অস্তিত্বের খোজে part 6

0
788

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৬

.
– শুভ্র বলল কিছুনা শুধু একটু আদর। আই মিন রেপ যেটা তোমার ভাষায়। কারন তুমিতো আমাকে husband হিসেবে মান না কিন্তু আমি মানিতো! তাই বউ এর কাছ থেকে কতদিন দুরে থাকা যায় বল…..
.
.
– ছি লজ্জা করেনা আপনার? এই আপনার শিক্ষা! বলে ২ হাত আরও পিছিয়ে গেলাম।
.
– ও আবার একদম আমার কাছে এসে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে wife কে ছোয়া যদি অশিক্ষা হয় তাহলে আমি অশিক্ষিতই হতে চাই বলে ঠোটে কামড় দিল।
.
.
– উমমমম্,,,,,,হহহ্ ছাড়ুন বলছি লুচু কোথাকার বলেই একটা থাপ্পড় দিয়ে বসি ওর গালে।
যখন তখন ফাজলামি! ফাজলামির একটা সীমা আছে।
.
.
– থাপ্পড়ে শুভ্র আরও রেগে গিয়ে আমাকে উল্টা একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল আমি লুচু! তোমার সাহস কিকরে হয় এই কথা বলা? কথা বলার শাস্তি এবার দেখ বলে আমার গলা, ঠোট,গাল একং থিথিতে পাগলের মত kiss করতে লাগল। যতই আমি নিজেকে ছাড়াতে চাই ততই পাগলামি ওর বেড়ে যায়।
.
.
– আমি এবার কান্না কন্ঠে বলে উঠলাম আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিন। আমি আর কখনও বাসা ছেড়ে যাবনা প্রমিস করে বলছি। আর এধরনের কথা বলবনা। চড়ও কখনও মারবোনা বলে কেঁদে উঠলাম।
.
.
– এবার ও থেমে যায়। ঠিক বলছো তো?
– হুম আর জিবনেও যাব না। সব কথা শুনব আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ…….
.
– এবার আমাকে ছেড়ে দিল ও। এর পর যদি কিছু করেছো তাহলে কিন্তু kiss এ শুধু সীমাবদ্ধ থাকবেনা। মনে থাকবে তো!
– আমি নিচে তাকিয়ে বললাম হুম। আমার চোখদিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেদিকে ওর খেয়াল নাই।
.
.
– পুরো দিন কিছু খাইনি। যাও ফ্রীজ থেকে খাবার গুলো বের করে গরম করে নিয়ে আসো । খুব খুদা পাইছে।
.
.
– আমি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে নিচে কিচেনে গেলাম। ফ্রীজ থেকে একে একে সব বের করে গরম করতে লাগলাম। অসহ্য যন্ত্রনা…….এখান থেকে আমাকে মুক্তি দাও আল্লাহ বলে কেঁদে উঠলাম।
.
.
– শুভ্রর মেজাজ ফুরফুরে এখন। মনে মনে হাসছে আর ভাবছে টেকনিকটা বেশ কাজে লাগছে। বেশ ভয় পেয়েছে। জিবনে প্রথম কাউকে ভালবাসলাম সেকিনা আমার সাথেই চ্যালেঞ্জ নেয় এবং দুরে চলে যেতে চায়। এবার দেখব কেমন করে যায়।
.
.
– আমি খাবার গুলো গরম করে শুভ্রের রুমে নিয়ে গেলাম। দেখলাম বসে ফোন চাপছে। আমাকে দেখে বলল পরী তোমাকে তোহ দাদু ফোন দিয়েছে। নিশ্চয় তোমার ফেসবুক আইডিও আছে। আইডিটা দাও তো?
.
.
.
– আমার কোন আইডি নেই বলে খাবার রেখে রুম থেেক বের হয়ে আসতেই শুভ্র বলে উঠল আমি খাব তারপর তুমি পরিষ্কার করবে এবং এখান থেকে নিয়ে যাবা সব।
.
.
