ব্লাক ডেভিল,( পর্ব-৪ শেষ )
লেখক- Riaz Raj
একটা ফায়ার বুলেট এসে রিয়াজের বুকে পড়ে। ছুতে পারেনি ওপাড়ের কূল। উল্টো হয়ে গর্তের ভিতর,অর্থাৎ দুই পাহাড়ের চিপায় পড়ে যেতে লাগলো,রিয়াজের দানবীয় সত্বা আর রনি।
দুই পাহাড়ের মাঝে জঙ্গলের লতাপাতা ভরাট করা। বিভিন্ন গাছের শিকড় এপাড় থেকে ওপাড়ে গিয়ে লেগে আছে। মাঝের পথ খুবই বিপদজনক। সেই লতার মাঝে ছেচকি খেতে খেতে নিছে পড়ে যাচ্ছে দুজনেই। অন্ধকার রাতের এই অন্ধ গর্তের ভিতর আন্দাজ করা বিষ্কম্ভক। লতা পেছিয়ে আটকে যায় ওর,আবার ছিঁড়ে পড়তে থাকে নিছে। রনির চিৎকার যেনো ৩ পাহাড়ের ওপাড়ে যাচ্ছে। রিয়াজ দানব সত্বা নিয়ে গম্ভীর গর্জন ছেড়েই যাচ্ছে। হটাৎ রিয়াজ অনুভব করলো তার চোখের পাওয়ার বেড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হতে লাগলো। রনির পড়ে যাওয়া, আর এই দুই পাহাড়ের সমতলে কি আছে,সব দেখতে পাচ্ছে। রিয়াজ লতা ধরে নিজের পড়ে যাওয়ার গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। রনি চিৎকার করে যাচ্ছে। রিয়াজ শূন্যের উপরেই ভেসে রনিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। রনি রিয়াজের দিকে তাকিয়ে দেখে রিয়াজের চোখ দুটো লাল বর্ণভেদ হয়ে গেছে। যেনো লাল লাইট লাগানো হয়েছে। এরই মাঝে হটাৎ ভারি কিছুর ধমড়ে পড়ার শব্দ।
রনি রিয়াজের হাতের মুঠোয়। রিয়াজ দানব সত্বা নিয়ে বালির উপর পড়ে আছে। রনি আঙ্গুল সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত। আর স্রোতের পাশেই বালির এলাকা। রনি হাতের মুঠোয় করে কিছুটা পানি নিয়ে আসে। রিয়াজের মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই গর্জন করে উঠে রিয়াজ। শরীরের আকার ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে ওর। রনি রিয়াজের এই রুপ বদল দেখে যাচ্ছে। শার্ট ছিড়ে ছেঁড়া ফাটা হয়ে যায়। ব্যাগ থেকে একটা শার্ট এনে দাঁড়িয়ে থাকে রনি। রিয়াজ ফিরে আসে মানব সত্বায়। এরপর রিয়াজ নিজেই বলল,
– আমরা কোথায় এসেছি।
– দুই পাহাড়ের চিপায়।
– জলদি চলুন, অপেক্ষা করে যাবেনা। ৬ জন এজেন্টকে উদ্ধার করা লাগবে।
বলেই রিয়াজ উঠে দাঁড়ায়। রনি বলল,
– আপনার শরীর ঠিক নেই। একটু তো বিশ্রাম নিন।
– আপনাকে ভুলে গেলে চলবেনা। ৬ জন এজেন্ট সাধারণ কোনো এজেন্ট নয়। ওরা অলৌকিক যন্ত্র আবিষ্কার করা পারদর্শী। তাদের এতো সহজে ব্লাজ ডেভিলের হাতে আমি দিতে পারিনা। আমাদের এজেন্টকে ব্যবহার করে ডিওএমএম এর ক্ষতি করতে পারে ব্লাজ ডেভিল।এস্টুম্যান কি বলেছে জানেন? আমার জন্মই হচ্ছে যুদ্ধ করা। বিশ্রাম আমার জন্য তৈরি হয়নি।
– তাই বলে এইভাবে। এতে বিপদে পড়তে পারেন।
– তা সময়ে বলে দিবে। এখন আমার টার্গেট ৬ জন এজেন্ট। আর ব্লাক ডেভিলের অস্তিত্ব খোজা।
– যা ভালো বুঝেন। চলুন তবে। কিন্তু কিভাবে উপরে উঠবেন।
– কথার মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি অন্ধকারে স্পষ্ট প্রকৃতি দেখতে পেলাম কিভাবে। আর ঐ ফায়ার বুলেট ছুড়েছিলো কে?
