#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৩১
মুসকানকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখে নদী চেচামেচি শুরু করে দিলো।
নাজমা চৌধুরী এসে বললো,
— আরে রাগারাগি করিস না। দাদু ভাইয়ের খাবাড় বানাচ্ছে। তাঁর আবার গিন্নির হাতের খাবাড় ছাড়া মুখে খাবাড় রুচে না।
মুসকান বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।
কাজের মহিলা ফিরোজা খাতুন মুচকি হাসলো।
তা দেখে মুসকানের গাল দুটো লালে লাল হয়ে গেলো।
— ওহ! তা ঠিক আছে। ইমনের কাজ ছাড়া আর একটা কাজ ও মুসকান করবে না।
এতো বড় বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই তাঁরাই সব করবে। ওর এখন সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা নয়। এখন ওর ঠিকভাবে পড়াশোনা করা উচিত।
— মামনি কাজ করতে আমার ভালোই লাগে।
— চুপ করো তুমি। তুমি এখনো ছোট এ বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য তুমি। তোমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তোমার মামনি আছে। মামা আছে, ইমন রয়েছে।
মুসকান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে কাজে মনোযোগ দিলো।
,
ডায়নিং টেবিলে সকলকেই একসাথে খেতে দিয়েছে।
মুসকান ইমনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো নদী জোর করে তাঁকে ইমনের পাশের চেয়ারে বসিয়েছে।
সবাই এলেও ইভান, সাজিয়া,রিতিশা আসেনি।
ইভান ঘুমাচ্ছে, আর রিতিশা ব্যাগপএ গুছিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।
সাজিয়া পিছন পিছন আসছে আর বলছে,,,
— মা আমার কদিন পর অনুষ্ঠান এই কটাদিন না হয় থেকে যা।
— মামনি প্লিজ আমার খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।
এছাড়া নেক্সট উইকে আমি বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে দেখা করে যাবো।
সবাই ওদের দিকে চেয়ে আবার খেতে মনোযোগ দিলো।
ইয়াশফা বললো,– আপি আজি চলে যাচ্ছো।
প্লিজ আর কটা দিন থেকে যাও না। আমরা অনেক মজা করবো।
রিতিশা নিচে এসে দাঁড়ালো,,,
— হ্যাঁ তুই তো বলবিই তুই যে আমার নিজের বোনের থেকেও বেশী ভালোবাসিস। কিন্তু এ বাড়িতে অনেকেই চায় না আমি এখানে থাকি তাই চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি যাওয়ার আগে দেখা করে যাবো তোর সাথে সেই সাথে তোর বার্থ ডে গিফট টাও দিয়ে যাবো।
ইয়াশফা খাওয়া ছেড়ে ওঠে গিয়ে রিতিশাকে জরিয়ে ধরলো। রিতিশাও ইয়াশফাকে আদর করে কপালে চুমু খেলো।
— দাদী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো তা মেয়ে যাবে যখন কটা খেয়ে যাও।
রিতিশা দাদীর তাচ্ছিল্যের হাসি দেখে মনে মনে বললো,
— এই হাসি ফুরানোর দিন এলো বলে।
ইমন মুসকানের দিকে চেয়ে মনে মনে হাসলো।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো রিতিশা।
,
ইমন রেডি হচ্ছে মুসকান তাঁর পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্লাসে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
— কাল একটু কলেজ যেতে হবে আপনি যাবেন সাথে?
