#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৯
‘ডিভোর্স পেপার নিয়ে তোমাদের সব সমস্যা তো? সমস্যা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।’
সবার দৃষ্টি রাতুল শিকদারের দিকে, রাতুল শিকদারের ঠোঁটে মৃদু হাসি তিনি একটু থেমে আরিয়াকে ডেকে সেই কাগজটা আনতে বললেন। আরিয়া কাগজটা এনে বাবার হাতে দিল। রাতুল শিকদার কাগজটি সবার সামনে ধরে বললেন,
– এই কাগজেই তো তোমরা সাইন করেছ তাই না?
স্তব্ধ মাথা নাড়ল। রাতুল শিকদার বলতে লাগলেন,
– কিন্তু এটা ডিভোর্স পেপার নয় বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার।
সবাই চমকে গেল অরিত্রি শিকদার বললেন,
– রেজিস্ট্রি পেপার!
– হ্যা, স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতার ইসলামিক নিয়ম সম্পূর্ণ করে বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি হয়নি বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছে তাই রেজিস্ট্রির কথা মাথায় ছিল না যখনি শুনলাম তুমি ওদের ডিভোর্স করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছ তখনি বুদ্ধি করে সেই উকিলের সঙ্গে কথা বলে কাগজ বদলে দিয়েছি ওরা সাইন ঠিকই করেছে তবে রেজিস্ট্রি পেপারে।
স্তব্ধ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– তার মানে আমাদের ডিভোর্স হয়নি!
– না।
অরিত্রি শিকদার বললেন,
– কাগজটা তো আমি আর রুশি ভালো করে দেখেছিলাম তখন তো ডিভোর্স পেপার ছিল।
– হুম তখন ওইটা ডিভোর্স পেপার ছিল আমি দেখতে চেয়েছিলাম স্তব্ধের কাছে এই সম্পর্কটা কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে তোমরা স্তব্ধকে আলাদাভাবে বুঝিয়ে সাইন করাতে চেয়েছিলে তখন স্তব্ধ রাজি হয়নি কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছিল কিন্তু তুমি আবারো উকিলের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে ডিভোর্সের কাগজ বানিয়ে দিতে বললে তখনি এই কারসাজিটা করলাম।
– তুমি কিভাবে জানলে আমরা আবারও ডিভোর্সের কাগজ নিয়ে উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি?
– উকিল নিজেই ফোন করে বলেছিল।
রাতুল শিকদার আবার বললেন,
– এছাড়া ওরা তিন কবুল বলে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে তালাক তো হয়নি সেক্ষেত্রে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে সাইন করলেই যে তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে এটা ভাবা বোকামি।
স্নিগ্ধতার ভেতরের কষ্টের একটা ভার কমলো।স্তব্ধ হেসে বলল,
– ড্যড তুমি অনেক চালাক হয়ে গেছ ইদানিং ভালো ভালো কাজ করছো একটুর জন্য সংসারটা বেঁচে গেল।
স্নিগ্ধতার হাত টেনে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
– এখন আর দিদানের ঘরে গিয়ে কি করবে চলো এখন আমাদের ঘরে।
উপস্থিত সবাই স্তব্ধের কান্ড দেখে হেসে দিল।অরিত্রি শিকদার প্রশ্ন করলেন,
– তুমি ওই উকিলের ঠিকানা জানলে কিভাবে?
আরিয়া মুচকি হেসে বলল,
– আমি বলেছি মম।
অরিত্রি শিকদার চমকে গেলেন আরিয়া পুনরায় বলল,
– আমি চাইনি মম ওরা আলাদা হোক তোমাকে বুঝিয়ে যখন লাভ হলো না তখন বাধ্য হয়েই ড্যডকে বলেছি।
অরিত্রি শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– সবাই সব জানতো মাঝখানে আমি অপরাধী হয়ে গেলাম,যাক সে সব আমার ছেলে যখন স্নিগ্ধতার সঙ্গে খুশি আমার আর কোনো আপত্তি নেই।
বলেই অরিত্রি শিকদার চলে গেলেন উপস্থিত বাকিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
____________
কলেজ শেষে শিরিন বাড়ি ফিরছিল পেছন থেকে তিহান শিরিনকে ডাকল কিন্তু শিরিন শুনেও না শোনার ভান ধরে নিজের মতো হাঁটতে লাগলো।তিহান কিছুটা দৌড়ে শিরিনের সামনে এসে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
– আপনি কালা নাকি কানে শুনেন না?
