সুপ্ত বাসনা পর্ব ২৯

0
850

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৯

– “আপনি আসলেই একটা অসভ্য।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “জ্বি ম্যাডাম, জানি তো?” মিম ইমানের চুল আঁকড়ে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,
– “অসভ্য অসভ্য অ…..সভ্য।” ড্রাইভার মিটিমিটি হাসতে হাসতে দু’জনের খুনসুটি দেখে ইমান’কে জিজ্ঞেস করে,
– “স্যার! আমরা কি যাবো?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “পাগলের পাগলামি দেখতে পাচ্ছো না? আবার জিজ্ঞেস করছ?” মিম ইমানের নাক টেনে ধরে বলে,
– “ওই….ওই তুমি পাগল কাকে বলছ?”
– “কেন তোমাকে? আবার জিজ্ঞেস করছ?” মিম আরো দু’চার ঘা ইমান’কে দিয়ে বলে,
– “এই….শোনো? তুমি কিন্তু আজকাল বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করেছ?” ইমান মুখ টিপেটিপে মিম’কে বলে,
– “পাগল’কে বললে দোষ? আশ্চর্য!” মিম এবার ইমান’কে ঝাড়ি মেরে বলে,
– “চুপ একদম চুপ….এই….যে তুমি কি শুরু করেছ?”
– “কিছুনা গো,তুমি শুধুশুধুই আমাকে বকছ।” মিম দাঁত মুখ খিচিয়ে ইমান’কে বলে,
– “জানেন? আপনি কতটা অসহ্য? কপাল ভালো তোর এতো ঘাড়ত্যাড়া হওয়া স্বত্বেও আমার মতো একটা মেয়ে’কে পেয়েছ।”
– “হুমম,তুমি ও ভাগ্যবতী কম নও আর তাই হয়তো আমার মতো একজন হ্যানসাম,ড্যাশিং ছেলে’কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চলেছ।আফটার অল বিয়ের জন্য তুমি’ই আমাকে ইনসিস্ট করেছ।” মিম আবারো গাল ফুলিয়ে ইমান’কে বলল,
– “এই….বার আমি নিজেই বাবার পছন্দে বিয়ে টা করতে চাই জনাব,আপনা’কে বললাম তো?”
– “তাহলে কি আমি ক্যান্সেল?”
– “হুমম।”
– “কারণ?”
– “এতো ইগো ইস্টিক একজন লোকের সাথে আমি কি করে থাকবো? আমি বহুত ছেঁচড়া হয়েছি আর হতে চাই না জানেন তো?” ইমান মিমের মাথা টা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “মিষ্টি,তুমি কিন্তু এবার একটু বেশিই বলে ফেলেছ?”
– “আরাব! আপনার সম্পর্কে কোনোকিছু না জেনেশুনে আমি আপনার সাথে কি করে গোটা একটা জীবন কাটাবো? বিয়ে টা তো কোনো ছেলেখেলা নয় আরাব! আমি কেন অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাবো? দেখুন, আমি আপনার সাথে সুখে থাকতে চাই,আপনার ভালোবাসা পেয়ে আপনা’কে নিয়ে গোটা জীবন টা কাটাতে চাই আর আমি কি বলবো?” ইমান মনেমনে বলে,
– “খুব তাড়াতাড়ি মিষ্টি,আমি আমার সত্য টা সবার সামনে অর্থাৎ প্রকাশ্যে আনবো।তুমি তখন আর অনিশ্চয়তায় কাটাবে না বরং আমার সাথে সুখে জীবন কাটাতে চাইবে পাগলী বুঝেছ?” এদিকে আজ ইশানের চোখে ঘুম নেই,চারপাশে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে ও….উর্মি’কে ফোন করেছিল অথচ মেয়েটা আসবে বলে একরকম গায়ের হয়ে গেলো।ইশান বসা থেকে উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ফোসকা পরা চেহারা টা দেখতে পেলো,কিছুতেই বুঝতে পারছেনা কার কাছ থেকে এমন মারণ রোগ বাঁধিয়ে এসেছ ও? বারবার মনে হচ্ছে ওর হয়তো উর্মি ও এই….রোগে আক্রান্ত? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? উর্মি শুধু ওকে’ই ভালোবেসেছিল।ইলহান সাহেব এসে ছেলে’কে জিজ্ঞেস করেন,
– “শুনলাম,তুমি আজ ডক্টর দেখিয়ে এসেছে?”
