#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৪
মিম ওখান থেকে চলে আসার পর ইমান খুব বিশ্রী রকমের একটা হাসি দেয় নিজেকে আয়নায় দেখে….,
তারপর মনেমনে বলে,”তুমি কি মনে করো মিম? এতোটাই ধরা সহজ আমাকে? আমি যে এতো কষ্ট করে গত পাঁচ বছর ধরে এই….সত্যি টা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছি,সেটা তুমি সবার কাছে প্রমাণ করে দেবে? যদিও তুমি সবটা সন্দেহের বসে বলছ,তবুও শত্রুর কোনো শেষ রাখতে নেই।ইতিহাসে এর হাজারো প্রমাণ আছে।হ্যাঁ আমি’ই ইশান এবং আমি’ই মেরে ফেলেছি আমার ছোটো ভাই’কে।কেন মারবো না মিম? তুমি বলতে পারো? ও আমার সব পছন্দের জিনিস আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।আমি তোমাকেও ভালোবাসতাম,আজও ভালোবাসি।তবে ও মরে গিয়েও কোথাও একটা আমাদের দু’জনে মাঝে রয়ে গিয়েছে।তুমি আজও ওঁকে’ই মনে করছ,আমার স্ত্রী হয়ে ও তুমি আমার প্রাপ্য সম্মান তুমি কখনো দাওনি আমাকে,কাজেই প্রয়োজন যদি তোমাকে আমার রাস্তা থেকে সরাতে হয় আমার কিন্তু একটু ও হাত কাঁপবে না তাতে।হ্যাঁ,আমি উর্মির সাথে রাত কাটিয়েছি।ভবিষ্যতে আরো রাত কাটাবো নতুন নতুন মেয়ের সাথে।যেখানে আমার বাবা-মা আমার সত্যি টা ধরতে পারেনি,সেখানে তুমি কোনোকিছু’ই না মিম আমার কাছে।বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছ তুমি মিম! প্লিজ এমন করো না প্রিয় আমার সাথে।” মিম ঘরে এসে মনেমনে বলে,
– “ইসস,টোপ একটা দিয়ে এলাম,কে জানে কাজ কি হবে? আর যদি না-ও হয়,তাহলে যে করেই হোক এই….লোকের সাথে ইশানের এবং ইমানের সাথে আরাবের ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে।কারণ আমি নিশ্চিত কিছু না কিছু সত্যি এখনো লুকিয়ে আছে? তারপর হঠাৎ আরাব খানের আগমন,বিষয়টি খুব ভাবাচ্ছে আমাকে।কি উদ্দেশ্য তার? হঠাৎ যে কেন চলে এলো বিদেশ থেকে? যদিও তার খারাপ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়নি,তবুও কি জানি তার মনে কি আছে? আমি আর অনিশ্চয়তার মধ্যে বাঁচাতে চাই নাঃ! আমি জানতে চাই,ওই….এক্সিডেন্টের পেছনে কোন সত্যি লুকিয়ে আছে? আর এসব যদি প্রি-প্ল্যান্ড হয়,তবে আমি নিশ্চিত এর পিছনে শুধুমাত্র ওই….অকালকুষ্মাণ্ড,অপদার্থ ইশানের হাত আছে।কারণ ও সবসময় অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার ধান্দায় থাকতো অথচ ইমান কত শ্রম দিয়েছে এই…কোম্পানিগুলোর পিছে? ওর কত পরিশ্রম,ও কি করে হুট করে সব কোম্পানি থেকে টাকা তুলে বলা নেই কওয়া নেই শেয়ার মার্কেটে লাগিয়ে দেবে? আমি এবার নিশ্চিত কোনো না কোনো ঘাপলা অবশ্যই আছে।” বেশ কয়েকদিন ধরে ইশান খেয়াল করে দেখছে,ব্রনের মতো গুটি দেখা দিয়েছে ওর ফেইস এবং হাতে।মিসেস রাইমা ছেলে’কে ডেকে বললেন,
– “বাবা! ডাক্তার দেখিয়ে নিস।” ও এতো টা গায়ে মাখেনি পুরো বিষয়টি’কে।” সে এখন ব্যস্ত কি করে আরাব’কে রাজি করাবে বাকি প্রেজেক্টে কাজ করার জন্য ওর সাথে।ইশান যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত,তখন এম.ডি ইকবাল ফরিদ সাহেব বলল,
– “স্যার! আপনি যদি একটু অভয় দেন,তাহলে আমি একটা কথা বলতে পারি আপনা’কে। ইমান বললো,
– “বলো কি বলতে চাও তুমি?”
