দেবী পর্ব ১৯

0
324

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৯ঃ

রুহুল তার বিবিজান কে দেওয়া কথা রেখেছে। সকালে খাওয়ার পর সিরাজী মঞ্জিলের সকল কে রাজি করিয়েছে যেন কাকন কে মহিলাশালায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। রুহুলের কথায় কেউ আপত্তি না করলেও আপত্তি করেন দাদিমা। কিন্তু রুহুলের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হয়। কাকন ও বেশ খুশি হয় মহিলাশালায় যাওয়ার অনুমতি পেয়ে।

গরুর গাড়িতে চড়ে চললো কাকন মহিলাশালার উদ্দেশ্যে। পাশেই বসে আছে রুহুল। সিরাজপুরে মেয়েদের বেপর্দাভাবে চলা নিষেধ। বোরকা না পড়লেও মাথায় আচল দিয়ে চুলসহ মুখ ঢেকে চলতে হয়। আর সেখানে কাকন সিরাজী মঞ্জিলের বউ তাই সেও বোরকা পড়ে কেবল চোখ দুটি বের করে চলছে মহিলাশালায়। চারপাশে নজর বুলালো কাকন এক সপ্তাহ পর আবার এই রাস্তা।যেন কত বছর দেখা হয় না। কাকনের মনে হচ্ছে এই পাঁচ মিনিটের পথ যেন শেষ হচ্ছে না। তবে বহুদিন পর গরুর গাড়িতে কাকনের ভালোই লাগছে। সাথে প্রকৃতির ছোয়া পাচ্ছে। পথ চেয়ে দেখতে দেখতেই মহিলাশালায় পৌছে গেলো কাকন। গাড়ি থেকে রুহুল হাত ধরে কাকন কে নামালো। রুহুলের হাত ভর্তি দই-মিস্টি আর কিছু বাজার। কাকন নামার পরেই দৌড়ে মহিলাশালার গেইট ভেদ করে ভিতরে চলে গেলো। কাকনের দৌড় দেখে রুহুল হাসলো। তার ভিবিজান এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছে। রুহুল ও মহিলাশালার ভিতরে গেলো।

কাকন মহিলাশালার ভিতরে ঢুকেই মুখের নিকাপ খুলে ফাতিমাকে পিছন থেকে জাপ্টে ধরলো। অঝোরে ঝরতে লাগলো চোখের পানি। ফাতিমা হঠাৎ আক্রমণ বিব্রত হলো। কিন্তু কাকনকে দেখেই নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাতিমাও কাদতে লাগলো। ফাতিমা এবং কাকন দুজনের ই যেন শুন্য বুক পরিপূর্ণ হলো। কাকনের আগমনী বার্তা শুনে সকল মেয়েরা ছুটে এলো। নুপুর, ফুল,রিতা, কাকন কে দেখেই হাত এগিয়ে দিলো।লেখিকা স্রোতস্বীনি। কাকন ফাতিমা কে ছেড়ে ওদের কেও জড়িয়ে ধরলো। সকলের সাথে চোখের পানি মুছে কথা হাসি মুখে কথা বলতে লাগলো।

দূর থেকে কাকনের এসকল কীর্তি দেখছিল। কাকনের চোখের পানি দেখে কিছুটা খারাপ লাগলেও এখন হাসি মুখ দেখে স্বস্তি লাগলো। রুহুল এগিয়ে গেলো ফাতিমার কাছে। গিয়ে বললো, “আসসালামু আলাইকুম আপা”

ফাতিমা উত্তর নিলেন,”ওয়া লাইকুম আসসালাম, শরীর কেমন আছে আপনের?