– “ওই…বাবা ভয়ের কোনো কারণ নেই,তোমরা শুধুশুধুই দুশ্চিন্তা করছ।”
– “ডক্টর রিয়াদ,তোমার রিপোর্ট দেখে কি বলল?” ইশান বলল,
– “তেমন কিছু না বাবা,দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই বুঝেছ?” ইলহান সাহেব তখন ছেলের সামনে একটা ব্রাউন কালারের ফাইল রেখে দৃঢ় গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি কেন তোমার ছোটো ভাই’কে খুন করেছ?” ইশান কিছুক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে,
– “তাহলে তুমি সবটা জেনে গিয়েছে?”
– “এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয় ইশান,তুমি কেন আমার ছোটো ছেলে’কে খুন করেছ?”
– “তাহলে তো বলতে হয় বাবা! ভুল টা প্রথম থেকেই তোমরা করেছ,তোমরা কেন সারাজীবন আমাকে ইমানের সাথে তুলনা করেছ? তোমার কেন বারবার আমাকে অনুভব করিয়েছ,যে আমি অপদার্থ এবং অকালকুষ্মাণ্ড? কি হলো জবার দেও বাবা? আজ করে চুপ করে আছো? তোমার কি কখনো আমার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করেছ? বরং,বারবার আমার খারাপ কাজ গুলো করার জন্য আমাকে বোঝানোর বদলে উল্টো আমাকে মারধোর করেছ।”
– “তাই বলে ছেলে টা কে মেরে ফেলবি তুই? কি দোষ করেছিলো ও?”
– “ওর কোনো দোষ নেই বাবা! দোষ তোমরা করেছ,সবসময় আমাকে ভালো জিনিস গুলোর বদলে খারাপ টাই দিয়েছ আর এখন এসে তোমরাই কৈফিয়ৎ চাইছ বাবা? আশ্চর্য!” ইলহান সাহেব চিৎকার করে বলে ওঠেন,
– “মিম ভুল ছিলো না,তোকে একদম ঠিক চিনেছে ও।”
– “ওর এক টাই দোষ বাবা! বড্ড বেশি বোঝে ও,তবুও আমি ওকে ভালোবাসতাম আর ও আমাকে তার কি প্রতিদান দিয়েছে,নিশ্চয়ই দেখতে পেয়েছ?” হঠাৎ রাইমা ছেলে’কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– “তুমি এটার’ই যোগ্য।”
– “তাহলে জন্মের পরেই কেন আমাকে মে’রে ফেললে না মা? এখন কেন এসে অহেতুক কথা খরচ করছ? এতো কথা খরচ করলে তোমার মৃত ছেলে ফিরে আসবে না মা বুঝেছ?” তখন আরাব রাইমার পেছন থেকে বেড়িয়ে এসে ইশানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
– “কে বলবে আসবে না ভাই? ফিরে এসেছে ও,মিম তখন এগিয়ে এসে ইমানের মুখ থেকে ‘প্রস্হেটিক ফেইস’ টা তুলে নিলো।” ইশান আবাক হয়ে বলল,
– “ই ই ই……ইমান তুই?”
