#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-১৮
দিহান চমকে পিছন ঘুরতেই মেঝেতে ইয়া বড় এক লাঠি দেখতে পেলো, মুসকানের কন্ঠও তাঁর কানে পৌঁছেছে ভ্রুযুগল কুঁচকে সায়রীর দিকে তাকালো।
সায়রী চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো মুসকান।
দিহান ভ্রু কুঁচকেই বললো ডাকাত মানে আর লাঠি।
সায়রী বাম হাতে ডান হাতের কনুই চেপে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো তুই।
দিহান হকচকিয়ে গেলো ভ্রু উঁচিয়ে বললো আমি ডাকাত।
সায়রী কিছু বললো না, অন্যদিক চেয়ে রইলো।
দিহান অন্যদিকে মন না দিয়ে আবারও সায়রীর অনেকটা কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
–কেমন আছিস।
–সেটা তোর না জানলেও চলবে কেনো এসেছিস এখানে চলে যা।
–স্যাট আপ,,, আমি এখানে তোর জন্য আসিনি। আমি এসেছি আমার মেয়ের জন্য। আমি এসেছি আমার মেয়ের মা কে আপন করে নেওয়ার জন্য রেডি থাকিস নেক্সট ফ্রাইডে বিয়ে।
–হোয়াট! পাগল হয়ে গেছিস তুই। এতোগুলো বছর পরও তোর মাথা থেকে ভূত নামলো না। আমার পক্ষে তোকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এখন তো কোনভাবেই নয়। সময় গড়িয়েছে অনেক,জীবনটাও এগিয়ে গেছে অনেকটা। যা তখন সম্ভব হয়নি তা এখনো সম্ভব হবেনা। আমার মেয়েটাও এখন বড় হচ্ছে এখন তো কোনভাবেই পসিবল না।
–ভূত তো চাপেনি চেপেছে তো পেত্নী। পুরুষ মানুষের ঘাড়ে পেত্নী চাপলে সে কি আর যায় বল।
সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
দিহান সায়রীকে এক টানে নিজের সামনে নিয়ে মুখোমুখি মুখ করে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো এখনো তোর একা থাকার শখ মেটে নি,,,
একহাতে কাঁধে ধরে আরেক হাতের আঙুল ওঠিয়ে বললো আমি দেশে এসেছি শুধু তোর জন্য,,,
অনেক ছাড় দিয়েছি তোকে আর না।
সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে এবার দিহান আঙুল বাঁকা করে নেবে মনে রাখিস।
পাঁচ বছর আগের দিহান আর পাঁচ বছর পরের দিহান কে তুই গুলিয়ে ফেলিস না। সেদিন হয়তো আমার তোর প্রতি বেশীই দূর্বলতা ছিলো, সেদিন হয়তো আমি বেশীই আবেগপ্রবন ছিলাম।
কিন্তু এখন না আছে দূর্বলতা আর না আছে আবেগ।
–তাই দূর্বলতা, আবেগ যখন নেই তাহলে কেনো এসেছিস। চলে যা, এতোগুলো বছর যখন থাকতে পেরেছিস সারাজীবন ও পারবি।
দিহান সায়রীর দুগালে দুহাতে আলতো করে চেপে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
কিভাবে ছিলাম তা এক উপরওয়ালা আর ইমন ই ভালো জানে, তুই তো একটা খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিসনি।তোরা মেয়েরা বড্ড পাষান।
কি করে তোরা পারিস কে জানে।
বন্ধুত্বের টানেও কি পারতিনা একটা খোঁজ নিতে?
আট বছরের বন্ধুত্বকে কিভাবে ভুলতে পারিস তুই।
এতোটা নিষ্ঠুর তুই কিভাবে হতে পারিস।
চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে,,,বুকের ভিতর চাপা কষ্ট গুলো যেনো হঠাৎ ই সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উতলিয়ে ওঠেছে।
দুহাতে দিহানের হাত ধরে ছাড়িয়ে নিলো নিজের গাল দুটো। খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বললো অহেতুক কথা-বার্তা বলিস না।আমাকে বিয়ে করার ভুল সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আয়।
তুই অবিবাহিতা, চাইলেই আমার থেকে অনেক ভালো মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবি। আমাকে বিয়ে করে তুই কি পাবি বল??
