#শাপলা_ও_সেতুর_গল্প
#প্রভা_আফরিন
[পর্ব-১৮]
মুনিয়ার বিয়ে পাকা হওয়ার খবর শোনার পর থেকে নবীন অস্বাভাবিক চুপ করে গেছে। স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। একটা কথা দুইবার বলতে গেলেই খিটমিট করছে। প্রথমদিকে বিষয়টাকে স্ট্রেস বলে কেউ ভ্রুক্ষেপ না করলেও তারপর কিছুদিন একই আচরণ করলে সকলেরই চোখে বাজলো। ছেলের যে কিছু একটা হয়েছে সেটা ইফতেখার উদ্দিনও টের পেলেন। তিনি নবীনকে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন। নবীন মাথা নত করে ইফতেখার উদ্দিনের সামনে বসলো।
“ডেকেছিলে বাবা?”
ইফতেখার উদ্দিন ছেলেকে পরখ করে গম্ভীর গলায় বললেন,
“সমস্যা যদি মুখ ফুটে না বলিস তাহলে জানবো কি করে? এই বাড়ির সব নিয়মই দেখি উল্টো। মা-বোনের কোনো সমস্যা হলে বাচ্চা ছেলেদের মতো চেচিয়ে বাড়ি সাড়া করে দেয়। আর ছেলেটা মেয়েদের মতো নিজের মাঝে সবকিছু চেপে রাখে।”
নবীন চুপ করে রইলো। নত মস্তক সোজা হলো না। ইফতেখার উদ্দিন কোমল গলায় ডাকলেন,
“নবীন, মাথা তোল।”
নবীন মাথা তুললো। চোখে রাজ্যের বিষন্নতা।
“খুব ক্লান্ত লাগে বাবা। এতদিন ভেবেছি এভাবেই জীবন চলে যাবে। অফিস করবো, তোমাদের দেখভাল করবো তাতেই সময় চলে যাবে। কিন্তু সবকিছুর মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি না বাবা। চাওয়া-পাওয়াগুলো সব ম’রে যাচ্ছে। আমার জীবনের কোনো গতিই খুঁজে পাচ্ছি না। ভবিষ্যৎ পাচ্ছি না। এই জীবন তো আমি চাইনি।”
ইফতেখার উদ্দিন কিছু বললেন না। নবীন বাবার হাতটা নিজের দুইহাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিজের কপালে ঠেকিয়ে আবার বললো,
“অনেকদিন কারো কাছে আবদার করা হয় না। শখ-আহ্লাদ পূরণ করা হয় না। তুমি আগের মতো হয়ে যাও বাবা। আমার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো ম্যাজিকের মতো পূরণ করে দেওয়া সেই ছোটবেলার বাবা হয়ে যাও।”
নবীনের গলা কাঁপে। ইফতেখার উদ্দিন ছেলের হাত ধরলেন। দ্বিধাহীনভাবে জিজ্ঞেস করলেন,
“কাউকে ভালোবাসিস?”
নবীনের কি হলো কে জানে! সে হঠাৎ বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ইফতেখার উদ্দিন যা বোঝার বুঝে নিলেন। ধমকে বললেন,
“মেয়েদের মতো কাঁদলে চ’ড় খাবি কিন্তু। মনের কথা না বললে কি করে জানবো? ভূতে বলে দিয়ে যাবে? এই ছেলেকে নিয়ে তো মহা জ্বালায় পড়লাম।”
নবীনের মা ছুটে এলেন রান্নাঘর থেকে। নবীনকে বাবার হাত জড়িয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে দেখে বললেন,
“কি হয়েছে? নবীনের কি হলো?”
“তুমি ঘর থেকে বের হও। বের হও বলছি। আমার ছেলের কি হয়েছে আমি বুঝে নেবো।”
“ছেলেটা আমারও নিধির বাপ। ওর কি হয়েছে জানার অধিকার আমারও আছে?”
