অস্তিত্বের খোজে part 7

0
767

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ৭
.
.
– আমি শুভ্রর অফিস থেকে মাথা নিচু
করে বের হলাম। রাস্তায় হাটছি আর
ভাবছি কই যাব। আমার যে যাওয়ার
কোন জায়গা নেই।
.
.
.
– সকাল থেকে চড়ের পর্ব যেন চলছে।
কিছু না বলে মাথায় উঠে গেছে
বিয়াদপ ফাজিল মেয়ে কোথাকার। সব
জায়গায় ফাজলামি না করলে মনে হয়
চলেনা তার বলে শুভ্র বাহিরে আসল।
সবাই শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভ্র বেশ রেগে গিয়ে বলল সবাই
তাকিয়ে কেন আছেন! সে আমার wife।
তাই স্বামী -স্ত্রীর মধ্য ঝামেলা
হতেই পারে।
.
– শুভ্রর ধমকে সবাই যে যার কাজে
লেগে গেল।
.
.
.
– পরী বলে কে যেন ডাকল। আমি পিছে
তাকাতেই আকিক কে দেখলাম।
– পরী কেমন আছো?
– হুম ভালো।
– তুমি কি সত্যি বিয়েটা মানো?
– কেন! সেটা জেনে আপনার কোন
লাভ আছে।
– পরী আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা
ছিল।
– ভাগ্য নেই বলে আমি সোজা
রাস্তায় হাটতে লাগলাম।
– এি পরী আমরা ইচ্ছা করলে কিন্তু
বিয়ে করতে পারি। শুভ্রর বাপেরও
ক্ষমতা নেই আমাদের বিয়ে আটকানো।
– আমার কিছু ভাল লাগছেনা ভাইয়া।
আমরা অনেক কিছু চাইলেও নিজের
ইচ্ছা মত করতে পারিনা।
– আমার পিছে পিছে আর আসেন না।
আমাকে একা থাকতে দিন বলে পা
বাড়ালাম।
.
.
.
– নিতাই সেন পরীর ভার্সিটি তে
অনেক ক্ষন যাবত দাড়িয়ে আছে। বার
বার পরীকে কল দিচছে কিন্তু রেসপন্স
নেই। ভাবল বাসায় গেছে বলে ওখান
থেকে নিতাই সেন বাসার পথে রওনা
দিল।
.
.
.
– অর্পিতা পরী কোথায় রে…… ও কি
বাসায় এসেছে।
– না দাদু। আমিও ভাবছি দিদি এখনো
বাসায় কেন এলো না।
.
.
– নাও লেঠা সামলাও। রাস্তাঘাট
থেকে তুলে আনা মেয়ের। এখানে
ইচ্ছা মত কিছু করতে পারছেনা দেখে
হয়ত অন্য কোথাও চলে গেছে। ও
মেয়েকে আমার চেনা হয়েছে
গেছে। যার খাবে তাকেই বাঁশ
দিবে। অনিতা ভাল করে দেখতো
মেয়েটি কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে
কিনা!.
.
.
.
– বিমলা চুপ করবা! আমার কিছু ভাল
লাগছেনা। মেয়েটার বিপদ হলো
নাতো!
.
.
.
– রাত ৮ টার দিকে শুভ্র বাসায় এসে
শুনল পরী বাসার ফিরে নি। শুভ্র রেগে
বলল ও বাসায় ফেরেনি আর এখন সেটা
বলছ! আমায় তো একটা ফোন দিতে
পারতা কেউ। শুভ্রর মনে হয় পাগল হয়ে
যাবে। সকালে ওকে ওভাবে বলা ঠিক
হয়নি। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল।
.
.
.
– রাত ১১ টার দিকে শুভ্র নিতাই কে কল
দিয়ে বলল দাদু থানায় কি জিডি
করব……..?
– দেখ থানায় জিডি করলে কি বাড়ির
মান সম্মান থাকবে!
– বিমলা চিৎকার করে বলল যদি থানায়
তোমরা গেছ তাহলে এর ফল ভাল
হবেনা বলে দিলাম। এতদিনের কুড়ে
কুড়ে জমানো সম্মান একবারে ধুলাই
মিশিয়ে দিবে।
.
.
.
– শুভ্র হয়রান হয়ে গেছে পরীকে খুঁজতে
খুঁজতে। পুরো দিন অফিস করা তারপর
কোন রেষ্ট ছাড়ায় ৪ ঘন্টা থেকে ওকে
খুঁজেই চলছে।
.
.
.
