এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ৬২+৬৩

0
508

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৬২

লন্ডন! ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো ইলশেগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে ব্যস্ত। ইট পাথরের বড়বড় দালানগুলোতে শেষ বিকেলের এ সময়ে প্রত্যেকেরই কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায় যেনো বহুগুনে। সবাই ছুটতে ব্যস্ত। যার যার গন্তব্য খুজে বেরাতে ব্যস্ত। মৃদ্যু বৃষ্টিপাত একদমই আটকে দিতে পারেনি সে গতিকে। সময়ের কাছ থেকে লাভের হিসেবটা বুঝে নিতে জানে এখানকার সবাই। এখানকার হাজারটা গাড়ি,মানুষজনের ভীড়ে,তাদের মতো ছুটতে অভ্যস্ত হয়ে যায় অচেনা মানুষগুলোও। আটমাস! সময়ের এক অতিদীর্ঘ লম্ফ!

ক্যাব থেকে নেমে রেইনকোটটা ঠিকমতো মাথায় টেনে দিয়ে বাসার দিকে ছুট লাগালো তৌফিকা। ব্যাগসহ দৌড়ে দরজায় পৌছে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়লো ও। রেইনকোট খুলে ছাড়া চুল,জামা ঝাড়তে লাগলো। সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিটায় আলাদা একটা শীতের আমেজ আছে। আগমনী শীতের শীতলতা মেশানো থাকে এই বৃষ্টির বাতাসে। ব্যাগ থেকে চাবিটা বের করে বাসার ভেতরে ঢুকলো তৌফিকা। ভেজা রেইনকোট,জুতাটা দরজার পাশে রাখতেই ফোন বেজে উঠলো ওর। কানের হেডফোনে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,

-টৌফিকা? আর ইউ হোম?

-ইয়েস ন্যানি? তুমি কোথায়? আর বলো না! ক্লাস শেষে এই বৃষ্টির জন্যই এভাবে…

ওপাশের ভদ্রমহিলা ইংরেজীতে বলে উঠলো,

-হ্যাঁ জানতাম! দু ঘন্টা যাবত তোমার প্রতিবেশীর বাসায় এসে বসে আছি। তোমার দেখা নেই। একটা কল করে জানাতে পারতে!

তৌফিকা জামার উপর থাকা কোট খুলতে ব্যস্ত ছিলো। প্রতিবেশী শুনেই ওর মুখে হাসি ফুটলো। নিজের কাজ করতে করতে বললো,

-ওহ্! জনের বাসায়?

-হ্যাঁ। আর কোথায় যাবো?

-তাহলে তো বেশ আপ্যায়নেই আছো! যাইহোক,এবার তো আমি চলে এসেছি। এখন চলে আসো এ বাসায়।

হুম শব্দে ভদ্রমহিলা ফোন কাটলেন। চেন্জ করে মাথার চুলগুলো উচুতে বেধে নিলো তৌফিকা। গেন্জি আর ল্যাগিংস পরে সোজা কিচেনে ঢুকলো ও। আপাতত এককাপ কফি হলেই চলবে ওর। তারপর ন্যানিকে নিয়ে শপিংয়ে বেরোবে। কিছু বই কিনতে হবে। রাতের রান্নাটা আজকে নাইবা করলো ভদ্রমহিলা। আটমাসে অনেক করেছে। আজকেও না হয় বাইরে থেকে খাবার আনাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই কফি বানানো শেষ করলো তৌফিকা। ডোরবেল শুনে কফির মগ হাতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো ও। ন্যানি ফর্সা গরনের এক সুস্বাস্থ্যবান মহিলা। খুবই মিশুক মহিলা ইনি। তৌফিকা মুচকি হেসে বললো,

-সারপ্রাইজ আছে আজ। কাম!

জোরপুর্বক হেসে ন্যানি ভেতরে ঢুকলো। কিন্তু দরজা লাগালো না। তৌফিকা পেছন ফিরে দেখে দরজায় আরো একজন দাড়িয়ে। হাফ প্যান্ট,টিশার্ট পরিহিত গৌরবর্নের পুরুষটিকে দেখে মুখের প্রসারিত করে এগিয়ে গিয়ে ইংরেজীতে বললো,

-এই বৃষ্টিতে তুমি আসতে গেলে কেনো?