– এখন খুব বুঝতে পারছি।আমার মাথায় গোবর ছাড়া কিছুই নেই।এই চুলগুলো গোবরে ভর্তি। আপনার রহস্য আপনি খোঁজেন।
– তা তো খুঁজবোই।কিন্তু আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
– পানি খাবেন?
– না,অন্য কিছু লাগবে।
– অন্য কিছু কি আবার।
– জানিনা আমি। তবে এই তৃষ্ণা পানিতে মিঠবেনা।
– তৈল খাবেন?
– মজা করবেন না।
– মজা কখন করল…
কিথা শেষ না হতেই রিয়াজ অনুভব করলো কিছু একটার গর্জন আসতেছে। রনি চুপ হয়ে যায় ওখানেই। বাঘের কণ্ঠস্বর মনে হচ্ছে তাদের। রনি সোজা হয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ ভ্রু কুঁচকে চারপাশ চোখ বুলাচ্ছে। এক্সট্রা পানি পড়ার শব্দ আলাদা ভাবে শুনা যায়। রিয়াজ বুঝেছে রনি প্যান্টের মধ্যেই গোল কিক করেছে। কিন্তু কি দেখে? রনির চোখ রিয়াজের পিছনে। রিয়াজ পিছনে ফিরে তাকাতেই খেয়াল করে একটা অদ্ভুত প্রানী পানি খাচ্ছে কূল থেকে। রিয়াজ হাতের ইশারায় রনিকে বুঝালো নড়াচড়া না করার জন্য। প্রানীটার আকার অনেক বড়। বড় বড় চিকন দাত।বিশাল একটা লেজ আর দানবীয় দেহ। কুমিরের মতো দেখতে,তবে কুমির নয়। রিয়াজ আর রনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রানীর থেকে ওরা মাত্র ১০০ হাতের মতো দূরে। বিশাল আকৃতির এই প্রানী পানি পান করে ঘুরে জঙ্গলে যাচ্ছে। রিয়াজ দাড়িয়ে আছে তার মতো। রনির কথা না বলাই শ্রেয়। প্রানীটা ঘুরে যাওয়ার সময়,হটাৎ আবার দাঁড়িয়ে যায়। রনি মৃত্যুর সাথে বন্ধুত্ব করা শুরু করে দিয়েছে। রিয়াজ তাকিয়ে আছে প্রানীটার দিকে। প্রানীটা থেমে গিয়ে আবার পিছনে ঘুরে তাকায়। রনি ভয়ে জমে গেছে। রিয়াজ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। রনি যখন দেখে প্রানীটা তাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনি সে। চিৎকার দিয়ে বলল,” রিয়াজ পালা পালা, বাচতে চাইলে পালা”। রনির আওয়াজ শুনে প্রানীটা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে ছুটে আসতে লাগলো রনির দিকে। রনিও উল্টো দৌড় দিতে লাগলো। রিয়াজ উল্টো না দৌড়ে প্রানীটার দিকে ছুটা শুরু করেছে। এইবার প্রানীটা রিয়াজকে টার্গেট করে। রিয়াজ দৌড় অবস্থায় দানবীয় সত্বায় চলে আসে। রিয়াজও গর্জন ছেড়ে ছুটে আসতে শুরু করে। রনি ডাবল গর্জন শুনে পিছনে তাকায়। আর দেখে, রিয়াজ আর প্রানীটা একে অপরের দিকে ছুটে যাচ্ছে। প্রানীটা হা করে রিয়াজকে মুখের ভিতর নিতে যাচ্ছিলো। রিয়াজ এক লাফ দিয়ে প্রানীটার ঘাড়ে উঠে বসে। ধুমড়ে পড়ে প্রানীটা। রনি হতভম্ভ হয়ে যায় রিয়াজের কান্ড দেখে। রিয়াজ ঘাড়ে উঠে প্রানীটার চামড়া ধরে ছিলে