এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ৭

0
424

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৭

“রংধনু”…
সুবিশাল বাড়িটার গেইটে বড়বড় লেখাটা সব পথচারীরই নজর কাড়ে।নামের মতোই বাসাটাও যেনো এক কাল্পনিক রঙিন পৃথিবী।দ্বিতল ভবনের সামনের দিকটায় সুবিশাল ব্যালকনি,নিচে হাজাররঙের ফুলে ছেয়ে থাকা বাগান,পার্কিং এরিয়ায় দুটো গাড়ি,তিনটে বাইক,পশ্চাৎ অংশে নীল স্বচ্ছ পানির সুইমিংপুল।আভিজাত্যের ছাপ প্রতিটা কোনায় কোনায়।গেইটের পাশের দেওয়ালে সোনালী নেইমপ্লেটে লেখা তৌফিক ওয়াহিদ নামটা তার কর্মক্ষেত্রের মতোই উজ্জ্বল।আরাবদের গাড়ি পৌছাতেই গেইট খুলে দিলো দাড়োয়ান।বাসার ঔদার্য চোখে পরতেই চোখ বাইরে থেকে সরিয়ে নিলো আরাব।গাড়ি থামালো মুফতাহির।বেরিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো আরাব।খোড়াচ্ছে,তবে চেহারা স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো।পেছন থেকে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে মুফতাহির বললো,

-কি শালাবাবু?পুরো একদিন নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে বাসায় ঢুকছো,ভয় করছে না?

থেমে গিয়ে বাকা হাসি দিলো আরাব।মানেটা জানে মুফতাহির।মাথা নেড়ে হেসে বললো,

-হ্যাঁ হ্যাঁ,তোমার আপুকে বলেছি আসতে।এসেও গেছে সে রংধনুতে।ফিকার নট!জীজু পেয়েছো মনের মতো।তোমার মনের সব কথা বলার আগেই বুঝে যায় সে!তবুও দেখো!আজ তোমার বোনই তোমাকে বাসায় ঢুকতে দেয় কি না!

আরাব হেসে‌ এগোলো বাসার দিকে। আরাবের বড় বোন থাকলে‌ সবটাই ম্যানেজ করে নেবে।কোনো ঝামেলাই হবে না।তাই আগেই মুফতাহিরকে বলে রেখেছে,সিচুয়েশন বুঝে যেনো তৌফিকাকে এ বাসায় পাঠিয়ে দেয়।দরজা খুলে উকিঝুকি দিলো ভেতরে।দুটো সার্ভেন্ট ছাড়া কাউকে দেখতে পেলো না তেমন।চোরের মতো ভেতরে ঢুকে সবে পেছন ফিরে মুফতাহিরের দিকে বিশ্বজয়ের হাসি দিয়েছে,ওর বা কানটা যেনো সর্বশক্তিতে ধরে ফেললো কেউ।কানমলা খেয়ে‌ অসহায়ের মতো আউচ্ শব্দে পেছন ফিরলো আরাব।

-আউচ্ না?আউচ্?আজ তোর সব আউচ্ বের করে দেবো আমি!

তৌফিকা আরো জোরে কান ধরলো আরাবের।তৌফিকা আইরাত।তৌফিক ওয়াহিদের বড় আর একমাত্র মেয়ে,তার চোখের মনি।আরাবের মতো ওর নামেরও পরের অংশটাই ডাকনাম হতো।কিন্তু তাতে তৌফিক ওয়াহিদের ঘোর আপত্তি।তার মেয়ের ডাকনাম তার নামেই হবে।বেসরকারী মেডিকেল থেকে ডাক্তারী শেষ করলো।মুফতাহিরের সাথে সেখানেই‌ দেখা।তারপর প্রেমের বিয়ে।শুরুর দিকে মুফতাহিরের পারিবারিক পরিচিতি নিয়ে বিয়েতে খানিকটা অমত ছিলো তৌফিক ওয়াহিদের।পরবর্তীতে মেয়ের খুশির জন্য সবটা হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন উনি।মুফতাহিরও এখন এস্টাব্লিশড্!সবমিলিয়ে,সুখেই আছে ওরা।

-আহ্ আপু!কান ছাড়!তোর ভাইয়ের কি এখনও আর কান ধরার বয়স আছে?আ্…তুইই বল!আআআআ!