জন ইতস্তত করতে করতে বললো,

-এ্ একচুয়ালি,আইরাত…আব্…আই…আই হ্যাভ সামথিং ফর ইউ।

তৌফিকা কপাল কুচকে তাকালো। পাশে রাখা বইয়ের বান্ডিলটা তৌফিকার ঘরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলো। ইংরেজীতে বললো,

-বইগুলো কাজে দেবে তোমার। আসছি।

একমুহুর্ত দাড়ায় নি জন। চলে গেছে। তৌফিকা কিছু বলার সুযোগই পেলো না। বইগুলো খুলে দেখলো,যেগুলো ওর কিনতে যাওয়ার কথা ছিলো,ঠিক সেই‌ বইগুলোই দেওয়া ওতে। একটা ছোট শ্বাস ফেললো তৌফিকা। কিংস্টনের টপার এই ছেলে। লন্ডন এসে পিএইচডি শুরুর পর,গত আটমাসে ওর কাছ থেকে কতোরকমের সাহায্য পেয়েছে,তা শুধু ওই জানে। এই ভীনদেশে এসে,হাজারো অচেনা মানুষের ভীড়ে,এমন একটা বন্ধু না থাকলে হয়তো এতোদুর আসতেই পারতো না ও। ন্যানি বললো,

-ছেলেটা অনেক ভাবে তোমাকে নিয়ে।

তৌফিকা মৃদ্যু হেসে বললো,

-হুম।

-এখানে নতুন করে সবটা শুরু করা যায় না টৌফিকা?

-এসব কেনো বলছো ন্যানি?

-আমার মনে হয় জন পছন্দ করে তোমাকে।

ন্যানির দিকে তাকালো তৌফিকা। নিমিষেই ভরে উঠলো ওর চোখ। মুখে মুচকি হাসি রেখে বললো,

-আমি জানি তা ন্যানি। ওকে বলেওছি সবটা। একজনকে একাধারে এগারোটা বছর ভালোবেসেছি। সে যাই কিছু করে থাক না কেনো,আমি তো তাকে ভালোবেসেছিলাম। আর আমার সে ভালোবাসার এক ফুটফুটে পরিনতিও আছে। জনকে কেনো,কাউকেই নিয়ে নতুন করে শুরুর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আড়ালে থেকে,দুরে থেকেই টুইঙ্কেলকে হাসিখুশি দেখে আমি বাকি জীবনটা পার করে দিতে পারবো। কোনো নতুন শুরুর প্রয়োজন নেই আমার! জন সবটা জেনেই শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে চেয়েছে আমার পাশে। ফিরিয়ে দিতে পারিনি।

-শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারবে টৌফিকা?

-জনের চেহারাটা দেখেছো?

ন্যানি চুপ রইলো। জনকে কতোটা কড়াকথায় বুঝিয়েছে তৌফিকা,আন্দাজে আছে ওর। বললো,

-পিছুটানেই যদি থেমে থাকবে,তাহলে কেনো সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে এসেছো? কেনো কাউকে জানতে দাওনি তুমি কোথায় আছো? কেনো তোমার সে ফুটফুটে পরিনতির কাছে নিজেকে মৃত বলে আখ্যা দিয়েছো টোফিকা? নিজের মেয়েকে আড়ালে থেকে কেনো দেখবে তুমি? কেনো নিজে হাতে আদর করবে না ওকে? হুয়াই?

….

-তুমিও জানো,তোমার একটা সিদ্ধান্তে কতোগুলো জীবন কষ্ট পাচ্ছে টৌফিকা। তুমি চাইলেই সবার সাথে থেকে,একটা হাসিখুশি,সুন্দর জীবনযাপন করতে পারতে। যে মানুষটা তোমার জীবন নষ্ট করেছে,তাকে ভুলতে তোমার সবটা ছেড়ে আসা উচিত হয়নি তৌফিকা। হিট অফ দ্যা মোমেন্টে এতোবড় একটা সিন্ধান্ত নিয়ে ঠিক করো নি তুমি! একদমই ঠিক করো নি!

তৌফিকা মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ন্যানি ঠিকই বলেছে। হ্যাঁ ও ভুল করেছে। নিজের দায়িত্বগুলো থেকে পালিয়ে এসে চরম ভীতু প্রমান করেছে নিজেকে। তবুও টুইঙ্কেলকে নিয়ে নয়,ওর চিন্তাটা শুধু দোয়াকে ঘিরে। মেয়েটার সাথে এতোবড় অন্যায়টা না করলেও পারতো। কিন্তু ওই বা কি করবে? নিরুপায় ছিলো যে! ওই মুহুর্তে স্বার্থপর হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না ওর। কোনো উপায় ছিলো না!