রুহুল বললো, “ভালো, এই নিন এগুলো রাখেন আর সকল মেয়েদের দেবেন কেমন। আর আমি এখন আসছি ওনাকে সন্ধ্যায় নিয়ে যাবো । ”

সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে ফাতিমা কাকন দুজনের ই মন উদাস হয়ে গেলো।
ফাতিমা বললো, ” আজ্ঞে কিছু যদি মনে না করেন কাকন আমার কাছে থাইক কয়ডা দিন”

রুহুল দেখলো কাকন করুণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর উত্তরের আশায়। রুহুল মাথা নিচু করে বললো,” আমায় ক্ষমা করবেন আপা। আমি পারবো না। দাদিমার নিষেধ ছিল তবুও নিয়ে এসেছি।সন্ধার পর নিয়ে যেতেই হবে।”

কাকনের চোখ ফেটে যেন এখন কোনো কুপ সৃষ্টি হবে। রুহুল কাকনের চোখের দিকে চেয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো না কাদতে এবং রাজি হয়ে যেতে। কিন্তু কাকন বাচ্চা দের মতো কেদে দিলো। কাদতে কাদতে নিজ কক্ষে গেলো। বেচারা রুহুল বিরাট ফ্যাসাদে পড়ে গেলো। এখন তো আর সে মেয়েদের কক্ষে ও যেতে পারবে না আর না বিবিজানের রাগ ভাঙাতে পারবে।
রুহুল ফাতিমার কাছে যেয়ে বললো, “আপা ওকে একটু বুঝান না যেন অভিমান না করে। আপনার কথা ও ফেলবে না ”

ফাতিমা রুহুল কে বললেন, ” হুম আপনে চিন্তা কইরেন না আমি বুঝামু নি ওরে ”

রুহুল বললো, “বেশ আমি তাহলে এখন আসি। সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যাবো। ”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

রুহুল একবার ঘরের দিকে চাইলো। বিবিজান এর থেকে বিদায় না নিলে তার মন বসবে না কাজে। তবুও মন কে শান্তনা দিয়ে বের হয়ে গেলো মহিলা শালা থেকে।

ফাতিমা রুহুলের যাওয়া দেখে হাসলো। রুহুলের মতো গম্ভীর বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি যে কাকনের প্রেমে কুপকাত তা বুঝতে বাকি নেই। ফাতিমা হাতের কাজ ফেলে কক্ষে গেলো। গিয়ে দেখলো কাকন বালিশ কোলে নিয়ে সেই বালিশে ভড় করে দুই হাত গালে দিয়ে মন মরা হয়ে বসে রয়েছে।
ফাতিমা কাকনের কাছে বসে বললো, “কেমন আছা মা”

কাকন ফাতিমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপা,,
আপনার শরীরের এই অবস্থা কেন, আপনার কি বুকের ব্যাথা আবার বেড়েছে আপা ?”

ফাতিমা কাকনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“না বুকের ব্যাথা না, তরে ছাড়া আমার ভালো লাগে না রে মা।বুকের মধ্যে খালি খালি লাগে তরে ছাড়া। এই যে তুই আইছা আমি আবার ভালো হইয়া গেছি”

কাকন ফাতিমা কে জড়িয়ে ধরে বললো, ” আমারো এমন লাগে আপনাকে ছাড়া। ইচ্ছে করে চলে আসি কিন্তু আমার হাত পা যে তো বেধে দিয়েছেন আপনি।”

ফাতিমা কাকন কে বললো, ” ওইখানে যে তুই সারাজীবন ভালো থাকবি মা। সাতদিনে তর চেহারা কিন্তু ঘুইরা গেছে। তরে এখন সিরাজী মঞ্জিলের মানুষগো মতো লাগে।”

কাকন মুখ ছোট করে বললো, “আমি সেই আগের কাকন ই আছি আপা। শুধু বেশ পোশাকে জমিদারি আভিজাত্য। উনি নিজে এগুলো পোশাক এনে দিয়ছেন আমাকে কি আর করার।”

–“হুম তর সুয়ামির কথায় বুঝা গেলো হে তরে মেলা ভালোবাসে। লোক টা ভালো, তারে কোনোদিন কষ্ট দিস না। যাওয়ার সময় তার চোখ তরে খুজছে সে আমি ভালোই বুঝছি।”।

ফাতিমার কথায় কাকন মুচকি হাসলো।বললো, “উনি বড্ড বেহায়া আপা।জানেন সকলের কাছে আমায় লজ্জায় ফেলে। আর সকলে নানা কথা বলাবলি করে। বাড়ির কাজের লোক গুলো পর্যন্ত আমাকে লজ্জা দেয়। আমার তখন ইচ্ছে করে পালিয়ে যাই। ”

