকে শাস্তি নয় বরং আমার হাত থেকে রেহাই দিয়েছে। ওর শাস্তি যদি দিতে পারতাম অন্তত আমার রাগ কিছুটা উপশম হতো। কিন্তু আমি ব্যার্থ কারণ আমি মহিবুল কে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারলাম না।”

–“তাইলে কি তুমি ওরে কবর থিকা উঠাইয়া আইনা সাজা দিবার চাও?”

–“আল্লাহ তায়লা সেই ক্ষমতা আমায় দিলে অবশ্যই দিতাম। ”

–” রুহুল তোমার ভাই হয় মহী। নেশার ঘোরে ভুল কইরা ফালাইছিল তোমার আম্মায় খুন করছে তুমি কি চাও তোমার আম্মা জেলে যাইক। যদি না চাও তাইলে এই বিষয় গুলা ভুইলা যাও। ”

রুহুল অবাক হয়ে গেলো। দুলাল সিরাজী ঠিক আগের মতোই স্বার্থপর ই হয়ে আছে। কোনোদিন ও ঠিক হবে না।রুহুলেত দুর্বলতার সুযোগ নিলো।সুভা কে পুলিশে দিলে যে সে আরেক ঝামেলার সম্মুখীন হবে।রুহুল বললো, “আমার আম্মা কোনো অন্যায় করে নি।
বরং আপনার বংশের কুলাঙ্গার অন্যায় করেছে। ”

–” আমার বংশ আর তোমার বংশের পার্থক্য ডা কি হুনি। তুমিও তাও এই বংশধর। ”

–“এজন্যই তো আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় কারন আমি সিরাজী বংশের। নিজেকে কখনো এই রক্তের বাধন থেকে আলাদা করতে পারবো না।”

দুলাল সিরাজী খাওয়া শেষ করে হাত মুছলেন। রুহুলের হাত ধরে বললেন, “তোমার বিবির লগে অন্যায় হইছে। তোমার আম্মা খুন করছে। শোধবোধ হইয়া গেছে। এখুন আমার করার মতো কি আছে কও তুমি। আইজ হোক কাল হোক তোমারে আমি সব দিমু তুমি খালি কোনো অশান্তি কইরো না। ”

–” আপনার কি মনে হয় না এগুলো তে চাচাজানের হাত নেই। তার কুপুত্র তার অনুমতি ব্যাতিত আমার স্ত্রীর ঘরে আসার সাহস কখনোই পাবে না। আর আপনি আমি আপনার ছেলেকে ছেড়ে দেবো?”

–“হ্যাঁ দিবা। জামাল আর মহী দুজনেই নেশা করছিল। আর তোমার বউ অতি সুন্দরী দেইখা মহী নিজেরে সামলাইতে পারে নাই। পুরুষ মানুষ সুন্দরী মাইয়া দেখলে কেমন হয় জানোই তো। এখুন তুমি যদি অশান্তি করো তোমার আম্মার কথাও জানাজানি হইয়া যাইবো আর সেই সাথে কাকনের ও বদনাম হইবো। লোকে নষ্টা কইবো তোমার বউ রে। ”

রুহুল চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। বললো, “ঘৃণা হয় যে আপনি আমার দাদাজান। আম্মা ঠিক ই বলে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এই মঞ্জিলে বউ হয়ে আসা। এখানে মানুষ না জানো’য়াড় দের বাস।”

দুলাল সিরাজী রুহুল যাওয়ার পর পানি গিললো। তারপর শয়তানি হাসি দিলো। দুলাল সিরাজী ভালো করেই জানে রুহুলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তার আম্মা। আর এখন কাকন ও আছে। রুহুল কখনো চাইবে না তার আম্মা জেলে পচুক। আর কাকনের ও বদনাম হোক। কারন সবাই কাকনের ই দোষ দেবে।

চলবে….