– শুনেছি কিন্তু এখন কথা বলার মুড নেই।
– আপনার আবার কবে মুড থাকে?
শিরিন হাঁটতে লাগলো,তিহানও পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,
– আপনি স্নিগ্ধতা ভাবীর বান্ধবী?
– হুম।
– আমি ভাবীর দেবর তাহলে তো আমরা বেয়াই বেয়াইন।
– স্নিগ্ধার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে সো আমরা বেয়াই বেয়াইন নই,স্নিগ্ধা একবার সুস্থ হয়ে যাক তারপর ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
– আমার ভাইয়া থাকতে কখনও ভাবীকে আনতে পারবেন না।
– জোর জবরদস্তি নাকি? দরকার হলে আপনার ভাইয়ের নামে মামলা করবো লজ্জা করে না মায়ের কথায় বউকে ডিভোর্স দিতে।
– আরে ওদের ডিভোর্স হয়নি।
শিরিন ব্রু কুঁচকে তাকালো।তিহান পুরো ঘটনা শিরিনকে বলল, শিরিন হালকা কেশে বলল,
– সে যাই হোক আমি গেলাম বাই।
শিরিন রিকশায় উঠে চলে গেল।তিহান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’এ কেমন মেয়ে জম্মের সময় মুখে কি মধু দেয়নি কেউ?’
স্নিগ্ধতা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা বিরক্ত হয়ে বলল,
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার অস্বস্তি লাগছে।
– তুমি চোখ বন্ধ করে রাখো তাহলে অস্বস্থি লাগবে না।
– আপনি অন্যদিকে তাকান।
– বউ রেখে অন্যদিকে কেন তাকাবো? বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা আমার দায়িত্ব।
– আবার মায়ের কথায় বউকে ডিভোর্স দেওয়াও দায়িত্ব তাই না।
– ডিভোর্স হয়নি তো।
– আপনার বাবা কাগজ পাল্টে দিয়েছিল বলে হয়নি যখন সাইন করেছিলেন তখন তো জানতেন না।
– তুমিও লাগিয়ে লাগিয়ে কথা বলতে শিখে গেছ স্নিগ্ধ।
– পরিস্থিতির চাপে পরে সবই শিখতে হয়।
– আসো আদর করে দেই।
– লাগবে না।
– তুমি বললেই হবে না আমি আদর করবোই।
– আমার থেকে দুই হাত দূরে থাকুন কাছে আসলেই চেঁচাবো।
– এতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেলে!
স্নিগ্ধতা মুখ ঘুরিয়ে নিলো স্তব্ধের উপর অনেক অভিমান জমে আছে বাবার মৃত্যুর শোকটাও এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মেজাজ কেন জানি খিটখিটে হয়ে আছে।
শিরিনের নাম্বার থেকে স্নিগ্ধতার মোবাইলে কল এসেছে।স্নিগ্ধতা মোবাইল কানে ধরতেই শিরিন বলতে লাগলো,
– তোর শরীর কেমন এখন?
– ভালো।
– ওষুধ ঠিক মতো খাচ্ছিস?
– হুম।
স্তব্ধ নিজের মোবাইল নিয়ে উঠে গিয়ে বলল,
– তুমি কথা বলো আমি আসছি।
স্নিগ্ধতা মাথা ঝাকালো। শিরিন ফোনের অপরপাশ থেকে বলল,
– কিরে কথা বলছিস না কেন?
– বলছি তো।
– তোর হাজব্যান্ড কোথায়?
– আছে বাড়িতেই।
– ব্যাটাকে একদম কাছে ঘেষতে দিবি না উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বি কত বড় সাহস বউকে ডিভোর্স দিতে যায়।
– বাদ দে এসব।
– বাদ দেওয়া যাবে না আমি তোর মতো ওতো ভালো মানুষ না আমি যা বলবো তাই করবি।
– আচ্ছা বল তুই যা বলবি তাই করবো।
– তোকে মেসেজ করে দিচ্ছি।
বলেই শিরিন কল কেটে দিল।
অরিত্রি শিকদার দরজার কাছে এসে বললেন
– ভেতরে আসবো?
