এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ১

0
1563

-স্টুডেন্টের মা বাবার বিবাহ বার্ষিকীতে এসে খাবার চুরি করার মতো নিচ কাজ করতে এতোটুকো লজ্জা করলো না তোমার দোয়া?কিভাবে করলে তুমি এটা?আমাকে বললেই পারতে,বেচে যাওয়া সব খাবার দান করে দিতাম তোমাকে।তুমি গরিব তা জানতাম,এতোটা ছোটলোক জানলে কোনোদিনও আমার মেয়েকে তোমার মতো কারো কাছে পড়তে দিতাম না!লজ্জা করছে না তোমার এখনো,এখানে,এভাবে দাড়িয়ে থাকতে?নাকি অপমানিতো হওয়া থেকে পালানোর মতো আর এতোটুকো আত্মসম্মানও অবশিষ্ট নেই?

বাসাভর্তি মানুষের সামনে এতোবড় ঘৃন্য অপবাদে অপমানিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যুকে বেশি সুখের মনে হলো দোয়ার।চোখজোড়া দিয়ে অঝরে অশ্রু গড়াতে লাগলো।নিস্পলকভাবে তাকিয়ে রইলো এতোগুলো তীক্ষ্ম শব্দবান ছোড়া মহিলার দিকে।চোখ দিয়ে যেনো অগ্নি ঝরছে তার।জলভরা চোখে আশেপাশের সবার ঘৃনা আর অবজ্ঞার দৃষ্টিকে দেখে নিলো ও একবার।পাশেই হাত আটকে রাখা বাচ্চা মেয়েটা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

-মম,দোয়া মিস খাবার কেনো চুরি করবে?উনি না খেয়ে চলে যাবেন বলে ওনাকে খাবার তো আমিই প্যাক করে দিচ্ছিলাম।বকছো কেনো তুমি মিসকে?

-এই রোতি!একদম মুখে মুখে তর্ক করবে না বুঝলে?চুপ!একদম চুপ!

-না চুপ করবো না!একদম পচা মম তুমি।খালি বকো!আমাকেও বকো,দোয়া মিসকেও বকো!দোয়া মিস কষ্ট পাচ্ছে মম।কাদছে দেখো?ছাড়ো!ছাড়ো আমার হাত!ছাড়ো!

বাচ্চা মেয়েটার ওমন কথাতেও ওর আম্মুর কোনো হেরফের নেই।একটা শুকনো ঢোক গিললো দোয়া।ডানহাতের তালুতে গালটা মুছে,জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো,

-মমের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই রোতি।দোয়া মিস একদমই কষ্ট পায়নি।এই‌ দেখো,আর কাদছে না মিস।তুমি….তুমি আন্টির সাথে আর কোনোদিন এভাবে কথা বলবে না ওকে?

রোতি গাল ফুলিয়ে হাত ছাড়াতে ব্যস্ত।ওর মাকে বারবার হাত ছাড়ার কথার বলছে।ওর মা বেশ কটুগলায় বলতে লাগলো,

-এইসব কথাও এই মিস শিখিয়েছে তোমাকে তাইনা?তাইতো বলি,কয়েকদিন যাবত মমকে এতো কথা শুনাচ্ছিলে কেনো তুমি!পাপা আসুক কনফারেন্স শেষ করে,তোমার এই সব শিক্ষার আজ ইতি টানবো।এই দোয়া মিস কাল থেকে আর পড়াতে আসবে না তোমাকে।শোনো দোয়া,আমার মেয়েকে চৌর্যবৃত্তি শেখানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই!তুমি আর রোতিকে পড়াতে আসবে না কাল থেকে!এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে!গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার!

রোতির সামনে হাটুগেরে বসলো দোয়া।ওর গাল ধরতে যাবে,ওর মা সরিয়ে নিলো ওকে।দোয়া নরম গলায় রোতিকে বললো,

-দোয়া মিস লাভস্ ইউ আ লট রোতি।এন্ড শি ইজ গোয়ানা মিস ইউ আ‌ লট!

-হয়েছে হয়েছে।অনেক নাটক করেছো!এবার বেরিয়ে যাও!আমার বাসায় চোরের কোনো স্থান নেই!

