#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪
পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরলো ফরহাদ। সারাদিন গাধার মতো খাটতে হয়েছে। ভূমি অফিসের চাকরি। একগাদা ফাইলেন নিচে চাপা পড়ে মরার মতো অবস্থা। অফিসের কাজের বাইরেও কিছু কাজ ছিল যেগুলো নিজের গরজে করতে হয় নয়তো অল্প সময়ে কিভাবে উন্নতি করতে পারবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফরহাদ দরজায় ধাক্কা দিলো। বেশ কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অথচ লতা দরজা খুঁলছে না। ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ হলো না। রুমের অতিরিক্ত চাবিটা আজ বাড়িতে ফেলে গিয়েছিল রাস্তায় গিয়ে মনে হয়েছে কিন্তু অলসতার জন্য আর ফিরে আসা হয়নি। যদিও কাছে বাইক ছিল। এই বাইকটা গতমাসে চড়া দামে ক্রয় করেছে কিন্তু পরে মনে হয়েছে বাইক না কিনে একটা ছোটখাট প্রাইভেট কার নেওয়া উচিৎ ছিল। যদিও বুদ্ধিটা লতার। লতার বহুদিনের ইচ্ছে মাইক্রোবাসে চলাফেরা করবে। ফরহাদ ওর ইচ্ছে কখনও অপূর্ণ রাখবে না একটু সময় লাগবে। হঠাৎ পেছন থেকে দুটো হাত ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। ফরহাদ জানে এই দুহাতের মালকীন কে। সারাদিনের কর্মব্যস্ত শরীর, ক্লান্তিতে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। তারপর আবার দরজার সামনে একঘণ্টা দাঁড়িয়ে মেজাজ এক রকম খিটখিটে হয়ে গেছে তাই লতার এমন সোহাগে ওর মন গলাতে পারলো না। দ্রুত ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চড়া গলাই বলল,
> কোথায় গিয়েছিলে? আমি বাড়িতে না থাকলে তো তোমার ভারি মজা। এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করো। জানতে না আমি বাসাই ফিরবো?
লতা ওর কথা শুনে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। রাঙা ওষ্ঠদ্বয়ে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> শপিং করতে গিয়েছিলাম তোমার শার্ট গুলো কেমন হয়ে গেছে খেয়াল করেছো? নতুন করে কয়েকটা কিনতে গিয়েছিলাম তোমার তো সেদিকে নজর নেই। আমার বরকে সবার চাইতে বেশি সুদর্শন লাগা চাই বুঝলে?
লতার বাকপটুতাই ফরহাদ মুগ্ধ। নিমিষে সব রাগ জল হয়ে গেলো। চোখদ্বয় পানিতে ছলছল করে উঠলো। মেয়েটা কতো ভাবে একে নিয়ে।আহা এমন ভালোবাসাতে যেনো কারো নজর না লাগে। লতা ওর জন্য শপিং করতে গিয়েছিল ভাবতেই ভালো লাগা কাজ করছে। ও মনে মনে প্রচণ্ড খুশী হলো কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না। শুধু বলল,
> কখন থেকে অপেক্ষা করছি দরজা খুঁলে দাও ভেতরে যায়।
লতা ব্যস্ত ভঙ্গিতে সাইড থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে দরজা খুঁলে ভেতরে চলে গেলো। কাজের মেয়েটা কাজকর্ম সব করে গেছে। আবারও সন্ধ্যায় আসবে রাতের রান্না করতে। লতার এসব নিয়ে ভাবতে হয়না। ও শুধু নিজেকে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত। তাছাড়া ওর বেশ কিছু বন্ধু হয়েছে। আশেপাশের প্রতিবেশির ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বেশ ভাব। যদিও ফরহাদ এসব পছন্দ করেনা তবুও কিছু করার নেই। একলা বাড়িতে কতক্ষণ মন টিকে। তারচেয়ে বাইরে গিয়ে একটু ঘোরাফেরা করলে মন ভালো থাকবে। লতা ভেতরে গিয়ে কয়েকটা ব্যাগ আলমারিতে সরিয়ে রাখলো। সেগুলো আগামীকাল দেখবে যখন ফরহাদ থাকবে না। ফরহাদ গোসল করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। লতা ওর পাশে বসে শার্ট গুলো বের করে রাখছে। ফরহাদ কাপড়গুলো সরিয়ে ডান হাতে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বলল,
> সারাদিন শুধু আমাকে চিন্তা করো তাই না? নিজের জন্য কি এনেছো দেখাও?
