তবু সুর ফিরে আসে পর্ব ২৯

0
556

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

২৯ তম পর্ব

শীতের সকালে ছুটির দিন হলে ন‌ওশাদ সব সময় ছাদ বারান্দার রোদে বসে ! তার আব্বাকেও নিয়ে আসে কখনও কখনও ! বুবু আসার পর আব্বা সব সময় বুবুর সঙ্গে সময় কাটায় ! হেরার জ্বর যাওয়া আসার মধ্যেই আছে !
আজ শুক্রবার না থাকলেও ন‌ওশাদ অফিস যেতো না হেরার সঙ্গে সময় কাটাতো ! আগামীকাল নিশাল কলেজে চলে যাবে ! হেরা সুস্থ থাকলে ওদের দুজনকে নিয়ে বাহিরে যাওয়া যেত খাওয়ার জন্য ! কিন্তু হেরার জ্বর অনেক কমফোর্টারের নিচে শুয়ে আছে এখনো ! জ্বর যখন উঠে তখন চোখ , মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে ওর !
ন‌ওশাদ ব্রেকফাস্ট করে রুমে ঢুকে দেখে হেরা তাকিয়ে আছে চোখের কোণে পানির রেখা !
কি হয়েছে আবার , বেশি খারাপ লাগছে ?
না অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি ভালো লাগছে না । নিশাল কালকে চলে যাবে আপনি ওর সঙ্গে সময় না কাটিয়ে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছেন ।
আমি তো তোমাদের দুজনের সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছি , বাসায় আছি ।
আপনার এখন ছেলের কাছাকাছি থাকা উচিত !
নিশাল সুইমিং পুলে নেমেছে শোয়েবের সঙ্গে !
আপনি ও যান !
না ওরা এনজয় করছে করুক ! আমি তোমার সঙ্গে থাকি ! এক কাজ করো এসো রোদে বসি ভালো লাগবে !
ইচ্ছে করছে না !
আহ্ এসো তো ভালো লাগবে দেখো ! ন‌ওশাদ হাত ধরে হেরা কে ছাদ বারান্দায় নিয়ে এলো ! মিষ্টি একটা রোদ তোমার ভালো লাগবে খুব । শুয়ে থেকে আরো বেশি দূর্বল হয়ে গেছো ! তোমার মন এখনো খারাপ হেরা ?
কেন জানি ভয় ভয় লাগছে ।
ভয়ের কি আছে ? আমি তোমাকে বলেছি তো তোমাকে আর কেউ কখনো আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবে না । তোমাকে কেউ আর গুরুত্ব হীন ভাববে না।
হেরা তাকিয়ে আছে ন‌ওশাদের দিকে । তোমার চুল আঁচড়ে দেই আমি ?
ঠিক আছে ।
ন‌ওশাদ চিরুনি নিয়ে হেরার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে রোদে বসে । কত লম্বা তোমার চুল !
গীতির চুল একবার চিরুনি করতে গিয়ে এমন ছিঁড়েছি ও আমাকে আর ধরতেই দিতো না । ন‌ওশাদ হাসছে ।
হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখে সুমনা আর রেজোয়ান দাঁড়িয়ে আছে !
আরে তোরা !
তোর রুমের দরজা খোলা দেখে ঢুকলাম দেখি তোরা এখানে ছাদে ।
রোদে এসে বসলাম দুজন।
হেরা শরীর কেমন তোমার ? সুমনা হেরার মাথায় হাত রাখলো ।
জ্বর আছে এখনো ভাবি ।
ডাক্তার কি বলল ন‌ওশাদ?
ঠিক হয়ে যাবে ।
তোর ছেলে ফোন দিলো সকালে , আঙ্কেল কালকে চলে যাব আপনাদের সঙ্গে লাঞ্চ করতে চাই আন্টি সহ চলে আসেন ।
নিশাল ? ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকালো ! হেরার মন খারাপ দেখেছে তাই তোদের আসতে বলেছে । খুব ভালো করেছিস এসে ।
হেরা সুমনাকে বলল, বসেন ভাবি রোদটা ভালো লাগছে তাই না ?
হুম , হেরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সেদিন জানো ? আমি এক মনে শুধু আল্লাহ্ কে ডেকেছি । তোমার কথা যতটা ভেবেছি সত্যি বলতে কি আমার ন‌ওশাদের জন্য বেশি খারাপ লাগছিল। ও বারবার কেন কষ্ট পাবে ! ভয়ে আমি এসব ভাবছিলাম ।
বাদ দাও সুমনা যা হ‌ওয়ার হয়ে গেছে , খারাপ সময়ের কথা মনে করার কোন দরকার নেই , রেজোয়ান বলল।
ন‌ওশাদ আমি তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি ।
কি সুমনা ?
সুমনা একটা প্যাকেট ন‌ওশাদের দিকে এগিয়ে দিলো ।
কি আছে এতে ? ন‌ওশাদ অবাক হচ্ছে!
খুলে দেখো কি আছে ।
উনসন এন্ড নিউটনের ওয়েল কালারের একটা সেট । সঙ্গে বিভিন্ন সাইজের ব্রাশ ।
কি হবে এগুলো দিয়ে ? ন‌ওশাদ অবাক হয়ে সুমনা আর রেজোয়ানের দিকে তাকালো !