ইমন পানিটা খেয়ে গ্লাস হাতে দিয়ে বললো,
— সময় হবে না।
ইমন বেরিয়ে গেলো মুসকান মুখটা ভাড় করে বসে রইলো।
,
ইয়ানা,ইয়াশফা, নিপ্রা, নিলয় বসে আড্ডা দিচ্ছে।
মুসকান ও নিচে নেমে এলো। অভ্র বাইরে ছিলো সেও চলে এলো। তাঁদের আড্ডা টাও বেশ,জমে ওঠলো।
ইয়াশফা এতোদিন মুসকান কে পছন্দ না করলেও
যখন থেকে শুনেছে মুসকান তাঁরই ফুপুর মেয়ে তখন থেকেই মুসকানের ওপর সব রাগ চলে গেছে।
ভাবী হিসেবে সেও মেনে নিয়েছে মুসকান কে।
ইয়াশফার আচরনে ইয়ানা,মুসকান দুজনই অবাক খুশিতে চোখে পানি এসে গেলো মুসকানের।
নাদী আর নাজমা চৌধুরী ড্রয়িং রুমে তাঁদের সকল ছেলেমেয়েদের একসাথে দেখে তৃপ্তি পেলো ভীষণ।
— ইভানটাই আলাদা হলো সকলের থেকে।
ছেলেটা তো আমাদেরই বংশধর। মায়ের কুশিক্ষার জন্য ছেলেটা আজ এমন হয়েছে। সব ভাই বোনরা যেখানে এক সেখানে ইভান কেনো আলাদা হবে।
নদীর আফসোস দেখে নাজমা চৌধুরী বললেন,
— তুই আফসোস করিস কেনো? দেখিস একদিন বৌমারও পতন হবে। বৌমাই আফসোস করবে ছেলেকে সুশিক্ষা দিতে না পারার জন্য।
— মা আমি চাই আমার ভাই, বোন,আমার ছেলেমেয়ে রা সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকুক।
সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠুক।
— তোর আমার চাওয়াতে কি হবে। যে জন্ম দিছে সেই তো ছেলেটার মন বিষিয়ে দিছে এই বিষ উপরওয়ালা ছাড়া কেউ তুলতে পারবে না।
,
সেদিনের সেই মারটা আজো ভুলতে পারেনি ইভান।
সেদিনের পর প্রতিটা রাত সে যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। বাড়ির ড্রয়িং রুমে যন্ত্রণায়,সারারাত কাতরিয়েছে অথচ কেউ তাঁর পাশে আসেনি।
ইমন চৌধুরী যদি তাঁকে নিজের ভাই মনে করতো তাহলে এভাবে আঘাত করতে পারতো না।
সৎ ভাই সৎ ভাই ই হয় সে কোনদিন আপন হয় না।
বিছানায় বশে রাগে ফুঁসছে আর ভেবে যাচ্ছে ইভান।
আজো সে ঘুমাতে পারে নি সারারাত ছটফট করেছে। এই ছটফটানি থেকে বাঁচতেই সেদিনের কথা ভুলে থাকার জন্যই দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এ বাড়ি আসার পর মুসকান কে দেখো আবারো সেই যন্ত্রণা টা তীব্র হয়ে গেছে।
তাঁর বাবা-মা, বোন ছাড়া এ বাড়ির কেউ তাঁকে ভালোবাসে না। ঘরে, বাইরে সবাই শুধু ইমন ইমন করে। এখন এসেছে মুসকান।
ইমন, মুসকান। ইমন, মুসকান।
এই দুটো নাম আমি মুছে দিতে চাই।
ইয়েসস,,,সব ধ্বংস করে দিবো আমি।
একরামুল চৌধুরীর ছেলে শুধু ইমন চৌধুরী নয়।
ইভান ও অথচ ইভানের কোন অস্তিত্বই নেই।
মা ঠিক বলে সব ঐ ইমন চৌধুরীর কার্সাজি।
সব নিজে দখল করে নিচ্ছে এক সময় ঠিকই আমাদের ধূলিসাৎ করে দিবে।
আমি বেঁচে থাকতে এটা হতে দিবো না ইমন চৌধুরী।
তোমাকে হারানোর মন্ত্র একটাই, তোমাকে নিঃশ্বেস করার মন্ত্র একটাই তা হলো মুসকান কে আঘাত করা।
তুমি শুধু আমার ক্ষতি করো নি তুমি আমার আরেক বোনের জীবনও নষ্ট করেছো আর তাঁর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে মি.ইমন চৌধুরী।
,
অফিস যেতে না যেতেই ইমনের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট রিতিয়া হ্যান্ড ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজেকে দেখে নিলো। সব ঠিকঠাক আছে দেখে নিয়েই ইমনের সামনে গিয়ে বললো,,,
— গুড মর্নিং স্যার।
— গুড মর্নিং।
