হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব ১

0
1949

লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পড়ে বউ সাজে একজন সুপুরুষের হাত ধরে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ইফা।

নিলুফা নিজের মেয়েকে এমন নববধূ সাজে
পরপুরুষের সাথে দেখে প্রচুর রেগে যায়।

মেয়েকে উদ্দেশ্যে করে “ইফা এসব কেমন বেহায়াপনা?”
তা-ই বলে সে রাগের বসে মেয়ের গালে থাপ্পড় দিতে হাত উঁচু করতেই এক বলিষ্ঠ হাত তাকে বাধা দেয়।

গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আপনার কোন অধিকার নেই আমার স্ত্রীর গায়ে এভাবে হাত দেওয়ার। ”

নিলুফা বেগম বলে,”আরে যে পুরুষ ঘরে সুন্দরি বউ আরেকটা বিয়ে করতে পারে সে কখনো ভালো স্বামী হতে পারে না।”

ইফা তার মায়ের সামনে এসে বলে,”আরে মা তোমার সমস্যা কোথায়? দাইয়ানের ঘরে বউ আছে বলে সমস্যা? আচ্ছা উনি তার প্রথম স্ত্রীর কে তাড়িয়ে দিবে এবার তুমি খুশি তো?”

নিলুফা এবার নিজের মেয়ের গালে ঠাটিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”বেইমান মেয়ে একটা! যাদের অনুগ্রহের খেয়ে পড়ে বেঁচে আছিস। তাদের মেয়ের সংসারটা এভাবে ভেঙ্গে চুরমার করতে তোর একটু বিবেকে বাধলো না? মানুষেরা ঠিকি বলে, খারাপের রক্ত কখনো ভালো হয় না। তোর মতো মেয়েকে জন্মের সময় মেরে দেওয়া উচিৎ ছিলো আমার। তাহলে আজ ঐ মমতাময়ী মায়ের মেয়ের সংসারটা বেঁচে যেতো।”

ইফা বিরক্তির শুরে বলল- ইফফ মা!
এতো নাটক করিও না তো। কেউ সাহায্য করেছে বলে সারাজীবন তার দাস হয়ে থাকতে হবে না কি? তাছাড়া দাইয়ান আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে।
দোয়া করার থাকলে করো নয়তো চুপচাপ থাকো। তবুও পরের মেয়ের জন্য ওকালতি করতে এসো না।

নিলুফা বলে,”তুই পেটে থাকতে তোর বাপে অন্য মহিলার হাত ধরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলো। তখন তোর রক্তের কেউ সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেইনি। তুই আজ যে মেয়ের সংসারটা ভাঙ্গলি! এই রিমশা’র বাবা- মা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তোকে পৃথিবীর আলো দেখতে সাহায্য করেছে। শুধু কি তা-ই? তারা তোকে নিজের মেয়ের থেকে কম ভালোবাসা দেইনি। রিমশা’র বাবা- মা সব সময় তোর সকল চাহিদা পূরণ করেছে। রিমশা তোকে নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু কখনোই ভাবে নাই। সেই তুইই আজ মেয়েটার দুনিয়া উজার করে দিতে পারলি? আর কোনদিন কেউ কারো উপকার করতে চাইবে না। যদি কারো উপকার করার জন্য নিজের ঘরে আগুন লাগে। কেউ জেনে বুঝে দুধ কলা দিলে ঘরে কালসাপ পুষবে না।
তুই তো কালসাপের থেকেও বিষাক্ত।
তুই কোনদিন সুখি হতে পারবি না।
অন্যকে কষ্ট দিয়ে বা অন্যের সংসার ভেঙ্গে কখনো নিজে সুখি হওয়া যায় না।”

ইফা বিরক্তিবোধ করে দাইয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে,” এই তুমি এখানে থেকে আমাকে নিয়ে তোমার বাড়িতে চলো। আমার মা বেশি ঘ্যানঘ্যান করছে। এর এতো ঘ্যানঘ্যান শোনার সময় আমার নেই। এতো বকবকানি শুনলে মাথাব্যথা করে। শেষে আমার মাথা ব্যাথার জন্য কী বাসররাতটা নষ্ট করবো?”

দাইয়ান ইফা আর নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্ত্রীর হাত ধরে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে প্রস্থান করে।

এদিকে ইফার মা প্রলাপ করে বলে,”ইফা তুই বড় ভুল করেছিস রে মা। যে মেয়ে ছোট থেকে কখনোই অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে না। সে মেয়ে সহজেই তোকে তার স্বামী নিয়ে সংসার করতে দিবে? যে মেয়ে ছোট থাকতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য বনবাসী হয়েছিল। সে যখন সুখের মুখ দেখেছে! সে সুখ তোকে এতো সহজেই নষ্ট করতে দিবে? তুই যদি কোনদিন বিদ্ধস্ত হয়ে ফিরে আসিস আমি কখনোই তোকে আমার বুকে আগলে রাখবো না।”

*
*

এদিকে চেয়ারম্যান বাড়ির সদর দরজার সামনে নতুন বউ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাইয়ান। বাড়ির সদরদরজার সামনে শোরগোল শুনে রিমশা এগিয়ে আসে, সদরদরজার সামনে যে তার জন্য বড় ধরণের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল।
সে সারপ্রাইজ যে, তার দুনিয়া অন্ধকার করার জন্য যথেষ্ট।

নিজের স্বামীর পাশে সতীন রুপে নিজের কাছের মানুষকে দেখে রিমশা অবাক!
এটা কি ভাবে সম্ভব? যাকে নিজের ছোট বোনের থেকে বেশি ভালবাসা দিয়েছে, কোনদিন বুঝতে দেয়নি, সে আমাদের আপন কেউ না। আজ সে আমার সংসারটা এভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারলে?

