You_are_mine season_2 Poly_Anan part_7

0
1989

You_are_mine
season_2
Poly_Anan
part_7

“কিরে ঈশান তুই কি তোর ঈশার খোজ খবর রাখিস নাকি হুদাই ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বিলাপ দিস…!
” কেন কি হয়েছে?(ভ্রু কুচকে)
সোফায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিল ঈশান।হুট করেই রাসেলের এমন একটা কথায় তার ভ্রু যুগল কুচকে যায়।গত চারদিন থেকে ঈশা, আর অনু লাপাত্তা।তাদের বাড়ির ছাদে দুই দিন দেখা গেলেও বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায় নি।

“ঈশাকে নাকি গত কাল পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিল….তাকে নাকি ছেলের পছন্দ হয়েছে..!
” হোয়াট…!(উত্তেজিত হয়ে)
“হুম আজ বিকালে সেই ছেলের সাথে মিট করতে যাবে রেস্টুরেন্টে।
” করাচ্ছি মিট…(দাতে দাত চেপে)..তুই এতো কিছু যানলি কি করে..?(ভ্রু কুচকে)

” আরে আগে সবটা শুন…অনু আমাকে কিছুক্ষন আগে ফোন করেছিল.. কাল ঈশাকে যে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল তা যানিয়েছে এবং আজকে মিট করার ব্যাপারটাও যানিয়েছে সব থেকে মজার কথা অনুর কাছে ছেলেটির চরিত্রে দোষ আছে বলে মনে হয়। ঈশাকে দেখার পরেও অনুর দিকে ছেলেটি বদ নজরে তাকিয়ে ছিল, যাকে অনু বাংলা ভাষায় সংক্ষেপে বলেছে লুচ্চা..!

কথাটি বলেই ঘর কাপিঁয়ে হেসে উঠে রাসেল।রাসেলের হাসির শব্দে ঈশান নিজেও হেসে উঠে।
“শালিক পাখি তো বেসামাল কথা বার্তা বলে..(পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে ঈশান)
” আরে আসল টুইস্ট শুন.. আমাদের ম্যানেজার তার বড় ভাইয়ের ছেলের জন্য ঈশাকে ঠিক করেছে তারাই কাল দেখতে গেছিলো ঈশাকে।আমরা তাহলে খুব সহযেই আঙুলের তুড়িতে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারবো।.!

“আরে করতে দে করতে দে…ঈশু পাখিকে বিয়ে করতে দে..(দাতে দাত চেপে)
” আরে কি বলছিস তুই(অবাক হয়ে)
“রাসেল আমার বিকেলের মিটিংটা ক্যান্সেল কর এক্ষুনি..কুইক.!
” ওকে।(মাথা নেড়ে)

রাসেল বেরিয়ে গেলে রুম থেকে ঈশান দাতে দাত চেপে বলে,
“আমার ভাবলেই মাথা গরম হয়ে যায় তুমি কাল সেজেছো অন্য ছেলের জন্য।
বিয়ের শখ উড়িয়ে দেবো ঈশু বেবি…যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।(রেগে)

একটি নামি-দামি রেস্টুরেন্টে বসে আছে ঈশা আর অনু.. তাদের সামনে বসে আছে একটি ছেলে। যে তীক্ষ্ণ লালসার দৃষ্টিরে একবার ঈশা দিকে আরেকবার অনুর দিকে তাকাচ্ছে।
” আপনি এতো চুপ চাপ আছেন কেন? কি কি প্রশ্ন করার করুন আমাদের হাতে সময় খুব কম.(বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে অনু)
“আসলে আমার একজন পরিচিত গেস্ট আসবে,জন্যই অপেক্ষা করছি।
” ওকে!
এভাবে আরো পাচঁ/সাত মিনিট কেটে গেলে সেই কাংখিত ব্যাক্তিটির আগমন ঘটে..!
“সরি গাইস একটু দেরি হয়ে গেলে,(সোফায় বসতে বসতে)

ঈশা মাথা তুলে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে হোচট খায়।অনু ঈশানের দিকে একবার তাকিয়ে আড় চোখে রাসেলের দিকে তাকায়।তারা দুজনেই চোখ দিয়ে ইশারা করে কথা বলছে।

” তাহলে শুরু করা যাক (ঈশান)
“অবশ্যই..(ছেলেটি)
ঈশা আড় চোখে ঈশান কে দেখছে এই লোকটা এখানে কি করছে, পাত্র পক্ষের সাথেই বা ঈশানের কি সম্পর্ক কিছুই মাথায় ডুকছেনা তার।

” আপনার শখ গুলো যানতে পারি মিস ঈশা, আই মিন আপনার ভালো লাগা মন্দ লাগা..বা..

