#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১৪/অন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ অর্শির কাছে এসে অর্শিকে অবাক করে দিয়ে অর্শির কোমড় স্পর্শ করে। অর্শি আয়াদের এমন অদ্ভূত ব্যবহারে একটু বিব্রত বোধ করে। আয়াদ অর্শিকে নিজের বাহুর দিকে টেনে আনতেই অর্শি আলতো মৃদু কন্ঠে আয়াদকে বলে উঠলো
— আয়াদ ভাইয়া এসব কি করছেন?
আয়াদ অর্শির চোখের দিকে নিজের দৃষ্টি রেখে অর্শিকে চুপ করতে বলল। অর্শি নিশ্চুপ হয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে বলতে লাগলো
— আমায় মন থেকে আজ একটা সত্যি কথা বলবি। এই বিয়েতে তোর মত আছে কি নাই?
অর্শি আয়াদের প্রশ্ন শুনে যেই মাত্র উত্তর দিতে যাবে ঠিক ঐ মুহুর্তে আয়াদ আবারও অর্শিকে থামিয়ে বলতে লাগলো
— আমি সত্যি উত্তর চাই। যা বলবি একদম সত্যি বলবি।
— হুম। আমি এই বিয়ে করতে রাজি।
কথাটা শোনা মাত্র আয়াদ বাকরুদ্ধ হয়ে যায় অনেকটা আশা নিয়ে ছিলো আয়াদ এই বুঝি অর্শি বলবে না সে রাজি নয়। কিন্তু না। অর্শি আয়াদকে সাফসাফ জানিয়ে দিলো সে বিয়ে করতে রাজি। আয়াদ অর্শির চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াদের চোখ জোড়া পূর্বের ন্যায় আবারও রক্ত বর্ণ ধারণ করলো। অর্শি আয়াদের চোখের উপর থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। ঐ রক্তিম চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করার সাহস অর্শির নেই। আয়াদ এখনো অর্শির কোমড় স্পর্শ করে আছে। হঠাৎ আয়াদ আর অর্শির ঘোর কাটে দরজার ওপার থেকে ভেসে আশা কারো ভারী কর্কশ কন্ঠের শব্দে।
— বাহ! বাহ! অর্শি মা বাহ! এই ছিলো তোর মনে?
কথাটা কানে ভেসে আসতেই অর্শি ও আয়াদ দুজনেই ভিশন চমকে উঠলো। আয়াদ অর্শির কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিতেই অর্শি দরজার ওপারে দৃষ্টিপাত করলো। দরজার ওপারে দৃষ্টিপাত করতেই অর্শির চোখ জোড়া থ মেরে যায়। বাবা দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি বাবাকে দেখতে পেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভিশন রকম ভয় হচ্ছে অর্শির। আয়াদ ও একটু থমকে যায়। কারো মুখেই কোনো শব্দ নেই। বাবা রুমের মধ্যে এসে অর্শির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভিশন উক্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো
— আয়াদের আজ ঐ অনুষ্ঠানে না আসার পিছনে তবে এই কারন ছিলো।
বাবার কথাটা শেষ না হতেই অর্শি বাবাকে বলতে লাগলো
— বাবা বিশ্বাস করো আমার আর আয়াদ ভাইয়ার মধ্যে……!
— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস। চুপ। একদম চুপ হয়ে যাও। রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের মেয়ের জায়গাটা দিয়েছি এই দিনটি দেখার জন্য। আমার বাড়ি থেকে আমার ছেলেকে ভালোবাসার জালে আটকে তুই আমার পিঠে ছোঁরা বসিয়ে দিলি!
বাবা ভিশন রেগে গিয়ে অর্শিকে চড় মারলো। অর্শি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আয়াদ অর্শির পাশেই এতোটা সময় নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু বাবার থাপ্পড়ের শব্দ কানে আসতেই আয়াদ সকল নিরবতা ভেঙ্গে বলতে লাগলো
— বাবা অর্শিকে ভুল বুঝো না তুমি। অর্শির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। অযথা ওকে দোষারোপ করো না প্লিজ!
