শেষ থেকে শুরু পার্ট ১২

0
276

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১২

হাসপাতাল থেকে সকালে বাড়ি ফিরে এসেছে হৈমন্তী। ভয়ানক মন খারাপ গতকাল রাতের ঘটনা নিয়ে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আবিরের মুখ জীবনে আর দুবার দেখবে না। মানুষ এতোটা খারাপ কিভাবে হতে পারে ওর ধারণার বাইরে। শেষ থেকে শুরু করা মানেই বিয়ে করে সংসার করা না। তাছাড়া সংসারের স্বাদ ও হাড়ে হাড়ে পেয়েছে। জোরজবরদস্তি করে আর যায়হোক সংসার হয়না। যদি হতো তবে ও ফরহাদের সঙ্গে ঝামেলা করে হলেও সংসার করতো। সেদিন রাতে না থেকে চলে এসেছিল । হৈমন্তী প্রামাণ করবে মেয়েরা দুর্বল না। ও কারো সঙ্গে কথাবার্তা না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। গতকাল ফ্লাইট। রাজিবকে বলে রেখেছে এদিকে সকাল সকাল হৈমন্তীর মা চেচামেচি করে ঘর মাথায় করছে। উনি বাড়িতে ফিরে যাবেন। এখানে আর থাকবে না। এই বাড়িতে অনাচার হচ্ছে। উপযুক্ত মেয়ে বাড়িতে না থেকে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থাকছে এর চাইতে পাপ উনি দেখছেন না। তাছাড়া হৈমন্তীর যখন ডিভোর্স হয় তখন ও প্রেগনেন্ট ছিল। এই অবস্থায় নাকি ডিভোর্স হয়না। তাই উনার ধারণা হৈমন্তী ফরহাদের সঙ্গে তওবা করিয়ে বিয়ে পড়িয়ে সংসার করতে পারবে। ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না মোটামুটি ভালো। উঠতি বয়সে অনেকেই অনেক ভুল করে সেগুলোকে ক্ষমা করতে হয়। তাছাড়া স্ত্রীকে স্বামীর অনেক কিছুই সহ‍্য করতে হয়। হৈমন্তীর মা আমেনা বেগম ছেলেদের বলে দিলেন হয় উনার কথা শুনতে হবে নয়তো উনি পানিও স্পর্শ করবেন না। মেয়ে বিদায়ের ব‍্যবস্থা করতে হবে। হৈমন্তী চুপচাপ শুনছে উত্তর করছে না। চয়নিকা রাগে ফুলছে। রাজীব মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। মাসুদ বাড়িতে নেই। আরাফাত এখানে থাকলে এতক্ষণ ঝগড়া লেগে যেতো। গতকাল হৈমন্তীর মায়ের ফোনে একটা কল এসেছিল তখন থেকে শুরু হয়েছে বকবক। কিছুক্ষণ পর পর উনার ফোন আসছে। বিষয়টা নিয়ে চয়নিকা চিন্তিত। বুঝতে পারছে না কে এতো উনাকে ফোন করছে। রোহান এসেছে ডাইনিং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। বাড়ির পরিবেশ গরম। একবার ভেবেছিল চলে যাবে তারপর কি একটা ভেবে বসে আছে। আমেনা বেগম বাইরে আসলেন। মখটা থমথমে হয়ে আছে। কাজের মেয়েকে ডেকে কয়েক রকমের রান্না করতে বলে দিলেন। হয়তো কাউকে ডেকেছেন বোঝাই যাচ্ছে। রাজীব কৌতূহল চাপিয়ে রাখতে না পেরে বলল,

> আম্মা কে আসছে বাড়িতে?

