প্রেমোদ্দীপক পর্ব ৩০

0
716

#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-২৯)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

সময়টা রাতের প্রথম প্রহর। গোধূলির আলো ছায়ার খেলা শেষ হয়েছে সবেই। তাহিয়াদের বাসায় অভীকের পা পড়েছে এই ক্ষণে। চা নাস্তার পর অভীক বলল,
‘আপনার পার্সোনাল টিউটর হাজির। এবার পড়ার টেবিলে বসে আমাকে ধন্য করুন মননীয়া ছাত্রী।’

তাহিয়া ও সাদরে আমন্ত্রণ জানাল, ‘ আমাকে অনুসরণ করিয়া আপনাকে ধন্য করিবার সুযোগ করিয়া দিলে কৃতজ্ঞ হইব।’

আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অভীক তাহিয়ার রুমে গেল। তাহিয়ার ব্যক্তিগত শিক্ষকের পাঠদান পর্ব শুরু হলো। অভীক বই খুলে একটা অধ্যায় বুঝানো শুরু করল। চমৎকার বাচনভঙ্গিতে বলে যাচ্ছে অনবরত। তাহিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর খেয়াল অভীকের দিকে, পড়ার দিকে নয়। অতিব আপনজনদের পড়াকে মন বিশেষ প্রাধান্য দেয় না। তাদের পড়ায় মনোযোগী হওয়া যায় না। এর জন্যই বোধহয় শিক্ষকের ছেলেদের প্রাইভেট পড়তে অন্য শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে হয়।

মিনিট পাঁচেক বুঝানোর পর অভীক বলল,
‘বুঝেছো?’

তাহিয়া ইতিবাচক মাথা নাড়াল। অভীক বলতে বলল যখন, তখন পারল না।
অভীক ভ্রু কুঁচকাল,
‘তোমার মন কোথায়?’
‘আমি আজ বুঝলাম মানুষ কিভাবে টিউটরের প্রেমে পড়ে। এভাবে পাশাপাশি কাছাকাছি থাকলে প্রেম অনিবার্য। ‘ আনমনে হেসে বলল তাহিয়া।

অভীক বিরক্ত হলো। গম্ভীর স্বরে বলল,
‘পড়ার সময় অমনোযোগীতা পছন্দ করি না আমি। পড়ায় মন দাও। নাহলে কিন্তু আমি চলে যাব।’

তাহিয়া তড়িৎ বলল, ‘ এই না না! যেও না। আমি মনোযোগ দিচ্ছি। তুমি আমার দিকে না তাকিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলো। ক্লাসে যেভাবে পড়াও সেভাবে। এত টান নিয়ে পড়া যায় না।’

অভীক চাপাশ্বাস ফেলে আবার বলা শুরু করল। কেউ কারো দিকে তাকাল না। দুজনের দৃষ্টি বইয়ের দিকে। বুঝানো শেষে তাহিয়াকে জিজ্ঞেস করল। গড়গড় করে সব বলে দিল ও। অভীক মনে মনে বলল, ‘মেধাশক্তি যতটা খারাপ ভেবেছি, ততটাও না।’

প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা খারাপ না। অধিকাংশ ব্যাকবেঞ্চারের স্মৃতিশক্তি টপার থেকে ভালো থাকে। শুধুমাত্র সঠিক গাইড আর অমনোযোগীতার কারণে তারা পড়া থেকে পিছিয়ে যায়, ফলাফল খারাপ করে। ভালোভাবে গাইড করলে তারা ফার্স্টবেঞ্চারদের টপকে যেতে পারে। ফার্স্ট বেঞ্চাররা সারাবছর পড়ে পাশ করে আর ব্যাকবেঞ্চাররা পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পাশ করে। সারাবছর পড়লে তারা র‍্যাঙ্ক রেকর্ড ভেঙে ফেলতো। যারা আগের রাতেও পড়ে না তারা ফেইল করে। তাহিয়া উচ্চ মাধ্যমিক অবধি আগের রাতে পড়া ছাত্রী তালিকায় ছিল। আর ভার্সিটি লেভেলে এসে আগের রাতে না পড়া ছাত্রীর তালিকাভুক্ত হয়েছে। স্মৃতিশক্তি খারাপ না, সমস্যা হলো পড়ায় মনোযোগ নেই।

