সুপ্ত বাসনা পর্ব ২

0
1783

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২

ইমানের এই…কথা শুনে মিম তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে ভেতর থেকে,ওর এখন খুব ইচ্ছে করছে এই…বদ ছেলে টাকে ঠেলে নিচে ফেলে দিতে,নেহাৎ সে ইখতিয়ার ওর নেই তাই দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে,নাহলে সে ও যে ইমান’কে এক হাত দেখে নিতো এ ইচ্ছে তার মনের মধ্যে বহুকাল ধরেই পোষণ করা আছে।তবে এখন তার ইচ্ছে পূরণের কোনো কোনো সুযোগ নেই,কে জানে আবার কখন কি ঘটে? এই…লোকের মতিগতির তো কোনো ঠিকঠিকানা নেই,একটার পরে একটা নিয়ে লেগেই থাকে। ইমান কিছুটা রিল্যাক্সড হয়ে মিম’কে বলে,
– “আজ রাতে আমি বাড়িতে ফিরবো না ‘মিহ’! কাজেই তুমি আমার সাথে ফার্মহাউসে যাবে।” মিম ইমানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– “স্যার! আপনি কেন বোঝেননা? আপনি এমন করলে আপনার বাবা এবং মা কষ্ট পাবে।” ইমান মৃদু হেসে বলে,
– “আমি এতো টাও অবুঝ নাঃ,মিহ! আমি বরং এভাবে বাড়িতে গেলে মা-বাবা আরো কষ্ট পাবে।” মিম কিঞ্চিৎ রেগে গিয়ে ইমান’কে ঝাড়ি মেরে বলে,
– “আশ্চর্য! লোক আপনি? আপনি কি পারেননা নিজের লাইফস্টাইল বদলে নিতে?” জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে ইমান মিম’কে বলে,
– “তুমি আগে ‘সেক্সি শিলা’ হয়ে যাও মিহ! তখন না হয় ভেবে দেখা যাবে? তুমি আপাতত রাশিদের সাথে কথা বলে আমাকে নতুন মেয়ে জোগাড় করে দাও মিহ! আজ রাতে মস্তি হবে।” মিম নাক সিঁটকে ইমান’কে বলে,
– “আমি অনেক লোক দেখেছি,তবে আপনার মতো নোংরা লোক দেখিনি আগে।” ইমান গাড়ির বোনাটের ওপর থেকে নেমে এসে মিম’কে জিজ্ঞেস করে,
– “তুমি আমার ‘বস’ না আমি তোমার ‘বস’ সেটা বলো আগে?” মিমের কাঠকাঠ উওর,
– “দেখুন,স্যার! আমি পারবোনা আপনা’কে নতুন কোনো মেয়ে খুঁজে দিতে,আমি আপনার বাবার সাথে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ,কাজেই আমি পারবোনা তাকে কষ্ট দিতে।
– “ইউ আর ফায়ার্ড নাও।”
– “আপনি চাকরিতে রাখেননি আমাকে।”
– “তোমার ব্যাগরাউন্ড চেক করা উচিত ছিলো আমার।”
– “তাহলে কেন করেননি আগে? শুনুন স্যার! ধূর্তের মতো হেসে লাভ নেই।চাকরি খোয়া গেলে আমার তেমন কিছু আসে যাবে না তাতে,তাই আপনি প্লিজ একটু আপনার মা-বাবার কথা চিন্তা করুণ।এই…বয়সে কি তাদের এতো বেশি চিন্তা করা সাজে?” ইমান সিগারেট টানতে টানতে মিম’কে বলে,
– “যেতে হলে চলো আর নয়তো থেকে যাও এখান টাতে।ছ’মাস ধরে তুমি আমাকে দেখছ,মিহ! তাহলে শুধুশুধু কেন কথা খরচ করছ আমার পিছে? নেহাৎ আমি তোমাকে আমার কাছের মনে করি বলেই আমার সবকিছু আমি শেয়ার করি তোমার সাথে।”
– “তাহলে আজ থেকে আর শেয়ার করবেননা স্যার! কারণ, আমি খুব লজ্জিত হই আপনা’কে দেখে,কেমন মানুষ আপনি? আপনার কি একটুও কষ্ট হয় না নিজের বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেখে?” ইমান কিছুক্ষণ মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়ি চলাতে শুরু করে কি ভেবে? মিম ফার্মহাউসে এসে নয়নতারা’কে ডেকে বলে ইমানের ঘর টা গুছিয়ে দিতে আর ও নিজেই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায় ইমানের পছন্দের খাবার নিতে।খাবার নিয়ে রাত দশটার সময় ফার্মহাউসে ফিরে এসে দেখে,
ইমান গা ঢলাঢলি করছে একটা নতুন মেয়ের সাথে,তবুও মিম নিজেকে সামলে নিয়ে এসে ইমান’কে বলে,
– “স্যার! দয়া করে খেতে আসুন,আপনার খাওয়া সময় হয়ে গেছে।” ইমান মিমের দিকে না তাকিয়ে নতুন মেয়ে টাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
