আষাঢ়ি পূর্ণিমা পর্ব ৮

0
318

#আষাঢ়ি_পূর্ণিমা
#পর্ব_৮
✍️ খাদিজা আক্তার-??????? ????? (Diza)

—আমাকে এখন যেতে হবে।

সাজ্জাদের কথা শুনে আদী নড়েচড়ে বসল। একটু সময় নিয়ে বলল,

—চলে যাবি?

—হ্যাঁ, ঘটনা ঘটেছে এক জায়গায় আর কেস চলবে অন্য জায়গায়। অনেক ঝামেলা আছে। তাছাড়া পোস্টমর্টেমে কী আসবে কে জানে। এমনিতেই সুই””সাইড কেস তারপর অন্য কিছু বের হলে…

সাজ্জাদের কথার মাঝে আদী প্রশ্ন করল,

—অন্য কিছু বলতে?

—দেখ তোর হয়তো শুনতে খারাপ লাগতে পারে। তবে তোদের কথা শুনে মনে হচ্ছে জল অনেক দূর দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমি সবটুকু দেখব। কিন্তু এরজন্য প্রচুর সময় ব্যয় হবে।

—তা হোক, কিন্তু এর শেষটুকু না দেখলে ফুপুকে মুখ দেখাতে পারব না রে। তার ছেলে নেই। স্বামী তো থেকেও না থাকার মতো। এখন আমার ওপরই একমাত্র ভরসা করে আছেন।

এ বলে আদী উঠে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদের ডান হাত নিজের দুই হাতে চেপে করুণ গলায় বলল,

—আমাকে হতাশ করে দিস না। বাংলাদেশের আইনকানুন বিষয়ে আমি জানি। তাই তো তোর ওপর ভরসা করে…

সাজ্জাদ, আদীর পিঠ চাপড়ে বলে ওঠল,

—আহা! ভাবিস না। আমি তো বললাম চেষ্টা করব। তুই খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিস আদী। এমন অবস্থায় আমি তোকে কখনো দেখিনি। যা এখন গিয়ে রেস্ট নে। কী হলো না হলো আমি তোকে প্রাইভেটলি জানাব। So, don’t worry man.

সাজ্জাদ হয়তো আদীকে আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু সাজ্জাদ কতটুকু পারবে স্বর্ণালিকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া রহস্যের জাল ভেদ করতে?

*

দুই দিন হয়ে গেছে। বড়ো বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যায়নি রাত্রি। ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করেছে স্বেচ্ছায়। তার মন খারাপ— এ কথা এখন আর সে মানতে চায় না। একজন মানুষের দিনরাত্রি মন খারাপ হয় কীভাবে সেটিই রাত্রি বুঝতে পারে না। কিন্তু মন তো খারাপ হয়েই আছে।

ইব্রাহিম উঠেপড়ে লেগেছে রাত্রিকে বিয়ে করার জন্য। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আরও দুই মাস পর। কিন্তু গতকাল না কি ইব্রাহিম এসে জানিয়ে গেছে, আগামী পনেরো দিনের মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ করতে হবে। রাত্রি স্পষ্টই বুঝতে পারছে ইব্রাহিম রেগেমেগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কারো রাগের বলী সে কেন হবে?

—রাত্রি?

হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বরে চমকে ওঠল রাত্রি। ঘরময় অন্ধকার। কপাল হাত রেখে চোখ বুজে সে শুয়ে ছিল। তার ঘরে সচারাচর কেউ আসে না। অভি আসে কালেভদ্রে, কিন্তু সে বেচারা এখন পড়াশোনা নিয়ে মত্ত। তাই তার দেখা মেলা ভার।

মাগরিবের আযান হয়েছে অনেক আগে। ফলে ঘরে এত আলোর সংকট। কিন্তু খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করা আলোয় রাত্রি দেখতে পারছে কারো ছায়ামূর্তি। এ ছায়া আদীর শরীরের। এটি টের পেয়ে রাত্রি খুব দ্রুত নিজেকে ভদ্রস্থ করল, কিন্তু পরিপাটি হওয়ার আগেই আদী ঘরের আলো জ্বেলে দিলো। চোখাচোখি হতেই আদী সামান্য লজ্জায় সিক্ত হয়ে বলল,

—আমি ছাদে অপেক্ষা করছি।

এ বলে আদী বের হতে চাইলে রাত্রি এরই মাঝে নিজেকে পরিপাটি করে বলল,

—রাতের বেলা আমি ছাদে যাই না।

—ও। তাহলে কী করব?

—যা বলতে এলে বলো।

আদী স্থির দৃষ্টিতে রাত্রিকে দেখে বলল,

—মানুষ আকাশের মতো। হুটহাট কেমন রঙ বদলায়।

—তুমিও তো মানুষ। সেক্ষেত্রে তোমাকেও এটি বলা যায়।

আদী হেসে ওঠল। বলল,

—তা যায়। ওকে এখন আসল কথা বলি। শুনলাম তোমার না কি বিয়ে একদম ফিক্সড হয়ে গেছে?