রোতির আম্মুর কথায় নিজেকে শক্ত করে আরেকবার চারপাশে তাকালো দোয়া।এতোক্ষন শুধু শুনছিলো।এবার ওর জবাব দেবার পালা।চোখ বন্ধ একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো,

-আপনার বাসায় আসার নুন্যতম ইচ্ছা ছিলো না আমার।কোনোদিনই থাকে না,কারনটা শুরুতে আপনার ব্যবহার ছিলো,আর দুদিন আগে থেকে আপনার ছোট ভাইয়ের বাজে চাওনি।নতুন টিউশনির খোজ করছি আমি।এটা ছেড়ে দেওয়ার আগে রোতির একমাত্র আবদার,আজকে আপনাদের বিবাহবার্ষিকীতে যেনো আমি থাকি।দাওয়াত নামের আপনার এই‌ অপমানজগতে আজকে রোতির জন্যই আসা।কিন্তু এখানেও,আপনার ছোটভাইয়ের বাজে দৃষ্টি এড়াতে পারলাম না।আর আজকে তো উনি অসভ্যতার সব সীমাই পার করে দিয়েছেন।

এটুকো বলে দোয়া কিছুটা দুরে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা রোতির মামার দিকে তাকালো।মানুষটা গালে হাত বুলাচ্ছে।কিছুক্ষন আগে কুপ্রস্তাব দেওয়ার জন্য দোয়া চড় মেরেছে তাকে।রোতির আম্মু ফুসে উঠে বললো,

-খবরদার দোয়া!আমার ভাইকে নিয়ে একটা বাজে কথা বলেছো তো!

-আপনার ভাই বাজে কাজ করতে পারবে,আর আমি তা বলতে পারবো না সে ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন আন্টি।আর শুধু বলা কেনো,আমি তো তার প্রাপ্য সাজাটাও দিয়ে দিয়েছি।আর এজন্যই আপনার এতো রাগ হচ্ছে তাইনা আন্টি?এজন্যই এভাবে মিথ্যে অপবাদে অপমান করছেন আমাকে,তাইনা?

-মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ দোয়া!

তার কথাকে পাত্তা দিলো না দোয়া।বললো,

-আপনাদের মোমেন্টটা নষ্ট করবো না বলে চুপচাপ বেরিয়ে যাচ্ছিলাম আন্টি।কিন্তু রোতি আটকে দিলো।আমি নিতে চাইনি খাবার,ওই‌ জোর করে খাবার প্যাক করে দিচ্ছিলো আমাকে।কিন্তু আপনার এই রিয়্যাক্ট।আমি বেশ বুঝতে পারছি,সবটা জেনেবুঝেই এমনটা করলেন আপনি।নিজের ভাইকে কিছু না বলে উল্টো আমাকেই….

-দোয়া!

-চিৎকার করলে সত্যিটা বদলাবে না আন্টি।আপনার ভাইকে তো সবার সামনে সাজা দেইনি,তবে আপনার ব্যবহারে এই‌ তিক্ত কথাগুলো সবার সামনে বলতে বাধ্য হলাম।যাইহোক,আমাকে আরো কড়া কথা বলতে বাধ্য করবেন না প্লিজ।আজকের এই ব্যবহারে,আপনার আর আপনার ভাইয়ের মতো কুলষ মনোভাববিশিষ্ট মানুষের সাথে সাক্ষাৎলাভের ইচ্ছা আমার শেষ।তাই শেষবারের সাক্ষাতকারে আরো ঝামেলা হোক,সেটা আমি চাইছি না।চলে যাচ্ছি।ভালো থাকবেন।

একশ্বাসে কথাগুলো বলে বেরিয়ে আসার জন্য পা বারালো দোয়া।শুনতে পেলো,পিছনে হুহু করে কেদে চলেছে রোতি।দুর্বলতাটা দেখানো যাবে না এই মুহুর্তে।খুব কষ্টে নিজেকে‌ সামলে আর একবিন্দু দেরি না করে বেরিয়ে এলো জাকজমকপুর্নভাবে সাজানো দ্বিতল ভবনটা থেকে।

.

-স্যার?জারা ম্যাম আপনার সাথে কথা বলতে চায়।ফোন করেছিলো আমাকে।

হ্যান্ডগ্লাভস্ খুলতে খুলতে ল্যাব থেকে বেরোচ্ছিলো আরাব।এসিসটেন্টের কাছে জারার নাম শুনে মাথা না তুলে বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললো,

-তোমাকে বলেছিলাম নিরব,ওর নম্বরটা ব্লক করতে।

-স্যার,এ নিয়ে চারটে সিম পাল্টালাম।

আরাব মাথা তুললো।নিরব এবার চোখ নামিয়ে নিলো।একটা ক্ষুদ্রশ্বাস ছেড়ে আরাব বললো,

-লিভ ইট।আজকের রিসার্চগুলোর সব ফাইল আমি বাসায় নিয়ে যাবো।আরো ডিপ স্টাডি দরকার।নেক্সট কয়েকদিন ল্যাবে আসতে পারবো না।তুমি এদিকটা হ্যান্ডেল করতে পারবে তো?