– “স্যার! আমার মনে হচ্ছে আরাব স্যারের আমাদের ম্যাম কে ভা ভা ভা……ভালো লাগে।” ইমান বললো,
– “কি হলো? থেমে গেলে কেন ইকবাল? বলো তোমার আরকি বলার আছে?
– “না স্যার! আর কিছু নেই ব্যস এটুকুই।”
– “ঠিক আছে,তবে তুমি এখন আসো ইকবাল।আমার অন্য কাজ আছে।” ইকবাল যেতেই ইশান মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ায় চেয়ার থেকে।তখন আরাব এসে ইমান’কে বললো,
– “কি ব্যাপার ব্রো? ডাক্তার দেখা? তোর দেখি ফোস্কা পরে পরে চেহারা অদ্ভুত হয়ে গেছে?”
– “আরে ধুরর,বাদদে না ভাই….এগুলো এমনই ক’দিন পর নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে।” মিম রুমে ঢুকতে ঢুকতে ইশান’কে অস্পষ্ট স্বরে বললো,
– “দেখে তো মনে হচ্ছে যৌন বাহিত রোগ বাঁধিয়ে এসেছেন কারো কাছ থেকে।” ইশান তেড়ে এসে মিম’কে বললো,
– “মুখ সামলে কথা বলো মিম!”
– “সত্যি কথার দাম নেই দেখছি কারো কাছে? এই….যে শুনুন আমি কোর্টে ডিভোর্স কেইস ফাই করে এসেছি এরপর আমাদের দেখা হবে কোর্টে ঠিক ছ’মাস বাদে।” ইশান ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– “ভালো,আমি ও সংসার করতে চাই না তোমার সাথে।” আরাব মিটিমিটি হেসে বলে,
– “আরে বাদ দাও না তোমরা দু’জন? কি শুরু করেছ একে অপরের সাথে?” মিম লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে আরাব’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি কি সিঙ্গেল? সিট খালি আছে?” আরাব মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলে,
– “কেন? আপনার কি পছন্দ হয় আমাকে?” মিম বললো,
– “খুব,কোনো সন্দেহ আছে? আপনার বাবা-মায়ের ঠিকানা দেন ডিভোর্স হয়ে গেলে,সম্বন্ধ পাঠাবো আমি তাদের কাছে।” ইশান মিমের কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– “তাহলে আমি কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছি? বিয়ের ঘটক হিসেবে?” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “নাঃ! আপনি,কাজি সাহেব।কাজি সাহেব হিসেবে থাকবেন ঠিক আছে?” মিমের কথা শুনে ইশান রাগে হনহন করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।মিম কি ভেবে এগিয়ে এসে আরাব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “ডু ইউু লাভ মি?” আরাব মৃদু হেসে বললো,
– “মেয়ে টা এখনো বাচ্চাই আছে,এই….তুমি কি কখনো বড় হবে না? তোমার সারাটা জীবন কি এমনই কেটে যাবে?” মিম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে?”
– “ভাবছি তোমাকে দিয়ে কি সংসার কি হবে? দেখা যাবে দিন শেষে বউ বাচ্চা,দু’জন কেই আমার কোলে কোলে রাখতে হবে।” মিম রেগে গিয়ে হঠাৎ বসে বসলো,
– “বাজে লোকটা এখনো আগের মতোই আছে।” পরক্ষণেই মিম অবাক হয়ে আরাবের দিকে তাকিয়ে রইলো।আরাব হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো ইশানের কেবিন থেকে।
চলবে,,,,,,