আমেনা বেগম ভ্রু কুচকে উত্তর দিলেন,

> আসলেই দেখতে পারবে। তোমার ভাইদের বলে দাও বাড়িতে মেহমান আসছে তাদের উপস্থিত থাকতে। কথা আছে সকলের সঙ্গে। আশাকরি মেহমানদের সামনে আমাকে অসম্মান করবে না।

> কি বলছো আমরা তোমার অস্মান করি? আম্মা হৈমন্তী ফরহাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না। তাছাড়া মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছিল তখন। একবার বোঝার চেষ্টা করুন।

> আমি বুঝেছি। মা হিসেবে আমিও চাইবো না আমার মেয়ের খারাপ হোক। ওর ভালো চাই আমি। মেয়েটা কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর একটা শক্ত বাধন দরকার।

রাজীব বিরক্ত হয়ে মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাকে বোঝানো ওর কর্ম না। আপাতত যা করতে চাইছে করুক। হৈমন্তীকে এখানে আর রাখবে না। একদিন পরেই ফিরে যাবে। ওখানেই থাকবে। জীবনে আর বাংলাদেশে আনবে না। দরকার হয় নিজেরা গিয়ে দেখা করে আসবে। ওর জীবনটা নরকে পরিণত হয়েছে। রাজীব চলে গেলে রোহান বোনের ঘরে গিয়ে বসলো। চয়নিকা ছেলেকে কাপড় পরাতে ব‍্যস্ত ছিল। রোহানকে দেখে বললেন,

> এই তোর আসার সময় হলো। এক সপ্তাহ খবর নেই। কোথায় ছিলি?

রোহান মলিন হেসে বলল,

> কাজ ছিল। আপা বাড়িতে আবার কি শুরু হয়েছে? তোর শাশুড়ি এমন ক্ষেপেছে কেনো? আমার ভয় করছিল।

> আর বলিস না। কি একটা খিচুরি পাকিয়েছে ঘনঘন ফোন আসছে। সে ফোন নিয়ে বিজি সময় পেলে বকবক করছে। যাইহোক তুই কিছু বলতে চেয়েছিলি সময় হয়নি। ঝটপট বলে ফেল নয়তো সুযোগ হচ্ছে না।

রোহান কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,

> হৈমন্তীকে আবার বিয়ে দেওয়া যায়না? আন্টি ঝামেলা করছে যদি ওর আবার বিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো ঝামেলা মিটে যায়।

চয়নিকা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

> ব‍্যাপার কি এটাইকি তোর সেই কথা? এটা বলতেই এসেছিস?

> আপা তুই সন্দেহ করছি আমাকে? আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম মেয়েটার উপরে এতো ঝামেলা গেলো পাশে একজন থাকলে ওকে সামলে নিতো।

> তুই ওকে পছন্দ করিস?

চয়নিকার সোজাসাপ্টা প্রশ্ন শুনে রোহান কেশে ফেলল। আসলে এমন কিছুই বোঝাতে চেয়েছিলো। ওকে ঘাবড়ে যেতে দেখে চয়নিকা শিউর হয়ে গেলো। ওর কপালে চিন্তার রেখা। ভ্রু কুচকে বলল,

> হৈমন্তী রাজি হবে না। রাজি হলে ভাবা যেতো।

> রাজি হবে না কেনো! অন‍্য কাউকে পছন্দ ওর? আমি দেখতে খারাপ নাকি ওকে ভালো রাখতে পারবো না। আমি ওকে ভালো রাখতে পারবো।

> তোর দুলাভাই আসুক বলে দেখবো। আমার তো মনে হচ্ছে না রাজি হবে। তাছাড়া দেখলাম হৈমন্তীর যাওয়া নিয়ে কিছু বলছিল।

> আটকে দিবি। আমি ওকে সাহায্য করেছিলাম।মনে রাখবি সেরাতে যদি ওকে নিয়ে না আসতাম তাহলে ওর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো।

চয়নিকা বিরক্ত হলো ভাইয়ের কথায়। কাউকে সাহায্য করে বারবার খোটা দেওয়া উচিত না। ভাই বড় হয়েছে মনের মধ্যে হিংসা কেনো ওর। কথাটা ভেবে চয়নিকা উত্তর দিলো,

> দয়াকরে এইসব বলতে যাসনা ওদের সামনে। তাহলে জিবনেও রাজি হবে না। তুই কি কোনো কারণে আপসেট? হৈমন্তীকে পছন্দ করিস নাকি জিদ ধরেছে বিয়ের?