কাকনের কথায় ফাতিমা উচ্চস্বরে হেসে দিলো। বললো,” পাগলি মাইয়া,,সুয়ামি চোক্ষে হারায় এইডা তে যে মাইয়া মানুষগো কত সুখ সেইডা একমাত্র তারাই বুঝে যারা সুয়ামির ভালোবাসা পায় নাই”

কাকন বুঝলো ফাতিমার বিরহের বেদনা। তাই বললো,
“সে হআরআক গিয়ে,, আপা চলেন না বাইরে যাই সকলের সাথে কথা বলি। আর আজকে আমি রাধবো।”

ফাতিমা বললো,”ঠিক আছে মা চল।
_______________________________

আজ যেন মহিলাশালা হেসে উঠেছে। সবাই খুব বেশি খুশি হয়েছে। রুহুলের আনা মিস্টি সবার হাতে হাতে বিলিয়ে দিয়েছে ফাতিমা। আর কাকন আজ রান্না করছে আর রান্না শেষে সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে।
খোলা উঠোনে বসে আছে সকলে। ঝড়ে পড়া কাচা আম মাখিয়েছে রিতা। কাকন সহ সকলেই খাচ্ছে আর গল্প করছে। তাদের আড্ডার মুল হলো কাকনের শশুড় বাড়ি কিভাবে থাকে, কে কেমন ইত্যাদি।

কাকন আসার পর থেকেই খেয়াল করছে নুপুর কে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। কাকন ফুল কে বললো,”ফুল আপা নুপুর আপা কে আজ এত খুশি দেখাচ্ছে কারণ কি?”

কাকনের কথায় সকলে হাহাহাহা করে হেসে উঠলো। কাকন খেয়াল করলো নুপুর লজ্জা পাচ্ছে। কাকন আবারও বললো,”আরে তোমরা এভাবে হাসছো কেন?”

রিতা বললো, “আরে কাকন নুপুর আপার বিয়া ঠিক হইছে তাই এমন করতাছে ”

কাকন খুশি হয়ে বললো, “বাহ কার সাথে ওই মেলার লোকটার সাথে নাকি”

ফুল বললো,”হ সোহাগ ভাই এর সাথেই। পরশু আইছিল মহিলাশালায় খুব তাড়াতাড়ি ই বিয়া হইবো আমাগো নুপুরের। ”

কাকন কথা টা শুনে বেশ খুশি হলো। বললো, “অভিনন্দন আপা,, তোমার ইচ্ছে টা এবার পুরণ হলো”

নুপুর আবারো লাজুক হাসলো।ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে বিয়ে বলে কথা তার যে বহুদিন এর স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে। নুপুর বললো,” হ্যাঁ সে বটে কিন্তু কাকন তোর কিন্তু আমারে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
কাকন কাচা আম মুখে দিয়ে মখে টক টক ভাব এনে বললো, “কেন নুপুর আপা আমি ধন্যবাদ কেন দেবো?”

নুপুর বলল, “বাহ রে আমার জন্যই তো তোর বিয়া ডা হইলো, এত সুন্দর জামাই পাইলি”?

কাকন মুখে আম নিবে ওমনি কথা টা শুনে আর নিলো না। কথাটা সত্যিই বলেছে নুপুর। সেদিন যদি কাকন নুপুর কে না হারাতো তাহলে একা আসতোও না আর জঙ্গলে দুর্ঘটনা ঘটতো না আর না রুহুলের সাথে বিয়ে হতো।লেখিকা স্রোতস্বীনি। কাকন হাতের আম টুকু মুখে নিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল,” কিন্তু আমার তো তোমাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে না আপা”

কাকনের কথায় সকলে ওর দিকে তাকালো।
নুপুর বললো, “কেন রে কাকন সিরাজী মঞ্জিলের বউ হইয়া কি কিপটা হইয়া গেলি নাকি সামান্য ধন্যবাদ দিতে পারবি না আর কেন দিবি না শুনি?”