ফেলে। আর রিয়াজের মুখ থেকে বের হওয়া দাত গুলো বসিয়ে দেয় প্রানীটার ঘাড়ে। প্রানীটা চিৎকার করতে লাগলো। রিয়াজ ঘাড় কামড়ে প্রায় ছিড়ে ফেলার অবস্থায় চলে আসে। প্রানীটা গড়াগড়ি শুরু করে নিজের প্রান বাচানোর জন্য। লেজ দিয়েও সে রিয়াজকে ধরতে পারেনা। আবার ঘাড় ঘুরিয়েও না। কারণ রিয়াজ নিজেই তার ঘাড় দখল করে আছে। কিছুক্ষণ পর প্রানীটা নিস্তেজ হয়ে যায়। রিয়াজ এখনো ঘাড় কামড়াচ্ছে। রনি হা করে তাকিয়ে আছে রিয়াজের দিকে। স্পষ্ট রনি দেখতে পাচ্ছে রিয়াজের চোখ লাল হয়ে গেছে। হুট করে চোখের পলকেই রিয়াজ আবার এক লাফ দিয়ে রনির সামনে আসে। রনি রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বমি করার অবস্থাপিত হয়ে যায়। রিয়াজের মুখে রক্ত। হিংশ্র প্রানীর মতো লাগছে তাকে। রিয়াজ আবার ফিরে আসে মানব সত্বায়। এরপর বলল,
– আমি রক্ত পিপাসিত ছিলাম। রক্তের তৃষ্ণা ছিলো আমার। পূরণ হয়ে গেছে। চলো যাওয়া যাক।
রনি শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনেছে।
রিয়াজ রনিকে কাধে নিয়ে আবার দানবীয় সত্বায় ফিরে যায়। ছুটতে থাকে পাহাড়ের উঁচুতলা। এই পাহাড় থেকে সেই পাহাড়,আবার এখান থেকে ওখানে। এইভাবে উঁচুমানে ফিরে যায় সে। অবশেষ পাহাড়ের উপরে উঠে রিয়াজ। রনি কাধ থেকে নেমে পড়ে। রিয়াজ সামনে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটিরও চোখ জ্বলজ্বল করছে। রিয়াজকে দেখেই মেয়েটি ফায়ার বুলেট ছুড়া শুরু করে। রিয়াজ ফায়ার বুলেট ঠেকাতে যাবে,তার আগেই মেয়েটি রিয়াজকে এসে সজোরে আঘাত করে বসে। রিয়াজ উলটপালট হয়ে কয়েক ধাপ পিছনে ছিটকে পড়ে। উঠে দাঁড়ানোর আগেই,ফায়ার বুলেট এসে রিয়াজকে পাল্টা আক্রমণ করে। রিয়াজ আবার পাহাড়ের নিছে পড়ে যেতে যাচ্ছিলো। তার আগেই, মাটি আঁকড়ে ধরে সে। মেয়েটি আবার ফায়ার বুলেট ছুড়ে মারে। রিয়াজ বুঝতে পারে,আগের মতো মেয়েটি আবার বুলেটের আগে এসে আক্রমণ করবে। তাই রিয়াজ আন্দাজের উপর বাতাসে ঘুষি মেরে দেয়। আর নিশানা সঠিক হওয়ায়,মেয়েটি ছিটকে পড়ে তার ছুড়া ফায়ার বুলেটের উপর। রিয়াজ এক লাফ দিয়েই মেয়েটির সামনে আসে। মেয়েটি হটাৎ বাতাসের গতিতে হারিয়ে যায়। রিয়াজ খুঁজতে লাগলো মেয়েটিকে। ভাবতে না ভাবতেই কেও রিয়াজের মাথায় সজোরে আঘাত করে। রিয়াজ আবার ছিটকে পড়ে জঙ্গকের ঝোপে। এইবার মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাথে সাথে মনে পড়ে এস্টুম্যান এর কথাগুলো।
– তোমাকে বাঁচাতে হবে ৬ জন এজেন্টকে। খুঁজতে হবে ব্লাক ডেভিলকে।আর বিনাশ করতে হবে তাকে।