লতা লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল,
> তুমি ছাড়া কাকে নিয়ে চিন্তা করবো? তুমিই আমার সব।
> তাই বুঝি লাজুক লতা?
লতা মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিতেই ফরহাদ ওর কপালে ওষ্ঠাদ্বয় রাখতে গেলো কিন্তু পারলো না। লতা ব্যস্ত ভঙ্গিতে দ্রুত ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
> দুপুরে তোমার জন্য বিরানী রান্না করেছিলাম।গরম করে আনছি তুমি দ্রুত উঠে আসো। খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক না করলে আম্মা বকবে কিন্তু।
ফরহাদ নিরাশ হয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছুদিন হচ্ছে লতার সঙ্গে সময় কাটানো হচ্ছে না। সারাদিন কাজকর্ম করে বাড়িতে ফিরে নাক ডাকিয়ে ঘুম। তাছাড়া মেয়েটা একাজ সেকাজে ব্যস্ত থাকে ও ঘুমানোর পরে রুমে আসে। বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ করার মতো কিছু নেই তবুও মনটা খুব খুতখুত করছে। লতা রাগ করে এমন করছে কি বোঝাও যাচ্ছে না। সে হাসিখুশি ভাবে চলাফেরা করছে। আগের তুলনায় বর্তমানে একটু বেশি খুশি থাকে তাই আর ভাবেনি। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে লতার ডাক পড়লো। ফরহাদ ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে উঠে চলে আসলো। টেবিলে বিরানি সাজানো রয়েছে। গন্ধে সারা বাড়ি ছড়িয়ে পড়েছে। ফরহাদ চেয়ার টেনে বসতেই লতা ওর প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বলল,
> নিজের হাতে রান্না করেছি তোমার জন্য। ভেবেছি এখন থেকে মাঝেমাঝেই রান্না করবো। বরকে রান্না করে খাওয়ানোর মধ্যে এক প্রকার তৃপ্তি আছে।
> এখনো খাওয়া শুরু করিনি তাছাড়া আজকেই কিন্তু প্রথম দিন তবুও তুমি এতো খুশি ব্যাপার কি বলোতো?
ফরহাদের কথা শুনে লতা ঢোক গিলে মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> ফরহাদ তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন করো এটা আমার একদম পছন্দ হয়না। আগে খেয়ে দেখে বলো কেমন হয়েছে?
