#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৫ঃ
বাইরে কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেছে। বিকেল বেলায় যার আভাস পাওয়া গিয়েছিল তা এখন বাস্তব রুপধারণ করেছে।মুশলধারে বৃষ্টির সাথে প্রবলবেগে ঝড় হচ্ছে। হয়তো প্রকৃতিও আজ রুহুল-কাকনের ভালোবাসার প্রনয়ের সাক্ষী হতে চায়।
দরজার কাছে এসে ইচ্ছে করে ” উহুম উহুম” শব্দ করে কেশে উঠলো রুহুল। এতক্ষণ কাকন কে নিয়ে সামিয়া,আলেয়া,রোকেয়া আর পারুল বাসর ঘরে যে আড্ডায় মেতে ছিল রুহুলের আগমনী বার্তায় তা খতম হলো। রুহুলের গলার শব্দ শুনে কাকন সোজা হয়ে বসলো। রোকেয়া কাকনের মুখ বিরাট ঘোমটা টেনে ঢেকে দিলো।আলেয়া কাকনের কানের কাছে বললো, “ভয় নাই,,সাহস রাইখো ভাবিজান,আমরা চললাম ।”
সকলেই মুখ চিপে হেসে বের হয়ে গেলো। দরজার বাইরে দাড়য়ে ছিল রুহুল। বোনেরা বের হয়ে যাওয়ার পর রুহুল কক্ষে প্রবেশ করলো। দরজা আটকিয়ে দিয়ে খাটের কাছে আসলো। বড় ঘোমটা টেনে থাকা নববধু কে দেখলো। রুহুল কাকন এর কাছে বসলো। ঘোমটা তুলে ডান হাত দিয়ে কাকনের থুতনি উচু করে মুখপানে চেয়ে রইলো। কাকন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। কাকনের লজ্জা মাখা মুখ রুহুল কে আরো পাগল করে দিলো। পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো কাকনের মুখশ্রীতে। না জানি কত দিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে এই মুখ খানি দেখে। লেখিকা স্রোতস্বীনি। বেশ কিছুক্ষণ পর কাকন চোখ খুললো। চোখ খুলে রুহুল কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরো বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো কাকন। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে কিছু টা দূরে সরে বসলো। [লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি ]
রুহুল কাকনের সরে যাওয়াতে ঘোর কাটলো। হেসে বললো, “আসসালামু আলাইকুম বিবিজান।”
“বিবিজান” ডাক শুনেই কাকনের আবার সেই দিনের মতো হৃদয়ে ঘুর্ণিঝড় অনুভব হলো। কাপা কাপা কণ্ঠে বলল, “ও…ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
রুহুল বললো,” চলুন নামাজ পড়ে নেই। পড়তে আপত্তি নেই তো। ”
কাকন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো সে পড়বে।
দুজন দু রাকাত নফল নামাজ পড়ল। নামাজ শেষে কাকনের মনে হলো আলেয়া বলেছিল স্বামী কে সালাম করতে হবে। রুহুল জায়নামাজ ভাজ করে আলনায় রাখার পর কাকনের কাছে দাড়ালো। কাকন ঝুকে রুহুল কে সালাম করতে পায়ে হাত দেবে ওমনি রুহুল পিছিয়ে গেলো। তারপর কাকন কে বললো,” সালাম করতে হবে না আপনার এই হাত আমার হৃদয় স্পর্শ করার জন্য পায়ের জন্য নয়। ”
কাকন আর কিছু বললো না শুধু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাখলো মেঝেতে।
রুহুল আবারো বলল,”আসুন আমার কাছে আসুন বিবিজান, আপনাকে মনভড়ে দুয়া করে দেই।”
তারপর কাকনের হাত ধরে বিছানায় পাশাপাশি বসলো।কাকনের মাথায় হাত রেখে দুয়া করলো।দুয়া করা শেষে উঠে দাড়ালো রুহুল। আলমারি খুলে একটা সুক্ষাকাজ করা ছোট কাঠের বাক্স কাকনের হাতে দিলো। দিয়ে বললো, “বাসর রাতে স্ত্রী কে উপহার দিতে হয়। এটা আপনার উপহার তবে আজ খুলবেন না এটা আপনি সেদিন খুলবেন যেদিন আপনি আমাকে ভালোবাসবেন।”