“তাহলে এতদিন কেনো খেয়াল করলে না? ছেলেটা যে ভেতরে ভেতরে মুষড়ে পড়েছে দেখেছো? তোমাকে বলছি কেনো? দোষ তো আসলে আমার। সময় থাকতে মেয়ে-বউদের উচিত শিক্ষাটা দিতে পারিনি। আর এখন তো বোঝা হয়ে গেছি। আমার উচিত ছিলো তোমাকে ধমকের ওপর রাখা। কথা না শুনলে পিটিয়ে পথে আনা। এসব মানুষের ত্যাড়ামির একমাত্র প্রতিষেধক মা’র। তাহলে মেয়েগুলোও আজ ভালো হতো।”
“কি বললে তুমি?” নবীনের মা ফোঁস করে উঠলেন।
নবীন ঝটপট চোখে পানি মুছে বললো,
“থামো না বাবা। প্রেশার বেড়ে যাবে।”
“তুই চুপ কর।” এরপর নবীনের মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“সারাজীবন দেখেছি মায়েরা ছেলের প্রতি অন্ধ হয়। আর তুমি মা হয়ে ছেলেকেই কোনোদিন বোঝার চেষ্টা করোনি। নির্দিষ্ট বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে এখন তাদের নিয়ে আহ্লাদ করে বেড়াচ্ছো। বড় ছেলের বউকে তো শান্তি দাওনি। সে যখন সইতে না পেরে বাড়ি ছাড়লো অমনি ছেলের বিয়ে নিয়ে বিরূপ ধারণা পুষে রাখলে। ছোট ছেলের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে দেখেও বড় ছেলের উদাহরণ টেনে বিয়ের ব্যবস্থা করলে না। ছেলে ছেলে করার আগে ছেলের মা হও। বের হও, আমার ছেলের সমস্যা আমি বুঝে নেবো। তোমরা শুধু শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে এসো। এই ছেলের যা দয়ার শরীর তাতে ওকে পিষে ফেললেও তোমাদের শখ পূরণে পিছপা হবে না।”
নবীনের মা রাগে ঘর ত্যাগ করলেন। ইফতেখার উদ্দিন কাঁপছেন। অনেকদিন পর চেচিয়ে কথা বলায় যেন অনেকটা পরিশ্রম হলো। নিজেকে সামলে এবার ছেলের দিলে তাকিয়ে বললেন,
“মেয়েটা কে?”
“ছাড়ো না বাবা।”
“ছাড়বিই যখন তো কাঁদলি কেনো?”
নবীন চুপ করে রইলো। ইফতেখার উদ্দিন অধৈর্য হয়ে গেলেন,
“আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই তোকে মা’রবো নবীন। আমার পা অচল, হাত কিন্তু এখনো সচল। জোড় দেখবি?”
“ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বাবা। আংটিবদল হয়ে গেছে।”
“বিয়ে তো হয়ে যায়নি। আমি মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলবো। তুই আমাকে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দে। মেয়ে রাজি থাকলেই হবে।”
নবীন চমকে গেলো। তাইতো! বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি। সে চাইলেই একটা চেষ্টা করতে পারে। বিষন্নতা, দুঃখ, জীবনের সব না পাওয়ার বেদনাতুর স্মৃতির অনলে মাথা কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছিলো ওর। কিন্তু মা? নবীন দ্বিধা নিয়ে বললো,
“কিন্তু মা কী মানবে, বাবা। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর মা আমাকেই আঁকড়ে ধরে আছে। মাকে কষ্ট দিতে চাই না আমি।”