সময়ের সাথে ব্যস্ততায় তাল মিলিয়ে চলছে চিলেকোঠার সবার জীবনযাত্রা। মেসের কেউকেউ চাকরি ছেড়েছে,সাথে চিলেকোঠাও। কেউকেউ আবার নতুন করে চাকরিতে ঢুকে চিলেকোঠায় এসেছে। তিনতলায় সদ্য বিয়ে হয়ে আসা দম্পতিটা,নতুননতুন বউ শহরে এসেছিলো ছেলেটা। ওরাও চলে গেছে কিছুদিন আগে। ওখানে এখন আরো একটা পরিবার থাকে। দুসন্তানের মা। মানুষগুলোর বদল ঘটলেও,ভালোবাসায় বদল আসেনি এ চিলেকোঠায়। আগের মতো সেভাবেই মিলেমিশে বেশ আছে সব। সদর দরজার সামনে গাড়ি থেকে নামলো দোয়া। আজ অনেকগুলো দিন পর আবারো এসেছে ও চিলেকোঠায়। চোখ তুলে প্রানভরে দেখে নিলো দালানটাকে। ভেতরে ঢুকে নিচ থেকেই ডাক লাগালো,

-মা?

দিয়ান ছুটে এসে বারান্দায় দাড়ালো। দোয়াকে দেখে তৎক্ষনাৎ বড়সর হাসি ফুটলো ওর চেহারায়। দৌড়ে নিচে নামলো ও। বোনকে জরিয়ে ধরে বললো,

-আপুনি? এসেছিস তুই?

ভাইয়ের কপালে চুমো দিলো দোয়া। কপাল কিঞ্চিত কুচকে বললো,

-হুম। আচ্ছা ছোটু? এখানেই যে দৌড়টা দিলি তুই,ওখানে গিয়ে দুষ্টুমি করছিস না তো?

-একদমই না। আমি কি দুষ্টুমি জানি নাকি?

-তাই না? আমি কিন্তু খোজ নেই তোর! যদি এতুটুকোও অব্জেকশন শুনেছি ছোটু,একেবারে নিয়ে আসবো ওখান থেকে কিন্তু!

-ঠিকাছে নিয়ে আসিস। আমারও আর মাকে ছাড়া,তোকে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না আপুনি! দেখনা,মাত্র এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছে!

এটুকো বলেই দিয়ান গাল ফুলালো। মুচকি হেসে ওর গাল টেনে দিলো দোয়া। ভেতর থেকে একে একে বেরিয়ে এলো সকলে। দোয়ার পেছন থেকে তৌফিক ওয়াহিদ বললেন,

-কেমন আছো দিয়ান?

দিয়ান সালাম দিলো তাকে। হাসিমুখে বললো ভালো আছি। অরুনাভ মুখার্জী এগিয়ে আসলেন। ততক্ষনে টুইঙ্কেল ছুটে এসে বললো,

-এইযে গোপাল ভাড়! আমিও এসে গেছি!

-তোমাকেই তো আগে দরকার ঝিকিমিকি! তুমি আসলে তবেই না আমার চিলেকোঠা উজ্জ্বল হবে!

অরুনাভ মুখার্জীর কাছে গিয়ে দাড়ালো টুইঙ্কেল। দোয়া এগিয়ে বললো,

-কেমন আছেন কাকাবাবু?

-এইতো রে মা।

-কাকাবাবু?স্বস্তিক?

মাথা নিচু করে নিলেন অরুনাভ মুখার্জী।নিচতলার এক ঘর থেকে লাল শাড়ী পরিহিত মাথায় ঘোমটা দেওয়া এক অল্পবয়সী মেয়ে বেরিয়ে আসলো। অল্পবয়সী মানে একেবারেই অল্পবয়সী। বয়স এই চৌদ্দ পনেরোর ঘরে হবে হয়তো। নাম,অনিন্দা। সত্যিই অনিন্দা ও। রুপে,গুনে,সহ্যশক্তিতে সত্যিই অনিন্দা। নিন্দার যোগ্য নয়। সিথি ভর্তি টকটকে সিদুর,হাতে শাখা,চোখে গাঢ় করে কাজল,কপালে লাল টিপ,পায়ে আলতা। দোয়াকে দেখে এগিয়ে এসে অনিন্দা মিষ্টিস্বরে বললো,

-কেমন আছেন দিদি?

দোয়া এগিয়ে গিয়ে ওর গালে হাত রাখলো। চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। একে দেখলেও চাপা কষ্ট হয় ওর। এইতো কিছুদিন আগে। চিলেকোঠার পাশের এক গরিব হিন্দুঘরের মেয়ের বিয়ে ছিলো। মেয়ের বাবা ছেলেপক্ষের কোন এক দাবী মেটাতে না পারায় একেবারে বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে যায় বরযাত্রী। মেয়েকে লগ্নভ্রষ্টা হতে দেখে মেয়ের বাবার আহাজারি সহ্য হয়নি অরুনাভ মুখার্জীর। আগে জানলে এই অল্প বয়সে মেয়েটার বিয়েই হতে দিতেন না উনি। শেষ মুহুর্তে পৌছে এই মেয়েকে ছেলের বউ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ন্তর দেখেননি উনি। ওনার একবাক্যে চুপচাপ রাজি হয়ে যায় স্বস্তিক। অনিন্দাকে বিয়ে করে চিলেকোঠায় নিয়ে আসে। আর পরপরই চাকরির কথা বলে রায়নগর ছাড়ে। তবুও অনিন্দা হাসিমুখে বউমাধর্ম পালন করে চলেছে। স্ত্রীধর্ম হয়তো বয়সের দোষে বুঝেই ওঠেনি। নয়তো স্বস্তিক বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়েছে ওকে। দোয়া বললো,

