#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০৮
#Nishi_khatun
ইফা দুদিন ধরে স্বামী কে ছাড়া অনাথের মতো শ্বশুর বাড়িতে পড়ে আছে। তার স্বামী যে জেলখানাতে বন্দী, তা নিয়ে এবাড়িতে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। কেউ দাইয়ান কে ছাড়িয়ে আনার জন্য কোন তোরজোড় করছে না।
দাইয়ান কে নিয়ে কারো কোন অনুভূতি নেয়।
বাড়ির সবার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তাদের ছেলে শ্বশর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। এমনকি তাদের বাড়িতে কোন সমস্যা নেই।
এদিকে আজ দুদিন অন্যদিনের তুলনায় বেশি কাজ করতে হচ্ছে। রেহেনা বেগম তাকে একদণ্ড বিশ্রাম নিতে দিচ্ছে না। একটুপর পর নানারকম কাজ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। রেহেনা বেগমের ভাব দেখে ইফার মনে হচ্ছে সে এবাড়ির কাজের মেয়ে। তাকে মাসের শেষে মোটা অংকের টাকা বেতন দেয়।
ইফাকে শুধু রেহেনা বেগম না, বাড়ির সবাই কমবেশি হুকুম করছে। আর ইফা যদি কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে।
ইফা একবার প্রতিবাদ করে রেহেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে,
“আমাকে কি কাজের বেডি রহিমা মনে হচ্ছে আপনাদের? সারাক্ষণ এভাবে কাজের হুকুম করছেন?
কই রিমশা কে তো একটু কোন কাজের কথা বলছেন না?
আমার সাথে কেনো এমন জাহিলের মতো ব্যবহার করছেন।”
রেহেনা বেগম তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“আজব মেয়ে তুমি দেখছি! রিমশা আমার বাড়ির বউ, তোমার মতো সতীন হয়ে সে আসে নায়। তুমি জেনে বুঝে রিমশা’র সংসারটাতে আগুন লাগিয়েছ। তোমার মতো মেয়েদের সাথে আরো খারাপ হওয়া উচিত। আমাদের মানবিকতা আছে বলে, ছেলে জেলে যাওয়ার পরেও তোমাকে এবাড়িতে থাকতে, পড়তে, খেতে দিচ্ছি। তারপরেও তুমি আর কি চাইছো?
বাপু তুমি এভাবে থাকতে পারলে থাকো, নয়তো আসতে পারো। এখন আর দাইয়ান নেয়, তোমার এতো নাটকীয়তা আর সহ্য করতে পারবোনা। তুমি ভালো করে-ই জানো আমরা তোমাকে কোনদিন ও এবাড়িতে সুখে সংসার করতে সাহায্য করবো না”
ঝর্ণার মা পাশে থেকে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”ভাবী এই মেয়ের সাথে এতো কথা বলছেন কেন? এখন যেহেতু দাইয়ান বাড়িতে নেয়, তা-ই ইফার আর ঐ ভালো ঘরে থাকার দরকার নেয়। ইফাকে আমাদের পাশের ফাঁকা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।রিমশা যেমন স্বামী ছাড়া আলাদা ঘরে থাকে ঠিক তেমন।”
রেহেনা বেগম ঝর্ণা’র মায়ের কথায় তাল দিয়ে বলে,
“আরে হ্যা তা-ই তো। অযথা জিনিষপত্র দিয়ে ভরা রুমটাতে ওর আর থাকার দরকার নাই। যেখানে আমার ছেলে থাকছে না,
সে ঘরে ইফা একলা কারে নিয়ে শুয়ে থাকবে?”
ইফা চিৎকার দিয়ে বলে,
“আপনারা দেখছি গিরগিটির থেকেও খারাপ। ছেলে দুদিনের জন্য বাড়ি থেকে চলে যেতে-ই তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। ”
রেহেনা বেগম শান্ত কন্ঠে আস্তে করে বলে,
“তোমার মতো বেইমান মেয়েকে এর থেকে বেশি সম্মান করা যায় না।”
ইফা একটু দমে যায়, তবুও উঁচু গলায় কথা বলা বন্ধ করে না।
বাড়ির বড় বউ তখন বারান্দায় ছিল।
সেখানে থেকে বলতে শুরুকরে,
“তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার কেনো করবে না বলো?