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৭ঃ

দুলাল সিরাজী এবং পারিবারিক নানান বিষয়ে রাগ হয়ে থাকলেও রুহুল নামাজ বাদ দেয় নি। নামাজ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। তবে সিরাজপুরে বাধ্যতামূলক ভাবে নামাজ পড়তে হবে। রুহুল নামাজ পড়ে সিরাজী মঞ্জিলে এলো। এসে সোজা রন্ধন শালায় চলে গেলো। রুহুল কে দেখে রানু বললো, ” দাদাভাই কিছু লাগবো? ”
–“হ্যাঁ,একটি থালায় ভাত তরকারি বেড়ে দে। ”
–“ভোজন কক্ষে বহেন ওইখানেই দেই। ”
রুহুল চোখ গরম করে তাকাতেই রানু বললো, ” আ,আপনে একমিনিট দেন দাদাভাই। এহুনি দিতাছি। ”

রানু তাড়াহুড়া করেই ভাই বেড়ে দিলো। রুহুল আর সময় অপচয় করলো না। বারা ভাত তরকারি নিয়ে সোজা নিজের কক্ষে চলে গেলো।

রুহুল কাকনের জন্য খাবার নিয়ে এলো নিজের কক্ষে।নিজের ঘুমন্ত স্ত্রীর মুখ দেখলো। কাকনের ঘুমন্ত মুখ রুহুএল্র সবচেয়ে প্রিয়। রুহুল এক ধ্যানে সারাজীবন কাকন কে এমন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পারবে। রুহুল কাকন এর মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে করে ডাকলো। ওষুধ খাওয়াতে কাকন এর জ্বর এখন অনেক কমে গেছে। কাকন উঠে বসলো। রুহুল কাকনের কপালে একটা চুমু দিলো। গলায় আর জপালে হাত রেখে দেখলো জ্বর কমেছে কি না।রুহুল খাবার মাখিয়ে কাকনের মুখের কাছে নিয়ে বললো, “খেয়ে নিন বিবিজান। ”
–” আ,,আমি খাবো না। ”
–“খাবো না বললে তো হবে না,খেতে হবে। ”
–“আমার ক্ষিদে নেই।”
–“কিন্তু আমার আছে। ”
–“তাহলে আপনি খেয়ে নিন। এখনো খান নি কেন?”
–“আমার বিবিজান যেখানে না খেয়ে আছে সেখানে আমি খাই কি করে।”
–” আমার কথা বাদ দিন। আমার না খেলেও চলবে। আপনি খেয়ে নিন।”
–“আমার ভীষণ খুদা লেগেছে বিবিজান। ”
কাকন রুহুলের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো বললো, ” আপনার তো ক্ষিদে সহ্য হয় না। আপনি তবুও খাচ্ছেন না কেন। আমি কি খাইয়ে দেবো?”
–“না আমি আপনাকে খাইয়ে দেবো। ”
–“কিন্তু আমার তো খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
–” আর আপনি না খেলে আমি খাবো না। ”
রুহুলের এমন বাচ্চাসুলভ আচরণ গুলো দেখলে দুঃখের সময় ও কাকনের হাসি পায়। কাকন বললো,
–” বেশ আমি খাচ্ছি।”
–“হা করুন। আমি খাইয়ে দেবো। এখন থেকে আপনি অসুস্থ হলে আপনাকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো সকল দায়িত্ব আমার। এবার ফটাফট খেয়ে নিন। ”

কাকন ভাত গিলে বললো, ” এত কিছুর পর ও আমার যত্ন নিচ্ছেন।আমার জন্য আ..”
তার আগেই রুহুল বললো, “একটা কথা রাখবেন?”
–“কি? ”
–” যা হয়েছে সব ভুলে যান।মনে করবেন এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। আর আমার কাছে খারাপ সময় হলো দুঃস্বপ্নের মতো। রাতের পর যখন দিন হবে আপনার ঘুম ও ভেগে যাবে। তখন আর সেই দুঃস্বপ্ন থাকবে না।”

–“কিন্তু দুঃস্বপ্নের রেশ তো ঠিক ই থেকে যায়। ”
–“আপনার সকল দুস্বপ্ন আমাকে আপন করুক। আর আমার সকল সুস্বপ্ন গুলো আপনাকে ঘিরে হোক। আর আমার সকল স্বপ্ন পুরণ করতে হলে আপনাকে এগুলো ভুলে যেতে হবে। ”

