#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
বোনাস পর্ব
এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে দেরি হলো কিন্তু হৈমন্তীর নামতে দেরী হলো না। দৌড়ে গিয়ে গেটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বড় ভাবিকে ঝাপটে ধরে কেঁদে ফেলল। হঠাৎ এই মানুষটাকে দেখে ভীষণ কান্না পাচ্ছে। চয়নিকা হৈমন্তীর সঙ্গে পাল্লা লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করলো। ততক্ষণে দুভাই ওদের কাছে চলে এসেছে। সকলের চোখে পানি তবে ঠোঁটে হাসি। চোখের পানি সব সময় দুঃখের হয়না আনন্দেরও হয়। হৈমন্তী ভাবিকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
> তোমার পিচ্চিটা কোথায়? তাকে ডাকো একটু দেখি। ফুপি আম্মা এসেছে অথচ সে লুকিয়ে আছে।
হৈমন্তী চয়নিকার থেকে চোখ ফিরিয়ে পাশে তাঁকালো। গুটি গুটি পায়ে ছোট একটা বাচ্চা ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। বাচ্চাটার চোখেমুখে আতঙ্ক। হয়তো অচেনা লোকজন দেখে ঘাবড়ে গেছে। হৈমন্তী ওর মুখের ভাবসাব দেখে শব্দ করে হেসে চয়নিকাকে বলল,
> ভাবি তোমার ছেলে দেখি আমার কার্বন কপি হয়েছে। কিন্তু মুখের ভাব দেখো ও হয়তো আমাদের দেখে পছন্দ করছে না।
হৈমন্তী কোলে নিতে গেল কিন্তু বাচ্চাটা ওর কোলে আসলো না।চয়নিকা মৃদু হেসে রনিকে কোলে তুলে নিলো। রাজীব ওদেরকে ভেতরে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছে তাই হৈমন্তী আর কথা বাড়ালো না। ভেতরে চলে গেলো। হৈমন্তী নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় আরাফাত ওর রুমে আসলো। হৈমন্তী ভাইকে দেখে জিঞ্জাসা করলো,
> কিছু বলবে?
>আমাদের উপলক্ষ্যে বড় ভাইয়া বাড়িতে ছোটখাট একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাইরের কেউ আসবে না। তোর কি অসুবিধা হবে?
> অদ্ভুত কথাবার্তা বলছো ভাইয়া। আমার অসুবিধা হবে কেনো? তুমি যাওতো আমার ঘুম পাচ্ছে। মেজ ভাইয়া আসলে ডেকে দিও। তোমাদের সব অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশ নিচ্ছি চিন্তা করো না।
আরাফাত খুশী হলো। হৈমন্তী একা থাকতে পছন্দ করে। কখনও কোনো পার্টি পিকনিকে গিয়েছে কি সন্দেহ আছে। ওকে চলে যেতে দেখে হৈমন্তী ডেকে বলল,
> এসব আমি তোমার জন্য করছি ভাইয়া।
আরাফাত অবাক হয়ে বলল,
> আমার জন্য?
> তোমার জন্য মেয়ে খুঁজতে হলে আমাকে এখন থেকে বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজনে যেতে হবে। ওসব ঘটক ফটক দিয়ে হবে না।মেয়ে আমার দুই ভাবির মতো হওয়া চাই।
আরাফাত ভড়কে গেলো হৈমন্তীর কথা শুনে। ও চোখ দুটো ছোট করে বলল,
> ক্ষমা কর বোন। এসবে আমাকে জড়িয়ে মারবি নাকি? এখনো বিয়ের বয়স হয়নি আমার।
> তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছ চুলগুলো পাক ধরবে দুদিন পরে। তখন বিয়ের বয়স হবে। ভাইয়া যাওতো। আমার কথার বাইরে কথা বললে কিন্তু খারাপ হবে। যাও এখন।
হৈমন্তী বিরক্ত হয়ে পেছন ঘুরে শুয়ে পড়লো। আরাফাত কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে প্রস্থান করলো। এই মেয়েটার মাথায় শুধু উল্টোপাল্টা বুদ্ধি ঘুরছে। একবার যদি বড় ভাই ভাবির কানে যায় এবার আর ছাড় পাওয়া যাবে না। তিনজন মিলে পেছনে হাত ধুয়ে পড়বে কি যন্ত্রণা। আরাফাত ডাইনিং রুমের সোফায় গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো। আশেই রনি ড্রয়িং খাতায় কি সব হাবিজাবি ছবি আঁকছে। ছেলেটা বেশ কিউট। আরাফাত ওকে নিজের কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়ে ওর গল দুটো টিপে দিলো। আরাফাতের হঠাৎ এমন আচরণে রনি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো। চয়নিকা রান্নাঘরে ছিল দৌড়ে এসে রনিকে নিজের কোলে নিয়ে আরাফাতের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
> তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে মনে হয়।
> ভয় না ভাবি তোমার ছেলের গাল টিপে দিয়েছি বেচারা ভড়কে গিয়ে কেঁদে ফেলেছে।
> তুমিও না। বাচ্চাদের সঙ্গে এমন করতে নেই। ভাব করো দেখবে তখন আর ভয় করবে না।
> বাচ্চাটা অনেক কিউট। তুমি ওকে ভীষন ভালোবাসো তাইনা?