ফরহাদ শুধু হাসলো। লতা অল্প কথায় রেগে যায়। ওকে রাগাতে ওর ভালো লাগে।মেয়েটা যে কবে বুঝবে। বিরানীর স্বাদটা ভীষণ ভালো হয়েছে। ফরহাদ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। লতা লাজুক হেসে সব গুছিয়ে রাখছে। ফরহাদ খাওয়া শেষ করে টেবিলে ছেরে বেডরুমে যেতেই লতার ফোন বেঁজে উঠলো। মেয়েটা ব্যাগ থেকে ফোন বের করার সময় পাইনি। ফরহাদ ওর সাইড ব্যাগ খুলে ভেতরে একটা টিফিনবাটি পেলো। ফরহাদ ফোন আর বাটিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাম্বার কোনো নামে সেভ দেওয়া নেই। নাম্বারটা পরিচিত মনে হলো না দেখে কেটে দিয়ে টিফিন বাটির মুখ খুলে দেখলো বিরানি ভাতের কয়েকটা দানা লেগে আছে। বাটি থেকেও তীব্র গন্ধ আসছে। ফরহাদ ভ্রু কুচকে ফেলল। লতা কারো জন্য রান্না করে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এই অচেনা শহরে ওর পরিচিত কে আছে? ওর ভাবনার অবসান ঘটলো ফোনের শব্দ শুনে। ও বাটিটা সেভাবে রেখে ফোন রিসিভ করতে গেলো কিন্তু লতা দ্রুতপায়ে ভেতরে এসে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। চোখের নিমিষেই সব ঘটে গেলো। লতার এমন আজগুবি আচরণের সঙ্গে ফরহাদ পরিচিত না। কি করতে চলেছে মেয়েটা? মনের আকাশের সন্দেহের মেঘ দাঁনা বাধতে শুরু করলো। ফরহাদের এতো ভালোবাসা উপেক্ষা করে লতা কার জন্য নিজেকে আড়াল করছে?
______________________________
খোঁলা আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে হৈমন্তী। নীল আকাশ সাদা পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের ভেলা দেখতে বেশ চমৎকার লাগছে। মন মেজাজ একদম ফ্রেশ। হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া যেনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভাইয়াকে বলেছিল দেশে ফিরবে কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। এই ভিনদেশের মাটিতে আর কতদিন থাকতে হবে কে জানে। ভিডিও কলে প্রায় দিন বড় ভাই ভাবি আর তাদের একমাত্র ছেলে রানির সঙ্গে কথা হয়। বাচ্চাটার হাসিটা বেশ সুন্দর। কথাগুলো ভেবে মনের অজান্তেই হেসে ফেলল হৈমন্তী। এই শহরে কবে এসেছিল তার কিছুই মনে নেই। ভাইয়া ওকে এখানকার ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন করিয়েছে। পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। মায়ের সঙ্গে একদিনও কথা হয়নি। হৈমন্তীর ফরহাদের সঙ্গে বিয়ে স্মৃতির কিছু মনে নেই। অনেক কষ্টে সুস্থ হয়েছিল কিন্তু মেমোরিতে শুধু আগের স্বামীর কথাগুলো রয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে ধীরে সুস্থে সব মনে পড়বে। একটু সময়ের প্রয়োজন। চেনা পরিবেশে থাকলে মনে পড়তে সময় কম লাগবে এই ভয়ে আরাফাত বোনকে দেশে নিচ্ছে না। নিজের সবটুকু দিয়ে বোনকে সুস্থ করেছে। হৈমন্তী বেশ মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। তবে ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। রাতে হঠাৎ হঠাৎ ভয়ে চিৎকার করে উঠে। হয়তো সেই ভয়াবহ অতীত স্বপ্নে এসে ওকে বিরক্ত করে যায়। যা চাইলেই ওর থেকে আড়াল করা যাবে না। চারটা বছর পার হয়েছে। প্রথম একটা বছর ওর চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছিল। হঠাৎ পেছনে থেকে মেয়েলি কন্ঠে চিৎকার শুনে হৈমন্তীর ধ্যান ভাঙলো। দ্রুত পেছনে তাকিয়ে দেখলো অরিন দাঁড়িয়ে আছে। অরিন প্রবাসী বাঙালি। হৈমন্তীর সঙ্গে গলাই গলাই ভাব। বলতে গেলে দুজন দুজনাকে ছাড়া থাকতে পারেনা। হঠাৎ এই সময়ে অরিনকে নিজের বাড়িতে দেখে হৈমন্তী বেশ অবাক হলো। তবুও ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> দুদিন পরে দেখা দিচ্ছ তোমার উপরে আমি ভীষণ রেগে আছি। আগে রাগ ভাঙাও।