যদি তুমি দাইয়ানের সাথে প্রেম করে বিয়ে না করতে।
তাহলে রিমশা কখনো-ই থানাতে যেয়ে বিচার দিতো না।
আর বিচার না দিলে তো দাইয়ান ঠিকি বাড়িতে থাকতো।
তুমি যেমন রিমশা’র কাছ থেকে ওর স্বামী কে হাতিয়ে নিয়েছ, তেমন করে না হলেও কৌশলে তোমার কাছ থেকে দাইয়ান কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সোজা হিসাব।”
ইফা বুঝতে পারছে এদের সাথে তর্ক করে লাভ হবে না।
এদের কেউ তাকে সাহায্য করবে না। সবাই হয়তো অতীতটা জানে। এবাড়ির কেউ তাকে এখানে রাখতে চাইছে না।
তবে ইফা এতো সহজে-ই হেরে যাওয়ার পাত্রী না।
সে ঠিকি তার স্বামী কে ছাড়িয়ে আনবে।
দরকার হলে নিজের পুরাতন সম্পর্ক জোড়া তালি দিবে।
*
*
পরেরদিন সকালে ইফা রিমশা’র বাবার বাড়িতে চলে যায়। রিমশা’র মা ইফাকে দেখার সাথে সাথে তাদের বাড়ির সদরদরজা মুখের উপর বন্ধ করে দেয়।
ইফা জোড়ে জোড়ে দরজাতে নক করতে থাকে।
তবুও রিমশা’র মা দরজা খুঁলে দেয় না।
বাড়ির ভেতরে থেকে রিমশা’র মা সোজা কর্কশ গলায় বলে,
-“আমরা দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলাম। সেই কালসাপ যে বড় হয়ে, আমার মেয়ের সংসারে ছোবল দিবে ভাবতেও পারি নাই। তোর মতো কালসাপের কোন স্থান নেই আমার বাড়িতে। তুই আর কোনদিন এখানে স্থান পাবি না। ”
ইফা বুঝতে পারে রিমশা’র মা প্রচুর রেগে আছে।
এখানে তার চাল-ডাল কিছুই গলবে না।
তা-ই সে নিজের মা নিলুফার বেগমের কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
নিলুফার তার মেয়েকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তুই এখানে কেনো এসেছিস? রিমশা’র সংসারটা ভেঙ্গেও তোর শান্তি হয়নি? এখানে আবার কি দরকার তোর? ”
ইফা কান্না থামিয়ে বলে,
“মা গো রিমশা আমার স্বামী কে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে।”
নিলুফার বেগম- আলহামদুলিল্লাহ্ বলেন!
তারপর ইফার গালে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,
-” আমার স্বামী বলতে লজ্জা করছে না? দাইয়ান শুধু মাত্র রিমশা’র স্বামী। তোর মতো ডায়নীর স্বামী কেন হতে যাবে? আমার আম্মাজান তার স্বামী কে শিক্ষা দিচ্ছে, সে যে ভুল করেছে তার জন্য এরকম শিক্ষা ঠিক আছে।”
ইফা ওর মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আম্মা তুমি এমন কথা বলিও না! তুমি তো আমার নিজের মা, তাহলে ঐ রিমশা’র হয়ে ওকালতি কেন করছো? তুমি রিমশা কে একটু বুঝিয়ে বলো, উনাকে যেনো থানা থেকে আমার জন্য ছাড়িয়ে আনে।”
নিলুফার বেগম পা ঝাঁড়া দিয়ে সরে এসে বলেন,
-“রিমশা যা করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে। নিজের স্বামী কে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। আজকে যদি আমি তোর মতো কলঙ্কী মেয়েকে সাপোর্ট করি। তাহলে সমাজের প্রতিটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙ্গার সাহস পেয়ে যাবে। আমি মা হয়ে নিজের মেয়ের প্রতি কোন সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। কারণ তুই আমার সেই ভালো মেয়ে না। এতো ভালোই যদি হইতি, তাহলে কখনোই তাদের সাথে বেইমানি করতে পারতিস না। যাদের নুন খেয়ে বড় হয়েছিস। ”
ইফা চেঁচিয়ে বলে,
“কী এমন খারাপ করেছি আমি? একটু সুখে থাকার জন্য না হয় আমি রিমশা’র স্বামী কে পাটিয়ে বিয়ে করেছি। তাতে এমন কি ক্ষতি হয়েছে বলবে?”