অরিত্রি শিকদারের কন্ঠ শুনে একটু ভয় পেয়ে গেছে স্নিগ্ধতা। ভয়ে ভয়ে বলল,
– জ্বি আসুন।
অরিত্রি শিকদার ভেতরে প্রবেশ করলেন হাতে ফল আর দুধ নিয়ে।স্নিগ্ধতা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল, অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– রেগে আছো আমার উপর? আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমাকে ঠিক ভাবে না চিনে না জেনেই বড় অন্যায় করে ফেলেছি পারলে মাফ করে দিও মা।
অরিত্রি শিকদারের এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হয়েছে স্নিগ্ধতা যা অরিত্রি শিকদার বুঝতে পেরেছেন।তিনি মৃদু হেসে বললেন,
– একবার মা বলে ডাকবে? প্রথম যেদিন তোমার মুখে মা শব্দটা শুনেছিলাম অনেক ভালো লেগেছিল কিন্তু ভালো লাগাটা তখন গুরুত্ব দেইনি বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি আমায় মাফ করে দাও।
স্নিগ্ধতা আবেগে কেঁদে দিল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
– মা এভাবে বলবেন না।
অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
– আরিয়া আর স্তব্ধ ছোট থেকেই মম বলে ডেকে এসেছে তিহান বড় আম্মু বলে ডাকে মা ডাকটা এত যে মধুর শুনতে লাগে ভেতরে যে এত প্রশান্তি কাজ করে তোমার ডাকে তা অনুভব করেছি আমাকে তোমার মায়ের জায়গা দিতে পারবে কথা দিচ্ছি সবসময় মেয়ের মতো ভালোবেসে আগলে রাখব।
একদিকে বাবা হারানোর শোক আরেকদিকে মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ, আজ পর্যন্ত এত সুন্দর করে আদর করে কেউ কথা বলেনি স্নিগ্ধতার সঙ্গে, ছোট থেকেই মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করেছে কিন্তু শাহিলী ওয়াজেদ সেই ইচ্ছে কখনও পূরণ করেনি আজ সেই ইচ্ছে হয়তো পূরণ হবে শাশুড়ির মাধ্যমে,সবকিছু ভুলে অরিত্রি শিকদারকে জড়িয়ে ধরলো স্নিগ্ধতা।
অরিত্রি শিকদারের চোখেও পানি চলে এসেছে এই পানি আনন্দের কেউ তো উনার জন্য খুশি হয়েছেন এতেই ভালো লাগছে।স্নিগ্ধতাকে সোজা বসিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন।স্নিগ্ধতাও বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছে, অরিত্রি শিকদার বললেন,
– আর কখনও যেন কষ্ট পেতে না দেখি তোমায় স্তব্ধের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে না পারলে আমায় বলবে।
স্নিগ্ধতা মাথা নাড়ালো, অরিত্রি শিকদার আবারও বললেন,
– মানুষ মরণশীল সবাই একদিন না একদিন এই পৃথিবী ত্যাগ করবে শুধু রয়ে যাবে প্রিয় মানুষদের স্মৃতিতে, বাবার জন্য আর কান্নাকাটি করবে না মন ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
স্নিগ্ধতা মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনছে, রাতুল শিকদার বাইরে থেকে সব শুনছিলেন এবার ভেতরে এসে বললেন,
– এক বাবা চলে গেছেন তো কি হয়েছে? আমি তো আছি তোমার আরেক বাবা।
– বাবা!
