হৃদপিন্ড পর্ব ২৬+২৭

0
486

#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-২৬+২৭

আজ প্রথম ইমন কলেজে পৌঁছে দিলো মুসকান কে।
মুসকানের সব আফসোস শেষ হলেও আরেকটা আফসোস হচ্ছে।
–ইশ কেনো যে ওনাকে নিয়ে এলাম। বেহায়া বেশরম মেয়েগুলা কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো। শয়তানিগুলো এই ছিলো তোদের মনে। অন্যের বরের দিকে এতো নজর কিসের। খুব তো বুড়ো বুড়ো করতিস আজ এভাবে কেনো দেখছিস।
বির বির করে কথা গুলো বলতে বলতে ক্লাশরুমের দিকে যাচ্ছে সে।
টুম্পা নামের মেয়েটা তখনি মুসকানকে এসে জাবটে ধরলো।

–দোস্ত তোর বর টা কি হ্যান্ডসাম রে,,, কে বলবে ওনার এিশ হয়েছে দেখেতো ২৪,২৫ বছরের যুবকদের মতোই লাগছে ইশ এমন সুপুরুষের বউ হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বলেই চোখ টা বুজে ফেললো।

মুসকানের যেনো শরীরে আগুন ধরে গেলো।
তাঁর বরকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে মন ভরে নি। এখন এসেছে অনুভূতি দেখাতে প্রচন্ড রেগে এক ঝ্যাংটা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো টুম্পা কে।

–খবরদার বলে দিলাম তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে, তাঁকে নিয়ে তো তোর চোখে মুখে এতো ভালোলাগা,মুগ্ধতা, এক্সাইড হতে দেখিনি।
আমার বরকে দেখে এতো কিসের এক্সাইটেড রে।

টুম্পা ভীষম খেলো এতো শান্ত স্বভাবের মেয়েটা এমন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো। বেশ লজ্জাবোধ হলো টুম্পার।

মুসকান এক ঝাঁক রাগের ঝলকানি নিয়ে হনহন করে ক্লাশের ভিতর চলে গেলো।
সেখানে গিয়েও আরেকদফা রাগ হলো তাঁর সবার মুখে এখন শুধু ইমন আর ইমন।

একজন বললো,–জানিস ওনি না আমার বড় আপুর ক্রাশ ছিলো। পুরো ভার্সিটির সবাই ওনার জন্য ফিদা।

আরেকজন বললো–আমার ভাই তো ওনার অফিসেই জব করে আগে নাকি মেয়েরা ওনার বাবার কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরতো। কতো মেয়ে নাকি সুইসাইড করার ভয় ও দেখিয়েছে। একজন নাকি হাতের শিড়াও কেটে ফেলেছিলো সাতদিন হসপিটালে ছিলো। ওর পরিবারের এতো অনুরোধেও ইমন চৌধুরী হসপিটাল মুখী হয়নি।

–আরে যা যা আগের কথা বাদ দে আমি তো এখনো ফিদা ইশ কি বডি রে একদম বলিউডের হিরোদের মতো। দাঁড়ি দেখেছিস একদম তামিল হিরোদের মতো।

–তুই বডি দেখলি কি করে??

জেরিনের প্রশ্নে সকলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।
কনা বললো –আরে ইয়ার এমন বডি সরাসরি দেখে কি বলতে হবে নাকি বাইরে থেকেই বোঝা যায়। ফিটনেস দেখিসনি??যখন সানগ্লাসটা খুলছিলো না তখনি আমার হার্টবিট ১০০গতিতে বেড়ে গেছিলো।

–এই চুপপ, ওনি ম্যারিড মুসকানের বর। মুসকান কিন্তু সবই শুনছে চুপ কর তোরা।
জেরিনের কথা শুনে সবাই ঘুরে তাকাতেই হকচকিয়ে গেলো।
মুসকান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়েছে তাঁদের দিকে।
এই বুঝি বোম ব্রাষ্ট হবে।
সকলেই মুখ কাচুমাচু করে যে যার মতো মুখ লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। মুসকান কিছু বলতে যাবে অমনি তন্নি আঁটকে দিলো।
কিন্তু আজ যে মুসকান চুপ থাকবে না তাঁকে তো প্রতিবাদ করতে হবে। তাঁর স্বামীর দিকে এতোগুলা মেয়ে কুনজর দিচ্ছে আর সে চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকবে এ হয় না।

