তবু সুর ফিরে আসে পর্ব ৩৮

0
498

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৩৮ পর্ব

ন‌ওশাদের ফ্লাইট দোহা হয়ে যখন মিয়ামি পৌছালো তখন সেখানে সন্ধ্যা পার হয়েছে। ভাগ্নে ইরফানকে আগেই সে জানিয়েছিল কখন আসছে তারা । ইরফান যথা সময়েই এয়ার পোর্ট চলে এসেছে। ইরফান ছাড়া আর কেউ জানে না যে ওরা আসছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই ওদের দেখেই ইরফান ছুটে এলো । ন‌ওশাদকে জড়িয়ে ধরলো।
মামা, নানাভাইকে দেখলে আম্মা সবচেয়ে বেশি সারপ্রাইজ হবে !
সেজন্যই বলি নাই তোর আম্মাকে।
নিশাল আর হেরা হুইলচেয়ারে করে ফরহাদ আজমিকে নিয়ে এলো ।
কেমন আছেন নানা ভাই ইরফান পা ছুঁয়ে সালাম করলো তার নানাকে।
ভালো অনেক লম্বা জার্নি করলাম রে।
আপনাকে দেখলে আম্মা খুব অবাক হবে !
তোর আম্মা কোথায় ?
আম্মা তো বাসায় । চলেন অনেকক্ষণ সময় লাগবে বাসায় যেতে।
মামি কেমন আছেন ?
হেরা হেসে বলল,জ্বি ভালো।
ন‌ওশাদ বলল, হেরা ও ইরফান বুবুর বড় ছেলে । বুঝলে ও ছোটবেলা থেকেই আমার খুব নেওটা ।
এত দুষ্ট ছিল কি বলবো তোমাকে !
মামা আপনিও কম দুষ্টামি বুদ্ধি দিতেন না আমাদের। আপনার দেয়া বুদ্ধিতে কত দুষ্টুমি করতাম আর আম্মার হাতের মার খেতাম আমরা দুইভাই।
ন‌ওশাদ হাসছে।
আপনার কথা শুনেছি বুবুর কাছে অনেক , হেরা বলল।
আম্মা তো ঢাকা থেকে আসার পর আপনার কথা প্রতিদিন গল্প করে মামি।
নিশাল কি খবর তোর অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস?
ভাইয়া দারুন তুমি কেমন আছো?
গাড়িতে উঠে হেরা অবাক হয়ে দেখছে আশেপাশটা। এ যেন এক নতুন জগৎ ওর কাছে।
কতক্ষণ লাগবে জান্নাতের বাসায় যেতে বাবু ?
আব্বা আর বেশি সময় লাগবে না ঘন্টা খানেক এর মধ্যে আমরা পৌঁছে যাব ।
মামা নানাকে নিয়ে আসবেন সত্যিই কল্পনার বাহিরে ছিল।
আব্বা হঠাৎ করে বলল , বুবুর বাসায় যাবে আমি আব্বার ইচ্ছে গুলো পূরণ করার চেষ্টা করি । দেখলাম ভিসাও পেয়ে গেছি নিয়ে চলে এলাম।
খুব ভালো করেছেন মামা।
নিশাল হেরাকে আশেপাশের যা চোখে পড়ছে কোনটা কি বুঝাচ্ছে। হেরা অবাক বিস্ময়ে দেখছে।
এক ঘন্টার উপর লাগলো ওদের ওয়েস্ট প্লাম বীচ এলাকায় ন‌ওশাদের বোন জান্নাতের বাসায় আসতে।
একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো । এখানে বড় ছেলে ইরফানের সঙ্গে থাকেন জান্নাত আজমী। আজ পনের বছর হবে এই দেশে স্থায়ী হয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ব‌উ বাচ্চা নিয়ে থাকে নেপোলস এ ।
দীর্ঘ জার্নি করে ফরহাদ আজমী খুব ক্লান্ত । ন‌ওশাদ আর ইরফান ধরে ধরে গাড়ি থেকে নামালো তাকে।
নিশাল তাদের লাগেজ নামাতে নামাতে বলল, পাপা আমরা এক কাজ করি দাদা ভাই কে দরজায় দাড় করিয়ে রাখি ফুপি এসে দেখলে কি করে দেখি।
ন‌ওশাদ ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ঠিক আছে ।
ভাইয়া ফুপিই খুলবে তো দরজা ?