নিরব মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।নিজের কেবিনে ঢুকে এপ্রোন,মাস্ক ছেড়ে গায়ের সাদা গেন্জিটার উপর হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরে নিলো আরাব।ব্যাগটা কাধে বাঝিয়ে চাবির গোছা আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে এলো রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ভেতর থেকে।

.

রাত নেমে এসেছে শহরের বুকে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে‌ রাস্তা উজ্জল।ফুটপাত দিয়ে হাটছে দোয়া।চোখের পানি থামছেই না।একবার শাড়িটার আচলে‌ চোখ‌ মুছছে,তো আবারো গাল বেয়ে পানি গরাচ্ছে।মা আর ছোট ভাইটার মুখে কাল থেকে কিভাবে খাবার তুলে দেবে,সে চিন্তায় বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে ওর নিজেকে।চিৎকার করে কাদতে পারলে যেনো শান্তি লাগতো।তবুও সামলাতে হচ্ছে নিজেকে।আর তাতে শুধু কষ্টটা কয়েকগুন হচ্ছে।

হুট করেই‌ দুটো কুকুর এসে‌ দোয়ার সামনে দাড়িয়ে শব্দ করতে লাগলো।ঘাবড়ে গেলো ও কিছুটা।রিকশা করে যাওয়ার‌ সামর্থ্য ওর‌ নেই।অভিভাবক বলতে বাড়িওয়ালা কাকাবাবুকে বলে এসেছিলো রাত দশটার দিকে যেনো তার সাইকেলে করে রোতিদের বাসা থেকে নিয়ে যায় ওকে।কিন্তু দশটা বাজতে এখনো অনেকটা সময় বাকি।আগেই বেরিয়ে এসেছে দোয়া।আশেপাশে তাকালো দোয়া।মেইনরোড পার করে এসেছে।দুটো মোর নিলেই বাসার সামনের রাস্তাটা।এর আগেও এ রাস্তায় রাতে দুবার চলাফেরা করেছে।তবে সেটা অরুনাভ দাশের সাথেই।আজকের অপমান আর জীবিকার উৎসের চিন্তা,বাকিসব ভুলিয়ে দিয়েছে ওকে।একাই হাটা লাগিয়েছে আজ।

কুকুরগুলো দেখে দোয়া ভয় পেয়েছে খানিকটা।তারপরই ওর মনে হলো,এরা মানুষ নামক পশুর চেয়ে ভালো।পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাবে,আচমকাই একটা বাইক বেশ অনেকটা বেগে এসে একদম সামনে পরলো দোয়ার।কুকুরদুটো দৌড়ে পালালো তৎক্ষনাৎ।হেলমেট পরিহিত মালিক বাইকের নিচে পরে কাতরাচ্ছে।দোয়া শ্বাস আটকে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন।এভাবে চোখের সামনে অঘটন ঘটতে দেখে কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র যেনো অচল হয়ে পরেছে ওর।

-হেল্প!

আর্তনাত শুনে মুঠো থেকে আচল ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলো দোয়া।মানুষটা পরনে সাদা গেন্জির উপর কালো জ্যাকেট,পায়ে কেডস্।পেছনে ব্যাগটা অনেকটা দুরে গিয়ে পরেছে।বাইকটা ধরে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করলো দোয়া।লোকটা নিজেও চেষ্টা করছে সরানোর।পায়ের উপরদিক হতে বাইকটা খানিকটা সরে যেতেই লোকটার বুকপকেট থেকে আইডি কার্ডের মতো কিছু পায়ের কাছে এসে পরলো দোয়ার।কার্ডটায় চোখ বুলালো ও।ওতে লেখা,ডক্টর তাহ্সানুল আরাব,এক্সপেরিমেন্ট স্পেশালিস্ট,বায়োমেডি রিসার্চ ইনস্টিটিউট।”সাইন্টিস্ট” আর “বায়োমেডি রিসার্চ ইনস্টিটিউট”শব্দদুটো স্পষ্টতর হতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো দোয়ার।কার্ডটা ফেলে উল্টোদিকে হাটা লাগালো ও।দোয়ার চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে একজন উল্টোপথে চলে যাচ্ছে,বিষয়টা বেশ বুঝলো আরাব।খানিকটা চেচিয়ে বললো,

-আরে?যাচ্ছেন কোথায়?হেল্প তো করুন?