রেজোয়ান ইশারা করছে সুমনার দিকে সে কিছু জানে না ।
তুমি কি মাথা খারাপ হয়ে গেলে নাকি সুমনা ! কত আগের শখ আর যাই বলো এখন ওসব কিছু পারি না ।
ন‌ওশাদ এই জিনিস কেন তুমি বিসর্জন দিয়েছিলে আমি জানি । সেদিন ও আমি তোমার সিদ্ধান্তের পক্ষপাতী ছিলাম না আজো না ।
প্লিজ সুমনা আমার এখন অবসর কোথায় ছবি আঁকার মত !
তুমি ইচ্ছে করলে সব পারো ন‌ওশাদ ।‌ তুমি হেরার একটা পোট্রেট আঁকবে প্লিজ ।
আপনি অনেক সুন্দর ছবি আঁকেন বাসার দেয়ালে টাঙ্গানো ছবি গুলো দেখেই বুঝেছি !
সেরকম কিছু না হেরা একটা সময় হাবিজাবি চেষ্টা করতাম । সুমনা পোট্রেট নিয়ে কি হয়েছিল মনে আছে তোমার তারপর থেকে আমি কান ধরেছি আর আঁকবো না ।
একটা ভুল ধারণা গীতি করেছিল তুমিও রাগ করে ব্যাপার টা সমাধান করেছিলে আমরা সবাই জানি।
তবে ন‌ওশাদ সেদিন‌ তোর অবস্থা দেখে আমার হাসি পাচ্ছিল গীতি কি মন খারাপ রাগ হয়েছিল তোর উপর। তুই আর কাজ পাসনি ওর বান্ধবীর ছবি আঁকতে গিয়েছিলি । রেজোয়ান হাসছে।
রেজোয়ান আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ ছিল না গীতির বান্ধবী র ছবি আঁকি তুই ও বিশ্বাস করলি সেই কথা!
আমি বিশ্বাস করি ন‌ওশাদ তুমি গীতির বান্ধবী র ছবি আঁকো নাই , সুমনা বলল।
গীতির ঐ বান্ধবী কে দেখেছি বলেই মনে নেই আমার। গীতি ছবি দেখে সে কি মন খারাপ আমি ওর বান্ধবীর ছবিই এঁকেছি । ওর বান্ধবী থাকে জাপান । তার কিছুদিন আগে আমি জাপান গিয়েছি । আরে আমি জাপান গিয়েছি কিন্তু ওর বান্ধবীর সঙ্গে তো আমার দেখা হয়নি তাই না ! তবুও গীতি রাগ , অভিমান তাই ওকে বলেছিলাম আর কখনো পোট্রেট আঁকবো না যাও ।
সেটাই তো ন‌ওশাদ এখন তুমি হেরার ছবি আঁকবে । এত সুন্দর একটা মানুষ আঁকো না একটা ছবি।
সুমনা ওসব আমি ভুলে গেছি ।
যেদিন মনে হবে ইচ্ছে হবে সেদিন আঁকবে ।
ন‌ওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ।
সুমনা হেরার পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলল ,তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে হেরা !
জ্বি ভাবি বলেন ?
ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান অফিসিয়াল বিষয় নিয়ে কথা বলছে সেই ফাঁকে সুমনা হেরার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলো ।
হেরা তাকিয়ে আছে সুমনার দিকে ।
হেরা এখন আর তোমার আর ন‌ওশাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই আশাকরি ? ন‌ওশাদের চোখে মুখে তোমার জন্য অন্য রকম ফিলিংস দেখছি সত্যি ।
হেরা চোখ নামিয়ে ফেলল !
সবচেয়ে ভালো লাগছে নিশাল তোমাকে মা হিসেবে মেনে নিয়েছে জেনে । এখন তুমি এই সংসার,এই দুজন মানুষ কে নিজের করে নাও তাহলে এসব ফালতু দূর্ঘটনা ঘটাতে যারা চায় তারা কোন সুযোগ পাবে না । আমি তোমাকে খুব শক্তিশালী মেয়ে ভাবি ,যে মেয়ে আত্মরক্ষার জন্য দা হাতে নিয়ে কোপ দিতে পারে সে সাধারণ অবলা কোন মেয়ে না । তুমি শক্ত হ‌ও হেরা ন‌ওশাদ তোমাকে ভালোবাসে তুমি নিজের সব অধিকার ফলাও সবার উপর। তোমার স্বামী, সন্তান , আত্মীয়-স্বজন সবার উপর। মনে রাখবে দূর্বলকে‌ই সবাই আঘাত করতে পছন্দ করে । নিজেকে তুমি দূর্বল ভাববে দেখবে সবাই দ্বিগুণ দূর্বল বানাবে । সুমনা হেরার হাত ধরে আছে ।
ন‌ওশাদ ওদের দিকে তাকালো , কি হয়েছে ?
কিছু না তোমার ব‌উ কে তার অধিকার সম্বন্ধে সজাগ করছি ।
হ্যাঁ সুমনা আমার এই অবুঝ , বোকা ব‌উকে একটু বুদ্ধিমান বানিয়ে দাও তো তুমি । আমিও চাই ও ওর অধিকার গুলো নিয়ে সজাগ থাকুক । আমি সত্যিই এখন চিন্তায় পড়ে গেছি !
চিন্তা করোনা ন‌ওশাদ হেরা অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে তুমি শুধু ওর পাশে থেকো ।
আমি তো পাশেই আছি যাওয়ার জায়গা আছে আমার ?