-নানু!ও নানু!নানুভাই!এসে দেখে যাও!তোমাদের মেয়ে আমার মামার কান ধরেছে!আম্মু মামার কান ধরেছে!কোথায় তোমরা?আসো?

চেচিয়ে পুরো বাসায় ঘটনার জানান দিতে লাগলো সুপ্তি।আরাবের কান ছেড়ে দিলো তৌফিকা।বললো,

-দেখো টুইঙ্কেল,আজ তুমি আমার আর তোমার মামার মাঝে আসবে না!আজ তোমার মামাকে পিটুনি দিয়ে সোজা বানিয়ে তবেই ছাড়বো!

-না আসবো!তুমি বকবে কেনো ‌মা‌মাকে?আমার ‌মামা,বেস্ট ‌মামা!তুমি মামাকে একদ‌ম বকবে না বলে দিচ্ছি!

কোমড়ে হাত দিয়ে ওরদিকে তাকিয়ে রইলো তোফিকা।মেয়েটা বড্ড পাকাপাকা কথা বলে।শাষন করার নামে শোষন চালায় রংধনুতে।সুপ্তিকে আদর করে সবাই টুইঙ্কেল বলেই ডাকে।এইবার ক্লাস টু তে পরে ও।মুফতাহির এগিয়ে এসে বললো,

-এইতো!শালাবাবুর রিয়েল পাঙ্খা!টুইঙ্কেল,আম্মুকে বকে দাও তো!টুইঙ্কেলের আরাব মামার কান ধরেছিলো!ভাবা যায়!কত্তোবড় সাহস তোমার তৌফিকা!

ঠোট উল্টে আরাব কানে হাত বুলাতে লাগলো।তৌফিক ওয়াহিদ আর তার মিসেস বেরিয়ে এলেন টুইঙ্কেলের হাকডাক শুনে।আরাবকে দেখে একপ্রকার ছুটে আসলেন মিসেস ওয়াহিদ।ওর কপালের সেলোটেপটা ছুইয়ে ব্যস্তভাবে বললেন,

-এটা কি আরাব?কি হয়েছে তোর?কিভাবে কেটে গেলো?এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে?ফোন রিসিভ করিসনি কেনো আমার কাল থেকে?মুফতাহির বললো সাজেক যাচ্ছিস।তা বলে ফোন রিসিভ করবি না?এটা কোনো কথা?

আরাব মুচকি হেসে মাকে জরিয়ে ধরে বললো,

-আমি ঠিকাছি মা।একটু শান্ত হও!

মিসেস ওয়াহিদ আরো ব্যস্তভাবে বললেন,

-কোথায় ঠিক আছিস তুই?হাতে এতোগুলো স্ক্র্যাচ কেনো?কি হয়েছিলো তোর?

আরাব কিছু বলার আগেই তৌফিক ওয়াহিদ বললেন,

-কোথায় ছিলে তুমি আরাব?সাজেক তো যাওনি রাইট?

টুইঙ্কেল দৌড়ে গিয়ে আরাবের কোলে উঠতে যাচ্ছিলো।কিন্তু ওর আঘাতের জন্য মুফতাহিরই এগিয়ে কোলে তুলে নিলো ওকে।তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,

-মামার একটু লেগেছে টুইঙ্কেল।তুমি পরে কোলে উঠো কেমন?আমরা এখন গিয়ে গেট ওয়েল সুন ড্রয়িং করি মামার জন্য?

টুইঙ্কেল উচ্ছাসিতভাবে হ্যাঁ বুঝালো।ওকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো মুফতাহির।মাকে ছেড়ে আরাব সোজা হয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করলো।খুড়িয়ে একপা এগিয়ে বললো,

-আসলে বেরিয়েছিলাম সাজেকের উদ্দেশ্যেই।কিন্তু যাওয়ার পথে কাল একটা ছোটখাটো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।তাই…

আরাবকে শেষ করতে না দিয়ে তৌফিকা পাগলপ্রায়ভাবে ছুটে এসে ওর গালে মুখে হাত দিয়ে বললো,

-কি বলছিস কি তুই আরাব?তোর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো?কোথায় লেগেছে ভাই?দেখা আমাকে?কোথায়…