–“আর আপনি কি ভুলে যেতে পারবেন? ”
রুহুল কাকনের মুখে আরেক লোকমা ভাত দিয়ে বললো, ” হ্যাঁ ভুলে গিয়েছি। কারণ এতে আপনার কোনো দোষ নেই। দোষ যদি কারো থেকে থাকে তাহলে সেটা মহীবুলের ছিল। আফসোস আপনার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি তাকে দিতে পারলাম না। আমায় ক্ষমা করবেন বিবিজান আমি আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারি নি। আমার ভুকের জন্যই আপনাকে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ”

কাকন মাথা নত করে বললো, ” আসলে কিছু কিছু মানুষ খারাপ কপাল নিয়েই পৃথিবীতে জন্মায়। আর তাদের মধ্যে আমি একজন।সব আমার কপালের দোষ”

রুহুল কাকনের মনমরা ভাব দূর করার জন্য বললো,
” আপনি কি সত্যিই খারাপ কপাল নিয়ে জন্মেছেন। ভেবে দেখুন যদি সত্যিই খারাপ কপাল নিয়ে জন্মাতেন তাহলে কি স্বামীর এত ভালোবাসা পেতেন। ”

–“উহু, ঠিক ই বলেছেন। আমি ভাগ্যবতী আপনার মতো স্বামী পেয়ে। এত ভালো কেন বাসেন আমায়? ”
–“এই উত্তর টা আপনি সেদিন পাবেন যেদিন আপনি
ও আমায় ভালোবাসবেন। একদম মন থেকে। ”
–” আপনিই বলুন না। ”
–“বলেছি তো!”
–“কি বলেছেন? ”
–“এই যে এই, উত্তর টা আপনি সেদিন পাবেন যেদিন আপনি আমায় ভালো বাসবেন। ”

কাকন রুহুলের মুখের দিকে চেয়ে মনে মনে বললো, ‘ভালো তো আপনাকে বাসি কিন্তু উত্তর তো পেলাম না। আপনি নিজে মুখেই বলুন না খুব জানতে ইচ্ছে করে।’

রুহুল নিজের মুখের ভাত খেয়ে হাসতে হাসতে বললো, ” আপনার সাহেব দেখতে ভালো সেটা সিরাজপুরের সকলেই জানে। এভাবে দেখলে নজর লেগে যাবে। শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের নজর খারাপ হয়। ”

কাকন রুহুলের কথায় লজ্জা পেলো। তারপর রুহুলের বুকে মাথা রেখে বললো, ” এত ভালো বাসবেন না আমায়। নিজের মৃত্যুর সময় আপনাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে আমার। ”

–“আপনাকে বলেছি না যে মৃত্যুর কথা বলবেন না। ”
–” সেদিন আমার সত্যিই মনে হয়েছিল, যে সত্যিই বোধহয় আপনাকে আর দেখা হবে না। ”

–” চুপ আর এগুলো শুনতে চাই না আমি। বললাম তো ভুলে যান দুঃস্বপ্ন হিসেবে।আর আপনার মৃত্যু যেন কোনো দিনো আমার আগে না হয় বিবিজান। আমি সহ্য করতে পারবো না। ”

–“আমি জানি না আমার মৃত্যু কবে হবে । শুধু অনুরোধ করবো মৃত্যুর আগে অব্দি আমায় এইভাবেই ভালো বেসে যাবেন। আপনার ভালোবাসা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ”

–“আপনার মৃত্যুর পরেও আমি আপনাকে একই ভাবে ভালো বেসে যাবো। আমার হৃদয় আমার হৃদয়হরণি ব্যাতিত আর কোনো নারী হরণ করতে পারবে না। ”

–“যদি কেউ হরণ করে তাহলে সেটা যেন আমার মৃত্যুর পরে হয়। আমি আম্মার মতো শক্তিশালী ধৈর্যশীল নারী নই।আপনাকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবো না”

–” আমার আম্মা সত্যিই ধৈর্যশীল বিবিজান। উনি আমার কাছে মহীয়সী নারী যিনি নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিল। অথচ বিনিময়ে কেবল ঠকে গেছে। ”

–” আম্মা ঠকেছে?”
–” একটা কথা কি জানেন যারা নিস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে যায় দিন শেষে তারাই ঠকে যায়। আমার আম্মাকেও বোধহয় খুব খারাপ ভাবে ঠকানো হয়েছিল”

-“আপনার কখনো প্রতিবাদ করেন নি, ঘৃণা জাগেনি ঠকানো ব্যক্তির প্রতি?”

