আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ৩

0
634

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অর্শির কান্নার শব্দ আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপন মনে আয়াদ ভাবতে থাকে ছিঃ! এসব আমি কি করছি? একটা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্ষণ করছি আমি! আয়াদ একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির উপর থেকে উঠে যায়। অর্শি বিছানায় অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে। আয়াদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে কিছু বলে শান্ত করার মতো ভাষা তার জানা‌ নেই। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে অর্শির রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। অর্শি নিজের‌ বিছানায় পরে আছে। এতোটা লজ্জা লাগছিল তার যে ইচ্ছে করছিলো মরে যেতে। অর্শি কাঁদছে আর ভাবছে “আয়াদ ভাইয়াকে সাহায্য করার জন্য না ডাকা উচিত ছিলো। আজ আমার ভুলের জন্য আয়াদ ভাইয়া আমার উপর জোর করে। আমি এই মুখ কাউকে দেখাতে পারবো না আর”। অর্শির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ প্রকাশ করে চলেছে আয়াদের করা ব্যবহার তার মনের মধ্যে কতটা আঘাত করেছে। আয়াদ নিজের রুমে সোফার উপর কপালে হাত দিয়ে বসে‌ আছে। অর্শির উপর এতোটা আকর্ষিত হয়ে কি করে পরলাম আমি? আপন মনে ভাবছে আয়াদ।

— কিরে এমন মুখ গোমড়া করে বসে‌ আছিস কেনো? অনুষ্ঠানে আসলি না যে? অর্শির সাথে ঝগড়া করেছিস?

আয়াদের মা‌ এর প্রশ্ন সূচক কন্ঠ শুনে আয়াদ কেঁপে উঠলো। আচমকা আয়াদের মা এর উপস্থিতি আয়াদকে বিব্রত করলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার মা কে উদ্দেশ্য করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে লাগলো

— তোমরা চলে এসেছো! বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ?

— হ্যাঁ, বিয়ের অনুষ্ঠান তো শেষ। কিন্তু তোকে এতোটা চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? ঘেমে যাচ্ছিস যে? কি হয়েছে? সব ঠিক তো?

— হ্যাঁ মা সব ঠিক আছে। আসলে একটু অসুস্থ বোধ করছি বলে আর যাই নি।

— ওহহহ।

আয়াদের মা এর কথা শেষ হতেই আয়াদ রুমার দিয়ে নিজের মুখের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফেলতে লাগলো। আয়াদের মা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠলো

— অর্শি কোথায়?

কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। “অর্শি কোথায় মানে”? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো আয়াদ।

— হুম অর্শি কোথায়? নিজের রুমে আছে নাকি একা একা চলে গেছে বিয়েতে?

— না মা একা যায় নি। রুমে আছে হয়তো।

— ওহহহ।

আয়াদের রুম থেকে মা চলে যেতেই আয়াদ আবার সোফায় বসে পরলো। নিজের প্রতি নিজের ভিশন ঘৃণা হচ্ছে তার। এমন একটা কাজ করেছে সে যাতে করে সে নিজের কাছে সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে গেলো।

— অর্শি খাবার খেতে আয়। রাত অনেক হয়ে গেছে।

অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে কথাটা বলল আয়াদের মা। অর্শি সেই সন্ধ্যার ঘটনার পর আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি। নিজের রুমের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে সে। আয়াদের মা অনেক বার বলার পরেও অর্শি রাতের খাবার খেতে আসলো না। আসলে অর্শি একটা শকের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় গলা দিয়ে তার কিছুই নামবে না। আয়াদ অর্শির খাবার না খেতে আসার কারনটা জানে। আয়াদ খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের রুমে এসে আয়াদ ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুঁজে নিকোটিনের ধোঁয়া গ্রহণ করতে থাকে। মাথাটা জ্যাম ধরে আছে তার। তাই একটু হালকা হচ্ছে আয়াদ।

* রাত প্রায় গভীর। আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিছু একটা ভেবে আয়াদ অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে যায়। অর্শির রুমের লাইট অফ। আয়াদ অর্শির রুমের মধ্যে প্রবেশ করে দরজাটা আলতো শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। রুমের মধ্যে একটু বেশিই অন্ধকার। আয়াদ লাইটের সুইচ খুঁজতে লাগলো। লাইটের সুইচ অন করে আয়াত অর্শির বিছানার দিকে ঘুরে তাকাতেই বেশ চমকে যায়। আয়াদ দেখতে পায় অর্শি বিছানার একটা কোনে চুপ করে বসে আছে। চোখ জোড়া বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে তার। রুমের লাইট অন হতেই অর্শি আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আয়াদকে এতো রাতে নিজের রুমে দেখতে পেয়ে অর্শির আর বুঝতে বাকি নেই আয়াদ তার রুমে কি জন্য এসেছে? অর্শি আয়াদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যেটা তখন করতে পারেননি ঐ টা এখন করতে এসেছে? হুম, শুরু করুন। আর বাধা দিবো না। আমি প্রস্তুত।