রাতুল শিকদার মৃদু হাসলেন অরিত্রি শিকদার বললেন,
– তুমি বিশ্রাম করো মা পরে কথা হবে।
– আচ্ছা।
অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারকে বললেন,
– চলো মেয়েটাকে বিশ্রাম করতে দাও।
– তুমি যাও আমি আসছি।
অরিত্রি শিকদার চলে গেলেন রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বললেন,
– হায়াত মউত আল্লাহর হাতে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্ৰহণ করতে হবে শুধু মৃত্যুর কারণটা আলাদা।
– হুম
– তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি কেন জোরালো ভাবে তোমার শাশুড়িকে বাধা দেইনি কেন অন্যায় মেনে নিচ্ছিলাম আজ তাহলে সত্যিটা বলি।
স্নিগ্ধতা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। রাতুল শিকদার বলতে লাগলেন,
– তোমার সঙ্গে স্তব্ধকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু বিয়ের পর ছেলেটা তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে মায়ায় পরে গেছে অন্যদিকে ওর মা তোমাকে পছন্দ করতেন না বোনের কথায় কিছু না ভেবেই তোমাদের আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন স্তব্ধকে আলাদা ভাবে যখন ডিভোর্সের জন্য ফোর্স করলো স্তব্ধ রাজি হয়নি তাই সবার সামনে ব্ল্যাকমেইল করলো কিন্তু আমি তো আগেই কাগজ বদলে দিয়েছিলাম তাই কিছু বলিনি আর শেষে তোমাকে যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিল তখনও চুপ ছিলাম কারণ এটার দরকার ছিল তোমার আর স্তব্ধের একটা দূরত্বের দরকার ছিল এই দূরত্বের কারণেই স্তব্ধ তোমার শূন্যতা অনুভব করেছে একাকীত্বে ভোগেছে এলোমেলো হয়ে গেছে তোমার শাশুড়ি ছেলের কষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে অনেক সময় ভালো কিছু পাওয়ার জন্য নিজের সুখের জন্য কয়েক মুহূর্তের কষ্ট সহ্য করতে হয় কথায় আছে না দুঃখের পরে সুখ আসে। তুমি বাড়ি থেকে বের হতেই আমি শুভকে সব জানিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মিসেস ওয়াজেদ যে তোমার সঙ্গে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি শুভ তোমায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর আমায় ফোন করেছিল আমি তখনি হাসপাতালে যাই কিন্তু তুমি অচেতন ছিলে বলে আমায় দেখতে পাওনি পরে শুভ শিরিনের কথা বলল আমিও রাজি হলাম তখন শিরিন তোমায় নিজের কাছে নিয়ে গেল আমি চেয়েছিলাম তোমাদের সম্পর্কটা যেন মজবুত হয় কখনও সামান্য কারণে ভেঙ্গে না যায় তাই এই অন্যায় হতে দিয়েছি।
কৃতজ্ঞতায় স্নিগ্ধতার চোখ ছলছল করছে। রাতুল শিকদার আবারও বললেন,
– তোমার বাবা অনেক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন কিন্তু কাউকে বুঝতে দেননি তোমার জম্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই উনার ভেতরে রোগ বাসা বেঁধেছিল বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় তার উপর পরিবারে এত সমস্যা প্রথমবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে বেঁচে গেলেও এবার আর নিতে পারেননি।এতে ভালো হয়েছে যন্ত্রনা থেকে তো মুক্তি পেয়েছেন, তুমি আর কষ্ট পেও না, বাবার জন্য দোয়া করবে আর হ্যা এটা তোমার নিজের পরিবার।
স্নিগ্ধতা বলল,
– আপনি আমার জীবনে বাবার পরে দ্বিতীয় বাবা যে আমার জন্য এতকিছু করছেন আমি আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
রাতুল শিকদার মৃদু হেসে স্নিগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।আজ সব সুখ এসে একসঙ্গে হানা দিচ্ছে মনের দুঃখগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
স্তব্ধ ঘরে এসে দরজা আটকে দিয়ে স্নিগ্ধতার পাশে বসে পড়ল।স্নিগ্ধতা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই স্তব্ধ বলল,
– সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেছে তাহলে এখনও কেন রাগ করে আছো?
– রাগ করিনি।
– আমার উপর রাগ করেছ তো।
স্নিগ্ধতা নিরব,স্তব্ধ শুতে শুতে বলল,
– দু’দিন ঠিক মতো ঘুম হয়নি অনেক ঘুম পাচ্ছে।
– আপনি এখানে ঘুমাতে পারবেন না।
– কেন কেন!
– আপনি এখানে ঘুমালে আমি নিচে গিয়ে শুয়ে থাকব।
– শোধ নিচ্ছো?