পেছন ফেরিনি দোয়া।এই বায়োমেডি ওর জীবনকে অন্ধকারে ছুড়ে ফেলেছিলো একদিন।এই সাইন্টিস্ট পদবিটার জন্যই একদিন সব শেষ হয়ে গুয়েছিলো ওর।এই পদবির জন্যই ওর জীবন আজও বিষময়!বড়বড় পা ফেলে,আরাবকে ওভাবেই রেখে,চলে আসলো ওখান থেকে।

সকালের রোদটা সোজা চোখে এসে পরায় পিটপিট করে তাকালো আরাব।মাথাটা প্রচন্ড ভারি অনুভব হচ্ছে ওর।উপরের রঙচটা ছাদটা দেখে বুঝলো,কোথাও শুয়ে আছে ও।অন্য কোনোদিক না তাকিয়ে,উজ্জল আলোর উৎস অনুসরন করতে আলো বরাবরই তাকালো।সেখানে শুরুতেই আবিষ্কার করলো পা বরাবর একদম মেঝে থেকে বেশ বড়সর এক জানালা।ভোরের আলোর উৎস।ব্যস্ত শহরের বুকে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে ঢুকে পরা কিঞ্চিত শিশিরভেজা ঝকঝকে আলো!রঙ উঠে যাওয়া ভেতরের দেয়ালগুলোর জন্য বাইরের আলো,মৃদ্যু হিমেল হাওয়ায় সবুজ নারিকেল পাতার দোল খাওয়ার দৃশ্য,সবটাই চমকপ্রদভাবে জানালায় দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো।কিন্তু হয়তো আলোর উৎস হিসেবে এই বেরঙ চিলেকোঠার সুবিশাল জানালাটা একা ছিলো না।

ধবধবে সাদা ওড়না গায়ে জরিয়ে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে রয়েছে কেউ।কোনো মেয়ে।গায়ে সাদা রঙেরই সালোয়ার কামিজ।আরাবের একবার মনে হলো,সে শুভ্রতাকে পাশ কাটিয়ে আসতেই হয়তো ভোরের রোদ এতো বেশি ঝলমলে হয়ে উঠেছে।লম্বা জানালার রডগুলোর একটা ডানহাতে মুঠো করে রয়েছে মেয়েটা।চোখদুটো একটু ডলে দৃষ্টিস্থির রেখে উঠে বসতে যাচ্ছিলো আরাব।উঠতে গিয়ে হাতে পায়ের ক্ষতগুলোতে টান লাগাতে চোখমুখ কুচকেও নিলো বারদুয়েক।তবুও কোনোমতে উঠে বসে চোখজোড়া আটকালো সে জানালায়,মেয়েটির দিকে।

চেহারা দেখা যাচ্ছে না।বসে থাকার দরুন,মাটি ছুইছুই চুলগুলো,চেহারাসহ দেহের প্রায় পুরোটাই ঢেকে দিয়েছে তার।কোকড়া চুল কখনো এতোবড় হয়,তা হয়তো প্রথমবার দেখলো আরাব।ওর আপুরও তো চুল কোকড়া,কিন্তু তা তো ঘাড় থেকেই নামেনি।অবশ্য এ চুলগুলোকে কোকড়া বলাটা ভুলই হবে।এদের ঢেউ খেলানো বললে বেশি মানানসই হবে।সাদা ওড়নার বেশ অনেকটা মেঝেতে ছড়িয়ে।বা হাতটা দিয়ে হাটু জরিয়ে বসে আছে মেয়েটা।অচেনা অজানা এই মেয়েটার চেহারা ঢেকে রাখা চুলগুলোকে নিজহাতে সরিয়ে দেওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা হলো আরাবের।তৎক্ষনাৎ আওয়াজ‌ এলো,

-উঠে পরেছো তুমি?