রুহুলের কথা শুনে কাকন রুহুলের মুখপানে তাকালো। রুহুল আবারো বললো,” এখন এটা ভাবতে হবে না যে আপনি তো আমার জন্য উপহার আনেন নি। আমার জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হলো আপনি সয়ং নিজে বিবিজান “।
রুহুলের এত সুন্দর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে মুগ্ধ হলো কাকন। এই মানুষ টা কত সুন্দর করে কাকন কে বুঝতে পারছে। কাকন রুহুলের মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।তারপর কাকন হাতে হাতে রাখা উপহার বাক্সের দিকে আঁখি নিবদ্ধ করলো।
রুহুল কাকনের হাতটা ধরে বললো, ” আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি বিবিজান? ভালো বাসার খুটি হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা ভিত্তিহীন। নিজের সবটুকু দিয়ে কি আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দেবেন,আমি সারা জীবন আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই, সারাটি জীবন আপনাকে ভালোবেসে আকড়ে ধরে বাচতে চাই, আপনি কি আমাকে সেই সুযোগটি দেবেন বিবিজান?”
[লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি ]
কাকন নিরুত্তর। এত সুন্দর করে রুহুল তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব টি দেবে সে তা ভাবতেও পারে নি।এর চেয়ে সুন্দর প্রস্তাব কি দুনিয়ায় আদোও দ্বিতীয় টি হতে পারে। জানা নেই কাকনের। কাকনের চিরশত্রু অনুভুতি রা যেন বার বার ওসকাচ্ছে রুহুলের ডাকে সাড়া দিতে।
–“কি হলো বিবিজান দেবেন না সুযোগ?”
কাকন দৃষ্টিনত রেখেই বলল,”জ,,জি দিলাম সুযোগ।”
রুহুল কাকন এর সম্মতিতে খুশি হয়ে হাতটি ধরে চুমু খাবে ওমনি লজ্জায় দূরে চলে গেলো কাকন। কাকনের সারা অঙ্গে যেন শুরশুরি অনুভব হলো। এই শীতল বাতাসেও হাত পায়ের তালু ঘামচে যেন । রুহুল হেসে কাকন কে কাছে নিয়ে এসে বিছানায় নিজের বুকে জড়িয়ে নিতে চাইলেই লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো কাকন। কাকন নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। রুহুল আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কাকন কে। তারপর বললো,–“বিবিজান যতই নিজেকে আমার থেকে ছাড়াতে চান না কেন, আমি কিন্তু ছাড়বো না। এই যে নিজের বুকে একবার জড়িয়ে ধরেছি আপনাকে, সারা জীবনেও এই বুক থেকে আপনার নিস্তার নেই”।
রুহুলের মধুময় কথায় কাকন নুইয়ে পড়লো তার অর্ধাঙ্গের বুকে। রুহুল কাকন কে বুকে নিয়ে আধশোয়া ভাবে জড়িয়ে ধরলো।এবার কাকনের গায়ের গয়না গুলো খুলে দিতে দিতে বললো, ” আজ আমি আপনাকে আমার বুকে নিয়ে ঘুমাবো। এই কয়দিন আমার বিবিজানের চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। আজ সুখের নিদ্রা চাই আমার। আর আজকের রাত টা তোলা রইলো।আমার হক আমি সঠিক সময় আদায় করবো।আর সেই সুন্দর মুহুর্তের ইন্তেজার করতে পারবেন তো আপনি?”
কিছুক্ষণ পর ছোট্ট উত্তর দিলো কাকন,–“হুম”
–“শুধুই হুম। অসন্তুষ্ট হলেন নাকি বিবিজান?