– যা মনে করেন।
– স্যরি।
– এভাবে বিরক্ত করলে চলে যাব আর খুঁজেই পাবেন না।
– হাইপার হবার কি আছে? আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাচ্ছি।
বলেই স্তব্ধ লাইট নিভিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতার মধ্যে এখনও দূরত্ব বজায় আছে,স্তব্ধ অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু স্নিগ্ধতা দূরত্ব কমাচ্ছেই না বাড়ির সবার সঙ্গে সুন্দর করে হেসে কথা বললেও স্তব্ধের ক্ষেত্রে গম্ভীর সবাইকে সময় দিলেও স্তব্ধের জন্য কোনো সময় নেই এখনও স্তব্ধকে কষ্ট করে সোফায় ঘুমুতে হচ্ছে।
চলবে……
#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২০
কারো উষ্ণ পরশে ঘুম ভেঙ্গে গেল স্নিগ্ধতার, ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে তাকাতেই ঘুমন্ত স্তব্ধকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।স্তব্ধ সোফায় শুয়ে ছিল কিন্তু স্নিগ্ধতা ঘুমিয়ে যেতেই আবার স্নিগ্ধতার পাশে এসে শুয়েছে।স্নিগ্ধতা তাকিয়ে স্তব্ধের মাথায় হাত রাখতেই স্তব্ধ বলল,
– এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে জামাইকে দেখতে হবে কেন? তুমি চাইলে সামনাসামনি তাকিয়ে আমায় দেখতে পারো।
– আপনি ঘুমাননি?
– উহু।
– কেন?
– ঘুম আসছে না।
– ওহ।
– ছাদে যাবে?
– এত রাতে!
– কেন ভয় লাগে?
– একটু একটু।
– আমি আছি তো কোনো ভয় নেই।
– যাব না ঘুমান।
বলেই স্নিগ্ধতা অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে নিলো। স্তব্ধ তো ছাড়ার পাত্র নয় শোয়া থেকে উঠে স্নিগ্ধতাকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।স্নিগ্ধতা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে স্তব্ধ বিরক্ত কন্ঠে বলল,
– তোমার মতো চালের বস্তা কোলে উঠে লাফালাফি করলে আমি তো এবার পড়ে যাব, হাত-পাও ভেঙ্গে যাবে তখন কিন্তু তোমাকেই সবাই বলবে স্নিগ্ধতা তোর হাজব্যান্ড দেখতে বাজে।
স্নিগ্ধতা শব্দ করে হেসে দিল,স্তব্ধ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখতে লাগল আর মনে মনে বলল,’মানুষের হাসি এতটাও সুন্দর হয়?’
স্নিগ্ধতা ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
– তোমাকে দেখছি।
– কি দেখলেন?
– একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কিভাবে?
– শুধু আপনার কাছেই।
– আর কারো কাছে সুন্দর হওয়ার দরকার নেই তোমার সৌন্দর্য শুধু আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে আমিই শুধু তোমাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখব।
– কেন?
– কারণ তুমি শুধুই স্তব্ধের স্নিগ্ধতা।
স্নিগ্ধতা আবারও হাসলো,স্তব্ধ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বলল,
– এভাবে হেসো না পাগল হয়ে যাব।
– ঠিক আছে এখন নিচে নামান।
– যদি চলে যাও?
– আমি আপনার মতো না যে ছেড়ে চলে যাব।
স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিচে নামিয়ে বলল
– আমি তোমায় ছাড়িনি শুধু তখনকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সাইন করেছিলাম তবে তোমায় ছাড়া আমি ভালো ছিলাম না মমকে উপেক্ষা করেই তোমায় ফিরিয়ে আনতে ছুটে গিয়েছিলাম।
এই মুহূর্তটাকে বিষিয়ে দিতে চায় না স্নিগ্ধতা তাই কথা ঘুরিয়ে বলল,
– ছাদে যাবেন বলেছিলেন তাহলে বেলকোনিতে এলেন কেন?
– ছাদে যাওয়া ক্যান্সেল।
– কেন?
– জ্বীনে যদি আমার এই পরীটাকে নিয়ে যায় তখন আমার কি হবে! তাই প্রেম করার জন্য এটাই পারফেক্ট জায়গা।
স্তব্ধের কথায় স্নিগ্ধতার আজ শুধু হাসি পাচ্ছে আর স্তব্ধেরও স্নিগ্ধতার হাসিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।বেশ কিছুক্ষণ দু’জনে একসঙ্গে দাড়িয়ে আকাশ দেখল,স্নিগ্ধতা এবার স্তব্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
স্তব্ধ দুষ্টুমি করে বলল,
– একটা কেন তুমি চাইলে অনেকগুলো কথা জিজ্ঞেস করতে পারো।
– সঠিক উওর দিবেন তো?
