শেষ থেকে শুরু পার্ট ৩০

0
360

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩০

ফারজানা হকের সামনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বসে আছে আবির। ফারজানা হকের চোখে মুখে আতঙ্ক। উনি হয়তো মৃদু মৃদু কাঁপছেন। এতো সুন্দর স্ত্রীর অভিনয় সে কিভাবে করতে পারে আবিরের বিশ্বাস হচ্ছে না। এই মহিলা ওর প্রিয় বাবার খুনি কিভাবে সম্ভব মানতে কষ্ট হচ্ছে। আবির শান্ত হয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

> বাবার অপরাধ টা কি ছিল বলবে? কেনো করলে এমন?

ফারজানা হক চমকে উঠলেন। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে তুতলিয়ে বললেন,

> কি বলতে চাইছো? কি করেছি আমি?

> কি বলেছি তুমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছো। তুমি কিভাবে পারলে আমার বাবাকে মারতে? তোমার হাত দুটো কাঁপলো না? ছিঃ আম্মা আমাদের দুভাই বোনকে এতিম বানিয়ে দিলে?

আবিরের চোখে পানি তবে মুখটা বেশ শক্ত। কথা বলতে গিয়ে উত্তেজনার জন্য শরীর কাঁপছে। ফারজানা হক ছেলের মুখের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,

> যা করেছি ঠিক করেছি। উনি আমার ছেলেমেয়ের জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করেছিল। তুমি বাবার কথায় উঠেছো আর বসেছো। নিজের ভালোবাসাকে গোপন করে বাবার কথামতো তার ক্ষতি করতে চেয়েছো। মানুষ মরার ফরমুলা তৈরী করেছো। ক্রাইম করেছো আমি চাইনা আমার বাচ্চাদের ক্ষতি হোক। ওই লোকটা আমার জীবন তো শেষ করেই ফেলেছে এখন তোমার পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছিল। আবির আমি চাইনি তুমি এরকম কিছু করো।

আবির মায়ের কথায় আক্রশে ফেটে পড়ছে। বাবা যেমনি হোক সে ওর বাবা ছিল। কতটা ভালোবাসা পেয়েছে ওই লোকটার কাছ থেকে তার ঋণ ও কিভাবে শোধ করবে। আবির চোখের পানি মুছে বলল,

> উনি আমাকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছেন তার কাছে এসব কিছুই না। লোকটা আমাকে ভালোবাসতো আম্মা। তুমি অপরাধ করেছো। আমার থেকে আমার প্রিয় মানুষকে কেঁড়ে নিয়েছো ঠিক করোনি। তোমাকে আমি কখনও ক্ষমা করবো না।

> করতে হবে না আমি জেল বা ফাঁসি যাইহোক মানতে রাজি আছি। তুমি ভূলে যাচ্ছ কেনো লোকটা তোমার নিজের বাবা ছিলেন না। তোমাকে আমি দত্তক নিয়েছিলাম। উনি পারতেন তোমার পরিচয় লুকিয়ে রেখে আমাদের সন্তান হিসেবে পালন করতে কিন্তু উনি কি করেছেন? উঠতে বসতে তোমাকে আদর যত্ন করে বুঝিয়ে এসেছে তুমি আমাদের ছেলে না। আমরা নিজেদের ছেলে না হওয়া শর্তও তোমাকে এতোটা ভালোবাসা দিয়েছি তোমার উচিৎ তার প্রতিদান দেওয়া। সন্তানের কাছে বাবা মা কখনও কি প্রতিদান চেয়েছে?।তুমি বোকার মতো নিজের জীবন উনার কথায় পরিচালনা করেছো। একবারও ভাবোনি তোমার নিজের মাকে আমি কথা দিয়েছিলাম তোমাকে আগলে রাখবো। তুমি যাকে বাবা বাবা করে পাগল হয়ে যাচ্ছ সে সুযোগ বুঝে ঠিকই তোমাকে ফাসিয়ে দিতো। উনি লোভী। কতটা লোভী তুমি কল্পণাও করতে পারোনি। আবির আমি চাইনি ওই লোকটার জন্য আমার সন্তানের ক্ষতি হোক। একজন স্ত্রী হওয়ার পরে আমি একজন মা। তোমার মা অরিনের মা। তুমি বুঝবে না মায়ের কষ্ট। তুমি যে মেয়েটার পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছো তার থেকে ডকুমেন্ট নিতে, ভেবে দেখো তার কি হাল তুমি করেছো।

