প্রতিদান পর্ব ৪

0
1889

#প্রতিদান

পর্ব:4
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

আমার হুশ আসতেই নিজেকে হসপিটাল এর বেডে আবিষ্কার করলাম। আমার বেডের এক সাইট এ একটা মেয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।চুলের কারণে ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না।মাথাটা এত্ত ব্যাথা করছে কি বলব।পানির পিপাসা ও পেরেছে। তাই মেয়েটাকে ডাক দিলাম।
এক্সিউজমি শুনতে পারছেন?হ্যালো মিস শুনছেন আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে একটু পানি দিবেন?(আসফি)

হঠাৎই ঘুমের ঘোরে আসফির ডাক শুনে ধরপড়িয়ে উঠলাম। ও পানি চাইছে আমি তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি ঢেলে ওকে খাওয়াতে যাব কিন্ত ও নিজেই পানির গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে লাগল।হঠাৎই ওর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।(মুনতাহা)

আচ্ছা আমার বাবা মা কোথায়?আর ইষানি কোথায়?(আসফি)

কি বলছ আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা?(অবাক হয়ে মুনতাহা)

আমিতো ইষানিকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই আমাদের গাড়ির এক্সসিডেনট হয়।প্লিজ ইষানি কে ডাক দেও।আর আমার বাবা আর মামনি কোথায়?আর তুমি এইবা এখানে কি করছ?তোমাকে না ঢাকা পাঠিয়েছিলাম তুমি সেই মেয়েটা না?কি জানি নাম তোমার ও মনে পড়েছে নুসরাত জাহান মুনতাহা।মুনতাহা প্লিজ ইষানি কে আসতে বল আর আমাকে বাবা ও মামনির কাছে নিয়ে চল।(উঠার চেষ্টা করে আসফি)

আহ আসফি উঠোনা।তোমার বাবা আর মামনি সেই দুইবছর আগের এক্সসিডেনট এই মারা গেছে।আর ইষানি কে আমি চিনিনা।তবে আজকের এক্সসিডেনট এ দাদা স্পষ্টডেড হয়েছেন।(মুনতাহা আসফির হাত ধরে বসিয়ে )

কি ফালতু কথা বলছ কিসের দুইবছর আগে বাবা মামনি মারা গেছে।তুমি বুঝছ না কেন আমার আজকে বিয়ে করার কথা ।আমার টিয়াপাখি অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তুমি সরো তো আমি বাবা মামনি আর ইষানির কাছে যাব।(মুনতাহার হাত ছাড়িয়ে আসফি)

এত্ত চিৎকার এর কারণে ডাক্তার চলে আসল ।আমি আস্তে ডাক্তার এর উদ্দেশ্য বললাম ওকে একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিতে।নাহলে আরো সমস্যা হবে।ডাক্তার তাই করল।কয়েকজন আসফিকে ধরার পর ডাক্তার ইঞ্জেকশন পুশ করে দিল।তারপর আমাকে জলদি ওনার সাথে কেভিন এ দেখা করার কথা বলে চলে গেলেন।আমি ডাক্তার এর কাছে গিয়ে জানালাম আসফির এই দুইবছর এর কন্ডিশন এর কথা।ডাক্তার আমাকে ওকে যেই ডাক্তার দেখাতাম মানে ডাঃ জাকির এর সরণা পন্য হতে বললেন জলদি।কারণ উনি মেডিসিন এর ডাক্তার তাই আসফির ব্যাপার এ কিছুই বলতে পারছেনা।তাই আমি ডাক্তার জাকির কে কল করে আসফির আপডেট দিলাম। উনি এই কথা শুনে জলদি কিছু টেষ্ট করাতে বললেল।রাত দশটার দিকে উনি এসে দেখবেন আসফির অবস্হা কেমন?এই হসপিটাল এ আমার তেমন কাউকেই চিনিনা।তাও অনেক রিকোয়েস্ট করে টেষ্ট এর রিপোর্ট আজকের মধ্যেই বের করানোর ব্যাবস্থা করতে হবে।আসফির ঘুমের অবস্হাতেই ওর টেষ্ট করানোর হল।রিপোর্ট গুলো আজকে দিতে চান না হসপিটাল থেকে।কিন্ত ডাক্তার জাকির আহমেদ স্যার এসে নিজে রিপোর্ট গুলো নিলেন।আসফির আর রিপোর্ট এর চেকাপ করে উনি জানালেন আসফির আগের সব মনে পড়েছে।কিন্ত দুইবছর এর কথা ভুলে গেছে।ইভেন আমাকেও ভুলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।কারণ বিয়েটা যেহেতু ঐ সময়ের মধ্যেই হয়েছে। আমাকে বারবার বললেন যাতে ওকে কিছু মনে করানোর চেষ্টা না করি।এতে ওর ব্রেন হেমারেজ হতে পারে ।এর ফলে ও কোমায় ও চলে যেতে পাড়ে।(মুনতাহা)