রোহান কিছুনা বলে বেরিয়ে আসলো। আবিরের উপরে ভরসা নেই। ছেলেটা কিছু অঘটন ঘটানোর আগেই ও কিছু করবে। কখনও ওর সঙ্গে হৈমন্তীকে ও দেখতে পারবে না। নিজের কাছে নিজের ছোট লাগছে।
_________________________

পড়ন্ত বিকেল ডাইনিং রুমের সোফায় ফরহাদ মায়ের সঙ্গে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই ওরা এসেছে। বাড়িতে ছেলেরা কেউ নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। চয়নিকা আর হৈমন্তী নিজেদের রুমে রয়েছে। ফরহাদকে আমেনা বেগম খুব সমাদর করে শরবত খেতে দিলেন। বাড়ির জামাই বলে কথা। দুদিন ধরে আমেনা বেগমের সঙ্গে ওর কথা হচ্ছে। আমেনা বেগম বেশ খুশী। ফরহাদ নিজের দুঃখের কথা উনাকে বলেছে আর লতাকে ডিভোর্স দিবে সে কথাও বলেছে। সব শুনে উনি ফরহাদের উপরে রেগে থাকতে পারেননি। ছেলেটা নিজের অন‍্যায়ের শাস্তি পেয়েছে আর না। কাজের মহিলা চা নাস্তা দিয়ে গেলো। ফরহাদ লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল,

> আম্মা হৈমন্তী কোথায় আর আমাদের ছেলে কোথায় আছে একটু ডেকে দেন। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

আমেনা বেগমের ওষ্ঠে হাসি ফুঁটে উঠলো। ছেলেটার আগ্রহ দেখে প্রশান্তিতে মন ভরে যাচ্ছে। উনি হাসি রেখেই উত্তর দিলেন,

> বাবা ওরা ঘরে আছে। তুমি খাওয়া দাওয়া করো আমি ডাকার ব‍্যবস্থা করছি। তাছাড়া দুদিন পরেই তো নিয়ে যাবে এত তাড়া কিসের?

আমেনা বেগম কাজের মেয়েকে হৈমন্তী আর চয়নিকাকে নিচে আসার জন্য ডাকতে পাঠালেন। রনি মায়ের কাছে বসে আছে। চয়নিকা কিছুতেই নিচে আসবে না। ঘরে বসে আছে দরজা বন্ধ করে। হৈমন্তীর মাথায় ভয়ানক যন্ত্রণা করছে। জীবনে একফোঁটা শান্তি নেই। মরে গেলেই ভালো হতো মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের আসাটা জীবনের চরম ভুল ছিল। ডলির প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া এখানে নিজের কোনো বেনিফিট পাইনি। বাইরে থেকে বারবার কড়া নাড়ছে নিচে যেতে হবে। হৈমন্তী প্রস্তুতি নিয়ে নিলো নিচে যাবে তার মধ্যেই আরাফাতের গলার আওয়াজ আসলো। নিচে চিল্লাচিল্লি করছে। হৈমন্তী এবার সাহস পেলো। আস্তে করে দরজা খুঁলে বেরিয়ে আসলো। আরাফাত তেড়ে যাচ্ছে ফরহাদের দিকে। আমেনা বেগম থামিয়ে দিচ্ছে। ফরহাদ এবার রেগে গিয়ে বলল,

> আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন। বউ বাচ্চা না নিয়ে আমি ফিরবো না। আপনা ডিভোর্স নিয়ে লাফালাফি করছেন প্রমাণ দেখান আমাদের ডিভোর্স হয়েছে? তাছাড়া বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় ডিভোর্স হয়না। আমি ওকে আবার নিতে চাইছি।

ফরহাদের গলাবাজি দেখে আরাফাত মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলো না সামনে চেয়ার ছিল উঠিয়ে মারতে গেলো আমেনা বেগম দুজনের মাঝে চলে আসলো। রাজীব বাইরে থেকে এসে বাড়ির মধ্যে হৈচৈ দেখে সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো। আরাফাত রাগে ফুলছে। রাজীব গম্ভীর কন্ঠে ফরহাদকে বলল,