মাকে নিয়ে বলা কথা রেশ ধরে প্রথম কদিন মনোযোগ দিয়ে পড়েছে। অভীক বুঝাতেই বুঝে নিয়েছে, আবার অভীককেও পড়া বলেছে। বিপত্তি ঘটল সপ্তাহ খানেক পরে। যখন অভীকের কথার রেশ কমে গেল, কথাগুলো ভুলতে শুরু করল। তখন আবার অমনোযোগিতা এসে হানা দিল। পড়তে বসলেই তার বাহানা শুরু হয়, কখনো প্রেম পায়, কখনো ঘুম পায়। আজ পড়ব না, কাল নিশ্চিত পড়ব । কাল ও একই কথা। আজ পড়তে ইচ্ছে করছে না, চলো না ডিনারে যাই, তুমি আমাকে ডিনারে নিয়ে গেছো কতদিন হলো মনে আছে? কত অযুহাত ওর। এভাবে দ্বিতীয় সপ্তাহ কাটল।

পড়ালেখায় অমনোযোগীতা পছন্দ না করা অভীকের পক্ষে এসব দেখে রাগ সংবরণ করা কঠিন হয়ে উঠল। কষ্টসাধ্য হলেও কাজটা সে করল।
ধৈর্য ধরে তাহিয়াকে গম্ভীরমুখে বলে টেবিলে বসাল। মানুষকে জোর করে ধরে রাখা যায়, মানুষের মনকে নয়। তাহিয়াকে টেবিলে বসিয়ে রাখলেও ওর মনকে রাখা গেল না। টানা বিশ মিনিট একটা টপিক বুঝানোর পর তাহিয়াকে জিজ্ঞেস করা জানা যায়, ও শুনেইনি। একটা লাইন বিশবার পড়ে ও মনে রাখতে পারে না। অথচ প্রথমদিকে পাঁচবার পড়লেই আর ভুলতো না। এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে এই মেয়ের ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। এক বিষয় শেষ করতে কত ঘন্টা, কত দিন লাগবে? আদৌ পারবে? কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল অভীকের। চিন্তার ভাজ গাঢ় হলো যখন তিন দিন মিলে এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করল। অভীক তখন রাগ দমিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করল,
‘ অনার্সে ইংলিশ নেয়ার পরামর্শটা কার ছিল? ‘
তাহিয়া স্বগর্বে বলল,
‘আমার ছিল।’
‘কী ভেবে নিয়েছেন?’
‘স্কুল কলেজে আমার পছন্দের বিষয় ছিল ইংলিশ। সব বিষয়ের মাঝে ইংলিশে আমার নাম্বার ভালো আসতো সবসময়। ইংলিশটা ভালো পারতাম আমি। তাই..

অভীক ফোঁড়ন কাটল,
‘সেই ভালো পারাটা কোন গ্রহে হানা দিয়েছে এখন?’

‘ আগে কিছুক্ষণ পড়লেই পারতাম। অনার্সে উঠে পড়ায় মন বসে না। এই যে এখন এত পড়ছি মুখস্থই হচ্ছে না। ‘ চশমা ঠেলে হেসে বলল তাহিয়া।

ওর দায়সারা ভাব দেখে অভীক বলল,
‘তুমি কি পড়বে, না চলে যাব?’
‘পড়ছি।’

আবার মনোযোগহীনভাবে পড়তে শুরু করল তাহিয়া। অভীক শূন্য চোখে তাকিয়ে রইল। কোমল স্বরে বলল,
‘ ফার্স্ট ইয়ারের তিনটা সাবজেক্ট, সেকেন্ড ইয়ারের সব সাবজেক্ট এখনো অসম্পূর্ণ। কিছুই পড়া হয়নি। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলেই সেকেন্ড ইয়ারের শুরু হবে। সময় নেই হাতে। হ একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ো হিয়া! দিন দুই এক ঘন্টা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই যথেষ্ট, সারাদিন লাগবে না। এতটুকু অন্তত পড়ো হিয়া। ‘

এভাবে বলার পর দুই একদিন ভালোভাবে পড়ল। তারপর আবার যেই সেই। তারপর আবার অভীক আলতো স্বরে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝাল আবার মনোযোগী হলো, তারপর আগের আবার অমনোযোগীতা। অভীকের মনে হলো দেশ সামলানোর চেয়ে এক অমনোযোগী ছাত্র সামলানো কঠিন।
অমনোযোগীতার ধারালো তীরে বিদ্ধ হয়ে কাটল তৃতীয় সপ্তাহ। তিন সপ্তাহে একটা ঐতিহাসিক চ্যাপ্টার পড়ে শেষ করতে পারল তাহিয়া। সেই চ্যাপ্টার থেকে টেস্ট নিল অভীক। ফলাফল শূন্য। দুই একটা প্রশ্ন ছাড়া কিছুই পারল না। ধৈর্য্য, রাগ দুটোই বাধভাঙ্গল অভীকের।

তাহিয়ার অমনোযোগীতা অভীককে মনোক্ষুণ্ণ করেছে। এত কষ্ট করে সে দুই ঘন্টা জার্নি করে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথায় যায়, শুধুমাত্র তাহিয়াকে পড়ানোর জন্য। পড়িয়ে আবার ফিরে চলে যায়। বাসায় গেলে ক্লান্ত শরীর ভেঙে আসে। মেয়েটার কাছে ওর পরিশ্রমের কোন গুরুত্ব নেই?