ছেলেটির এমন উদ্ভট কথা বার্তা শুনে ঈশান বিরক্ত হয়ে ছেলেটিত দিকে তাকিয়ে বলে,
“এইসব কি প্রশ্ন করছেন ব্রো।আমি করছি আপনি শুনুন।
ঈশার এবার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে ঈশান প্রশ্ন করবে মানে কি, এই লোকটা নির্ঘাত কোন জটলা পাকাতে এসেছে..।

” তা আপনার নাম।(ঈশাকে উদ্দেশ্য করে)
“নওশীন ঈশা(শান্ত কন্ঠে)
” নাইস নেম,পড়ালেখা..?
“ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার..
” হোয়াট? বাচ্চা মেয়ে এই বয়সে বিয়ে.. এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিচ্ছে কেন আপনার বাবা মা এখনো HSC পর্যন্ত দেয়া হয় নি(বেশ উচ্চ কন্ঠে)

ঈশানের কথা শুনে ঈশা কাচুমাচু হয়ে যায়।পাশ থেকে ছেলেটি ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“আহ সমস্যা কি বিয়ের পর পড়বে!
” ওকে, এজ ইউর উইস!
“আচ্ছা আপনি গান পারেন.. (ছেলেটি)

ঈশান দাতের সাথে নিজের দাত পিষে যাচ্ছে এই ছেলেটা এতো স্টুপিড কেন এইসব কি প্রশ্ন করছে গান পারেন আপনার শখ, রিডিকিউলাস পাবলিক..
” জ্বি আমি টুকটাক সুর মিলিয়ে গান ধরতে পারি।
ঈশা গান পারে কই ঈশান তো যানতো না। বেপার টা কি ঈশাও কি রাজি বিয়েতে।
ছেলেটি ঈশার দিকে মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টিতে ঈশাকে বেশ বিরক্ত দেখাচ্ছে।ছেলেটির যে সত্যি চরিত্রে দোষ আছে ঈশার আর তা বুঝতে বাকি নেই। এখান থেকে ছুটে পালিয়ে বাচলেই হয়।

ছেলেটির তাকানোর ভঙ্গিমা দেখে ঈশানের মেজাজ পুরো বিগড়ে যায় সে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে সামনে থাকা কাটা চামচ দিয়ে ছেলেটার চোখে ডুকিয়ে দিতে।
ঈশানের অবস্থা দেখে রাসেল তার ফোনে একটি মেসেজ করে,ঈশান মেসেজটি ওপেন করতে দেখে,
শান্ত থাক ঈশান। কিছুক্ষন পর ঈশা নিজেই বিয়ে ভাঙ্গবে সেই ব্যবস্থা আমি করে এসেছি।

এবার ঈশান কিছুটা শান্ত হয়।
এই বিষয়টা অনুর নিজের কাছে ও ভালো লাগছেনা ছেলেটি ঈশার দিকে এখনো কেমন করে তাকিয়ে আছে,
” এই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন.. আপনার চোখে কি সমস্যা আছে নাকি.. পলক পরছেনা আজব(কাট কাট গলায়)

অনুর হঠাৎ এমন কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে ছেলেটি।তাই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।রাসেল মিটিমিটি হাসছে এই মেয়ের এতো সোজা গলায় কথা বলার স্টাইল টা মারাত্নক লাগে তার কাছে।
হুট করেই ঈশার ফোনে তার বাবা কল দেয়,

“হ্যা বাবা বলো?
“মা তুই কোথায়?
” কেন যেখানে থাকার কথা রেস্টুরেন্টে!
“এক্ষুনি বাড়ি আয় তুই তোর বিয়ে আমরা ওই ছেলের কাছে দেবোনা।
” মা…
কিছু বলার আগেই ঈশার বাবা ফোন কেটে দেয় ঈশা বুঝতে পারে এখানে কোন গন্ডোগোল আছে কোন কারন ছাড়া তার বাবা সহযে রেগে যায় না তাই সে চুপ চাপ অনুকে নিয়ে উঠে চলে যায়। ছেলেটি কিছু বলারো সুযোগ পায় না।ঈশান আর রাসেল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসতে থাকে।