নিলুফার বেগম বলে,
“তুই এক নাম্বারের স্বার্থপর, বেইমান মেয়ে! যে বাড়িতে গেছিস তাদের সাথেও তো বেইমানি করে রেখেছিস। সে খবর কি তোর বর জানে? মনে তো হয় না যে জানে, যদি জানত তাহলে তোকে কোনদিন নিজের বউ করতে সঙ্গে নিয়ে যেতো না।”
ইফা জোড়ে বলে,”মা! তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো! সাহায্য করার হলে করো নয়তো রিমশা’র বাবা- মা কে বলো তাদের মেয়েকে বোঝাতে।”
নিলুফার বেগম- তুই তাদের সামনে দাঁড়ানোর মুখ রেখেছিস আমার? উঁহু, রাখিস নাই। তাছাড়া তুই যদি ভালো চরিত্রের মেয়ে হইতি তাহলে তোর হয়ে রিকুয়েস্ট করতাম।
কিন্তু তুই তো আগে থেকেই খারাপ। এখন না হয় দাইয়ান কে পটিয়ে পাটিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির বউ হয়েছিস। কিন্তু কিছুদিন আগেও তো মেম্বারের সাথে তোর কতো ভালো সম্পর্ক ছিলো? তা কি তুই অস্বীকার করতে পারবি? এসবের পরেও তুই ভাবছিস রিমশা এতো সহজেই তোকে ওর স্বামী দিয়ে দিবে?”
ইফা- আমি আমার স্বার্থের জন্য যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারি। রিমশা’র স্বামী কেন, দরকার হলে আরো অন্যকারো স্বামী কে হাতিয়ে নিবো। তবুও আমি বড়লোক, টাকাপয়সা আওয়ালা স্বামী নিয়ে সুখে থাকতে চাই। ”
নিলুফার বলে,”হ্যা, তো যা না, শ্বশুর বাড়িতে যা! স্বামী ছাড়া সেই সুখে থাকবি তুই। আমি মনে প্রাণে চাইছি তোর আর দাইয়ানের ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যাক। রিমশা তার লড়াই এ বিজয়ী হোক।”
ইফা রাগে গরগর করে বলে,”তোর মতো মা না থাকাই ভালো। জীবনে কোনদিন শান্তিমত রাখতে পারিশ নাই। আবার আমি শান্তিমত থাকতে চাইছি তাতেও খুশি না। নিজের মেয়ের থেকে অন্যের মেয়ের প্রতি দরদ বেশি তা-ই না? তুই থাক তোর পরোপকার নিয়ে। আমি নিজেই যাচ্ছি নিজের উপকার করতে।”
ইফা প্রস্থান করতেই নিলুফার বেগম মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে কান্না করতে শুরু করে। সারাজীবন কার জন্য সে এতো কষ্ট করেছে? তার সারাজীবনের কষ্টের মেয়েটা এই মূল্য দিলো?
*
*
এদিকে রিমশা’র মা মেয়েকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ইফা এখানে এসেছিল সে খবর।
রিমশা তার বাবা- মা কে চিন্তা মুক্ত থাকতে বলে। রিমশা’র বাবা- মা’র মেয়ের উপর পূর্ণ ভরসা আছে। তারা জানে তাদের মেয়ের জন্য কোনটা উচিৎ হবে। তাদের মেয়ে সঠিক কাজ করবে।
অন্যদিকে ইফার আর বুঝতে বাকি রইলো না, তাকে সাহায্য করার লোকের বড়ই অভাব। ইশশ আজ যদি সে অবিবাহিত থাকতো তাহলে সাহায্য করার জন্য কতো ছেলে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতো। কেন যে ঝোঁকের বসে দাইয়ান কে বিয়ে করতে গেলো? এখন যদি সত্যি ওর সাত বছরের জন্য জেল হয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা। স্বামী ছাড়া সে কাকে নিয়ে বাহাদুরি করবে? আর ঐ বাড়ির মানুষেরা তাকে কোনদিন ও শান্তিতে থাকতে দিবে না। কয়দিন দাইয়ান ছিলো বলে চুপচাপ কাজকর্ম করেছে। এখন তো সে নেই। আর আসবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
তাহলে এখন নিজের নতুন ব্যবস্থা করা দরকার।
গঠনমূলক মন্তব্য না করলে আর গল্পটা কন্টিনিউয়াস করবোনা।কাদের জন্য গল্প দিবো? যারা নেক্সট নাইচ ছাড়া কিছুই বলে না তাদের জন্য? এতো কষ্ট করে গল্প লিখে আপনাদের কাছ থেকে অনেক বড় কিছু তো চাই না! সামান্য একটু গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করবেন। এতটুকু করতে পারেন না?
(কী মনে হয়? ইফা দাইয়ানের জন্য বসে থাকবে? আর রিমশা সে কি তার সব অধিকার সহজেই ছেড়ে দিবে? সব কিছুই এতো সহজ?)
”
”
”
চলবে…..