ফারজানা হক একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। লোকটার সঙ্গে থাকলে আবির সারাজীবনেও সুধরাতো না। উনি নিজের স্বামীকে ভালো করে চিনেন। আবিরকে দিয়ে উনি যা ইচ্ছা তাই করিয়ে নিতেন তাই বাধ্য হয়ে স্বামীকে বিষ দিয়েছেন। মানুষ শুধু উপরের খোলসটাই দেখতে পারে ভেতরটা দেখতে গভীর চোখ লাগে। বাইরে থেকে ভালো মনে হলেই কি সে ভালো? ফারহানা হক স্বামীকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। করবেন না কেনো এই বাড়িটা উনার বাবার। নিজের বাবা মায়ের অর্জিত সম্পত্তি উনার স্বামী ভোগ করে আসছে। কি ছিল লোকটার যখন ফারজানা হক লোকটাকে বিয়ে করে। কিছুই ছিল না। বাবাকে হাত করে একমাত্র ভাইকে ঠকিয়ে তাকে বাড়ি ছাড়া করে এই বিশাল সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। বাবা পরে ভূল বুঝলেও কিছু করার ছিল না। উল্টাপাল্টা ওষুধ দিয়ে দুজনকেই মেরে ফেলেছে। ফারজানা হক বুঝতেই পারেননি। যখন সবটা জানতে পেরেছেন তখন থেকেই ভেবেছিলেন এই লোকটা জীবিত থাকা অবস্থায় আমার ছেলেমেয়েরা ভালো থাকবে না। আবিরকে দত্তক নিয়েছিলেন তখন উনি খুশী ছিলেন না কিন্তু পরবর্তীকালে যখন অরিন জন্মগ্রহণ করে আর ডাক্তার বলে উনার কোনো সন্তান হবে না তখন থেকেই ছেলেটার উপরে লোকটা আলগা দরদ দেখাতে শুরু করে। ফারজানা হক একমনে কথাগুলো ভাবছে। হঠাৎ আবিরের কথায় উনার ধ‍্যান ভাঙলো,

> মেয়েটার চিন্তা পরে করবে আগে নিজের চিন্তা করো। আমি ওকে ভালোবাসি কে বলেছে তোমাকে? আমার দিকে তাকিয়ে দেখো? বাবার প্লান ছিল ভালোবাসার নাটক করা আমার ছিল না। আমি বিরক্ত হয়ে গেছিলাম।

> সত্যিই বিরক্ত হয়েছো? ভালোবাসা না থাকলে ওকে মেরে ফেলতে পারতে। না হলে জান্নাতকে কিডন‍্যাপ করে বাধ্য করতে ডকুমেন্ট দিতে এমন কিছু করেছো কখনও? আবির আমাকে বোঝাতে এসো না। এসব আজেবাজে কাজকর্ম ছেড়ে দাও। লোকটা মারা গেছে এখন তুমি স্বাধীন।

> ওই ফরমুলাটা আমার দরকার। তাছাড়া ওখানে বেশ কিছু তথ্য আছে। ওই মেয়েটাকে আমি ছাড়তেই পারবো না। বাবা যখন বলল ওকে বিয়ে করে নিতে আমার মানতে কষ্ট হয়েছিল। তবুও করেছি এমনি এমনিই না।

> বাবার সাথে থেকে বাবার মতো অমানুষ তৈরী হয়েছো। মেয়েটার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করতে বিবেকে বাধলো না? মেয়েটা জীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। তোমার মুখ দর্শন করবে না। ভালোবাসার উপর থেকেই বিশ্বাস উঠে যাবে।

আবির তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

> তোমাকে দেখলেও স্বামীদের বিশ্বাস উঠে যাবে স্ত্রীদের উপর থেকে। তুমি নিজে কি করেছো? আর হৈমীর কথা বলছো? মেয়েটা দুর্বল না। ও আশা করে কিভাবে নিজে ডিভোর্সী এক সন্তানের মা হয়ে আমার মতো একটা ছেলের ভালোবাসা পাবে। জীবন এতো সহজ না। প্রথম দেখাতে আর যায় বলো ভালোবাসা হয় বলো না। হাস‍্যকর লাগে।