চয়নিকা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রনিকে দুহাতে আগলে নিয়ে বলল,
> ওর জন্য আমি মরতেও পারি। ও আমার মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করেছে আরাফাত। বুঝতে পারছো কতটা কাঙ্ক্ষিত ও আমি জন্য।
> আগলে রেখো।
চয়নিকা কোনো কথা বললো না। রনিকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আরাফাত সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুমঘুম লাগছে রুমে যেতে যেতে ঘুম কেটে যাবে। তাছাড়া অলসতা ওকে ঝাপটে ধরেছে। তাই এখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।
______________
****
ঢাকার একটা আলিশান বাড়িতে পার্টি হচ্ছে। মাসুদ বউ বাচ্চা নিয়ে বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছে। হৈমন্তী মেজ ভাইকে খুব কম কাছে পেয়েছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চার ভাইবোন জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। বড় বোন ইন্ডিয়া গেছে স্বামীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে ফিরবে এক মাস পরে। ভিডিও কলে তার সঙ্গেও কথা বলা হলো। হৈমন্তীর বহুকাল পরে মনে হলো আমার মতো সুখী পৃথিবীতে আর একটাও নেই। এতো এতো ভালোবাসা তবুও মনের মধ্যে কেমন চাপা কষ্ট। এই কষ্টের উৎস কোথায় ঠিক খুজে পাওয়া গেলো না।হৈমন্তি রাতের পার্টির জন্য সুন্দর একটা সাদা গাউন পড়ে নিলো। ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে হিজাব পরল। দেশে থাকতে গায়ের রঙটা কেমন চাপা ছিল কিন্তু এখন আর নেই। অতিরিক্ত ফর্সা হয়ে গেছে। হৈমন্তী হালকা লিপস্টিক দিতে গিয়েও রেখে দিলো। এতো সাজুগুজু অর্থহীন মনে হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে আসলো। চয়নিকা রনিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। লোকজন দেখলে কান্নাকাটি করে একাকার করে ফেলবে। তাছাড়া রোহান এসেছে একা না দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে। ওদেরকে একটু সময় দেওেয়া উচিৎ। চয়নিকা ডাইনিং রুমে গিয়ে রোহানকে খোঁজ করলো। ছেলেটা বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। চয়নিকা গিয়ে সোজাসুজি ওর কান ওরলো। রোহান চমকে উঠে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে ঘুরে তাঁকিয়ে ছলছল চোখে বলল,
> আপা লাগছে। আমি আর ছোট নেই।
> খুব বড় হয়েছিস যে বোনকে দেখতে আসার সময় হয়না। রনি তোর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।
> সরি আপা। একটা প্রজেক্টরের ঝামেলায় আটকে ছিলাম এখন ফ্রি আছি। কান ছেড়ে আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ তো করে নে।
চয়নিকা ওর কান ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে একজনকে পেলো। ওর সঙ্গে আলাপ করে নিলো। আরেকজন এসেছে কিন্তু তাকে পেলো না। বাইরে গেছে ফোন এসেছিল কথা বলতে। চয়নিকা সবাইকে বসিয়ে রেখে উঠে গেলো। ঘর ভর্তি মেহমান না হলেও কম হলো না। মোটামুটি বেশ ভালো আয়োজন। এখানে কোনো মিউজিকের আয়োজক নেই। পার্টি বলতে পুরাতন নতুন মিলে সব বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতার আয়োজন। কথাবার্তা বলবে আড্ডা দিবে তারপর খাওয়া দাওয়া করে ফিরবে।
**
হৈমন্তী গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসলো। উপস্থিত কয়েকজনের নজর ওর দিকে। হৈমন্তীর সেদিকে খেয়াল নেই। খুব সাবধানে নেমে এসে চেনাজানা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে নিলো। দূরে রোহান বসে আছে। ছেলেটার চোখেমুখে বিস্ময় খেলা করছে। আগের দেখা হৈমন্তীর সঙ্গে এই হৈমন্তীর একটুও মিল পেলো না। মুগ্ধ হয়ে গেলো। ও উঠে আসলো হৈমন্তীর সঙ্গে আলাপ করার জন্য। হৈমন্তী রোহানকে চিনে তাই মলিন হেসে ভদ্রতার সহিত বলল,
