#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ।
৩ঃ
সিরাজপুরে সিরাজীদের রাজত্ব বহু বছর ধরে। গ্রামে স্কুল,,মাদ্রাসা,মসজিদ, হাসপাতাল সবকিছু তেই তাদের কৃতিত্ব। ছেলেমেয়েদের আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা।পুরুষদের জন্য সিরাজী পাঠশালা।আর মেয়েদের জন্য সিরাজী মহিলা পাঠশালা। সেখানে কেবল মহিলারা পড়ে। আর সেখানেই এতিম মেয়েদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে। খরচ বহন করে সিরাজী পরিবার। আর যাদের পরিবার আছে তারা সেখানে পড়াশোনা করতে পারে কিন্তু পরিবারের সঙ্গেই থাকে।
আশেপাশের গ্রাম-গঞ্জের এতিম ছেলেমেয়েরা সুযোগ পায় সেখানে থাকার।
ফজর নামাজ পড়ে কুরআন পড়ছে পঞ্চদশী এক তরুণী। সমুধুর কন্ঠ যেন হৃদয় শীতল হয়ে যায়।
ফাতিমা তরুণীটির কাছে এসে বলল,”কাকন, ও কাকন ,,তর শরীর ভালো হইছে।”
কাকন কুরআন পড়া শেষে বললো,” জি আপা,,
আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক ভালো।”
ফাতিমা বললো,”আজ তো মিলাদ আছে জুম্মার নামাজ পর।তোবারক বিলাইবো মনে হয়। আগের বার যত বড় অঘটন হইয়া গেলো। এইবার কার টা ভালো ভালোই হইলে হলো।”
কাকন কুরআন বন্ধু করতে করতে বললো, “আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন আপা। আমার মন থেকে বলছে সব ভালো হবে।”
ফাতিমা হেসে বললো,” হুম তাই যেন হয়। তোবারক দেওয়ার সময় তোকে কিন্তু আমার সাথে থাকতে হইবো।”
“কাকন” নাম সুন্দর না হলেও তার রূপ এবং গুণ অনন্য।লেখিকা স্রোতস্বীনি। বাবা-মা ছাড়া কাকন অন্যান্য এতিম মেয়েদের মতোই এই মহিলাশালায় থাকে। দুনিয়ায় আপন বলতে কাকন কেবল ফাতিমাকেই চেনে। নিমতলির বন্যার পানিতে যখন জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়ে ছিল তখন কিছুলোক উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।তারপর কাকন কে সিরাজপুরের মহিলাশালায় দিয়ে গিয়েছিল। পিতা-মাতাহীন কাকন এর মহিলাশালা ই ঠিকানা।
___________________
জুম্মার নামাজ পর মসজিদের পাশেই পুরুষ মাদ্রাসার বড় হুজুর দ্বারা মিলাদ পড়ানো হচ্ছে। মিলাদ শেষে মহিলা মাদ্রাসার জন্য তোবারক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেগুলো রুহুল এর উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাথে সিরাজী মঞ্জিলের চাকর লতিফ তোবারক নিয়ে যাবে।
মাথায় কাপড় দিয়ে গেইটের কাছে অপেক্ষা করছে কাকন এবং ফাতিমা।
মহিলা শালায় রুহুল ফাতিমার সম্মুখে গেলো গিয়ে বললো,”ফাতিমা আপা,,তোবারক নিয়ে যান। সবাই কে দিয়ে দিবেন। ”
ফাতিমা মাথার কাপড় ঠিক করতে করতে বললো, “জি,,আপনি চিন্তা কইরেন না। ”
রুহুল এবার ভেবে বলল,”আপনি কি পারবেন একা একা,,,সাথে কাউকে ডাক দেন।”
ফাতিমা বললো “না,,আমি একা না আমার লগে কাকন আছে। কিরে কাকন আয় বাইরে আয়।”
দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো কাকন। সদ্য ফোটা শাপলার মতো তার স্বচ্ছতা।মাথায় সাদা রঙের ঘোমটা দেওয়া।মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো। তাকে দেখে রুহুলের মনে যেন অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো।সিরাজপুরে এত সুন্দর তরুণী ছিল আর সে জানতো না। এমন টানা টানা চোখ,অপরুপ গায়ের রঙ, নাক, ঠোঁট সব কিছু রুহুলের বক্ষপিঞ্জরে ঝড় তুলে দিলো নিমিষেই।যেন হাতুড়ি দিয়ে কেউ হৃদপিণ্ড পে’টাচ্ছে। কারো হৃদয় শীতল করা কন্ঠে রুহুলের ঘোর ভাঙলো।
কাকন মাথা নিচু করে বললো,”আসসালামু আলাইকুম”
রুহুল ঢোক গিলে উত্তর নিলো,”ওয়ালাইকুম আসসালাম। ” এত মধুর কন্ঠ কারো হয় মনে মনে ভাবলো রুহুল।
কাকন হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,”এগুলো আমার হাতে দিন,,আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
রুহুল কাকনের হাতে দিয়ে বললো,”হ্যাঁ নিয়ে যান আপনি।”
তোবারক নিয়ে চলে গেলো কাকন ও ফাতিমা।রুহুল ওদের যাওয়ার পানে চেয়েই রইলো।
রুহুলের সাথে থাকা লতিফ বলে উঠলো,”দাদা ভাই,,ওইডা হইলো কাকন এইখান কার সবচেয়ে ভালা আর সুন্দরী মাইয়া।লেখিকা স্রোতস্বীনি।বেশি একখান দেহা যায় না।ফাতিমার কাছে অনেকেই বিয়ার প্রস্তাব দেয় কিন্তু কাকন রে সে যোগ্য পাত্রের লগে বিয়া দিবার চায়।আমি যদি জমিদার হইতাম কাকন রে বিয়া করতাম। হেহহেহে”
রুহুল এর লতিফের কথা শুনে কেন যেন রাগ হলো।কিছু না বলে অগ্নিচোখে তাকালো লতিফের দিকে। লতিফ ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।তারপর রুহুলু চলে গেল সিরাজী মঞ্জিলের উদ্দেশ্যে।
——————————
পরের দিন নতুন দালানের কাছে দাড়িয়ে আছে দুলাল সিরাজী।
কাকন এসে সালাম দিলো,” আসলামু আলাইকুম সিরাজী আব্বা।”
কাকন কে দেখেই হাসি দিয়ে বললো,”ওয়ালাইকুম আসসালাম,,শরীর কেমন?”
কাকন বললো,” জি ভালো,, আপনার পান। ”
দুলাল হাত বাড়িয়ে বললো,”হ্যাঁ দেও,, মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার পানের ভিতর ই আমার জান। এত মজা আর কারো পানে কেন যে পাই না। এই কয়ডা দিন খুব খায়তে মন চাইছে।”
কাকন মুচকি হাসলো তারপর বললো,” এই যে এখন সুস্থ হয়েছি এখন থেকে রোজ দিবো।”
দুলাল পান মুখে দিয়ে বললো, হ্যাঁ যাও ভেতরে যাও, এইখানে মেলা পরপুরুষ আছে তোমার মতো রুপোবতীর না থাকাই ভালো”।
কাকন মাথা নেড়ে প্রস্থান নিলো।
কিছু টা দূরে আসার পর রুহুলের চাচাতো ভাই মহীবুল কাকন এর সামনে দাড়ালো বললো, “আরে কাকন মতী যে,,কি অবস্থা। আহারে শরীর এর কি অবস্থা হইছে।”
কাকন আস্তে বললো, “রাস্তা ছাড়ুন।”
মহীবুল নিজের বুকে হাত রেখে বললো, ” ইশ কত্ত দিন পর তোমার কন্ঠ হুনলাম।পরাণ ডা ভইরা গেলো।”
হঠাৎ শোনা গেলো এত ভারী গম্ভীর কন্ঠ “মহী,,কি করছিস ওখানে।”
মহীবুল পিছনে ঘুরে দেখলো রুহুল দাঁড়িয়ে আছে। রুহুলকে দেখে মহীবুল বললো,”দ,দা,দাদাভাই,,কিছুই না,, আমি যাই বলে চলে গেলো।
মহীবুল চলে গেলে রুহুল কাকনের কাছে এসে বললো, “শুনলাম আপনার হাতের পান নাকি সবার সেরা।”
কাকন নিশ্চুপ
রুহুল আবার বললো,” চুপ করে আছেন কেন?”