হয়তো এই জন্য মানুষেরা বলে,

-“আপনের থেকে পর ভালো,পরের থেকে জঙ্গল ভালো!”

এসব চিন্তা ভাবনা করে সেখানে ধপাস করে বসে পড়ে রিমশা।

নিজের চোখেরজল কে বাঁধ ভাঙ্গতে এতো সহজেই দিবে না। নিজেকে শক্ত করে সদরদরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।

সোজাভাবে সে স্বামীর পাঞ্জাবীর কলার ধরে বলে,

-“আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না। ঘরে বিয়ে করা বউ থাকা অবস্থায় আপনি দ্বিতীয় বিয়ে কেনো করেছেন?”

দাইয়ান ধূলা পরিষ্কার করার মতো নিজের গা থেকে রিমশা’র হাত সরিয়ে বলে,

-“আমি কোনদিন ও তোকে বিয়ে করতে চাইনি। আমাদের বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। আমি ইফা কে ভালোবাসি। ইফার সাথে সারাজীবন একসাথে পথ চলার স্বপ্ন দেখেছি। সেখানে তুমি হঠাৎ আমার জীবনের কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া আর
কিছুই না। ”

রিমশা সোজাভাবে স্বামীকে প্রশ্ন করে,

-“আচ্ছা মেয়েদের জীবনে বিয়ে কয়বার হয়? প্রথম স্বামী জীবিত থাকলে তার সাথে সারাজীবন থাকতে হয়। স্বামী মারা গেলে অথবা ডির্ভোস হলে তখন মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। পুরুষের মতো নারীদের চারটা বিয়ের অনুমিত নেই।”

দাইয়ান বলে,”তোমার মতো বেহায়া মেয়েদের জীবনে প্রেম বিয়ে বহুত বার হয়। অযথা আমার কানের কাছে আপনি আমার স্বামী! আমার পুরো পৃথিবী এসব বলে ক্যাচাল করবে না। তোমাকে বিয়ের আগে থেকে আমার পছন্দ ছিলো না। তবুও পরিবার আর সমাজের চাপে পড়ে বহুত মাস দায়বদ্ধতার সংসার করেছি। এখন তো মুক্তি দাও আমাকে।”

সে সময় সেখানে দাইয়ানের বাবা বদুরুদ্দিন চেয়ারম্যান সাহেব উপস্থিত হয়ে ছেলের গালে ঠাসিয়ে চড় বসিয়ে দেয়।

তারপর সে বলে,”তুই কার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলছিস জানিস? আরে ঐ মেয়ের চরিত্রের দিকে কালি তুই ছিঁটিয়ে নোংরামি করতে চেয়েছিলি। তোর নোংরামির শাস্তি স্বরুপ আমি তোকে শিক্ষা দিতে ঐ মেয়েকে বাড়ির বউ করে এনেছিলাম। আজ আমার আফসোস হচ্ছে কেনো ঐ মেয়েটাকে তোর মতো জানোয়ারের বউ করে এবাড়িতে এনেছিলাম।”

দাইয়ান রিমশা’র চুলের মুঠি ধরে বলে,

-“আজ তোর জন্য আমার বাবা আমাকে এতো কথা শোনাচ্ছে বেহায়া নিলজ্জ মেয়ে।”

রিমশা নিজেকে ছড়িয়ে নিয়ে বলে,”আপনি যদি একটু আমাকে ভালোবাসতেন! তাহলে হয়তো এই পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষের সংসার হতো আমাদের। আফসোস আমার #হৃদয়ের_সুখ_আপনি কিন্তু আমি আপনার হৃদয়ের মরিচা হতে পারি নাই। তবে আফসোস করি না। উপরে একজন আছে! সে আমাকে অবশ্যই সুখ দান করবেন। একদিন আপনি মাথা নিচু করে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ফিরে আসবেন।হয়তো সেদিন আমার ক্ষমা করে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। আমিও সেইদিনের অপেক্ষা করবো তবে আপনাকে কোনদিন আমার থেকে মুক্তি দিবো না।”

কথা গুলো বলা শেষ না হতেই দাইয়ান রিমশা কে ধাক্কা দিয়ে ঘরের সদরদরজার সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

বদুরুদ্দিন সাহেব রিমশা’র মাথায় হাত বু্লিয়ে দিয়ে বলে,”মা রে আমার জন্য তোর জীবনটা বিষাক্ত হয়ে গেলো। এই ছেলেটা কে সঠিক পথে কোনদিন আনতে পারবোনা। তুই বরঞ্চ বাবার বাড়িতে ফিরে যা।
নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর।
জানি মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়। তবে ভুলে যাসনে মা খারাপ লোকের সাথে থেকে জীবন নষ্ট করার থেকে ভালো তাকে মুক্তি দিয়ে, নতুন করে জীবনটাকে সাজানো। বাকিটা তোর ইচ্ছে মা।”

রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”বিয়ে দেওয়ার সময় কেউ আমার ইচ্ছার কথা জানতে চাইনি। অথচ বিয়েরপর থেকে সবাই আমাকে আমার ইচ্ছা মতো চলতে বলছে। কি এক অবস্থা। কেউ সংসারটা সাজিয়ে দিতে পারলো না। আমার অগোছালো সংসারটা সাজানোর আগেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। এটাই কি আমার জীবনের পরিণাম ছিলো?”

(আসসালামু আলাইকুম!
নতুন গল্প নিয়ে হাজির হইলাম! গল্পের শুরুটা কেমন হলো মন্তব্য করতে ভুলবেন না। আর হ্যা গল্পটা আমার আগের লেখা সব গল্পের থেকে আলাদা ধাঁচের। তা নেক্সট পর্বে বুঝতে পারবেন সবাই।)





#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০১
#Nishi_khatun

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here