আম্মা, ছাড়া এখন বাসায় বড় কেউ নেই । আব্বা হাঁটতে যায় এই সময় । তাই আম্মাই খুলবে, ইরফান বলল।
ওরা ফরহাদ আজমী কে দরজায় দাড় করিয়ে রেখে কলিং বেল দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
দুবার কলিং বেল বাজার পর জান্নাত আজমী দরজা খুলে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তার আব্বাকে।
ফেলে দিবি তো জান্নাত , ফরহাদ আজমী মেয়েকে ধরে বললেন।
ন‌ওশাদকে দেখে বুবু বলে উঠলো, তুই আগের মতই আছিস এরকম সারপ্রাইজ কেউ দেয় । আমি কোন দিন ভাবি নাই আব্বাকে আমার বাসায় দেখব চোখে পানি চলে এসেছে জান্নাত আজমীর। তোরা সবাই আসবি ইরফান জানতো তাই না ?
আম্মা মামা বলল তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে তাই বলি নাই।
হেরা বুবুকে জড়িয়ে ধরলো।
তুমিও বললে না হেরা ?
বুবু আমিও আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি আপনার ভাইয়ের মত। আর এই আইডিয়া হলো আমাদের নিশালের । আপনি ঢাকায় যখন ছিলেন তখন‌ই প্ল্যান হয়েছে ওর ছুটিতে আমরা এখানে আসব।
তাই ! আমার আজ মনটা খুব খারাপ ছিল তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর সুন্দর একটা দিন এসেছে।
মন খারাপ কেন বুবু দুলাভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে , ন‌ওশাদ বোনকে ধরে হাসতে হাসতে বলল।
না রে বাবু এখানে আমাদের এক পরিচিত ভাবি অসুস্থ তাই মনটা খারাপ। খুব হাসিখুশি মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছেন তাই মনটা খারাপ ছিল।
এক নিমিষে পুরো বাসা আনন্দে ভরে গেল ওদের। হেরা নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব আনন্দ পাচ্ছে। নতুন লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। সবাই ওকে কত সহজে আপন করে নিচ্ছে। ইরফানের স্ত্রী মৌ তার থেকে কয়েক বছরের বড় হবে মেয়েটা ওকে দেখে খুশিতে আত্মহারা।
হেরাকে ধরে বলল, আম্মা বাংলাদেশ থেকে আসার পর শুধু আপনার কথা গল্প করে মামি। এত তাড়াতাড়ি দেখা হবে কল্পনাও করিনি।

পরদিন সকালে ন‌ওশাদ উঠলেও জেট ল্যাগ এর জন্য হেরা কখনো ঘুমে কখনো ঘুমের ঘোরের মধ্যে আছে।
সকালে নিশাল এসে দরজায় নক করলো যখন তখন ন‌ওশাদ জেগে গেছে , পাপা আসব?
এসো বাচ্চা।
পাপা দাদা ভাইয়ের জন্য ঘুমাতে পাচ্ছি না !
কেন?
আমাকে বারবার ধাক্কা দিয়ে বলছে তোর স্কুল নেই বাবু উঠ স্কুলে যা। আবার আমাকে ভেবেছে তুমি । ঘুম ঘুম চোখে নিশাল বলল। আমি এখানে সোফায় ঘুমাই ?
ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে সোফায় কেন ঘুমাবে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ো বেড টা তো যথেষ্ট বড়।
নিশাল ন‌ওশাদের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ন‌ওশাদ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনেক বছর পর ছেলে এসেছে ওর সঙ্গে ঘুমাতে। ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর রাতে ছেলের ঘরে সে ঘুমাতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । ছেলে লজ্জা পেতো । গীতি যাওয়ার পর রাতে প্রায় সময় সে নিশালের রুমে গিয়ে ওর পাশে ঘুমাতো। আজ অনেক দিন পর ছেলে নিজে থেকেই এসেছে পাপার কাছে ঘুমাতে। ন‌ওশাদ ঘুমন্ত ছেলের মুখটা দেখছে। কত মায়া একটা মুখকে ঘিরে।
নিশাল যতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল ন‌ওশাদ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই র‌ইলো। ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিশাল উঠে পড়লো।
কি ঘুম শেষ তোমার?
হুম টাইমিং চেন্জ হয়েছে না, বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। উঠেই পড়ি।
ঠিক আছে আমি ও উঠব এখন।
মামনির কি অবস্থা ?
যা দেখছো ও উঠতে পারবে না খুব টায়ার্ড হয়ে আছে। প্লেনে ঘুমাতে পারেনি ।
নিশাল উঠে চলে গেল রুম থেকে।
ন‌ওশাদ ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে বুবুর সঙ্গে তার দেবর আহসান ভাইয়ের বউ রুমানা ভাবি কিচেনে । রুমানা ভাবিরা এখানেই ফ্লোরিডাতে অনেক বছর। বুবুর বাসায় আসলে দেখা হতো আগে। গীতিকে নিয়ে যখন আসতো গীতি রোমানা ভাবির সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতো । ঘুরতে যেতো, হৈচৈ করতো। গীতি আর ভাবির অন্য রকম একটা সম্পর্ক ছিল যতদিন বেঁচে ছিল। গীতি মারা যাওয়ার পর এই প্রথম ভাবির সঙ্গে ন‌ওশাদের দেখা হলো।
ন‌ওশাদকে দেখে রোমানা এগিয়ে এলো, কেমন আছেন ন‌ওশাদ ভাই?
ভালো আছি । অনেক দিন পর আপনার সঙ্গে দেখা। আপনি ঢাকায় যান কিন্তু আমার বাসায় যান না এই সেই বাহানা দিয়ে চলে আসেন ভাবি।
না ভাই খুব কম সময়ের জন্য গেছি তাই আপনার বাসায় যেতে পারিনি।
বুবু আর তার ছেলের বউ মৌ ন‌ওশাদকে ব্রেকফাস্ট খেতে দিতেই রোমানা ভাবির সঙ্গে আর কথা এগোলো না।
ব্রেকফাস্টের পর ন‌ওশাদ বাসার পিছনের বেক ইয়ার্ডে রাখা চেয়ারে এসে বসলো। ছায়ায় বসে আশেপাশটা দেখছে। নিশাল রোমানা ভাবির ছেলে অহির সঙ্গে ঘুরছে । কাছাকাছি বয়সী তাই ভাব ওদের আগে থেকেই।
একটুপর রোমানা ভাবি দুই কাপ চা নিয়ে ন‌ওশাদের কাছে এগিয়ে এলো ।
সামনে রাখা চেয়ার টাতে বসতে বসতে বলল, অনেক বছর পর আপনার সঙ্গে দেখা ন‌ওশাদ ভাই।
হ্যাঁ । আমি ইউএসএ আসলে বছরে একবার কি দুইবার বুবুকে দেখতে আসি কিন্তু এখন আপনার সঙ্গে দেখা হয় না কেন জানি !
আমার বাসায় তো যান না , দেখা কিভাবে হবে বলেন ?
ভাবি আসি শুধু বুবুকে এক নজর দেখতে । একদিন থেকেই চলে যাই তাই দেখা হয় না। আপনি তো ঢাকা যান বাসায় আসেন না কেন?
ন‌ওশাদ ভাই আসলে ইচ্ছে করে যাই না , ঠান্ডা গলায় বলল রোমানা ‌। গীতি নেই বাসাটা দেখতে ইচ্ছে করে না। তাই যেতাম না ।
রোমানার চোখ ভিজে গেছে সে অন্য দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে। এখানে যখন আপনি গত ছয় বছরে যত বার এসেছেন, ইচ্ছে করে আপনার সামনে আসিনি। গীতি ছাড়া আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করতো না। আপনার কষ্ট ভরা মুখটা দেখতে ইচ্ছে করতো না ভাই। কারণ আমি তো জানি আপনারা দুজন দুজনার কি ছিলেন ।
ন‌ওশাদ পিছনের খোলা মাঠটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে চুপচাপ।
আপনাদের বিয়ের পর আমি আর গীতি এক‌ই মনের যন্ত্রণা নিয়ে বড় ভাবির বাসায় অনেক দিন ছিলাম বলেই আমাদের দুজনের সম্পর্ক টা অন্য রকম ভাবে তৈরি হয়ে ছিল।‌ ও আপনাকে কাছে পেতো না আমি আহসান কে পেতাম না । দুজনের কষ্ট এক রকম ছিল তাই মনের মিল হতে বেশি সময় লাগেনি আমাদের। আমি এখানে চলে আসার পরেও গীতির সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ থাকতো আপনি তো জানেনই।
হ্যাঁ । ও আপনার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে।
এমন কোন দিন যেতো না আমার সঙ্গে ওর কথা হতো না। আমি দেখা গেছে নিজের বোনদের ফোন দিতাম না প্রতিদিন ,কিন্তু গীতির সঙ্গে প্রতিদিন কথা না হলে খালি খালি লাগতো আমার। আপনাকে গীতি কতটা ভালোবাসতো, আমার তো মনে হয় এক আপনি জানেন আরেক আমি জানি। ওর সব কথা শুরু হতো ন‌ওশাদ দিয়ে শেষ হতো ন‌ওশাদে গিয়ে।
কিন্তু দেখেন আপনার বন্ধু স্বার্থপরের মত আমাকে রেখে চলে গেছে ভাবি , দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ন‌ওশাদ !
মৃত্যুর কাছে আমরা সবাই স্বার্থপর ভাই।
জানি না ভাবি ।
একটা কথা গত ছয় বছর আমি আমার মাঝে নিয়ে বেড়াচ্ছি আপনাকে বলতে পারিনি ।
কি কথা ভাবী ? ন‌ওশাদ তাকালো রোমানার দিকে।
রোমানা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে র‌ইলো তারপর বলা শুরু করলো , যেদিন গীতি মারা যায় ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। ও নিজেই ফোন দিয়েছিল সেদিন, এই সেই কথার মধ্যে হঠাৎ আমাদের মধ্যে মৃত্যু নিয়ে কথা উঠলো । গীতি বলে উঠলো আমি যদি মরে যাই আগে, আমি অন্য ব‌উদের মত চাইব না আমার ন‌ওশাদ একা আমার বিরহে জীবন পার করুক আমার সৃত্মি নিয়ে।
আমি হেসে তখন গীতিকে বললাম ,কি বলো এসব ! আমি আহসান কে বলি সাবধান বিয়ে করবা না । আমার ঘরে আরেকজন কে নিয়ে ফুর্তি করবা তা হবে না।
গীতি বলল, না ভাবি ন‌ওশাদ কোন দিন একা থাকতে পারবে না। আমি চাইনা এই ঘর টাতে ন‌ওশাদ একা কষ্টে কষ্টে জীবন কাটাক। ছেলে, ছেলের ব‌উ ওকে করুনা করুক বৃদ্ধ বয়সে আমি চাই না। ন‌ওশাদ আমার শরীরটা না ঘেঁষে ঘুমাতে পারে না , সেই মানুষ একা এই সংসার কিভাবে সামলাবে ? ও অফিস থেকে বাসায় ফিরে যদি দেখে আমি নেই কোন কারণে, ফোন করে করে অস্থির করে দিবে। কারন ও শূন্য ঘরে থাকতে পারে না। আমি ওকে ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকলে ও ঘুমাতে পারে না, খেতে পারে না। এই যে এত বিদেশ ঘুরে বেড়ায় যত দিন থাকবে বাহিরে, তার চোখে ঘুম নেই, খেতেও পারে না কিছু। তাই আমি চাই আমি মারা গেলে ন‌ওশাদ আবার বিয়ে করুক। একটা মানুষ খুঁজে নিক যে ওর একাকীত্বের সঙ্গী হবে, ওর ঘুমের, ওর খাওয়ার, ওর সুখে দুঃখের সব কিছুর সঙ্গী হবে । ওর যত্ন করবে, ওকে খুব ভালোবাসবে। যাকে আঁকড়ে ধরে ন‌ওশাদ বেঁচে থাকবে। কথা গুলো বলছে আর রোমানার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে।
গীতির মৃত্যুর খবরটা আমাকে অসুস্থ করে দেয়। আমি মেনেই নিতে পারিনি । যার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা আগে কথা বললাম হঠাৎ সে নেই ! ও কি বুঝতে পেরেছিল তাই এই কথা গুলো আমাকে বলল আমি ভেবে কূল পাই না এখনো। আপনি হয়তো জানেন না আমি অসুস্থ হয়ে হসপিটালে পর্যন্ত ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম তখন। এত বড় আঘাত ছিল আমার জন্য।
আমি আপনাকে কিভাবে গীতি বিহীন দেখব সেই চিন্তা করে আসতাম না আপনার সামনে। দেশে গেলে যেতাম না আপনার বাসায়। গীতির সাজানো সংসার টা গীতিকে ছাড়া দেখতে আমার কষ্ট হোক আমি চাইতাম না।
ন‌ওশাদ চুপ করে শুনছে রোমানার কথা গুলো।
আমি এই ছয় বছরে আপনাকে বলতে পারিনি গীতি কি চাইতো। শুনতাম আপনি এত সৃত্মিকাতর ছিলেন গীতিকে নিয়ে আমার সাহস হতো না গীতির ইচ্ছে টা আপনাকে বলতে। শুধু ভাবিকে বলতাম ন‌ওশাদ ভাইকে বিয়ে করিয়ে দেন একটা। মনে মনে মেয়েও খুঁজতাম আপনার জন্য । কিন্তু আপনার উপযুক্ত, আপনাকে খুব ভালোবাসবে এমন মেয়ে পাইনি। কারো উপর আস্থা রাখতে ভয় হতো।
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে র‌ইলো রোমানা । আপনি বিয়ে করেছেন শুনে খুব খুশি হয়েছি। বড় ভাবি ঢাকা থেকে এসে বলল, ব‌উ খুব যত্ন করে আপনার কিন্তু বয়স টা একটু কম । তখন খুব স্বস্তি পেয়েছি। এখন সত্যি করে বলেন তো কেমন আছেন ভাই ?