আবির কথাগুলো খুব তোড়ের সঙ্গে জোর গলাই বললো কিন্তু তৃপ্তি পেলো না। হৈমন্তীকে মারার কথা ও কল্পণাও করতে পারে না। তাছাড়া ওতো খুনী না। বাবার আদেশ মতোই কাজ করেছে। বিয়ে একটা অদৃশ্য বন্ধন। মেয়েটার উপরে ওর মায়া জন্মেছিল। নয়তো ওর ক্ষতি করে ফেলতো। বাবাকে বারবার এটা ওটা দিয়ে বুঝিয়েছে। জান্নাতের প্লানটাও ওর বাবার ছিল। জান্নাতের মায়ের এতো সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও মেয়েটা পরের কাছে মানুষ হয়েছে। ওর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে খুব সুখেই আছে। আবির লোকজন দিয়ে সেসব দলিল পত্র উদ্ধার করেছে। মেয়েটাকে ও ভালোবাসে। শিশুর প্রতি ওর ক্ষোভ নেই। কিন্তু ফারজানা হকের সঙ্গে এখন কি করা উচিৎ? পুলিশকে বলে দিবে নাকি অন‍্য কিছু। মাকে ও কম ভালোবাসে এমন না। চারদিক থেকে ফেঁসে গেছে। মায়া জিনিসটাই বিরক্তিকর বলে ওর মনে হচ্ছে। ফারজানা হক ওর নিরবতা দেখে বলল,

> বাবা নেই তাই নিজের সিদ্ধান্তগুলো নিজে নেওয়ার চেষ্টা করো। স্বামীর খুনি হিসেবে আমি একটুও লজ্জা পাচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে একটা প্রমাণও পাবে না। যেটা ধরে বাবার খুনিকে শাস্তি দিবে। নিজেকে একটু ঠিকঠাক করো। এভাবে জীবন চলে না।

ফারজানা হক কথাটা বলে উঠে গেলো। আবির সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। ফাইলটা পেয়ে গেলে হৈমন্তী কখনও জানতেও পারতো না আবিরের এই কঠিন সত্যিটা। মেয়েটা যেমন থাকতে পছন্দ করতো আবির ওকে তেমনই রাখতো। কাছে আসতে চাইলে নিয়ে আসতো দূরে যেতে চাইলে পাঠিয়ে দিতো। এমন পরিস্থিতির স্বীকার হবে কখনও ‍ভাবেনি। বাবা থাকলে ঠিক একটা বুদ্ধি দিয়ে দিতো। নিজের উপরে রাগ হচ্ছে। ফাইলটা যদি না রাখতো এমন কিছুই হতো না।
☆☆
আরশী ফারজানা হকের কাছে বসে আছে। কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। ফারজানা হকের মন ভালো নেই। আবির উনার সঙ্গে কথা বলছে না। তখন বের হয়েছে আর আসেনি। ছেলেটা আজ থেকে বাড়িতে ফিরবে না এটা উনার অজানা নেই। তবুও উনার কিছু করার নেই। স্বামীকে একবারে মারতে চাইছিলেন না। ভেবেছিলেন বিছানায় থাকবে কিন্তু হঠাৎ সুস্থ হয়ে উঠছিল তাই বাধ্য হয়েছে। না মারলে লোকটা উনাকে মেরে ফেলতো। তারপর আবিরকে দিয়ে আরও আজেবাজে কাজ করিয়ে নিতো। নিরবতা ভেঙে আরশী বলল,

> খালামনি বাবা মা আসতে চাইছে আমার আর আবিরের বিয়ের কথাবার্তা বলতে। তোমাকে কথা বলতে বলেছে।

ফরহাদ হক চমকে উঠে বললেন,

> আমি এই বিয়েটা মানতে পারছি না। তুমি সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ে তোমার জন্য ছেলের অভাব পড়বে না। বাবা মাকে বলো ভালো ছেলে দেখতে। আজকের পরে তোমার মুখে এধরনের কথা যেনো আর না শুনি যাও।

ফারজানা হকের ঠান্ডা হুমকিতে আরশী কেঁপে উঠলো। লজ্জা আর অপমানবোধ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। আবিরকে ওর পছন্দ হয়েছে তাছাড়া ওর মা বলেছে আবিরকে বিয়ে করলে সারাজীবন সুখের থাকতে পারবে। তাই বলে এমন অপমান সহ‍্য করবে কখনও না। আজকেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে কখনও ফিরবে না। ওকি ফেলনা নাকি।
________________
মেয়েকে নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। সামনে বসে থাকা বৃদ্ধ লোকটা ওর বাবার বন্ধু রহমান হোসেন। লোকটার একটা মেয়ে আছে দেশের বাইরে থাকে। ভদ্রলোক স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামেই থাকে। গ্রামের উনার বেশ নাম প্রতিপত্তি আছে। এখনকার গ্রাম বাংলা আগেকার মতো নেই। সব পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ সব আছে। গ্রামের সঙ্গে লাগোয়া বাজার আছে। ভদ্রলোক হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে বললেন