আয়াদের দিকে বাবা এগিয়ে এসে আয়াদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাবা চিৎকার করে বলতে লাগলো
— তুই একদম চুপ। আমি এখন খুব বুঝতে পারছি তুই আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য এই সব করেছিস।
আয়াদ আর বাবার কথার মাঝে মা চলে এলো। মা এসে আয়াদের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— তুমি এতো রেগে আছো কেনো? কি হয়েছে? আমাকে বলো। প্লিজ! শান্ত হয়ে যাও। আয়াদ কি হয়েছে? আমায় বল।
মা এর কথা শেষ হতেই বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলতে লাগলো
— তুমি যাকে আদরের মেয়ে ভেবে লালন পালন করেছো। সেই মেয়ে আজ আমার মান সম্মান নিয়ে খেলছে। আর তোমার আয়াদ তো এই মেয়ের থেকেও কয়েক গুণ এগিয়ে। ওর দুজন মিলে আমার মান সম্মান নষ্ট করছে। সকলের সামনে আমার মাথা নত করে ফেলেছে এরা।
মা আয়াদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে লাগলো।
— আয়াদ তোর বাবা এসব কি বলছে? এই সব আমি কি শুনছি?
আয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো
— মা আমি অর্শিকে ভালোবাসি। আর ওর বিয়ে অন্য কোথাও হচ্ছে তা আমি মেনে নিতে পারি নি। অর্শির কোনো ভুল নেই। ও আমাকে কখন ভালোবাসেনি। আমি ওকে পছন্দ করতাম কিন্তু ও কখনও আমাকে পছন্দ করেনি। সেই ছোট্ট বেলা থেকে ওর প্রতি আমি দুর্বল। হাজার বার ওকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে ওর জন্য আমার মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভুতি কাজ করে। কিন্তু আজ যেই মেয়েটাকে নিয়ে কথা বলছো তোমরা। সেই মেয়েটা কখনও আমার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেনি। ওর কোনো ভুল নেই। অপরাধ আমি করেছি। ক্ষমা চাইবার মুখ নেই আমার। তোমাদের সম্মান নষ্ট যাতে না হয় তার জন্য আমি বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। তোমরা ভালো থাকো। আমি দূর থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিবো।
*চোখের উপর থেকে জলটা মুছে নিয়ে আয়াদ নিজের ব্যাগটা সোফার উপর থেকে তুলে কাঁধে নিয়ে নিলো। অর্শি এতোক্ষণ শুধু মাত্র মাথা নিচু করে নিজের চোখের জল ফেলেছে। কিন্তু যখন আয়াদ সবার সামনে তার মনের কথা গুলো প্রকাশ করলো। ঠিক ঐ মুহুর্তে অর্শি এক দৃষ্টিতে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। “মুখ ফুটে বলতে পারছে না আয়াদ আমিও তোমায় ভালোবাসি”। কোন মুখে বলবে? একটা অনাথ মেয়েকে এরা নিজের মেয়ের আসনে বসিয়েছে। তাদের মনে কষ্ট দেয়া কখনও সম্ভব না। অর্শি আয়াদের দিকে থেকে মুখটা ফিরিয়ে নিলো। মা বাবা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। আয়াদ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে অর্শির সামনে দিয়ে চলে যেতে নিলো। হঠাৎ করে বাবা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ঘরের মেয়েকে সারা জীবন ঘরে রাখতে চাই। এই কথাটা আরো আগে যদি আমায় বলে দিতিস তবে এতো কিছু হতো না।
কথাটা আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ দাঁড়িয়ে পরে। বাবার কথার মনে তার কাছে স্পষ্ট না। আয়াদ তার বাবা মা এর মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। ওনাদের মুখে হাসির রেখা উঁকি দিচ্ছে। অর্শিও বেশ অবাক হয়ে যায়। হঠাৎ করে বাবা মা এর মুখে হাসি কি করে চলে এলো? বুঝতে পারছে না অর্শি। বাবা অর্শির দিকে এগিয়ে এসে অর্শিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো
— সরি রে মা তোর গায়ে হাত না তুললে আমার ছেলেটা কখনও সত্যিটা আমাদের বলতো না। আমার ছেলেকে তোর পছন্দ সেটা আমাদের থেকে লুকানো উচিত হয়নি।
অর্শি শব্দ করে কান্না করে দিয়ে বলল
— বাবা আয়াদ ভাইয়াকে পছন্দ করি কিনা সেটা জানি না আমি। কিন্তু ওনাকে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে আমি পারবো না।
— হুম। কাল বিয়ে হবে অবশ্যই তবে আমার পছন্দ করা ছেলের সাথে নয়। তোর পছন্দ করা ছেলের সাথে। কিন্তু মা এখন থেকে ঝগড়াটা কমিয়ে দিস। এতে মানুষ কি বলবে?