–”ন,.না”
–” ধন্যবাদ বিবিজান। আপনার এই কিশোরী মন অনেক কিছু আশা করতে পারে। আর অনেকেই অনেক কিছু বলেছে হয়তো আপনাকে। কিন্তু আমি জানি এখন আপনার ঘুমের প্রয়োজন। একটা কথা মনে রাখবেন যে যা ই বলুক আপনি শুধু আমাকেই মানবেন। বাকি সব আমি মানিয়ে নেবো।”
[লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি ]
রুহুলের কথা এবং আচরণে কাকনের মনের এক চাপাকষ্ট দূর হয়ে গেলো।রুহুলের প্রতি আরো ভালোলাগা জন্মালো।অহেতুক চিন্তা করেছে কাকন এতদিন।
অতপর রুহুল তার স্ত্রীকে আরও কাছে টেনে যখন কপালে চুমু দিলো। স্বামীর অধরের এর ছোয়াতে আবারো সর্বাঙ্গে কাপতে কাপতে শুরু করলো কাকন। রুহুল গালে চুমু দিলো। এবার রুহুলের নিশ্বাস লাগলো কাকনের গলার কাছে ঠিক তখন ই রুহুলের শিমুল ফুল রঙা বউ স্থির হয়ে গেলো। স্রীর কাপা থেমে যখন শান্ত হয়ে গেলো তখন রুহুল তাকিয়ে দেখলো তার বিবিজান অচেতন হয়ে গেছে । বাদামি ঠোঁট জোড়া আপনা আপনি ঠোঁট প্রসস্থ হলো রুহুলের, নিরব হাসি দিলো। রুহুল তো কেবল চুম্বন দিতে চেয়েছিল। এইটুকুতেই ভয়ে তার বিবিজান কুপকাত। সে তো বলেছেই সঠিক সময়ে হক আদায় করবে। এই সামান্য সোহাগেই তার বিবিজান প্রচন্ড ভয় পেয়েছে ভেবে হাসতে হাসতে বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কাকন কে। কালবৈশাখীর ভয়াবহ প্রলয়ে সুখের ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লো দুই কপোত-কপোতী।
____________________
অন্যদিকে মাল খেয়ে টাল হয়ে আছে বকুল আর রুহুলের বোন স্বামীরা। বিদেশি মদ খেয়ে অবস্থা বেহাল। দরজার কাছেই নাক ডেকে ঘূমোচ্ছে লতিফ। যার জন্য প্রচুর বিরক্ত লাগছে বকুলের যেন ষাড় হাম্বা হাম্বা করছে ঘুমের ঘোরে।আর আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে দুই দুলাভাই। আর দুজনের ই বকাবকির কারণ হলো নিজেদের স্ত্রী। মুখে যা আসছে দুজনেই বলে যাচ্ছে। অন্যদিকে বকুল নেশার ঘোরে বার বার সামিয়ার হাস্যজ্জল চেহারা দেখতে পাচ্ছে। কানের কাছে খালি বারবার ভাসছে সামিয়ার হাসির ধ্বনি। ইচ্ছে করছে সামিয়া কে কাছে টেনে নিতে।আজ সারাদিনে একবারের জন্যও সামিয়া তার সামনে আসে নি। মুখোমুখি হলেও বকুল কে উপেক্ষা করে গেছে সামিয়া। যার জন্য বেশ রাগ লেগেছিল বকুলের।জীবনের প্রথম কোনো নারীকে ভালো লেগেছে আর সেই নারী কি না অবজ্ঞা করে বকুল কে। বকুল আবারো দেখলো সামিয়া হাসছে। বকুল উঠে দাড়ালো সামিয়া কে ধরে হাসি থামাবে।কিন্তু ধরতেই পারছে না। চেয়ারে মাথা দিয়ে মেঝেতে বসে আছে দুই দুলাভাই। তাদের ডিঙিয়ে দরজার খুললো বকুল। সে এখন সামিয়ার ঘরে যাবে।
[লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি ]