ন‌ওশাদ রোমানার দিকে মুখ তুলে তাকালো‌। ভাবি আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনার বন্ধু কি চাইতো এত দিন জানতাম না । কিন্তু এখন যখন শুনলাম তাই বলছি, আপনার বন্ধু যেমন চাইতো তাই আছি । খুব ভালো আছি। মেয়েটার বয়স খুব কম তারপরেও আমাকে ভালোবাসতে সময় নেয়নি । আমিও ওকে আঁকড়ে ধরে ভালো আছি। প্রথম প্রথম অনেক দ্বিধা ছিল কিন্তু একটা সময় আর দূরে থাকতে পারিনি। ওকে ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারিনি।
শুনে খুব ভালো লাগছে ভাই । একটা কথা কি জানেন প্রকৃতিই কোন শূন্য স্থান রাখে না।
না ভাবি গীতির শূন্যতা আজীবন আমার মাঝে থাকবে। ওর জন্য হাহাকার আমার ভেতরে নিয়েই আমি মরব একদিন। তবে হ্যাঁ হেরা কে আমি ভালোবাসি । ও ওর একটা আলাদা জায়গা নিয়ে আমার মাঝে বসবাস করে।
খুব ছোট মেয়ে তাই না।
হুম কয়দিন আগে বাইশ বছর হলো । সারাক্ষণ প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ায় আমার আশেপাশে। কোন চাহিদা নেই। সবচেয়ে পজেটিভ ব্যাপার টা হলো নিশাল ওকে আপন করে নিয়েছে।
আমিও এটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম ন‌ওশাদ ভাই। যাই হোক ভালো হয়েছে আপনার ছন্নছাড়া সংসার টা দেখার একজন মানুষ এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা গীতি যা চাইতো তাই হয়েছে, আপনার একা জীবনের সঙ্গী কেউ হয়েছে। বড় ভাবি আপনাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতো । এবার দেখলাম খুব রিল্যাক্স ।
বুবু আমাকে খুব ভালোবাসে তাই সব সময় চিন্তা করে।
আপনি এসেছেন শুনে সকাল সকাল চলে এসেছি । আপনাকে আর আপনার ব‌উ কে দেখব বলে। আচ্ছা মেয়েটা গীতির ব্যপারে কেমন সহনশীল? মানে গীতিকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই তো?
না গীতিকে নিয়ে সমস্যা থাকবে কেন ? আপনি দেখলেই বুঝবেন কেমন ।
শুনলাম গীতির বোনরা খুব আপসেট আপনার বিয়ে নিয়ে ।
স্বাভাবিক না । ওদের কথা বাদ দেন । সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবি।
ওদের কথার মাঝখানে হেরা ন‌ওশাদকে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে আসছে।
ঐ যে হেরা আসছে ভাবি ।ন‌ওশাদ বাসার পিছনের দরজার দিকে ইশারা করলো।
মাসাআল্লাহ ন‌ওশাদ ভাই খুব সুন্দর ব‌উ পেয়েছেন যতটা শুনেছি তার থেকেও বেশি সুন্দর।
ন‌ওশাদ হাসছে রোমানার কথা শুনে।
হেরা কাছে আসতেই ন‌ওশাদ বলে উঠলো, হেরা এই হলো রোমানা ভাবি বুবুর দেবর আহসান ভাইয়ের ওয়াইফ।
হেরা টুপ করে বসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ফেলল রোমানাকে।
আরে না না আমাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হবে না, রোমানা হেরাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ওর মেয়ে রুহি র চেয়ে দুই বছরের বড় একটা মেয়ে । রোমানা মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
সত্যি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে ন‌ওশাদ ভাই !
ন‌ওশাদ হাসলো হেরার দিকে তাকিয়ে। তোমার ঘুম কমপ্লিট।
আরো ঘুমাতে ইচ্ছে করছে , হেরা বলল।
আর ঘুমাতে হবে না এখন উঠে আশে পাশটা দেখো কত সুন্দর জায়গা , ন‌ওশাদ বলল!
নিশাল কোথায় ?
ভাবির ছেলের সঙ্গে ঘুরছে আশেপাশে কোথাও।
হেরা পাশে রাখা চেয়ারটাতে বসলো।
রোমানা বলল, আপনারা ঘুরতে যাওয়ার কি প্ল্যান করেছেন ন‌ওশাদ ভাই ?