খুব ভালো লাগছে বন্ধু তোর কথা শুনে , রেজোয়ান বলে উঠলো । এখন সুখবর টা হেরা কে দে আগে !
কি সুখবর ন‌ওশাদ ? সুমনা প্রশ্ন করলো।
আমিই বলি , ন‌ওশাদের কম্পানি ঢাকায় ফ্যাশন আউটলেট খুলছে । আগামী এক মাসের মধ্যে এক সঙ্গে চারটা আউটলেট চালু হয়ে যাবে, একদম জোরেশোরে কাজ চলছে ।
সত্যি ই কনগ্রাচুলেশন ন‌ওশাদ !
থ্যাংকস সুমনা।
হেরা তুমি বুঝতে পারছো কি ? আমি বুঝিয়ে বলছি বলে সুমনা হেরার কাছে সব বুঝিয়ে বলছে । হেরা চোখ বড় বড় করে শুনছে ।

জ্বর নিয়েই হেরা গোসল করে দোতলা থেকে নিচে নেমে এলো । নিশাল তার সঙ্গে একসঙ্গে খাবে বলেছিল গতকাল, শরীর খারাপ স্বত্ত্বেও সে এসেছে। বাসার সবাই নিচে বসে গল্প করছে ! হেরা হালকা বেগুনি রঙের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে ভেজা চুল গুলো ছেড়ে নিচে এসে দাড়াতেই ন‌ওশাদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ! এখন হেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে ওর কোন দ্বিধা কাজ করে না । হাত ইশারায় নিজের কাছে ডাকলো ।
হেরা ধীর পায়ে ন‌ওশাদের কাছে এসে দাঁড়ালো ।
আমার কাছে বসো ।
দেখি ওদিকে আনারের মা কি করে ।
তোমাকে দেখতে হবে না তোমার শরীর ভালো না এখানে বসো , সবাই এখানে বসে আছে।
হেরা ন‌ওশাদের পাশে বসলো ।
ন‌ওশাদ ওর কপালে হাত রেখে চমকে উঠলো ! এখনও অনেক জ্বর তোমার!
খেয়ে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে ।
কি বলছো আজ তিন দিন হয়ে গেছে ! বিকালে আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি ।
নিশাল রেজোয়ানের ছেলেদের সঙ্গে গল্প করছিল উঠে এসে হেরার পাশে দাঁড়ালো ।কি হয়েছে পাপা ?
মামনির গায়ে অনেক জ্বর !
দেখি বলে নিশাল হেরার কপালে হাত রাখলো, তাইতো অনেক জ্বর ! চলো মামনি তোমাকে রুমে দিয়ে আসি এখানে কষ্ট করে বসে থাকতে হবে না।
আমি তোমার সঙ্গে লাঞ্চ করে তারপর যাব ।
কষ্ট হচ্ছে না তোমার ?
না ।
হেরার সবার সঙ্গে বসলো ঠিকই খেতে , কিন্তু কিছুই খেতে পারলো না । খাওয়া দেখেই তার গা গুলিয়ে উঠছে ।
বুবু হেরার পাশে বসে ছিলেন হেরার পিঠে হাত রাখলেন ,কষ্ট হচ্ছে তোমার ?
ঠিক আছি বুবু ।
হেরা তুমি খেতে পারছো না দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোমার খারাপ লাগছে , ন‌ওশাদ হেরার কাছে উঠে এলো ।
আসলেই খেতে পারছিনা খারাপ লাগছে !
উঠে এসো খেতে হবে না ।
নিশালের খাওয়া শেষ হোক তারপর উঠি ।
মামনি তোমার খারাপ লাগলে বসে থেকো না প্লিজ ।
ন‌ওশাদ হেরাকে ধরে ধরে তুললো , অনেক জ্বর পুরে যাচ্ছে শরীর !
আপনি খাওয়া শেষ করেন ।
পরেও খাওয়া যাবে চলো আমার সঙ্গে।
আনারের মা এসে হেরার এক পাশে ধরলো । তুমি এখানে থাকো আমি নিয়ে যাচ্ছি বলে ন‌ওশাদ হেরা কে ধরে ঘরে নিয়ে গেল ।
বিছানায় শুইয়ে কপালে ভেজা রুমাল ধরলো কিছুক্ষণ।
হেরা ফারহানের সঙ্গে কথা বলেছি ও আসছে একটু পর।
হুম।
ন‌ওশাদ অবাক হয়ে খেয়াল করলো হেরা কমফোর্টারের নিচে শুয়ে রীতিমতো কাঁপছে ! খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার ?
আপনি আমার পাশে এসে আমার হাত টা একটু ধরবেন আমার শরীর টা কাঁপছে কেন বুঝতে পারছি না !
ন‌ওশাদ হেরার পাশে শুয়ে হেরা কে জড়িয়ে ধরলো । হাতটা ধরলেই হবে !
কেন আমি জড়িয়ে ধরলে কি সমস্যা ?
না কোন সমস্যা নেই আমার লজ্জা লাগছে !