— হুম।
অর্শি একটু লজ্জা পেয়ে আয়াদের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে থ মেরে। কোনো কিছুই তার মাথায় ঢুকলো না। বাবা মা যাবার সময় বলে গেলো
— এখন থেকে আমার মেয়েকে একদম জ্বালাবি না। শুধু মাত্র ওকে অন্যের বাড়ি পাঠাতে চাই না বলে তোর মতো একটা স্টুপিডের হাতে ওকে তুলে দিচ্ছি।
কথাটা শেষ করে সবাই চলে যায়। মা বাবা চলে যেতেই আয়াদের ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা উঁকি দিলো। সকল বাবা মা যদি নিজেদের সন্তানের ভালো লাগার মূল্য দিতো তবে হয়তো সবার ভালোবাসাই পূর্ণতার পথে হাটতো।
* সকাল বেলা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। অর্শিকে নববধূর রূপে সাজানো হলো। অর্শিকে দেখতে একদম একটা কিউট পরীর মতো লাগছে। বিয়ের আসরে আয়াদ অর্শির দিক থেকে মুখ ফেরাতে পারলো না। লজ্জা মাখা মুখে অর্শিকে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে।
— এই মিস্টার আয়াদ ভাইয়া আপনি কিন্তু আমায় ছোঁবেন না।
বাসর রাতে প্রবেশ করার সাথে সাথে অর্শির এমন অদ্ভূত কথা শুনে আয়াদ চমকে উঠে।
— মানে কি? তোকে ছুলে কি হবে?
— কি হবে মানে? আমি আপনার জুনিয়র সম্মান নষ্ট করিয়ে না নিজের।
অর্শির কথাটা শেষ হতেই আয়াজ শব্দ করে হেসে দিয়ে বলতে লাগলো
— এখন থেকে তোমার সামনে আমার সম্মান না থাকলেও চলবে। আর হ্যাঁ, আগেও তেমন কোনো সম্মান আমি তোর থেকে পাইনি। সো দেয়ার ফর সম্মান আশা করছি না। ভালোবাসা আশা করি।
— ঐ টা তো পেয়েই গেছেন। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
— হুম।
* তারপর কি হলো তা তো বুঝতেই পারছেন। আর যারা বুঝতে পারছেন না। তাদের জন্য সিজন টু এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। আয়াদ আর অর্শির ভালোবাসার নতুন পর্ব শুরু হলো। ভুল বোঝা বুঝি সমস্ত ভালোবাসায় আছে। তবে এতোটুকু লক্ষ্য রাখতে হবে যে ভুলটা বোঝাটা যেনো ভালোবাসাকে ছাপিয়ে না যায়। তার ভালোবাসার শুরুটা ঝগড়া দিয়ে হলেও শেষটা কিন্তু সুখময় ছিলো।
— এই অর্শি আর কত ঘুমাবি? এইবার উঠে পর।
অর্শির কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে কথাটা বলল আয়াদ। আধ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে অর্শি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— চুপ কর হারামজাদা কোলবালিশ। তুই কথা বলতে পারিস না। একদম চুপ করে শুয়ে থাক।
আয়াদ একটু চমকে গিয়ে বলে উঠলো
— লে কোলবালিশ কে? আমি আয়াদ। তোর কিউট, হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড।
অর্শি চোখ জোড়া আলতো করে মেলে আয়াদকে দেখে বিছানা থেকে তরিঘড়ি করে উঠে গিয়ে বলতে লাগলো
— ওহহ সরি। ভুলে গেছিলাম আমার বিয়ে হয়ে গেছে। যাই হোক আপনি ওতোটাও কিউট না যতটা বলছেন। এখন বের হন। আমি একটু ঘুমিয়ে নেই। আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
— কি? এই আমি থাকলে সমস্যা কোথায়?
— আপনি থাকলে কাল রাতের মতো আমার সাধের ঘুম নষ্ট করে দিবেন। তাই বেরিয়ে যান। তা না হলে আমি আম্মুকে ডাকবো।
অর্শির কথাটা শুনে আয়াদ মুখটা মলিন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অর্শি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পরলো। দোয়া করিয়েন তাদের ভালোবাসার দিন গুলো যেনো সব সময় এমনি কাটে।
———————– সমাপ্ত———————-
( ভিশন ইচ্ছে ছিলো গল্পটা আরো সুন্দর করে আপনাদের মাঝে প্রেজেন্ট করবো। কিন্তু আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত কিছু ব্যক্তিগত কারনে গল্পটা লিখার মতো পরিস্থিতি নেই। আমি দুঃখিত গল্পটা এখানেই শেষ করতে হলো। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি আপনাদের থেকে। তার জন্য সত্যি আমি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ)