ভালোবাসারা ভালো নেই পর্ব ২৮

0
931

#ভালোবাসারা_ভালো_নেই
#অজান্তা_অহি
#পর্ব__২৮

এখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল নাকি কয়েক মিনিটের রাস্তা। সেই সময়টুকু মঈন চাচা বেঁচে রইলো না। অভিমান করে চিরতরে চলে গেল। চাচা গাড়ির সম্মুখে ড্রাইভিং সিটে বসা ছিল। চলন্ত বাস সামনে থেকে ধাক্কা মেরেছে। যার দরুণ তার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

চাচাকে নিয়ে গাড়ি উল্টো পথে ঘুরল। নওশাদ আঙ্কেলের কাছে ফোন এলো। চাচার লাশ কী করবে? আঙ্কেল গ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দিল। বড় মা তখন বাঁধা দিলেন। জানালেন, তিনি শেষবারের মতো চাচাকে দেখতে চান। সালেহা খালা জানালো, সে-ও দেখতে চায়। আমিও চাচাকে দেখতে চাই। সপ্তাহ তিনেক আগে তাকে শেষবার দেখেছিলাম। সামান্তা আপুর সাথে আমায় দেখতে এসেছিল। সেদিন আমার নতুন সংসার দেখে ভীষণ খুশি হয়েছিল। প্রায় কেঁদে দিয়েছিল। এতো ভালো একজন মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল? ভালো মানুষেরা, আপন মানুষেরা বুঝি বেশিদিন কাছে থাকে না? পাশে থাকে না?

নওশাদ আঙ্কেল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলল। পরে জানালো চাচাকে এখানে আনা হবে না। দেখার মতো কিছু নেই। উল্টো সবাই আরো কষ্ট পাবে। চাচার আঘাত মাথা আর মুখের দিকে বেশি লেগেছে। এটা শুনে সালেহা খালার কান্নার গতি বেড়ে গেলো। আমি সরে গিয়ে বারান্দার পাশে দাঁড়ালাম। কষ্টে বুকের ভেতর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ফের প্রিয়জন হারানোর বেদনা আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। চাচার পরিবারের কী হবে এখন? ছেলেমেয়ে গুলোর মাথার উপরের শেষ আশ্রয় হারিয়ে গেল। ওরা কঠিন জীবনযুদ্ধ পাড়ি দিবে কী করে? শুনেছি চাচার বিয়ের উপযুক্ত একটা মেয়ে আছে। তার জীবনটা কী আমার মতো হবে? তবে কী দুঃখে ভরা আরেকটা জুঁইফুলের জন্ম নিল?

হুঁ হুঁ করে কাঁদছিলাম আমি। সোহরাব কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। সে ক্ষীণ সুরে বলল,

‘মঈন চাচাকে দীর্ঘদিন হলো চিনি। বড় ভালো মানুষ ছিল।’

তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলাম না। আলগোছে চোখ মুছে নিলাম। হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে দৃষ্টি সুদূর প্রসারী করলাম। রাতের শহর অন্যরকম লাগছে। শহুরে বাতিগুলো কোথাও জ্বলছে। কোথাও কোথাও আবার নিভে গেছে। আমি সে বিষণ্ণ শহরে দৃষ্টি রেখে বললাম,

‘বাড়ি যাবেন না?’

‘এখন? কিভাবে যাবো? সকাল হোক। তোমায় রেখে আসবো।’

‘আচ্ছা।’

সোহরাব চলে গেল। আমি তীব্র মন খারাপ নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার বুকের ভেতর কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে সোহরাব টের পেলো না। সে আজাদ আঙ্কেলের স্বাস্থ্য নিয়ে অতিশয় ব্যস্ত। আমি মেঝেতে বসে পড়লাম। মুখে আঁচল চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। মঈন চাচার পরিবার এই সংবাদ নিশ্চয়ই শুনেছে। তারা সহ্য করবে কিভাবে? রোগ শোকে ভুগে মৃত্যু ঘটলে তবুও মনকে প্রবোধ দেওয়া যায়। এমন মৃত্যু কারো কাম্য? আহারে জীবন! ঝরা ফুলের মতন। ঝরে পড়তে কতক্ষণ!

লম্বা বারান্দার দক্ষিণ দিকের কেবিনের সামনে ভিড়। ওখানেও কেউ একজন অসুস্থ। তার পরিবার স্বজন ভিড় করে আছে। হাসপাতালে আসার পর থেকে দেখছি। হঠাৎ করে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে এলো। কেঁদে উঠলেন মা বয়সী এক মহিলা। তার সাথে সাথে আরো অনেকগুলো কন্ঠ আর্তচিৎকার দিয়ে উঠলো। বুঝলাম অসুস্থ ব্যক্তিটি আর নেই। সবাইকে অপেক্ষায় রেখে পরপারে চলে গেছে। ওনাদের কান্নার শব্দ বুকে তীরের মতো বিঁধছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। পাশ থেকে কেউ নাম ধরে ডাক দিল।

‘জুঁই?’

ঝাপসা চোখে তাকিয়ে জাবিরকে দেখতে পেলাম। ছেলেটাকে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে। বুঝতে পারলাম আঙ্কেলের সংবাদে মুষড়ে পড়েছে। সে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পড়লো। বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘তুই হাসপাতালে রয়ে গেছিস কেন? কত মানুষ রয়েছে। তোর কী কাজ এখানে?’

‘সালেহা খালা যেতে দিচ্ছিল না।’

জাবির কিছু বললো না। তার কন্ঠের সেই পুরোনো অধিকার বোধ এখনো রয়ে গেছে। আমি যে অন্য কারো বউ সেটা হয়তো ভুলে গেছে। আমি বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। একেবারে নারায়নগঞ্জ। আমার নতুন ঠিকানায়। কিন্তু খালা আর সামান্তা আপু যেতে দিল না। কতদিন পর আমায় দেখছে। আমি সাথে থাকলে নাকি ভরসা পায়। তাছাড়া মঈন চাচার অবস্থা ভালো ছিল না বলে আমিও জোর করিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাড়ি যাওয়া উচিত ছিল। এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে। উঠে দাঁড়ালাম। জাবির হঠাৎ আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বলল,

‘শাড়িতে তোকে কেমন বড় বড় লাগছে জুঁই। সত্যি সত্যি বউ বউ লাগছে।’

বলার মত কিছু পেলাম না। জাবিরকে রেখে হাঁটা ধরলাম। সোহরাব দেখতে পেলে আবার কী না কী মনে করে। কেবিনের সামনে এলাম। দুপুরের মতো অতটা ভিড় নেই। মোটামুটি সবাই চলে গেছে। দাদী এসেছিল রাতে। কিন্তু তাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। ডাক্তার ঢুকতে দিচ্ছে না। দুয়েকজন জরুরী ব্যক্তি ছাড়া কারো ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। ঢাকা মেডিকেলের একজন নামিদামি ডাক্তার সার্বক্ষণিক রয়েছে। দেখাশোনা করছে। তবুও আঙ্কেলের অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।

ফাইজান ভাই সন্ধ্যারাতে চলে এসেছে। এক কোণায় মাথা নত করে বসে আছে। তার সাথে আমার এখনো কথা হয়নি। চাচার অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু তিনি সব উদ্বিগ্নতা ছাড়িয়ে চলে গেল।

কোনরকমে রাতটুকু পেরুলো। অস্থিরতা নিয়ে একটা নতুন ভোর দোরগোড়ায় উঁকি দিল। সবাই ভয়ে ভয়ে ছিল সমস্ত রাত। ভেতর থেকে কোনো দুঃসংবাদ আসে কিনা! রাতের অন্ধকার দূর হয়েছে। আঙ্কেলের অবস্থা আগের মতই। কোনো উন্নতি হয়নি। আমার আর ভালো লাগছে না। অস্থির অস্থির লাগছে। ভেতরে হাঁসফাঁস করছে। হাসপাতালের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। সোহরাবকে ইশারায় কাছে ডাকলাম। বললাম,

‘বাসায় ফিরবেন না? ভালো লাগছে না আমার।’

‘থাকো আরেকটু। দুপুরে বের হই।’

‘না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

বলে মাথা নিচু করলাম। কণ্ঠ বুঁজে আসছে আমার। চোখে পানি টলটল করছে। সোহরাব বুঝতে পারল। বলল,

‘আচ্ছা। চলো।’

খানিক বাদে বের হলাম। কাউকে বলে আসিনি। সালেহা খালা নেই। সকাল বেলা কাজ করার জন্য বাড়ি গেছেন। আর কাউকে বলার মত পেলাম না। সবার অগোচরে বেরিয়ে এলাম। সিঁড়ির কাছে রাজ ভাইয়ার চোখে চোখ পড়লো। আঁধার মুখে বসে আছে। কাল রাতে আমাদের সাথে হাসপাতালে এসেছে। এক সেকেন্ডের জন্য বের হয়নি। আবার আঙ্কেলকে যে দেখতে যাবে সেটাও করেনি। রাজ ভাইয়া আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সোহরাবের দিকে তাকালো। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আর তার পানে তাকানোর সাহস হলো না। সোহরাবের পিছু পিছু এগিয়ে চললাম।

আমায় বাসে উঠিয়ে দিয়ে সোহরাব চলে গেল। কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না। তার নাকি হাসপাতালে থাকা জরুরী। আর কোনো পথ খোলা নেই। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে তার থেকে বিদায় নিলাম।