আমার দেখা সবচেয়ে লাজুক প্রাণী হলো কাঠবিড়ালী দেখলেই দৌড়ে পালায় তুমি তো দেখি কাঠবিড়ালীর মত লজ্জা পাও । তোমার দিকে তাকালে লজ্জা, হাত ধরলে লজ্জা আর কিছু তো করার সাহস ই পেলাম না। এত এত লজ্জা আমার ছোট্ট এই কাঠবিড়ালীর মধ্যে বলে ন‌ওশাদ হেরাকে বুকের কাছে টেনে নিলো । তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও হেরা প্লিজ । আমার তোমার সুস্থতাটা খুব প্রয়োজন, তোমাকে খুব প্রয়োজন খুব ।
অল্পক্ষণের মধ্যেই হেরা জ্বরের ঘোরে একদম অচেতন হয়ে গেল ! ন‌ওশাদ আনারের মা কে ডাকলো বাসার সব মানুষ রুমে এসে হাজির । মাথায় পানি ঢালা হলো । ফারহান এসে ব্লাড টেস্টে র জন্য নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিল ন‌ওশাদকে ।
বিকালে একটু জ্বর কমতেই ন‌ওশাদ ব্লাড টেস্টে র জন্য নিয়ে র‌ওনা হলো সঙ্গে নিশাল‌ও যাচ্ছে।
ইমার্জেন্সি ব্লাড টেস্টে হেরার টাইফোয়েড ধরা পড়লো ! ন‌ওশাদ চিন্তায় পড়ে গেল ।
ফারহান বলল,এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই ভাইয়া । টাইফয়েড এখন আর আগের মত জটিল কোন রোগ না।
ন‌ওশাদ বলল,ফারহান আম্মা কিন্তু টাইফোয়েড হ‌ওয়ার পরেই বেশি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে গিয়েছিল ।
এখন অনেক ভালো ওষুধ আছে আমি দিচ্ছি তুমি এত চিন্তা করছো কেন ? আমি আছি তো ভাইয়া।

সন্ধ্যায় নিশালের সঙ্গে দেখা করার জন্য বীথি এসেছে বাসায় । নিশাল অভিমান করে আছে সেদিনের পর থেকে সে বীথির ফোন ধরছে না । বীথি নিশালের অভিমান ভাঙানোর জন্যেই এত কিছুর পরও এই বাসায় এসেছে। ডাক্তারের চেম্বার থেকে এসে নিশাল তার জিনিস পত্র গোছাচ্ছে যখন তখন‌ই সে নিশালের রুমে এসে ঢুকলো।
বীথি কে দেখে নিশাল অবাক হলো ,
তুমি !
হ্যাঁ নিশাল এত অবাক হ‌ওয়ার কিছু নেই তো ! তুমি আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে যেতে পারছো নিশু?
মামনি অসুস্থ খুব পাপা আমি দুজনেই খুব টেনশনে আছি মন ভালো নেই।
নিশু কয়দিন হলো হেরা এই বাড়িতে এসেছে, তুমি এসেছো দশদিন হয়েছে এতেই হেরা তোমার এত আপন হয়ে গেল !
খালামনি কোন একটা সম্পর্ক তৈরি হ‌ওয়ার জন্য সময় টা খুব বড় ব্যাপার না ফিলিংস টাই বড় ।
এত কথা শিখে গেছো তুমি !
আমাকে তুমি ছোট ভাবো কেন ? পাপা কি বলেছো জানো আমাকে কলেজ থেকে বের হ‌ওয়ার পরেই বিয়ে করিয়ে দিবে বলে নিশাল হাসছে ।
তোমার পাপা তো নিজে বিয়ে করে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই এসব বলছে ।
খালামনি প্লিজ পাপা কে নিয়ে কিছু বলবে না ।
বাবা গত ছয়টা বছর আমি তোমাকে মায়ের আদরে বড় করেছি, আজ তুমি তোমার পাপার ছেলে হয়ে গেলে তুমি তো আমার সোনা বাচ্চা বীথি নিশালের হাত ধরলো ।
আমি সবার আগে আমার পাপার ছেলে। ন‌ওশাদ আজমীর ছেলে শেহজাদ আজমী তারপর অন্য কারো । তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো আমি জানি কিন্তু তুমি পাপা কে নিয়ে আমাকে ভুল ও বুঝিয়েছো !
কি ভুল বুঝিয়েছি বেবি ?
তুমি সব সময় বলতে পাপা আমার চেয়ে বেশি তার বিজনেস আর টাকাকে প্রায়োরিটি দেয় ভালোবাসে !
তো মিথ্যা বললাম কোথায় ? তোমার জন্য তোমার পাপার কোন সময় আছে ?
আমার পাপা আর অন্য দশটা বাবার মধ্যে তফাৎ আছে । আমার পাপা কে বিজনেস সামলাতে হয় আর মাম্মা যাওয়ার পর নিজের খেয়াল রাখতে হয়, দাদা ভাইয়ের খেয়াল রাখতে হয়, আমার পাপা একা মানুষ । পারেনি আমাকে মাম্মার মত যত্ন করতে তাই বলে ভালোবাসে না সেটা তুমি বলতে পারো না ।
কোনখানের কোন ছেলে তোমাকে কি বুঝিয়েছে আর তুমি আমাকে ভুল বুঝছো নিশু!
ভুল বুঝায়নি খালামনি সোহাম ভাইয়া আমাকে অনেক কিছু হারানোর আগে সব পেতে সাহায্য করেছে। আমি যে কত দূরে দূরে থাকতাম পাপার সেটা আমি জানি।
ঠিক আছে যা হয়েছে হয়ে গেছে। তুমি আমার উপর রাগ হয়ে থেকো না বেবি । আর হেরাকে তুমি মামনি ডাকো কেন ? পাপা বলেছে ডাকতে ?