দুমিনিট আগে কানমলে দেওয়া বোনই এমন করতে পারে ভেবে মুচকি হাসলো আরাব।কিন্তু ওকে তো সামলানোর দায়িত্বে রাখতে চেয়েছিলো আরাব।তা বোধহয় হলো না।মিসেস ওয়াহিদ কেদে দিলেন এবার।বললেন,

-এজন্যই এতো কাটাছেড়া!আমি জানতাম,কাল তুই বাসা থেকে বেরোনোর পরপরই আমার মন কেমন করছিলো।আমার তো…

আরাব তার হাত মুঠো করে নিয়ে বললো,

-মা!প্লিজ শান্ত হও।বাইকটা থেকে পরে গিয়েছিলো শুধু!আর আপু?তুই না ডাক্তার?দেখছিস না,শুধু হাতেপায়ে কিছু কাটাছেড়া আছে।তাছাড়া তো…

-আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি আরাব!

তৌফিকার এবার কড়া গলা।একটু দমে গেলো আরাব।মাথার পেছনদিকে যে আঘাতটা আছে,ওটাতে যথেষ্ট ব্যথা।সবার চোখ এড়ালেও তা তৌফিকার চোখ এড়ায়নি,তা বুঝেছে ও।একটু জোর করে হেসে মা বোন দুজনকেই সোফায় এনে বসালো আরাব।কোনোমতে ওদেরকে শান্ত করে অজ্ঞান হওয়া আর অরুনাভ মুখার্জীর আতিথীয়তার কথা বুঝিয়ে বলে।সবটা শুনে তৌফিক ওয়াহিদ তার গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন,

-তোমাকে কতোবার বলেছি আরাব,বাইক না নিয়ে গাড়ি করে বেরোও।গাড়ি নিয়ে গেলে এমনটা ঘটতো না তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো?

আবার মৃদ্যু হেসে বললো,

-বাবা,তোমার বিলাসবহুল মডেলের গাড়ি তোমার এই রাজকীয় বাসার গ্যারেজেই মানায়।আমাকে না।আমি ওই নিজের টাকায় কেনা অল্পদামী বাইকেই তুষ্ট।এক্সিডেন্টটা আমার বেখায়ালীপনার জন্য হয়েছে।বাইকের কি দোষ?

-কেনো বেখেয়ালি হয়ে থাকো তুমি বলোতো আরাব?কিসের অভাব তোমার?তোমাকে বলেছিলাম অফিস জয়েন করতে।ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব নিতে।নাও নি!আমি আর কতোদিন সামলাতে পারবো আরাব?এই ভরপুর বিজনেসের উত্তরাধিকার বলতে,তুমি ছাড়া আর কে আছে?এই দায়ভার তুমি না নিলে কে নেবে?এতোসব ছেড়ে,সরকারী বেতনভুক্ত সাইন্টিস্ট হিসেবে,শুধুশুধু ল্যাবে ওইসব এক্সপেরিমেন্টের ভীড়ে পরে থাকার কোনো মানে তো আমি খুজে পাই না আরাব!

প্রতিটা কথায় বিজনেসে জয়েনের কথা বলাটা ওর বাবার অভ্যসে দাড়িয়েছে,এটা জানে আরাব।মাথা নিচু করে মুচকি হেসে বললো,

-যেটা তোমার কাছে শুধুশুধু,সেটা আমার ড্রিমজব বাবা। পড়াশোনা শেষ করে স্বেচ্ছায় বায়োমেডিতে জয়েন করেছি।আমার লাইফ এই এক্সপেরিমেন্টের ভীড়েই এক্সাইটিং হয়ে উঠেছে বাবা।নয়তো,তোমার কিন্তু সময় কমই ছিলো,আমার ইচ্ছা কি তা জানার,আমার ক্যারিয়ার কিভাবে চাই,তা জানার!

-হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ক্যারিয়ার আরাব?আমি এসব তবে কার জন্য করছি?এই বিষয়সম্পত্তির মালিক বলতে তো তুমিই!তবুও কেনো তোমার এসবে…

তৌফিকা শক্তভাবে বললো,

-বাবা,মেডিকেলে চান্স না পাওয়ার পরও আমাকে আমার স্বপ্নপুরনের জন্য তুমি আমাকে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করালে।এখন আরাব যখন ওর ড্রিমজব নিয়ে ক্যারিয়ারে এগোতে চায়,তোমার তাতে এতোটা আপত্তি কেনো বলোতো?তোমার এ বিষয়সম্পত্তি তো এখনই উবে যাচ্ছে না তাইনা?