তন্নির হাতটা ছাড়িয়ে কড়া গলায় বললো–
কিরে শাকচুন্নির দলেরা আমার বুড়ো বরের দিকে তোদের এতো কুনজর কেনো?? তোদের ইয়াং বয়ফ্রেন্ড ভালো লাগে না বুঝি??
নেক্সট যদি ওনাকে নিয়ে তোদের মুখে একটা কথাও শুনি তাহলে চুলের মুঠী ধরে সবগুলো চুল ছিঁড়বো মনে রাখিস। মুখে সুই সুতো দিয়ে শেলাই করবো।
পরপুরুষের দিকে নজর দিস লজ্জা করে না।

তন্নি হকচকিয়ে গেলো মুসকানের সাহস দেখে।
মুসকানের বলা প্রত্যকটা বুলি আদেও মুসকানের মুখ দিয়ে বের হচ্ছে তো ভেবেই তন্নি একটু ঝুঁকে তাকালো মুসকানের দিকে।

জেরিন, কনা চুপ করে বসে থাকলেও বাকিরা ঝগরার মুডে কিছু বলতে নিতেই ক্লাসে স্যার ঢুকলো।
তন্নি মুসকানের হাত চেপে ধরে শান্ত করতে করতে সিটে গিয়ে বসলো।
,
ইমন সোফায় বসে ট্রি টেবিলে পা রেখে কোলে ল্যাপটব নিয়ে কিছু ফরমালিটিস পূরন করছিলো।
মুসকান কফি বানিয়ে টেবিলে রেখে ইমনের পাশে গিয়ে বসলো।
কিছু বলবে বলবে ভাব। ইমন কাজের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো।

–কি হয়েছে এনিথিং রং??

–আআপনি আর আমাকে কলেজে দিতে যাবেন না।

ইমন ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে চোখ বুলালো। চোখে মুখে কিছুটা রাগ, এক হাত দিয়ে আরেক হাত মোচড়াচ্ছে। খানিকটা ফুঁসছেও যেনো। ইমন তাঁর দৃষ্টি আবারো ল্যাপটবে স্থির রাখলো।

— আসল কথাটা বলো??

–কি বলবো আমি কি বলবো?? সবগুলো শাঁকচুন্নি আপনাকে গিলে খাচ্ছিলো। ক্লাশে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রত্যেকের মুখে আপনার নাম। আপনি আর আমার সাথে যাবেন না, যাবেন না, যাবেন না ব্যাস।

ইমন হকচকিয়ে,,, ল্যাপটব টা দ্রুত অফ করে একপাশে রেখে একহাতে মুসকানকে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে গালের কাছে মুখ ঠেকালো।

–আমার বউয়ের ভাবমূর্তির তো অভাব নেই দেখছি।
জেলাস,,,ভীষণ জেলাস । কিন্তু আমি তো বারে বারে সিদ্ধান্ত নেই না। আউটসাইট লোকদের আমি কেয়ারও করিনা। সো এসব ভিত্তিহীন আবদার না করাই বেটার।

ইমনের শ্বাস মুসকানের গাল ছুঁয়ে পুরো শরীরেই শিহরণ বয়িয়ে দিলো। তাঁর শ্বাস ঘন হয়ে এলো।

–আপনাকে ওরা চোখ দিয়ে গিলে খাবে,অন্য মেয়েদের মুখে আপনার প্রতি তাঁদের ভালোলাগা, ফিদা হওয়া এসব আমি সহ্য করতে পারবো না।

ইমন চোখ দুটো বুজে ফেললো। মুসকানের গাল থেকে ধীরে ধীরে নাক গলার দিকে নিতে লাগলো পরম আবেশে ঘ্রান নিতে লাগলো তাঁর মুগ্ধময়ীর।

–জাষ্ট ইগনোর,,, এতোসবে কেয়ার করলে তো চলবে না। আকাশের চাঁদ টা তো সবারই ভালো লাগে, সবাই মুগ্ধ হয় চাঁদ দেখে কেউ কি ছুঁতে পারে বলো?
তোমার এই চাঁদ বলো সূর্য বলো সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে তুমি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে ভীড়তে পারবে না। সো শুধু শুধু এগুলো নিয়ে মাথা খারাপ করো না।