টেস্টের ফলাফল দেখে অভীকের মনে হলো আর কিছুক্ষণ তাহিয়ার সামনে থাকলে রণক্ষেত্র হয়ে যাবে। এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ, নিজের জন্য নয় তাহিয়ার জন্য। রাগের মাঝে ও অভীকের নীতি ঠিক।
ও কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল। হনহন করে বেরিয়ে গেল। তাহিয়া অনেক ডাকল, ফিরে ও তাকাল না।ফিরে তাকালেই ওর অগ্নিচোখে দগ্ধ হতো তাহিয়া।

পড়াশুনার বাস অভীকের মনের সফট কর্ণারে, বোধহয় তাহিয়ার পাশেই। পড়াশোনাকে তাহিয়ার প্রতিবেশী বলা যায়? হয়তো। নয়তো দুটোর এত বিরোধ কেন! তাহিয়া তার প্রতিবেশিকে আঘাত করতে গিয়ে অভীককে ভয়ানকভাবে আঘাত করেছে। আঘাতে জর্জরিত অভীক রেগে অগ্নিশর্মা।

কিছু মানুষ আছে, যারা রেগে গেলে রাগ দেখাতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে, কেউ আবার রাগ চাপা রেখে নিজেকে তার কাছ থেকে এড়িয়ে নিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ ক্ষেত্রে অভীক দ্বিতীয় শ্রেণীয় মানুষ। ওর রাগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে না। না তাহিয়াকে বকেছে, না ধমকেছে, না হাত তুলেছে। এর কিছু করছেনা। যা করেছে তা হলো তাহিয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। রাগ, অভিমানের বশবর্তী হয়ে তাহিয়ার সাথে যোগাযোগ করল না, তাহিয়া অনেকবার কল করেছে ধরেনি। প্রতিদিন ওরা ঘুরতে যায়, সেটাও বাদ দিয়েছে। কলেজে ও দেখে না দেখার ভান করে থেকেছে। তাহিয়ার দৃষ্টিকটু লাগল ব্যাপারটা।

। ঝড়ের পূর্বের থমথমে পরিবেশের মতো ভয়ানক অভীকের ভাব। ২৪ঘন্টার মাঝেই অভীকের রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হলো। অভীকের এড়িয়ে যাওয়ায় ভাবুক হলো তাহিয়ার মন, মলিন হলো মুখ। এমনটা তো হয়নি আগে। এখন এমন করছে কেন? কত কল করল, লোকটা ধরলই না।

তাহিয়াদের ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্যুরে যাবে দিন তিনেক বাদে। ঘোষণা আসার পরে তাহিয়া বলেছিল অভীককে। অভীক কিছু বলেনি তখন। এখন রেজিষ্ট্রেশন চলছে। ইতঃপূর্বে মাহমুদা মেয়েকে একা ছাড়েন নি কোথাও। ট্যুরে যাওয়ার বায়না পূরণ হয়নি তাহিয়ার। এবার অভীকের কথা ভেবেই মাকে জিজ্ঞেস করেছে তাহিয়া। মাহমুদা তড়িৎ বললেন, ‘যা। আমার আপত্তি নেই।’

আনন্দে আত্মহারা তাহিয়া ফোন করল অভীককে। উঠানো হলো না ফোন। কল,ম্যাসেজ, ইমেইল কোনটাও বাদ রাখল না। প্রতিটা সোশ্যাল সাইটে নক দিল। রিপ্লাই এলো না। অভীককে না জিজ্ঞেস করে কিছু বলা ও যাচ্ছে না। যেহেতু ও অভীকের ভরসায় যাবে। এখন যাওয়া হবে কি না শঙ্কায় আছে। কত আশা করেছিল যাবে, আনন্দ করবে। ও যাবে বলে মীরা শৈলী ও রেজিস্ট্রেশন করেছে। এখন না গেলে ওদের হাতে মার খেতে হবে নিশ্চিত।