হ্যালো ডাক্তর আমার অবস্হা কেমন দেখছেন?(হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে আসফি )

হ্যা অবশ্যই খুব ভাল। তবে আপনাকে কেয়ার ফুল থাকতে হবে।আপনার এই দুইবছর এর কিছু মনে নেই।তবে জোড় দিয়ে মনে করতেও যাবেন না।আপনি ফুল রেস্টে থাকবেন।আর প্লিজ কিছুদিন রুটিন চেকাপ করিয়ে নিবেন।(ডাঃ জাকির)

সিরিয়াসলি দুইবছর কেটে গেছে মুনতাহা তাহলে সত্যিই বলছে!(হতবাক হয়ে আসফি)

আপনি মুনতাহাকে মনে রেখেছেন তাহলে।আমিতো ভাবলাম দুইবছর এর সব সৃতি এই ভুলে গেছেন।(হতভম্ব হয়ে ডাক্তার জাকির)

না ওর সাথে তো আমার অনেক আগের পরিচয় ছিল। তা আপনি চট্টগ্রাম এর কোন হসপিটাল এর ডাক্তার?(আসফি)

আমিতো চট্টগ্রাম এর ডাক্তার না ঢাকার ডাক্তার। (ডাক্তার)

তাহলে ঢাকা থেকে আপনি এত্ত দুর আমাকে দেখতে আসছেন?তাই তো বলি আপনাকে চিনতে পারলাম না কেন?আমিতো চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটাল এর এমডি এন্ড পিযিও থ্যারাপিস।(আসফি)

আমি চট্টগ্রাম আসিনি বরং আপনি ঢাকাতে আছেন।আর আপনি ডাক্তার?(ডাক্তার একটু অবাক হয়ে)

জি।আচ্ছা আমি চেকাপ করিয়ে নিব।(আসফি)

মুনতাহা তুমি তো আছ ওনার খেয়াল রেখ।কিছু হলে সাথেসাথে আমাকে খবর দিবে।আর আপনার দুইবছর আগের ঘটনার জন্য প্লিজ নিজেকে কন্ট্রোল হারা করবেননা।ব্রেন কে যতটা পারেন টেনশন থেকে দূরে রাখবেন।আর কিছুর দরকার হলে মুনতাহাকে বলবেন যেহেতু ও আপনার সাথেই থাকবে।আসি মিস্টার আসফি ভাল থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।(ডাক্তার)

থ্যাঙ্কস ডাক্তার (হ্যান্ড সেক করে আসফি)

ডাক্তার যেতেই আসফির প্রশ্নের বন্যা বইয়ে দিল।মাথা ব্যাথা করছে এর উপর এত্ত পেনপেন ভাল লাগেনা।কিন্ত কিছু বলতেও পারছিনা।ওর বাবা মামনি দাদার খবর না নিয়ে ইষানী ইষানী করছে।এখানে যে ব্যাটা তুই বিয়ে করে কত্ত কিছু করে বসে আছিস!স্বামীর অধিকার টাও ছাড়িস নাই পাগল থাকা সত্ত্বেও। আর ভালো হতে না হতেই ঐ জনের জন্য প্রশ্ন করতে করতে আমার অবস্হা খারাপ করে দিচ্ছে। ওকে থামাতে হবে।
আসফি দাদা আর পৃথিবীতে নেই ওনার দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।(মুনতাহা)

ও আমিতো ভুলেই গেছি।আচ্ছা তোমার আর আমাদের একসাথে এক্সসিডেনট হলো কি করে?তোমার মাথাতেও তো বেনডিজ করা দেখছি,।(আসফি কৌতুহল নিয়ে)

আসলে গত দুইমাস যাবত তোমার দেখাশোনার জন্য দাদা আমাকে রেখেছেন।আজকে তোমাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য যাচ্ছিলাম আর হঠাৎই একটা ট্রাক এর সাথে গাড়ির সংঘর্ষ হয় ।