> মা জীবনটা তোমার,তুমি নিজের জীবন কিভাবে পরিচালনা করবে সেটা তোমার উপরেই নির্ভর করে। জানো তো মানুষ কর্ম দ্বারা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?কারো উপরে নির্ভর না করে নিজেই পথ চলতে শুরু করো আমরা আছি তোমার পাশে। আজ থেকে আমার দুটো মেয়ে। এখানে থাকতে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। আমি তোমার একটা কাজের ব‍্যবস্থা করে দিবো। মেয়েকে মানুষ করো। বিয়ে স্বামী সংসার ছাড়াও মেয়েরা বাঁচতে পারে মানুষকে প্রমাণ করে দাও। অবলার মতো চোখের পানি ফেলো না। তুমি যে দুর্বল কাউকে বুঝতে দিও না। একবার যদি কেউ তোমার দুর্বলতার খোঁজ জেনে যায় দেখবে সেখানেই বারবার আঘাত করছে। পারবে না একা মেয়েকে মানুষ করতে?

হৈমন্তী মলিন হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,

> পারবো আঙ্কেল। আমি তো কারো থেকে কিছু আশা করিনি। সবাই নিজ থেকেই আমার কাছে এসেছে আর আশা দিয়ে প্রতারণা করেছে। আমার দোষটা কোথায় বলতে পারেন?তবে এখন থেকে এই ভূলটা আর জীবনেও করবো না। মেয়েকে নিজের মতো করে মানুষ করবো। এইটুকু জীবনে কতকিছু সহ‍্য করলাম হাপিয়ে উঠেছি আর পারছী না।

> রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো। তুমি এখানে আছো কেউ জানতে পারবে না। আমি কাউকে জানতেও দিবো না। ভয় নেই।

মেয়েকে নিয়ে উঠে গেলো হৈমন্তী। গতকাল রাতে আরাফাত ওকে এখানে রেখে গেছে। নিজের ফোন থেকে ফোন করতে পারবে না। বাইরে থেকে রহমান আঙ্কেলের কাছে ফোন দিয়ে কথা বলে নিবে। বাড়ির পরিস্থিতি আরাফাত সামলে নিবে। বোনের ধারে আছেও কাউকে আসতে দিবে না হৈমন্তীর জানা আছে। হৈমন্তীর বারবার আবিরের করা অভিনয় গুলো চোখে ভাসছে। লোকটা কিভাবে পারলো এমন করছে ওর মাথায় ঢুকছে না। কখনও সন্দেহ হয়নি। ফাইলগুলো লোকটার হাতে ও কখনও তুলে দিবে না। মানুষ মারার ফাঁদ তৈরি করেছে সেটা।ও এটা নিজের সঙ্গে লুকিয়ে রাখবে। কথাটা ভেবে হৈমন্তী মুখটা কঠিন হয়ে উঠলো। যদি কখনও দেখা হয় ও বলবে এতোটা করার কোনো মানে ছিল না।
____________
ক্লন্ত শরীরে সোফায় ধপাস করে বসে পড়লো আরাফাত। অরিন কৌতূহলী হয়ে ওর দিকে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অরিণকে দেখে ওর রাগ হচ্ছে। বারবার হৈমন্তীর কথাগুলো মনে পড়ছে। এই মেয়েটার ভাইয়ের জন্য নিজের বোনকে বারবার ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এখন পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। কাউকে ক্ষমা করবে না। সব কিছুর হিসেবে নিয়ে ছাড়বে। হৈমী আসার সময় বারবার বলে দিয়েছে অরিনের সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার না করতে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে কষ্ট হচ্ছে। হৈমন্তী চলে গিয়েছে বাড়িতে কথাটা বলার পরে রাজীব রাগ করেছে। মেয়েটার মাথায় সত্যি সত্যিই সমস্যা আছে বলে রাজীবের মনে হচ্ছে। চয়নিকা ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে ছিল হয়তো ওর হজম হচ্ছে না বিষয়টা। মনে সন্দেহ হয়েছে। একমাত্র মাসুদ বিষয়টা নরমাল ভাবে নিয়েছে। মেয়েটা কাজকর্মমের বিষয়ে খুব সিরিয়াস। এখন গেছে পরে চলে আসবে এতে ঝামেলা করা কিছু নেই। বোন ভালো আছে এটাই অনেক। বাড়িতে আরেকটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে সেটা হচ্ছে আমেনা বেগমের মন। উনি আগে হৈমন্তীকে সহ‍্য করতেই পারতো না এখন তার জন্য কেঁদে কেটে অস্থির হচ্ছে। মেয়েটেকে এক নজর দেখে ক্ষমা চাইবে। দুটো মেয়ের কাছেই চাইবে। উনি ভেবেছিলেন মেয়ের বিয়ে হলেই মেয়েরা সুখে থাকে, ভালো থাকে। নারীর জীবনে পুরুষের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের জন্ম হয়েছেই স্বামী সংসার করার জন্য। বাচ্চা জন্মদান আর স্বামীর খেদমতেই মেয়েদের সুখ। নিজেও খুব ছোট থাকতে শশুর বাড়িতে এসেছিলেন। শাশুড়ির কথামতো চলতেন। স্বামী উনার বেশ ভালো ছিল। ভয়ে ভয়ে চলতে গিয়ে সেসব তিনি রপ্ত করে ফেলেছেন। কিন্তু যুগ বদলে গেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা স্বামীর পায়ের নিচে পড়ে থাকতে চাইনা। ওরা স্বামীকে নিজের অর্ধাঙ্গ ভাবে। মেয়েদেরও মন আছে। ওদের কাঠ বা লোহার শরীর না। রক্ত মাংসের শরীর। ব‍্যাথা যন্ত্রণা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। বুঝতে উনার বড্ড দেরি হয়ে গেছে। কিছু ভূল সময় থাকতে সুধরে নেওয়া উচিৎ। আরাফাতের ধ‍্যান ভাঙলো অরিনের কথা শুনে। মেয়েটা ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আপনার পানি। কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? অপেক্ষা করছি।