মুসকানের যেনো পছন্দ হলো না, আর না,সে গভীরভাবে ভাবলো, অভিমান নিয়েই বললো
–বেশ বুঝেছি আমি আপনিও চান ওরা আপনাকে দেখুক, প্রশংসা করুক বলেই ইমন কে ছাড়িয়ে দিতে নিলো।

ইমন মুসকান কে সোফায় বসিয়ে খানিকটা ঝুঁকে গেলো নিজের দুহাতে মুসকানের দুহাত চেপে বললো
–ইশ কবে বুঝবে তুমি? মাথায় কি বুদ্ধি নেই। না বুঝে অভিমান, রাগ বিরক্ত বলেই গলায় গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
খানিকটা কেঁপে ওঠলো মুসকান। ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলো। সেই ঘন শ্বাসের সস শব্দ যেনো পাগল করে দিলো তাঁকে। একহাতে কোমড় জরিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে আরেক হাত কানের পিছনে চুলে গুঁজে ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। দুহাতে পিঠে খামচে ধরে আছে মুসকান বেশ কিছুক্ষন পর ইমন তাঁকে ছাড়লো।
মুসকান হাঁপাতে লাগলো ভীষণ ভাবে লজ্জায় মুখ লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করলো। ইমন ওড়নাটা মুসকানের দিকে এগিয়ে বললো নিচে চলো খিদে পেয়েছে।

মুসকান লজ্জায় তাঁর দিকে না তাকিয়ে ওড়নাটা নিয়ে খানিকটা ছুটেই পালালো।
ইমন বাঁকা হেসে ফোন বের করে নাম্বার বের করে ডায়াল করলো।

–নেক্সট উইক আসছো তাহলে??

ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না।

–ওকে,এসো সামনে থেকেই দেখো। তাঁর মতো কিনা দুচোখে দেখেই না হয় ফিল করো।

……

— ডোন্ট ক্রাইং। এজন্য কি ফোন দিয়েছি আমি।
ব্যাস আর নয়, ডোন্ট ক্রাইং।

……

–ওকে তুমি কাঁদতে থাকো আমার বউ খাবাড় রেডি করছে আমি গিয়ে খেয়ে নেই। নিপ্রা, নিলয় ও আসছে তো??

…….

–ওকে বাই।
,
ইভান আর রিতিশা এসেছে ভোর ছয়টায়।
সাজিয়া বেগম একরামুল চৌধুরী কে পটিয়ে রিতিশার এ বাড়ি থাকাটা কনফার্ম করেছে। তিনি অবশ্য রিতিশার ভালো মানুষ হয়ে যাওয়ার কথা শুনেই রাজি হয়েছে।

দাদী বিষয় টা ভালো চোখে দেখছে না বেশ রাগারাগি করছে। ইমন দাদীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করেছে। কিন্তু মুসকানের মনের ভিতর ঠিক কতোটা চাপ পড়েছে ইমন বুঝে ওঠতে পারছে না।
রুম গোছাচ্ছে মুসকান। খয়েরি রঙের জর্জেট ওড়ানাটা কোমড়ে বেঁধে বিছানা ঝাড়ছে।
ইমন রুমে যেতেই মুসকান মুখটা মলিন করে কাজে মন দিলো।

ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেলকুনিতে চলে গেলো।
একটা সিগারেট ধরিয়ে মুখে দিলো।

–ওয়েট মুসকান আর কয়েকটা দিন মাএ তারপর সব পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে সবার কাছে।
যারা তোমার দিকে এখনো আঙুল তুলে, যারা তোমাকে এখনো তোমার যোগ্য সম্মান দেয় না তাঁরা খুব শিঘ্রই এসব কিছু দেবে। যখন তাঁরা জানবে তাঁদের থেকে তোমার অধিকার কম নয় এ বাড়ি তখন তাঁরা এমনিতেই মাথা নত করে ফেলবে।
শুধু মাএ একজনের আসার অপেক্ষা।

মুসকান আড় চোখে ইমন কে এক নজর দেখে নিয়ে আবার জামাকাপড় ভাঁজ করতে লাগলো।

–রিতশা কতো সুন্দরী,,, লম্বা, ফর্সা, একদম সিনেমার নায়িকা দের মতো। কতো স্মার্ট, কি সুন্দর সাজগোজ ওনি যদি রিতিশাকে চোখের সামনে দেখে আমাকে ভুলে যায়??

বুকটা হুহু করে ওঠলো মুসকানের। চোখের কোনে বিন্দু জলকনারা ভীড় জমালো। বুকের ভিতর কেমন চীনচীনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। ভয় হচ্ছে ভীষণ।
তাঁর কাছের মানুষ টা তাঁর থেকে দূরে সরে যাবে না তো। কেউ ছিনিয়ে নেবে না তো?তাঁকে আগলে রাখবে তো ভালোবেসে কাছে টানবে তো?
,
বিকেলে সকলেই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে শুধু মুসকান ছাড়া। সে রুমেই আছে ইমনের টুকটাক যা লাগে হাতের কাছে এগিয়ে দিচ্ছে।

ইয়ানা এসে বললো– ভাবী চলো ছাদে যাই আমরা সকলেই আছি ওখানে চলো চলো।

মুসকান ইমনের দিকে তাকালো, ইমন কাজ করছে।

–না যাবো না তোমরা মজা করো আমি এখানেই ঠিক আছি ।

–আরে কিছু হবে না চলো না,,,

হাত টানতে টানতে ইয়ানা বললো দাদাভাই ভাবীকে বলো যেতে।

–হুম,,,যাও রুমে কি করবে এখন যাও ঘুরে এসো।
,
মুসকান ছাদে যেতেই ইভান নিচে নেমে গেলো।
রিতিশা চোখ ডাবিয়ে চেয়ে রইলো মুসকানের দিকে।
মুসকান একপাশে চুপটি করে বসে রইলো।
অভ্র,ইয়াশফা, ইয়ানা গানের কলি খেলছে রিতিশা সেলফি তোলায় ব্যাস্ত মুসকান চুপচাপ ইয়ানার পাশে বসে আছে।

–মুসকান ভাবী এবার তুমি একটা গান শোনাও।

অভ্রর কথায় রিতিশা সেলফি ওঠানো অফ রেখে তাদের কাছে এসে বসলো।

মুসকান বেশ,ইতস্তত বোধ করে বললো,
–আমি এসব পারিনা।
ইয়াশফা সহ রিতিশা হেসে ফেললো।

— সো স্যাড নাচ পারো???

রিতিশার দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে না করলো মুসকান।
রিতিশা ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো কি পারো তুমি??
আই মিন কি আছে তোমার মধ্যে,,,
ওহ সরি তোমার মাঝে কোন প্রতিভাটা আছে??

–রিতিশা আপু কি বলছো,,

–ওহ ইয়ানা, তুমি কি সুন্দর নাচ করো বলোতো।ইয়াশফা কি সুন্দর গান গায়, অভ্রও গান জানে।
আমি নাচ পারি, গান পারি, মডেলিং করি।
সবার যখন এতো প্রতিভা ওর কিছু না হলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়। হাজার হোক ইমন চৌধুরীর ওয়াইফের পরিচয়ে এ বাড়িতে আছে।
চৌধুরী বাড়ির বউ এমন শ্যাকেলে কি মানায়??

অভ্র বললো –মুসকান খুবই ব্রিলিয়ান্ট একজন স্টুডেন্ট, সে নামাজ পড়ে, কোরান পড়ে, খুব ভালো রান্নাও পারে স্পেশালি খুব ভালো কফি বানায়।
এছাড়া দাদা ভাইয়ের ওয়াইফ সে তাঁর মাঝে এমন কোন প্রতিভা নিশ্চয়ই আছে যা বাকিদের নেই তাইতো দাদাভাইয়ের মতো মানুষ তাঁর প্রেমে পড়েছে। পাগলের মতো ভালোবাসে তাঁ কি আর এমনি এমনি। যা তুমি অর্জন করতে পারোনি তা সে ঠিকি অর্জন করে নিয়েছে বলেই এক গাল হেসে ভ্রু নাচাতে লাগলো।

মুখে যেনো ঝামা ঘষে দিয়েছে অভ্র। বেশ রাগ নিয়েই ওঠে গেলো রিতিশা।

–ভাইয়া এভাবে আপিকে কেনো বললি তুই।

–আরে ইশু আমাদের দশটা না পাঁচ টা না একটা মাএ পিচ্চি ভাবী তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে না জানালে কি চলে বলেই চোখ মারলো।

ইয়ানা হেসে ফেললো। মুসকানও মৃদু হাসলো।
,
কাজের ফাঁকে হুট করেই মনে হলো মুসকান ছাদে আছে সবাই যেহেতু আছে রিতিশাও আছে।
আর রিতিশা থাকা মানেই,,, আর ভাবতে পারলো না ইমন ঝড়ের বেগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে ছুটলো।

ইমনকে ওভাবে হন্তদন্ত হয়ে যেতে দেখে রিতিশা ভ্রু কুঁচকে রুম থেকে বের হলো।

ছাদের বর্ডারে হাত রেখে দূরে তাকিয়ে আছে মুসকান। অভ্র, ইয়ানা, ইয়াশফা আড্ডা দিচ্ছে।
ইমন কে দেখেই অভ্র বললো ব্রো তুমিও এসেছো জয়েন হও আমাদের আড্ডায়।
ইমন মৃদু হাসলো।

–তোরা আড্ডা দে আমি এমনি কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে চলে যাবো।

–ওক্কে ব্রো।

বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস বইছে,,,খোলা চুলগুলো হালকা উড়ছে,,,পশ্চিমাকাশের কমলা আভায় সূর্যের আলোটা ঠিক মুসকানের মুখে পড়েছে যা তাঁর সৌন্দর্যের মাঝে আলাদা এক স্নিগ্ধতা ভরে দিয়েছে।

একহাত পকেটে গুঁজে দিয়ে আরেক হাত বর্ডারে রেখে মোহময় দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো মুসকানের দিকে।
তাঁর মুগ্ধময়ীর মাঝে প্রাকৃতিক সকল স্নিগ্ধতা ভড় করেছে। ইচ্ছে করছে একটু ছুঁয়ে দিতে।
কতটা পবিএতা ছেয়ে আছে এই মুখটাতে,,,
কতোটা মুগ্ধতা ছেয়ে আছে এই মুখটাতে,,,
কতোটা স্নিগ্ধতা ভড় করেছে এই মুখটাতে,,,

চোখ বুজে ফেললো ইমন। গভীর এক শ্বাস নিয়ে আবার তাকাতেই মুসকানের চিকচিক করা চোখ দুটোতে আঁটকে গেলো সে।
,
— ভাবী দাদী ডাকছে তোমায়।
ইয়ানার ডাকে ধ্যান ভাঙলো মুসকানের ইমনের দিকে আর একবারো চাইলো না সে

নিচের দিকে মাথা রেখে চলে গেলো।
একে একে সবাই চলে গেলো।
ইমনও যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তখনি হাত আটকে ধরলো রিতিশা।

ইমন ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো।

–হাউ ডেয়ার ইউ। সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার।

–এভাবে বলো না প্লিজ। কষ্ট হয় আমার ভীষন কষ্ট হয়। ভুলের মাশুল দিতে দিতে আমি ক্লান্ত প্লিজ এভাবে ইগনোর করো না আমায়।

–স্যাট আপ। ফাইজলামি করো আমার সাথে?
লিসেন আই এম ম্যারিড, মুসকান ইজ মাই ওয়াইফ।
সো এইসব লেইম কথাবার্তার কোন ভেলু নেই।

–ইমন প্লিজ তোমায় এসব মানায় না। এসব কি মি.ইমন চৌধুরী,,, তুমি আমায় নাই মানতে পারো তাই বলে ঐ মেয়েটাকে? ঐ মেয়েটা তো এ বাড়ির কাজের লোক হওয়ার ও যোগ্য নয়। কি আছে ওর মাঝে? এমন আনস্মার্ট মেয়ে কিনা তোমার বউ। সত্যি মানতে কষ্ট হচ্ছে।