-ভালো আছি অনিন্দা। তুমি কেমন আছো?

-ভালো দিদি।

ওর অমায়িক হাসিটার দিকে তাকিয়ে রইলো দোয়া। কতো নিষ্পাপ হাসিটা। কোনো অভিযোগ নেই ওই হাসিতে। এরইমাঝে সালমা বেগম বেরিয়ে আসলেন। তৌফিক ওয়াহিদের সাথে কুশন বিনিময় শেষে দোয়ার দিকে এগোলেন তিনি। মেয়ের দিকে তাকাতেই ভেতরটা খামচে ধরলো তার। বুকজুড়ে কতো কষ্ট! তবুও ঠোটে কতো সুন্দর সাজানো হাসি। ভেতরে সবসময় বয়ে চলা ঘুর্নিঝড় আর বাইরে কতো স্নিগ্ধ,মায়াময় চেহারা। একটা শুকনো ঢোক গিলে দোয়া বললো,

-কেমন আছো মা?

-ভালো।

দোয়া মুচকি হেসে মাকে জরিয়ে ধরতে যাচ্ছিলো। সালমা বেগম বলে উঠলেন,

-ভালো নেই এটা বলে বা তুই ভালো আছিস কিনা সেটা জিজ্ঞেস করে তোর এই কৃত্রিম হাসিটাকেও নষ্ট করে দিতে চাইনা দোয়া। এজন্য আমি ভালো আছি।

দোয়ার বুক ভারী হয়ে আসতে লাগলো। পাশে করুন চোখে তাকিয়ে থাকা তৃষাকে দেখে নিজেকে সামলে বললো,

-শুনলাম কল সেন্টারে পার্টটাইম চাকরি করছিস?

ও শুধু মাথা উপরেনিচে দুলালো। দোয়া বললো,

-তন্নি ফেরেনি?

-উহুম। এতিমখানায় সেই যে ওর জমানো টাকাগুলো দিতে গেলো,এখনও ফেরেনি। ফোন করেছিলাম। বললো থাকবে আরো কিছুদিন।

দোয়া আর কিছুই বললো না। এতোগুলো দিনে অনেককিছু বদলেছে। আর বাকিসবের সাথে হয়তো এ চিলেকোঠারও অনেককিছু অগোচরে রয়ে গেছে ওর। নিজেকে দোষারোপ করেও শান্তি মেলে না ওর। আদৌও কি ওর দোষ ছিলো? একাকী,আরাবকে ছাড়া কোনোদিন পেরেছে ও সবদিক সামাল দিতে? পারতো? নাকি এখন পারছে? দাতে দাত চেপে শক্ত হয়ে রইলো দোয়া। পাশে টুইঙ্কেল অরুনাভ মুখার্জীকে বলে চলেছে,

-জানো গোপাল ভাড়? আমি এখন পুরোটা সময় উইশমামের কাছেই থাকি। তুমি বিয়ের সময় বলেছিলে না উইশমামকে দেখে রাখতে? আমি কিন্তু দেখে রাখছি উইশমামকে। মেয়েটা খুব জেদি জানোতো! আমাকে জোর করে খাইয়ে দেয়,কিন্তু নিজেকে খাওয়াতে গেলে প্রতিবার বলে খিদে নেই। আমাকে সাজিয়ে দেয়,কিন্তু ওর কার্লি হেয়ারগুলোর একটুও যত্ম নেয়না। পড়া শেষে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়,কিন্তু নিজে একগাদা ফাইলের কাজ নিয়ে বসে যায়। ঘুমোয়ই না। আমি স্কুল থেকে আসলে আমাকে রেস্ট নিতে বলে। কিন্তু নিজে অফিস থেকে এসে আবারো কাজ নিয়ে বসে যায়। নানুভাইও কাজ কমিয়ে দিয়েছে এজন্য। আর দেখো উইশমামের চেহারার হাল! এমন হলে আরাব মামা এসে আমাকেই তো বকবে বলো?

