লারিসা পর্ব ৪

0
629

গল্প: লারিসা || পর্ব : চার
লারিসা জানে না, তার সামনে যে ছেলেটা টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে সে আসলে লি রি!
ঘটনার শুরু লি রি’র জন্মের আগে। এক কানাডিয়ান মেয়ে (লি রি’র মা) পুরো বিশ্ব দেখবে বলে একা বেরিয়ে পড়েছিল বিশ্বভ্রমণে। এগারোটি দেশ ঘুরে একসময় সে পৌঁছে গেল সেই সাধুদের আস্তানায়। তখনও সে জানত না যে, তার বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছে এখানেই শেষ হবে। তখনও সে জানত না যে, এখানকার মানুষেরা এত উদ্ভট, এত হিংস্র। লারিসাকে যেমন জানানো হয়েছে দলে যোগদান করতে হলে তাকে কী কী করতে হবে লি রি’র মাকে তেমন কিছু জানানো হয়নি। জানানো হয়নি, ওরা দলে নিলে প্রথমেই ধর্মের পথ থেকে দূরে নিয়ে আসবে। জানানো হয়নি, আত্মাশুদ্ধির নামে দেহ ভোগ করবে। আর…
লি রি’র মা তখন ষোলো বছর পেরিয়ে সতেরো বছরে পা দিয়েছে। নিতান্ত বাচ্চা মানুষ। তাকে যখন ছোট্ট একটা ঘরে থাকতে দেওয়া হলো তা-ও বিনা পয়সায়। অর্থাৎ ভাড়া লাগবে না। এমন আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয় সে। কিন্তু এর আড়ালে এমন জঘন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে তা সে কল্পনাও করেনি।
সন্ধ্যের পর একটা লোক ঘরে ঢুকল। তার হাতে একটি কালো সুতোর মালা এবং একটি বিশেষ ধরণের ফুল। মেয়েটির খুব ভালো লেগেছিল ফুলটা। কিন্তু সেই ফুল একবার শুঁকলে চব্বিশ ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়বে তা সে একদমই জানত না। তাইতো ফুলটা হাতে নিয়েই আবেগে শুঁকে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে ইফেক্ট করেনি। মেয়েটি টলছিল। লোকটার হাত যখন মেয়েটির দেহে বিচরণ করতে শুরু করেছে তখনও সে একটু একটু বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে তার সামনে এখন ঘোর বিপদ। কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। মাথাটা ঝিম ধরে গেছে তার। দেহটা নিজের কথা শুনছে না।
লোকটা যখন তাকে কাঁধে তুলে বিছানার উপর ফেলে দিলো তখনও তার একটু একটু জ্ঞান আছে। কিছু হিংস্রতা সে নিজ চোখে দেখেছে। বিষাক্ত স্পর্শের খানিকটা সে টের পেয়েছে। তারপর সবকিছু অন্ধকার। প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পর যখন তার জ্ঞান ফিরল ততক্ষণে অন্তত দশবার… নির্জীব দেহটা পড়ে ছিল বিছানার উপর। এখানে যত মেয়ে আসে তাদেরকে চব্বিশ ঘন্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই মেয়েটিকে ছেড়ে দেওয়া হলো না। এর মূল কারণ তার সৌন্দর্য। সে এতটাই সুন্দরী যে, দশবার অত্যাচার করার পরেও লোকটার সাধ মিটল না। নির্যাতিত মেয়েটিকে সে ঘরের ভেতরে বন্দি করে রেখে দিলো। যখনই মন চাইত লোকটা চলে যেত তার কাছে। মেয়েটা ধস্তাধস্তি করলে সেই বিশেষ ফুল শুঁকিয়ে দিত। ব্যাস, চব্বিশ ঘন্টার জন্য অজ্ঞান! এরপর আর কে বাধা দেয়?
কিন্তু এক রাতে কীভাবে যেন চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে যাবার আগেই জ্ঞান ফিরে গেল মেয়েটির। দূর্বল শরীর নিয়ে উঠে বসার সার্ধ নেই। জীর্ণ চোখে সে চারপাশে চোখ বুলায়। তার ঠিক পাশেই উদোম হয়ে পড়ে আছে লোকটা। যেমন তার বিদঘুটে চেহারা তেমনি তার নাক ডাকার আওয়াজ। ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পৃথিবীর সবচে’ নিকৃষ্ট পশুর মতো লাগছিল।
মেয়েটি কোনোমতে উঠে বসে। একটু দূরে ভাঙা টেবিলের উপর সেই বিশেষ ধরনের একগোছা ফুল পড়ে আছে। আস্তে করে উঠে গিয়ে ফুলগুলো হাতে তুলে নেয় মেয়েটি। তারপর সবগুলো একসাথে ওই লোকটার নাকের সামনে ধরে রাখে। লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেলে আস্তে করে নিজের কাপড় গুটিয়ে নেয়। ভেজা চোখদু’টো মুছে নিয়ে রক্তের দাগ লাগানো জামা গায়ে জড়িয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায় সে। সামনে গভীর বন। তাতে কিছু যায় আসে না। ঘন অরণ্যের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় মেয়েটি। ছোটো ছোটো গাছ, লতাপাতা দিয়ে ঘেরা চারপাশ। এক পা এগোনোর মতো রাস্তা নেই। পাতালতার বেড়াজাল দু’হাতে গুটিয়ে রুদ্ধশ্বাসে এগিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েটি। সহসা তার পেটের ভেতরে কী একটা নড়ে উঠেছে মনে হলো!
গত ক’দিন খাওয়া-দাওয়ায় খুব অনিয়ম হয়েছে। সারাদিনে একবেলার খাবারও ঠিকমতো পায়নি সে। তাই হয়তো পেটে গুড়গুড় করছে ভেবে আবারো পা চালাতে যাচ্ছিল মেয়েটি। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, আবারো তার পেটের ভেতরে কিছু একটা নড়ে উঠতে টের পেয়েছে সে।
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। চারপাশ এতটাই নিঃস্তব্ধ যে, একহাত দূরত্বের কিছু ঠিকমতো দেখা যায় না। একটু দূরে যদি কোনো হিংস্র পশু ওঁত পেতে বসে থাকে সেটা বোঝবার উপায় নেই। এমন অন্ধকারে কাপড় সরিয়ে নিজের পেটের দিকে তাকায় মেয়েটি। মুহূর্তেই তার দেহ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। তার পেটটা যে অস্বাভাবিক রকম বড়ো হয়ে আছে! পেটের ভেতরে যে আসলেই কিছু একটা নড়ছে!
চলবে
মো. ইয়াছিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here