কাকন কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলো।
রুহুল মনে মনে অবাক হলো, ভাবলো বাহ মেয়ের সাহস আছে।লেখিকা স্রোতস্বীনি।এখান কার মেয়েরা যেখানে রুহুল সিরাজীর জন্য পাগল আর উনি কিনা একবার তাকালোও না। ভেবে প্রস্থান নিলো রুহুল ও।
________________________
কাকনের কাছে মহিলাশালার ২টা মেয়ে ফুল আর রিতা এলো। তারা দূর থেকে দেখছিল রুহুল আর কাকন কে।
ফুল এসে বলল,” কিরে কাকন তর সাথে রুহুল সিরাজী কি কথা কইলো?”
রিতা বললো,” হ্যাঁ রে বল না! ”
কাকন দুজনকেই বললো,” কিছু না।”
ফুল বললো,”বাহ রে তরে রুহুল সিরাজীর কথা সবার আগে আমিই তরে কইছিলাম আর তুই কিনা আমারেই কইবি না। ”
কাকন বিরক্তিকর মুখ নিয়ে বলল,”সত্যি কিছু না।”
রিতা এবার বললো,” যদি কিছু বলে আমাদের কিন্তু কইবি। ”
কাকন হ্যাঁ জানালো।
———————————-
সিরাজী মঞ্জিলঃ
বিশ্রাম শালায় বসেছে জরুরী বৈঠক।
দুলাল সিরাজী বললো,”হেলাল কাম কতদুর”?
হেলাল দাদার উদ্দেশ্যে বললো,” দাদাজান, মেলার কাম প্রায় শেষের দিক।”
দুলাল সিরাজী বললো,” হ্যাঁ শেষ হওয়া ই চাই। ১ তারিখে হালখাতা টা শেষ হোইক। ৩রা বৈশাখ থিকা মেলা শুরু করার কথা কইবা। এই দায়িত্ব তোমারে দিলাম।”
হেলাল বললো, ” জি দাদাজান সব হইবো।”
দুলাল সিরাজী এবার মহীবুল কে বললো,”মহী, তুই খেয়াল রাখবি মেলায় জানি কোন ঝামেলা না হয়।”
মহীবুল বললো,”জি দাদাজান আপনে কোন চিন্তা কইরেন না ”
দুলাল সিরাজী বললো,” চিন্তা কি আর সাধে করি তোমাগো কোনো ভরসা নাই। রুহুল রেই দিতাম তয় রুহুল সেইদিন আবার আমলাপাড়া শহরে যাইবো ব্যবসার কামে। ৩রা বৈশাখ মাল দিতে যাইবো রুহুল ওইখান থিকা সতে আসতে সন্ধ্যা হইতে পারে। মহী সব কাম জানি ঠিক মতো করা হয়।
মহীবুল মনে মনে গালি দিলো সে মোটেও রুহুলের গুণগান পছন্দ করে না মিথ্যে হাসি দিয়ে বলল, “সব ঠিক মতো করমু দাদাজান,,ভুল ধরার ও সুযোগ ই দিমু না আপনারে”
চলবে…
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️