তৌফিক ওয়াহিদ বিরক্তি নিয়ে অন্যদিক তাকালেন।মিসেস ওয়াহিদও মুখ খুললেন এবার।বললেন,

-ঠিকই বলেছে তৌফিকা।এখন এইসব কথা বলতে হবে তোমার?ছেলেটার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো!এখন এসব কথা কেনো তুলছো তুমি বলোতো?

-তুমি কি এটা বুঝতে পারছো না বাবা?এই টাকাপয়সার হিসেব কষে আমরা আমাদের লাইফের উপভোগ্য সময়টা হারিয়ে ফেলছি?

মেয়ের কথায় উঠে দাড়ালেন তৌফিক ওয়াহিদ।ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-এই পৃথিবীতে টাকাই সব!প্রতিপত্তিই সব!যদি টাকা না থাকে,তবে এই উপভোগ্য সময়কেই তোমার বিষাক্ত লাগবে তৌফিকা!আমি চাইনা ভবিষ্যতের কোনো এক সময়কে আমার সন্তানরা বিষাক্ত বলে মনে করুক।মানো,বা নাই মানো,এসব যেদিন কাজে লাগবে সেদিন আমার কথার গুরুত্ব ঠিকই অনুভব হবে তোমাদের।

কথাগুলো বলে চলে গেলেন তৌফিক ওয়াহিদ।আরাব কিছুই বললো না।বাবার এ মতবাদ ওর চিরচেনা।সবারই এটা গা সওয়া হয়ে গেছে যাকে বলে।মিসেস ওয়াহিদ বললেন,

-যা!ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হ!আমি খাবার…

-না না!ও বাড়িতে খেয়ে এসেছি!

তৌফিকা বললো,

-তবুও,হিন্দু বাড়ির খাবার…

-রাধুনী মুসলমান।সবটাতে তার হাতের ছোয়া ছিলো আপু।

খানিকটা আনমনে বললো আরাব।বলেও হেরফের নেই ওর।আবারো দোয়ার কথা মনে পরে গেছে যে!শরীরটা ভালো নেই বলে আর কোনো প্রশ্ন করলো না তৌফিকা।মা,বোন দুজনে মিলে ঘরে পৌছে দিয়ে গেলো আরাবকে।তৌফিকা বলেছে একটুপর চেকআপের জন্য আসবে ও।রুমের দরজা লক করে খুড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়না পাস করে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলো আরাব।কি মনে করে দুপা পেছনে ফিরলো।অতিকষ্টে টিশার্ট খুলে আয়নায় তাকালো।ছোটছোট কাটা জায়গাগুলোতে রক্ত জমাট বেধেছে।কোথাও‌কোথাও কালো ছোপ ছোপ দাগ।একহাতে উন্মুক্ত বুকের বা পাশটায় থাকা এক ক্ষতস্থানে হাত রাখলো আরাব।কি হলো ওর,তা ও নিজেও জানে না।আকাশসম আনন্দ জোয়ারে নিজেকে খুজে পেলো যেনো।হেসে দিয়ে চোখ বন্ধ করে হঠাৎই চিৎকার করে বলে উঠলো,

-আমার সবটাতে তুমি জরিয়ে গেছো দোয়া!সবটাতে!

-আহ্!

দোয়ার আর্তনাত শুনে ছুটে বারান্দায় আসলেন সালমা বেগম।টিউশনি থেকে ফিরে মাগরিবের কাজা নামাজটা সেরেই চুলোর কাছে গেছে ও।রাতের রান্নার করছিলো।বা হাতের কব্জি ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে দোয়া।চোখ দিয়ে পানি পরছে ওর।মাকে আসতে দেখে লবনের কোটোটা থেকে বেশ অনেকখানি লবন তুলে কব্জিতে লাগিয়ে অন্যদিক ঘুরে বসলো ও।সালমা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললেন,

-কি হয়েছে দোয়া?কি হলো তোর?ওদিক কেনো ফিরে আছিস?এদিকে ঘোর?কি হয়েছে?