দোয়া ছলছল চোখে ওর দিকে তাকালো। সবাই দোয়ার দিকেই তাকিয়ে। একটা শুকনো ঢোক গিলে চুপচাপ অরুনাভ মুখার্জীর ঘরের দিকে একপা দু পা করে এগোতে লাগলো দোয়া। খোলা দরজা দিয়ে ও ঘরের সেই বড় জানালাটা দেখা যায়। যেখানে প্রথমবার আরাব দেখেছিলো ওকে। যেখান থেকে এই চিলেকোঠায় রঙ লাগতে শুরু হয়েছিলো। যেখানকার মরিচাধরা লোহা আকড়ে থাকা দোয়ার হাত দেখে আরাব ভালোবাসা অনুভব করেছিলো।
আজ সে জানালা সুসজ্জিত,রঙিন। তবুও দোয়ার মনে হচ্ছে সবটা জমকালো আধারে ঢাকা। চারপাশে চরম শুন্যতা আঁকা। দোয়া শক্তভাবে মুঠো করে নিলো জানালার রড। একটা একটা মুহুর্ত ওর কাছে এখন কয়েকসহস্র যুগ বলে মনে হয়। মনে হয়,এ শুন্যতা খুব তাড়াতাড়ি ওকে শেষ করে দিতে চলেছে। খুব তাড়াতাড়ি!

#চলবে…

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৬৩

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জার সম্মুখরাস্তার উভয়পাশে উপচে পড়া ভীড়। আর্দ্র পরিবেশের রোদহীন উজ্জল দিনটাও সায় দিচ্ছে লন্ডনের বিনোদনপ্রিয় মানুষগুলোর সাথে। চরম উদ্যম আর উল্লাসধনী কয়েক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে। প্রত্যেকেই প্রিয় তারকার নামের সর্বোচ্চধনীতে মুখোরিত করে তুলছে রাস্তার আশপাশ। দৈনন্দিনের যানগুলোর বদলে রাস্তা সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাইকে। চলছে বাইক রেস। একের পর এক দ্রুতগতির বাইক পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে,আর দর্শকেরা আরো বেশি উল্লাসে ফেটে পরছে। চেনা তারকা সাইয়ন সবাইকে পিছনে ফেলে বাইক ছুটিয়েছে সর্বোচ্চগতিতে। প্রতিবছর জিতে এসেছে ও এই বাইক রেস। এবারও জয় আর সায়নের মাঝে শুধুমাত্র কয়েকমুহুর্তের ব্যবধান। কিন্তু এরইমাঝে ঝড়ো হাওয়ার মতো এগিয়ে আসে আরেকটি বাইক। সাইয়নকে পিছনে ফেলার মতো কেউ! কৌতুহলে উদগ্রিব জনতা আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পরে। সাইয়ন পাশে তাকালো। বাইকে বসে থাকা হেলমেট পরিহিত যুবক বলে উঠলো,

-সরি ম্যান। নট দিস ইয়ার!

গতি বাড়িয়ে সাইয়নকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো বাইকটা। কয়েকমুহুর্তের ব্যবধানে কোনো এক অজ্ঞাত যুবক এসে প্রথম হওয়ার দাবীটা কেড়ে নিয়ে গেলো ওর কাছ থেকে। যুবক সমাপ্তিরেখা পার করতেই ঘোষনায় শোনা যায় এক নতুন নাম,এন্ড দ্যা উইনার ইজ,মিস্টার অ্যালেন!
রাস্তার দুধার থেকে সবাই হুমড়ি খেয়ে পরছিলো যেনো যুবকের দিকে। নিরাপত্তা বাহিনী আটকে দিলো তাদের। বাইক থামিয়ে যুবক এগোলো সাইয়নের দিকে। হেলমেট পরিহিত অবস্থাতেই ইংরেজীতে বললো,

-মন খারাপ করো না। এটা তো হওয়ারই ছিলো।

সাইয়ন চুপচাপ নিচদিকে তাকিয়ে ছিলো। যুবকের কথায় চোখ তুলে তাকালো ও। বাকা হেসে বললো,

-তুমি অ্যালেন নও।

হেলমেটের আড়ালে যুবকও বাকা হাসলো হয়তো। মুখে বললো,

-বেশ অনেকটা জানো অ্যালেনকে? আমি তো জানতাম,যারা হারে,তাদেরকে কেউই চেনে না।

-আমার সাথে প্রতিবছর রেসিং করে অংশগ্রহনকারী হিসেবে এনাউন্স ছাড়া যার নামের উচ্চারন হয়না,সে কি করে প্রথম আসে বলতে পারো? বাইক এক্সিডেন্টে হাতপা ভাঙলো না,অথচ মুখের ক্ষত বিক্ষত রুপ দেখাবে না বলে হেলমেট খুলছো না,বিষয়টা আজব না? তাই আলাদাকরে নজর পরলো তোমার উপর।