> অশান্তি করে হয়নি আবার এসেছো আমার বোনের জীবনটা নরক করতে? ও তোমার সঙ্গে যাবে না।

রাজীবের কথা শুনে আরাফাতের মা শায়লা বানু চেচিয়ে উঠলেন,

> শুনো বাবা ছেলে মানুষ ভুল করতেই পারে ক্ষমা করতে হয়। আমার সোনার টুকরো ছেলে তোমার বোনকে কষ্টে রাখবে না। বোনের সুখের কথা ভেবে ঝামেলা করোনা। তাছাড়া একটা ছেলে হয়ে গেছে। বোনের বিয়ে দিতে হলে কিন্তু ভালো ছেলে পাবে না। ডিভোর্সী আর বাচ্চার সমেতো ছেলের সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে দিয়ে দাও।

রাজীবের ইচ্ছে হলো এই ভদ্রমহিলার মুখের উপর থাপ্পর লাগিয়ে দিতে। তবুও নিজেকে ঠান্ডা রেখে বলল,

> আমার বোনের চিন্তা আপনাদের করতে হবে না। এখুনি আসুন নয়তো পুলিশ ডাকবো। আপনাদের ছেড়ে দিয়ে খুব সাহস হয়েছে।

রাজীবের কথায় ফরহাদ উত্তর করলো,

> আমার বউ বাচ্চা আমি ফেরত চাইছি। এতো কথায় কি আছে। হয় ফেরত দেন নয়তো আমি আইনের সাহায্য নিবো।

হৈমন্তীর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সব শুনলো। ওকে কেউ খেয়াল করেনি। তখন তর্কাতর্কি চলছিল হৈমন্তী নেমে এসে রাজীবের পাশে গিয়ে দাড়ালো। ওকে দেখে ফরহাদের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। হৈমন্তী বিরক্তি নিয়ে বলল,

> খুব ধর্মকর্ম মানেন দেখি। বাচ্চা পেটে নিয়ে ডিভোর্স হয় না বলে গলাবাজি করছেন। বউ রেখে প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটানোর সময় মনে ছিল না ধর্মের কথা? মুখে মুখে তালাক বললে শুনেছি তালাক হয়ে যায় সেখানে আপনি আমাকে এক বার না অসংখ্যবার বলেছেন। আপনার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর আমার যোগাযোগ নেই। আমার কাছে আইনি কাগজপত্র আছে যেগুলো কোর্টে জমা আছে। বাড়িতেও আছে চাইলে দেখতে পারেন। আর বাচ্চার কথা বলছেন? বউকে রাতে মারধর করে তাড়িয়ে দেবার সময় মনে ছিল না? বাচ্চা সেদিন রাতেই মারা গেছে। গাড়ির নিচে পড়েছিলাম বাচ্চা বেঁচে নেই। এখন আসতে পারেন। আপনার নোংরা মুখটা দেখার ইচ্ছে ছিল না। তবুও দেখতে হলো। আর আমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না। ছোট কেনো আপনারা এতো?

হৈমন্তী এক দমে কথাগুলো বলে থামলো।ফরহাদ হৈমন্তীর কথাগুলো হজম করতে পারছে না। হৈমন্তীর কন্ঠে উচ্চ শব্দ কখনও শুনেনি । তবুও কিছু বলা দরকার তাই বলল,

> মানুষ ভুল করলে ক্ষমা করতে হয়। তাছাড়া ভেবে দেখো তুমি ডিভোর্সী মেয়ে। বিয়ের বাজারে তোমার মূল্য নেই। যতই রূপবতী হও সেই পরের বাচ্চা লালন পালন করতে হবে।

হৈমন্তী নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না। হাতের মুঠো শক্ত করে ফরহাদের গালে থাপ্পর লাগিয়ে দিলো। রাগে ফুলতে ফুলতে বলল,