ইমনের পিছন পিছন যেতে লাগলো রিতিয়া।
ইমনের মুখের এই গুড মর্নিং শোনার জন্যই সে এক ঘন্টা আগেই অফিস চলে আসে।
কোন ভাবেই এই জিনিসটা সে মিস করতে চায় না।
তাঁর ঘরে বউ থাকুক তাতে তাঁর কষ্ট নেই, সারাদিন যেটুকু সময় অফিসে ইমনের সঙ্গে থাকে এইটুকুতেই সে স্বর্গ সুখ পায়। শুধু মাএ ইমনের জন্যই নিজের বাবার এতোবড় বিজনেস রেখে এখানে পি এ হিসেবে জয়েন করেছে। ইমনের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট সে যা নিয়ে তাঁর গর্বের সীমা নেই।
ব্যাক্তিগত জীবনে তাঁকে প্রত্যাখান করলেও বিজনেস জীবনে প্রত্যাখান করতে পারেনি ইমন।
ইমন গিয়ে নিজের চেয়ারো বসলো।
রিতিয়া বেশ খুশি হয়ে বললো,,,
— স্যার এবারেও তো আমরা সকল স্টার্ফ রা মিলে আপনাদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি তাইনা।
ইমন গম্ভীর চোখে চেয়ে বললো,
— বাবা সবাইকে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়েছে।
সো অহেতুক কথা-বার্তা না বলে কাজে মন দিন।
রিতিয়ার হাসি মুখটা চুপসে গেলো।
নিজেকে ঠিক রেখে কাজে মন দিলো সে।
,
পুরো বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো অনুষ্ঠানের তোরজোর। আগামীকালই অনুষ্ঠান ।
সকল আত্মীয় -স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত,জানাবে চৌধুরী পরিবার সহ আশে পাশের সকল পরিবারের সদস্যরাই।
বিশাল বড় বাড়ি হওয়া সত্বেও অসংখ্য মানুষের রমরমা শুরু হয়ে গেলে এ বাড়িতে পা ফেলার জো থাকে না।
ইমন এই দিন নিয়ে সুন্দর, রোমান্টিক কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে। যেহেতু কটা দিন সময় পেয়েছে তাই সেই দিনগুলো সে তাঁর মুগ্ধময়ীর মুগ্ধতায় ডুবে থাকতে চায়।
তাঁর চোখে তাঁর মুগ্ধময়ীর মরন দেখতে চায় খুব করে। কাউকে না জানিয়েই সে তাঁর বাড়িতে ব্যাবস্থা করে ফেলে, প্ল্যান,,, হুট করেই মুসকান কে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।
“কিছু প্ল্যান কারো জীবন থেকে অভিশাপ মুক্ত করে তো কারো জীবনে অভিশাপ বয়ে আনে”
ইমন নিজে গিয়ে চারজনের জন্য একি রকম ড্রেস কিনে নিয়ে এসেছে।
যেহেতু মুসকান সেলোয়ার-কামিজ ছাড়া অন্য ড্রেসআপ পড়ে না সেহেতু চারজনের জন্যই সেলোয়ার-কামিজ কিনে টেইলার্স থেকে বানিয়ে কমপ্লিট করে নিয়ে এসেছে। সাথে মুসকানের জন্য একটা পারপেল কালারের সিল্ক শাড়ীও কিনেছে যা সে সকলের আড়ালে নিজের কাছে রাখলো।
শাড়ীর সৌন্দর্যে তাঁর মুগ্ধময়ী কে একা দেখতে চায় সে।
,
ইয়ানা,ইয়াশফা,নিপ্রা , মুসকান চারজন একি ড্রেসআপে নিচে নেমে এলো।
হলুদ রঙের জরজেট থ্রিপিস পরিহিত চারজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।
ইমন চারজনকে দেখেই বাঁকা হাসলো।
চারজনের মধ্যে শুধু একজনের মাথায়ই কাপড় দেওয়া যাকে ঠিক পুতুলের মতো লাগছে।
“পুতুল বউ ” ইমনের মুগ্ধময়ী।
,
কিছুক্ষনের মধ্যেই অফিসের সকল সদস্যরাই চলে এলো। সকলেই ইমনের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
রিতিয়া ইমনকে দেখে আবারো ক্রাশ খেয়ে গেলো।
নিজের আবেগটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না।
উত্তেজনার বসে দৌড়ে গিয়ে স্যার বলেই গালে গাল ছুঁয়িয়ে হাগ করলো।
ইমন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