–সো হোয়াট! আমার কিছু করার নেই। জাষ্ট লিভ,,,

–ইমন তুমি একবার আমার দিকে তাকাও। দেখো কি নেই আমার মাঝে সব আছে সব,,, আর ওকে দেখেছো তোমার মতো পুরুষের বউ অমন একটা শ্যাকেলে মেয়ে।
আমি মানতে পারছি না যে ঐ মেয়েটা তোমার বউ।
না আছে লেখাপড়ার দিক দিয়ে যোগ্যতা, না আছে রূপের দিক দিয়ে যোগ্যতা আর না বয়স ছিঃ।
তোমার রুচিবোধ দেখে অবাক হয়ে যাই।
আরে কি নেই আমার মধ্যে আমি যথেষ্ট সুন্দরী।
একবার চেয়ে দেখো আমার দিকে রূপ যৌবন সবটাই আছে আমার এই ফিগার যে কোন ছেলেকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।
কি নেই বলো কি নেই???

ইমন বাঁকা হাসলো রিতিশার দিকে একটু ঝুকে তাঁর পুরো শরীরে চোখ বুলালো ধীর আওয়াজে বললো– ওর মাঝে যা আছে তা সত্যি তোমার মাঝে নেই।
বাট কি নেই তা আমার অনুভূতি দিয়ে বোঝালে তোমার মতো মেয়ে সেটা বুঝবে না তাই তোমার ভাষায় তোমার মতো করেই উত্তর টা দেই বলেই কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ওর মাঝে যা আছে তা রেইলি তোমার মাঝে নেই কি জানো,,,ভার্জিনিটি।
তিনবছরের বেশী রয়েছে আমার কাছে বিয়ে করে বউ ও করে নিয়েছি অথচ এখনো সে ভার্জিন রয়েছে।
“তুমিতো বিয়ের আগেই ভার্জিনিটি হারিয়েছো ”
যে সুখ ও আমায় দিতে পারবে তা কি সত্যি তুমি আমায় দিতে পারবো বলেই রহস্যময় হাসি হেসে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

–বাহ ইমন চৌধুরী বাহ। এই না হলো আসল রূপ। পুরুষ মানুষের আসল রূপতো এটাই। এতোদিন তোমাকে ভিন্ন জানতাম কিন্তু আজ প্রুফ করে দিলে তুমিও এক। এতোটা পরিবর্তন ইমন এতটা তোমায় অন্তত আমি এমনটা ভাবিনি। মেয়েদের শরীরের প্রতি এতোটাই লোভ তোমার। তাই কচি মেয়ে তুলে এনেছো, জাত কুল বিচার করোনি ছিঃ।

–স্যাট আপ। আর একটা কথা বললে গায়ে হাত ওঠাতেও দুবার ভাববো না আমি। জাত কুল কি সেটা দেখার প্রয়োজন বোধ করিনা। আমি মনুষ্যত্ব দেখি।
হ্যাঁ ইমন চৌধুরী পরিবর্তন হয়েছে সেটা শুধু মুসকানের জন্যই। হ্যাঁ ইমন চৌধুরীর বড্ড লোভ কিন্তু সেটা শুধুই মুসকানের প্রতি যে লোভেও পবিএতা রয়েছে ইয়েস। আমার বউয়ের প্রতি আমার লোভ থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়??
আর পরিবর্তন,,, আমার জীবনটা সত্যি পরিবর্তন হয়েছে আর এই পরিবর্তন টা এসেছে মুসকানের জন্য। সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটেছে আমার আর ওর জীবনের।

কয়েকবছর আগে যে বাচ্চা মেয়েটা আমার জীবনে দুম করে চলে এসেছে সময়ের পরিবর্তনে সেই মেয়েটাই আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ হয়ে ওঠেছে। সেদিনের মেয়েটা আমার কাছে অচেনা, অজানা হলেও আজকে সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
অনেকটা চেনা, অনেকটা কাছের একজন।

রিতিশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো রাগ হচ্ছে তাঁর ভীষন রাগ হচ্ছে ।

“সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায় ”
“এই নিয়ে তোমাদের মতো পাপাচার করা
কিছু ছ্যাকাখোর লোক অনেক কে অনেক কথা বলতে শুনেছি”। দোষারোপ করতে দেখেছি একে অপরকে হোয়াই কিসের এই দোষারোপ??
“সময়ের সাথে সব কিছুই পরিবর্তন হবে”
এটাই চিরন্তন সত্য। সময়ের সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয় না হলে সেটা হয় জরবস্তু নয় তো পশু।
“ওহ সরি, সময়ের সাথে একটা পশুরও পরিবর্তন ঘটে”
“আমাদের ঘরের আসবাবপএগুলোও পুরাতন হলে আমরা সেগুলো বদলে ফেলি আপডেট জিনিস চাই” হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নতুন জিনিসপএ নিয়ে আসি।
তাহলে মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসলে সেই পরিবর্তন টা কে আমরা মানুষ রা কেনো সহজে মেনে নিতে পারিনা?? চারপাশে গলা ফাটিয়ে কেউ হাহাকার করি নয়তো কেউ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসি কেনো??
মানুষ কেনো এতো নির্বোধ তাঁরা কেনো একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখেনা।
জন্মের পর একটা শিশু হাইটে কতোটুকু থাকে বা তাঁর ওয়েট কতো থাকে??
“সময়ের সাথে সাথে যেমন বয়স বৃদ্ধি পায় বয়সের পরিবর্তন ঘটে একমাস থেকে দুমাস, একবছর থেকে দুবছরে পদার্পণ করে তেমনটাই হাতে পায়ে পরিবর্তন ঘটে”। চেহেরার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। গায়ের রঙের পরিবর্তন ঘটে।
“চার,পাঁচ বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে পড়াশোনা করলে সময়ের সাথে সাথে পড়াশোনায় ও মানুষ টা এগিয়ে যায় পনেরো ষোল বছরে মেট্রিক পাশ করে”।
“কোন মানুষ সেই পাঁচ বছরে আটকে থাকে না, কেউ সারাজীবন ক্লাস ওয়ানেই পড়াশোনা করে না ইটস ট্রু” “এভাবেই ধীরে ধীরে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটে”

“ছোট বেলা আমি মুরগির মাংস খেতে ভালোবাসতাম বড়বেলা গরুমাংস খেতে ভালোবাসি এটা আমার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন,আমার রুচিবোধের পরিবর্তন “।
একসময় পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম তো একসময় অমনোযোগী।
একসময় অন্যের আন্ডারে জব করার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছিলাম তো এখন নিজের আন্ডারে শতশত মানুষ কে কাজ করাই এটাই পরিবর্তন।
পরিবর্তন টাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
“যার জীবনে পরিবর্তন নেই তাঁর জীবনটাই বৃথা”
মানুষের জীবনে পদে পদে পরিবর্তন আনাটাই মূখ্য।
“মানুষ কোন মূর্তি নয় যে সে সারাজীবন একি জায়গায় স্থির থাকবে”
“মানুষের মন যদি অনুভূতির ভান্ডার হয়ে থাকে তাহলে সেই অনুভূতি সময়ের সাথে কারো বেশী হবে কারো কম হবে, কারো অনুভূতি প্রাকশ করার ধরন পাল্টে যাবে তো কারো একি থাকবে ”
“যেমন ছোট বেলায় পছন্দের কিছু সামনে পেলে সেটা কেনার জন্য কান্না কাটি করতাম অতঃপর সেটা কেনার পর বন্ধু -বান্ধব কে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুরে বেড়াতাম এটাতে আলাদা এক আনন্দ পেতাম ”
“বাড়িতে নতুন কোন মেহমান এলে বা স্কুলে নতুন কোন বন্ধু পেলে সবসময় তাঁদের সাথে থাকতেই পছন্দ করতাম।পুরোনোদের তুলনায় নতুনদের সাথে মেশার পরিমানটা বেড়ে যেতো। আবার বেশ কিছুদিন পর স্বাভাবিক আগের মতোই ”
আর এখন বাইরে পছন্দের জিনিস পেলে নিজের ঘরে এনে সাজিয়ে রাখি ভালোলাগাটা মনের মাঝে রেখেই উপলব্ধি করি।
নতুন কোন মানুষ এলে তাঁদের সাথে যথেষ্ট সৌজন্যতা দেখিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি এটাই পরিবর্তন।
আর এই পরিবর্তন টা শুধু সময়ের নয় প্রত্যকটা মানুষের জীবনের পরিবর্তন ও বটে।
“ছেলে বেলা যে আত্মীয় রা বাড়ি এলে কোলে তুলে আদর করতো কয়েকটা চুমু খেতো আজ তাঁরা বাড়ি এলে কেমন আছি কি করি,বুক ভরা দূয়া আশীর্বাদ ছাড়া তাঁদের সাথে কিন্তু সেরকম সম্পর্ক সেরকম বন্ধন নেই এটাই আমাদের জীবনের পরিবর্তন ”