– জানা থাকলে অবশ্যই দিব।
– আদ্রিককে কেন মে’রেছেন?
স্তব্ধ ভরকে গেল,স্নিগ্ধতা উওরের অপেক্ষায় স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। স্তব্ধের নিরবতা দেখে স্নিগ্ধতা বলল,
– বলছেন না কেন?
– মা’রার কাজ করেছে তাই মে’রেছি।
– এটা আমার প্রশ্নের উওর নয় কি করেছে তাই জানতে চাইছি।
স্তব্ধ বেলকোনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল,
– আমার কাছে তোমাকে চেয়েছে তাও আবার এক রাতের জন্য।
মনটা বিষাদে ভরে গেছে মনে মনে ভাবছে স্নিগ্ধতা, ‘একটা মানুষের চিন্তা ধারা এত নোংরা কিভাবে হতে পারে? কিভাবে একটা মানুষ এত খারাপ হয়।’
স্তব্ধ স্নিগ্ধতার চুল নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
– মন খারাপ হয়ে গেছে?
– আপনার একবারও জানতে ইচ্ছে হয়নি কেন আদ্রিক আমার পেছনে পড়ে আছে কেন আপনাকে এসব বলেছে? কি সম্পর্ক আমাদের?
– না।
– কেন? সন্দেহ তো হবার কথা নিজের ওয়াইফের সম্পর্কে কেউ নোংরা কথা বলেছে যে কারো মনেই তো প্রশ্ন জাগার কথা।
– সন্দেহ করার মতো কিছু পাইনি,আদ্রিকের সঙ্গে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকলে তুমি নিশ্চই এত সহজে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে না আর আদ্রিকও ব্যক্তিত্বহীনের মতো আমার কাছে এত নোংরা প্রস্তাব দিত না।
স্নিগ্ধতা আলগোছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল,স্তব্ধ যে এত সহজে ব্যাপারটা বুঝবে স্নিগ্ধতা ভাবতেই পারেনি।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
– আপনার সবটা জানা উচিত মানুষের মন সবসময় একরকম থাকে না কখনও মনের কোনো এক জায়গায় প্রশ্ন জম্মাতে পারে।
– তোমার সমস্যা না থাকলে বলতে পারো কিন্তু আমি জোর করছি না।
স্নিগ্ধতা বলতে লাগলো,
– আদ্রিক আর আমি এক ভার্সিটিতে পড়তাম, আদ্রিক আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিল ভার্সিটির সবাই তাকে এক নামে চিনতো বন্ধুদের নিয়ে মারামারি,রেগিং, মেয়েদের বিরক্ত করা ছিল প্রধান কাজ কেউ প্রতিবাদ করতো না শুধুমাত্র ধনীর পাওয়ারফুল ছেলে বলে, কিভাবে যেন আমি তার নজরে পড়ে যাই তারপর থেকেই আমার পেছনে ঘুরঘুর করা শুরু করে দেয় আমি দেখেও না দেখার ভান করেই থাকতাম কিন্তু একদিন আমার সামনে এসে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আমি সরাসরি না করে দেই তবুও তিনি আমায় বিরক্ত করতেন তারপর একদিন তো সব সীমা অতিক্রম করে ফেললেন সবার সামনে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে খারাপ আচরণ করলেন।
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে স্নিগ্ধতার মুখে আঁধার নেমে এলো।স্নিগ্ধতা আবারও বলতে লাগলো,
– প্রথম কোনো ছেলে আমায় বাজে ভাবে স্পর্শ করেছিল রাগে আর ঘৃণায় থাপ্পড় মে’রে দিয়েছিলাম এই থাপ্পড় আদ্রিকের সহ্য হয়নি তাই শোধ নেওয়ার জন্য আমার পেছনে পড়ে আছে শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশেও কমপ্লেইন করেছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি,একটা মানুষ এত খারাপ হয় কিভাবে?এরা অন্যায় করবে কেউ যদি প্রতিবাদ করে তাহলে তার পিছনেই পড়ে থাকে আমার কি দোষ ছিল আমি তো যেচে আদ্রিকের কাছে যাইনি উনি আগ বাড়িয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন আমি শুধু প্রতিবাদ করেছি আর এটাই আমার দোষ?