“তাহলে তোর বিয়ে করাই উচিৎ না। কারণ বিয়ের পর তোর মা যে নতুন বউয়ের জীবনও জাহান্নাম বানাবে না এর কোনো গ্যারান্টি নেই। আর মা ভক্ত হয়ে তুইও বউয়ের জন্য প্রতিবাদ করতে পারবি না। আমি চাই না একটা মেয়ের জীবন দুর্বিষহ করিস তোরা। থাক।”
নবীন আবারো দিশেহারা হয়ে গেলো। কি করা উচিত ভেবে পেলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“মুনিয়া খুব ভালো মেয়ে। মায়ের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না। শুধু শুধু মা কেনোই বা ওর পেছনে লাগবে বলো? তাছাড়া বড় ভাবীর সাথে মায়ের ঠুকাঠুকির পেছনে মায়ের দোষ থাকলেও ভাবী সম্পূর্ণ নির্দোষ নয়। ভাবী আমার বোনেদের একটু হলেও হিংসা করতো। তাই অনিমা, নিলীমা, নিধিরাও বাঁকা চোখে দেখতো ভাবীকে। আমি আগে নিধির বিয়ে দিতে চাই, বাবা। ভাই হিসেবে ওকে বিয়ে দেওয়া এখন আমার সবচেয়ে বড় কর্তব্য।”
“ততদিন কি সেই মেয়েটা বসে থাকবে তোর জন্য? নাকি সারাজীবন কান্নাকাটি করেই জীবন পার করতে চাস? আগে নিশ্চিত হয়ে বল মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস? ওকে যত্নে রাখতে পারবি? খেয়াল রাখতে পারবি? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তবে আমাকে জানাস। নাহলে তুই কেঁদেই শেষ হয়ে যা।”
নবীন সেরাতে আর ঘুমালো না। সারারাত নানান চিন্তায় ডুবে থেকে খুব ভোরে সে মুনিয়ার ফোনে কল দিলো। আশ্চর্যজনকভাবে এতদিন ফোন না ধরা মুনিয়া আজ দুইবার কল হতেই ফোন রিসিভ করলো। নবীন ঢোক গিলে বললো,
“মুনিয়া, তুমি কি শেষবারের মতো এই বিয়েটা ভাঙতে পারবে? কথা দিচ্ছি, যদি তুমি চাও এরপর আর কোনোদিন তোমায় বিয়ে নিয়ে একটা কথাও শুনতে হবে না।”
মুনিয়া ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিলো,
“আপনি বললে পারবো।”
বাইরে তখন ভোরের আলো ফুটছে। দূর থেকে নাম না জানা পাখির কলরব ভেসে আসছে। সব ছাপিয়ে নবীনের কানে কারো ফোঁপানোর শব্দ ভেসে এলো। মুনিয়া কাঁদছে! নবীন নিজের চোখে হাত দিয়ে বুঝলো তার চোখও ভেজা।
_____________
সন্ধ্যায় রাসিফ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরতেই পূর্ণিমা পথ রোধ করলো। আশেপাশে একবার সচেতন চোখে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। ওকে এমন আচরণ করতে দেখে রাসিফ ভ্রু কুচকালো। বললো,
“কি হয়েছে? পথ আটকালি কেনো?”
“ভাই একটা গোপন খবর আছে। খুব গোপন।”
“কি গোপন কথা? এমন ফিসফিস করেই বা বলছিস কেনো?”
পূর্ণিমার কন্ঠ আরো খাদে নামলো। রাসিফের দিকে ঝুকে এসে বললো,
“আজকে নতুন ভাবীরে একটা পোলার লগে একলা একলা কথা কইতে দেখছি।”
“কি বললি?” রাসিফের মেজাজ খারাপ হলো। সে ধমক দিয়ে আবার বললো,
“এসব কি ধরনের কথা পূর্ণিমা?”
পূর্ণিমা দমে গেলো না। আগের মতোই ফিসফিস করে বললো,
“ভাই, আমার কথা বিশ্বাস করেন। দুপুরে একটা বাইকওয়ালা পোলা সাঁই কইরা আইয়া কি জানি একটা পোটলা ভাবীর হাতে দিয়া আবার সাঁই কইরা চইলা গেছে৷ ভাবী হাসি মুখে পোটলাডা নিছে।”
“কিসের পোটলা?”
