#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৩৩
সাজিয়া বেগম সমানে ইভানকে ফোন করছে।
ইভান তা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
না ফোন রিসিভ করছে আর না ফোন কাঁটছে।
,
মদের নেশায় মত্ত হয়ে গেলেও মানুষ এতোটা পাগলামো করে না, যেমনটা আজ ইমন করছে।
তাহলে কি তাঁর থেকেও কঠিন নেশায় পড়ে গেছে সে??
ইমনের এই রূপ কখনো দেখেনি মুসকান।
তাহলে কি আজ সত্যি তাঁর মরন হবে??
আগুন ছোঁয়া ভালোবাসায় সে কি ভষ্ম হয়ে যাবে??
গলা থেকে মুখ ওঠিয়ে এক হাত নিয়ে নিলো পিঠে।
ব্লাউজের ফিতায় টান পড়তেই মুসকান ভয়,লজ্জায় শিউরে ওঠলো। একহাতে ইমনের হাত ধরে ফেললো।
ইমন গাড় চোখে মুসকানের দিকে চাইতেই মুসকান চোখ দিয়ে না করলো।
ইমন তাঁর চোখে চোখ রেখেই পিঠে আলতো করে আঁকড়ে ধরলো। সাথে সাথে মুসকান চোখ বুজে ফেললো।
গলাটা যেনো কেউ চেপে ধরেছে একটু আওয়াজও বের হচ্ছে না। আর না ইমন তাঁর কোন বাঁধা মানছে।
নিজের শার্টের বোতামগুলো খুলে শার্ট টা ছুঁড়ে ফেললো। শাড়ির আঁচল সরাতেই মুসকান ইমনের হাতটা শক্ত করে চেপে কাঁপা গলায় বললো,,,
— প্লিজ,,, আমার খুব ভয় করছে।
এমন লজ্জায় ফেললে আমি মরেই যাবো।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের দুহাত বিছানায় চেপে ধরে নিজের সম্পূর্ণ শরীর ওর ওপর ছেড়ে দিয়ে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,
— কেনো বাঁধা দিচ্ছো,,,
যখন কান্না করে অভিযোগ করতে আমি তোমায় ভালোবাসিনা আমি তোমায় একটু ছুঁই না তখন আমার কেমন লাগতো বলো।
আমি তো শুধু দিন গুনেছি সঠিক একটা সময়ের।
এতোদিন তোমার মন খারাপ হতো, ভাবতে তুমি ওদের মতো স্মার্ট না, সুন্দরী না তাই আমি তোমায় কাছে টানি না কিন্তু এটাতো ভুল ধারনা তোমার।
আমার কাছে তোমার চেয়ে অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী আর কেউ নেই। আমি তোমার মতো অসাধারণ নারী আর জীবনে দুটো দেখিনি ইটস ট্রু।
“আমি ভালোবাসি হয়তো কখনো বলিনি”
“বলাবলিতে আমার ভালোবাসা নির্ভর করেনা”
“আমি অনুভূতি তে, দায়িত্বে,সম্মানে বিশ্বাসী”
“কাছে না আসলে আহাজারি করো
কাছে গেলে পালাতে চাও”
এরপর যদি আর কাছে না আসি আর আমি যদি বুঝতে পারি তুমি আমায় কাছে পাওয়ার জন্য ছটফট করছো তাহলে সেদিন দেখবে আমি কি জিনিস।
ইমন বেশ রাগ নিয়েই ওঠে পড়তে নিলো।
মুসকান ভয় পেয়ে গেলো, বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠলো। সব জড়তা কাটিয়ে ইমনের একহাত আঁকড়ে ধরলো।
ইমন বাঁকা হাসলো সে জানতো রাগ দেখালে মুসকান তাঁকে হারানোর ভয় পাবে। চোখে দুষ্টু হাসি নিয়ে তাঁর দিকে ঘুরতেই শক্ত করে জরিয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
ইমনের বেশ রাগ হলো এবার সময়টাকে এভাবে নষ্ট করার কোন মানে হয়??