স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– তোমার কোনো দোষ নেই আসলে আমাদের সমাজে এমন কিছু খারাপ পুরুষ আছে যারা মেয়েদের ভোগপণ্য এবং দুর্বল মনে করে তবে একটা কথা অতীতের কথা মনে করে কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ।
– আপনি এত ভালো কেন?
– আমি ভালো!
– হুম।
– অথচ তুমি আমাকে একবার খারাপ বলেছিলে।
– ওইটা তো রাগ করে বলেছিলাম।
স্তব্ধ মুচকি হাসলো স্নিগ্ধতা মন খারাপ করে বলল,
– আমার কারণে আদ্রিকের সঙ্গে আপনার শত্রুতা হয়ে গেল আপনার আন্টির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হলো তাই না? আমি আপনার জীবনে না আসলে হয়তো এতকিছু হতো না।
– তোমাকে কে বলেছে এসব?
– কেউ বলেনি আমার মনে হয়েছে এছাড়া কথাগুলো তো সত্য।
– তুমি আমার জীবনে এসেছ বলে আমি বদলে গেছি বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছি ড্যড এর সঙ্গে আমার দূরত্বটা কমেছে নিজের জীবনকে গুছিয়ে নিতে পেরেছি বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি আর ড্রিংক করা ছাড়াও যে ভালো থাকা যায় খুশী থাকা যায় বুঝতে পেরেছি কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় যারা চলে গেছে যাক তোমাকে তো পেয়েছি আর কাউকে চাই না আমি।
স্নিগ্ধতা প্রাপ্তির হাসি হেসে একটা মাদুর বিছিয়ে বেলকোনিতে বসে পড়লো স্তব্ধও স্নিগ্ধতার গাঁ ঘেঁষে বসলো।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের কাধে মাথা রেখে বলল,
– বাবার কথাটা আমি এখন উপলব্ধি করছি কষ্টের পরেই সুখ আসে আমার জীবনে কষ্ট ছিল বলেই আমি আপনাকে পেয়েছি।
– তারপরেও তো খুশি হয়ে একটা চুমু দেও না।
– চুমু ছাড়া কি আপনি কিছু বুঝেন না?
– না।
বলেই স্নিগ্ধতার গালে একটা চুমু খেল স্তব্ধ,স্নিগ্ধতা লজ্জায় দৃষ্টি নত করে ফেলল।
_______________
এ ক’দিন রাহেলা বেগমের সঙ্গে তেমন কথা না হওয়ায় সকালে নাস্তা করেই রাহেলা বেগমের ঘরে গেল স্নিগ্ধতা। স্নিগ্ধতাকে দেখতেই রাহেলা বেগম খুশি হয়ে গেলেন, স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,
– কেমন আছো দিদান?
– এখন এসে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেমন আছি?
স্নিগ্ধতা মুখটা অপরাধীর ন্যায় করে রেখেছে। রাহেলা বেগম আদুরে গলায় বললেন,
– শরীরের ব্যথাগুলো ঠিক হয়েছে নাত বউ?
– পুরোপুরি ঠিক হয়নি।
– দাদুভাইয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হয়েছে?
– হুম।
– দাদুভাই তোকে ভালোবাসে কিন্তু এই ভালোবাসাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে আসলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিছু না ভেবেই সাইন করে দিয়েছিল ভাবতে পারেনি এতকিছু হয়ে যাবে।
– উনি আমায় ভালোবাসে!
– এখনও বুঝতে পারিসনি বোকা মেয়ে, বউমা সবার অগোচরে দাদুভাইকে ডেকে নিয়ে তোকে ডিভোর্স দিতে বলেছিল কিন্তু দাদুভাই সাথে সাথে প্রতিবাদ করেছিল কাগজ ছিঁড়েও ফেলেছিল ভালো না বাসলে কি এমন করতো, তোর শাশুড়ি যখন দেখলো দাদুভাই তার কথা শুনছে না তখনি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিল আসলে কথাটা বলেছিল দাদুভাইকে ভয় দেখানোর জন্য এমনিতে কখনও এমন কাজ করতো না তোর শশুর আগেই সব বলেছে আমায় তাই আমিও কিছু বলিনি নইলে তোর সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দিতাম না, এই ঘটনায় ভালোই হয়েছে তোর শাশুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোকে মেনে নিয়েছে।
– হুম।
– দাদুভাই কোথায়?