– বাধ্য হয়ে বসে পড়লাম। ব্যাটার মতলব ভাল না। কখন কোন দোষে ইজ্জতের উপর হামলা দিবে সেটা বলা যায় না। তার থেকে চুপ করে বসে থাকায় শ্রেয়।

.
.
.
– শুভ্র খাচ্ছে……. ওর খাওয়া দেখে
আমারও খুব খুদা লেগে গেল। মনে হচ্ছে
পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।
– পরী তুমি রান্না করতে পার?
– আমি ওর দিকে খেকিয়ে উঠে বললাম
পারিনা। ব্যাটা খাচ্ছিস খা সেটা
আবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে
খেতে হবে! বজ্জাত, খচ্চর কোথাকার
বলে হাজারটা গালি দিলাম।
.
.
.
– শুভ্র হঠাৎ খাওয়া থেমে দিয়ে আমার
দিকে তাকাল।
– আমি ঢোক গিলে বললাম এই যা! কথা
গুলো বুঝতে পারছে নাকি……. মনে
হচ্ছে এবার আর রক্ষা নেই ইজ্জতের
গোষ্টী আজ মনে হয় উদ্ধার করেই
ছাড়বে।
.
.
-শুভ্র প্লেট নিয়ে আমার কাছে এসে
বসে পড়ল। আমি আরও গুটিশুটি মেরে
বসে বসে পড়লাম।
.
– আমাকে ওভাবে দেখে হাসি দিয়ে
বলে মিসেস শুভ্র খাবার খাওয়ার সময়
অন্তত কেউ দুষ্টমি করবেনা!
.
– তবুও সেভ থাকা দরকার আপনার মতি
গতি আমার চেনা আছে।
.
– পেটেতো মনে হয় পুরা দিনে কিছু
পরে নি বলে আমার দিকে তাকাল।
.
– উমহ্ দরদ দেখাচ্ছে। ঢের খেয়েছি….
আমার পেট ভরাই আছে বলে অন্য দিকে
তাকালাম।
.
– প্লেটে অর্ধেক ভাত রেখে বলল
বাকি গুলো খেয়ে নাও বলে হাত ধুতে
গেল।
.
– কিহ্ আমি ওর এঠো ভাত খাব? সাহস
কিকরে হয় এটা বলা।
.
– মিসেস শুভ্র আমার সাহস আমি
দেখিয়েছি। যদি আরও দেখতে না
চাও তাহলে অন্তত ফটাফট খেয়ে রুম
থেকে বিদায় হও। আমি ঘুমাব। কাল
সকালে অফিস আছে।
.
– আমি খাব না…….
.
– আমার কাছে এসে এমন একটা ধমক
দিল….. ভয়ে খেতে শুরু করলাম।
.
– এই এর বেশি ভাত খাবানা। সকালে
আবার খেতে হবে তাই। আর হ্যাঁ খেয়ে
লাইট অফ করে আমায় বিছানায় শুতে
পার আবার তোমার রুমেও যেতে পার।
তোমার ইচ্ছা। good night বলে ঘুমিয়ে
পড়ল।
.
.
.
– ইচ্ছে করছে মাথায় বাড়ি দিয়ে
মাথাটা ফাটিয়ে দেই। g…o. o..d n….8
হুমমমহ্
.
– সব পরিষ্কার করে লাইট অফ করে
দরজাটা এগিয়ে দিয়ে সব কিচেনে
রেখে প্রায় সাড়ে ৩ টার দিকে
ঘুমাতে গেলাম।
.
.
.
– সকালে অর্পিতা এসে দরজা নক করল।
.
– কি ব্যাপার অর্পিতা এত্ত সকালে
ডাকছো কেন?
.
– চল দাদুর সাথে জগিং এ যাব।
.
– এমনি রাতে ঘুম হয়নি তার উপর এত্ত
সকালে বাহিরে যাইতে হবে উফফফ্
কি যে ঝামেলা।
.
– আমি আর অর্পিতা একদিকে হাটছি
আর দাদু ও পাশ দিয়ে হাটছে।
.