যুবক আবারো হাসলো। এবার ওর হাসির শব্দ শুনতে পেলো সাইয়ন। হাসি থামিয়ে যুবক বললো,

-ডিএনএ টেস্ট করিয়ে রেসিংয়ে ঢুকেছি। তোমার লজিক এখানকার ফর্মালিটিজে কাজে দেবে না সাইয়ন। এনিওয়েজ,প্রথমবারের হার উপলক্ষ্যে শুভকামনা। আগামীতেও এই অ্যালেন নামটার কাছে হারতে চলেছো তুমি। প্রস্তুত থেকো।

সাইয়নকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে যুবক। রেস জেতার টাকাটা তৎক্ষনাৎ স্থানীয় ওল্ড এইজ হোমের নামে করে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে আসে ওখান থেকে। উন্মুক্ত রেসিংয়ের বিজয়ীকে নিয়ে উল্লাসপর্ব শুধু ওখানটাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তারপর যে যার কাজে! বিজয়ী কোথায়,পরাজিত মানুষটি কেমন আছে,ভাবার সময় নেই আর কারোই!
সিটি অফ লন্ডনের এক ক্ষুদে কনফেকশনারী দোকানের পাশে ছোট্ট একটা বাসা। বাসা বললেও ভুল হবে। কয়েকহাত জায়গার একটা ছোট ঘর। বাইকটা পাশের গ্যারেজে ঢুকিয়ে পকেট থেকে চাবি বের করে ঘরে ঢুকলো সদ্য রেসজয়ী যুবক। ভেতরে মেঝেতেই একটা বিছানা,বিনব্যাগ,এককোনে এলোমেলোভাবে ঝুড়িতে পড়ে থাকা কিছু কাগজপত্র,দরজায় আটকানো হ্যাঙ্গারে কিছু জামাকাপড়,ছোট এক টি টেবিলের উপর কফিমগ,ইলেকট্রিক কেটল,চার্জার ল্যাম্প। বিছানার ওপাশে আরেকটা সরু গলির মতো। ওদিকটা রান্নাঘর বলা চলে। স্টোভসহ খাবার বানানোর জিনিসপত্র। গোছানো বলতে এদিকটাই যা গোছানো। চেন্জ করে পাঞ্চিং ব্যাগে একবার পান্চ ছুড়ে ছেলেটা গা এলিয়ে দিলো বিনব্যাগে। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো বিছানায় পরে থাকা গিটারটার দিকে। কি মনে ওটা নিয়ে টুংটাং সুর তোলার চেষ্টাও করলো। এলোমেলো সুরে চোখ বন্ধ করে গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলো,

Khairiyat pucho
Kabhi to kaifiyat pucho
Tumhare bin dewaane ka
Keya haal hai…
Dill mera dekho
Na mera haisiyat pucho
Tere bin ek din bhi jaise
Sau saal hai…
Anjaam hai taay mera
Hona tumhe hai mera
Jitni bhi ho,duriyaa
Filhaal hai…
Ye duriyaa filhaal hai…

ডোরবেল। চোখের কোনের জলটুকো এক আঙুলের স্পর্শে মুছে নিলো যুবক। চোখ মেলে ইংরেজীতে বললো,

-কে?

-এটা আমি। মিশেল!

নারীকন্ঠস্বরটা পরিচিত ওর। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অফ হোয়াইট শার্ট,কালো স্কার্ট,মাথায় হ্যাট পরিহিত এক সুদর্শনা মেয়ে দরজায় দাড়িয়ে। মিশেল উত্তেজিতভাবে বললো,

-ইউ হ্যাভ ওন দ্যা রেস আর্…

ওকে থামিয়ে ছেলেটা বলে উঠলো,

-অ্যালেন জিতেছে। আমি নই।

মিশলের মুখে কালো ছায়া নেমে আসলো। ওকে ভেতরে আসতে‌ বললো ছেলেটা। চুপচাপ ভেতরে আসলো মিশেল। যুবক নিজহাতে কফি বানিয়ে এগিয়ে দিয়ে বললো,

-অ্যালেন কেমন আছে?

কফিমগটা হাতে ধরে মিশেল বললো,

-বেটার। ডক্টর বলেছে তাড়াতাড়িই ছাড়বে।

যুবক মোবাইল হাতে নিলো। মিশেল চুপচাপ বসে রইলো মাথা নিচু করে। কয়েকমাস আগে ওর প্রেমিক অ্যালেনের এক্সিডেন্ট হয়। প্রেমিকা হিসেবে ও অ্যালেনের জন্য কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু এই অচেনা লোকটা কি না করেছে ওদের জন্য। টাকা,সহমর্মিতা,আবেগ,সবকিছু দিয়ে। কে বলবে,এই মানুষটার জীবনেও কতোটা কষ্ট? যতোটুকো জানে,সেটুকো মনে পরতেই মিশেলের কান্না পায় প্রতিবার। ধরা গলায় বললো,

-এভাবে আর কতোদিন?