ভাবি সবে এলাম দেখি আজ হয়তো বীচে বসেই কাটাব। অরলেন্ডো যাব এই সপ্তাহে। তারপর কোথায় কি, সব ঠিক করেছে ইরফান। ওকেই দ্বায়িত্ব দিয়েছিলাম।
কিছুক্ষণ পর হেরাকে সঙ্গে নিয়ে গল্প করতে করতে রোমানা ভাবি বাসার ভেতরে ঢুকে গেল। ন‌ওশাদ চুপচাপ বসে র‌ইলো অনেকক্ষণ। রোমানা ভাবির কথা গুলো অনেক দিন পর নাড়িয়ে দিলো ন‌ওশাদকে।
মনে মনে ভাবছে , গীতি সত্যি তুমি এভাবে ভাবতে? তাই বুঝি আল্লাহ আমাকে এভাবে বিয়েটা করতে বাধ্য করলো। তা না হলে তো কখনো আমি বিয়ে করবো ভাবতে পারিনি !
ন‌ওশাদ আকাশের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো উদাস হয়ে।
দুপুরের পর ন‌ওশাদ তার আব্বা, হেরা, নিশাল, বুবু, দুলাভাই , ইরফান আর তার নয় মাসের ছেলেকে নিয়ে ফ্লোরিডার বিখ্যাত প্লাম বীচে এসে হাজির হলো । হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার সামনে বিশাল আটলান্টিক । আটলান্টিকের নীল জলের ঢেউ তার মনের ভেতরে যেন আছড়ে পড়ছে। পৃথিবীটা সত্যি ই খুব সুন্দর! সাদা বালুর সৈকতে নানান দেশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে মহাসাগরের বিশালতার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ পানিতে নেমেছে। দুটো চাদর বিছিয়ে ওরা একটা গাছের ছায়ায় বসলো। সমুদ্রের পানি এখান থেকে যথেষ্ট দূরে কিন্তু দৃষ্টিসীমা যত দূর যায় তারচেয়েও বহু বহু দূর পর্যন্ত শুধু নীল আর নীল। দূরে ইয়ট গুলো সাদা বকের মত মনে হয়। সীগাল উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে। সব মিলিয়ে এ যেন এক স্বর্গ । হেরা চাদরে বসে তাকিয়ে শুধু নীল সমুদ্র আর আকাশ টাই দেখছে।
নিশাল আর ইরফান চলে গেছে পানির কাছে। বুবু আব্বাকে ধরে ধরে হাটাচ্ছে আর দুলাভাই ব্যস্ত নাতিকে সামলাতে। ওর মা আসতে পারেনি আজ, ওর কাজের জায়গায় একটা পার্টি আছে তাই।
হেরাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ন‌ওশাদ এসে পাশে বসলো।
কি ব্যাপার চুপচাপ কেন ?
হেরা ন‌ওশাদের কাঁধে মাথা রাখলো , এত বিশাল সমুদ্র দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ওমা মন খারাপ হলো কেন , অবাক হয়ে ন‌ওশাদ জিজ্ঞাসা করল?
এই সমুদ্রের কাছে আমরা কত ক্ষুদ্র তাই না !
হুম । মানুষ সমুদ্রের কাছে তো ক্ষুদ্র‌ই।
কিন্তু আমরা নিজেরা সেটা মানতে চাই না।
কেউ মানতে চায় না । আচ্ছা এত ভারী ভারী কথা কেন বলছো ?
এমনি । হেরা ন‌ওশাদের হাতটা ধরলো আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই এত সুন্দর পৃথিবী টা আপনি আমাকে দেখাচ্ছেন !
ভাষা যেহেতু জানো না তাহলে ধন্যবাদ টা দিও না । খুব ধন্যবাদ দেয়া শিখেছো তাই না ! ন‌ওশাদ হেরার গাল টেনে দিলো।
নামবে তুমি সমুদ্রে ?
না ! আমি এখানে আপনার ঘাড়ে মাথা রেখে শুধু তাকিয়ে দেখব এই সমুদ্র।
ঠিক আছে দেখো যেভাবে তোমার ভালো লাগে।
নিশাল আর ইরফান কিছু ছেলের সঙ্গে বালুর উপর বল নিয়ে দৌড়ালো কিছুক্ষণ। তারপর পানিতে নেমে ঝাঁপাঝাঁপি করলো।
হেরা ন‌ওশাদ , আব্বা ,বুবু আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে বসে র‌ইলো। কিছুক্ষণ ইরফানের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাটলো সে।
সূর্যাস্তের সময় ন‌ওশাদ হেরাকে নিয়ে পানির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। হেরার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিশাল সমুদ্রের বুকে রক্তিম সূর্য টাকে ডুবে যেতে দেখলো।
যখন ন‌ওশাদের হাত ধরে হাঁটছে হেরা, ওর বারবার মনে হচ্ছিল ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় এটা।‌ এ যেন স্বর্গের সুখ।

সন্ধ্যার অনেক পর ওরা বাসায় ফিরে এলো । ইরফান আগামীকাল থেকে ওরা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে সব বুঝিয়ে দিলো ন‌ওশাদকে। ন‌ওশাদ আসবে বলার পর সে অফিস থেকে সেভাবেই ছুটি নিয়ে রেখেছে।
এই কয়দিন পুরো ফ্যামিলি একটা ভেকেশন কাটানোর প্ল্যান করে ফেলল।
পরদিন আব্বাকে রোমানাদের বাসায় রেখে ওরা র‌ওনা হলো কেনেডি স্পেস সেন্টারের উদ্দেশ্যে। ওদের গাড়ি বিস্তৃর্ণ মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্চে কখনো, রাস্তার পাশে কখনো কমলা বাগান, কখনো লেক। স্বচ্ছ জলের সেই লেক গুলোতে কুমির থাকে বলতেই হেরা অবাক হয়ে তাকালো ন‌ওশাদের দিকে।
সত্যি বলছেন !