কি আছে আমার মধ্যে এখন,, এই শরীরটা পবিএতার নাম করে অপবিএ হয়েছে।
এই গর্ভে আমার ভুল ভালোবাসা আর কারো বিশ্বাসঘাতকার ফল ধারন করেছি।
কিচ্ছু নেই কি পাবি বল। বরং সারাজীবন অন্যের সন্তানের বোঝা মাথায় নিতে হবে।
শেষ কথাটা বলে শেষ করতে না করতেই ঠাশিয়ে এক থাপ্পড় দিলো দিহান।
সায়রী গিয়ে দেয়ালে পড়লো দুহাতে দেয়াল ধরায় মাথাটা লাগেনি। বেশ ভয় পেয়ে গেলো, এক ঢোক গিলে ঘুরতে নিতেই দিহান ওর দুগালে শক্ত করে চেপে ধরে বললো — তোর সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে অন্যকারো সন্তান বলার। সেদিন কিছু বলিনি বলে যে আজ বলবো না সেটা ভাবিস না।
অনেক সহ্য করেছি আর না,,
ডেলিভারির সময় কোথায় ছিলো তোর ভুল ভালোবাসা, কোথায় ছিলো তোর বিশ্বাস ঘাতক।
হসপিটালের সমস্ত ফরমালিটি আমি পূরন করেছি বাবার জায়গায় আমার নাম ছিলো,আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। সুপ্তি আমার মেয়ে বুঝেছিস তুই যদি বেশী বাড়াবাড়ি করিস তুই তোর মেয়ে কে হারাবি মনে রাখিস বলেই দুগাল ছেড়ে পিছন ঘুরে দাঁড়ালো। রাগে হাত-পা কাঁপছে তাঁর নিঃশ্বাস চলছে সমান গতিতে।
সায়রী দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো
দিহান কান্নার শব্দ পেতেই চমকে গেলো।
পিছন ঘুরতেই সায়রীর কান্না দেখে বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে ওঠলো তাঁর চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সায়রীকে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে।
,
মুসকান চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন কঠোর চাহনীতে চেয়ে আছে তাঁর দিকে।
বিছানায় বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ছে সে।
মুসকান ভয়ে এবার কাঁপতে শুরু করেছে। চোখ তুলে তাকানোর সাহসটুকুও সে পাচ্ছে না।
মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।
তবুও ইমন তাঁর দৃষ্টি সরালো না।
চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে এলো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, এভাবে বাঘের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মশকিল হয়ে পড়ছে। উপায় না পেয়ে মিনমিন করে বললো সরি,,,
ইমন একবার নিজের হাতের দিকে আরেকবার মুসকানের দিকে চাইলো।
মুসকান আরো দ্বিগুন ভয় পেয়ে গেলো।
অপরাধীর মতো মুখ করে বললো সরি, আমি বুঝতে পারিনি আপনি বলেই কেঁদে ফেললো।
ইমন আবারো নিজের হাতের দিকে তাকালো দাঁতের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে, রাগে সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো এ বাড়িতে ডাকাত পড়বে কেনো?? দাড়োয়ানকে কি ঘাস কাটার জন্য রাখা হয়??
না জেনে না বুঝে লাঠি নিয়ে মারতে গেছো আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো ভাবতে পারছো??