পাপা বলবে কেন আশ্চর্য ! আমার ইচ্ছে মামনি ডাকব !
নিশু তোমার মাম্মা যাওয়ার পর কত বলেছিলাম আমাকে ছোটমা কিংবা মাম্মি ডাকতে তুমি কখনও ডাকনি ! আর এখন দুই দিনের হেরাকে মামনি ডাকো যার বয়স তোমার চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের বড় । খুব কষ্ট পাচ্ছি বেবি।
তোমাকে ছোট থেকে খালামনি ডাকি তোমাকে হঠাৎ করে অন্য ডাকে কেন ডাকতে হবে ?
আর মামনি পাপার ওয়াইফ বয়স যাই হোক সম্পর্কে মা ই হয় আমার । আমার খুব ভালো লাগছে মামনি ডেকে । পাপা খুব খুশি হয়েছে সেটাই বড় কথা।
যাই হোক তুমি আমার উপর রাগ করে থেকো না বেবি।
তুমি মামনির সঙ্গে যা করেছো আমি মানতে পারছি না ।
তোমার জন্য করে ফেলেছি বাবা । একটু বোঝার চেষ্টা করো।
আমার জন্য তুমি এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে ? আজ মামনি কিছু হয়ে গেলে পাপার কি হতো আমি চিন্তা করে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। একটা কথা মনে রেখো খালামনি, মা মনি পাপা কে খুব ভালোবাসে তুমি এমন কিছু করবে না যেন পাপা, মামনি কষ্ট পায় ।
ঠিক আছে নিশাল । তুমি আমার উপর রাগ করে থেকো না তবুও।
হেরা আরো কিছুক্ষণ নিশালের রুমে থেকে তারপর বের হয়ে এলো।
পারুল রুমের সামনেই ছিল । ওকে দেখে বলল,তোর স্যার কোথায় ?
জানি না ।
নিজের ঘরে ?
মনে হয় না, ফুফুআম্মার ঘরে মনে হয় ! আম্মা একা ঘরে শুয়ে আছে একটু আগে দেখলাম ।
আমি ঢুকছি দুলাভাই এদিকে আসলে ডাক দিবি আমাকে।
ঠিক আছে।
বীথি হেরার ঘরে দরজায় নক করলো ।
দরজা খোলা , ভেতর থেকে হেরার গলা শোনা গেল।
বীথি রুমে ঢুকে দেখে হেরা ঘর মোটামুটি অন্ধকার করে শুয়ে আছে । শুধু বেড সাইড একটা ল্যাম্প জ্বলছে ।
বীথি কে এই সময় হঠাৎ এখানে দেখে হেরা অপ্রস্তুত হয়ে গেল!
হেরা শুয়ে ছিল উঠে বসলো !
তুমি শুয়ে থাকো হেরা উঠতে হবে না।
তুমি খুব অসুস্থ শুনলাম । নিশাল কালকে চলে যাবে তাই দেখা করতে এলাম।
বসেন আপু ।
না বসবো না , কেমন একটা ব্যাপার হয়ে গেল দেখো আমি সেদিন ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে তোমাকে অনেক খুঁজেছি পেলাম না।
হেরা চুপ করে আছে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।
এত বড় শপিং মল একবার কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া কষ্ট। যাই হোক আমি ভেবেছি তুমি দুলাভাই কে ফোন দিবে । আমি তো জানি ই না তুমি তোমার স্বামীর নাম্বার টাই জানো না! তোমাকে দুলাভাই একটা ফোন ও কিনে দিলো না সেটাও জানতাম না। কতটা বেখেয়ালি হলে নিজের ব‌উকে এত দিনে একটা মোবাইল কিনে দেয়ার কথা মাথায় আসে না মানুষের । যাই হোক এটা তোমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমার কিছু বলার নেই।
আসলে উনি জানতেন না আপনার সঙ্গে একদিন বাহিরে যেতে হবে আমাকে, জানলে সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ড ই দিয়ে দিতেন ।
বীথি তাকিয়ে আছে হেরার দিকে , ভালো বলেছো । তোমার সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ড ই রাখা উচিত কখনো বাথরুমে আটকে যাচ্ছো, কখনো শপিং মলে হারিয়ে যাচ্ছো ।
চিন্তা করবেন না আপু এখন থেকে উনি দিয়ে দিবেন । আপনি দাঁড়িয়ে কেন বসুন ।
না বসবো না রেস্ট নাও ভালো থাকো ।
নিশালের সঙ্গে দেখা হয়েছে আপনার?
হুম ওকে নিয়ে চিন্তা করো না হেরা ও আমার বাচ্চা ওর সঙ্গে আমার দেখা হ‌ওয়াটা কেউ আটকাতে পারবে না।
হেরা তাকিয়ে আছে !
বীথিকে পারুল ঠিক খবরটা দিতে পারেনি ন‌ওশাদ তার নিজের ঘরেই ছিল। নিজের বিছানায় কমফোর্টারের নিচে মাথা ঢেকে ঘুমিয়ে ছিল এটা পারুল এবং বীথি কেউই জানতো না ।
হঠাৎ হেরার কমফোর্টার টা নেমে যেতেই ওর গায়ের উপর ন‌ওশাদের হাতটা জড়িয়ে আছে দেখে বীথি থতমত খেয়ে গেল। ন‌ওশাদ উপুর হয়ে শুয়ে ছিল দেখে আলো আধারিতে বোঝাই যাচ্ছিল না কেউ হেরার পাশে শুয়ে আছে । বীথির বুকে ধাক্কার মত লাগলো । সঙ্গে সঙ্গে বলল,
আমি যাই হেরা ভালো থেকো !