– “খাবার, আমার ঘরে পাঠিয়ে দাও রেবা ও আমার সাথে খাবে।” রেবা নামক মেয়ে টা ইমানের ঠোঁটের ওপরে চুমু খেয়ে বলে,
– “বাদদেও না বেবী! আজ না হয় অন্য কিছু ট্রাই করে দেখা যাবে?” ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– “যেমন তোমার ইচ্ছে জান,লেটস গো।আজ একটু মস্ত হবে।” মিম আর দাঁড়িয়ে না থেকে লজ্জায় ছুটে চলে আসে ওখান থেকে,কেন যেন ইমানের প্রতি ওর কোনো দয়ামায়া কাজ করছে না বরং খুব ঘৃণা হচ্ছে ওর এই…লোকটা’কে দেখে,মনেমনে বলল,
– “আমি নিশ্চিত এ…গাধা না,ইচ্ছে করেই গাধা সেজে থাকে।আল্লাহ মালুম! যে আমি কি দেখে ছোটো বেলায় পাগলের মতো ভালোবাসতাম একে? ছিঃ! আমার রুচি এতো টাই খারাপ? ওয়াক থুঃ,আল্লাহ ক্ষমা করে দাও আমাকে।” অতঃপর হঠাৎ করেই মিমের ফোন বেজে ওঠে; ও ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে গ্রামীণ ফোনের নাম্বার ২৪০০,তাই সে মন খুলে ফোন টা রেখে গালাগালি দিতে থাকে।তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের পছন্দের পোশাক অর্থাৎ শাড়ি এবং ব্লাউজ পরে এসে ইজি চেয়ারে পায়ের ওপরে পা তুলে বসে।তারপর নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে বলে,
– “সাবাস মিম,তুমি চালিয়ে যাও এভাবে।তবে আমি সত্যি জানিনা যে,এই…বদ লোকটা মানুষ কবে হবে?” তখন ইমানের খাস ভৃত্য জামাল এসে দরজায় নক করে মিম’কে ডেকে বলে,
– “মিহান স্যার! একটু বাহিরে আসেন, ইমান স্যার এখুনি ডেকে পাঠিয়েছে আপনা’কে।” মিম বিরক্ত হয়ে মনেমনে বলে,
– “ধুরর,কপাল আমার; এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে?” তারপর মিম ইমানের ঘরে এসে দেখে,সে উপুর হয়ে শুয়ে আছে বিছানার এক পাশে।ও ইমানের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই ইমান মাথা তুলে মিম’কে উদ্দেশ্য করে বলল,
– “ডেস্কের ওপরে ফাইল দু’টো রাখা আছে মিহ! দেখে দিও সকালের আগে।” মিম কোন রকম উচ্চবাচ্য না করে বড় বড় পা ফেলে দ্রুত নিজের ঘরে চলে আসে।তারপর দরজা আটকে আবারো ফ্রেশ হয়ে ফাইল দু’টো চেক করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নিজের বিছানায় শুতে আসে।

সকাল ন’টার দিকে কোম্পানির ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিম’কে ফোন করে বলে,
– “মিহান স্যার! আপনি যে করেই হোক,ইমান স্যার’কে নিয়ে আসুন সাড়ে ন’টা বাজার আগে।জানেন তো আপনি ইলহান স্যার এসে ইমান স্যার’কে মিটিংয়ে না দেখলে বড়সড় একটা ঝামেলা বেধে যাবে আর শেষমেশ এই…বাবা ছেলের ইমোশনাল ফেইজে আমার চাকরি খোয়া যাবে।” মিম ফোন টা কেটে দিয়ে কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে দরজা ঠেলে ইমানের রুমে ঢোকে।তারপর ওকে মদ্যপ অবস্থায় দেখে মনেমনে বলে,
– “ওরে আলালের ঘরে দুলাল? ঘুম আমি আজ ছোটাচ্ছি তোকে?” তারপর ছুটে গিয়ে বাথরুম থেকে এক বালতি পানি এনে ছুড়ে মারে ইমানের মুখে।ইমান ঘুম ঘুম চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিমের দিকে।তারপর ইমান কিছু বলতে যাবে মিম তার আগেই বিছানা থেকে ঠেলেঠুলে উঠনোর চেষ্টা করে ওকে,তবে ইমান হঠাৎ করেই মিমের হাত চেপে ধরতেই মিম বলে ওঠে,