–” নিজের জমদাতার সঙ্গে লড়াই করার সাধ্য আমার নেই। আর আমার আব্বা আমায় ভীষণ ভালোবেসেছে।নিজের সন্তানের প্রতি অবহেলা করে নি। উনি একজন ভালো পিতা, ভালো সন্তান, ভালো কর্তা ছিলেন তবে একজন ভালো স্বামী কোনোদিনো হতে পারেন নি। ”

–“শুধু সন্তান কে নয় সন্তান যে দেয় তাকেও ভালোবাসতে হয়।”

–” আমি ছোট থেকেই দেখতাম আমার আম্মা কাদছে। আম্মার চোখের পানি আমায় ভীষণ কষ্ট দিতো বিবিজান। সেদিন থেকেই ভেবে রেখেছিলেম আমার স্ত্রীর চোখে আমি কোনোদিন পানি আসতে দেবো না। আমি যেমন আমার আম্মার চোখের পানি দেখে সকলের অগোচরে কেদেছি আমি চাইনা আমার সন্তান কাদুক। এ বাড়িতে কোনোকিছুরই অভাব ছিল না তবে ছিল কেবল আমার আম্মার মুখের হাসির অভাব। ”

–” কখনো চেষ্টা করেন নি তার মুখের হাসি ফিরিয়ে দিতে। আম্মাকে তো অনেক ভালোবাসেন। ”

–” অনেক কিছু অজানা ছিল তো। তবে জানার পর হাসি ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। ”
___________________

আজ মরলে কাল দুদিন। গতকাল রাতে মহীবুল খু’ন হয়েছিল। আজ ই তা দুদিন। সকলে ভুলে গেলেও জামাল সিরাজী ভোলে নি। ইশার নামাজ পড়ে আবারো কবর দেখতে এসেছে। দিন দুনিয়ায় বোধহয় জামাল সিরাজী এই একজন কেই ভালোবাসতো।
জামাল সিরাজী মহীবুলের কবরে হাত বুলিয়ে কাদলো। বার বার বললো, “বাজান, আমার বাপ। আর আইবি না। আমারে আব্বা কইয়া ডাকবি না।”

জামাল কাদতে কাদতে সেখানেই শুয়ে পড়লো। একজন পুরুষ যতটাই খারাপ হোক না কেন নিজের সন্তান দের কাছে সেরা বাবা হয়ে থাকে। দুনিয়ার প্রত্যেক টা বাবাই সেরা বাবা। জামাল নিজের ছেলেকে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে রেখে প্রাসাদে কিভাবে থাকবে। জামাল কবরের পাশেই শুয়ে পড়লো ।

আকাশের চাঁদ টা আজ ঠিক তার মাথার উপরে। গতকাল ও বাবা ছেলে মিলে এই সময়ে নামাজ পড়ে সিরাজী মঞ্জিলে গিয়েছিল। রাতের খাবার খাওয়া, মদ খাওয়া একসাথেই করেছিল।অথচ আজ সেগুলো সব ই স্মৃতি হয়ে গেছে।
হঠাৎ জামাল পাশে কিছুর ছায়া দেখতে পেলো। জামাল নিজের বাম পাশে চেয়ে দেখলো দুলাল সিরাজী দাঁড়িয়ে আছে। দুলাল সিরাজীকে দেখে জামাল শোয়া থেকে উঠে বসলো।

দুলাল সিরাজী মহীবুলের কবরের কাছে দাড়িয়ে পশ্চিম মুখী হয়ে দুয়া করলেন।
তারপর জামাল সিরাজীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।বললেন,” চলো আইজ আমরা একসাথে মঞ্জিলে যাই।”