জ্বি আপু বাসায় আসবেন ।
ঠিক আছে। বীথি দুই পা আগাতেই ন‌ওশাদ পেছন থেকে ডেকে উঠলো , বীথি ।
বীথি দাঁড়িয়ে গেল ।
একটু দাঁড়াও তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে ।
বীথি পিছন ফিরে তাকালো , জ্বি বলেন দুলাভাই ?
নিচে যাও বসো আমি আসছি । হেরার শরীর ভালো না ও রেস্ট নিক আমরা নিচে গিয়ে কথা বলবো।
ন‌ওশাদ উঠে হেরার গালে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলল, তুমি শুয়ে থাকো আমি আসছি । কিছু লাগলে আনারের মা কে ডাকবে।
বীথি ঘর থেকে বের হয়ে পারুলের দিকে তাকিয়ে বলল, তোকে থাপ্পড় দেয়া দরকার ফাজিল কোথাকার।
আমি কিতা করছি খালাম্মা ?
চুপ ।
ন‌ওশাদ কে রুম থেকে বের হতে দেখে পারুল আস্তে করে সরে গেল।
ন‌ওশাদ গতরাতে ঘুমায়নি সারাদিন হেরাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল । ডাক্তারের কাছ থেকে এসে হেরার সঙ্গেই শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বীথি আর হেরার গলা শুনে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ঘরের বাহিরে এসে বীথিকে বলল, নিচে না আমার স্টাডি রুমে এসো বীথি।
বীথি স্টাডি রুমে ঢুকতেই ন‌ওশাদ দরজা টা চাপিয়ে দিল ।
কি ব্যাপার দুলাভাই দরজা চাপিয়ে দিলেন যে এখন আপনার বাসার লোকজন আমাকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন দেখে খারাপ কিছু ভাববে না ?
ন‌ওশাদ হাসলো ।
আগে আপনার ঘরে আমি ঢুকলেই তো আপনার অনেক সমস্যা হতো । দরজা চাপিয়ে দিলে তো আপনি মেয়েদের মতো চিৎকার করে উঠতেন !
ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে বলল, বীথি এখন আমার ঘরে আমার ব‌উ আছে এখন আমি ব্যাচেলর ন‌ই কারো সমস্যা নেই । ইনফেক্ট তখন ও সমস্যা হতো না আমার বাসা আমি যা ইচ্ছে করতে পারতাম । কিন্তু আমি তোমাকে পশ্রয় দিতে চাইনি । আমি অনেক কিছুই চাইনি বীথি !
আপনি অনেক কিছুই করতে পারতেন ঠিক বলেছেন।
আসলেই অনেক কিছু করতে পারতাম বীথি , প্রতি রাতে নতুন নতুন মানুষ আমার বেড রুমে আনলেও এ বাড়ির কারো সাহস ছিল না আমাকে নিয়ে কিছু বলার ।
আপনি কি এসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছেন ?
না । তুমি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে বীথি তুমি অনেক বিচার বিবেচনা করে কাজ করো । কিন্তু তুমি আমাকে এতটা নির্বোধ, বুদ্ধিহীন ভাবলে কিভাবে ? মানে ?
তুমি চিন্তা করলে কিভাবে আমি বুঝতেও পারবোনা হেরা কে তুমি ইচ্ছে করে শপিং মলে ফেলে রেখে এসেছো ?
দুলাভাই আপনি অনেক বুদ্ধিমান ঠিক, কিন্তু ভুল বুঝছেন ঘটনা টা সেরকম না ।
যাই হোক ,ঘটনা কি তুমি জানো আমি জানি তাই বলছি নেক্সট টাইম মনে রেখো আমাকে যতটা ভালো মানুষ ভাবো একটা লেভেল পর্যন্ত আমি ভালো তারপর আমি যথেষ্ট খারাপ হতে পারি । আমার ভালোবাসার মানুষদের জন্য আমি যথেষ্ট বেপরোয়া ।ওদের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারি । গীতির বোন বলেই তোমার অনেক কিছু আমি ইগনোর করেছি হয়তো আর পারবো না ।
আপনি অনেক বদলে গেছেন দুলাভাই আপাকে ভুলে হেরাকে ভালোবেসে ফেললেন !
তোমার আপাকে ভালোবাসি কি না এখনো, সেই হিসাব তোমাকে দিব না । আর একটু আগে হেরাকে বললে না আমি বেখেয়ালি একদিন এই বেখেয়ালি মানুষ টাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে !
হ্যাঁ আপার জন্য সেদিন আমার ভালোবাসা টা আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । খুব ভালোবেসে ছিলাম আপনাকে খুব। আমার জীবন টা আপনি নষ্ট করেছেন ।
মানে ? ন‌ওশাদ অবাক হয়ে তাকালো !
আপনার জন্য আমি ফয়সাল কে কষ্ট দিয়েছি আপনার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছি নিজেও।
কি বলছো এসব ফয়সালের সঙ্গে তোমার সেপারেশন গীতি মারা যাওয়ার আগে থেকেই ছিল !