প্রথম বাসর যে কারনে সবার আড়ালে পুরো একটা বাড়ি ফাঁকা রেখে এতো সব আয়োজন করলাম।
এতোগুলো ভাইবোন যাতে কোন ভাবে এন্ট্রি না নিতে পারে কোন প্রকার বদমাইশির সুযোগ না নিতে পারে সেভাবে ব্যবস্থা করলাম। কি লাভ হলো,,,
নিজের বউই বদমাইশি শুরু করেছে।
নাহ এভাবে হবে না,,, যতো মায়া দেখাবো ততো নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো, মুচকি হেসে মুসকানের দুগালে আলতো করে চেপে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো।
গালে, থুতনিতে গলায়,সমানে কিস করতে থাকলো।
মুখের কাছে এসে ঠোঁট দিয়ে গালে বয়ে চলা পানি গুলো শুষে নিলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
সেধে আদর দিতে এসেছি গ্রহন করো মিসেস।
ইমন চৌধুরীর আদর পাওয়ার জন্য কতো মেয়ে কাঙাল হয়ে আছে তা কি তুমি জানো।
মুসকান চোখ দুটো খুললো রাগি চোখে ইমনের দিকে তাকাতেই ইমন টপ করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়িয়ে দিলো।
আবারো কপালে, নাকে, গালে চুমু একে ঠোঁটে ঠোঁট দিতে নিতেই মুসকান এক হাতে বাঁধা দিয়ে মুখ সরিয়ে নিয়ে বললো,,,
— সব আলো নিভিয়ে দিন,আপনি এভাবে আমাকে দেখতে থাকলে আমি বাঁচবো না।
কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই ইমন শাড়িটা কৌশলে হাতে পেঁচিয়ে একটানে খুলে ছুঁড়ে ফেললো।
মুসকান আঁতকে ওঠে দুহাতে নিজের মুখটা ঢেকে ফেললো।
— কিভাবে তুমি মরো সেটাই তো দেখতে চাই।
তোমার সব লজ্জা বিসর্জন দেওয়ার পালা আজ।
বলেই বুকে মুখ গুজে দিলো।
মুসকান সাপের মতো মোড়ামুড়ি শুরু করে দিলো।
ইমনের চুলগুলো খামচে ধরলো।
ইমন ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে নিলো পেটের দিকে পরপর চুমু দিতে দিতে তলপেটের কাছে পৌঁছাতেই মুসকান কেঁপে কেঁপে কাঁদতে শুরু করলো।
ইমন চোখ তুলে একবার চেয়ে মুসকান কে দেখে নিলো। সুখের সাগরে ভাসতে ইচ্ছে হলো খুব করে।
তাই আর এক মূহর্ত দেরী করলো না।
মুসকানের সম্পূর্ণ শরীর নিজের আয়ত্তে করে নিলো।
কপালে আলতো করে চুমু খেলো। দুহাতে তাঁর দুহাত রেখে আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে আঁকড়ে ধরলো তাঁর হাতজোরা।
“পূর্ণতা পেলো দুটো হৃদয়ের অসীম ভালোবাসার”
“আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো ইমন মুসকানকে ”
“ভালোবাসার অন্য এক রূপ চেনালো আজ ইমন মুসকান কে ”
“সেই সাথে উজার করে দিলো তাঁর বুকে জমানো অজস্র প্রেমকে”
তাঁর মতো প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসায় উন্মাদনায় মত্ত হয়ে রইলো মুসকান।
,
ফজরের আজান কানে ভাসতেই মুসকান নড়ে চড়ে ওঠলো। ইমন এখনো তাঁর পুরো শরীর নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। তাঁর ভারী শ্বাস পড়ছে ঘাড়ে।
ঘুমিয়েছে বুঝতে পারলো।
তাঁর সাথে কি সব ঘটে গেছে ভাবতেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো কেমন।
“মানুষ টা চোখ বুজে আছে চোখ খুললেই আমার মরন ” “ইশ কিভাবে সামনে থাকবো আমি ”
“ওনি এমন পাগলামি কেনো করলেন”
“ওনি কি ছোট বাচ্চা হয়ে গেছিলেন”
“ওনার চাহনী,ওনার ছোঁয়ায় এতো নেশা কেনো ছিলো”
“নিজের শরীরটাকে আর নিজের মনে হচ্ছে না তাঁর”
“সবটাই যে ইমনের দখলে চলে গেছে”
“এতো আদর এতো ভালোবাসা কোথায় রেখেছিলেন ওনি” ইমনের দিকে তাকালো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে কে বলবে এই লোকটা তাঁর সাথে সারারাত কি অসভ্যতামিগুলো না করেছে???