– “আরে এই….যে নবাবপুত্তুর? আপনা’কে উঠতে কি খাস নির্দেশনা দিতে হবে? কালকে বাপের হাতে চড় খেয়ে শিক্ষা হয়নি তোর নির্লজ্জ? আজ’কে নিশ্চিত তোকে তেজ্য পুএ করে দেবে।” ইমান মিমের কথা গুলো শুনেই হাসিহাসি মুখ করে উঠে যায় বিছানা থেকে,তবে দু’জনের সকালে নাস্তা করা হয়নি ভেবেছিল অফিসে বসে করে নেবে কিন্তু সেখানে আবার ইলহান সাহেব আরেক কাণ্ড ঘটিয়ে বসে।মিটিং শেষে ইনভেস্টার জাহিদুর রহমান সাহেব ইলহান সাহেব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “ওর কি সম্পর্ক আপনাদের সাথে? আপনারা কি করে চেনেন ওই…মিহান বলে ছেলে টাকে?” তখন হঠাৎ ইলহান সাহেব মুখ ফসকে বলে ফেলেন,
– “ও আমার মেয়ে,আমি খুব ভালোবাসি ওকে।” ইমান অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ইলহান সাহেবের দিকে তাকাতেই সে বলল,
– “সরি,আসলে মিহান আমার ছেলের মতোই আর আমি খুব ভালোবাসি ওকে।” ইমান আচমকা ইলহান সাহেবের হাত চেপে ধরে বলে,
– “ড্যাড! তুমিও? না মানে,তুমি ও কি মেয়ে বলে মনে করো ওকে? জানো কি ড্যাড? ওর খুব দুঃখ,আর তাই আজ আমি ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি ওকে।ওর আসলে মেশিনে প্রবলেম,
এটা আমি জানার পর থেকেই অনেক রুড ব্যবহার করছে ছেলেটা আমার সাথে।তবে তুমি চিন্তা করো না প্লিজ,ও একদম সুস্থ হয়ে যাব” তারপর ইমান মিম’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– “ফলো মি ‘মিহ’। আজ আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।” মিম কিছু না বুঝেই ইমানের সাথে গিয়ে গাড়িতে বসার পর,ইমান ওকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গাইনোক্লোজিস্টের কাছে নিয়ে আসে।মিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমান ওর হাতে হাত রেখে বলে,
– “ব্যাপার না ব্যাপার না মিহ! আমি বুঝি তোমাকে।তুমি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না,কারণ আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কেন এতো রাগ করে ছিলে আমার সাথে? প্লিজ কষ্ট পেয়ো না মিহ,একটু ধৈর্য্য ধরো ইনশাআল্লাহ্ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।” এবার টনক নাড়লো মিমের,তার এখন চোখেরজলে নাকের জলে অবস্থা হয়ে গেছে।পারলে এখুনি কেঁদে ফেলবে সে,এ কোন গ্যারাকলে এসে পারলো সে? শেষমেশ কি এই.. লংকার রাবণের কাছে প্রাণ দিতে হবে?” আর তখন হঠাৎ ইলহান সাহেব মিম’কে ম্যাসেজ করে বলে,
– “ভয় নেই মা! নিশ্চিতে যা,আমি আছি তোর সাথে।” যাগগে,এখানে কোনো ঝামেলা হয়নি ডক্টর ইমান’কে ভুজুংভাজুং দিয়ে মিম’কে কিছু নরমাল টেস্ট দিয়েছে,সে সব শেষে ওরা দু’জন বাসায় ফিরে আসার সময় ইমান খেয়াল করে দেখে,
মিম কেমন করে যেন বাহিরে তাকিয়ে আছে।ইমান গাড়ি থামিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কিছু খাবে?” মিম পুরুষালী কন্ঠে বলল,
– “ফুসকা খাবো স্যার! প্লিজ একটু গাড়ি টা থামান,আমি নেমে যাবো এখান থেকে।” ইমান কোনো কথা না বলে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে মিমের দিকে,ওর ফুসকা খাওয়া দেখে বলে,
– “মিহ! তুমি মেয়েই হয়ে যাও,সেটাই ভালো হবে।তোমার তো দাঁড়ি ও গজায়নি ছেলে মনে হয় না তোমাকে দেখে।” মিম আপন মনে ফুসকা খেতে খেতে ইমান’কে বলে,
– “স্যার,আপনার বউ ধরে মারবে আপনা’কে,কেমন মানুষ আপনি? মেয়ে হতে বলছেন কেন আমাকে।” অতঃপর ফিসফিস করে বলে,
– “আরে আমি তো সত্যি মেয়ে,একে বকে কি হবে?” ইমান বিষ্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে মিমের চোখের দিকে,ও বুঝতেই পারছেনা ছেলেটা এমন কেন? আর কেনই বা লজ্জা পায় ওকে দেখে? কি সমস্যা কি ওর? খুলে কি বলা যায় না ওকে?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here