কাকন বলল,” তার জন্য নয় বরং তোমাকে এই জন্য ধন্যবাদ দিবো না কারন তোমার জন্যই আমার মহিলাশালা ছেড়ে বিয়ের পীড়িতে বসতে হলো। আমি মোটেও বিয়ে করতে চাই নি। আমি সর্বদা এখানেই থাকতে চেয়েছি।”

নুপুর বললো,”ধুর পাগলি বিয়া করতে চাস নাই তো কি হয়েছে বিয়া তো হয়া গেছে আর তাও আবার সিরাজী মঞ্জিলে বিয়া হইছে।”

ফুল বলল,”তোর ই তো কপাল রে কাকন জামাই ও সেরা সংসার ও সেরা”

কাকন হেসে বললো, ” হ্যা তা ঠিক। আমার মতো কপাল বোধহয় খুব মানুষের ই আছে। সে যাই হোক নুপুর আপা তোমার বিয়েতে কিন্তু আমি আসবো। আমাকে কিন্তু দাওয়াত দিতে হবে।”

কাকনের কথায় নুপুর বললো, “সে তো দিমুই। তরে ছাড়া কেমনে বিয়া করুম।

এভাবেই হাসতে হাসতে পার হচ্ছিল আজকের দিন।
বিকেলে সকল বাচ্চা মেয়েরা খেলছে। আজ হঠাৎ কাকনের খেলতে ইচ্ছে করছে। নুপুর, রিতা,ফুল সহ সকলেই বসে আছে। রিতা প্রস্তাব দিলো যে কাকন খেলবি নাকি চল আজ আমরা খেলি। কাকন যেন প্রস্তাব টা অগ্রাহ্য করতে পারলো না। উঠানে কোট টানা হলো খেলার জন্য ।তারপর কাকন সহ চার-পাঁচজন কুতকুত খেলা শুরু করলো। কাকন কোমড় পর্যন্ত চুল গুলো খোপা করে নিলো।তারপর শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে নিলো।ব্যাস শুরু হয়ে গেলো খেলা।
___________________

অন্যদিকে রুহুলের আজ যেন কোনো কাজে মন বসছে না। আজ সারাদিন যত কাজ ই করেছে বার বার খালি কাকনের লাল নাক আর জলে টইটম্বুর আঁখি জোড়া ভেসে উঠেছে। আজ দুপুরে ভালোভাবে খেতেও পারে নি রুহুল। মন টা খালি বিবিজান বিবিজান করছে। আজ পাইকার দের সাথেও ভালো ভাবে কথা বলতে পারে নি। রাগের মাথায় কর্মচারী দের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে। মাথা কাজ করছে না তার। রুহুল আর থাকতে পারলো না। বাধ্য হয়ে সিরাজী মহিলাশালার উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো। বিবিজানের অভিমান ভাঙাতে হবে আর হাসি মুখ খানা দেখতে হবে তা না হলে মনপাজরে শান্তি নেই। রুহুল মহিলাশালার গেইটের সামনে পৌছালো। গেইট খুলে ভিতরে ঢুকেই থপকে গেলো।কাকন শাড়ির কুচি উঁচু করে তুলে কুতকুত খেলছে। কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো প্রত্যকে লাফে লাফে যেন আরো সুন্দর লাগছে। কাকনের এমন রুপ দেখে রুহুল আরো প্রেমে পড়লো। খেলতে খেলতে কাকন ঘেমে লাল হয়ে গেছে। চুল গুলো যখন হাত খোপা করলো ওই মুহুর্তে রুহুল ঢোক গিললো। এত সুন্দর কেন তার বিবিজান। রুহুলের ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। রুহুল দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকনের খেলা দেখছে। কাকন জিতে গেলে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সারাদিনের সকল বিরহ যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো রুহুলের। এর মাঝে ফাতিমার নজরে পড়লো রুহুল কে।
ফাতিমা যখন রুহুল সিরাজী বলে ডাকলো কাকন রুহুল কে দেখে আচল ঠিক করলো। রুহুলকে দেখে সকল মেয়েরাই লজ্জা পেয়ে গেলো। এদিকে সন্ধ্যা ও হয়ে আসছে। ফাতিমা সকল মেয়েকে হাত পা ধুয়ে কক্ষে যাওয়ার তাড়া দিলো। ধীরে ধীরে সবাই ঘরে গেলো।