জ্বিভে কামড় দিলো মুসকান।
“ভাগ্যিস শুনে নেয় নি শুনে নিলে আর রক্ষে থাকতো না ” ভেবেই লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে গভীর এক শ্বাস ছাড়লো।
তাঁর সকল ভাবনায় ছেদ পড়লো কলিং বেলের আওয়াজে।
মুসকান ভয়ে চুপসে গেলো। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ কি করে??
এমন ভাবে বাজাচ্ছে কান যেনো এবার ফেটে পড়বে।
মুসকান ভয়ে ভয়ে ইমনের মাথায় হাত রেখে ডাকলো,,,
— শুনুন,,,এই যে শুনছেন,,,
ইমন আরো গভীর ভাবে জরিয়ে বললো,,,
— ডেকোনা দু’ঘন্টা পর জাগিয়ে দেবে।
— কলিং বেল বাজছে ওঠুন না,,,ভয় করছে আমার।
ইমন একটু নড়ে চড়ে ওঠতেই মুসকানের দিকে চেয়ে একহাত ডানপাশে দিয়ে শাড়িটা হাতে নিয়ে মুসকানের দিকে দিয়ে বললো,,,
— শাওয়ার নিয়ে নাও ফার্স্ট।
মুসকান লজ্জায় শেষ,,, দ্রুত শাড়ি নিয়ে নিজেকে ঢেকে বিছানা ছেড়ে ওঠে পড়লো।
ইমন ভ্রু কুঁচকে ভাবলো,,,
— এই সময় কে এলো।
নাহ একসাথেই শাওয়ার নিয়ে নেই দ্রুত হবে।
মুসকান সোঁজা হয়ে দাঁড়াতেই তাঁর মাথাটা ঝিম ধরে গেলো। বুঝলো না ঘুমানোর জন্য এমন লাগছে।
দ্রুত কয়েক পা ফেলতে নিতেই তাঁর পা সহ কোমড় অবদি ব্যাথায় টনটন করে ওঠলো।
ভয়ে এক ঢোক গিলে চোখ পিটপিট করে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো।
ইমন ওঠে গিয়ে তয়ালে গলায় পেঁচিয়ে বাথরুম পা দিতে নিয়েও থেমে গেলো।
ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকালো,
ধীর পায়ে হাঁটছে,,, ওর কি কষ্ট হচ্ছে??