বাড়িতে এসে ঈশা যানতে পারে ছেলেটির আসলেই চরিত্র খারাপ। তার রাত পার হয় বিভিন্ন হোটেলে মেয়েদের সাথে।ঈশার বাবা প্রমান পেয়ে তাড়াতাড়ি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়।

ঈশান আর রাসেল দুজনে বারান্দায় দাড়িয়ে ঈশা আর অনুর কথা নিয়ে আলোচনা করছে এমন সমসয় ঈশানের পাপা ফোন করে।
“হ্যালো পাপা কেমন আছো?
” তুমি কি আমাকে ভালো থাকতে দাও(গম্ভীর কন্ঠে আবিদ)

“কেনো পাপা আমি আবার কি করেছি?
” তুমি মি.গুপ্তার সাথে আজ মিটিং ক্যান্সেল করলে কেন?সমস্যা কি তোমার?তুমি যানো এই মিটিংটা আমাদের কতটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল।এতোটা কান্ডজ্ঞান হীন কাজ তুমি কি করে করলে(রেগে)
“দেখো পাপা আমি বিজি ছিলাম আমি আবারো টাইম ফিক্সড করেছি।আবারো মিটিং হবে তাতে কি সমস্যা..?

” সমস্যার কথা তুমি আমাকে বোঝাতে এসো না।আমার মাথায় ডুকছে না তুমি কি নিয়ে এতো বিজি থাকো..। এখন ফোন করলেও তোমাকে পাওয়া যায় না। তুমি ভুলে যেওনা দেশে গেছো তুমি আমার বিজনেস আর তোমার বিজনেস দেখা শোনা করতে, আর পড়ালেখা করতে অন্য কোন দিকে মন খবরদার দেবে না। মনে রাখবে তোমার জীবনে শুধু মাত্র টাকা, প্রোপাটি,সুনাম খ্যাতি অর্জন ছাড়া আর কোন লক্ষ্য নেই।

আবিদ খট করেই ফোনটা কেটে দেয় ঈশান বিরক্ত হয়ে হাতে থাকা কপির মগটাকে ছুড়ে ফেলে দেয়।ঈশানের হঠাৎ রেগে যাওয়া কান্ড দেখে স্পিচলেস হয়ে যায় ঈশান।

“পাপা নিজেকে কি ভাবে আমার মাকে যেভাবে যান্ত্রিক ভালোবাসাহীন একটি জীবনে বেধে রেখেছে আমাকে ও সেইভাবে বেধে রাখবে। এই ঈশান শাহরিয়ারের মন আছে হৃদয় আছে, সে ভালোবাসবে ইয়েস সে ভালোবাসে তার মাকে ভালোবাসে তার ওয়াইফ কে।

বিড়বিড় করে কথা গুলো বলে ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ার অন করে দেয় সে।আর এদিকে রাসেল তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।
?
পরের দিন ঈশা আর অনু দুজনে হাসিন ভাইয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবারো সরু রাস্তা ধরে হাটছে। তাদের হাটা অতি স্লো মোশানে।আকাশ জুড়ে ছেয়ে গেছে কালো মেঘের ভেলা।
” কি রে ঈশু বৃষ্টি নামছেনা কেন। (বিরক্ত হয়ে অনু)
” আমিও তো তাই ভাবছি বৃষ্টির অপেক্ষায় আর কতোক্ষন থাকবো।
দুজনেই পিচ ঢালা রাস্তায় হেটে চলেছে।হঠাৎ করে পেছন থেকে দুটো কার এসে তাদের দুজনকে ঘিরে ধরে। ঘটনাটা চোখের পলকে হওয়ায় ঈশা আর অনু ঘাবড়ে যায়।কার থেকে নেমে আসে সেই দুজন সুর্দশন যুবক।ঈশান আর রাসেল কে দেখে ঈশা অনু এবার দুজনেই ভয় পেয়ে যায়।কারন সেদিন ঝাল মুড়ি খাওয়ানোর বিষয়টা নিয়ে ঈশান বেশ ক্ষেপে ছিল তবে কি আজ শাস্তি দেবে।

“আজ কলেজে যাও নি কেন? খোজ নিয়ে যানলাম হাসিন ভাইয়ের বাড়িতে গেছো?
রুলস অনুযায়ী যাওয়ার সময় ঈশা আমার সাথে আর অনু রাসেলের সাথে তবে কি তোমরা রুলস ভুলে গেছো(ভ্রু কুচকে)

ঈশা অনু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।হুট করেই রাসেল ধমকে বলে,
” সব কিছু বাদ তোমরা কলেজ ফাঁকি দিচ্ছো কেন প্রতিদিন।এইভাবে চললে পড়াশোনা গোল্লায় যাবে।
অনু ঈশার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে কি যেন ইঙ্গিত করছে কিন্তু ঈশা তা সহযে বুঝে উঠতে পারছেনা।অনুর মুখ দেখে ঈশান বলে,

“শালিক পাখি চালাকি করলে খবরদার খবর আছে বলে দিলাম এর আগের বারের শাস্তি তোমার প্রাপ্য নেহাত আমি রাসেলের দিকে তাকিয়ে তোমায় মাফ করে দিলাম না হলে কত ধানে কত চাল বুঝিয়ে ছাড়তাম।(বাকা হেসে)

অনু আড় চোখে রাসেলের দিকে একবার তাকায়।
” যাও তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসে পরো আজ আমি এমনিতেই ক্লান্ত..! বিশ্রামের প্রয়োজন!
ঈশা একবার ঈশানকে পরখ করে নেয়।স্যুট পরে বেশ অফিসিয়াল সাজে দেখা যাচ্ছে তাকে। ঈশান রাসেল কে অফিস থেকেই এসেছে মনে হয়।

“কি হলো চলো…?(অনুকে ধমক দিয়ে রাসেল)
অনু সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে পরে তার পেছন পেছন রাসেল যায়।ঈশান ঈশার দিকে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” তুমি কি যাবে নাকি কোলে তুলতে হবে।
ঈশা মুখ ভেঙচে তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসে পরে।

চারিদিকে আকাশটা গুম হয়ে গেছে..। আকাশ ভেঙ্গে যেন আজ বৃষ্টি নামবে।ঈশান ড্রাইভিং করছে তার পাশে ঈশা।
“ঈশু সকালেও তো রোদ ছিল কিন্তু এখন দেখলে আকাশের অবস্থা! মনে হচ্ছে বৃষ্টি আজ হবেই হবে। উফফ অসহ্য(বিরক্ত হয়ে)

“আপনি বৃষ্টি পছন্দ করেন না?(অবাক হয়ে)
” না আমার ভালো লাগেনা। আর বিডিতে আসার প্রথম বার যখন আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তখন আমার টানা ২ সাপ্তাহ ভয়াবহ জ্বর ছিল।বিছানা থেকে উঠতেই পারতাম না।কি যে একটা অবস্থা ছিল (চোখ মুখ কুচকে)
“যাবেন….? (আকুল কন্ঠে)
ঈশার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে ঈশান থমকে যায়…
” কোথায়..?
“চলুন না লং ড্রাইভে যাই.. পিচ ঢালা রাস্তায় এমন একটা পথে যেদিকে মানুষ জন কম থাকবে চারিদিকে কিছুটা হলেও গাছ পালার ছায়া থাকবে আমার না এই গুমুট পরিবেশ বেশ পছন্দের(খুশিতে গদ গদ হয়ে)

ঈশার মুখে এমন আকুতি নিয়ে কথা শুনে ঈশানের এক ঝটকায় সব ক্লান্ত চলে যায়। শাটের হাতাটা আরেকটু গুটিয়ে বলে,
” অবশ্যই যাবো… ওকে আমি গাড়ি ঘুরাচ্ছি।
“অনুদের ও যানিয়ে দিন প্লিজ…!
” ওকে..
ঈশান অনুকে যানিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে তারা অন্য একটা এলাকায় পৌছে গেছে এইদিক টা ঈশা তেমন চিনেনা।তবে রাস্তাটা বেশ দারুন। মাঝ খানে পিচ ঢালা রাস্তা দুইপাশে মাঠ। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে কিছু ঝোপ ঝাড়।কিন্তু এখনো বৃষ্টি নামার কোন নাম নেই।ঈশান গাড়ি থামিয়ে ক্লান্ত চোখ দুটো নিয়ে ঈশার দিকে তাকায়।ঈশাও ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়।

