ভালবাসা মানে নীল প্রজাপতি
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
একটা ছেলে মোটা ফ্রেম এর চশমা পরে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা বাসা খুঁজতেছে। ছেলেটির নাম আদনান। বয়স ২৬ দেখতে তেমন একটা ভালো না বেটে টাইপ এর। সে এই শহরের পুরান ঢাকা তে বড় হইছে চাকরির জন্য নতুন ঢাকায় এসে বাসা খুঁজছে। কিছুক্ষণ আগেই তার জীবনের প্রথম একটা জব পেয়েছে। সে মনে মনে ভেবেছে যদি জব টা হয়ে যায় তাহলে বাসা ঠিক করেই সে বাসায় ফিরবে আর পরদিন নতুন বাসায় উঠবে।
,,
এখন কোন বাসায় টু-লেট লাগানো আছে সেটা খুঁজে দেখছে। এই শহরের ছেলে হয়েও তেমন একটা চালাক চতুর না। সবসময় চুপ চাপ থাকে, যদি কখনো বেশি দরকার পরে তখন কথা বলে।
,,
খুঁজতে খুঁজতে সে একটা বাসা পেয়ে যায়। প্রথমে কথা হয় দারোয়ান এর সাথে..
-এ ভাই এখানে কি? বাসা ভাড়া নিবেন??(দারোয়ান)
-জ্বি (আদনান)
-মালিক বাসায় নেই
-কোথায় গেছেন?
-আত্মীয়ের বাসায়
-ওহহ উনি কখন ফিরবেন
-তা তো ভাই বলতে পারলাম না
-জহির ভাই কে উনি? (বাসার মালিকের মেয়ে। নাম রাত্রি দেখতে যেমন সুন্দর মেজাজ টা তেমনই অসুন্দর মানে মেজাজ ফোরটি নাইন এর থেকেও বেশি গরম। রাত্রি ভার্সিটি তে পরে, সারাদিন বন্ধু বান্ধব, আড্ডা ফেসবুক এগুলো নিয়েই পরে থাকে)
-উনি বাসা ভাড়া নিতে আইছেন (দারোয়ান)
-আপনি ব্যাচেলর? (রাত্রি)
-হ্যা
-শোনেন বাবা ব্যাচেলর ভাড়া দিবে না। ভাগ্য ভালো আপনার সাথে আমার দেখা হইছে আপনাকে বাসা ভাড়া দিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে
-কি শর্ত?
-মূল ভাড়া থেকে দুহাজার টাকা বেশি দিতে হবে
-…(আদনান ভাবছে)
-না পোষালে খুঁজে দেখতে পারেন এর থেকে ভালো বাসা আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না
-আচ্ছা আমি বেশি দিবো
-ওকে বাসায় কবে উঠবেন?
-কাল
-তাহলে জহির ভাই আপনি উনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য নাম্বার টা রেখে দেন কাল আসলে উনাকে উনার রুম চিনিয়ে দিবেন
-আজ রুম দেখে যাই
-বললাম তো ঠকবেন না
-হুমমম
-জহির ভাই আমি আসছি এখন (রাত্রি বাইরে চলে গেলো)
-ভাই তাহলে আমি আসি এখন(আদনান)
-হ্যা ভাই কাল দেখা হবে
,,
পরদিন আদনান বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নতুন বাসায় উঠে। রুম তার খুব পছন্দ হইছে ৩য় তলায় রুম হওয়ায় ছাদ কাছেই আছে, কারন বাসা টা চার তলা। সব মিলিয়ে আদনান এর কাছে ভালই লেগেছে।
,,
আদনান এর নতুন দিন শুরু হলো। নতুন অফিস নতুন বাসা, দিন গুলো তার ব্যস্ততায় কাটছে তবে সবকিছু তার কাছে নতুন লাগছে।
,,
আদনান এর নতুন জীবনে তার পুরোনো একটা জিনিস আছে সেটা হলো ঐশী। ঐশী আদনান এর ফেসবুক ফ্রেন্ড, আদনান এর সাথে অনেক দিন এর পরিচয়। তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের। কিন্তু আদনান এর কাছে সম্পর্কটা ভালবাসার, কারন সে ঐশী কে ভালবেসে ফেলেছে।
,,
প্রতিদিন রাতে তাদের কথা হয়। আদনান এর প্রোফাইলে আদনান এর ছবি দেওয়া নেই ঐশীরও তাই সেও ছবি দেয় নি একটা পুতুল এর ছবি দিয়ে রাখছে। কেউ কাউকে কখনো দেখে নি তবে কথা বলতে বলতে সম্পর্কটা অনেক দূর গড়িয়েছে।
,,
একদিন আদনান অফিস থেকে এসে রুমে ঢুকতেই ঐশীর ফোন ম্যাসেজ..
-কই তুমি? এফ বিতে আসো (ঐশী)
-আমি মাত্র অফিস থেকে আসলাম (আদনান)
-তো কি হইছে? এখন আমি তোমার সাথে কথা বলব, আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে
-আচ্ছা আসছি
,,
আদনান ডাটা অন করতেই ঐশীর ম্যাসেন্জারে কল।
-কেমন আছো(আদনান ফোন রিসিভ করে বলল)
-ভালো না (ঐশী)
-হঠাৎ কি হলো তোমার?
-তুমি তো জানো বাবা মা বাসায় নেই। উনারা কাছে না থাকলে ভালো লাগে না
-আমি তো তোমাকে তাদের সাথে যেতেই বললাম
-উমমম আমার একদম ভালো লাগে না
-হুমমম রাতের খাওয়া হইছে??