“কইতারি না। প্যাকেট করা আছিলো। যেরকমডা উপহার দেয়। ভাবী কাউরে দেখায় নাই। আমি যে আপনেরে এই কথা কইছি কাউরে কইয়েন না।”
পূর্ণিমা চলে গেলো৷ রাসিফের ফুরফুরে মেজাজ অকারণে নষ্ট হলো। লিখি আর যাই হোক এমন মেয়ে নয়। বিয়ের দুইমাসে অন্তত রাসিফ এটুকু চিনেছে। কিন্তু মনের মাঝে ছোট একটা ঘুণপোকা হঠাৎই চিড়চিড় করে উঠলো। মনে পড়লো বিয়ের আগে লিখির বলা একটা কথা। সে বলেছিলো আগে প্রেম করেছে। ছ্যা’কাও দিয়েছে। ভবিষ্যতেও করতে পারে। রাসিফ দ্বিধায় পড়লো। লিখিকে আসলে সে বুঝতে পারে না। সে বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
লিখি মৃদু শব্দে গুনগুন করছিলো। রাসিফকে দেখে মিষ্টি হাসি দিলো। প্রত্যুত্তরে রাসিফ ঘর্মাক্ত শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ওকে পরখ করে বললো,
“আজ অফিস যাওনি কেনো?”
“মন চাইছিলো না।”
লিখির পাশ দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় রাসিফ একটা মিষ্টি গন্ধ পেলো। লিখির গলার কাছটায় ঝুকে এসে লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
“আজ মন খুব ভালো মনে হচ্ছে?”
“কি করে বুঝলেন?”
“এই মিষ্টি ফ্লোরাল পারফিউমটা তুমি মন খুব বেশি ভালো থাকলেই ব্যবহার করো। অন্যসময় লাইট স্মেল ক্যারি করো। যেটা খুব কাছে না আসলে বোঝা যায় না।”
কথা বলতে বলতে রাসিফ আরেকবার লিখির গলার কাছে নাক এনে লম্বা শ্বাস নিলো। কিন্তু মনটা ঠিক হলো না। কি কারণে আজ লিখির মন ভালো সেটা না জানা অবধি এই ঘ্রাণটুকু উপভোগ্য হবে না। লিখি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বললো,
“বাব্বাহ! আমার পারফিউম নিয়েও আপনার গবেষণা করা হয়ে গেছে?”
“যার গায়ের উষ্ণতার সঙ্গে মিশে ঘুমাও সে এটুকু তো জানতেই পারে।”
লিখি চোখ বড় করে তাকালো। রাসিফ তা দেখে আগের মতোই গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“এভাবে দেখার কিছু নেই। আমি পর পুরুষ নই। মন ভালো থাকার কারণটা কি জানতে পারি? যার জন্য আজ অফিসেই গেলে না?”
“তেমন কোনো কারণ নেই। একটা দিন একান্ত নিজের জন্য ছুটি নিলাম। সাজুগুজু করলাম, ঘুরতে গেলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম। একঘেয়ে জীবনের মাঝে একটু মাইন্ড রিফ্রেশ করা দরকার ছিলো।”
“এই কয়দিনেই জীবন একঘেয়ে হয়ে গেলো?”
“আগে বাপের বাড়ি থাকতাম এখন শ্বশুরবাড়ি থাকি। এছাড়া জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন পেলাম না। একঘেয়ে হলো না?”
লিখি খাটে হেলান দিয়ে বসে কথাটা শেষ করলো। চোখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে তাকালো রাসিফের দিকে। রাসিফ কি বুঝলো কে জানে, কিছুক্ষণ নিরব চোখে তাকিয়ে থেকে বাথরুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা আটকালো। হুট করে এমন আচরণের কিছুই বুঝলো না লিখি। বাথরুম থেকে ফিরে রাসিফ সরাসরি লিখির মুখোমুখি দাঁড়ালো।
“লোকটা কে?”
“কোন লোক?” লিখি ভ্রু কুচকালো।
“যার জন্য একঘেয়ে জীবনে রিফ্রেশমেন্ট এলো, সে।”
“আবল-তাবল কি বলছেন?”
