#এই_শহর_আমার
#part:10
#Suraiya_Aayat
জ্ঞান ফিরতেই পিটপিট করে তাকালো মুগ্ধতা , জলে পড়ে গিয়েছিলো তারপর ও জলের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছিল, অনেক নোংরা জলও খেয়ে ফেলেছে মুগ্ধতা ৷কথাটা ভাবতেই ওয়াক করে ওয়াশরুমে ছুটে গেল স্পর্শর সামনে দিয়ে ৷
স্পর্শ একবার ওর দিকে তাকালো তারপর আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো ৷
একটা হোয়াইট কালারের শার্ট আর একটা ডেনিম প্যান্ট পরেছে, হসফিটাল যাবে এখন ৷ মুগ্ধতা ওয়াশরুমে ঢুকেছে প্রায় 5মিনিট হয়ে গেলো , এখনো বেরোচ্ছে না, কিন্তু এদিকে স্পর্শ মুগ্ধতাকে একপলক না দেখে কোথাও নড়বে না ৷
নাহ, মুগ্ধতা এখনো বেরোচ্ছে না দেখে স্পর্শ ডাক দিলো
” আজ সারাদিন কি ওয়াশরুমে থাকবে বলে ঠিক করেছো ? কাম ফাস্ট আই এম গেটিং লেট ৷”
মুগ্ধতা চোখ গরম করে বেরিয়ে এলো ৷ বমি করেছে ও ৷ অস্বস্তি লাগছে খুব ৷ বমি করে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে ছিলো আর ভাবছিল যে স্পর্শ ওকে লেকে ধাক্কা মেরেছে ৷
স্পর্শ ঘুরে তাকিয়ে দেখলো মুগ্ধতা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে ৷ একটা থ্রি পিস পরিয়ে দিয়েছিলো স্পর্শ, ওড়নাটা গায়ে নেই, সেটা হয়তো বিছানার ওপর রয়েছে ৷
স্পর্শ একপলক তকিয়ে বেড থেকে থ্রি পিসটা নিয়ে ওর গায়ে জড়িয়ে দিতেই মুগ্ধতা স্পর্শর শার্ট ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো ৷
দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” হাউ ডেয়ার ইউ , আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে লেকের মধ্যে ধাক্কা দেওয়ার ৷”
স্পর্শ ওর কলার থেকে মুগ্ধতার হাতটা সরিয়ে দিয়ে মুগ্ধতার গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিয়ে বলল
” ভালোবেসে ধাক্কা মেরেছি আমার পিংকিশ নাগিন ৷”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল
” চাইনা আমার এমন ভালোবাসা ৷ আপনি কি ভেবেছেন আপনি সবসময় আমাকে যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে ! আমি কি আপনার হাতের খেলার পুতুল আপনার জন্য না শান্তিতে কোন কাজ করতে পারি, না শান্তিতে থাকতে পারি না শান্তিতে কিছু ভাবতেও পারি কারন সবকিছুতে তো এই স্পর্শ নামক মানুষটার থাকা চাই ৷ আপনার জন্য আমার এই অবস্থা ৷ আজ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে তার দায়ভার আপনি নিতেন ? নিতেন না, নেবেনই বা কেন আপনার হৃদয় বলে কোন জিনিস আছে ? নেই ৷ আমিও যে কেন এতদিন আপনার জন্য পাগল ছিলাম ভাবলেই নিজেকে থাবড়াইতে মন চাই ৷ আপনার সাথে ওই নীতু কুট্নিটাকেই মানাই ৷ আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবো, তারপর আপনি ওর সাথে বিয়ে করেন নাকি বাসর করবেন আই ডোন্ট কেয়ার ৷ আমি আর এক মূহুর্তও আপনার সাথে থাকবো না, আমি আমার নিজের বাসাই চলে যাবো ৷ আর আপনাকে যেন আমার ধারেপাশেও না দেখি ৷ থাকুন আপনি আর আপনার নীতু বেবি ৷”
একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে ফেলল মুগ্ধতা ৷ ওর মাথার ঠিক নেই, যা মন চাইছে বলে দিচ্ছে ৷
মুগ্ধতা থামতেই স্পর্শ বলল
” পানি খাবে ? ”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বিছানা থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে বলল
” আপনাকে যেন আমার বাসার আশেপাশেও না দেখি , রাত দুপুরে আমার বাসার সামনে রোমিও আশিকের মতো ঘুরে বেড়াতে দেখি তাহলে লোক দিয়ে আপনাকে গনধোলাই দেবো মনে রাখবেন ৷ পিংকিশ বান্দর ৷ ”
কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই স্পর্শ বলল
” তোমার বাসায় তো যেতে দিবে না তাহলে আমার আর নীতুর বিয়ের দাওয়াত কি এখনই দিয়ে দেবো তোমাকে?”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল
” বেশি বিয়ে করার শখ তাইনা ? দেখিস তোর কখনো বিয়ে হবে না স্পর্শ ৷”
” এটা কোন কথা ! বিয়ে তো আমি করেই ছাড়বো ৷ আই লাআআআআআআআভ,,,,”
আর কিছু বলতে যাবে মুগ্ধতা রেগে বেরিয়ে গেল ৷
স্পর্শ মুচকি হেসে ফোনটা পকেটে পুরে নিলো, মুগ্ধতার সব কথা রেকর্ড করে নিয়েছে পরে ওকে শোনাবে?৷
স্পর্শ রুম থেকে বেরোতে যাচ্ছিলো তখনই ওর মা তনিমা আহমেদ বললেন
” কি করে স্পর্শ এই ভরসন্ধ্য৷য় মেয়েটা কোথায় গেল আবার? তুই কি ওকে কিছু বলেছিস ? আমার সাথে তো কথাও হলো না ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল
” ডিভোর্স পেপার রেডি করতে গেছে ৷”
তনিমা আহমেদ অবাক হয়ে বললেন
” এটা তুই কি বলছিস ৷ মেয়েটা এমন অঅন্ড করছে আর তুই হাসছিস ৷”
স্পর্শ ওর মায়ের কাধে হাত রেখে বলল
” দেখো আজকেই বাসায় ফিরে আসবে ৷”
কথাটা বলে স্পর্শ বেরিয়ে গেল ৷
?
” ভাবি ফোন রাখো, ওনায সাথে আমাদের আর কোন সম্পর্ক নেই ৷ আমি ওনার নামে এটেম্পট টু মার্ডার কেস করবো, আমাকে পানিতে ফেলে দেই ৷”
রোজাকে জোরে জোরে কথাগুলো বলতে লাগলো মুগ্ধতা ৷ রোজা এখন স্পর্শকে ফোন করেছে ৷
যদিও স্পর্শ কি বলছে না বলছে সবই মুগ্ধতা শুনতে পাচ্ছে কারন প্রথম থেকেই ফোন লাউডে দেওয়া ৷
রোজা ছোট্ট ধমক দিয়ে বলল
” আহ মুগ্ধ একটু থামো দেখো তোমার জামাই কি বলছে ৷”
“? ৷”
স্পর্শ সব শুনছে ফোনে ৷ মুগ্ধতার গলার আওয়াজ থেমে যেতেই স্পর্শ বলল
” ভাবি পাগলকে কিছু না বোঝানোই ভালো, পাগলরা বোঝে না বলেই তো এমন উড়নচন্ডীর মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াই ৷যাইহোক তোমার ননদীনি আমাকে ডিভোর্স দেবে বলেছে ফাইন আমিও ডিভোর্স দেবো ৷ ও আমার জন কথা শোনে না ৷ ও এটা বোঝে না যে বাইরে ও একা বেরোলে ঠিক কতো রকমের বিপদ হতে পারে ৷ ত1ড়াছা আজকে যদি আমি ওখানে না থাকতাম ছেদেটা যদি ওর কোন ক্ষতি করতো তখন কীভবে ধিজেকে সামলাতো ও ? আমাকে বললে আমি কি পারতাম না ওকে নিয়ে হাতিরঝিল ঘোরাতে ৷ আমারো মাথা গরম ছিলো ধাক্কা মেরে দিয়েছি ৷ আর তাকে বলো যে আমিও নীতুকে বিয়ে করছে ৷ আমি আজকেইডিউটি শেষে ধীতুর বাসায় যাবৈ গিয়ে নীতুকে বিয়ের প্রস্তাব দেবো ৷ এন্ড আই মিন ইট ৷”