মূহুর্তেই মুসকান চমকে ওঠলো।
মাথায় হাত দিয়ে হায় আল্লাহ আপা তো একা, তারাতারি চলুন ওখানে ডাকাত এসেছে বলেই রুমের বাইরে পা বাড়াতে নিতেই ইমন চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত মুসকান কে টেনে রুমের ভিতর এনে দরজা লক করে দিলো। দেয়ালে ঠেকিয়ে দু কাঁধে চেপে ধরে ধমক দিয়ে বললো বলছিতো কোন ডাকাত আসেনি।
মুসকান জোর গলায় প্রায় চিল্লিয়েই বললো ডাকাত এসেছে,আমি দেখেছি আপার সাথে ধস্তাধস্তি করছে।
ইমন মুসকানের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে হাতটা কোমড়ের কাছে নিয়ে একদম পেচিয়ে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে কঠোর গলায় বললো আমার বন্ধু দিহান এসেছে। আর দিহান সায়রীরও বন্ধু। ডাকাত এলে অবশ্যই আমি এতোক্ষন এখানে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম না।
এবার মুসকানের যেনো হুঁশ ফিরলো।
সত্যি তো ওনি তো কিছুই বলছে না। তাহলে কে লোকটা মনে প্রশ্ন ওঁকি দিতেই তা মুখে আসতে নিয়েও পারলো না।
ইমনের গভীর দৃষ্টি তে আটকে গেলো সে।
ঠোঁট জোরা ইমনের আঙুলে বন্দী।
নিঃশ্বাসের বেগ যেনো দমকা হাওয়ার মতো বেড়ে গেলো। কানের কাছে ইমনের গভীর কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
–আমার বাড়ি ডাকাত পড়েনি। তবে বেশ আগেই পাক্কা বাঘিনীর অবস্থান ঘটেছে। সেটা আমার প্রথম দিনই বোঝা উচিত ছিলো। বিষহীন দাঁতে কামড় বসিয়ে তো কোন লাভ নেই,,,
মুসকান ভ্রু উঁচু করে বড় বড় চোখ করে চেয়ে এক ঢোক গিললো।
ইমন সেই চাহনী দেখে বাঁকা হেসে বললো
“চোখের ইশারায় যদি হৃদস্পন্দন থেমে যায়
মন তো সকল বাঁধ্যতা ভুলে গিয়ে এই ঠোঁটে প্রেম ছোঁয়াতে চায়”
কথাটা শোনা মাএই মুসকানেরও যেনো হৃদস্পন্দন থেমে গেলো।
–ওনাকে কামড় দিয়েছি বলে কি ওনিও আমায় কামড় দিবে নাকি এমন বলছে কেনো মুখে কামড়াবে ওরে আল্লাহ যে করেই হোক ওনার থেকে মাফ চাইতে হবে আমাকে।
ধীরে ধীরে ইমন তাঁর ঠোঁট জোরা এগুতে নিতেই
মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ভয়ে ভয়ে বললো বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আপনি, আমি ডাকাত ভেবেই কাজটা করেছি।
কথাটা শোনা মাএই ইমন হকচকিয়ে গেলো।
মুসকানকে ছেড়ে কাশতে শুরু করলো।
মুসকান ঘাবড়ে গেলো ভীষন দৌড়ে গিয়ে গ্লাসে পানি ভরে ইমনের সামনে দিলো।
ইমন পানিটা খেয়ে গ্লাসটা মুসকানের হাতে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
ওহ গড,, আমি কি বললাম এই মেয়ে কি বুঝলো।
ইশ মিসটেক হয়ে গেলো ভীষন, আমার বোঝা উচিত ছিলো এই মেয়ের মাথায় এসব ঢুকবে না।
হাভভাব এমন যেনো পাকা বুড়ি, সর্ব গুনে গুণান্বিত।
শুধু পড়াশোনা,কাজ, আর সব কাজ জানলেই কি সে সব জানতা হয়ে যায়। একে মানুষ করতে টাইম লাগবে। কিশোরী নাম যে কবে ঘুচবে ভেবেই গভীর শ্বাস ছেড়ে মাথা ধরে শুয়ে পড়লো।
মুসকান অপরাধীর মতো মুখ করে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বললো আমি মাথা টিপে দিবো।
ইমন কিছু বললো না।
মুসকান আবারো বললো আমি মাথা টিপে দেই ভালো লাগবে।
ইমন বেশ রেগেই বললো তুমি আমার সামনে থেকে যাও নিজের রুমে গিয়ে চুপচাপ ঘুমাও।
–ইশ ওনি অনেক রেগে গেছে,রাগারই তো কথা কি ভয়ংকর কাজটাই না করেছি ছিঃ। দাদী জানলেও আমার ওপর রেগে যাবে। কি করলে এখন ওনার মন ঠিক হবে। আমি ওনাকে আঘাত করেছি ওনি আমাকে করুক তাহলেই সমানে সমান।