জামাল অবাক হলো তার বাবার কথা আজ এত সুন্দর কেন লাগছে। জামাল সিরাজী উঠে দাড়ালো। তারপর তার বাবার সাথে হাটা শুরু করলেন।
দুলাল সিরাজী যেতে যেতে জামালের দিকে চেয়ে বললেন, “তুমি মহীর আব্বা আর আমি তোমার আব্বা।তোমার মহীর জন্য খারাপ লাগতাছে হেইডা আমি বুঝি। তুমি যখন বাপ হইয়া নিজের সন্তানের জন্য চোখের পানি ফালাইতাছো সেই চোখের পানি দেইখা তোমার বাপ হইয়া আমার কষ্ট হইতাছে। যাই ই হোইক আমিও তোমার আব্বা।”

জামাল কিছু বললো না। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিরবে হাটতে লাগলেন।দুলাল সিরাজী আবারো বললো, ” তুমিও তো একজন বাপ। তোমারে যদি কইতাম তোমার দুই সন্তানের মধ্যে একজন রে খুন করতে তুমি কি হেইডা পারতা?”

–“আব্বাজান! ”
–” জানি পারতা না। কারণ একজন বাপ তার সকল সন্তান রেই সমান ভালোবাসে। আমিও আমার তিন সন্তান রে সমান ভালোবাসি। কিন্তু তুমি সারাজীবন ভাইবা গেছো আমি তোমারে ভালো বাসি নাই। ”

–“এইগুলা..
–“দাড়াও আমি কথা শেষ করি। তুমি বিলাল এর লগে হিংসা করছো যে ওরেই সব দায়িত্ব দিমু। কিন্তু তুমি তো জানো আমাগো বংশের নিয়ম মতো বড় পোলারে কর্তা বানান লাগে। তাই ওরে বানাইছিলাম। তুমি কও তুমি কি সব সামলানোর যোগ্য আছিলা। আর বিলাল কি তোমারে ফালাইয়া দিতো?”
–“ন,,না। ”

–” তাইলে জাইনা রাখো রুহুল ও দিতো না। রুহুল আমাগো বংশের যোগ্য পোলা। ও তোমারে, তোমার পোলারেও ফাইলায়া দিতো না। তুমি নিজের ভুলে একমাত্র পোলারে হারাইলা।এহোন এই গোরস্থানে বইসা কান্দা লাভ নাই।তোমার জন্য তোমার পোলা মরছে।”

জামাল আবারো কাদতে শুরু করলো। দুলাল সিরাজী বললো, ” সারাজীবন কানলেও কিছু জিনিস ফিরা আইসে না। এইভাবে কাইন্দো না। বরং রুহুলের থিকা মাফ চাও। সব ঠিক কইরা নেও। নিজের ভুল স্বীকার করো। শেষ বয়সে রুহুল ই এখুন তোমার ভরসা। ”

–“যার জন্য আমার মহী মরছে তাগো আপন কইরা নিতে পারুম না আমি আব্বাজান। ”

–” তাইলে বুড়া কালে কার ভরসায় থাকবা। আমি মইরা গেলে কে দেখবো তোমায়। আইজ ই তুমি আমার সাথে যাইবা যাইয়া সব ঠিক কইরা নিবা।মনে রাইখো তোমার আব্বাজান তোমার ভালো চায়।”

জামাল আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ পা চালিয়ে যেতে লাগলো দুলাল সিরাজীর সাথে।
অন্যদিকে দুলাল সিরাজী মনে মনে ভীষণ খুশি হচ্ছে। রুহুল কে নিজের হাতে রাখতে, নিজের বংশের জমিদাড়ি রক্ষা করতে হলে শত্রুতা নয় বরং বন্ধুত্ব দিয়ে কাবু করতে হবে। শেষ বয়সে এসে একজন বাবা হয়ে দুলাল সিরাজী নিজের দুই পুত্র কে কষ্ট ভোগ করতে দেখতে পারেবে না। পুর্বপুরুদের নিয়ম অমান্য করা যে ভয়ংকর পাপ তার কাছে।
__________________

