#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩
ইমান বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে মিমের চোখের দিকে,ও বুঝতেই পারছেনা ছেলে টা এমন কেন? আর কেনই বা লজ্জা পায় ওকে দেখে? কি সমস্যা কি ওর? খুলে কি বলা যায় না ওকে? সেই কখন থেকে মেয়ে মানুষের মতো অতিরিক্ত ঝাল দিয়ে ফুসকা খাচ্ছে আনমনে বসে? অথচ পাশে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসে আছে তার কোনো খেয়াল নেই সে দিকে।তখন একটা ফোন কল আসে ইমানের কাছে।ইমান মৃদু হেসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মিম’কে বলে,
– “তুমি তোমার ফুসকা এনজয় করো,মিহ! আমার কিছু জরুরী কাজ আছে।” মিম মনেমনে বলে,
– “আমাকে মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না স্যার! কারণ আমি জানি,আপনি যাচ্ছেন ওই…রেবা নামক মেয়েটির কাছে এমন কেন আপনি? আপনি কি বুঝতে পারেননা স্যার? আমার কষ্ট হয় আপনা’কে এভাবে দেখে।” মিম তারপর বাসায় ফিরে এসে রুমার মুখে শুনতে পায়,
– “ইলহান সাহেব মিসেস রাইমা’কে নিয়ে বন্ধুর মেয়ের বিয়ের দাওয়াত খেতে গেছে।” ও দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় শুনতে পায় হাসাহাসির শব্দ ভেসে আসছে ইমানের ঘর থেকে,মিম না চাইতেও একবার চোখ তুলে ভেতরে তাকিয়ে দেখে ইমান মিলিত অবস্থায় শুয়ে আছে রেবার সাথে।
আর ও সাথে সাথেই ঘৃণায় এবং লজ্জায় দৌড়ে ছুটে চলে আসে ওখান থেকে।তারপর মিমের বমি পেয়ে যায় নিজের ঘরে এসে।ও কিছুক্ষণ পর,
ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরে নিজের বিছানাতে।রুমা তখন মিম’কে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিল,পরক্ষণেই সে কি ভেবে ফিরে যায় দরজার কাছ থেকে।মিম মনেমনে বলল,
– “এই…লোকটা জীবনে ও শুধরবে নাঃ! আমি শুধুশুধুই সময় নষ্ট করছি এনার পিছে,আমার নিজের ও একটা ভবিষ্যৎ আছে।আমি কেন সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে পরে থাকবো এনার কাছে?” ভাগ্নীর মুখে এমন কথা শুনে ইলহান সাহেব মাথা নিচু দাঁড়িয়ে থাকে।উনি আর মুখ ফুটে মিম’কে কিছু বলতে পারেননি,তাই মাথা নিচু করে চলে আসে দরজার কাছ থেকে।আজ মিম অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছে নিজের বুকে,না চাইতেও সে কেঁদে ফেলছে অথচ ইমান আজ এই…মুহূর্তে মত্ত রোবাতে।সে কি জানে? এই…মুহূর্তে কেউ তার জন্যে ভীষন কষ্ট পাচ্ছে? বাহিরে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে মিম ও আজ মন খুলে কাঁদতে শুরু করেছে।অতঃপর হঠাৎ একটা নম্বর থেকে ম্যাসেজ আসতেই সে ঝড়বৃষ্টির রাতে রাস্তায় বেড়িয়ে পরেছে।ইমানের কাছে কিছুক্ষণ বাদেই কনফিডেনসিয়াল মিটিংয়ের ফোন আসতেই সে রেবা’কে সাথে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছে,
কিন্তু হঠাৎ পান্থপথ সিগনালে এসে পরিচিত কারো গানের গলা শুনতে পেয়ে,ইমান তাড়াহুড়ো করে গাড়ি রং সাইডে পার করে রাস্তায় নেমে পরেছে,অতঃপর উদভ্রান্তের মতো হাঁটতে হাঁটতে সিগনালের এপাশে এসে দেখে ঢাকা বিভাগের সমস্ত পুলিশ ফোর্স বোধহয় ওখানে এসে জমা হয়েছে।ইমান কৌতুহল বশত ভীড় ঠেলে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে দেখে,
ঝরঝরে বৃষ্টির মধ্যে একটা মেয়ে অন্য দিকে মুখ করে গলা ছেড়ে মন খুলে গান গাইছে।
“ও মেঘ, ও মেঘ রে তুই যা না উড়ে
আমার বন্ধু থাকে যে শহরে,
ও মেঘ, ও মেঘ রে তুই বলিস বন্ধুরে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে।
মেঘের সাথে মেঘের খেলা,
বন্ধু করলো অবহেলা,
বন্ধু আমার রইলো কোন দূরে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে,
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে।
মেঘ শুধু দুঃখ পেলে কাঁদে..