– পরী দিদি?
.
– হুম…..
.
– তোমাকে দিদি বলে ডাকব না
বৌদি বলে ডাকব!
.
– আমি থেমে গেলাম কি বলল বুঝতে
পারছিনা।
.
– কেন আগে যা বলেছিস এখনও তা বলে
ডাকবি। তোর গুনধর দাদা কি ভাল
কাজ করেছে যে এর জন্য ওর
স্বীকৃতি……. পরীকে দিতে হবে বলে
নিতাই সেন দৌড়াতে লাগল।
.
– ওনার দৌড়ান দেখে বুঝতে হবে
আমাদের ও তার সাথে দৌড়াতে হবে।
কি আর করা আমি আর অর্পিতাও
দিলাম এক দৌড়।
.
.
.
– সকালে শুভ্র ওর মায়ের কোলে এসে
সুয়ে আছে। অনিতা কোন কথা
বলছেনা।
.
-মা………. অ…….মা…….
.
– পাঠার মত ম্যা ম্যা করছিস কেন?
.
– হুম আমিতো পাঠাই কিন্ত তোমার
কাছে। পরীর সামনে যেন বলনা।
সারাজিবন অই নাম ধরেই ডাকবে।
.
– ঐ মেয়ের মধ্য কি পেলি যে জাত-
পাত, ধর্ম কিছু দেখলিনা।
.
– আমি ওর সাথে খুব বড় অন্যায় করে
ফেলেছি বলে সব ঘটনা খুলে বলল।
.
– তুই আমার ছেলে হয়ে এত বড় কাজ
কেমনে করলি তাও একটা এতিম মেয়ের
সাথে। আর তুই কি ভাবছিস ও তোকে
মেনে নিবে!
.
– জানিনা মা। চেষ্টা করতে তো দোষ
নাই।
.
– দাদা নাকি আসছে বৌদিকে
নিয়ে?
– হুম ১৫ দিন পর।
.
– বেশ ভালই হল। দাদাকে যেন কিছু
বলনা বলেই শুভ্র চলে গেল।
.
.
.
– আমরা জগিং শেষে বাসায় আসলাম।
.
– হাপিয়ে গেছি আজ। দাদু যা
দৌড়িয়ে নিছেনা আজ জিবনডা
খয়লা করে ছাড়ছে।
.
-অনিতা এসে পরীকে এক গ্লাস জুস
এগিয়ে দিল।
.
– আমিতো অবাক হয়ে গেলাম। আজ সূর্য
কোন দিকে উঠছে বলে আমি অর্পিতার
দিকে ও আমার দিকে চাওয়া চাওয়ি
করতে লাগলাম। দাদুও বেশ অবাক।
.
– এই মেয়ে তোমায় দিছি নাও বলে
ধমক দিল। আমি ভয়ের ঠেলায় নিলাম
হাতে।
.
– উপরে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র আমার
দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে হাসছে।
.
– ওকে দেখে আমার গা জ্বলে
যাচ্ছিল। আমার সহ্যই হয়না তাকে।
.
.
.
– আমি জুস খেয়ে রুমে এসে শাওয়ার
নেওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম।
.
.
– সকালে সবাই একসাথে বসে নাশতা
করছি এমন সময় দিদুন বলে উঠল বড় দাদু
ভাই নাকি আসবেরে অমল!
.
– হুম মা।
.
– নিজের নাতী নাতনী নিয়ে যে হইহই
করব একটু তারও উপায় নেই। জাতপাত হীন
মাইয়া টারে দেখলেই সব আনন্দ
মাটিতে মিশে যায়। সুযোগ বুঝে
বাড়িতে গেড়ে বসেছে।
.
.
– আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। শুভ্র
আমার দিকে তাকাল। আমার চোখ
দিয়ে টপ টপ করে নাস্তায় পানি পড়ল
কয়েক ফোটা।
.
.
– আমি আর না খেয়ে উঠে আসলাম।
.
.