“ঈশু আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি, মাথাটাও যন্ত্রণা করছে প্লিজ চুল গুলো টেনে দাও(ঈশার দিকে ঝুকে)
” মাথা সরান,মাথা সরান বলছি আমি পারবো না পর পুরুষের গায়ে হাত দেবো ছিহহহ(মুখ কুচকে)
“ওই কে পর পুরুষ আমি তোমার স…..
কথাটা বলতে নিয়েও আবারো চুপ হয়ে যায় ঈশান। চোখে মুখে বিরক্তির রেখা টেনে নেয়।
(গল্পটি লেখনীতেঃপলি আনান)
হুট করেই ঝুম বৃষ্টি আকাশ বেয়ে জমিনেনেমে যায়।বৃষ্টির একেকটা ফোটা এতোই তীব্রভাবে পড়ছিল যেনো মাটি খুবলে উপরে তুলে ফেলবে।চারিদিকে এক মিনিটেই পরিবেশ পালটে যায়।ঈশা লাফিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে নেয়। সে যত বার ধাক্কা দিচ্ছে গাড়ির দরজাই খুলছেনা।বিরক্ত হয়ে সে বলে,
“এতো বড় লোক অথচ নষ্ট গাড়ি চালাচ্ছেন দরজা খুলছে না কেন….ওহ এই দরজা খোল আমি ভিজবো(দরজায় ধাক্কা দিয়ে)

ঈশার কান্ড দেখে ঈশান হতভম্ব হয়ে গেছে কি বলছে এইসব পাগলের মতো সে।
“ঈশা আমি দরজা লক করে দিয়েছি।
” তো খুলে দিন তাড়াতাড়ি,
ঈশান লক খুলে দিলেই ঈশা বেরিয়ে যেতে নেয় তখনি ঈশান পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরে,
“কোথায় যাচ্ছো ঈশা বাইরে বৃষ্টি..!
” তো..?আমি ভিজবো আপনি আমায় ছাড়ুন!
“উহুহ আমার বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না আমি সিক হয়ে যাই।
” তাহলে কি সহ্য হয় আপনার(বিরক্ত হয়ে)
ঈশান এবার ঈশার আরো কাছে এগিয়ে আসে। ঈশানের শ্বাস প্রশ্বাস আছড়ে পড়ছে ঈশার চোখে মুখে ঈশানের চোখে যেত মাতাল চাহনি।ঈশা বুঝতে পেরে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।এই দৃষ্টিতে নিজের অজান্তেই ঈশা যে কত বার প্রেমে পড়েছে তার হিসেব নেই।ঈশান তার নেশা ময় কন্ঠে বলতে থাকে,

“তোমার তীব্র রাগ,জেদ, ক্ষোভ নিয়ে বলা “ঈশান গুন্ডা” শব্দটা আমার সহ্য হয়!তোমার ভয় পাওয়া উদ্দীপ্ত চোখ দুটো আমার সহ্য হয়!আমার ভয়ে তিরতির করে কাপতে থাকা তোমার ঠোঁট দুটো আমার সহ্য হয়!এই ঈশানের উপর যখন বিরক্ত হয়ে আড় চোখে তাকাও সেই মূহুর্তেটা আমার সহ্য হয়!।আরো সহ্য হয়…..

ঈশান এবার একটানে ঈশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ঈশার নাকে নিজের নাক ঘসে বলে
,
“তোমার ওই রেশমি চুলের মাদকময় ঘ্রাণ আমার সহ্য হয়!লজ্জায় লাল হওয়া রসগোল্লার মতো গাল দুটো আমার সহ্য হয়!আমার সামনে এলে যখন তোমার ওই হৃদযন্ত্রটার ধুক ধুক শব্দ বেড়ে যায়। সেই শব্দটা আমার সহ্য হয়।
এই ঈশানের কাছ থেকে নিজেকে বাচাঁতে যখন লুকোচুরি করে বেড়াও সেই মূহুর্ত টা আমার সহ্য হয়!
শুধু সহ্য হয়না তুমি যখন অন্যর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাও!