ডিপার্টমেন্টের সিড়িতে দেখা হলো একদিন বাদে। তাহিয়া কথা বলতে চাইল। অভীক পাশ কাটিয়ে চলে গেল।অভীকের এই অবহেলা অসহনীয় লাগছে তাহিয়ার।কেমন শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে পার করছে যেন। অসহনীয় মনের যন্ত্রণা থেকে একটা পরিকল্পনা করল। ভাবনামাফিক নীলিমাকে কল দিল।

নীলিমার মাথা ঘুরাচ্ছে। খাটে শুয়ে আছেন। অভীক মায়ের শিয়রে বসে স্ফিগমোম্যানোমিটার নিয়ে মায়ের প্রেশার মাপছে। নীলিমার রুমেই আছে মা ছেলে। তাহিয়ার কল দেখে রিসিভ করে স্পিকারে রাখলেন নীলিমা। অভীক অন্তর্ভেদী চোখে পরখ করল মায়ের ফোনের পর্দায়, তারপর মনোযোগী শ্রোতার মতো কান পাতাল। নীলিমা বলল,
‘ হ্যালো।’

উত্তরে অপাশ থেকে সুরেলা গলা ভেসে এলো,
‘আসসালামু আলাইকুম মামুনি। কেমন আছো?’

নীলিমা সচকিত তাকালেন ফোনের দিকে। তাহিয়া ওনাকে ‘মামুনি!’ ডাকছে! প্রথমবারের মতো!

ছোটোবেলায় নীলিমা তাহিয়াকে কত করে বলতেন, ‘আমাকে মা ডাকবি, আন্টি ডাকবি না। পর পর লাগে। তুই আমার মেয়ে। মাকে কেউ আন্টি ডাকে?’
জেদী তাহিয়ার তখন এক কথা, ‘আমি আমার মা ছাড়া কাউকে ‘মা’ ডাকব না।’
নীলিমা তখন বলতেন, ‘আচ্ছা তাহলে মামুনি ডাক।’ তাহিয়া তাও ডাকতো না। আন্টিই ডাকতো। আজ এত বছর পর ডাকল। কেমন যেন আনন্দ হলো নীলিমার।

তিনি কিছুটা বিস্ময়, কিছুটা খুশির সাথে বললেন,
‘ হঠাৎ ডাক বদলালি?’
‘তুমি এখন আমার শ্বাশুড়ি না? শ্বাশুড়িকে তো কেউ আন্টি ডাকে না। তাই আমি ডাক বদলে ফেললাম। ভালো করেছিনা মামুনি?’ চঞ্চল গলা তাহিয়ার। নীলিমা হাসলেন,
‘ভালো করেছিস। ‘

অভীক মনে মনে বলল, ‘এই মেয়ের বাড়তি আহ্লাদীপনার পেছনে অন্য ঘটনা থাকে । নিশ্চিত তোমার পেট থেকে কথা বের করার পরিকল্পনা এঁটেছে। যখন ও অতিরিক্ত কোমল হবে, বুঝতে হবে ওর কিছু জানার আছে, বা আবদার আছে। তুমি তো ওকে এদিক থেকে চিনো না মা। দেখো, একটু পরেই আসল কথা বেরুবে পেট থেকে। ‘

ঠোঁট চেপে হাসল অভীক। বউ শ্বাশুড়ির কুশল বিনিময় পর্ব চলছে এখন। টুকটাক কথা বলল। তারপরই তাহিয়া মূল কথায় ফিরল,
‘মামুনি, তোমার একটা রাগী গম্ভীর ছেলে আছে না? ও কোথায়?’

অভীক বিজয়ী হাসি দিল। ওর কথা ফলে গেল। নীলিমা ছেলের দিকে চাইলেন। অভীক প্রেশার মেপে মেশিন ভাজ করছে। নীলিমা হেসে বললেন,
‘আমার ওই একটাই তো ছেলে।’

‘তোমার আরেকটা ছেলে থাকলে ভালো হতো। তার থেকে আরও ভালো হতো যদি আমাকে ওর কাছে বিয়ে দিতে।’ আফসোসের সুরে বলল তাহিয়া।

নীলিমা হাসলেন। এই মেয়েটা বড়ো হলো না। সেই বাচ্চাই রয়ে গেছে। হেসেই বললেন,
‘তা আমার এই ছেলে কী করেছে?’

‘আমাকে ট্যুরে নিচ্ছে না। এত করে বললাম, আমাকে নিয়ে যেতে। রাজিই হচ্ছে না। আমার বন্ধুবান্ধব সবাই যাবে, আর তোমার ছেলে ও তো যাবে। আমি গেলে কী সমস্যা বলো তো!’