ঢুলতে ঢুলতে সামিয়ার দরজা খুলে প্রবেশ করলো বকুল। হারিকেন জ্বালানো আছে টেবিলের উপর। বিছানায় হাত পা গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে সামিয়া। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর সেই আলোর রেশ পড়ছে সামিয়ার মুখশ্রীতে। সেই সৌন্দর্যে আরও মুগ্ধ হলো বকুল। টেবিলের উপর রাখা নিভু নিভু হারিকেনের আলোয় সামিয়াকে একদম কাছে থেকে পরখ করলো বকুল। এলোমেলো চুলে ঘুমন্ত প্রেয়সী কে দেখে আরো তাড়াতাড়ি সামিয়া কে আপন করার বাসনা জেগে উঠলো মনের কোণে। সামিয়াকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে বারবার।কিন্তু নিজের দ্বারা যেন কোনো অন্যায় যেন ঘটে না যায় এই ভয়ে প্রস্থান নিতে চাইলো। সামিয়ার গায়ের কাথা টা ঠিক করে দিয়ে কানের কাছে যেয়ে বললো, “ভালোবাসি”।
আস্তে করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে আবার ও নিজের ঘরে এলো বকুল। লতিফসহ বাকি দুজন কে ডাকলো। কেউ সাড়া দিলো না অজ্ঞতা বকুল ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।
____________________________
সকালে ঘুম ভাঙলো রুহলের কাকনের আগে। আজ বহুদিন পর রুহুলের শান্তির ঘুম হয়েছে।চোখ খুলে বুকে তার বিবিজান কে আবিষ্কার করল রুহুল। রুহুল এক ভাবে তাকিয়ে রইলো তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। কিছু একটা ভাবলো ভেবে হাসিতে তার ঠোঁট আরো প্রসারিত হলো। কিছুটা জোরেই হাসলো রুহুল। হাসিতে কাকন নড়েচড়ে উঠল। একটু পর কাকন ও জেগে উঠলো। কাকনের মাথা কেমন যেন ভার ভার লাগছে। নিজেকে রুহুলের বুকে থাকতে দেখে চমকালো। তারপর রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় সে তার স্বামীর থেকে সরে আসতেই রুহুল আরো কাছে টেনে নিলো।
–“ঘুম কেমন হলো বিবিজান?”
–” ভা,,,ভালো।”
রুহুল কাকন এর মুখে পড়া চুল গুলো কানের পিছনে দিয়ে দিলো। তখনি দরজায় কারো করাঘাতের শব্দ পেলো।
–“দাদাভাই, নতুন ভাবি এখন উঠেন।দাদিমা উঠতে কইলো”
রুহুল কাকন কে ছেড়ে দিলো। কাকন বিছানা থেকে নেমে নিজেকে ঠিক করে মাথায় কাপড় দিলো। তারপর রুহুল দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে বাইরে ছোট বোন দের দেখতে পেলো রুহুল। একপলক কাকন কে দেখে বাইরে বেড়িয়ে গেলো রুহুল। বিছানার কাছে দাড়িয়েই ছিল কাকন। কাকন এর কাছে এসে সকলেই মুখ চিপে হাসতে লাগলো।
আলেয়া বললো, ” কি গো ভাবিজান,,,রাইতে ঘুম কেমন হইলো আমাদের বাড়িতে।”
রোকেয়া হেসে বলল,” কি যে কও না আপা,,দাদাভাই কি আর ঘুমাইতে দিছে যে ঘুমাইবো।”
-“হাহাহা,,ঠিক কইছোস,,”
পারুল এবার বলে উঠল,”তোমাদের মজা নেওয়া হইলে ভাবিরে তৈরি কইরা বাইরে নিয়া চলো নানিমা কিন্তু তাড়াতাড়ি নিয়া যাইতে কইছে।”
সামিয়া কাকনের মাথার কাপড় টা ফেলে চুল এলোমেলো করে দিয়ে গালটা টেনে বললো, “হইছে আপারা তোমরা এখন আমার ভাবিজান রে এত প্রশ্ন করা বন্ধ করো। আর এই যে ভাবি ডুব দিয়া এই লাল শাড়ি ডা পড়তে কইছে দাদিমা, পইড়া চলো আমাগো লগে।”