> কেমন আছেন ভাইয়া? আপনাকে ছবিতে দেখেছি তাই চিনতে অসুবিধা হলো না নয়তো চিনতেই পারতাম না। আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম ভাবা যায়।
হৈমন্তী একদমে কথাগুলো বলে থামলো। রোহানের বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। এই মেয়েটার কিছু মনে নেই কিন্তু ওরতো সব মনে আছে। ওর যেনো এক এক করে সব মনে পড়ে যাচ্ছে তাই কথা বলতে কেমন জড়তা কাজ করছে। তবুও মিনমিনে কন্ঠে উত্তর দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে বসলো। রোহান পাশের বন্ধুকে বলল,
> আবির এখানেও কি ব্যবসার কাজকর্ম করবে বলতো? সেই বাইরে গেলো ফেরার নাম নেই। আহাম্মক একটা। রোবটের মতো হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।
রোহান ভ্রু কুচকে ফেলল। আবির ওর ছোটবেলার বন্ধু। দেখতে বেশ সুদর্শন সব দিক থেকে ভালো এটাই সমস্যা প্রচণ্ড জেদি।
**
চারদিকে লোকজন কথাবার্তা বলছে আড্ডা দিচ্ছে।তার মধ্যে হৈমন্তী চয়নিকার পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> বড় ভাইয়া কোথায় দেখছি না কেনো?
> ভদ্রলোক বাইরের বাগানে রান্নাবান্নার তদারকি করছে। এতগুলো মানুষকে খাওয়াতে হবে যদি রান্না খারাপ হয় সেই ভয়ে তার আত্না শুকিয়ে আসছে।
হৈমন্তী মৃদু হাসলো। বড় ভাইয়ের সম্পর্কে ওর জানা আছে। কিন্তু এখানে তো ওর দরকার আছে। ও আর কথা বাড়ালো না দ্রুতগতিতে বাগানের দিকে ছুটলো। বাগানে গিয়ে দুর থেকে ভাইকে দেখে আশেপাশের না তাকিয়ে ছুটতে গিয়ে সামনে একজনের সঙ্গে লেগে গেলো ধাক্কা। দুজন দুদিকে ছিঁটকে পড়েছে। হৈমন্তীর হাতের তালুতে বেশ আঘাত লেগেছে। ওর শান্ত মেজাজ এবার প্রচণ্ড অশান্ত হলো। বিড়বিড় করে আচ্ছা করে এই অগন্তুকে গালি দিয়ে উঠতে গেলো। এতক্ষণ এক জোড়া চোখ ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই। হৈমন্তীর সারা মুখে বিরক্তি ছেয়ে আছে। হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে ওই চোখে চোখ পড়ে গেলো। হৈমন্তীর মেজাজ তুঙ্গে। ছেলেটা ওকে ফেলে দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কতবড় সাহস। ওর ইচ্ছে করলো থাপ্পড় দিয়ে ব্যাটার দাঁত ভেঙে দিতে কিন্তু বাড়িতে অশান্তি হবে। কথাটা ভেবে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> দেখা শেষ হয়েছে?
আবির হৈমন্তীর এমন কথা শুনে ঢোক গিলে বলল,
> সরি আসলে খেয়াল ছিল না। হুটকরে সামনে চলে এসেছেন।
হৈমন্তী ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসের ধুলা পরিস্কার করতে করতে বলল,
> আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? জীবনে মেয়ে দেখেননি?
> আপনার নামটা যদি বলতেন।
হৈমন্তী বিরক্তি নিয়ে যেতে যেতে বলে গেলো,
> হৈমন্তী মির্জা।
আবির কয়েকবার নামটা মনের মধ্যে আওড়ে নিলো। হৈমন্তী সংক্ষেপে হৈমি। আহা কি মধুর নাম। আবির আর অপেক্ষা করলো না তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে রোহানের কাছে বসলো। কোনো রিস্ক নেওয়া চলবে না। আজকেই আম্মুকে বলবে মেয়ে পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু তার আগে তো রোহানের সঙ্গে কথা বলতে হবে? আবির এহসানের মনে এই প্রথমবার একটা মেয়ে ধরেছে ছ্যাকা ব্যাকা হওয়ার কোনো ইচ্ছেই ওর নেই। তাছাড়া আম্মু শুনলে বেশ খুশী হবে কথাটা ভেবেই মনের মধ্যে আনন্দ দোলা দিচ্ছে। আবিরকে এমন মিটিমিটি হাসতে দেখে রোহান একটু রেগে গিয়ে বলল,
> এই তোর আসার সময় হলো? এসেছিস ভালো কথা ভূতে ধরা মানুষের মতো হাসছিস কেনো?