তারপর আসফি আর কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।কোন রকম গিয়ে দাদার দাফনের ব্যাবস্থা করে আসল।ওকে আরো দুইদিন হসপিটাল এ রাখা হল।এই ফাকে আমি বাসায় এসে আমার যাবতীয় জিনিস পত্র অন্য রুমে শিনট করে দিয়েছি। কাজের সকল লোকদের বলেছি আমাদের বিয়ের কথা যেন আসফিকে না বলে।আসফির সুস্থ হওয়ার কথা শুনে সবাই খুশি হলেও আমাদের বিয়ের কথা লুকানো নিয়ে তাদের মন খারাপ করছে খুব। কারণ তারা দেখেছে আমি কত্ত কষ্ট আর অত্যাচার সহ্য করে ওর সাথে ছিলাম।যাইহোক পুরোনো কথা বাদ দেই।ওর ঘর গুছিয়ে বের হওয়ার সময় আমার চিৎকার করে কান্না আসছে।আমাকে পাগলটা যেমনই হোক ভালোবাসা দিত।এখন সে আমাকে চিনলেও ওয়াইফ হিসেবে চেনেন না।কালকে বিকাল বেলা একটা ঝাড়ি মেরেছে আসফি বলে ডাকি বলে।তার মতে আমি অনেক ছোট হয়েও ওর নাম ধরে ডাকছি এটা ওর পছন্দ না।যাতে ভাইয়া বলি এমনটা ও বলেছে।নিজের স্বামীকে ভাইয়া বলাটা খুব জঘন্য ও বিরক্তিকর বিষয়।যাইহোক আপাতত সরে থাকাই স্রেয়। কিন্ত এই ছেলে জদি ইষানির খোঁজে যায় এর খবর আছে।আমি আবার এত্ত ও ভালনা নিজের স্বামীর ভালোবাসার জন্য তার ভালো থাকার জন্য তাকে সেক্রি ফাইজ করব।মেরে টেং ভেঙ্গে দিব আসফির। আফটার অল আমি ওর বিয়ে করা পুরো অধিকার প্রাপ্ত বউ।কোন স্টার জলসা বা স্টার প্লাস এর নাইকা না।আমার জিনিসের ভাগ সহজে ছারছিনা।ঐ ইষানি ওর লাইফে ব্যাক করতে চাইলে আমি আর সত্যি টা লুকিয়ে রাখবনা আসফিকে বলে দিব।
আচ্ছা যাইহোক আগে আসফিকে নিয়ে আসি।রেডি হয়ে হসপিটাল চলে গেলাম। ওর ডিসচারজ করিয়ে ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। ও এসে ডাইনিং রুমে বসল।একজন এসে আমাদের পানি দিল ওপানি নিয়ে খাচ্ছে। আমার ও পিপাসা লাগল তাই পানির গ্লাস নিয়েই খেতে লাগলাম হঠাৎই ওর কথা শুনে পানি মুখ থেকে বেরিয়ে ওর উপর গিয়েই পড়ল।(মুনতাহা)

আমার চট্টগ্রাম যাওয়ার ব্যাবস্থা করো মুনতাহা।আমি আমার ইষানির খবর নিতে যাব।
এই কথা সুনেই মুনতাহার মুখের পানি আমার উপর পড়ল।
এইটা কি করলা তুমি?(বিরক্ত হয়ে হালকা চিৎকার করে আসফি)

সরি সরি।(আসফির মুখ টিসু দিয়ে পরিষ্কার করে মুনতাহা)

এমন বিহেব করছ কেন।আগে অসুস্থ ছিলাম খেয়াল রেখেছ এখন আমি পুরোপুরিই সুস্থ তাই এত্ত কেয়ার করতে হবেনা।আমার কাজ আমি করতে পারব।আমার রুম কোনটা দেখিয়ে দেও আমি ফ্রেশ হব।(বিরক্ত হয়ে আসফি)

মরিয়ম ওনাকে ওনার রুমে দিয়ে আস।(বলেই নিজের রুমের চলে
আসলাম।মুনতাহা?)

********(চলবে)**********

এই গল্পের লেখিকা আমি নিজেই।আমি এই Arshi Khan আমি এই নুসরাত শেখ তাই অন্যের গল্প ভেবে ভুল করবেন না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here