শেষ কথাটি বেশ রাগ নিয়ে বলে।ঈশান ঈশাকে ছেড়ে সে নিজে থেকেই ছিটকে দূরে সরে যায়।ঈশাতো ফ্রিজড হয়ে গেছে। বুকের ভেতরে কে যেন হাতুড়ি পেটা করছে।ঈশান ঈশার অবস্থা বুঝতে পারে সে শকে আছে। তাই তার সাইডের জানালার গ্লাস নামিয়ে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির ফোটারা ঈশানকে ছুতে শুরু করে। ঈশান হাত দিয়ে কিছু পানি সংগ্রহ করে ঈশার মুখে ঝাপটা দেয় সাথে সাথে ঈশা বাস্তবে ফিরে আসে।তার দিকে তাকিয়ে ঈশান মুচকি হেসে বলে,
” যাও তোমার বৃষ্টি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ভিজতে যাও..!

ঈশা দরজা খুলেই বেরিয়ে যায় ভিজতে। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পাশলা এসে ভিজিয়ে দেয় ঈশাকে।ঈশান নিজেও গাড়ি থেকে নেমে যায় আর ঝট করে ঈশার উপর করে জুটি করা লম্বা চুল গুলোর খোঁপা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চুল গুলো ছিটকে ঈশার সারা পিঠ জুড়ে লেপ্টে যায় আর বৃষ্টির পানি এসে ভিজিয়ে দেয় তার শুষ্ক চুল গুলোকে।

ঈশান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির পানি ঈশার কপাল চোখ, নাক থেকে নেমে ঠোঁটে এসে মিলিত হচ্ছে।ঈশানের আজ বৃষ্টির ফোঁটার প্রতি কেন যেন হিংসা হচ্ছে।তার ঈশাকে তারা সবাই ছুয়ে যাচ্ছে। ঈশার দিকে তাকিয়ে ঈশান তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয় এই মূহুর্তে ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকা সবচেয়ে কষ্টের কাজ নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়েছে। ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলতে,
“ঈশা রানি আমি তোমায় ভালোবাসি তোমার জন্য গত কয়েক বছর অপেক্ষা করে যাচ্ছি আরেক টু অপেক্ষা করতে হবে আমায়।তোমার জন্য নাহয় সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো আমি।

ঈশান আরেকবার ঈশার দিকে তাকায়।তার কি তাকানো ঠিক হচ্ছে এইসব ভেবেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।মূহুর্তেই চট করে মনে পড়ে যায়।
” সামনে থাকা রমনীটি তার স্ত্রী! সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। সেই দিন গায়ে হলুদের রাতেই ব্লাকমেইল করে সাইন করানো কাগজ গুলো রেজেস্ট্রি পেপারি ছিল। তা অস্বিকার করতে আর কোন সমস্যা নেই ঈশানের।হুম ঈশান তাকাবে তার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকাবে।

ঈশান আবারো মোহময় দৃষ্টিতে তাকায় ঈশার দিকে।ঈশা দুইহাত দুইদিকে প্রসস্থ করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করছে। ঈশান ঈশার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।গাড়ে উত্তপ্ত শ্বাস অনুভব করলে ঈশা পেছনে ঘুরে তাকায় তখনি ঈশানের সাথে একটি ধাক্কা খায়।নিজেকে সামলাতে না পেরে ঈশা পরে যেতে নিলেই ঈশান তার একহাত দিয়ে ঈশার কোমর পেচিয়ে ধরে সঙ্গে সঙ্গে ঈশা থমকে যায়।ঈশানের চুল ভিজে নাকের দিকটায় চুইয়ে চুইয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। ঈশানের সাদা শাট শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।খোচা খোচা দাড়িতে ফর্সা গাল জোড়া মারাত্নক সুন্দর লাগছে। ঈশা কিছুক্ষন তাকিয়ে তার চোখ বন্ধ করে নেয়

।বৃষ্টির ফোটারা যখন ঈশার ঠোঁট ছুয়ে যাচ্ছে তখন ঈশার চোখে মুখে যেন শুদ্ধতা ছড়িয়ে গেছে।ঈশান এবার সবচেয়ে অপ্রস্তুত কাজটা করে বসে ঈশার ঠোঁটে হালকা করে চুমু খেয়ে আবার মুখটা দূরে সরিয়ে আনে ঈশা সাথে সাথে তখন চোখ খুলে নেয় ঈশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালে ঈশান ঈশার পায়ের কাছে হাটু মুড়ে বসে পরে।মাথাটা নিচের দিকে ঠেকিয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“পারলাম না আমি পারলাম না ঈশা।নিজেকে আর স্বাভাবিক রাখতে পারলাম না।আজ তবে তোমার সত্যিটা জানা হয়ে যাক…!