প্রশ্ন করতে গিয়ে আদী বিছানায় বসল। রাত্রি এতক্ষণ যে বালিশে মাথা রেখে শুয়েছিল, সে বালিশ কোলে নিয়ে হাত রাখল। কী আশ্চর্য! বালিশ একই সাথে তপ্ত এবং ভেজা-ভেজা লাগছে। কিন্তু এ নিয়ে আদী কিছু জিজ্ঞাসা না করে পূর্বের প্রশ্নের উত্তর চাইল,

—চুপ করে আছ কেন?

—যে উত্তর তুমি জানো, সে উত্তর আমার কাছে কেন চাইছ?

—রাত্রি, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। এখনো হয়তো করতাম, কিন্তু স্বর্ণালির সুই””সাইডের খবর পেয়ে আমার সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে। তোমাকে নিয়ে আমার ভয় রাত্রি। কিন্তু তুমি…

অবাক চোখে তাকিয়ে রাত্রি জিজ্ঞাসা করল,

—ভয়? কীসের ভয়?

—আমি জানি তুমি বিয়েতে রাজি নও। ইব্রাহিমকে তোমার পছন্দ হয়নি। ওই শালা কী চিজ আমিও জানি৷ কিন্তু তোমার বাপ চাচা আমার মতো খারাপ পোলার কথা শুনতে চাইলে তো?

আদী হড়হড় করে বলা কথা শুনে রাত্রি আরও চমকে গেল। তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এ বিষয়ে আদীর সাথে তার কোনো আলাপই হয়নি। তাহলে আদী এসব জানল কী করে?

—আমি বিয়েতে রাজি নই— এ কথা তোমায় কে বলল?

—ঠিক যেমন করে বুঝতে পারছি তুমি একটু আগে নাকের পানি আর চোখের পানি এ বালিশে মুছেছ। ছিঃ! বাচ্চাদের মতো সর্দি মোছার অভ্যাস তোমার যায়নি?

আদীর কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে মজা করছে। কিন্তু রাত্রি নির্জীব হয়ে রইল। এমন সস্তা কথায় তার মাঝে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।

—এত চুপ করে থাকো কেন? এটি যে মিথ্যা তাও তো বলতে পারো।

—মিথ্যা যখন জানো। তাহলে অর্নথক কথা কেন বাড়াচ্ছ?

—বিরক্ত হচ্ছ?

—আদী, তোমার কি সত্যিই কিছু বলার আছে? না থাকলে…

—না থাকলে? চলে যেতে বলছ? তাড়িয়ে দিচ্ছ আমায়?

—আমি কিছুই করছি না। এক মেয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সুই””সাইড করেছে তা নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা আছে?

—চিন্তা করি না তোমায় কে বলল? স্বর্ণালি নিজের সবটুকু হারিয়ে মরে গেছে। তবে আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে অন্য কথা জানিয়ে গেছে।

—কী কথা?

—তোমাকে চোখে চোখে রাখতে।

—আমাকে? চোখে চোখে? কী যা-তা বলছ তুমি? এমন সন্ধ্যা বেলায় উলটো পালটা বকে যাচ্ছ কেন? ছাইপাঁশ খেয়ে এসেছ আমার সাথে দেখা করতে?

—সিগারেট ছাড়া আমি অন্য কিছু খাই না সেটি তুমি ভালো করেই জানো। আর সিগারেট খেলে নেশা হয় কখনো শুনেছ?

—উঃ! তুমি যাও। আমি পায়ে পড়ছি তোমার। চলে যাও আমার ঘর থেকে। সম্পর্ক শেষ করতে চেয়েছিলে আমি করেছি। এখন দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আমার জীবন আমি ঠিক গুছিয়ে নিতে পারব। তুমি তোমার বুশরাকে…

আদী আর নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। রাত্রির গালে কষে এক চড় বসিয়ে গর্জে ওঠল,

—কিয়ের বুশরা? খালি বুশরা বুশরা করো। এই ছেড়িরে আমি কোনো দামই দেই না। ভাল লাগছিল। এ কারণে কয়ডা দিন কথা কইছিলাম। এহন কথা কইলে কেউ যদি আমার ওপর গইল্লা পড়ে তো আমি কী করতাম? কিছু হইলেই বুশরা বুশরস করো। আমি কোনোদিন কইছি যে এই ছেড়িরে আমি বিয়া করমু, ওর লগে আমার পিরিত চলে? আমি আইছিলাম তোমারে বুঝাইতে, তোমার কাছে জানতে। তুমি এ বিয়ে করবা না কি আমি কোনো ফন্দি কইরা ভাইঙা দিমু। আমি তো জানি তুমি ওই শালা পছন্দ করো নাই। তাছাড়া তুমি লেখাপড়া কইরা চাকরি করতে চাও। আর এক উস্টার কথা কও, সম্পর্ক শেষ, সম্পর্ক শেষ।

আদী এবার রাত্রির দুই বাহু চেপে মুখোমুখি টেনে এনে বলল,

—কোন সম্পর্ক শেষ? দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের? বন্ধুত্বের? না কি এক বছরের তৈরি হইছে যে সেই সম্পর্কের?

আদীর হাতের চাপে রাত্রি বাহু ব্যথায় টনটন করে ওঠছে। চোখে পানি জমছে একটু একটু করে। কিন্তু রাত্রি সবটুকু সময় চুপ করে রইল। আদী এবার রাত্রিকে ছেড়ে দিলো। ধাক্কা দিয়ে যেন পিছনে ঠেলে দিলো।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here