– “হ্যাঁ,আমি ভাইয়া।তুমি আমাকে কি ভেবেছ? একবার সবটা খুলে বলতে পারতে তা না করে তুমি আমাকে তোমার রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছ,নেহাৎ আমার ভাগ্য ভালো ছিল বলে’ই সেদিন খাদে এক্সিডেন্ট হওয়ার দু’দিন পরে কিছু গ্রামের লোক আমাকে খুঁজে পেয়েছিল আর ছয় মাস কোমায় ছিলাম তারপর হঠাৎ একদিন আমার জ্ঞান ফিরে এলো,অতঃপর আমি জানতে পারলাম তুমি আমার বন্ধু জিহাদ’কে ও সব জেনে যাওয়ার মে’রে ফেলেছ।তুমি এমন কেন ভাইয়া? তুমি কি জানো তুমি একটা পরিবার’কে পথে বসিয়ে দিয়েছ? আমার প্রতি হওয়ার অন্যয় নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই,আমার আক্ষেপ তুমি আমার বন্ধু’কে বিনা দোষে মে’রে ফেলেছ,একজন বাবা-মায়ের কাছ থেকে তুমি তাদের সন্তান’কে কেড়ে নিয়েছ।আমি চাইলে তোমার মতো নিচে নামতে পারতাম কিন্তু পারিনি বুঝেছ? আমার বাবা-মায়ের শিক্ষা এমন না তারা আমাকে এই….শিক্ষা দেয়নি বুঝেছ? এই….মেয়েটি (মিম) ছেলে (মিহান) সেজে থেকেও বুঝতে পারেনি,চিনতে পারেনি তোমাকে কারণ এটা ওর শিক্ষা ওর সরলতা বুঝেছ? আর হ্যাঁ,ভালো কথা মিহান কোনো ছেলে না মেয়ে, আমাদের বাবা মিম’কে অনেক অনুনয়-বিনয় করে অস্ট্রেলিয়া থেকে শুধুমাত্র তোমার জন্য ডেকে এনেছিল,কিন্তু মেয়ে টা তোমাকে বদলাতে পারেনি ও নিজেই তোমাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে ছিল,তুমি এসব কেন করছ ভাইয়া? এসব করে তোমার কোনো লাভ নেই,তুমি প্লিজ সরে আসো,নিজেকে একটু সময় নিয়ে দেখো ভাইয়া এ বাড়িতে কেউ তোমাকে কম ভালোবাসেনা বুঝেছ? উর্মি আজ শুধু মাএ তোমার কারণে অসুস্থ,মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি কারণ জানো? কারণ সিফিলিস রোগের সাথে সাথে তোমার সন্তানের মা হতে চলেছ ও,ওর শরীর এতোটাই খারাপ আই.সি.ইউ এর মধ্যে আছে,ডক্টর বলেছিল,
– “বাচ্চা নষ্ট করে দিন।” কিন্তু সেটা কিছুতেই সেটা চাইছে না ও আর আজ তুই শুধু নিজের জেদের জন্য নিজের সাথে সাথে উর্মি সহ বাচ্চা টাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছ,তুই জানো শুধু বাচ্চা টাকে বাঁচানোর জন্য উর্মি তোর সাথে নয় মাস আগে ব্রেকআপ করেছিল,কারণ ও তোকে, হ্যাঁ ভাইয়া তোকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছিল।তবুও ও বাচ্চা টাকে নষ্ট করেনি কারন ও শুধু এই….বাচ্চা টাকে নিয়ে তোকে নিয়ে সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিল আর তুই? দায়িত্ব নিয়ে নিজের হাতে সব ধ্বংস করতে উঠে পরে লেগেছ?” তখন হঠাৎ মিম ইশান’কে বলে উঠলো,
– “আমি উর্মির মুখ থেকেই আজ শুনেছি,তুমি ওর সাথে সেদিন রাতে বিজনেস রিলেটেড কথা বলতে গেছ।যাগগে বাদদেও,কংগ্রাচুলেশনস ইশান ভাই! তুমি এক পুএ সন্তানের জনক হয়েছ।” ইশান কি ভেবে বলে উঠলো,
– “আমি হাসপাতালে যাবো।” হাসপাতালে এসে ইশান ছেলে’কে কোলে তুলে নিয়ে উর্মির কপালে চুমু খেলো।” মিম তখন ইমান’কে রেগে গিয়ে বলে,
– “তুমি আমাকে ঠকিয়েছ।”
– “কই ঠকালাম? বাড়িতে আসার সময়ে পথে সব খুলে বললাম তো?”