(কথাগুলো বেশ জোরে জোরেই বলল স্পর্শ যাতে মুগ্ধতার কান অবধি পৌছায়, আয ঠিক তাই হলো, হুঠ করে ঝনঝন করছ আওয়াজ শুনতে পেলো ,
রোজা বলে উঠলো
” মুগ্ধ তুমি ওটা কি করলে ওটা আমার ফেভারিট ফ্লাওয়ার ভাস, তুমি ভেঙে দিলে ? ৷”
মুগ্ধতা বলতে শুরু করলো
” হাঁ বিয়ে তো করবেই ওই ফকিন্নীটাকে, ভালো জিনিসের ওপর তো আবার ওনার চোখ পড়েনা তাইনা ৷ ”
স্পর্শ টুক করে কলটা কেটে দিলো , কাজ হয়ে গেছে ৷
মুগ্ধতা বুঝতে পারলো যে স্পর্শ কল কেটে দিয়েছে তাই বলল
” ভাবী সত্তিই কি আমার দোষ??
রোজা ঝাড়ি দিয়ে বলল
“তা নয়তো কি, স্পর্শ ভাইয়া তোমাকে কতো ভালোবাসে আর তুমি এমন করো, সবসময় তোমাকে নিয়ে চিন্তা করে সে ৷ ভুলটা তোমার৷ তুমি কি কখনো তাকে বলেছে ঢাকা শহর ঘোরানোর কথা?”
রোজার কথার উত্তরে মুগ্ধতা মাথা নাড়ালো যার অর্থ ও বলেনি ৷
রোজা তারপর আবার বলতে শুরু করল
” এখন যদি স্পর্শ ভাইয়া ওই নীতু বলে মেয়েটাকে বিয়ে করে নেই তখন তোমার ভালো লাগবে তো?”
নীতুর কথা শুনে মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল
” এই ফকিন্নি টাকে কেন বিয়ে করবে উনি ! আমি ওনার বৌ ,আর কেউ নয় উনি আমার জামাই ৷ আর হ্যাঁ মানছি আমি ভুল করেছি আর রাগ করেই আমিই ডিভোর্সের কথা বলে চলে এসেছি তাই বলে উনি নীতুকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে ? কখনো না ৷ আমি হতে দেবো না ”
কথাটা বলে চলে যেতে নিলে রোজা বলে উঠলো
” এই মুগ্ধ তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ এত রাত্রে ! কটা বাজে খেয়াল আছে? এখন রাত 12:30 ৷ ”
কে শোনে কার কথা, মুগ্ধতা বেরিয়ে গেল যাওয়ার আগে বলল
” ওনার অসমাপ্ত বিয়েতে আগুন জ্বালাতছ যাচ্ছি ৷”
কথাটা বলে মুগ্ধতা ওই রাতে বেরিয়ে গেল ৷
রোজার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মুগ্ধ হসপিটাল যাবে এখন ৷ এত রাতে কোন বিপদ আপদ হয় কি সেই জন্য স্পর্শকে ফোন করলো কিন্তু স্পর্শ ফোন ধরলো না ৷ রোজা আরো একবার ফোন করলো তবুও ধরলো না ৷
স্পর্শ একটা অপারেশন করতে গেছে, রোজার ফোন কেটেই চলে গেছে ৷
?
রাত 2.30 টা,,,,,
স্পর্শ ওটি থেকে বেরিয়ে এলো ,ক্লান্ত লাগছে ভীষন ৷ স্পর্শ বেরোতেই ওর সহকর্মী ডঃ তিষা রাইহান বলে মেয়েটা বলল
” কফি খাবে ? ভাবলাম আজকে একটু গল্প করা হবে কিন্তু হলো না ৷ বাট ফাইনালি অপারেশন সাকসেসফুল, মুডটা ভালো লাগছে ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল
” তোমার বেবিটার বয়স কত হলো?”