– দেখছিস মাইয়ার তেজ। বলি খাবার
গুলো যে নষ্ট করলে সেটা কি তোমার
বাপের টাকায় কেনা?
.
.
– বিমলা চুপ করবা! না আমিও উঠে
যাব………
.
.
– বলি বাহিরের মেয়ের জন্য তোমার
এত্ত দরদ কেন! সুন্দরি মেয়ে দেখলেই দরদ
উথলে পরে?
.
.
.
– তোমার মুখে যেন কোন কথায়
আটকেনা দেখছি বলে উঠে গেল
নিতাই সেন। সাথে শুভ্রও উঠে গেল।
.
.
.
-আমার কি যে খারাপ লাগছিল বলে
বোঝাতে পারবনা।
– শুভ্র এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে
বলল মন খারাপ করোনা। দিদুনও অনেক
ভাল। যেদিন আপন করে নিবে সেদিন
বুঝবা উনি কি জিনিস।
.
.
.
– আমি পিছন ফিরে শুভ্র কে একটা চড়
বসিয়ে দেই। যখন তখন জড়িয়ে ধরার
অজুহাত খোজেন কেন? আমি উড়ে এসে
তো জুড়ে বসতে চাইনি। সব আপনার জন্য
হয়েছে। কোন দিনও আপনাকে ক্ষমা করব
না বলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসলাম
ভার্সিটি তে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
.
.
– আজ শুভ্র যেন প্রচুর অপমান বোধ করল
পরীর চড় মারায়।
.
.
– আমি ভার্সিটি তে এসে ক্লাম রুমে
যেতেই আমার ফ্রেন্ড অমিত বলে উঠল
কিরে বিয়ে করেছিস আমাদের
বলিসনি তো।
.
.
– আমি অবাক হয়ে বললাম কে বলেছে
আমার বিয়ে হয়েছে?
– কেন কাল রাতেই তো বললি এখন তুই
বরের কাছে…..
– আমি…….! বলেই শুভ্রের কথা মনে পড়ল।
– পুরো ক্লাসে ব্যাপার টা সবাই
জেনে গেছে। অনেকে অনেক কথা
বলছে। আর আমি মাথা নিচু করে শুনছি।
লজ্জা ঘৃনায় আমার মাথা কাটা
যাচ্ছে।
.
.
– এক পর্যায়ে প্রচুর রাগ উঠল। ক্লাস না
করে রিক্সা করে শুভর অফিসে গেলাম।
– আরে mam. আপনি?
– এখানেও দেখছি সবাই ব্যাপারটা
জানে।
– আমি ভিতরে যেতে লাগলাম আর
লোকটি বলল mam ভিতরে যাবেন না
প্লিজ স্যার…… পুরোটা কথা আর বলা
হলনা এর মধ্য ডুকে গেলাম রুমে। কোন
দিকে না তাকিয়ে শুভ্রকে গিয়ে চড়
মারলাম। এই আপনার সাহস কি করে হয়
আমার আইডি হ্যাক করা। আর সবাইকে
কি বলেছেন?
.
.
.
– শুভ্রর চুপ থাকা দেখে আমি পিছন
ফিরে দেখি অফিসের কয়েকটা স্টার্ফ
দাড়িয়ে আছে।
.
– এবার আমি নিজেও হচকিয়ে উঠলাম।
– স্টার্ফ গুলো লজ্জায় মাথা নিচু করে
চলে গেল। আমি শুভ্রের দিকে চেয়ে
দেখি ওর পুরো চোখ লাল হয়ে গেছে
এবং ২ ফোটা পানিও পড়ে গেল চোখ
দিয়ে।
.
.
.
– একটানা ৫ টা চড় আমার গালে এবার
পড়ল খুব জোড়ে। আমি মাথা নিচু করে
গাল ধরে দাড়িয়ে আছি। নাক ও
চোখের জল একাকার।
.
.
– Get out……… বাসায় ফিরে তোর মুখ
যেন না দেখি বলে শুভ্র পিছন ফিরে
দাড়িয়ে রইল।
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here