#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৭
“আজ রাতে তুমি তোমার নতুন স্বামীর সজ্জা সঙ্গিনী হবে,খুব অহংকার না তোমার? সব ধুলোয় মিশে যাবে।তারপর তুমি নিজেই ঘৃণা করবে নিজের শরীর টাকে।”
মিম বসে বসে মোবাইলে গেইমস খেলছি,তখন ইমান ও ইশান মিলে প্রেস ব্রিফিং সেরে আসে আর বেচারি তখন ইমানের বুকে ঢলে পরে পরে সাথে সাথে।ইশান ধূর্ত হাসি দিয়ে ইমান’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “মিম’কে এভাবে নিয়ে যাওয়া যাবে নাঃ! সবার চোখের সামনে থেকে….তুই গিয়ে গাড়িতে বোস,ভাই আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আমার বিশ্বস্ত লোক জামাল ভুঁইয়ার সাথে।” ইমান মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “আগে বল তুই কি খাইয়েছিস ওকে?”
– “জাস্ট অর্ধেক টা ঘুমের ঔষধ,তাও আবার ওর ফেভারিট অরেঞ্জ জুসের সাথে।”
– “বাহ! এতো ভালোবাসার পরে ও তোর খারাপ লাগছে না ওকে আমার হাতে তুলে দিতে?” ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “খারাপ তো তখন লাগবে,যখন ও ভালোবাসবে আমাকে….তবে তা আর কখনো সম্ভব নয়,কারণ ও সারাজীবন হেয় করে এসেছে আমাকে।আমি ওকে আমার স্কুল লাইফ থকে পছন্দ করতাম,কিন্তু ও কখনো পাত্তা দেয়নি ‘হ’ আমাকে।সারাক্ষণ আমার ছোটো ভাই……!
– ” ছোটো ভাই?”
– “না মানে আরকি লেগে থাকতো আমার পিছে….কিন্তু আমি যখন জানতে পরলাম আমার ভাই ইশান ওকে পছন্দ করে,তখন আমি সরে আসি ওর রাস্তা থেকে।
– “তারপর?”
– “তখন ইশান প্রেম করে উর্মির সাথে।ও ছিল খুব বাজে একটা ছেলে,ইমান সেজে মিম’কে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আমার কাছ থেকে,তবে তাতে লাভ বিশেষ হয়নি….তবুও ও মিম’কে দেখাতে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে,সে উর্মির সাথে।সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ আর আমি প্রপোজ করতে চেয়েছিলাম ওকে…কিন্তু মিম! ও আমাকে ইশান ভেবে দূরে সরে গেলো আমার কাছ থেকে।আমাকে ভোলার জন্য মেয়েটা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলো,তারপর মেয়েটি সত্যি ভুলে গেলো আমাকে।” ইমান ইশানের কথা শুনতে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– “বানিয়ে বানিয়ে তুই আর কত মিথ্যে বলবি লোকের কাছে?” ইশান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো?
– “মানে?”
– “মানে,ভাই! আমি একটু ফাইজলামি করলাম তোর সাথে।” ইশান হাসতে হাসতে বললো,
– “ওহ! তাই বল,তুই তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আমাকে?”