– “কেন স্কুলে থাকতে তুমি কতশত মেয়ের সাথে প্রেম করেছ?”
– “আশ্চর্য! সে সব ইশান করেছে।তুমি কেন মিষ্টি আমাকে শুধুশুধু দোষারোপ করছ?”
– “নিজে যেন সত্যি কথার জাহাজ? তুমি একটা অসভ্য।”
– “যদি মরে যেতাম?” মিম এবার ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো আর ইমানের বুকে মুখ লুকোলো সাথে সাথেই পুলিশ অফিসার উম্মে নিহান এসে বললো,
– “ইমান সাহেব আমাকে ডেকে পাঠালো।” এটা শোনা মাত্রই সবাই বেশ অবাক হয়ে ইশানের দিকে তাকলো।ইশান শান্ত গলায় উর্মির মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
– “আমি আমার সন্তানের কাছে খুনি কিংবা প্রতারক হয়ে বাঁচতে চাই না বুঝেছ? আমি যেটা করেছি এটাই আমার প্রাপ্য,অন্তত আমি আমার ছেলের সামনে মুখ দেখাতে পারবো,তার গর্বিত বাবা হতে পারলেও বাবা তো…..উর্মি যদি এখন আমাকে অনুমতি দেয়,আমি ওর অনুমতি নিতে কাজি ডেকে এখুনি আমাদের বিয়ে টা সেরে ফেলবো….কারণ কেউ আমার সন্তান’কে জারজ সন্তান কিংবা অবৈধ সন্তান বলুক সেটা আমি চাই না বুঝেছ? পরিশেষে, আমি মিম এবং আমার ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইবো…হিংসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আর তাই ঘটিয়ে ফেললাম এমন একটা কাণ্ড…অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই,তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছ এবার আমি সংশোধনাগাড়ে গিয়ে নিজকে পুরোপুরি বদলে ফেলার চেষ্টা করবো।” ইশানের কথা শুনে হাসপাতালে উপস্থিত সবাই কেঁদে ফেললো,মিনিটখানেকের মধ্যেই কাজি এসে ইশান এবং উর্মির বিয়ে পড়িয়ে ফেললো….ইশান পুলিশের সাথে চলে যাওয়ার সময় মিম বললো,
– “ভাইয়া আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।” ইশান মৃদু হেসে যেতে যেতে বললো,
– “যতই তুমি আমার ছোটো ভাইয়ের বউ হও না কিন্তু সুযোগ পেলে সৎ ব্যবহার আমি অবশ্যই করবো।” ইশানের কথা শুনে মিম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
– “মোট কথা দু’টোই অসভ্য।” উর্মি মৃদু হেসে মিমের হাত চেপে ধরে বলে,
– “এতো রাগ করছ কেন বেস্টি? সুস্থ হয়ে আমি নিজের হাতে’ই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– “বুঝলে ভাবি? বেলি ফুল টেলি ফুল বাদ…আমার বাসর ঘর আমি গাধা ফুল দিয়ে সাজাবো।” মিম রাগে আগুন হয়ে বলে,
– “তুই যেমন গাঁধা? কথা টাও তেমন গাঁধার মতোই বলেছ।” মেয়ের কথা শুনে আমির সাহেব হাসতে হাসতে নিজের স্ত্রী’কে খোঁচা মেরে বললেন,
– “বুঝলে শোভা? আমাকে নিয়ে চলো নয়তো মেয়ের ঝগড়া দেখে অসুস্থ হয়ে পরবো।” মিম গাল ফুলিয়ে বলে,
– “সবাই খুব খারাপ অসহ্য।”

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here