মামি আমাদের বাসার আশেপাশে যত লেক দেখেছেন ওখানেও আছে কুমির। হঠাৎ হঠাৎ দেখবেন মাটিতে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে।
কি স‌ংঘাতিক!
একটু সামনে যে ঘন জঙ্গল দেখবেন এই রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় জঙ্গল থেকে বের হয়ে কালো প্যান্থার গাড়িতেও কখনো কখনো আক্রমণ করে।
সত্যি ?
হ্যাঁ।
গল্প করতে করতে আর নতুন সব কিছু দেখতে দেখতে হেরা কেনেডি স্পেস সেন্টারে পৌঁছে গেল।
সেখানের থ্রি ডি হলে শো দেখে শুধু হেরা না নিশাল ও মুগ্ধ। হেরার কাছে মনে হচ্ছে, ব‌ইয়ে পড়েছিল সেই নীল আর্মস্ট্রং এর চাঁদে যাওয়ার গল্প। আজ সেখানের মাটিতে সে দাঁড়িয়ে আছে!
কি অদ্ভুত সেই অনুভূতি। হেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সব দেখছে।
মামনি !
হুম।
কেমন লাগছে তোমার ?
অদ্ভুত । আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না আমি এখানে এসেছি !
অনেক ছবি তুলেছি । তোমার ছবি তুলে দেই দাঁড়াও তুমি।
নিশাল হেরার প্রচুর ছবি তুলে দিলো।
ওদের দিনটা কেটে গেল স্পেস সেন্টারে ঘুরে। আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল ওরা বাসায় যাবে না সোজা অরলেন্ডো চলে এলো। হোটেল আগেই ইরফান বুক করে রেখেছিল। রাতটা ওরা হোটেলেই কাটালো।
পরদিন সকাল সকাল ওরা ডিজনি ল্যান্ড দেখতে বের হয়ে গেল।
ন‌ওশাদ গাড়িতে বসে বলল, এখানে আসা শুধু নিশালের জন্য। ছোট ছিল যখন তখন ও একবার এসেছিল। আবার নিয়ে আসতে হবে সেই প্রমিজ ও ওর মাম্মার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিল। ওর মাম্মার প্রমিজ রক্ষার্থে ই এখানে আসা।
নিশাল বলল, পাপা আমার মনে নেই মাম্মা কি প্রমিজ করেছিল।
তোমার মাম্মা বলেছিল এখানে আবার তোমাকে আনবে তাই এবার নিয়ে এলাম।
হেরা বাচ্চাদের চেয়েও বেশি মজা পেলো ডিজনি‌ ল্যান্ডে। ন‌ওশাদ অবাক হয়ে হেরাকে দেখছে । মনে হচ্ছে একটা কিশোরী মেয়ে যা দেখছে তাতেই মজা পাচ্ছে। খিলখিল করে হাসছে। ওর উচ্ছাস দেখে ন‌ওশাদ একবার বলল, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার বয়স কমে গেছে। বাচ্চাদের এসব দেখে তুমিও বাচ্চা হয়ে গেছো।
সত্যি আমার খুব আনন্দ লাগছে !
তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ন‌ওশাদ কার্টুন চরিত্র গুলোর সঙ্গে হেরার ছবি তুলে দিলো।
পরদিন ওরা ফিরে এলো বাসায়।

এর মাঝে একদিন রোমানার বাসায় দাওয়াতে গেল সবাই। সবাই যখন গল্পে ব্যস্ত এক ফাঁকে রোমানা হেরার কাছে এসে বসলো।‌
জানো হেরা আমি আর গীতি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।
হেরা রোমানার দিকে তাকালো।
আমার বিয়ের পর আহসান বড় ভাবির কাছে আমাকে রেখে এখানে ফিরে এলো। তখন ন‌ওশাদ ভাই হুট করে একদিন গীতিকে বিয়ে করে ভাবির বাসায় নিয়ে হাজির হয়। আমার আর গীতির বন্ধুত্বের সম্পর্ক তখন থেকে।
আমি শুনেছি সেই গল্প ভাবি !