-না দশটায় খাবো
-ওহহ
-ও বন্ধু (ঐশী, আদনান কে “ও বন্ধু বলেই বেশি ডাকে)
-হ্যা বন্ধু বলো
-তুমি আমার সামনে আসবে না?
-অবশ্যই তোমার সামনে আসবো, তোমার সামনে গিয়ে ঝগড়া করবো
-এই ঝগড়া করবা কেনো?
-কারন ঝগড়া তোমার ভালো লাগে
-হুমম ঠিক বলেছো
-একটা কথা বলি
-বলো?
-আমাকে তুমি পছন্দ করো তো তাই না?
-আরে পাগল পছন্দ না করার কি আছে? তুমি তো আমার সব
-ধরো আমার একটা পা নেই, আমাকে দেখার পর কি আর পছন্দ করবে না
-তোমার চার হাত পা না থাকলেও তোমাকে…
-হুমম বুঝেছি আর বলতে হবে না
-ওকে তো তুমি এখন রান্না করে খেয়ে নাও, আর খবরদার বাসায় কোনো মেয়ে থাকলে তাদের সাথে কথা বলবা না
-হুমম কেউ নেই তো
-তার মানে তুমি খুঁজে দেখছো?
-আরে না, কোনো মেয়ে আমার চোখের সামনে পরেনি তাই বললাম কেউ নেই
-হুমম ঠিক আছে রাখছি এখন রাতে খাওয়ার পর কথা হবে।
,,
আদনান রাতে রান্না করে খাওয়া শেষ করলো। সব কিছু গুছিয়ে আবার এফ বিতে ঢুকলো আর দেখলো ঐশী ম্যাসেজ দিয়ে রাখছে (এফ বি তে এসে কল দিবা)
আদনান কল করলো..
-খাওয়া হলো তাহলে? (ঐশী)
-হ্যা খেয়ে তোমাকে কল করলাম (আদনান)
-আচ্ছা তুমি যে বাসায় থাকো সে বাসায় কি ছাদ আছে?
-হ্যা আছে থাকবে না কেনো?
-হুমম ছাদে এসো
-কেনো?
-কারন আমিও আমার বাসার ছাদে, দুজন দু বাসার ছাদে থাকলে মনে হবে এক সাথে ছাদে আছি
-যেতেই হবে?
-অবশ্যই
-ওকে যাচ্ছি
,,
আদনান ছাদে এসে বলল..
-তোমার কথা মতো ছাদে আসলাম (আদনান)
-এই আমি একটু পরে ফোন করছি(ঐশী)
-কেনো?
-ছাদে একটা উটকো ভেজাল উঠেছে, আমি পরে ফোন করছি
,,
ঐশী লাইন টা কাটতেই…
-এই আপনার সমস্যা কি??(বাড়িওয়ালার মেয়ে রাত্রি)
-সমস্যা নেই তো (আদনান)
-সমস্যা নেই তো ছাদে আসছেন কেনো?
-রুমের ভেতর ভালো লাগছিলো না তাই ছাদে আসলাম
-মিথ্যা বলেন কেনো? আমি দেখলাম আপনি ফোন কানে ধরে ছিলেন, জি এফ এর সাথে কথা বলছিলেন বুঝি?? যাই করেন রুমে গিয়ে করেন
-আপনার হাতেও তো ফোন
-তো কি হইছে?
-না কিছু না আমি যাই
-হ্যা, রাত দশটার পর ছাদে দেখলে ভাড়া থেকে আরও পাঁচশ টাকা বেশি নিবো
,,
আদনান ছাদ থেকে নেমে তার রুমে চলে আসলো আর সাথে সাথে ঐশীর ফোন..
-হ্যা হ্যালো (ঐশী)
-বলো (আদনান)
-তুমি ছাদেই আছো?
-হ্যা আমি ছাদেই আছি (আদনান মিথ্যা বলল। কারন মেয়েটা যে আদনান কে তাড়িয়ে দিয়েছে সেটা বললে ঐশী আবার হয়তো ঝগড়া বাধিয়ে দিবে। এই ভয়ে আদনান কিছু বলল না)
-জানো একটা ছেলে খুব পাজি, নতুন ভাড়াটিয়া একটা কথাও শুনে না খুব ত্যাড়া
-হুমম
-হুমম কি?
-নতুন ভাড়াটিয়া ত্যাড়া হয়
-তাই না?
-হ্যা
-তো এসব বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলো
-কি বলব?
-এই যে ছাদে পরিবেশ টা কেমন লাগছে?
-মনের মধ্যে প্রচণ্ড ভালো লাগা কাজ করছে।
মনে হচ্ছে তুমি আমার পাশে দাড়িয়ে আছো। আমরা দুজন দাড়িয়ে পূর্ব দিকের ঐ চাঁদটাকে দেখছি
-ওয়েট ওয়েট
-কি হয়েছে?
-আকাশে তো চাঁদ নেই, তুমি চাঁদ পেলে কোথায়?
-ওহ ম ম ম মানে মনে মনে চাঁদ এঁকেছি
-এই সত্যি বলো তো তুমি কোথায়?
-বললাম তো তোমার পাশে দাড়িয়ে..(আদনান বানিয়ে কথা বলায় ভয়ে একদম ঘেমে গেছে, সে ছাদে উঠে খেয়ালই করেনি যে আকাশে চাঁদ ছিলো কি না)
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
চলবে
#SSSS