-বাধ্য হয়ে বাসায় আসল প্রায় ১ টার
দিকে। প্রচুর বিষ্টি হচ্ছে। এই ঝড়
বাদলের রাতে মেয়েটা কোথায়
গেল। এই শহরের রাস্তাঘাট ও ভাল করে
চিনেনা ও। শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে
কেবল বাসার ভিতর ঢুকবে এমন সময়
বিদ্যুৎ চলে গেল। মোবাইলের ফ্লাস
জলাতে যাবে এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ
চমকালো এবং সেই আলোয় দেখতে
পেল দুরে বাগানে কে যেন গুটিসুটি
মেরে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে।
.
.
.
– শুভ্র সেদিকে পা বাড়াল। গিয়ে
দেখল পরী। ৩৬০ ডিগ্রী ভোলটেজে
রাগ চলে গেল মনে হয় শুভ্রর। পরীর হাত
ধরে একটানে দাড় করাল।
.
.
.
– আমি চমকে গিয়ে চোখ তুলে দেখি
শুভ্র। সেই তো আমার মুখ আবার দেখল না
পুরোটা শেষ হতেই গালে থাপ্পড়
বসিয়ে দিল শুভ্র আমার। গালে হাত
দিয়ে দাড়িয়ে আছি।
.
.
– এই নিজেকে কি মনে করিস! prince
Dayna মনে করিস। তোর জন্য আজ বাসায়
কতটা সবাই হয়রান। বৃদ্ধ দাদুটা পর্যন্ত
তোর জন্য চোখের জল ফেলছে আর তুই
মজা নিচ্ছিস! সবাই কে এখাবে
দেখে।
.
.
– যাওয়ার তো কোথাও জায়গা নাই।
তাহলে নাটক কেন করিস বলে আমাকে
টেনে হিচড়ে বাসার ভিতর নিয়ে
গেল।
.
.
– ডাইনিং রুমে নিতাই সেন শুধু বসে
আছে। সবাই হয়ত যে যার রুমে।
.
– পরী কে দেখে নিতাই ধরপর করে
দাড়িয়ে যায়। ২ জনেরই পুরো শরীর
ভিজা।
.
– পরী তুমি কই ছিলা। জানোনা আমরা
তোমার জন্য সবাই টেনশন করব। তোমার
কি কোন দায়িত্ব কান্ড নেই নেই!
.
.
.
– সবার কথা গুলো আমার কানে
বাজছে। পুরো দিন না খাওয়া শরীর
এবং প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে
ভিজছি। আমি কোন কথা না বলে
ধীরে ধীরে উপরে এসে রুমে ডুকলাম।
.
.
.
– দেখছো দাদু কতটা বেয়াদপ মেয়ে ও।
আমরা ওর টেনশনে মরে যাচ্ছি আর ও
কারও কথার জবাব দিতে মনে করেনা।
.
.
– থাক শুভ্র অনেক রাত হয়ে গেছে ওকে
আর কিছু বলিস না। যা ঘুমাতে যা।
আমি পলাকে বলছি ওকে কিছু খাবার
দিতে। মুখ খুব শুকনা মনে হয় কিছু খায়নি
পুরো দিনে। ওকে কোথায় পেলি এত
রাতে?
.
.
.
– বাগানে গিয়ে দেখি বসে আছে।
পুরো দিনই বাসায় ছিল। যাওয়ার কোন
জায়গা আছে যে সেখানে যাবে।
তবুও তেজ ষোল আনা মানুষকে
দেখাবে বলে শুভ্র উপরে ওর রুমে গেল।
.
.
.
– পরীর রুমে গিয়ে দেখল ও ভিজা
কাপড়েই চিয়ারে বসে আছে। শুভ্র বলল
এই তোমার এত্ত ডেমাক কেন হুম দাদুর
কথার কোন জবার দেওয়া প্রয়োজন মনে
করনি বসে দরজায় ছিটকি লেগে দিল।
একতো আজ শায়েস্তা করতেই হবে।
তাছাড়া কবে যে আবার এরকম
পাগলামো করবে কে জানে।
.
.
– শুভ্রকে আমার কাছে আসতে দেখেও
চুপ করে রইলাম।
– শুভ্র পরীর কাছে একদম কাছে গিয়ে
বলল এত্ত তেজ কাকে দেখাও তুমি বলে
পরীকে হাত ধরে দাড় করিয়ে ওর
সামনে আনল।।।।
.
.
.
– শুভ্রর একদম কাছে পরী। প্রমিসের কথা
কি মনে নেই! তুমি কি চাও আমি
তোমার সাথে বাজে কিছু করি……।
আমাকে তোমার ভয় করেনা বলতেই
পরী ওর গায়ে ঢলে পড়ল। শুভ্র বেশ চুমকে
গেল। এই পরী কি হয়েছে তোমার বলে
শুভ্র পরীর গা ঝাকালো। সেন্সলেস
হারানো পরী যেন আরও বেশি
নেতিয়ে পড়ল।
.