ন‌ওশাদ ভাই বলেছে ?
জ্বী উনি বলেছেন আপনি উনাদের জন্য কি করেছেন।
রোমানা হাসলো । আমি আর গীতি এক সঙ্গে ঘুমাতাম। কত রাত জেগে গল্প করতাম। কিভাবে ন‌ওশাদ ভাই ওকে দেখতে ক্যাডেট কলেজ থেকে ছুটি পেলে আসতো। কত বকা খেয়েছে সে তার মায়ের কাছে আরো কত গল্প। গীতি খুব ভালো বাসতো ন‌ওশাদ ভাই কে ! ন‌ওশাদ ভাইকে ঘিরে ওর পৃথিবীটা ছিল। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু ন‌ওশাদ ভাইয়ের চিন্তা করে গেছে। তুমি ন‌ওশাদ ভাইয়ের খেয়াল রেখো হেরা উনি অনেক ভালো মানুষ।
হেরা রোমানার হাত ধরলো , ভাবি আমার পৃথিবী টাই উনি। উনি যে কতটা ভালো মানুষ আমার চেয়ে বেশি আর কে জানে! আমি বেঁচে আছিই উনার জন্য।
খুব ভালো লাগলো তোমার কথা শুনে।
হেরা দূর থেকে ন‌ওশাদকে দেখছে। অন্যদের সঙ্গে বসে হেসে হেসে গল্প করছে। হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ।
ভাবি আমিও আপনার বন্ধুর মতো উনাকে অনেক ভালোবাসি । উনি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার নিজের বলে আর কেউ নেই । আমার জন্য উনি সব কিছু। আমার পৃথিবীর সব আলো, সব আনন্দ,সব সুর,সব কিছু এই মানুষটা।
শুনে খুব খুশি হলাম হেরা। আসলে কি জানো কপালের লিখা কেউ এড়াতে পারে না।
তোমার কপালে ন‌ওশাদ ভাই ছিলেন। গীতি মারা যাওয়ার পর কেউ উনাকে রাজি করাতে পারেনি বিয়ের জন্য। কিন্তু দেখো তোমার সঙ্গে ভাগ্য লিখা ছিল । তাই হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেল তোমাদের। বয়স, সমাজ কিছুই বাঁধা হয়নি ।
জ্বী ভাবি।
রোমানাকে কেউ একজন ডাকতেই রোমানা সেদিকে ছুটে গেল।
হেরা উঠে ওদের বাসার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।‌ বাসার পিছন দিকের এই বারান্দায় দাঁড়ালে লেকের বাতাস এসে গায়ে লাগে। বাতাসে হেরার চুল গুলো উড়ছে। ও দাঁড়িয়ে নিজের কথা চিন্তা করছে। কোথাকার হেরা আমি কোথায় চলে এসেছি। সব‌ই নির্ধারণ করা ছিল ।
হঠাৎ ন‌ওশাল পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই ও চমকে উঠলো !
এখানে একা দাঁড়িয়ে অন্ধকারে কি দেখছো ?
খুব একটা অন্ধকার না দেখুন কি সুন্দর চাঁদ আকাশে !
হুম, তোমার মত সুন্দর স্নিগ্ধ একটা চাঁদ। একা একা চাঁদ দেখছো তুমি।
ভাবছি !
কি?
কোথাকার হেরা কোথায় চলে এসেছি। সাত সমুদ্র পার হয়ে । ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে! আমার ভাগ্যে আপনি ছিলেন বলেই সব বদলে গেল।
কোন জিনিসটা আমাদের এক সূতোয় বেঁধেছে জানো হেরা?
কি?
তোমার এই দুটো চোখ , ন‌ওশাদ হেরার চোখে চুমু খেলো। এক মাত্র তোমার চোখ আমাকে সেদিন অস্থির করেছিল।আল্লাহ ই চেয়েছিল। তা না হলে যে আমি নিজেকে আর কোথাও জড়াবো না ভেবেছিলাম কেন এই চোখের কাছে ধরা খেয়ে যাই ?
সেজন্যই আমার চোখ ও আপনাকে দেখে শান্তি পায়।
তাই বুঝি?
জ্বি।
ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরলো । চলো কাছেই বীচ হেঁটে আসি।
এখন এই রাতে!
সমস্যা কি ? খুব ভালো লাগবে চলো !
ঠিক আছে চলুন।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here