অরিন সময় নিলো না দ্রুত এসে ওকে ঝাপটে ধরে কেঁদে ফেলল। হৈমন্তী দ্রুত ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
> এভাবে আমাকে ভয় দেখাও কেনো দ্রুত বলো কি হয়েছে।
> হৈমি আমি দেশে ফিরছি। তোমাকে ছেড়ে যেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তুমি তো জানো আমাদের বিয়েটা এখানে হবে না। দাদুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। উনি চাইছেন আমি দেশে গিয়ে বিয়ে করি।
হৈমন্তীর বেশ কষ্ট হচ্ছে তবুও নিজেকে শান্ত রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
> চিন্তা করোনা আমি ভাইয়াকে বলবো খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে। সেখানে তোমার সঙ্গে ইনশাআল্লাহ আমার আবারও দেখা হবে। তাছাড়া তুমি তো চিরকাল সেখানে থাকবে না। ফিরে আসবে।
> দীর্ঘ সময় তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে।
> মোটেই দীর্ঘ হবে না বিশ্বাস রাখো আমার উপরে।
অরিন হৈমন্তীকে দ্বিতীয়বার জড়িয়ে ধরে ওর হাতে নিজের বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। হৈমন্তী শূন্যে দরজায় আনমনে তাকিয়ে আছে। দেশে ফিরতে হবে কথাটা ভেবে ও দ্রুতগতিতে বেরিয়ে পড়লো। আরাফাত চোখ বন্ধ করে সোফায় বসে আছে। হৈমন্তী ওর পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলল,
>ভাইয়া তোমার বয়স কতো?
হৈমন্তীর এমন কথা শুনে আরাফাত ঝট করে চোখ খুলে বলল,
> হঠাৎ আমার বয়স নিয়ে পড়েছিস কেনো বলতো?
> তোমার বয়সী সকলের বিয়ে করে দুটো করে বাচ্চা হয়ে গেছে অথচ তোমার বিয়ের খবর নেই। তুমি জানো অরিনের বিয়ে দুমাস পরে?
আরাফাত হাসে ফেলল হৈমন্তীর আচরণে। মেয়েটা একটু বেশিই সরল। হৈমন্তী ভাইয়ের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরাফাত হাসি থামিয়ে বলল,
> আমার কথা ছাড় বান্ধবীর বিয়ে হচ্ছে প্রেম করে অথচ আমার বোনের কাউকে মনে ধরছে না। এটা কিন্তু যথেষ্ট ভাবাচ্ছে আমাকে। তুই একটা ছেলে পছন্দ করবি আমরা ধুমধাম করে বিয়ে দিবো কত সুখের হবে বলতো?
> ভাইয়া তুমি কথা ঘোরাবে না কিন্তু। ডিসেম্বরে আমার পরীক্ষা শেষ।জানুয়ারিতে আমরা দেশে ফিরছি। আমি আকাশ পাতাল খুঁজে তোমার জন্য মেয়ে দেখবো। তুমি বিয়ে করবে এবং আমার পরবর্তী সেমিস্টার শুরুর আগে তিনজন ফিরে আসবো ঠিক আছে?
> এটা কি আমার শাস্তি নাকি বোনের হুকুম?
> দুটোই। বহুকাল দেবদাস হয়ে ছিলে আর মানা যাচ্ছে না। আমি শপিং করা শুরু করছি।।
হৈমন্তী কথাগুলো বলে যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিল তেমনিভাবে চলে গেলো। আরাফাত দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। ভাই ভাবিকে বলতে হবে।
***
এক মাস গত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে দুই তারিখ। হৈমন্তী আরাফাতের হাত ধরে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুই নাম্বার গেটে দাঁড়িয়ে আছে। দূরে বড় ভাই রাজীব দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ওদেরকে ইশারা করছে। হৈমন্তী আরাফতের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। এই লোকটাকে ও বড্ড বেশি ভালোবাসে। রাজীব বোনের মাথায় চুমু দিতেই আরাফাত পাশে এসে দাঁড়ালো। হাসি মুখে বলল,
> সব ভালোবাসা হৈমিকে দিও না আমার জন্য কিছু রাখো।
রাজীব হৈমন্তীকে বাম পাশে রেখে আরাফাতকে ডান হাতে আগলে নিয়ে বলল,
> আমার সব ভালোবাসা তোদের জন্য সমান। বেশি কমের প্রশ্নই আসে না।
> জানিতো ভাইয়া। কিন্তু তুমি একা কেনো? ভাবি কোথায়?