.
.
– পলা এসে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে বার
বার। শুভ্র পরীকে সুয়ে দিয়ে দরজা
খুলে দিল।
.
.
– পরীর রুমে শুভ্রকে দেখে পলা বলল
তুমি! পরীর ঘরে কি করছো? বলেই ঘরে
উকি দিল। পরীকে সুয়ে থাকতে দেখে
বললেন ওর সর্বনাশ করোনা শুভ্র।
মেয়েটা তোমাদের প্রচুর বিশ্বাস
করে। জিবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে
ওকে আর কষ্ট দিওনা।
.
.
.
– এই চুপপপপপপ একদম চুপপপপপ। ওর সর্বনাশ
মানে! ও আমার লিগ্যাল wife. আমি ওর
কেন সর্বনাশ করতে যাব! আপনি একটু
বেশি বোঝেন। মায়ের থেকে মাসির
দরদ দেখছি বেশি। খাবার গুলো নিয়ে
দরজা বন্ধ করে দিল।
.
.
.
– শুভ্রর চিৎকারে অনিতা এসে বলল কি
হয়েছে রে পলা। বৌদি আপনার
ছেলেকে থামান। ওর পরীর সাথে হয়ত
খারাপ কিছু করবে। একরুমে ছেলে
মেয়ে থাকা মানে বোঝেন তো……….
মেয়েটার লাইফ বরবাদ হয়ে যাবে।
.
.
.
– পরী কখন আসল!
– শুভ্র কই থেকে যেন নিয়ে আসছে।
.
.
.
– দেখ পলা পরী শুভ্রর বউ তাই তোর
থেকে ওর অধিকার বেশি। তাছাড়া
আমাদের থেকে ও পরীর চিন্তা ঢের
করে। ওকে ওর মত থাকতে দে।যা শুতে
যা বলে অনিতা চলে গেল।
.
.
.
– শুভ্র ওর ফ্রেন্ড কে কল দিল। ওর ফ্রেন্ড
একজন ডাক্তার।
– হ্যাঁ শুভ্র বল……. এত রাতে কেন কল
দিছিস। বাসার সবাই ঠিক আছে?
.
.
– তুই কি ফ্রী আছিস?
– হুম এখনও হাসপাতালে এই বের হব
বাসার পথে। তুই বল…..
.
.
.
– শুভ্র এক নিঃস্বাসে ওর বন্ধু আসলাম
কে সব বলল।
– আসলাম কিছুক্ষন ভেবে বলল…..
– অহ বেশি টেনশনে সমস্যা হয়েছে মনে
হয়। তুই একটা কাজ কর বলে সব প্রাকৃতিক
টেকনিক শিখে দিয়ে বলল কাল
সকালে আমি একবার তোর বাসায়
যাবনি।
.
.
.
– শুভ্র পরীর গা মুছে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ
করতে গিয়ে বেশ ইস্তত বোধ করল। তার
পর কিছু না ভেবেই পোশাক খুলে
ফেলে এবং নতুন একটা টাওয়াল
পড়িয়ে দেয়।
.
.
.
– এই সময় ড্রেস পড়ানো খুব কঠিন।
তাছাড়া সময় ও নেই। ওর শরীর ঠান্ডা
হয়ে আসছে। কয়েক বার পরীর মুখে
পানি ছিটিয়ে দিল কিন্তু কোন কাজ
হলনা। হাত পা মালিশ করে দিল
তাতেও রেসপন্স করছেনা। তাই লাষ্ট
পদ্ধতিটা পরখ করতেই হবে আসলামের
দেওয়া তথ্য মতে।
.
.
.
.
– ইচ্ছা করলে পলা বা অর্পিতা কে
দিয়ে পোশাক বদলাতে পারত কিন্তু ও
চায়না পরীর শরীর কেউ দেখুক। নিজের
বউয়ের শরীর দেখার অধিকার একমাত্র
আমারই বলে পরীকে সুয়ে দিয়ে
নিজের রুমে গিয়ে জলদি চেঞ্জ করে
আবার আসল পরীর রুমে।
.
.
.
দরজা লাগিয়ে দিয়ে পরীর দিকে
এগিয়ে গেল। আজ মেয়েটা নেশা
ধরে দিছে শুভ্রর। জানেনা কি করে
নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখবে।
.
.
.
– শুভ্র বিছানায় গিয়ে পরীর পাশে
সুয়ে পড়ল এবং পরীকে বুকের সাথে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরল ঐ অবস্থায়………
—————-
চলবে
—————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here