– “আরেহ না ভাই,আমি এখন ফার্ম হাউসে যাবো,তুই মিম’কে পাঠিয়ে জামাল ভুঁইয়ার সাথে।” ইশান গিয়ে লোকলস্কর দিয়ে মিম’কে ফার্ম হাউসে পাঠিয়ে দেয় ইমানের কাছে।ইমান কফি খেতে খেতে ইশানের ফটো ফ্রেম হাতে তুলে নিয়ে বলে,
– “আরেহ! ভাই,তোর কি এতোটাই বোকা বলে মনে হয় আমাকে? আমাকেই আমার গল্প শোনালি আর ভিক্টিম বলে প্রমাণ করতে চাইলি নিজেকে? হ্যাঁ,উর্মির সাথে তোর সম্পর্ক ছিল,তোর শারীরিক সম্পর্ক ছিল ওর সাথে….শুধুমাএ,তোর জন্য মিম আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিল কারণ,আমি আমার মনের কথা গুলো গিয়ে খুলে বলেছিলাম তোর কাছে।কি করে বুঝবো? তুই আমার ঘর শত্রু বিভীষণ? তুই বিপদে ফেলবি আমাকে? যাগগে,খেলা তো সবে শুরু ভাই! দেখ না কি কি হয় তোর সাথে?” উর্মি ইশানের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করে,
– “কি হলো? এমন লাগছে কেন তোমাকে?” ইশান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উর্মি’কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
– “ন্যাকামো করো না তো….যাও প্লিজ,চলে যাও এখান থেকে।”
– “কেন ইমান? তুমি তো আসতে বলেছিলে আমাকে…এখন যখন নিজেই মিম’কে আরাবের হাতে তুলে দিয়ে এসেছ,তখন হঠাৎ পূতপবিত্র মানুষ হয়ে গেছো নাকি মন থেকে?”
– “জানি নাঃ,প্লিজ উর্মি? ঘ্যান ঘ্যান করো না কানের কাছে।” উর্মি হাসতে হাসতে ইশান’কে বললো,
– “কামওন,ইশান! তুমি কেন খারাপ করছ আমাদের এই…মধুর রাত টাকে? ওহ!…..সরি সরি,তুমি আসলে ভাবতেই পারছনা মিম আজ আরাবের সাথে রাত কাটাবে?” ইশান হঠাৎ উর্মির গলা চেপে ধরে বলে,
– “চুপ করবি তুই? এতো বকবক করছিস কেন এসে আমার কানের কাছে?” উর্মি বেশ পেয়ে গেলো,তারপর ইশান’কে ছাড়িয়ে চলে এলো বারান্দাতে, সে আজ সিফিলিস’র মতো মারাত্মক যৌন বাহিত রোগে আক্রান্ত,যেটা ও বরাবরের মতোই ইশানের কাছ থেকে লুকিয়ে গেছে…..কারণ এটাই ইশানের শান্তি,ও কেন প্রতি রাতে ছুটে যাবে নিত্য নতুন মেয়েদের কাছে? ও যে সত্যি ইশান’কে ভালোবেসেছিল কিন্তু ইশান কোনো গুরুত্ব দেয়নি তাকে।ওর মতে মিম একদম ঠিক,মেয়ে টা কে দেখলে যেন ওর শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।এদিকে ইমান এস্ত পায়ে পায়চারি করছে বারান্দাতে,তখন ইকরা এসে বললো,
– “আই থিংক, ভাইয়া তোমার এখন যাওয়া উচিৎ ভাবীর কাছে।” ইকরার কথা শুনে ইমান হাসতে হাসতে ছোটো বোনের গাল টেনে পা বাড়ালো নিজের ঘরের দিকে।
ওদিকে, মিম চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে,বোঝার চেষ্টা করছে কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে ওকে? তখন হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে মিম আবারও ঘুমের ভাণ ধরে পরে রইল,ঠিক যেমন সে ঘুমিয়ে ছিল একটু আগে।ইমান এসেই ধপাস করে শুয়ে পরলো মিমের পাশে,তখন মিম একটু এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে….এবার ইমান কিছুটা ঝুঁকে পরলো মিম একটু নড়েচড়ে উঠলো তা দেখে…ইমান ওর কপালে চুমু খেলো আর শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে।মিম বুঝতে পারলো,সে নিরাপদ শুধুশুধু দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই ওর কাছে।তখন হঠাৎ ইমানের ফোন বেজে উঠলো,ও রিসিভ করে বললো,