— মিস রিতিয়া বিহেইভ ইউর সেল্ফ।
রিতিয়া জিভে কামড় দিয়ে ওঠে পড়লো।
— সসরি স্যার আসলে আপনাকে যা লাগছে জাষ্ট অসাধারণ। আপনি একদম তামিল হিরোদের মতো না না তাঁর থেকেও বেশী।
ইমন বিরক্তি নিয়ে ডানপাশে ঘুরতেই হকচকিয়ে গেলো।
মুসকানের চোখ দুটো দিয়ে যেনো এবার বিস্ফোরণ হবে। গাল দুটো ফুলিয়ে কড়া চোখে চেয়ে আছে সে।
রিতিয়া তাঁর প্রশংসা করতেই থাকলো।
ইমন আস্তে করে সেখান থেকে সরে গিয়ে দিহান কে ফোন করলো।
,
ওই মেয়েটা কে ওনাকে জরিয়ে ধরেছিলো।
আর ওনিও কিছু বললো না। ওনি তো অফিসের লোকদের সাথে এসেছে। তাহলে ওনিও কি অফিসে জব করে?? অফিসে জব করলে ওনাকে জরিয়ে ধরলো কেনো?? আর কেউ তো এমন করেনি।
আর ওনিও কিছু বললো না রাগ,অভিমান নিয়ে মুসকান সকলের মাঝ থেকে চলে গেলো।
বুকে ফেটে কান্না আসছে তাঁর। অন্য একটা মেয়ে ইমনকে জরিয়ে ধরেছে তা সে সহ্য করতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর মন চাচ্ছে মেয়েটার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে কিন্তু এতো লোকের ভীড়ে কিছু করতেও পারবে না । রুমে বসে সমানে কেঁদে যাচ্ছে।
ইমন সারাবাড়ি মুসকানকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।
সায়রী,দিহান এসেছে সুপ্তি মুসকানের কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
সব জায়গায় খোঁজা শেষে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইমন।
রুমে ঢুকতেই কারো ফুঁপানির আওয়াজ ভেসে এলো। তাঁর আর বুঝতে বাকি রইলো না তাঁর মহারানী কাঁদছে।
লাইট অন করে মুসকানের দিকে এগিয়ে গেলো।
এক হাত পকেটে রেখে গম্ভীর গলায় বললো,,,
— এখানে কি হচ্ছে।
মুসকান ইমনের কথা শুনেও শুনলো না নাক টেনে টেনে কাঁদতে লাগলো।
ইমন নিচু স্বরে একটা ধমক দিয়ে বললো,,,
— কি ব্যাপার বোকার মতো কাঁদছো কেনো??
মুসকান অভিমানে আরো জোরে কেঁদে ফেললো।
— হ্যাঁ আমি তো বোকাই। বোকা বলেই তো আমার স্বামীকে অন্য মেয়েরা এসে জরিয়ে ধরে।
ঐ মেয়েটা আপনার অফিসে কাজ করে তাইনা।
তাই তো আপনি সারাদিন অফিসে থাকেন।
আর কলেজে যাওয়ার সময় ও আপনার হয় না।
সেদিন গার্ডিয়ান দের নিয়ে মিটিং হলো আপনি যান নি। অফিসে কাজ ছিলো, থাকবে নাই বা কেনো?
অমন সুন্দরী মেয়েরা যেখানে আছে কাজ তো থাকবেই। এসে আবার জরিয়ে ধরে বলেই শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।
ইমনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রিতিয়ার ওপর।
মুসকানের ওপর ও রাগ হচ্ছে এই সাধারণ বিষয় নিয়ে কেমন কান্না জুরেছে।
— স্টপ ইট! কান্না থামাও বলছি নিচে চলো সায়রী এসেছে।
মুসকান আরো জোরে কেঁদে ফেললো।
— আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছেন। আর ঐ মেয়েকে কিছুই বলেননি ঐ মেয়ে আপনাকে জরিয়ে ধরার পরও আপনি শান্ত ছিলেন। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মুসকান।
ইমন তারাতাড়ি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
কেউ এসে পড়লে বাজে পরিস্থিতি তৈরী হবে।
বিছানায় এসে মুসকানের পাশে বসলো ইমন।
একহাত দিয়ে টেনে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এলো। চোখের পানি গুলো আলতো হাতে মুছতে মুছতে বললো। এততো জেলাস হওয়ার কিছু নেই।
ঐ মেয়েটা অমনই আর আজ হুট করে এমনটা করে ফেলেছে। এমনিতে ধারে কাছে আসার সাহস করেনা কাজ ছাড়া। যা হয়েছে ঠিক হয়নি আমার বউকে কষ্ট দেওয়া একদম উচিত হয়নি ওর।
আর কখনো হবে না ওকে ক্ষমা করে দাও।
মুসকান ইমনের দিকে রাগি চোখে তাকালো।
— ওর হয়ে আপনি ক্ষমা চাইছেন কেনো।
আপনার কিসের দায় ওর প্রতি।
ইমনের রাগ ওঠে গেলো। কাউকে মানানোর বিষয় টা সে জানে না বুঝে না, আর না মানাতে চায়।
ওকে মানাচ্ছে তবুও এমন প্যাচাচ্ছে।
— চুপ এততো বেশী বুঝো কেনো।
যা বলছি তাই শুনো চুপচাপ নিচে আসো।
মুসকান মুখ ফুলিয়ে আবারো কাঁদতে শুরু করলো।
আওয়াজ যেনো এবার চার দেয়াল ভেদ করে বাইরে চলে যাবে।
ইমন উপায় না পেয়ে মুসকানের পিঠে শক্ত করে চেপে নিজের কাছে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
অনেকক্ষন পর ঠোঁট জোরা ছেড়ে একহাতে বুকে জরিয়ে আরেক হাতে চোখের পানি মুছে দিলো।
মুসকান জোরে শ্বাস নিচ্ছে সেই শ্বাস বাড়ি খাচ্ছে ফুঁপানি তে।
ইমন কপালে চুমু খেলো তারপর গালে তারপর ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো — বোকার মতো কাঁদার
কিছু হয় নি মুসকান।
আমাকে শান্ত থাকতে দাও। আমাকে ক্ষেপিও না তাহলে কিন্তু নিজে ঠিক থাকতে পারবে না।
কি হয়েছে হুম,,,তোমার মানুষ টা তোমারই আছে।
কারো সাধ্য আছে তোমার মতো বাঘিনীর থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার।
মুসকান কিছুটা শান্ত হয়ে ওঠে সোজা হয়ে বসলো।
— আপনি একটু চোখ দুটো বন্ধ করুন।
কান্নামিশ্রিত গলায় কথাগুলো বললো মুসকান।
ইমন চোখ ইশারা করে বললো,,,
— কেনো??
মুসকান কেঁদে দিলো।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করলো।
মুসকান দ্রুত বাথরুম গিয়ে মগে পানি হাতে তয়ালে নিয়ে এলো। তয়ালে ভিজিয়ে চিপে ইমনের গালে মুছে দিতে লাগলো।
ইমন হতভম্ব হয়ে মুসকানের দিকে তাকালো।
হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
“কখনো মনে হয় মেয়েটা খুব ম্যাচিওর ”
“কখনো মনে হয় একেবারেই আনম্যাচিওর”
“একটা অবুঝ নিষ্পাপ প্রান যেনো এখন তাঁর সামনে রয়েছে ”
গালে মুছা শেষে অনুরোধ স্বরে বললো এবার এই পোশাকটা পাল্টে নিন ।
— এততো হিংসে কোথায় ছিলো হুম।
— জানিনা আপনি পোশাক পাল্টে নিচে চলে আসুন।
মুসকান যেতে নিতেই ইমন মুসকানের একহাতে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোলের ওপর বসিয়ে গাল গাল ছুঁয়িয়ে বললো,,,
— ইমন চৌধুরী কে আদেশ করছো??
আদেশ তো মানবোই কিন্তু আমায় রিটার্ন কিছু দিতে হবে।
মুসকান শিউরে ওঠলো বুকের ভিতর ধুরুধুরু করতে লাগলো তাঁর। মিনমিনিয়ে বললো কি??
কানের কাছে নাক ঠেকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফিসফিস করে বললো,,,
— আজ রাতেই টের পাবে।
মুসকান চোখ দুটো বড় বড় করে বললো,,,
— কিহ,,,
ইমন মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে বললো,,,
— পোশাক পাল্টাবো কাবার্ড থেকে পোশাক বের করে আমার হাতে দিয়ে নিচে যাও ওরা ওয়েট করছে।
মুসকান কিছু প্রশ্ন করতে তাকাতেই ইমন চোখ গরম করলো।
তা দেখে সে মাথা নিচু করে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো।
ইমন বাঁকা হাসলো।
,
চলবে………
ইনশাআল্লাহ নেক্সট পার্টে ধামাকা হবে?