মোবাইল স্ক্রল করতে থাকা যুবকের হাত থামলো। শান্তভাবে বললো,

-যেদিন সেকেন্ডগুলো হিসেব করতে পারবো,সেদিন বলবো।

-তাহলে আজ রেসে কেনো গিয়েছিলে? তাও অ্যালেনের পরিচয়ে?

-অ্যালেন এতোগুলো দিন যাবত পার্টিসিপেট করছিলো রেসে। একটা আইডিন্টিটি দরকার ছিলো ওর। তাছাড়া বোর্ডিংয়ে থাকা ওর বোন চায় ওর ভাইয়ের এমন নাম হোক যেনো সেটা ও‌ গর্ব করে সবাইকে বলতে পারে। আজকের পর অ্যালেনের নাম‌ জানবে সবাই। আর ওর বোনও…

-ওহ্! তারমানে দুর্বলতাটা ওখানেই। বোন! সেটা তোমার নিজের বোন হোক,বা অন্যকারো।

যুবক উঠে দাড়ালো। কাচের ক্ষুদ্র জানালাটার দিকে এগিয়ে তার উপর হাত রেখে বাইরে তাকালো। একধ্যানে ঘোলাটে জানালায় তাকিয়ে থেকে বললো,

-না মিশেল। শুধু বোন না। আমার দুর্বলতা তো আমার চারপাশের সবাই। শুধু সেটাকে বুঝতে দেইনি কাউকে। নিজেকে কষ্ট দিয়ে,ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে চুপিসারে পরে আছি ওই একটা দুর্বলতা নিয়ে। তোমার চোখে পরে যেটা। কিন্তু আজ কেনো যেনো সামলাতে পারলাম না নিজেকে। কেনো যেনো মনে হলো,না বুঝানো সত্ত্বেও যে বুঝলো,তাকে অন্তত জানান দেই,আমি আছি। তাই জানালাম। দুরে থেকেও,তাকে অনুভব করেই বেচে আছি। এটুকো জানলে সেও বাচতে শিখবে মিশেল।

মিশেল খুশি হয়ে হাসলো। পরপরই ভ্রুকুচকে বললো,

-কিন্তু জানান দিলে মানে? কিভাবে?

প্রতিত্তরে শুধু একটা ক্ষুদ্র হাসিমুখের প্রতিবিম্ব ভেসে উঠলো জানালার কাচে। বিম্বের অধিকারী জানে,সে মানুষটাকে অনুধাবন করাতে ওর সরাসরি বলার প্রয়োজন পরে না। পুরো পৃথিবী একদিকে হলেও,সে মানুষটা শুধু ওকেই বেছে নেবে। শুধুমাত্র ওকে!

অফিস থেকে এসে ব্যাগটা চেয়ারে রেখে ডাইনিং টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা একঢোকে শেষ করলো দোয়া। ব্যস! সারাদিনের ক্ষিদে গায়েব ওর। টুইঙ্কেল ছুটে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,

-উইশমাম! স্কুল থেকে আমার ইম্প্রুভমেন্ট কার্ড দিয়েছে!

ওকে শান্ত করে চেয়ারে বসালো দোয়া। হাটু গেরে মেঝেতে বসে বললো,

-তাই? কোথায় দেখি?

টুইঙ্কেল কার্ডটা এগিয়ে দিলো। ওটাতে চোখ বুলিয়ে মন ভরে গেলো দোয়ার। অনেকভালো রেজাল্ট এসেছে টুইঙ্কেলের। দুবার চুমো দিলো ও টুইঙ্কেলের গালে। তারপর আরেকবার তাকালো কার্ডটায়। অভিভাবকের স্বাক্ষর জায়গাটা দেখে চুপ করে গেলো দোয়া। ওখানে স্পষ্টাক্ষরে লেখা,তাহসানুল আরাব অথবা তাকওয়াতুল দোয়ার সাইন লাগবে। কাগজে কলমে টুইঙ্কেলের বাবা মায়ের নাম এখন ওটাই। যেমনটা তৌফিকা চেয়েছিলো। সাইনটা করে টুইঙ্কেলকে ঘরে যেতে বললো দোয়া। কিছুদুর যেতেই আবারো পিছুডাক দিলো ও টুইঙ্কেলকে। টুইঙ্কেল এগিয়ে এলে দোয়া ওর দুগাল ধরে বললো,

-আচ্ছা টুইঙ্কেল? য্ যদি আম্মু স্টার হয়ে না থেকে আবারো আগের মতো তোমার কাছে আসতে চায়,তুমি কি করবে?