অরুনাভ দাশের গলা শুনে‌ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আরাব।একজন বেশ স্বাস্থ্যবান লোক।মাথার টাকটার সাথে ভুড়িটা মানানসই।চঞ্চলতার সাথে উন্মুক্ত গায়ের পানি মুছতে ব্যস্ত তিনি।চেহারায় গম্ভীরতা নেই একদমই।মেয়েটার দিকে আরেকপলক তাকিয়ে আরাব প্রশ্ন ছুড়লো ভদ্রলোককে,

-জ্বী।আমি…কোথায়?

-পৃথিবীতেই আছো।নাকি ঘরটা সগ্গের মতো দেখাচ্ছে?

মাথা মুছে গামছাটা দড়িতে ছড়িয়ে দিতে দিতে কথাগুলো বললেন অরুনাভ দাশ।ধুতি আর গেন্জি ছিলোই গায়ে,এবার কাধে ঝুলানো সুতাটা টেনে ফতুয়াটা পরে নিলেন।তারপর কি মনে করে হন্তদন্ত হয়ে আবারো বেরিয়ে গেলেন।এককোনে বসে থাকা মেয়েটাকে লোকটা লক্ষ্যই করলো না দেখে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আরাব।মেয়েটার দিকে তাকালো।আস্তেধীরে একটু ঘুরে বসতে যেতেই ব্যথায় কুকড়ে উঠলো ও।আবারো টান পরেছে কোমড়ের দিকে কোনো ক্ষততে।

নিজের উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকালো আরাব।ফর্সা শরীরের মধ্যে রক্তজমা কালোদাগের ছোপ,কাটাছেড়ার অভাব নেই।কপালের বা দিকটা ব্যথায় টনটন করছে।আঙ্গুল ছুইয়ে বুঝলো সেখানে ব্যান্ডেজ দেওয়া।নিচের ঠোটেও ব্যথা।কেটে গেছে সেদিকটাও।আগের রাতের ঘটনার কথা মনে পরলো ওর।প্রথমে বাইক এক্সিডেন্ট,তারপর ওই‌ লোকগুলোর এসে ওর এক্সপেরিমেন্টের পেপার চুরি করে নিয়ে যাওয়া।সবটা ভেবে একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো ও।

আরাবের সে মৃদ্যু আর্তনাত শুনেই ততক্ষনে ধরফরিয়ে উঠে বসেছে দোয়া।নিজের অবস্থান পর্যবেক্ষন করলো।ওড়না যদিও ঠিকই ছিলো,তবুও টেনেটুনে আরেকটু ঠিক করে আস্তে করে উঠে দাড়ালো।ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু অরুনাভ দাশের কথার নড়চড় করার ইচ্ছা ছিলো না ওর এবারও।মাথা নিচু করে মনেমনে শুধু দোষারোপ করতে লাগলে নিজেকে।এ ঘরে এভাবে ঘুমিয়ে পরাটা,প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো ওর এটা ভেবে।অবশ্য ঘুমেরই বা কি দোষ?মাঝরাত অবদি পড়া শেষ করে,কাথা সেলাইয়ের কাজে বাকি অর্ধেক রাতের ঘুমকে বিসর্জন দিতেই হয় প্রতিরাতে।দুটো টাকা বাড়তি উপার্জনের জন্য।কিন্তু গতরাতে কোনোটাই হয়নি ওর।কিছু অন্ধকার অতীতের হানায় কাদতে কাদতে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো ও।

বাড়িতে ফিরে আরাবকে ফেলে আসার অপরাধবোধে অস্থির হয়ে উঠেছিলো দোয়া।তাই ওকে সাহায্য করার জন্য অরুনাভ দাশকে পাঠিয়ে দেয়।সে নাকি গিয়ে দেখে কিছু লোককে আরাব মারধর করছিলো।সে পৌছানোর আগেই একজন এসে নাকি পেছন থেকে আরাবের মাথায় বারি মারে।কিছু কাগজপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে লোকগুলো,আর অজ্ঞান হয়ে পরে ছিলো আরাব।তাই বাধ্য হয়ে ওকে বাড়িতেই নিয়ে আসেন অরুনাভ দাশ।