হলেই কি মুখ ফুটে তো বলবে না।
আর এই কষ্ট আমি দিয়েছি তাহলে তো কথাই নেই।
এতো ভাবার সময় না নিয়ে মুসকানের কাছে গিয়ে পাজাকোল করে নিয়ে বাথরুম দাঁড় করিয়ে দুজন একসাথেই শাওয়ার নিয়ে নিলো।
দুজন একসাথে ফজরের নামাজটাও আদায় করে নিলো। মুসকান লজ্জায় একটা কথাও বলছে না বেশ চুপচাপ।
নামাজ শেষে ইমন ওঠে পড়লো।
কিন্তু মুসকান ওঠছে না।
ইমন কিছু সময় ওয়েট করলো।
মুসকানের মুখটা কেমন ফ্যাঁকাশে।
সে আস্তে করে ওঠার চেষ্টা করছে পারছেনা।
ইমন বেশ বুঝতে পারছে ওর ওঠতে সমস্যা হচ্ছে।
হওয়ারই কথা ৪৫কেজি ওজনের লেডি হয়ে সারারাত ৭৫কেজির ভাড় বহন করা সত্যি মশকিলের। কিন্তু কি করা যাবে কিচ্ছু করার নেই।
এটুকু তো সহ্য করতেই হবে ভেবেই মৃদু হাসলো।
মুসকানের দিকে একহাত এগিয়ে দিতেই মুসকান চোখ তুলে তাকালো। ইমন অমন চাহনী দেখে তাঁকে
পাজাকোল করে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে আরেকটা তয়ালে এগিয়ে বললো,,,
এটা দিয়ে মাথা মুছে নাও, আমি গিয়ে দেখি কে এসেছে।
দরজা খুলতেই অভ্র কান্না করে ইমনকে জরিয়ে ধরলো। হাউমাউ করে কাঁদছে অভ্র।
— ব্রো তোকে এতো ফোন করছি সুইচ স্টপ।
ল্যান্ড লাইনে শতশত ফোন করেছি বাধ্য হয়ে এখানেই এলাম দু’ঘন্টা যাবৎ কলিং বেল বাজাচ্ছি।
ব্রো সব শেষ, সব শেষ।
ইমন স্তব্ধ হয়ে গেলো। অভ্রর এমন আর্তনাদ তাঁর অন্তর টা কাঁপিয়ে তুললো।
গম্ভীর গলায় বললো খুলে বল কি হয়েছে??
অভ্র কান্নার বেগ থামিয়ে ইমন কে সব খুলে বলতেই ইমন তাঁর হাত দুটো শক্ত মুঠ করে ফেললো।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো চল আমার সাথে।
অভ্র হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ইমন থেমে গেলো,,,
— গাড়িতে বোস আমি দুমিনিটে আসছি।
দৌড়ে উপরে চলে গেলো ইমন। মুসকান চুলমুছে তয়ালেটা রশিতে মেলেছে সবে।
ইমন দুম করে এসে মুসকানকে জরিয়ে ধরলো।
রাগে ফুঁসছে সে।
মুসকান ভয় পেয়ে গেলো।
মিনমিনে স্বরে বললো কি হয়েছে,,,
ইমন মুসকানকে ছেড়ে কপালে কিস করে নিয়ে বললো,,,
সায়রী আসবে কিছুক্ষন পর বাড়ির বাইরে এক পা ও রাখবেনা । আমি যতোক্ষন না আসবো এ বাড়ি থেকে কোথাও বের হবে না তুমি। “ইটস মাই অরডার” পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক আমার আদেশ তুমি অমান্য করবে না।
ফ্রিজে হালকা খাবাড় আছে খেয়ে ড্রয়ার থেকে শরীর ব্যাথার ওষুধ টা খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে নাও কেমন। কপাকে আবারো চুমু খেয়ে মুসকান কে ছেড়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে গেলো ইমন।
,
জনি সহ সাত জন কে বেঁধে পা থেকে মাথা অবধি ক্রমাগত আঘাত করছে ইমন সহ ইমনের বাকি লোক গুলো। সাইটে পুলিশ ঘেরাও করে আছে।
সাতজনকেই গোপনাঙ্গে এমন আঘাত করা হলো যে সাত জনই সেন্সলেস হয়ে গেলো।
ইমন চিৎকার করে বললো ইভান কুত্তার বাচ্চা কে আমার সামনে নিয়ে আয়।
এই পুলিশ যা একরামুল চৌধুরীর কুসন্তান কে ধরে নিয়ে আয় আমার সামনে।
— স্যার ওনি পাগলের মতো ছটফট করছে।
আপনার মা ওনাকে মারতে মারতে আধ মরা করে ফেলেছে। আপনার বোনের অবস্থা ভালো না। আপনাকে এখুনি যেতে বলা হয়েছে সেখানে।
আপনার দূরসম্পর্কের বোনকে ইভান ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে সে এখন হসপিটালে ভর্তি।
চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ছোট করে এক পার্ট দিলাম।
ইনশাআল্লাহ রাতে আরেক পার্ট দিবো।