টুইঙ্কেল দোয়ার দিকে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। দোয়ার চোখ জলে ভরা। তৌফিকার প্রতি আজ প্রত্যেকের অভিমান। বাদ যায়নি টুইঙ্কেলও। এ আটমাসে ওর ছোট্ট মনটাতে অনেক বড়বড় অভিযোগের পাহাড় গড়ে উঠেছে। তাতে স্পষ্ট স্বীকারক্তি টুইঙ্কেলের। আম্মুকে ভালোবাসে না ও। ছোটছোট হাতদুটো দিয়ে দোয়ার গাল ছুইয়ে দিলো টুইঙ্কেল। বললো,

-আম্মু আসলে তো আরাব মামাও আসবে তাইনা উইশমাম?

টুপটাপ জল গরালো দোয়ার চোখ থেকে। টুইঙ্কেল ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো,

-আরাব মামা আসলে তখন তোমাকে নিয়ে আর টেনশন হবে না আমার। ‌মামা দেখে রাখবে তো তো‌‌মাকে! তখন আমাকে যা বলবে,আমি তাই করবো। পাক্কা!

টুইঙ্কেলকে জাপটে জরিয়ে ধরলো দোয়া। নিশব্দে কাদতে লাগলো শুধু। তৌফিক ওয়াহিদ এসে ওকে কাদতে দেখে বললেন,

-কাদের জন্য কাদছিস তুই দোয়া?

দোয়া টুইঙ্কেলকে ছেড়ে তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিলো। তৌফিক ওয়াহিদ বললেন,

-কাদের জন্য কষ্ট পাচ্ছিস মা? একজন তো নিজের দায়িত্বের ভয়ে বিদেশে পারি জমিয়েছে। আরেকজন কোথায় আছে,কেমন আছে,আদৌও আছে কিনা…

-বাবা!

আর্তনাত করে উঠলো দোয়া। তৌফিক ওয়াহিদ শান্তভাবে ডাইনিংয়ে থাকা খাবার প্লেটে বাড়তে বাড়তে বললেন,

-ওরা নিজের স্বার্থ ছাড়া কাউকে চেনে না দোয়া। ভুলে যা ওদের। আমি জানি আমার একটাই মেয়ে। সেটা তুই। আর কাউকে চিনি না আমি। তুইও ভুলে যা!

তৌফিক ওয়াহিদ নিজে হাতে খাবার মাখিয়ে দোয়ার সামনে তুলে ধরলেন। গলায় কতোশত কথা দলা পাকিয়ে আছে দোয়ার। সবটুকো আটকে খিদে নেই বলে চোখ মুছতে মুছতে একছুটে ঘরে চলে আসলো ও। দিশেহারার মতো এদিকওদিক তাকিয়ে মেঝেতে হাটু জরিয়ে বসে গেলো। চিৎকার করে কাদলো খানিকক্ষন। হঠাৎই টেবিলের উপর থাকা আন্তর্জাতিক খবরকাগজটাতে চোখ আটকালো দোয়ার। ফ্রন্টপেইজে হেলমেট পরিহিত ছবি দেওয়া সেই বাইকারের। কিছুক্ষন স্তব্ধভাবে ছবিটায় তাকিয়ে রইলো দোয়া। আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দুফোটা চোখের জল ফেললো ও। পরপরই ব্যস্তভাবে পেপারটা বুকের সাথে দুহাতে শক্তভাবে আকড়ে ধরে বললো,

-আমি জানতাম আরাব। আপনি লন্ডনেই আছেন। তৌফিকা আপুকে একাকী ছাড়বেন না। আর আপনি যে লন্ডনেই আছে,এটা আমাকে জানাবেন বলে বাইক রেসে গিয়েছেন আপনি তাইনা? এই হেলমেট আর অ্যালেন নামের কারন যাতে আমি ছাড়া আপনাকে কেউ না চেনে সেটাও আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমি যতই কষ্ট পাই না কেনো,সবসময় চাইবো,আপনি যা চান,যেমনটা চান,তাইই হোক,সেভাবেই হোক সবটা। আমি জানি আপনি ফিরবেন! এটুক বিশ্বাসেই তো বেচে আছি। আর আজ তো আপনি…বিশ্বাস করুন আরাব,দোয়া এটুকোতে আরো কয়েকসহস্র বছর আপনার অপেক্ষায় বেচে থাকতে পারবে। আরো কয়েকসহস্র বছর…

#চলবে…

[ আরাব পেয়েছেন পাঠকমহল? আমি কি পাবো এখন? ? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here