ভোরের দিকে নিচতলা থেকে অরুনাভ দাশের আওয়াজ পেলো দোয়া।ওকেই ডাকছিলেন উনি।চোখটা ডলে বুঝলো তখনো ভোরের আবছা অন্ধকারে চারপাশ ঢাকা,পুরোপুরি সকাল হয়নি।অরুনাভ দাশ তখন পুজোর কাজে বাইরে যাচ্ছিলেন।আরাবের জ্বর ছিলো।তাই দোয়াকে ডেকে জলপট্টি দিতে বলেছিলেন উনি।প্রথমবারের মতো তার কোনো কাজ না করার মনোভাব ছিলো দোয়ার মাঝে।কিন্তু পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতা কোনোভাবেই চায়নি ও।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাই আরাবের মাথায় জলপট্টি দিতে এসেছিলো দোয়া।অরুনাভ দাশ না ফেরা অবদি দোয়াকে আরাবের কাছেই থাকতে বলেছিলেন।সেটাও অমান্য করে নি ও।আরাবের জ্বরটা কমে আসতে দেখে জানালার ধারে গিয়ে বসে গিয়েছিলো।এরইমাঝে চোখ কখন লেগে গেছে,টেরই পায়নি।সরে দাড়াতে গিয়ে কাঠের জানালায় দোয়ার কনুই লেগে খট করে শব্দ হলো।

আরাব চিন্তাজগত থেকে বেরোলো।পারিপার্শিক উপেক্ষা করে অপলক দৃষ্টিতে দোয়ার দিকে তাকিয়ে ও।মেয়েটা ঘুম ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে গেছে।পুরো চেহারা এখন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তার।অসম্ভব মায়াজড়ানো মুখটা।গায়ের রঙটা একটু চাপা।ফর্সা না বললেও,উজ্জল শ্যামবর্নের বলাই চলে।ভ্রু,ঘন পাপড়ির সে নামিয়ে রাখা চোখজোড়া দেখে মন আওয়াড়ে বাধ্য,মাশাল্লাহ্!হাত,পা,নাক,গলা বা কান,কোথাও গয়নার ছিটেফোটাও নেই।কাচা ঘুমভাঙা চেহারাটায় আকস্মিকতার ছাপ।কপালের সামনে আসা কিছু চুল কানে গুজে দিয়ে মাথা নিচু করে রেখে সমানে হাত কচলাচ্ছে।এমন ভাব,যেনো কতোবড় অপরাধে অপরাধী সে!আরাব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো,

-কাল রাতে আপনার সামনেই কি আমার বাইকটার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো?

…..

-এটা কোন জায়গা?

……

-আমার জন্য আপনাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাইনা?আ্…আ’ম সরি।আসলে কালরাতে ওভাবে লোকগুলো পেছন থেকে এটাক করবে বুঝতে পারিনি।

দোয়া চুপ করেই রইলো।ওর চেহারায় রাগের আভাস খুজে পেলো আরাব।যেটা দেখে মনেমনে আহত অনুভব করলো ও।পরপরই ভাবলো মেয়েটার রাগ অস্বাভাবিক না।রাগ করারই কথা।একজন অচেনা,অজানা মানুষকে এভাবে ঘাড়ে চাপতে দেখলে যে কারো রাগই হবে।তাই আর কিছু বললো না ও।অরুনাভ দাশ ঘরে ঢুকলেন।ঠোটে বড়সর হাসি টেনে এগিয়ে এসে খাটে বসে বললেন,

-কি অবস্থা?এখন কেমন অনুভব করছো?

-জ্বী।বেটার।আপনি…

-আমি অরুনাভ দাশ,পেশায় নাড়িটেপা ডাক্তারই বলা চলে।আর এ জায়গার নাম রায়নগর।কালকে রাস্তায় তো তোমার বাইকটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে তুমি।হাতেপায়েও বেশ অনেকজায়গায় স্ক্র্যাচ আছে দেখো।যেহেতু অতো রাতে কোনো ডাক্তারখানা খোলা পাবো না,আবার তোমাকে ওভাবে রাস্তায়ও ফেলে আসা সম্ভব না,আমার বাড়িটাও কাছেই,আর ভগবানের কৃপায়,আমিও একটাইপ ডাক্তার কিনা,তাই এখানেই নিয়ে আসলাম তোমাকে।আপাতত তুমি আমার এই ছোটখাটো চিলেকোঠায়।

লোকটা বিশুদ্ধ হিন্দু,ওনাকে দেখেই তা বুঝেছিলো আরাব।আর ঘটনাও তেমনটাই,যেমনটা ও আন্দাজ করেছিলো।দোয়ার পরিচয়ের প্রতি কৌতুহল নিয়ে আরো একবার দোয়ার দিকে তাকালো ও। আগের মতোই নিচদিক তাকিয়ে দোয়া।ওর ভাবনাজুড়ে আপাতত অন্যকিছুই বিচরন করছে।দোয়ার দিকে আরাবের চাওনি চোখ এড়ায়নি অরুনাভ দাশের।উনি গলা ঝেরে চশমাটা মুছতে মুছতে বললেন,