আপনার সঙ্গে তুলনা করেই আমি ফয়সাল কে মেনে নিতে পারিনি কখনো। আর আজ হাসিব কেও আপনার জন্য কষ্ট দেই।
এসব তোমার সমস্যা বীথি তোমাকে আমি বলেছি ফয়সালের থেকে আমি বেস্ট, কিংবা হাসিবের থেকে ? তোমাকে কিংবা যুথী কে কোন দিন নিজের ছোট বোনের বাহিরে দেখি নাই। তোমাকে আগেও বলেছি একথা।
চুপ করেন । আপনি এসব বলা বন্ধ করেন প্লিজ।
বীথি নিজের জীবনটা নষ্ট করো না তোমাকে আর কিছু বলার নেই । যেতে পারো।
বীথি যাওয়ার পর ন‌ওশাদ চুপ করে বসে রইল। মনে মনে বলল, বীথি তুমি বুঝবে না কোন দিন। আগেও অবুঝ ছিলে এখনো। ভালোবাসা জোর করে হয় না। গীতির বোন কে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবো অসম্ভব ছিল আমার জন্য। আমি ভাবতেও পারিনা । তোমার সেই পাগলামী করা রাতটা আমি ভুলিনি বীথি ।

নিশাল যাওয়ার সময় অনেক মন খারাপ করে কলেজে চলে গেল । ন‌ওশাদ যখন ওকে কলেজের বাসে তুলে দিতে এলো গাড়িতে বসে ও বারবার বলছিল , মামনি কে একা রেখে তুমি দেশের বাহিরে যাবে না পাপা। আর বাসার বাহিরে থেকো না বেশি ।
ঠিক আছে বাবা , আমি তোমার মামনির যত্ন রাখব । তুমি তোমার মামনি কে এত ফীল করো নিশাল !
হ্যাঁ পাপা কারণ মামনি তোমাকে খুব ভালোবাসে আমি দেখেছি। আর আমরা ছাড়া মামনির তো কেউ নেই পাপা ।
ন‌ওশাদ অবাক হয়ে ছেলেকে দেখলো !
নিশালের মন আরো একটা কারণে খুব খারাপ কালকে রাতে পাপা আর বীথি খালামনির স্টাডি রুমের সব কথা সে শুনেছে । খালামনিকে নিয়ে পাপা যখন স্টাডিতে ঢুকে তখন ভেবেছিল পাপা খালামনিকে বকাঝকা করবে কিন্তু সে যেসব কথা শুনেছে তার খুব খারাপ লাগছে। খালামনি পাপা কে বিয়ে করতে চেয়েছিল ! মাম্মার বোন হয়ে কিভাবে এই চিন্তা করলো খালামনি! আর সেই জন্য মামনি কে দেখতে পারে না খালামনি। ছিঃ !আর বলছে আমার জন্য মামনি কে ফেলে রেখে এসেছিল !
ওর খুব ভয় হচ্ছে মামনি কে নিয়ে ! ছোট মানুষ বীথি খালামনির সঙ্গে বুদ্ধিতে পারবে না কখনো।

হেরা বিশ পঁচিশ দিন অসুস্থ হয়ে পরে রইলো। জ্বর কমলেও দূর্বলতার জন্য মাথা তুলতে পারে না। ন‌ওশাদ ইচ্ছে থাকার পরেও খুব বেশি সময় বাসায় থাকতে পারছে না বছরের শুরুতে ওর খুব ব্যস্ততা থাকে তার মধ্যে তার কম্পানির ফ্যাশন আউটলেট চালুর শেষ পর্যায়ে র কাজে সে অসম্ভব ব্যস্ত। জাঁকজমক ভাবে উদ্বোধন করবে , সে জন্য আরো বেশি বসতে হচ্ছে মার্কেটিং টীমের সঙ্গে। ডিজাইনারদের সঙ্গে ।
সুমনা প্রায় দিনই এসে হেরাকে দেখে যায় । ওকে নিজের মেয়ের মত বুদ্ধি দেয় , গল্প করে । হেরা সুমনার কাছ থেকে শিখছে কিভাবে ন‌ওশাদ আজমীর পাশে পার্ফেক্ট হ‌ওয়া যাবে ।
সুমনা বলল,ন‌ওশাদ খুব ব্যস্ত ইদানিং তাই না হেরা ?
খুব ব্যস্ত ভাবি ,রাত হয়ে যায় ফিরতে ফিরতে এসে আমার সঙ্গে ডিনার করে আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েই ক্লান্তিতে আর বসে থাকতে পারেন না। বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যায় !
বুঝেছি । কাজ পেলে পাগল হয়ে যায় সে । তোমাকে কিন্তু খুব ভালোবাসে ন‌ওশাদ !
কি জানি ভাবি আমার ওসব বোঝার ক্ষমতা নেই ।
কি বলো যে কোন মেয়ের এই ক্ষমতা টা প্রবল আর তুমি বলছো তুমি বোঝো না ! বোকা। তুমি কতটা ভালোবাসো সেটা বলো ?
আমি জানি না ভাবি , হেরা কথাটা বলেই হেসে দিল।

নিশাল কলেজ থেকে হেরার নাম্বার এ ফোন দিয়ে সপ্তাহে একদিন কথা বলে । পাপা খুব ব্যস্ত হেরার কাছ থেকে শুনেছে। মামনি তুমি নিজের যত্ন নিও । ঠিক আছে , তোমার পেরেন্টস ডে তে আসব তো তাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে হবে আমাকে ।
মনে থাকে যেন ।
মনে থাকবে আমার।
ন‌ওশাদ হেরার মুখে ছেলের কথা শুনে হাসলো ।
হেরা তোমাকে আমি একটুও খেয়াল রাখতে পারছি না । সরি ।
আমি ঠিক আছি আপনি চিন্তা করবেন না ।
আমি তোমাকে খুব সুন্দর একটা জিনিস দিতে চাইছি । জিনিস টা দেখে তোমার মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠবে আমার বিশ্বাস।
কি ?