আরাফাত ভ্রু কুচকে উত্তর দিল,

> কি দরকার?

> এমনিই আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে। আপনি বুঝবেন না। আপনার দিকে তাঁকিয়ে থাকতেও ভালো লাগে। আমি মনে হচ্ছে আপনার প্রেমে পড়েছি।

আরাফাত পানি মুখে নিয়েছিল অরিনের এলোমেলো কথা শুনে কাশি এসে গেলো। ফলাফল হিসেবে মুখের পানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরিনের মুখে গায়ে ছড়িয়ে গেলো। মেয়েটা কাঁদ কাঁদ হয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> ভিজিয়ে দিলেন? একটু সাবধানে পানি খাবেন না?

আরাফাত খুকখুক করে কেশে বলল,

> কথাবার্তার কি বেহাল অবস্থা। এসব শুনলে এমনিই কাশি আসে। পাগলামি বন্ধ করে সামনে থেকে যাও ভালো লাগছে না। বিরক্ত করবে না ঘুমাবো আমি।

অরিন ঠোঁট উল্টে ফেলল। লোকটা এরকম কেনো বুঝতে পারে না। প্রথমে এমন ছিল, মাঝখানে বেশ স্বাভাবিক তারপর আবারও আগের ফর্মে ফিরে এসেছে। অরিনের মন খারাপ হচ্ছে লোকটা যদি সব সময় এমন হম্বিতম্বি করে তবে সংসার হবে কবে? যতদিন বিয়ে হয়েছে এতদিনে ঘর আলো করে নতুন সদস্য হাজির হতো। অরিণের আফসোস হচ্ছে।।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। নায়ক থাকতেই হবে কেনো গল্পে? বাস্তবে কত মা আছে নিজের ক্ষমতাই সন্তান লালন পালন করছে তার ঠিক আছে? আবির রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। কোনো ঈশ্বরের দূত না যে ভুল করতে পারবে না। আমাদের চারপাশে কত আপনজন আছে যারা মুখে মিষ্টি কথা বলে পেছন থেকে আঘাত করে তাহলে আবিরের বিষয়টা কেনো মানতে কষ্ট হচ্ছে? দ্রুত গল্প শেষ করবো। তবে একটু গুছিয়ে নিয়ে। গতপর্বে অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন। নেগেটিভ কমেন্ট করেছেন তবে আমি বিরক্ত হয়নি।লেখালেখিতে সত্যিই খুব কাচা। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আমি আপনাদের কথা রাখার চেষ্টা করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here