ঈশা অবাক হয়ে ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলছে কিছুই তার মাথায় ডুকছেনা।
” আমি তোমার প্রতি দূর্বল ঈশা… একটু বেশি দূর্বল (ঢোক গিলে)এই ঈশান শাহরিয়ারের বর্তমান দূর্বলতা এই নওশীন ঈশা!মনে আছে সেই চা বাগনের কথা নীকষ কালো অন্ধকারে হারিয়ে গেছিলে তুমি। সেই অন্ধকারের মাঝেই আমি একটি আলোর ঠিকানা পাই আমার ভবিষ্যতের বেচেঁ থাকার একটি টনিক খুযে পাই।আর সেই টনিকটা তুমি..!মনে আছে আমাকে অন্ধকারে ভুল বুঝে চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেলেও আমার মন মস্তিষ্ক থেকে পালাতে পারো নি। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি আবারো ফিরে এসেছি। আমি তোমার ভালোবাসা পেতে চাই ঈশা। একটু ভালোবাসবে আমায়…? (শীতল কন্ঠে)

ঈশা স্তব্দ হয়ে গেছে কি বলছে এইসব..!ঈশান আবারো ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“একবার সুযোগ দেওনা ঈশা। তোমাকে ভালোবেসে নিজের বাবা মা কে চার বছর আগে ইউএসে রেখে এসে বাংলার মাটিতে পাড়ি জমিয়েছি।আর তোমার ভালোবাসা না পেয়ে তো আমি ফিরে যাবো না।তুমি ভালোবাসলেও আমার ঈশা না বাসলেও আমার ঈশা।ভীষন ভালোবাসি ঈশু পাখি….. ভীষন…! প্লিজ আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে ঈশান দাঁড়িয়ে পরে। বৃষ্টির গতি আরো দ্রুত বেড়ে গেছে।চারিদিকে ভারি বর্ষনে পানি জমে গেছে পিচ ঢালা রাস্তাটাতেও হালকা পানি জমে গেছে।ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে পিছনে হাটতে থাকে আর ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” ভালোবেসেছি,ভালোবাসি,ভালোবাসবো, ভালোবেসে যাবো… শুধু তোমাকে।আমার ঈশু পাখিকে।(দুই দিকে হাত প্রসস্থ করে)

ঈশা সামনে তাকিয়ে দেখতে পায়। ঈশান বেশ দূরে চলে গেছে তার কাছ থেকে…হুট করেই নিজেকে ঈশার নিঃসঙ্গ লাগে।এই মানুষটাকে ঈশা নিজের অজান্তেই ভালোবেসেছিল!তবে এখন তো ভালাবাসা নিশ্চই যায়।

ঈশা চোখের সামনে থেকে পানি মুছে ঈশানের দিকে ছুটে দৌড়তে থাকে।ঈশাকে তার দিকে আসতে দেখে ঈশানের ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে ঈশান নিজেও ছুটি যায় ঈশার কাছে তাদের মাঝে এখন বিশাল দূরত্ব। দুজনে দৌড়ে এসে দুজনকে জাপটে জড়িয়ে ধরে এতোটাই শক্ত করে ধরে যেনো মৃত্যু ছাড়া তাদের কেউ আলাদা করতে পারবেনা।ঈশান ঈশাকে জড়িয়ে ধরে নিশ্বব্দে কাদতে থাকে।এতোদিনের ভালোবাসা তবে ফিরে পেয়েছে সে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। আর ঈশা শব্দ করে কেঁদে দেয়। একটা মানুষ তাকে এতোটা ভালোবাসে… তার পাশে সবসময় থাকার বাহানায় একশ একটা শর্ত জুড়ে দেয় সত্যি পাগল একটা….!
ভালোবাসি ঈশু পাখি…!(ফিসফিস করে)
#চলবে……

দুঃখিত ২ দিন গল্প দিতে পারিনি।তাই আজ বড় করে দিয়েছি।

ঈশা ঈশানের ভালোবাসা মেনে নিয়েছে… পাঠকদের প্রতিক্রিয়া যানতে চাই…?‍♀️
সাইলেন্ড রিডার্সদের বলছি একটু সাড়া দিয়েন।

?পর্বটি কেমন হয়েছে অবশ্যই যানাবেন…!

?হ্যাপি রিডিং….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here