– “ভয় নেই স্পর্শ! মিম একদম ঠিক আছে।” মিম খুব অবাক হলো,মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– “কি? ভাইয়া? ভাইয়া জড়িত আছে?” ইমান ততক্ষণে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো,মিম দেখতে পেলো মানহা,ইকরা’কে…..ইকরা মিমের জামাকাপড় চেঞ্জ করে দিলো,মানহা ফোন করলো মায়ের কাছে,বলল,
– “চিন্তা করো না মা, মিম! আমার বাসায় আছে।” তবুও মায়ের মন মানলো না,তিনি ভিডিও কল করলেন বড় মেয়ের কাছে।তারপর দু’চোখ ভরে ছোটো মেয়ে’কে নিলেন,শুকরিয়া আদায় করলেন আল্লাহ তাআ’লার কাছে।
রাত তখন সাড়ে তিন’টা,ইমান এসে আবারও ধপাস করে শুয়ে পরলো মিমের পাশে।মিম তখন সত্যি সত্যি ঘুমে কাতর,তবুও সে ঘুমের মধ্যে দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে ছেলেটা’কে….তখন ইমানের চোখে ঘুম নেই নেশাগ্রস্তের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।তারপর ওর গায়ে পাতলা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলো,কারণ হালকা শীত পরেছে।সকালে মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে,
ইমান বা ইকরা কেউ নেই ওর আশেপাশে।মানহা রাতেই ওর বাসায় ফিরে গিয়েছিল,তবে এখন পুরো বাড়ি টা খালি পরে আছে।যতদূর চোখ যায় ষণ্ডামার্কা সব গার্ডস প্রতিটি রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।ও এতো না ভেবে ফ্রেশ হয়ে এসে ইমানের ঘর গোছালো কারণ পুরোটাই নোংরা হয়ে আছে।ইমান মিম’কে ঘুম থেকে তুলতে এসে দেখে,
ঘরে সবকিছুই ঠিকঠাক আর মেয়েটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইমান কিছু বলতে যাবে,তখন মিম ছুটে এসে ইমান’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “হায় জামাই? ইসস,এতো ভালোবাসো তুমি আমাকে?” ইমান বোকাবোকা মুখ করে বললো,
– “মানে কি ম্যাডাম? সকাল সকাল কি তোমার ঘাড়ে পেত্নী উঠেছে।” মিম ইমানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
– “নাঃ! আসালে আমি জেনে গেছি জনাব,আপনি কতো টা ভালোবাসেন আমাকে? কারণ আমি জানি…..”
– “কি?”
– “এই….যে আমাদের মাঝে আর কিছু বাকি নেই,গতকাল রাতেই সবকিছু হয়ে গেছে।” ইমান নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– “হায়রে,এই….যে? এসব কে বলেছে তোমাকে? এখন দুঃখ হচ্ছে,কোন দুঃখে সামলে রেখেছিলাম নিজেকে?” মিম ন্যাকা কান্না কেঁদে ইমান’কে বললো,
– “আপনি কি বিয়ে করবেন না আমাকে?” ইমান নিজের মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
– “কপাল আমার,বিশ্বাস করো এমন কিছু হয়নি লক্ষিটি আমাদের মাঝে।” মিম অনেক কষ্টে নিজের হাসি সামলে রেখে বললো,
– “নাঃ,আমি মানি না! পুরুষ মানুষ এমন’ই হয় আমার জানা আছে…এখন মন ভরে গেছে,তাই আর চিনতে পারছেননা আমাকে?” ইমান হঠাৎ মিম’কে কোলে তুলে নিয়ে ইজি চেয়ার বসে পড়লো,মিম এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারলো ইমানের বুকে।তখন হঠাৎ ইমানের ফোন এলো,ও ফোন রিসিভ করতেই মিম আহ! উফফ করে উঠলো মোবাইলের স্ক্রিনে ইশানের নম্বর দেখে,ইশান সাথে সাথেই কল কেটে দিলে কথা বলতে ইচ্ছে হলো না তার ইমানের সাথে….ইমান আহাম্মকের ন্যায় মিমের দিকে তাকিয়ে রইল,সে আবারো ন্যাকা কান্না কেঁদে মুখ লুকোলো ইমানের বুকে।
চলবে,,,,,,,