রংধনু হয়ে আবার হাসে,
আমার দুঃখ গুলো আমায় নিয়ে..
সে মেঘের ভেলায় চড়ে ভাসে।
বৃষ্টি ঝরে অবেলা,
বন্ধু কোরলো অবহেলা
বন্ধু আমার রইলো কোন দূরে
আমি আজো ভালোবাসি যে তারে,
আমি আজো ভালোবাসি যে তারে।
ভাবনায় আদোরে তোকে খুঁজে ফিরে
বড্ডো ভীষণ করে আমার এই মন,
আকাশের নিলীমায় অনুভবে খুঁজে যাই
যখন খুঁজে না পাই হারিয়ে..
বৃষ্টি শেষে রোদ এলো,
আমি আজ এলোমেলো,
তুমি আছো বোলো কি করে?
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে,
আজও ভালোবাসি যে তারে।”
চুলের কারণে তার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না,তবে স্পর্শ এসে মেয়ে টিকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেছে একটু আগে। মেয়েটি তখন গানের শেষ লাইনে বলে,
– “আমি আজও ভালোবাসি যে তারে,
আজও ভালোবাসি যে তারে।” তখন ইমান’কে একজন ধাক্ক মে’রে বলে,
– “সরি ভাই কিছু মনে কইরেন না ,আমি আসলে খেয়াল করিনি আপনা’কে।আপনি কি জানেন ভাই,আহাদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি আজ তাদের নতুন গান লঞ্চ করেছে।আজ তারি শুটিং ছিলো শুনলাম স্পর্শ আহনাফের বোন না কি নিজে এই…গান গেয়ে,এই…ভিডিও টাতে কাজ করেছে।” কথা গুলো শুনে ইমানের বুকের মধ্যেই হঠাৎ করেই তোলপাড় শুরু হয়েছে,নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,
– “তাহলে সে কি ফিরে এসেছে? আসলে বাবা বাসায় সব জানাতো? তাহলে বাবা কেন কিছু জানায়নি কাও’কে? এমন নয়তো যে বাবা ভাবছে, সে কোনোক্রমেই নিরাপদ নয় আমার কাছে? আমি কি এতোটাই খারাপ? আচ্ছা মেয়ে টা কি আগের মতোই পাগলাটে ধরনের আছে? দেখতে কেমন? কার মতো হয়েছে ও? নাকি সেই আগের মতোই আছে?” ইলহান সাহেব সকালে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– “রেবা কেন এসেছিল এই….বাড়িতে?” ইমানের কাছে কোনো উওর নেই সে মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।ইলহান সাহেব তখন হুংকার ছেড়ে ছেলে’কে বলেন,
– “আমরা কি করতে জন্ম দিয়েছি তোমাকে?” ইমান নিশ্চুপ;
তার কারণ এই….মুহূর্তে,এই…প্রশ্নের কোনো উওর নেই তার কাছে,তবে ইমানের পূর্ণ বিশ্বাস জন্মে গেলো যে সেই….বাচ্চা মেয়েটা আবারও এখানে ফিরে এসেছে হয়তো তার কাছে।দুপুরে খেতে বসে ইমান হঠাৎ এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসল মিমের কাছে,ও মিম’কে বলে,
– “তুমি যদি মেয়ে হতে,তাহলে কি বিয়ে করতে আমাকে?” মিম চেয়ার টেনে ইমানের পাশে বসে গলা খাকড়ি দিয়ে বলল,
– “মোটেও না স্যার! আমার জন্য কি ভালো ছেলের অভাব পরেছে এই…দেশে? আমার রুচি এতো টাও খারাপ না,যে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো আপনার মতো একটা লোকের সাথে।” মিমের কথা গুলো শুনে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় ইমানের বুকে,নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরে ইমানের চোখ থেকে।ও নিজেকে সামলে নিয়ে ইলহান সাহেব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “ড্যাড! তুমি কেন বলোনি,ছোটো ফুফুর মেয়ে ফিরে এসেছে বাংলাদেশে?”