কাকন কে নিয়ে গোসলখানা দেখিয়ে দিলো সামিয়া। কাকন গোসল করে শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নিলো ।তারপর ননদদের সাথে বের হলো । সবাই মিলে কাকন কে বসার ঘরে নিয়ে গেলো ।সেখানে দাদিশাশুড়িসহ অনেক মহিলাকেই দেখলো কাকন। সবাইকে হাসিমুখে সালাম দিলো। [লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি ]
কাকনের আগমনে খুশি হয়ে দাদিমা বললো,
–” আরে নাতবউ আয় তুই আমার কাছে আয়। তরে পাকঘরে আমি নিয়া যামু। নিয়ম অনুযায়ী সক্কলের জন্য যে ভাত রান্দা হইবো তুই ওই ভাত নিজে ভাত বাইড়া দিবি, আর কাইল থিকা তুই রানবি ভাত ।”
কাকন মাথার আচল ঠিক করে বললো,”জি দাদিমা।”
দাদিমার হাত ধরে কাকন রন্ধনশালায় পা রাখলো।প্রথম রন্ধনশালায় ঢুকে আবারো অবাক হলো কাকন এত বড় রান্নাঘর কাকন আগে দেখে নি। হেশেল অনেক বড়। রান্নাঘরের হাড়ি দেখেই বুঝতে পারল এগুলো বেশ পুরোনো।
নিয়ম অনুসারে বড় থালায় ভাত বেড়ে দিলো কাকন। সেই ভাত রানু ভোজ কক্ষে নিয়ে গেলো। রান্নাঘরে বসেই মহিলা দের খাওয়ার নিয়ম। আর পুরুষেরা ভোজ কক্ষে খায়।সে নিয়ম অনুযায়ী সকল মহিলাদের সাথে খেলো কাকন।
আসমা কাকন কে বললো,”শোনো বউ এই বাড়ির বড় বউ হইছো দায়িত্ব কিন্তু বেশি তোমার। আর আজকা দেরি কইরা উঠছো ঠিক আছে,, কাইল থিকা সকাল সকাল উঠবা। এই বাড়ির বউ গো কিন্তু ফজরের পর ঘুমানের নিয়ম নাই ”
সুভা আসমা কে থামিয়ে বললো,” আসমা তুমি ওকে আজই এগুলো বলো না। ধীরে ধীরে আমিই আমার ছেলের বউ কে আমার মতো করে গুছিয়ে নিবো”
মালেকা বরাবরই সতীন কে ছোট করার সুযোগ খোজে। এই সযোগে বলে উঠলো,” আসমা তো ঠিক ই কইছে আপা,তুমি তোমার পোলাবউ রে এহোন থিকাই তো ঠিক করবা। আদরে মাথায় তুললে কিন্তু পরে আবার মাথা থিকা নামাইতে পারবা না।”
–“আমার ছেলের বউকে সংসারী করে তোলার দায়িত্ব আমার। আমি কারো মতামত চাই না মালেকা। আর আজ দেরি করে উঠেছে বলে আমি মনে করি না। নতুন জায়গায় এসে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তাই আজকের দিনে এগুলো বলা বন্ধ করো।তাছ….
দাদিমা সকলের উদ্দেশ্য বললেন,”হইছে সক্কলেই চুপ করো এহোন। বাড়ি ভর্তি মেহমান কি ভাববো কও দেহি,চুপচাপ খাইয়া দুপুরের লিগা তয়ার হও সবাই”
এতক্ষণ নিরব হয়ে সব শুনছিল কাকন। বিয়ের পরের দিন ই এভাবে তাকে নিয়ে ছোট খাটো কথা কাটা কাটি তে তার ভীষণ খারাপ লাগলো। অচেনা জায়গা রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছ তাই এমন হয়েছে। মনে মনে পণ করলো কাকন সে আর কোনোদিন ও দেরি করবে না। কারণ এ বাড়ি তো আর মহিলাশালা নয়। সত্যিই সিরাজী মঞ্জিলের বাইরে এক ভিতরে আরেক।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কাকন।
চলবে…….
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️