রাজীব ওদেরকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোতে এগোতে বলল,
> সে তোদের জন্য রান্নাঘরে হোটেল খুলেছে। মহা বাস্ত আছে। মাসুদ বিকালে পৌচ্ছাবে। ওরা এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবে। মাসুদের ঢাকায় পোস্টিং হয়েছে।
হৈমন্তী বেজায় খুশী কতকাল পরে ভাইবোনদের এক সঙ্গে দেখবে। মেজ ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় কথা হয় তবে ও তেমন সময় দিতে পারেনা। কাজের চাপে থাকে। তবে দেশে ফিরলে দশ দিন বোনকে সময় দিবে বলেছে। হৈমন্তী কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আরাফাত রাজীবের সঙ্গে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। রাজীব চিন্তিত হয়ে বলল,
> হৈমিকে নিয়ে আসা ঠিক হলো? যদি আবার ঝামেলা হয়?
> ভাইয়া ঝামেলা তো একটু হবেই। ভয় পেলে চলবে না। আমি সামলে নিবো। ফরহাদের কি খবর জানো?
> পরে বলবো। আগে বাড়িতে চল।
***
দুবছর হয়েছে ফরহাদের বাবা মারা গেছে। মা ওদের সঙ্গে থাকে। লতার সঙ্গে শায়লা বানুর একটুও বনিবনা হয়না। সারাক্ষণ ঝগড়া ঝামেলা লেগেই থাকে। চাকরির এক বছরের মাথায় ঘুস নেওয়ার অপরাধে চাকরিটা চলে গিয়েছিল। ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছে । লতা সেই সময়টা নিজের মতো কাটিয়েছে আরাফাতের সঙ্গে দেখা করেনি। আরাফাত জেল থেকে ফিরে জানতে পারে লতার বাচ্চা হবে। ও ছয় মাস জেলে ছিল অথচ লতা প্রেগনেন্ট হচ্ছে তিন সপ্তাহের। ফরহাদ জানে এই বাচ্চাটা ওর না কিন্তু কিছু বলতে পারেনা। লতা হুমকি দিয়েছে সুইসাইড করে ওকে ফাঁসিয়ে দিবে। লতা মান সম্মানের ভয় করবে না। বাচ্চার বয়স দুবছর। লতা আগের মতোই ছেলকে নিয়ে ওর সঙ্গে থাকে। ফরহাদ লতার সঙ্গে দরকার ছাড়া তেমন কথাবার্তা বলে না। তাঁতে লতার কিছু হেলদোল নেই। সে আছে নিজের মতো সুখে। ফরহাদ একটা কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। শায়লা বানু ছোট একটা খাবারের হোটেল খুঁলেছে। সারাদিন কাজকর্ম করে যে টাকা আসে টুকটাক সংসার চলে তবে বাড়িতে কোনো শান্তি নেই। সব সময় লতার চিৎকার চেচামেচি সঙ্গে ওর বেহায়াপনা তো আছেই। আগে গোপনে করতো এখন সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে পর পুরুষের সঙ্গে ঘুরছে। ফরহাদ যেনো ওকে সীমাহীন স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। ফরহাদ জেল থেকে ফিরে এসে খোঁজ করেছে হৈমন্তীর। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনা। ও একবার হলেও হৈমন্তীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে চেয়েছে । হৈমন্তী কি পারবে ওকে ক্ষমা করতে?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবে।