সুপ্ত বাসনা পর্ব ৪

0
1505

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৪

– “অবশ্যই,কোনো সন্দেহ আছে?” ইমান কি ভেবে মিম’কে একটা জিনিস দেখাতে দু’পা এগিয়ে যায় ক্লোজেটের কাছে,তারপর সেখানে থেকে একটা রেড ওয়াইন কালারের ডায়রি বের করে হাসিমুখে মিম’কে বলে,
– “তুমি ভুল, মিহ! আমাকে ভালোবাসার লোক ও এ জগতেই আছে; কেউ একজন আছে,যে আমাকে ভীষণ ভালোবেসে জীবনে প্রথম প্রেমপত্র লিখে ছিলো নিজের আনাড়ি হাতে।আমি বোকা ছিলাম,ধূর্ত ছিলাম আর তাই হয়তো কখনো বুঝতে পারিনি তার পবিত্র মন টাকে আর এর জন্যই বারবার অপমান করে ছিলাম,অসম্মান করে ফিরিয়ে দিয়ে ছিলাম তাকে এখন যদি সে কখনো এসে নিজের অধিকার নিয়ে দাঁড়ায় আমার সামনে এসে।আমার সাধ্য নেই আমি আবার ও ফিরিয়ে দেবো তাকে।আমি এবার হয়তো সত্যি সত্যি বদলে যাবো,পালটে যাবো, কারণ আমি চাই পালটে যেতে।কতকাল আর এভাবে ভবঘুরে হয়ে ঘুরবো আমি? আমিও চাই স্থীর হতে।” কথা গুলো শেষ করে ইমান পিছনে ফিরে দেখে,
মিম কোথাও নেই ওর আশেপাশে; কেন যেন ইমানের এতে রাগ হলো খুব? খুব রেগে গেছে ও মিমের ঔদ্ধত্য দেখে,মনেমনে বলল,
– “আজকাল খুব সাহস বেড়েছে এই…ছেলেটার,একটু ও গ্রাহ্য করে না আমাকে।মুখেমুখে তর্ক করবে,তারপর কথা শুনিয়ে চলে যাবে আমাকে।” অতঃপর ইমান মনোযোগ দেয় নিজের কিছু জরুরী কাজে,কাজ সেরে উঠে দাঁড়িয়ে ইমান রুমা’কে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– “মিহ’কে দেখতে পাচ্ছিনা? কোথায় গেছে?” রুমা বলল,
– “স্যার! ওর বাড়িতে,বলল,কি যেন কাজ আছে?” মিম নিজের ভাড়া বাসায় এসে কিছুক্ষণের জন্য হাফ ছেড়ে বাঁচে,পরক্ষণেই ইমানের দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে তার ভ্রু কুঁচকে যায় সাথে সাথে।মনেমনে বলল,
– “মরন! কিছুতেই,এই….লোক শান্তিতে বাঁচাতে দেবে না আমাকে।যাই ছেলেদের পোশাক পরে,দেখি, কোন ঝোলায় ধরেছে তাকে।” মিম দরজার খোলার সাথে সাথেই ইমান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
– “চ্যাম্প,ভেতরে কে আছে?” মিম চমকে গিয়ে বলে,
– “কেউ না স্যার! আপনার শরীর ঠিক আছে?” ইমান হাতের ঘড়ি টা খুলে বেড সাইডে রেখে মিটিমিটি হেসে বলে,
– “বুঝতে পেরেছি,ভাই! লুকোতে হবে না।দরজা খুলতে কি এতো সময় লাগে? আমি নিশ্চিত, ভেতরে তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে? কোই দেখি? আজ অব্ধি আমার দেখার সুযোগ হয়নি সেই মহীয়সী নারী’কে।” মিম আমতা আমতা করে বলে,
– “সে চলে গেছে স্যার! কারণ আমি চাই না,তাকে দেখাতে আপনা’কে।” ইমান পায়ের ওপরে পা তুলে বিন ব্যাগে বসে বলে,
– “আমি এতো খারাপ না ইয়ার! প্লিজ একটু নিজের হাতের কফি করে খাওয়াবে আমাকে?” মিম মাথা দোলাতে দোলাতে ইমান’কে বলে,
– “জ্বি,অবশ্যই বসুন! তা আজ জামাল পারেনি আপনা’কে নতুন মেয়ে খুঁজে দিতে?” ইমান আনমনে বলে ফেলে,
– “আমার নতুন কাও’কে চাই না,যদি সে ফিরে আসে আমার কাছে।আমি তাকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই এবং স্থির হতে চাই তার সাথে।” মিম মিনিট খানেক ইমানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
– “কি সুন্দর তাই না,আজও এই…লোকটা,ওই…উর্মি’কেই ভালোবাসে।” তারপর কি যেন হলো? দু’জনেই স্থির হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে একে অপরের দিকে।ইমান মিমের হাত থেকে কফির কাঁফ টা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “আচ্ছা,এই….তোমার বাথরুম টা কোন দিকে?” মিম ডান দিকে ইশারা করতেই ইমান কাপ টা রেখে পা বাড়ায় বাথরুমের দিকে,সেখানে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে ইমান খেয়াল করে দেখে,মেয়েদের কিছু জিনিস রাখা আছে একটা তাকের সাথে।ইমান তাই দেখে মনেমনে বলে,
– “ওহ! তাইলে ব্যাটার গার্লফ্রেন্ড এসেছিল আজ? ওর জন্য এতো ফুরফুরে লাগছে ওকে? যাগগে,ভালো।ভালো হলেই ভালো,আমার অবশ্য কিছু যায়-আসে না তাতে।” তারপর ইমান কফি খেতে খেতে মিম’কে বলে,
– “হেই,ব্রো! আজ তুমি ভিডিও গেইম খেলবে আমার সাথে?” মিম মৃদু হেসে বলে,
– “স্যার! আমার গেইম খেলতে ভালো লাগে না,আপনি দাবা খেলবেন আমার সাথে?” ইমান মিমের কথা গ্রাহ্য না করে বলে,
– “নাঃ,ব্রো! কোনো প্রশ্নই ওঠে না,প্লিজ ভিডিও গেইম খেল তুমি আমার সাথে।” অতঃপর ইমান মিম’কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে ভিডিও গেইমের সাথে।গেইম খেলতে খেলতে,ইমান বুঝতে পারেনি কখন ওর চোখ লেগে যায় আর ও ঘুমিয়ে পরে মিমের পাশে।মিমের যখন খেয়াল হলো,তখন ওর কিছু করার ছিল না কারণ ইমান গভীর ঘুমের মধ্যে জাপ্টে ধরে আছে ওকে।মিমের ঘৃণায় এবং লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।ঘৃণায় গা রিরি করছে ওর ইমান’কে দেখে,
ও এক ঝটকায় লাফ দিয়ে সরে যায় ইমানের কাছ থেকে।ইমানের ঘুমঘুম চোখে মিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “হোয়াট হ্যাপেন্ড ব্রো? তুমি কেন সরে গেলো আমার কাছ থেকে? মিম দাঁতে দাঁত চেপে ইমান’কে বলে,
– ” দেখুন স্যার! আমি রেবা নই,মনিকা নই আবার জলি ও নেই যে বিছানায় শুয়ে পরবো আপনার সাথে।আমি একটা সদ্য যৌবন প্রাপ্ত ছেলে,আপনি কেন ‘গে’ এর মতো আচার করছেন আমার সাথে?” ইমান হঠাৎ মিমের দু’গাল চেপে ধরে বলে,
– “কেন তুমি বুঝতে পারছনা মিম? আমার মাথা টা খারাপ হয়ে গেছে।” মিম ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
– “তবে কি আমি ধরা পরে গেলাম ওনার কাছে?” ইমান ফিক করে হাসতে হাসতে বলে,
– “কি আশ্চর্য মিহ? এভাবে কেন তুমি তাকিয়ে আছো আমার দিকে? ওহ! ভাবছ কেন ‘মিম’ বলে ডাকলাম? আসলে ভুল করে মিস্টেক হয়ে ওই….নাম টাই আমার মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে,সো প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ওকে?” মিম ইমানের কাছ থেকে ছিঁটকে দূরে সরে গিয়ে বলে,
– “ব্যাপার না,স্যার! খেতে চলুন নিচে।” ইমান নিচে যাওয়ার পর মিসেস রাইমা ছেলে’কে খুন্তি দেখিয়ে বলেন,
– “এদিকে আয়,আজ আমি ছেঁচা দেবো তোকে,অসভ্য নির্লজ্জ ছেলে এর জন্য আজকাল আমার রাস্তায় বেরুনো দায় হয়ে গেছে।আমার যে বান্ধবীরা ওকে নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে চাইতো তারা এখন নাক সিঁটকায় একে দেখে,
আরে ভাই,এ রকম চলতে থাকলে কোন মেয়ে বিয়ে করবে তোকে।” ইলহান সাহেব সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে নিজের স্ত্রী’কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– “ওর যে চরিত্র,তারপর আবার তুমি বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখো ওকে? স্বপ্ন দেখেছ যখন,ঘুমিয়ে দেখ রাইমা! জেগে দেখো না ঠিক আছে? বলা তো যায় না কখন আবার তোমার এই…অলৌকিক স্বপ্ন ‘ঠুসস’ হয়ে যাবে,তার ওপরে আমাদের ছেলের যে ফুলের মতে পবিত্র চরিত্র,তাতে স্বাভাবিক সবাই নাক সিঁটকাবে।” ইমান উৎকন্ঠা নিয়ে মিম’কে বলে,
– “দেখেছ, মিহ! কিভাবে অপমান করলো আমাকে?”
– “খাবার গুলো খেয়েনিন স্যার! দু’টোই একসাথে ভালো ভাবে হজম হয়ে যাবে।” মিমের কথা শুনে ইমান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
– “ওই…তুমি কি মজা নিচ্ছ? আমার দূর অবস্থা দেখে।” মিম নিজের হাসি সামলে নিয়ে বলে,
– “কোই না তো স্যার! আমি একটু যাই? কথা বলে আসি গার্লফ্রেন্ডের সাথে?” তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর ইলহান সাহেবের ফোন বেজে ওঠে,ইমান সেটা রিসিভ করার করার আগেই ইলহান সাহেব কল টা রিসিভ করে বলে,
– “আমার আম্মু টা কেমন আছে?” মিসেস রাইমা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে ইলহান সাহেব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “মিম?”
– “হুমম!”
– “তাহলে ফোন টা রাখো না লাউডে।” ফোন টা লাউডস্পিকারে রাখার পর মিমের কন্ঠ শুনে ইমানের বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে,শরীরের মধ্যে অদ্ভুত এক শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে,যেটা ইমান নিজেই গভীর ভাবে অনুভব করছে।অতঃপর নিজের সুপ্ত বাসনা গুলো’কে চাপা দিয়ে, সে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে এসেছে।মিম হন্তদন্ত হয়ে ফোন কেটে পিছনে ফিরে দেখে,
ইমান গোলগাল চোখ করে ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে,তার চেহারায় স্পষ্ট রাগের ছাপ,তাহলে কি সে সবটাই শুনে ফেলেছে?

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here