> ইচ্ছে ছিল না তোর মতো নোংরা ছেলেকে স্পর্শ করার তবুও করতে হলো। এখুনি দুর হয়ে যা।

হৈমন্তী আরাফাতকে বলল,

> ভাইয়া একে বের করে দাও। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এখানে আর একটা শব্দও যেনো না হয়।

হৈমন্তী কথাগুলো বলে চলে গেলো। ফরহাদ অপমানে চোখ নামিয়ে ফেলেছে। রাজীব দাঁতের সঙ্গে দাঁত লাগিয়ে বলল,

> আমার বোনের বিয়ে দিব তবে কোনো ডিভোর্সী ছেলের সঙ্গে না। ভাত থাকলে কাকের অভাব হয় না।

রাজীবের কথা শেষ হলো না। আরাফাত ধাক্কা দিয়ে ওকে বাইরে বের করে দিলো। ফরহাদের মা ছেলের জন্য চেচামেচি কান্নাকাটি করছেন সেদিকে কারো নজর নেই। দারোন এসে দুজনকে বের করে দিলো। ফরহাদের চোখেমুখে লজ্জা অপমানবোধ।
******
এভাবেই সেদিন পার হলো। আমেনা বেগম চুপচাপ ঘরে বসে থাকলো। হৈমন্তী দরকার ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলছে না। আজকে ওর ফ্লাইট। ওদিকে অরিনের বিয়ে। রবিনের পরিবার কিছুই জানেনা। হৈমন্তী আরাফাতকে মোটামুটি সব বুঝিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আবির চমৎকার একটা কাজ করেছে। রবিনের বউ বাচ্চার খোঁজ বের করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মোটামুটি রবিনের ব‍্যবস্থা হয়ে যাবে। হৈমন্তী আরাফাতকে দীর্ঘ একটা চিঠি লিখে ভাইয়ার টেবিলে রেখে আসলো। লাগেজ নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। চয়নিকা দাঁড়িয়ে আছে রনিকে কোলে নিয়ে। হৈমন্তী চয়নিকার সামনে গিয়ে বলল,

> ভাবি ভালো থেকো। আমি আসছি।

চয়নিকা রনিকে দেখিয়ে বলল,

> কোলে নিবে না?

হৈমন্তী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,

> না ওকে স্পর্শ করতে আমার বিবেকে বাধে। দয়াকরে যা তলিয়ে গেছে তা আর কাউকে জানতে দিওনা।

চয়নিকা কিছু বললো না। মাথা নিচু করে আছে। হৈমন্তী আর দাঁড়ালো না। বেরিয়ে আসলো। মায়ের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসলো। বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। আরাফাত আবিরদের বাড়িতে আছে। মাসুদ আর রাজীব ওকে নিয়ে যাবে। গাড়িতে বসে রাজীব বলল,

> হৈমি তোর ভাবি আর আমি ভেবেছি রোহানের সঙ্গে তোর বিয়েটা সেরে ফেলবো। ছেলেটা তোকে পছন্দ করে। তাছাড়া বাড়ির সকলেই রাজি আছে। গতকাল রাতে আমাদের আলাপ হয়েছে। তুই পড়াশোনা শেষ করে এক বছর পরে ফিরে আসলে তখন বিয়ে হবে।

হৈমন্তী ভাইয়ের কথায় উত্তর করলো না। চোখ বন্ধ করলো। এই বিয়েকে ঘিরেই এতোকিছু।। দুপুর বারোটার ফ্লাইটে হৈমন্তী দেশ ত‍্যাগ করলো। আরাফাত জানতো না হৈমন্তী ফিরে যাচ্ছে। যখন জানলো তখন নিজেও ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো কিন্তু টেবিলের উপরে থাকা চিঠিটা পড়ে ওর কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা আমি যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবেই লিখেছি। হৈমন্তীর সঙ্গে আবিরের বিয়ে নিয়ে অনেকের বিরক্তি লেগেছে কিন্তু এটারও একটা কারণ আছে পরবর্তীকালে বিস্তারিত জানানো হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here