দরজায় ঢকঢক আওয়াজ। রুহুল বুঝলো কেউ এসেছে বোধহয়। রুহুল দরজা খুললো। দেখলো সামিয়া দাড়িয়ে আছে।সামিয়া বললো, “দাদাভাই,বড়াম্মা ডাকে আপনেরে। ”
রুহুল বললো, “আচ্ছা যাচ্ছি। তুই ওনার কাছে থাক। আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো। ”
–“জি দাদাভাই। ”

রুহুল নিজের কক্ষ থেকে সোজা সুভার কাছে গেলো। যেয়ে বললো, “ডেকেছেন আম্মা? ”
–“হ্যাঁ”
–” জী বলুন”
–” কাকন কে নিয়ে তুই সিরাজী মঞ্জিল থেকে দূরে
কোথাও চলে যা খোকা। ”

–” বেশ তবে আপনাকেও আমার সাথে যেতে হবে। ”
–“কিন্তু আমি যাবো না। এই সিরাজী মঞ্জিল ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি। ”

–” আর আপনাকে একা ফেলে যাওয়া আমার পক্ষে ও কোথাও যাওয়া অসম্ভব। ”

–” তুই বুঝতে কেন পারছিস না খোকা। এখানে থাকা তোদের জন্য নিরাপদ নয়।”

–” আর আমি না থাকলে এখানে আপনি নিরাপদ না।আর যেখানে আমার আন্মা, সেখানেই আমি।”

–” খোকা, আমি তোর আম্মা এই জন্যই বলছি চলে যা এখান থেকে। এখানে থাকলে কাকনের বিপদ। ”

–” আমি কখনো আমার স্ত্রীর ক্ষতি হতে দেবো না। আর আমার স্ত্রী আমার কাছে যতটা আপন তার চেয়ে ও বেশি আপন আমার আম্মা। তাই আপনি যেদিন সিরাজী মঞ্জিল ত্যাগ করবেন সেদিন আমিও ত্যাগ করবো।তার আগে নয়। ”

–” এখানে থাকলে তুই কোনোদিনো সুখী হতে পারবি না। তুই বিদেশ যেতে চেয়েছিলি না। আমার সব গহনা, মুদ্রা সব তোকে দিয়ে দেবো।চলে যা এই সিরাজপুর থেকে। দূরে কোথাও চলে গিয়ে সুখেব সংসার কর। আমি তোর মুখের হাসি দেখতে চাই খোকা। ”

রুহুল মায়ের কথা হেসে দিল। বললো,”আমি তো হাসি আম্মা। অনেক সুখেই আছি। ”

–” তুই যতই হাসিস আমি সব বুঝি। আমি তোর আম্মা। তোকে গর্ভে রেখেছি। তোর হাসির আড়ালের অভিমান ও আমি বুঝি। আমার সামনে মিথ্যে হাসির অভিনয় করে গেছিস সারাজীবন।আজ তোর হাসি আবার হারিয়ে যাক মা হিয়ে তা চাইবো না। ”

রুহুল সুভার চোখে চোখ রেখে বললো,”আমি কাদলে তো আমার আম্মা আমার চোখ মুছে দিতে আসতো না। তাই আমি মিথ্যে হাসি দিতাম। তবে আমি এখন অনেক খুশি।কারণ আমি আমার সুখের মানুষ খুজে পেয়েছি। ”

–” এই জন্যই তো বলছি চলে যা খোকা এই সিরাজপুর থেকে। দূরে অজানা কোথাও চলে যা। ”
–“বললাম তো আপনি আমার সাথে গেলে তবেই
আমি যাবো। তার আগে না। খেয়ে ঘুমাবেন। ”

রুহুল আর দাড়ালো না। চলে গেল নিজের মতো। সুভা রুহুলের যাওয়ার পর মেঝেতে বসে কাদতে শুরু করলো। বললো, ” সিরাজপুর থেকে না গেলে যে তুই কোনোদিনো সুখী হতে পারবি না খোকা।”

চলবে…..

#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here