আচ্ছা এই ভালো একটু ব্যাথাই তো আমি ঠিক সহ্য করতে পারবো।
–শুনুন,,
–হুম বলো।
–আমি আপনার হাতে কামড় দিয়েছি আপনি আমার হাতে দিয়ে দিন শোধবোধ।
ইমন চোখ খুললো, মুসকানের বোকামি মাখা কথা শুনে প্রচন্ড হাসি পেলো তাঁর। মুসকানের মুখের দিকে চাইতেই অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো।
মুখটা বেশ মলিন ইমন তাঁর ওপর রেগে আছে তাই ভেবে তাঁর মনের আকাশে মেঘ জমেছে। বেশ বুঝতে পারলো ইমন। এই মেয়েটার সবটা সে বুঝতে পারে এখন। এই মেয়েটা যে তাঁর সবটা জুরেই রয়েছে।
এই মেয়েটা এখন তাঁর অভ্যেস, এই মেয়েটা এখন তাঁর ভালোলাগা মন্দ লাগার সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জরিয়ে আছে।
–কি হলো দিন না, তারপরই আমি চলে যাবো।
ইমনের ঘোর কাটলো মুসকান হাত পেতে আছে,
তাঁর ভাষায় শোধবোধ করার জন্য।
কি যেনো হয়ে গেলো তাঁর নেশাভরা গলায় বললো আমি শোধবোধ সহজভাবে করিনা, যতোটা আমি পেয়েছি তাঁর দ্বিগুণ ফেরত দিবো বলেই একটানে মুসকান কে নিজের ওপর ফেললো।
একহাতে কোমড় জরিয়ে আরেকহাতে ঘাড়ে চেপে গলায় গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মুসকানের অদ্ভুত কাঁপুনি, শ্বাস অনুভব করতেই শোধবোধ করার জন্য কামড় বসালো।
ব্যাথা পেলেও টু শব্দ টি করলো না সে,শুধু দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো ইমনের শার্ট। চোখ বেয়ে কয়েকফোঁটা নোনা জল বেরুলে যার একফোঁটায় ইমনের শার্ট ভেদ করে কাঁধে শীতলতা অনুভূত হলো।
হাত আলগা হয়ে এলো তাঁর।
মুসকান লজ্জায়, ভয়ে মিইয়ে গেলো।
ইমন এক নজর মুসকান কে দেখে চোখ দুটো বন্ধ করে বললো বেরিয়ে যাও জাষ্ট ফাইভ সেকেন্ড।
হুমকির স্বরে কথা বুঝেই মুসকান দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
সায়ু,,,
এই সায়ু,,,যতো পারিস কেঁদে নে আজ। আজকের পর আর তোকে কাঁদতে দিবো না সায়ু। একটা বার শুধু তুই আমাকে গ্রহন করে নে সায়ু। তোর জীবনের সব না পাওয়া, সব ভালো লাগা সব ভালোবাসা উজার করে দেবো আমি।
সায়রী কেঁদেই যাচ্ছে এতো স্ট্রং মেয়েটা যেনো কয়েক মিনিটের বেবধানেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
সকল দূর্বলতারা ঘিরে ধরেছে তাকে।
দিহান আরো গভীরভাবে জরিয়ে নিয়ে মাথায় কিস করলো।
–আমি তোর শরীর চাইনা সায়ু, আমি শুধু তোকে চাই, আমি তোর সন্তান এর বাবা হতে চাই। আমার সবটা জুরে আগেও তুই ছিলি,এখনো আছিস ভবিষ্যতেও শুধু তুই ই থাকবি সায়ু তুই ই থাকবি।
বলেই সায়রীর গাল দুটো ধরে মুখ ওঠালো।
সায়রী চোখ বুঁজে কেঁদেই চলেছে দিহান বুড়ো আঙুলে গাল মুছে বললো সায়ু ঐ দিন রাত তিনটার দিকে আমার স্বপ্নে কিউট একটা বাচ্চা মেয়ে এসে আমার হাত ধরে খুব ডাকাডাকি করছিলো তখনি ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।ফোন টা ছিলো ইমনের ছুটে হসপিটালে যাই আমি, ইমন পারতো নিজে সবটা করতে কিন্তু করেনি কারন ও জানতো পৃথিবীতে সায়রীর জন্য আর কেউ থাকুক বা না থাকুক এই দিহান আছে। আর ওর জন্য এই এক দিহানই যথেষ্ট। সব ঠিক ছিলো সায়ু তুই সেদিন শুধু তুই ঠিক ছিলি না।
সায়রী চোখ খুলে তাকালো দিহানের দিকে।
দুটো চোখ এক হলো,দুটো মুখ মুখোমুখি।
–সত্যি সব ঠিক ছিলো দিহান??