-ও দোয়া।শেষরাতের জ্বরটায় আমার ওষুধ কাজে দেয়নি,ওর‌ জলপট্টিতে কমেছে।বলতে পারো একপ্রকার ওর জন্যই বেচে গেছো তুমি।ওই তো প্রথম দেখেছিলো তোমাকে।

দোয়া!নামটা মনেমনে দুবার আওড়ালো আরাব।এই মেয়েটাই কি ওকে প্রথম দেখেছিলো?ওই মেয়েটার মুখ দেখেনি আরাব।সে তো শাড়ি পরা ছিলো।আর যদি এই মেয়েই হয়,ওকে বাচাবেই,তবে ওভাবে চলে গিয়েছিলো কেনো তখন?যাইহোক,এই দোয়া,দোয়া হয়েই ওর জীবনে এসেছে।বাচিয়ে নিয়েছে ওকে।কৃতজ্ঞতার চোখে দোয়ার দিকে তাকালো আরাব।কিন্তু সে নিরব।কোনো কারনে যেনো আরাবের উপর রেগে আছে ও এমন মনে হচ্ছে দেখে।ওর অপরাধবোধ হচ্ছে,সেটা বুঝেও দোয়া কোনো সৌজন্যতা দেখাচ্ছে না,এটা ভেবে আরাবেরও রাগ হলো কিছুটা।দোয়ার‌ দিকে তাকিয়ে এবার খানিকটা শক্ত কন্ঠে বললো,

-আ’ম এক্সট্রেমলি সরি।আপনাদেরকে ঝামেলায় ফেলার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।কাল বাইকটা এক্সিডেন্টের পর আপনারা আমাকে…যাইহোক,আপনাদেরকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য আবারো দুঃখিত।

আরাবের গলার স্বর বুঝে দোয়ার দিকে তাকালেন অরুনাভ দাশ।দোয়ার প্রতি তার লব্ধজ্ঞান বলছে,ছেলেটার সাথে সৌজন্যমুলক কোনো কথাই বলেনি ও।ওর আচরনেই এরকমভাবে কথা বলছে ছেলেটা।কে বলবে,কালরাতে এই মেয়েই ছেলেটাকে সবরকমভাবে বাচানোর জন্য অস্থির হয়ে পরেছিলো।আর এখন সামনাসামনি এমন চুপ করে আছে।মেয়েটার এই চাপা স্বভাব কবে যাবে,কিভাবে যাবে ভেবে ছোট একটা শ্বাস ফেললেন উনি।তারপর আবারো হাসি দিয়ে বললেন,

-আরে না!কিসের ঝামেলা বলো তো?তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলেই এমনটাই করতাম আমরা।তাছাড়া তুমি আমাদের জায়গায় থাকলে কি করতে বলোতো?অবশ্যই এক্সিডেন্টে তীব্র ব্যথায় কাতরাতে থাকা কাউকে ওভাবেই রাস্তায় ফেলে যেতে না তাইনা?

-তবুও।আমাকে এখানে এনে…

-ছাড়ো তো ওসব কথা!এবার বলো,কি নাম তোমার?বাসা কোথায়?

-আমি তাহ্সানুল আরাব।বাসা ঢাকাতেই।

-বাহ্!তা আরাব?তোমার বাবার নাম?

-তৌফিক ওয়াহিদ।

অরুনাভ দাশের চেহারায় বিস্ময়।বড়বড় চোখ করে,ঠোটজোড়া খানিকটা ফাকা রেখে বললেন,

-তুমি কি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট তৌফিক ওয়াহিদের কথা বলছো?

-জ্বী।

অরুনাভ দাশ একটু থেমে হেসে বললেন,

-আরে!তুমি ওনার ছেলে?আগে বলবে তো!শহরের এতোবড় নামকরা শিল্পপতির ছেলে তুমি।তাছাড়া উনি মানুষ হিসেবেই অনেক ভালোমানুষ।উনি তো…

মাথা নিচু করে মৃদ্যু হাসছিলো আরাব।বাবার পরিচয়টা দিলে এভাবেই প্রতিক্রিয়া হয় সবখানে।যেটা ওর মোটেও পছন্দ না।এই শিল্পপতির ছেলে পরিচয়ে সাধারনের মাঝে একঘরে হয়ে যাওয়ার চেয়ে,আর পাঁচটা খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনই ভালো।অরুনাভ দাশের কথা শেষ হওয়ার আগেই ডাক শোনা গেলো,

-আপুনি?আপুনি?কই তুই?