> আমার কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছে জানিস?
রোহান ওর কথা শুনে হতবাক। আবিরের ঠোঁটেকাটা স্বাভাবের কথা ওর অজানা নেই। কিন্তু তাই বলে প্রেম? বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছেলেটা বলে নাকি তার প্রেম পাচ্ছে। কি অদ্ভুত। রোহান নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
> রঙিন শরবত খাওয়া শেষ? দুলাভাই বাড়িতে মদের ব্যবস্থা করছে কোই আমি তো জানিনা?
আবির ওকে ইগনোর করে বলল,
> হৈমন্তীকে পছন্দ হয়েছে আগামীকাল আব্বু আম্মুকে সঙ্গে নিয়ে আসছি। তুই একটু সাহায্য কর।
রোহান বেজায় রেগে গেলো আবিরের এমন কথাবার্তা শুনে। জানা নেই চেনা নেই হঠাৎ একটা মেয়ে দেখে পছন্দ হয়ে গেলো আর পরদিন বিয়ে করবে। মেয়েটার সম্পর্কে জানাতে হবে না। রোমান নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,
> ওদিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করিস না। মেয়েটা বিবাহিত।
আবির মন খারাপ করে বলল,
> দেখে মনে হয়না। যাইহোক ওর স্বামী কি করে?
> ডিভোর্সী, শোন ও বিয়ে টিয়ে করবে না। তাছাড়া ওর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাচ্চা হয়েছিল ওর স্বামী বলেছে বাচ্চাটা নাকি ওর না। এটা সত্যি হতে পারে কোনো প্রমাণ নেই। শোন তুই সুদর্শন পুরুষ বাপের অঢেল টাকা পয়সা আছে তোর জন্য ও বেটার না। আরও ভালো কিছুই পাবি।
আবির হাসি হাসি মুখ করে বলল,
> দূর তুই ব্যাটা বুঝবি না। মেয়েটাকে দেখেই আমার চোখ আটকে গেছে। প্রেম ভালোবাসা ওসব বিয়ের পরে হবে আগে ওকে আমার করে ফেলবো। শোন তুই কিন্তু আমাদের মধ্যে ভিলেন হবি না। আমাকে চিনিস তো? পছন্দের জিনিস আমি নিজের করতে পিছপা হয়না। ডিভোর্স হয়েছে তো কি হয়েছে? আমি মানিয়ে নিবো।
রোহান ওর কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এই ছেলেকে বোঝানো কারো কর্ম না। যা বলেছে তাই করে ছাড়বে। কিভাবে আটকাবে একে সেই চিন্তাই ও ঘামতে শুরু করলো। একে না আনলেই বুঝি ভালো হতো। আবির ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বলল,
> তাছাড়া তোকে আরেকটা সত্যি জানানোর ছিল। হৈমন্তীকে আমি প্রথমবার না। অসংখ্যবার দেখেছি। আমি ওকে যতবার দেখেছি হয়তো তুই তার এক ভাগ ও দেখিসনি। এই ও বাংলাদেশের এসেছে এটাও বলতে পারিস আমার ইচ্ছেতে।
রোহান অবাক চোখে আবিরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ও মিথ্যা বলার ছেলে না। কিন্তু কিভাবে সম্ভব মাথায় ঢুকছে না তাই কৌতূহল চাপিয়ে রাখতে না পেরে বলল,
> কিভাবে?
> এখন বলতে ইচ্ছে করছে না। চল খেয়ে আসি। শাশুড়ি বাড়িতে প্রথমবার এসেছি জমিয়ে খেতে হবে। টেনশনে দুদিন খাওয়া হয়নি।
আবির কথাগুলো বলে উঠে চলে গেলো। রোহান সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল। এরপর কি হবে ভেবেই ভয় করছে। তাছাড়া আবির এতগুলো রহস্য রেখে চলে গেলো। শেষপর্যন্ত হৈমন্তীর দিকে ওর নজর পড়লো। হঠাৎ করে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। চারদিকে ঝামেলায় ভরপুর। শান্তি নেই। মনে প্রশ্ন আসলো হৈমন্তী কি রাজি হবে?
চলবে