– “কেন বলবো? তোমার এতো কি প্রয়োজন তার সাথে? শোনো একদম ওর সাথে দেখা করার চেষ্টা করবে না তুমি বিরক্ত করবে না ওকে।ওর অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ আছে,তোমার সেরকম কিছু পরছে না আমার চোখে; কাজেই তুমি বাবা নিজের কাজে মন দাও,তোমার জন্য সেটাই মঙ্গলজনক হবে।” ইমান এতো কথা হজম করতে না পেরে হনহন করে উঠে চলে যায় খাবার টেবিল থেকে,তার কাছে ইলহান সাহেবের কথার মানে স্পষ্ট,ইলহান সাহেব ভাগ্নীর ব্যাপারে সাবধান করেছে তাকে।আফটার অল এর আগে ইমান কম কষ্ট দেয়নি ওই…মেয়ে টাকে।” ইমান নিজের ঘরে এসে আসন করে ফ্লোরে বসে আছে।মিম ঘরে আসতেই ইমান ওকে জিজ্ঞেস করে,
– “তুমি কি মেয়েতে রুপান্তরিত হবে?” মিম ইমানের দিকে বড়সড় চোখ করে বলে,
– “আপনি এ রকম ‘গে’ টাইপ কথাবার্তা বলা বন্ধ করবেন কবে?”
– “জানি না,তুমি শুধু মুবিন,কে বলে দিয়ো আমার ফুফাতো বোনের সম্পর্কে সমস্ত খবরাখবর আমাকে এনে দিতে।মেয়ে টা নষ্ট হয়ে গেছে,মডেল না মঠেল হয়েছে সে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে থেকে।” মিম মনেমনে বলে,
– “অসভ্য ছেলে! আমি মডেল হলে তোর কি তাতে?” কিছুক্ষণ পর মিম মিনমিনিয়ে ইমান’কে প্রশ্ন করে,
– “স্যার! আপনি কি এর সাথেও রাত কাটাতে চান? আপনার মাথা ঠিক আছে? সে না আপনার বোন হয়?
– ” আমার ‘মা’ জন্ম দেয়নি তাকে; রাত কাটাবো কি কাটাবো না,সেটা পরে দেখা যাবে।তবে আমি নিশ্চিত মিহ! ও বড় হয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে আর এর জন্যই বাবা আমাকে দূরে রাখতে চাইছে ওর কাছ থেকে।”
– “স্বাভাবিক,আপনি যদি কিছু করে দেন ওকে? আপনার আবার চরিত্রের ঠিক নেই? প্রায়শঃই আপনার ক্যারেক্টার ঢিলা থাকে,তার ওপরে আবার নিত্যনতুন মেয়ে প্রতি রাতে আপনার বিছানায় পরে থাকে।আপনার কোনো ভবিষ্যৎ নেই স্যার! ও সব গেছে।” ইমান কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে মিম’কে জিজ্ঞেস করে,
– “তোমার কি মনে হয় মিহ! ও আমাকে এমনই ভাবে?” মিম মনেমনে বলে,
– “অবশ্যই,কোনো সন্দেহ আছে?
চলবে,,,,,