– বাবার সঙ্গে অফিসে গেছে।
– তিহান দাদুভাই?
– ভাইয়া কলেজে গেছেন।
– ওহ।
সালেহা হাত মুছতে মুছতে রাহেলা বেগমের ঘরে এসে স্নিগ্ধতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আপনারে ভাবী ডাক পারে এহনি যাইতে বলছে।
সালেহা কথাটা বলে চলে গেল রাহেলা বেগম হেসে বললেন,
– গিয়ে দেখ কেন ডাকছে।
স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল অরিত্রি শিকদারের ঘরের সামনে দাড়িয়ে বলল,
– মা আসবো?
অরিত্রি শিকদার ভেতর থেকে বললেন,
– হ্যা আসো।
স্নিগ্ধতা ভেতরে প্রবেশ করলো, বিছানায় শাড়ি আর গহনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।অরিত্রি শিকদার হেসে বললেন,
– এখানে বসো।
স্নিগ্ধতা বসতেই অরিত্রি শিকদার বলতে লাগলেন,
– এই শাড়ি গহনা গুলো স্তব্ধের বউয়ের জন্য রেখেছিলাম তিহানের বউয়ের জন্যও আলাদা রাখা আছে যেদিন ওর বউ আসবে সেদিন সব বুঝিয়ে দিব, স্তব্ধের বউ হিসেবে এগুলো সব তোমার নিজের জিনিস নিজের কাছে নিয়ে রাখো।
– আপনার কাছেই থাক মা যখন দরকার হবে নিয়ে নিব।
– তা বললে হয় না নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখতে শিখো, তুমি একা নিতে পারবে না চলো দু’জনে মিলে তোমাদের ঘরে নিয়ে যাই।
– কিন্তু মা…
– আমার অবাধ্যতা পছন্দ নয় চলো।
স্নিগ্ধতা আর কিছু বলল না দু’জনে মিলে বিছানায় রাখা সব শাড়ি আর গহনা স্তব্ধের ঘরে নিয়ে গেল।অরিত্রি শিকদার যত্ন সহকারে আলমারিতে সব সাজিয়ে রাখলেন।
_____________
সানজিদ ওয়াজেদ মা’রা গেছেন এক মাস হয়ে গেছে। সবাই শোক কাটিয়ে উঠেছে তবে স্নিগ্ধতা এখনও ঘুমের ঘোরে বাবা বলে চেঁচিয়ে উঠে স্তব্ধই তখন সামলায় তাকে। সানজিদ ওয়াজেদ মা’রা যাওয়ার পর জানা গেছে তিনি তার বেশির ভাগ অর্থ এবং সম্পত্তি স্নিগ্ধতার নামে দিয়ে গেছেন কিন্তু স্নিগ্ধতা কিছুই নেয়নি সব শুভকে দিয়ে দিয়েছে শুভ নিতে চায়নি শেষে বোনের জোরাজুরিতে নিতে বাধ্য হয়েছে। অর্থ বিত্ত সম্পত্তির প্রতি কোনদিন মোহ ছিল না স্নিগ্ধতার শুধু একটু ভালোবাসার দরকার ছিল তবে তার বাবা যে তাকে ভালোবাসতো তা স্নিগ্ধতা সবসময় বুঝতে পারতো।
তবে এখন সব চাওয়া গুলো পূর্ণতা পেয়েছে ভালো একটা পরিবার পেয়েছে পরিবারের মানুষগুলোর ভালোবাসা পাচ্ছে।স্নিগ্ধতা আর বাবার বাড়ি যায়নি কেনই বা যাবে কার জন্য যাবে কিন্তু শুভর সঙ্গে প্রতিদিন কথা হয়।
অরিত্রি শিকদারের সঙ্গে রুশির ঝামেলা হয়েছে দু’বোনের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে কিন্তু অরিত্রি শিকদারের এতে আক্ষেপ নেই তিনি বোনকে বলে দিয়েছেন,’তোর থেকেও স্তব্ধ আর স্তব্ধের চাওয়া গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
চলবে…….