–ওহ আই সি,,,তাঁর মানে এখন মুসকানের সাথে তোমার যে বন্ধন এটাও সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যাবে??হাহাহা ভেরী ফানি।

–নো ইউ আর রং মিস. রিতিশা।

“হ্যাঁ সময়ের সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। ওর আমার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে ভবিষ্যতেও আসবে এটা আমি অস্বীকার করিনা। আমাদের দুজনের অনুভূতির পরিবর্তন হতে পারে।
যেমন আজ আমি ওকে একটা ধমক দিলে ওর চোখে অজস্র জলকোনারা ভীড় জমায়, কাল আমার ধমকটাতে ও অভ্যস্থ হয়ে যাবে ওর চোখে আর জলকোনারা জায়গা করবে না এর মানে এই নয় ওর আমার প্রতি ভয়, দূর্বলতা কেটে গেছে এর মানে এই সময়ের সাথে সে স্ট্রং হয়ে গেছে বাচ্চাসুলভ আচরণ বদলে গেছে বড় হয়েছে সে। সে আনম্যাচিওর থেকে ম্যাচিওর হয়ে গেছে।
আর বন্ধন আমার আর ওর বন্ধন তো আর পাঁচ টা মানুষের মতো নয়। সে আমার বিয়ে করা বউ আমি তাঁর স্বামী এই সম্পর্কের কখনো শেষ নেই। শুধু একাল নয় পরকালেও তাঁকে আমি চাই।

” আমি বুঝালাম পরিবর্তন আর তুমি বুঝে নিলে বদলানো হাহাহা।

— মানে,,,
–মানেটা খুব সহজ। পরিবর্তন মানে এই নয় আমি একেক সময় একেক মানুষ বদলিয়ে তাঁকে বিয়ে করবো বা ভালোবাসবো। নিজের চরিএে সবাইকে দেখা উচিত নয়।
“আজ আমি মুসকানকে যতোটা ভালোবাসি ও আমাকে যতোটা ভালোবাসে ” সময়ের পরিবর্তনে আমাদের ভালোবাসা আরো গভীর হবে”
“ভালোবাসার ধরন পাল্টাবে কিন্তু ভালোবাসার মানুষ পাল্টাবে না ” “ঐ একজনকেই বহুভাবে ভালোবাসবো হতেও পারে এখনকার চেয়ে কম বা বেশী কিন্তু ভালো একজনকেই বাসবো সারাজীবন একজনের সাথেই কাটাবো ”

–তুমি কি করে সিওর হচ্ছো বিয়ের বয়স কতো গড়িয়েছে আর। যেখানে মানুষের জীবনেরই গ্যারান্টি নেই সেখানে সম্পর্কের কি গ্যারান্টি??

–গ্যারান্টি আমি নিজে, গ্যারান্টি মুসকান নিজে।
আমাদের সম্পর্ক টা উপর থেকে ঠিক করা এ বিষয়ে তোমার সন্দেহ থাকলেও আমার নেই।
” লিসেন,,, আর পাঁচ টা মেয়ের মতো মুসকান নয়”
“সময়রে সাথে সব পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন হবে মুসকান “পরিবর্তন হবো আমি তুমি, তোমরা সবাই ”

“সব কিছু পরিবর্তন হবে কিন্তু ওর হৃদয়ে সারাজীবন যে নামটা লেখা থাকবে সেটা আমি,আমার হৃদয়ে সারাজীবন যে নামটা লেখা থাকবে সে হলো মুসকান”
বলাবলির কিছু নেই সময়ই সবটা বলে দেবে।
“আর হ্যাঁ আমার আর ওর মাঝে কেউ আসার চেষ্টা করলে বা কেউ আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করলে সে নিজেই নিঃশ্বেস হয়ে যাবে হয় আমার হাতে নয় নিয়তির হাতে ”

চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here