রুহুল এগিয়ে আসলো কাকনের কাছে। কাকনের দিকে ঝুকে বললো, “বেশ ভালো কুতকুত খেলতে পারেন তো বিবিজান। তবে তার চেয়েও বেশি খেলেছেন আজ আমার মন নিয়ে।”

কাকন রুহুলের কথা রুহুলের মুখপানে চাইলো। কাকন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মসজিদে মাগরিবের আজান দিলো মুয়াজ্জিন। রুহুল আবারও বললো,” আমি মাগরিবের সালাত আদায় করে আপনাকে নিতে আসবো। যান আপনিও নামাজ পড়ে তৈরি হন বিবিজান। ”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

নামাজ শেষে রুহুল আসলো কাকন কে নিতে। কাকন যেতে চায় নি কিন্তু ফাতিমা এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়ে দিচ্ছে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। আজ কাকন কাদেনি বরং নিজেকে শক্ত রেখেছে। ওর এখন পুরো দুনিয়া কে শত্রু মনে হচ্ছে। রুহুল জোর করে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ফাতিমা জোর করে পাঠাচ্ছে। রোজকার ন্যায় আজও ফাতিমা কাদলো।

রুহুল বেশ বুঝলো তার স্ত্রীর জেদ। রুহুল সাথে থাকা গরুর গাড়িতে উঠলো না বরং টাকা দিয়ে চলে যেতে বললো। রুহুল কাকনের হাত ধরে বললো “চলুন বিবিজান প্রকৃতিবিলাশ করি।”

তবুও কাকন কিছু বললো না। কেবল রুহুলের সাথে হাটতে লাগলো।

রুহুল আবারো বললো, “বলছিলেম যে আগামী সপ্তাহে ও আমার বিবিজান কে মহিলাশায় বেড়াতে নিয়ে আসবো ”

কথাটা শোনা মাত্রই কাকনের সব অভিমান যেন গায়েব হয়ে গেলো। কাকনের রুহুলের হাত শক্ত করে ধরে বললো, “সত্যি আমাকে আগামী সপ্তাহে নিয়ে আসবেন?”

রুহুল কাকনের হাতে আরেক হাত রেখে বললো,”সত্যি”

রুহুল বুঝলো তার বিবিজানের রাগ-অভিমান গায়েব। তাই মনের কথা বললো, “জানেন যখন খেলছিলেন আমার মনে হচ্ছিলো আপনি আমার হৃদয় নিয়ে খেলছেন আমার এই হৃদয়ে এমন অনুভুতি হচ্ছিলো।
আর আপনাকে লাল শাড়িতে দারুণ লাগছিল। ”

কাকন পথের দিকে চোখ নিবদ্ধ করে বললো, “দয়া করে রাস্তাঘাটে আমাকে এগুলো বলে লজ্জা দেবেন
না। দিন দিন বড্ড অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন”

রুহুল কাকন কে বললো, “আচ্ছা তা আমি কি অসভ্যতামি করলাম শুনি ?”

কাকন বললো, “এই যে কিসব বলছেন আমার খুব লজ্জা করে। জানেন সবাই নানারকম কথা বোলে আমাকে লজ্জা দেয় আর এগুলো কেবল আপনার জন্যই।”

রুহুল কাকনকে আরো লজ্জা দিতে চায়। মনে মনে ফন্দি এটে বলল, “আপনার প্রিয় রঙ কি বিবিজান?”

কাকন পথের দিকে চেয়ে থেকে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” লাল, আর আপনার?”

রুহুল কাকনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, “আমার বিবিজানের গায়ের রঙ।”

রুহুলের কথায় কাকন এর কান যেন গরম হয়ে গেলো। কাকন আস্তে করে বললো, “আপনি সত্যিই ভারি অসভ্য”

চলবে……
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here