কোনো অল্পবয়সের ছেলের গলা।দরজা দিয়ে বাইরে তাকালো আরাব।এতোক্ষনে মাথা তুলে বাইরে তাকালো দোয়াও।অরুনাভ দাশ বললেন,

-ওইযে,ডাক পরেছে তোর!একমুহুর্তও চোখের আড়াল হতে দেয়না!এই দিয়ানটা কি তোকে ছাড়া কিছুই করতে পারে না দোয়া?

-আমিই তো ওর সব কাকাবাবু।

দোয়ার স্পষ্ট জবাব।গলার স্বর শুনে আরাব তাকালো ওর দিকে।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।টানাটানা চোখজোড়ার চাওনি যেনো আরাবের ভেতরটায় দমকা হাওয়ার মতো ঝাড়া দিয়ে গেলো।চোখ সরিয়ে নিলো দোয়া।আর কপাল কুচকে আসলো আরাবের।এই মেয়েটার ওর প্রতি কেয়ারিং,আবার স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠা রাগ,চোখে চোখ রেখে কথা বলা কিংবা চোখ সরিয়ে নেওয়া সবকিছুতে আলাদা ভাব খুজে পাচ্ছে ও।সবটা যেনো কোনো ধোয়াশা,অস্বাভাবিকতার মধ্য‌ দিয়ে যাচ্ছে।দোয়া দুপা এগিয়ে সরু গলায় বললো,

-আমি এখন আসি কাকাবাবু।ছোটু ডাকছে।এ সকালে এখনো অবদি চুলো জ্বলেনি।

-আচ্ছা আয়।আর শোন,আজকে চারতলায় নিমন্ত্রন আছে আমার।দুপুরে আর আমার জন্য তুই রান্না করিস না।তবে আরেকটাকাজ করিস,আজকে তোর সমরেশ কাকু মাছ দিতে আসলে,শিং মাছ নিয়ে রাখিস কেজি দুয়েক।ওটারই ঝোল করবি।এই ছেলের অনেক ব্লাড লস হয়েছে কালকের এক্সিডেন্টে।শিং মাছ খাওয়াবি একে।তুমি শিং মাছ খাও তো আরাব?আমাদের দোয়ার হাতের রান্না কিন্তু অনেক ডেলিশিয়াস!

একপলক আরাবের দিকে তাকালো দোয়া।সরু চাওনি।আরাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।পরিস্থিতি বলছে,আরাবের আগমনে বিরক্ত বলে এমন রিয়্যাক্ট করছে দোয়া।কিন্তু দোয়ার রিয়্যাক্ট বলছে,কারনটা আরাবের আগমন না।রিয়্যাক্টটাও বিরক্তি না।কারন কোনোভাবে আরাবের কোনো কাজ,আর রিয়্যাক্টটা কোনোভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিমান।দোয়া বলে উঠলো,

-আপনার কাগজপত্রগুলো নিয়ে গেছে,আইডি কার্ড কেউ নিয়ে যায়নি।চিন্তিত হবেন না।

ভ্রুকুটি করে তাকালো আরাব।যার এতোটুকোও দোয়ার চোখে পরেনি।সোজা এগিয়ে বিছানার এককোনের তোষক উচিয়ে তার নিচ থেকে কার্ডটা বের করে অরুনাভ দাশের হাতে ধরিয়ে দিলো ও।কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।পলকহীন ভাবে দোয়ার সে প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে রইলো আরাব।কার্ডটা ওর সামনে তুলে ধরলেন অরুনাভ দাশ।ধ্যান ভেঙে তড়িঘড়ি করে ওটা হাতে নিলো ও।ওটা হারায়নি দেখে খানিকটা স্বস্তি মিলেছে আরাবের মনে।কিন্তু ওর এতোদিনের এক্সপেরিমেন্টের কাগজপত্র নিয়ে কেউ আবার তার বাজে ব্যবহার না করে,সে চিন্তাটাও ঘিরে ধরতে লাগলো ওকে।

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
সুচনা পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here