অভীক অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকাল। ডাহা মিথ্যা কথা। তাহিয়ার সাথে তো কথাই হয়নি ওর সাথে। কখন যাবে বলেছে, ও নিষেধ করেছে! আশ্চর্য! চোখ ফিরিয়ে কাজে মন দিল।

নীলিমা অভীকের দিকে তাকালেন। অভীক নিজের কাজে ব্যস্ত। এদিকে মন নেই। নীলিমা বললেন,
‘ সমস্যার কিছুতো দেখছি না আমি। ও যখন যাচ্ছে তখন তুই ও তো যেতে পারিস।’

‘এটাই তো আমার কথা। আজ কথা বলতে গেলাম। শুনলোই না। তুমি তোমার ছেলেকে বলো, আমার নামটা যেন রেজিস্ট্রেশন করে। বিয়ের আগে মা কখনো একা বলে দেননি। এবার বলতেই মা রাজি হয়ে গেলেন। আমি পরিকল্পনা এঁটেছিলাম যাব। আমার বান্ধবীরাও যাচ্ছে। প্লিজ মামুনি তুমি ওকে বলো।’

অনুরোধ ঝরে পড়ল তাহিয়ার স্বরে। নীলিমা বললেন,
‘আচ্ছা আমি বলব তোকে নিয়ে যেতে। ‘
‘ থ্যাঙ্কিউ মামুনি। তুমি অনেক ভালো। ‘

কথার ইতি টেনে ফোন রাখল এর পর। ফোন রেখে নীলিমা বললেন,
‘ ঘটনা কী অভীক?’
‘বিশদিন পর রি-টেইক এক্সাম। সেই চিন্তা নেই তোমার পুত্রবধুর। ঠিক কতভাবে পড়ায় ফাঁকিবাজি করা যায়, সব উপায় প্রয়োগ করা শেষ ওর। একটা মানুষ এতটা পড়াচোর কিভাবে হয় মা? ‘

নীলিমা হেসে বললেন,
‘ ও এমনিই। বড্ডো অবুঝ। একটু সুন্দর করে বুঝাস, বুঝবে। পিকনিকে নিয়ে যা। ঘুরাঘুরি করলে মন ভালো থাকবে, পড়ায় মনোযোগী হতে পারবে। বিয়ের পর ওকে ঘুরতে নিয়ে যাসনি তেমন। সুযোগ মিস করিস না। ‘

অভীক মনে মনে বলল, ‘সুন্দর করে বুঝানোর সব উপায় প্রয়োগ শেষ। ফলাফল শূন্য। আর তোমার পুত্রবধূকে এই শহরের এমন কোন দর্শনীয় স্থান নেই, যেখানেই ঘুরাইনি। ঘুরাঘুরি করলে মন ভালো থাকে। তখন তোমার গুনধর পুত্রবধুর মনোযোগটা পড়ায় নয় প্রেমে হয়। প্রেম প্রেম পায় ওর, পড়া পড়া নয়। তুমি চিনে ও চিনো না ওকে। এই মেয়ে সাংঘাতিক রকমের ফাজিল!’

মুখে বলল, ‘আচ্ছা দেখি।’

স্টাডি ট্যুরে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর তালিকায় তাহিয়ার নাম ইতিমধ্যেই উঠে গেছে। ঘোষণা আসার দিনই তাহিয়ার নাম রেজিষ্ট্রেশন করেছে ও। তাহিয়ার ঘুরাঘুরির শখ ওর অজানা নয়। যত ইচ্ছে ঘুরুক সমস্যা নেই, কিন্তু পড়ালেখাটা ও করুক। তাহিয়ার বলার আগেই তাহিয়ার নাম দিয়েছে ও।
তাহিয়া ও সে কথা জানে না। অভীক নিজ থেকে জানায়নি। এখন জানালে রাগ দেখানো হয়ে উঠবে না। তাই মায়ের কাছে ও স্বীকার করল না। পরদিন তাহিয়াকে ম্যাসেজ করল,
‘ ট্যুরের জন্য নাম দিয়েছি। পড়ালেখা তো করবেন না। এখন মনোযোগ দিয়ে ট্যুরের প্রস্তুতি নিন। টাকা বিকাশ করেছি, শপিং করার হলে করে নিয়েন।’

তাহিয়ার মলিন মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। যত যাই হোক, এই লোকের দায়িত্ববোধে নড়চড় নেই। শুধু ট্যুরের দিনটা আসুক, তারপর অভীকের মন মাথা সব জায়গা থেকে রাগের বংশ তাড়াবে। না হলে ওর নাম হিয়া না। ফোনের দিকে তাকিয়ে পণ করল তাহিয়া।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here