“বাইকওয়ালা এসে রিফ্রেশমেন্ট এর পোটলা দিয়ে গেলো আর বলছো আবল-তাবল বলছি? কি গিফট দিয়েছে বলোতো? তার বাইকে করেই বুঝি ঘুরেছো? শুধু ঘোরাঘুরি পর্যন্তই আছো নাকি আরো কিছু ভাববে?”
রাসিফের ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে কপালে বিছিয়ে আছে। চোখে হিংসা ও তাচ্ছিল্যের উপস্থিতি স্পষ্ট। দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে পারলে এক্ষুণি লিখির গায়ের ওপর উঠে আসবে সে। লিখি কিছুক্ষণ শীতল চোখে তাকিয়ে রইলো। এরপর একটা প্যাকেট এনে রাসিফের হাতে দিয়ে তিক্ত গলায় বললো,
“ওটা ডেলিভারি ম্যান ছিলো। পার্সেল দিতে এসেছিলো। হোম ডেলিভারি দিতে নিশ্চয়ই টেম্পু করে আসবে না! সারাজীবন আহা’ম্মকই থাকবেন আপনি।”
লিখি বেরিয়ে গেলো। রাসিফ আহা’ম্মকের মতোই দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। হাতের বড় প্যাকেটটার একাধিক স্কচটেপ খুলে, বাবল র্যাপ সরিয়ে ভেতর থেকে একটা কাপল সেট পেলো। যার থেকে ম্যাচিং পাঞ্জাবী-শাড়ি, কাপল ওয়াচ আর পারফিউম বেরোলো। রাসিফ সেগুলো দেখে বিড়বিড় করে বললো,
“এটা কি আমাদের জন্য আনিয়েছিলো?”
“মোটেও না, বাইকওয়ালার সাথে নতুন সংসার পাতবো বলে আনিয়েছি।”
লিখি ছো মেরে জিনিসগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এরপর লিখি আর ঘরেই ঢুকলো না। রাসিফ সারাক্ষণ ছুকছুক করেও তার সাথে কথা বলতে পারলো না। এমনকি রাতে এক ঘরে থাকলো পর্যন্ত না। রুনির শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না বলে বাহানা দিয়ে তার কাছেই রয়ে গেলো লিখি। বাড়ির সবাই কিছুটা টের পেলেও চুপ করে রইলো। রাসিফ ফাঁকা বিছানার কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে আপার রুমের সামনে গিয়ে হাটাহাটি শুরু করলো। পূর্ণিমা সিরিয়াল দেখছিলো বসার ঘরে। রাসিফকে দেখে টিভি বন্ধ করে এসে বললো,
“ভাইয়ের কি কিছু লাগবো? নাইলে ঘুমাইতে যাইতাম।”
রাসিফের ইচ্ছে করছে পূর্ণিমাকে হাত-পা বে’ধে বাড়ির বাইরে ফলে আসতে। গোয়েন্দাগিরি করলো কিনা ডেলিভারি ম্যান এর ওপর! কোন কু’ক্ষণে রাসিফ ওর কথায় কান দিতে গিয়েছিলো! এখন তো রাগ ভাঙানোর সুযোগটাও পাচ্ছে না। সে গজগজ করে বললো,
“তোর জন্য যদি আমার সংসার বিগড়েছে মাথায় তুলে আছা’ড় মারবো বলে দিলাম। হয় তুই সিরিয়াল দেখে সংসারে কূট’নামি করা বন্ধ করবি নয়তো কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবো। যা ভাগ সামনে থেকে।”
রাসিফকে বারবার আসা-যাওয়া করতে দেখে রুনি বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বললো,
“দরজার সামনে চোরের মতো ঘুরাঘুরি করছিস কেনো?”
“তোমার ঘরে আমার একটা পার্সেল আছে। পেয়ে গেলেই চলে যাবো।”
লিখি ভেতর থেকে বললো,
“বলে দাও আপা, পার্সেল ডেলিভারি ম্যান-এর। গেলে বাইকওয়ালার কাছে যাবে। কোনো কাপড়ওয়ালার কাছে যাবে না।”
চলবে…