” এইতো 7 মাস ৷ হামাগুড়ি দিতে পারে এখন ৷”
ওরা কথা বলছে তখনই একটা নার্স এসে বলল
” Sir আপনার পেশেন্ট এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে ৷ ”
কথাটা শুনে স্পর্শ মুচকি হাসলো ৷
তিষা অবক হয়ে বলল
” তুমি এত রাতেও এপয়নমেন্ট রাখো??”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল
” স্পেশাল পেশেন্ট ৷ আমি আসছি ৷”
কথাটা বলে একটা চোখ টিপ মেরে চলে গেল ৷ তিষা কিছুই বুঝলো না স্পর্শ কি বোঝাতে চাইলো ৷
স্পর্শ ওর কেবিনে ঢুকতেই দেখলো সেই নার্সটা ওখান দিয়ে যাচ্ছে, এখন মুগ্ধতাকে রাগানোর একটা ভালো সুযোগ পাওয়া গেছে ৷
স্পর্শ নার্সকে থামিয়ে জোরে জোরে বলল
” নার্স পেশেন্টের নাম কি?”
নার্স একটু ঘাবড়ে বলল
” sir আমি তো জানিনা, নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলল
যে সে নাকি পাগল আর আপনি নাকি পাগলদের চিকিৎসা করেন তাই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট নিতে এসেছে ৷”
“? ওহহ ৷”
নার্স আমতা আমতা করে বলল
” sir আপনি তো হার্ট সার্জন, পাগলদের ট্রিটমেন্ট কবে থেকে শুরু করলেন ?”
স্পর্শ হেসে বলল
” মাঝেমাঝে প্রয়োজনে প্রফেশনের বাইরেও অনেক কিছু করতে হয়, বিয়ে করুন আগে তারপর বুঝতে পারবেন ? ৷”
কথাটা শুনে নার্সটা কিছু একটা ভেবে আর কথা না বড়িয়ে চলে যেতে নিলেই স্পর্শ বলল
” বাই দা ওয়ে নেক্সট টাইম এই,পাগল ছাড়া অন্য কোন পাগলকে এলাও করবেন না কারন আমি এই,একটা,পাগলেরই চিকিৎসা জানি? ৷”
” ওকে sir ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে সিরিয়াসনেস নিয়ে রুমে ঢুকলো , ও রুমে ঢুকতেই মুগ্ধতা বলল
” ওই নার্স টা কে ছিলো ? ওনার সাথে আপনার এতো কিসের কথা ?”
স্পর্শ একটু রাগী ভাব নিয়ে বলল
” তুমি এখানে কি করছো? আর আমার কার সাথে কি চলে তোমার তাতে কি , উই আর সেপারেটেড ইউ নো ৷”
মুগ্ধতা রেগে বলল
” সেপারেশানের গুষ্টি কিলাই, এই মুগ্ধ ছাড়া আপনি আর কারোর না ৷ আপনি আমাকে চেনেন না আমি কি করতে পারি ৷”
” হু আর ইউ আফ???”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে স্পর্শর হাত ধরে টানতে টানতে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসালো , তারপর স্পর্শ র গালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো হয়ে বলল
” আপনি এমন কেন করেন বলুন তো ৷ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না ?”
“উহু ৷”
মূগ্ধতা আরো কাছে সরে গিয়ে জাপটে ধরলো
“ভালোবাসেন?”
“উহু ৷”
” তাহলে আমি ভালোবাসবো ?”
“ফ্রিতে ভালোবাসা দিলে ফেরাবো কেন ??”
কথাটা শোনামাত্রই মুগ্ধতা স্পর্শর গলায় জোরে একটা,কামড় দিলো ৷
স্পর্শ আহ করে শব্দ করে উঠলো ৷ মুগ্ধতা হাসছে ৷?♀️
স্পর্শ রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
” ভ্যাম্পায়ার নাকি তুমি যে এভাবে কামড়ালে ৷”
“নাহ নাগিন?♀️৷”
স্পর্শ:?
#চলবে,,,,,