দিহান আবারো হাইপার হয়ে গেলো।
–হ্যাঁ সব ঠিক ছিলো। তুই যদি শিশিরের মতো বিশ্বাস ঘাতকের হাত ধরে তোর পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারিস মাএ একবছরের পরিচয়ে তাহলে আটবছরের বন্ধুত্বকে কেনো ভরসা করতে পারলি না। তুই ঠিক থাকতি সায়ু শুধু তুই ঠিক থাকতি।
সায়রী আবারো চোখ বুজে ফেললো। কান্নামিশ্রিত গলায় বললো –একবার এক পরিবারকে অসন্তুষ্ট করে যে ভুল করেছি সেই ভুল আবার কি করে করতে পারি বল তুই।
দিহান ছেড়ে দিলো সায়রীকে আর এক মূহুর্তও দেরী করলো না সে সোজা সায়রীর রুমে গিয়ে সুপ্তি কে ঘুমন্ত অবস্থায়ই কোলে নিয়ে বের হতে লাগলো।
সায়রী ছুটে এসে বললো- দিহান পাগলামো করিস না, ছাড় ওকে।
দিহান এক ঝটকায় সায়রীর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললো পাগল করে দিয়ে এখন বলছিস পাগলামো করিস না। মনে রাখিস পাঁচ টা বছর পর আমি ফিরে এসেছি এমনি এমনি না। আমাকে আর আমার মেয়েকে একা সময় কাটাতে দে নয়তো চিরদিনের মতো মেয়ে কে হারাবি। বলেই বেরিয়ে পড়লো।
সায়রী চুপচাপ সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
সে খুব ভালো করেই জানে দিহান যেমন ভালোর ভালো খারাপের খারাপ। যেহেতু জেদ ওঠেছে সুপ্তিকে নিজের কাছে রাখার সেহেতু আর কারো কিছু করার নেই।
কিন্তু ভয় একটাই সুপ্তি দিহানকে দেখলেই চিনে ফেলবে। আর একবার যদি দিহান বুঝে যায় তাহলে দিহানের হাত থেকে রক্ষা নেই।
কিন্তু দিহান যা চায় তা তো সম্ভব নয় ওর পরিবার কোনদিন এই সম্পর্ক টা মেনে নেবে না।
কোন পরিবার চাইবে এমন একটা সম্পর্ক মানতে,,,
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সায়রী নিজের রুমে চলে গেলো।
সারা রাত নির্ঘুম কাটলো তাঁর ।
,
সারারাত ইমনের ঘুম হলোনা। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজের ওপর আঠারো,ঊনিশ বয়সী যুবকদের মতো এতো অবুঝ পানা করে ফেলবে ভাবতেও পারেনি।
“রাগ হচ্ছে নিজের নিয়ন্ত্রণহীনতার ওপর।
রাগ হচ্ছে মুসকানের অবুঝ মনের ওপর”
রাগ হচ্ছে এটা ভেবেই যে তাঁর অনুভূতি টা মুসকান না বুঝেই শোধবোধ করার বায়না করলো।
চলবে..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন তবেই নিজের ভুলগুলো শোধরাতে পারবো।