অর্শির কথাটা আয়াদের কান থেকে এসে বুকের মধ্যে আঘাত করলো। একটা ভুল আয়াদকে অর্শির চোখে কতটা নিচে নামিয়ে এনেছে তা দেখে আয়াদ মাথা নিচু করে ফেললো। অর্শি আয়াদের নিরবতা দেখে আবারও বলতে শুরু করলো

— তারাতাড়ি করুন। মা বাবা আবার চলে আসলে সমস্যা হবে।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আয়াদ সকল নিরবতা ভেঙ্গে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— একদম চুপ। অনেক কথা বলা শিখে গেছিস তুই। নিজেকে আমার রক্ষিতা ভাবিস নাকি? আমি ভুল করেছি। হ্যাঁ ঐ মুহুর্তে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তবে একটা কথা। আমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। তখন আমি তোকে ছেড়ে দিয়েছি।‌ তুই প্লিজ অর্শি আমায় ক্ষমা করে দে। আমি লজ্জিত তোর কাছে। প্লিজ!

— হুম। করে দিয়েছি ক্ষমা। তো এতো রাতে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছেন! আরো তো সময় ছিলো। তখন কেনো ক্ষমা চাইতে আসেননি? আপনাদের মতো ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ মানুষদের আমার খুব খুব ভালো চেনা আছে। আপনারা সুযোগ খোঁজেন। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে লেট করেন না।

অর্শির কথা গুলো আয়াদকে বার বার আঘাত করছে। অর্শি বার বার এটাই বোঝাতে চাইছে যে সব ভুল আয়াদের। অর্শির কোনো ভুল নেই। হ্যাঁ আয়াদ ঠিক অর্শির উপর কিছুটা জোর করেছে কিন্তু পরিস্থিতি এমনটাই ছিলো। অর্শির কথার বিপরীতে আয়াদ কোনো কথা বললো না। প্লেটে করে আয়াদ অর্শির জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। অর্শির সামনে বসে আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে খাবার প্লেট এগিয়ে দিতেই অর্শি মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আয়াদ মৃদু কন্ঠে অর্শিকে বলল

— প্লিজ অর্শি খাবার টা খেয়ে নে। আমি তোর কাছে ঐ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি। দয়া করে আমায় ক্ষমা করে দে। তোর চোখের জলের কারন আমি। প্লিজ আর চোখের জল ফেলিস না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ!

অর্শি নিরব হয়ে আছে। আয়াদ নিজের হাতে অর্শির মুখের দিকে খাবার এগিয়ে দিতেই অর্শি খাবারটা খেতে লাগলো। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অর্শির। আয়াদ অর্শিকে খাবার খাইয়ে অর্শির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো

— ক্ষমা করে দে অর্শি আমায়। জীবনে আর কখনো আমি এই ভুলের ২য় সুত্রপাত করবো না। প্লিজ! মন থেকে ক্ষমা করে দে আমায়।

আয়াদের কথার বিপরীতে অর্শি কিছু বললো না। আয়াদ প্লেটটা হাতে নিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

* সকাল হতেই আয়াদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে যে খুব ঘুম হয়েছে তার এমনটা নয়। সারা রাত আয়াদের মাথায় আজকের এই ঘটনাটা ঘোরপাক খাচ্ছিলো। তাই আয়াদের ঘুম শান্তিতে হলো না। আয়াদ ভোর হতেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।
সকালের নাস্তার টেবিলে আয়াদ বসে নাস্তা খাচ্ছে। অর্শি এখনও আসেনি খাবার টেবালে। আয়াদ বার বার অর্শির রুমের দিকে তাকাচ্ছে। কখন অর্শি আসবে? ভাবছে আয়াদ। কিছু সময় যেতেই অর্শি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলো। আয়াদ অর্শি আসছে দেখে আর অর্শির দিকে তাকালো না। খাবার‌ শেষ হতেই আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রোজ অর্শিকে নিয়ে আয়াদ ভার্সিটিতে যায়। আয়াদ রোজকার মতো অপেক্ষা করছে। অর্শি বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে পাত্তা না দিয়ে আয়াদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আয়াদ অর্শির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আয়াদকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আয়াদ চাইছে অর্শি তার বাইকে করে ভার্সিটিতে যাক। কিন্তু না। অর্শি একটা রিক্সা থামিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। আয়াদ অবাক হয়ে অর্শির দিকে তাকিয়ে রইল। অর্শি তার মানে মন থেকে কালকের ব্যাপার্টার জন্য ক্ষমা করেনি। আয়াদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছে। অর্শি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শিকে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে অর্শির দিকে এগিয়ে যায়। অর্শি একটা…………………….

#চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here