ফেরার পথে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম। একটা মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। কোনদিন আর দেখতে পাবো না। দুটো কথা বলতে পারবো না। কি কষ্টকর। মানুষের মৃত্যুর চেয়ে নিষ্ঠুর কিছু দুনিয়াতে নেই।

_________

সোহরাব বলেছিল বাসায় ফিরে কল দিতে। তাকে জানাতে যে সুস্থ মতো ফিরেছি। কিন্তু কল দিলাম না। মনের কোনো কোণে জিদের সূক্ষ্ম এক স্রোত তোলপাড় করছিল। বাসায় ফিরে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

ঘুম আসছিল না। মাথার মধ্যে এলোমেলো চিন্তার বহর। মঈন চাচার লাশ এতক্ষণে গ্রামে পৌঁছে গেছে। তার পরিবারের কী অবস্থা? নিশ্চয়ই ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের কথা ভেবে বিছানায় অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলাম। নাহার আপা এলো একটু পরে। ফোনে কথা বলতে বলতে। আমি চোখ মুছে উঠে বসলাম। আপা ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে বলল,

‘হ্যাঁ আসছে তো। শুয়ে পড়েছে। এই নে, কথা বল।’

হাতে ফোন ধরিয়ে আপা বের হয়ে গেল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কানে ধরে হ্যালো বললাম। প্রতিত্তরে সোহরাবের উৎকন্ঠিত সুর শোনা গেল।

‘জুঁই ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছেছো? তোমায় বাসে তুলে দেওয়ার পর মনে হলো তোমার কাছে তো ফোন নেই। রাস্তায় যদি কোনো অসুবিধে হয়? চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।’

‘কোনো অসুবিধা হয় নি।’

‘ভেরি গুড। জীবনে প্রাকটিক্যাল হতে হবে। অনেক কিছু শিখতে হবে। রাস্তাঘাট সম্পর্কে জানতে হবে। একা চলাফেরা করা শিখতে হবে। বুঝতে পেরেছো?’

‘হ্যাঁ।’

‘এখন গোসল করে খেয়ে নাও।’

কিয়ৎক্ষণ কথা বললাম না। বুকে অভিমান জমেছে। একটু একটু করে জমতে জমতে ইতোমধ্যে পাহাড় ছুঁই ছুঁই। কেন জানি মনে হচ্ছে সোহরাবের জায়গা অন্য কেউ হলে কখনো তার বউকে একা ছাড়তো না। এতটা পথ একা আসতে দিতো না। অভিমান চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আপনি কখন আসবেন?’

‘বলতে পারছি না। রাতে ফিরতে পারি। আবার নাও ফিরতে পারি। আমার থাকার জায়গার অভাব নেই। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও। রাখছি।’

সোহরাব ফোন রেখে দিল। উঠে গিয়ে ফোনটা নাহার আপাকে দিয়ে এলাম। আমার গোসল হলো না। খাওয়া হলো না। কেমন শীত শীত লাগছে। জ্বর জ্বর অনুভূত হচ্ছে। রুমে ঢুকে গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।

___________

বর্ষার মৌসুম এসে গেছে। আকাশ ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়। কখনো রোদ ঝলমলে। আবার কখনো কালো মেঘে ছেয়ে আসে চারিদিক। আজ দুপুর বেলা আকাশ কালো হয়ে এলো। সূর্য তল্পিতল্পা গুটিয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। এখন মেঘকন্যার অশ্রু বিসর্জনের অপেক্ষা।

ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া হয়েছে। আনতে যেতে হবে। কিন্তু যেতে পারছি না। ঘরে কেউ নেই। নাহার আপা আশাকে আমার কাছে রেখে কাজে গেছে। সোহরাবও ফেরেনি। ইদানীং সোহরাবের কাজগুলো বুঝে উঠতে পারি না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সোহরাব তত ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দিনরাত ঢাকাতে কাটাচ্ছে। সপ্তাহে দুদিন বা তিনদিন আসে। রাতটুকু থেকে ভোরবেলা আবার চলে যায়।

আজাদ আঙ্কেলের অবস্থা একটু ভালো। একটা সম্পূর্ণ সপ্তাহ আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এখন নরমাল কেবিনে নেওয়া হয়েছে। একেবারে সুস্থ হয়ে উঠেনি। এখনো কথা বলতে পারে না। হাঁটাচলা করতে পারে না। শোচনীয় অবস্থায় আছেন। সেটা নিয়ে সোহরাবের দুঃখের সীমা নেই। শুনেছি চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার কথাবার্তা হচ্ছে। অবস্থার আরেকটু উন্নতি হলে বিদেশ নিয়ে যাবে।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মাথার উপরে ছাদ। কয়েকটা সিঁড়ি অতিক্রম করলে কাপড় গুলো আনা যায়। সোহরাবের নতুন কিছু শার্ট শুকাতে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। আমি আশাকে কাছে টেনে বললাম,

‘আশা, ঘরের মধ্যে বসে থাকো। আমি কাপড় নিয়ে আসি। হুঁ?’

আশা রাজি হলো না। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আধো গলায় বলল,

‘আমিও ছাদে যাবো।’

ওকে নিয়ে ছাদে গেলে আবার ঘর খালি থাকে। পরক্ষণে মনে হলো কয়েক মিনিটের ব্যাপার। ছাদে যাবো আর আসবো! এইটুকু সময়ে কী আর হবে! আশাকে কোলে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি মাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম। বৃষ্টির ফোঁটা বড় হয়ে গেছে। গুড়ি বৃষ্টি আর নেই। আশাকে কোল থেকে নামিয়ে সিঁড়ির মাথায় দাঁড় করালাম। বললাম,

‘এখানে দাঁড়িয়ে থাকো। নড়চড় করবে না একদম? কেমন?’

আশা মাথা নাড়ল। ওকে রেখে বৃষ্টির মধ্যে নেমে পড়লাম। ছুটোছুটি করে কোনরকমে কাপড় গুলো হাতে জড়ো করতে আশার চিৎকার ভেসে এলো। পেছন ঘুরে দেখি মেঝেতে পড়ে গেছে। দৌঁড়ে গিয়ে টেনে তুললাম। মুখটা উচুঁ করতে মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো। আশার ঠোঁটের কিনার কেটে গেছে। বিন্দু বিন্দু রক্ত বেরিয়েছে। বুকের ভেতরটা আঁতকে উঠল। কোলে জড়িয়ে ওকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে এলাম। গায়ের ময়লা ঝেড়ে বার বার কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম।

আশার কান্না থামলো না। অনেক ব্যথা পেয়েছে। বুকের ভেতর ধড়াস ধড়াস করছে আমার। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। এই কাটা সহজে তো যাবে না। নাহার আপাকে কী জবাব দেবো? ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো।

ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। সামনে সোহরাবের কাঁদাযুক্ত জুতা দেখা যাচ্ছে। মুহূর্তে চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সোহরাব দেখলে কী করবে? আশা তখনো কাদঁছে। ঘরে ঢুকতে সোহরাবকে নজরে এলো। ড্রয়িং রুমে পেছন ঘুরে বসে আছে। অর্ধ ভেজা শার্ট সোফায় খুলে রেখেছে। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বলল,

‘ঘর খোলা রেখে কই গেছিলে?’

‘ছাদে কাপড় আনতে।’

ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম। সোহরাব দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন ঘুরে চোখমুখ কুঁচকে বলল,

‘আশা কাদঁছে কেন?’

‘ছাদের মেঝেতে পড়ে….’

অসমাপ্ত বাক্য শেষ করতে পারলাম না। সোহরাব রক্তচক্ষু নিয়ে ছুটে এলো। ঠাস করে গালে চ’ড় বসিয়ে দিল। আশাকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অশ্রাব্য এক গালি দিল। ঘরে যেতে যেতে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো সে। আমি বিমূঢ় হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। বোধবুদ্ধি হারিয়ে গেছে যেন। মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি। সোহরাব আমার গায়ে হাত তুললো? চ’ড় মারলো? এইতো সেদিন পরিচয় ছেলেটার সাথে। লজ্জায় কথা বলতে পারছিলাম না। সে কতো সহজ হয়ে কথা বলছিল। আশ্বাস দিচ্ছিলো। আজ ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে মারলো?

ধীরপায়ে বাথরুমে এগিয়ে গেলাম। দরজা বন্ধ করে কাঁদলাম। সংসার জীবনের মিষ্টি, মধুর সম্পর্ক গুলো কী এভাবেই নষ্ট হয়? হয়তো! বড় আপার যখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছিল তখন আপা কতো সুখে ছিল। দুলাভাই আপার জন্য পাগলপ্রায়। চোখের আড়াল হয়ে দেয় না। দুদিনের জন্য আপা বাড়ি আসলে দুলাভাই এসে হাজির হতো। অনুনয় বিনয় করে নিয়ে যেতো। কিন্তু বিয়ের বছর ঘুরতে সেই মিষ্টি সম্পর্ক তেতো হয়ে গেল। যত দিন যেতে লাগলো দুলাভাই যেন অন্য মানুষ হয়ে গেল। একপর্যায়ে আপার কপাল পুড়লো। পেটে সন্তান নিয়ে ডিভোর্সের কাগজ হাতে পেল।

আমারো কী এমন হবে? আপার মত কপাল পুড়বে? ডুকরে কেঁদে উঠলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here