কথাগুলো মনে হতেই রিয়াজ ঝোপ থেকে ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে উড়ে আসে মেয়েটির দিকে। হটাৎ রিয়াজের ভয়ংকর শব্দ আর তেড়ে আসা দেখে ঘাবড়ে যায় মেয়েটি। এক সাথে ৪ টা ফায়ার বুলেট ছুড়ে সে রিয়াজের দিকে। রিয়াজের বুকে,পেটে হাতে ফায়ার বুলেট লাগছে ঠিকই।কিন্তু উল্টো ধ্বংস হচ্ছে ফায়ার বুলেট। রিয়াজ এসেই মেয়েটির চুল ধরে। এরপর শূন্যের উপর ঘুরাতে ঘুরাতে হুট করে মাটিতে এক আছাড় মেরেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মেয়েটি। মাথা সহ শুধু চুলটা রিয়াজের হাতে। দেহের বাকি অংশ ছুড়ে ছিটকে পড়ে এদিক সেদিক। তখনো রিয়াজ ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে রনি বলল, ” শান্ত হোন,সে মারা গেছে”।
রিয়াজ ফিরে আসে মানব সত্বায়। এরপর রনিকে নিয়ে আবার রওনা দেয় সে বাড়ির দিকে।
বাড়িটির সামনে যেতেই রিয়াজ খেয়াল করলো কয়েকটা লাশ পড়ে আছে। আগে থেকেই কেও এসেছিলো এখানে। এরপর রিয়াজ আর রনি দৌড়ে প্রবেশ করে বাড়ির ভিতর। ভিতরেও সব লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। ভেঙ্গে চুড়ে চুরমার সব। এজেন্টদের কোনো নিশানা নেই এখানে। হটাৎ রিয়াজের সামনে একটা কম্পিউটার অটোমেটিক চালু হয়ে যায়। যেখানে একটা ভিডিও ফুটেজ দেখতে পায় ওরা। ভিডিওতে ড:ব্রাউনেল সুমাকে তৈরির শেষে পরিক্ষা করছিলো। হটাৎ কেও এসে ব্রাউনেলের থেকে রিমোট নিয়ে যায়। যার কন্ট্রোলে ছিলো সুমা। ব্রাউনেল রিমোট নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতেই, লোকটি ব্রাউনেলের কপালে শুট,অর্থাৎ গুলি মেরে দেয়। ব্রাউনেল সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। আর অজানা লোকটি ক্যামেরার সামনে এসে বলে।
” তুমি ছুটতে থাকো। খেলা জমছেনা। এরা শুধু ব্লাক ডেভিলের চাকর। ব্লাক ডেভিল নামক কোনো অস্তিত্ব নেই। কেও জানে সে কে। ছুটতে থাকো। ব্লাক ডেভিলের কাছাকাছিও কখনো যেতে পারবেনা”।
সাথে সাথে কম্পিউটার অফ হয়ে যায়। আর রনি তখনি বলল,
-মিষ্টার রিয়াজ। উনি তো আমাদের ৬ জন এজেন্টদের থেকে একজন।
– হোয়াট। সে কেনো ব্লাক ডেভিলের সাপোর্ট নিবে।
– জানিনা। তবে এইটাই আমাদের এজেন্ট। আমি শিওর।
– অর্থাৎ ব্লাক ডেভিল সুমা নামের মেয়েটিকে দিয়ে আক্রমণ করিয়েছে। আর ৬ জন এজেন্ট বন্দি না থেকে মুক্ত ঘুরছে। উল্টা সে ধমক দিয়ে গেলো। আসলেই কে এই ব্লাক ডেভিল। তবে কি আমি ভুল ছিলাম? এইটা ব্রাউনেল এর ল্যাব। ব্লাক ডেভিল কোথায় তাহলে।
রিয়াজের মস্তিষ্ক কাজ করছেনা আর। সিদ্ধান্ত নিলো ডিওএমএম এর কাছে আবার সে ফিরে যাবে। যার অস্তিত্ব নেই,তাকে কিভাবে খুঁজবে সে। রহস্য। অনেক বড় রহস্য।
সমাপ্ত