মাত্র কয়েক টা দিন অপেক্ষা করো দেখবে !
ঠিক আছে।
হেরা ন‌ওশাদের মাথায় হাত রাখলো , খুব ক্লান্ত লাগছে আপনার ?
খুব হেরা এত কাজের চাপ । অফিসে কফিটা খাওয়ার সময় পাই না । রমিজ কফি দিয়ে যায় আমার খেয়াল ই থাকে না।
আর আমি বাসায় শুয়ে বসে থাকি কিছুই করার নেই !
বেশিদিন না খুব তাড়াতাড়ি তোমার আরামের দিন শেষ হবে হেরা ।
কেন ?
তোমার পাশে দেখো একটা বড় খাম আছে খুলে দেখো কি আছে ওখানে ।
হেরা খাম টা হাতে নিয়ে বলল, কি আছে এতে ?
খুলে দেখো ।
হেরা খাম খুলে দেখে তার সব সার্টিফিকেট , মার্কশিট । আপনি এগুলো কোথায় পেলেন ? হেরা আকাশ থেকে পড়ল!
তুলে আনিয়েছি তোমার ভার্সিটি থেকে ।
কিভাবে ?
লোক পাঠিয়ে ।
তারপর এখন ?
এখন তুমি এখানে ভর্তি হবে কোন একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ।
সত্যি !
না মিথ্যা । ন‌ওশাদ হেরার নাক টিপে দিল।
আচ্ছা হেরা তোমার এইম ইন লাইফ কি ছিল ?
সত্যি করে বলব, আমি বিসিএস দিয়ে পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিলাম। একবার একটা হিন্দি মুভিতে রানী মুখার্জি কে পুলিশ অফিসার হিসেবে দেখে পুলিশ হব ঠিক করেছিলাম । কিন্তু হতে আর পারলাম কোথায় !
সমস্যা কি এখন পড়াশোনা শেষ করে হয়ে যাও । আমার তো শুনেই দারুন লাগছে! খুব ভালো হবে সবাই কে বলব , আমার ওয়াইফ কিন্তু এসপি ।
প্লিজ হেরা তুমি পড়াশোনা করো আমি চাই তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করো।
আমার স্বপ্ন পরিবর্তন হয়ে গেছে । আমার স্বপ্ন এখন সংসার করা ।
সংসার তো পুলিশ অফিসার হয়েও করতে পারবে ।
আমি শুধু আপনার স্ত্রী হিসেবে আপনার সংসার টা করতে চাই ।‌ নিশালের এবং আব্বার দেখাশোনা করতে চাই ।‌
ঠিক আছে আপাতত খুব ভালো করে পড়াশোনা টা করো । এই সেশনে ভর্তি করে দিব তোমাকে ঠিক আছে।
হুম।
একটা জিনিস মনে রাখবে তোমার সব কিছু তোমাকে ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু তোমার বিদ্যা তোমাকে ছেড়ে যাবে না ।
এই কথাটা নানা ভাই ও বলতো আমাকে । হেরা ন‌ওশাদকে জড়িয়ে ধরলো ।
স্যার ঠিক কথাই বলতো । হেরা চুপ করে আছে ।
কি হলো চুপ করে গেলে যে ?
নানা ভাইয়ের কথা মনে হয়ে যাওয়ায় মনটা কেমন করে উঠলো ।
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকালো হেরা তুমি মন খারাপ করো না এখন আমিই তোমার সব স্বামী, বন্ধু, আত্মীয় সবকিছু।‌ আর তুমি আমার কাঠবিড়ালী ।‌ সারাক্ষণ ছুটে বেড়াবে কিন্তু লজ্জা পেয়ে আমার বুকে লুকিয়ে যাবে । কিন্তু আমি কোথায় লুকাবো বলো তো যদি পুলিশ ব‌উ আমাকে লকাপে ঢুকাতে চায় ?
হেরা হেসে দিল।
তোমার শরীরের দূর্বলতা টা কমেছে ?
অনেকটা ! শুধু খেতে ইচ্ছে করে না কিছু।
প্লিজ খাওয়া দাওয়া ঠিক ভাবে করো।
হেরা আমি এই কয়টা দিন খুব ব্যস্ত থাকব খুব।‌ তারপর আগামী মাসে সাত দিন সব কিছু থেকে ছুটি নিব । পুরো সময়টা শুধু তোমার ।
বাসায় রেস্ট নিবেন ?
উহু বাসায় থাকব না তোমাকে নিয়ে দারুণ একটা জায়গায় যাব । তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাত দিন তুমি কাটাবে ! তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও । তোমার আমার জন্য চমৎকার একটা সময় অপেক্ষা করছে !
হেরা ন‌ওশাদের বুকে মাথা রাখলো ঠিক আছে অপেক্ষা করছি ।
ন‌ওশাদ মনে মনে বলল,তোমার চেয়েও বেশি আমি অপেক্ষা করছি কাঠবিড়ালী।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here