দোয়া ঠোট কামড়ে ফুপাচ্ছে।অন্যমনস্ক হয়ে খালিহাতেই চুলা থেকে পাতিল নামাতে যাচ্ছিলো ও।দুহাতে ধরার আগেই একহাতে ঘেষা লেগেছে বলে বাস্তবে ফিরছে।সালমা বেগম টেনে পাশ ফেরালেন ওকে।হাত দেখার জন্য টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন উনি।”কিছু হয়নি,মা ছেড়ে দাও,মা যাওতো” বলে বলে দোয়াও অস্থির হয়ে পরেছে।সালমা বেগম অনড়।জোরাজুরিতে দোয়ার হাত সরাতেই দৃষ্টি স্থির হয়ে যায় তার।কলিজা মুচরে ধরেছে যেনো কেউ তার।

দোয়ার হাতে কলমের মতো বড় আকারের কালশিটে দাগ। দুঠোট চেপে চোখ বন্ধ করে রেখেছে ও।সালমা বেগমের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। হুহু করে কেদে দিলেন উনি।লবনগোলানো জলে দোয়ার হাত চুবিয়ে দিয়ে দৌড় লাগাচ্ছিলেন নিচতলায়।অরুনাভ মুখার্জীর কাছ থেকে ওয়েন্টমেন্ট আনবে বলে।দোয়া মাকে আটকে দিলো।একটা শুকনো ঢোক গিলে নাক টেনে বললো,

-কাকাবাবুর আগের ওষুধগুলোর টাকা দেওয়া হয়নি মা।

সালমা বেগম আবারো ফুপিয়ে কেদে দিলেন।বললেন,

-তুই কি এভাবেই নিজেকে শেষ করে দিবি বলে ভেবে রেখেছিস দোয়া?একটুখানি মলম নিতে গেলে তোর কাকাবাবু টাকা চাইবে?যখন শুনবে তোর….

-কি দরকার মা?এমনিতেও কম দয়া তো নেইনি তার।কমঋনে তো ঋনী নই।এভাবে একটু একটু করেই তো এতোটা ঋনী হয়ে গেলাম তার কাছে।আরও কেনো ঋন বাড়াতে চাইছো?যেতে দেবো না আমি তোমাকে।ও এমনি সেরে যাবে।লবনগোলানো জলেই কমে গেছে জ্বালা অনেকটাই।

সালমা বেগম কাদছিলেনই।দিয়ানের কানে যায়নি এখনো কিছুই।এখন ওকে ডাকলে দোয়া আরো রাগ করবে।পাশের ঘরে তন্নি তৃষার গুনগুন পড়ার আওয়াজ আসছে।সালমা বেগম চোখ মুছে ডাক লাগালেন,

-তন্নি?তৃষা?এইদিক আয়তো!

হতাশার শ্বাস ফেললো দোয়া।আর রক্ষে নেই।ঘটলোও তাই।তন্নি তৃষা দুজনেই বেরিয়েছে।একছুটে গিয়ে অরুনাভ মুখার্জীকে ডেকেও এনেছে তৃষা।সে লোকটা চুপচাপ এসে সবরকমের মলম লাগানো,ব্যান্ডেজ করে দিয়ে লুকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো শুধু।দোয়াকে বকতে গেলে তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।আরো কষ্ট হয় আদর করতে গেলে কিংবা শান্তনা দিতে গেলে।এখন কিছু বলতে গেলে দোয়াও তার চিকিৎসার টাকা নিয়ে কথা তুলবে,তাই কিছু বললেন না উনি।মায়ের কোলে মাথা রেখে মেঝেতে বসে রইলো দোয়া।আর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছেন সালমা বেগম।জানালা দিয়ে আসা খানিকটা হিমশীতল বাতাসে সেলাই মেশিনের সামনে থাকা সুতলির নিচে নড়াচড়া করতে থাকা কাগজটার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো দোয়া।ওটা আরাবের দেওয়া সেই কাগজটাই।চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো ওর।আজকেও ওর সেলাইয়ের কাজ করা হবে না।পরিবারের ভরনপোষনের জন্য উপার্জন ক্ষেত্রটায় আজকেও বাধা পরেছে।আজকেও তার কারন,আরাব!আরাবকে নিয়ে ভাবা!

#চলবে….

[ ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here