অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১
– অবশেষে লোকটি আমার সিথিতে
সিদুর দিতে সফল হলো।
– আমি আল্লাহ্ বলে চিৎকার দিয়ে
উঠলাম। আমার চিৎকারের শব্দ মন্দিরের
দেয়ালে আঘাত হেনে আমার কাছেই
ফিরে এলো। এই প্রথম কেউ হয়তো
মন্দিরে আল্লাহর নাম চিৎকার করে
ডেকে উঠল।
.
– আমি ৫ জন মানুষের শিকার হইলাম শুধু
মিথ্যা কথার প্রতিবাদ করার জন্য।
.
.
– আমার সামনে একটি লোক দাড়িয়ে
আছে এসিডের বোতল নিয়ে যে
কিছুক্ষন আগে আমার সামনে একটা
কাঠের উপর কিছুটা এসিড ফেলে দেয়
এবং সেটা পুরে যায়।
যেটা দেখে আমি ভিষন ভয় পেয়ে
যাই।
.
.
.
– ঘটনা ঘটেছিল ৮ দিন আগে। আইসিটি
ক্লাস করে আমরা কয়েকজন বান্ধবী
মিলে সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি
ফিরছিলাম।
– সামনে কয়েকটি ছেলে দেখে
মাথা নিচু করেই আসছিলাম।
– এমন সময় একটি ছেলে বলে উঠল যারা
বোরখা পরে তারাই বেশি খারাপ
এবং এর আড়ালেই নোংরামি করে
বেড়ায়।
– আর একজন বলে উঠল বাদ দে তোহ্ এই
মাগী গুলোও যে কয়জনের সাথে শুইছে
সেটা জানাই আছে।
– আমি মুসলিম তাই পর্দা সম্পর্কে এমন
কথা শুনে চড় চড় করে মাথায় রক্ত উঠে
গেল।
– এই কথা টা আমার সহ্য হয়নি। আমি
সোজা গিয়ে ছেলেটির কলার ধরে ২
টা চড় মাড়ি খুব জোড়ে।
– এই তোর মাকে গিয়ে জিঙ্গাসা
করিস তোর মা কত জনের সাথে সুয়ে
তোর মত কুলাঙ্গার ছেলের জন্ম
দিয়েছে। পর্দার মর্যাদা তোরা কি
বুঝবি! দেখেতো মনে হচ্ছে সব
নিংটির বাচ্চা।
– আর এই কথাটাই আমার জন্য কাল হয়ে
দাড়াল।
.
.
.
– আজ যখন ক্লাস করার জন্য বাসা থেকে
বের হই তার খানিক পর একটা হাইস এসে
আমার সামনে দাড়ায় এবং সবার
সামনেই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে
এখানে আসে।
.
– ছেলেটি আমাকে ঠাস করে চড়
দিয়ে বলল তোর মত ২ টাকার মেয়ের
সাহস কি করে হলো অতগুলো মানুষের
সামনে আমায় চড় মারা!
– দেখ এবার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি
খেলা কাকে বলে।
– আমি কেঁদেই যাচ্ছি। সত্যি আজ
আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি কি করব
আল্লাহ্।
.
.
– অপর একজন বলে উঠল এই “শুভ্র” রাগের
মাথায় একটা মুসলমান মেয়েকে তোহ
সিদুর পড়ে বিয়ে করলি এখন কি করবি!
– কি আর করব ওর বাসার সামনে ফেলে
দিয়ে আসব। আমার গায়ে হাত তোলা
কি জিনিস ওকে বুঝতে হবেনা? সম্মান
কি জিনিস এবার বুঝবে।
.
.
– আমাকে আবার টেনে হিচড়ে হাইস এ
উঠিয়ে আমার বাসার সামনে
বিকেলের দিকে ফেলে দিয়ে চলে
যায়।
– আমার বোরখা টানা হিচড়া করতে
ছিড়ে গেছে। মাথা ভরতি সিদুর এবং
হিজাবের ঠিক নেই।
.
.
.
– আমি মাথা নিচু করে বাসার কাছে
এসে দেখি অনেক মানুষ।
– সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
এবং অনেকে বলল এই মেয়ের ইজ্জত কি
আর রাখছে! সব শেষ।
.
.
– আমি বাসার ভিতর ঢুকে পড়লাম।
ডাইনিং রুমে যেতেই চাচা কে
দেখতে পেলাম। উনি এসে সোজা
আমায় থাপ্পড় মেরে বলল বাহিরে মুখ
দেখানোর আর আমার জো রাখলিনা?
.
.
– জন্মের সময় মা মারা গেছে। তার ১
বছরের মাথায় বাবাও মারা গেছে। এই
চাচার কাছেই মানুষ আমি।
.
.
– খুব কষ্টে এতদুর অবদি এসে আজ এত্ত বড়
একটা অঘটন ঘটে গেল।
– চাচার চিৎকারে চাচী এবং নিপা
আর নিশা বের হয়ে এলো।
– চাচা সেফ বলে দিল ও যেন ঘরে না
ঢোকে। ওর আজ থেকে এখানেই সব বন্ধ।
.
.
– নিপা আর নিশা এসে বলল “পরী” কই
ছিলি? সবাই তোর নামে খারাপ
বলছে। ওরা তোকে কোথায় নিয়ে
গিয়েছিল? তোর মাথায় লাল এগুলো
কি? তুই ঠিক আসিছতো?
– আমি নিপা আপু জড়িয়ে ধরে ডুকরে
কেদে উঠলাম।
– চাচী এসে সোজা জানিয়ে বলল তুই
এখন কোথায় যাবি জানিনা। মুখপুড়ী
মুখ পুরে এসে এখানে উঠেছিস! আর
কোথাও যাওয়ার জায়গা পেলিনা?
তোর জন্য নিজের মেয়ে ২টো কে ভাল
জায়গায় বিয়েও দিতে পারবোনা। এত
মানুষ মরে তোর মরণ হয়না। গলায় দরি
দিয়ে মরতে পারিস না।
.
.
.
– আমার কান্না দেখে নিপা ও নিশা
আপু ওরা ২ জনেই কাঁদছে।
– আল্লাহ আমি কি করব। আমায় মৃত্যু দাও
আল্লাহ। আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে
গেছে। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে
পাচ্ছিনা। আমি এখন কই যাবো? আমার
যে যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
–
–
–
– ওখানেই ওভাবে বসে রইলাম। পাশের
বাসার আফজাল চাচা এসে চাচাকে
কি যেন বুঝিয়ে গেল।
– আমায় শুধু বলল ছেলেগুলো কে চিনতে
পারবি। আমি শুধু হুম বলে চুপ করে রইলাম।
– রাত ৯ টা পর্যন্ত আমি ওভাবেই বসে
রইলাম।
– নিপা আপু এসে আমাকে রুমের মধ্য
নিয়ে
গেল। নিজের বাসাটাও আজ অচেনা
লাগছে। যার বাবা মা থাকে না সেই
বোঝে বাবা- মার ছায়া একটা
সন্তানের জন্য কতটা জরুরি।
.
.
– রাত ১১ টা বাজে আমি ধীরে ধীরে
ছাদের চিলে কোঠা রুমে গিয়ে
ওড়না
টা টিনের চালার বাঁশের সাথে
বাধলাম। কাল কিভাবে সবাইকে মুখ
দেখাব। চাচা বা কি করবে। তার
থেকে মরে যাওয়াই ভাল। চাচিতো
বলল গলায় দড়ি দিতে।
– ওড়ানার ফাস বেধে গলার ভিতর
দিলাম……
চলবে………….