#প্রেমবিলাস
part–10
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
আলিয়া বাসায় ফিরল বিকেলের পর পর। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে ঠিক সেই সময়। মহিলাটাকে পপুলারে নিয়ে গিয়েছিল সে। ডেলিভারি যাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়। ছেলে হয়েছে। আলিয়া তাও সেখানেই ছিল। মহিলার জ্ঞা ফিরল। সে আলিয়ার সাথে কথা বললো৷
তারপর তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আলিয়া বাসায় ফিরল। বাবাকে অনেক অনুরোধ করে হাসপাতালের বিলের টাকা চেয়েছিল সে।
জসীম সাহেব প্রথমে টাকা দিতে মানা করে দিয়েছিলেন। পরে আলিয়া কান্নাকাটি করে টাকা উদ্ধার করেছে বাবার কাছ থেকে।
বাসায় ফিরতেই বাবা আর ভাইয়ের সম্মুখীন হলো আলিয়া।
জসীম সাহেব গম্ভীর মুখ করে বলে, পেশেন্ট কেমন আছে?
আলিয়া শান্ত গলায় বলে, ভালো। ছেলে হয়েছে৷ তোমাদের জন্য মিস্টি এনেছি৷ তোমার পছন্দের কালোজাম। প্রিচে করে এনে দিব?
–দাও।
আরহান তার বাবার দিকে তাকালো এবং কঠিন গলায় বলে, বাবা, আলিয়া কিন্তু কাজটা ঠিক করেনি৷ আমরা কিন্তু ওই মহিলাকে চিনি না।
জসীম সাহেব সহজ গলায় বলে, মানুষ কে সাহায্য করতে হয় আরহান।
আরহান বলে,ওনাকে হেল্প করেছো এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই৷ আল্লাহ হেদায়েত দিলে ভবিষ্যতে আরো মানুষের সাহায্য করব। কিন্তু উনি কে?কোথায় থাকে? আর আলিয়াই বা তাকে কিভাবে চিনল?
ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেল আলিয়া। এসব প্রশ্নের উত্তর কি দিবে সে? সব সত্য বলে দিবে? মনে হয় না এটা উচিত হবে।
জসীম সাহেব আলিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে, দাড়িয়ে আছো কেন মা? যাও ফ্রেস হয়ে এসে আমাকে মিস্টি খেতে দাও। সঙ্গে এক কাপ চা দিও। আর আরহান, আমার মেয়ে কিছুটা মাদার তেরেসার মতো! স্বভাবটা আর কি!, মাদার তেরেসা কিন্তু অপরিচিত মানুষ কে হেল্প করত। আজকে থেকে আলিয়ার নতুন নাম, আলিয়া ব্রাকেটে মাদার তেরেসার অনুগত শিক্ষার্থী।
আরহান না হেসে পারল না।
আলিয়া সবটা শুনে হালকা হেসে তার রুমে গেল।
সন্ধ্যা বেলা এখন। সকালে একবার গোসল করেছে আলিয়া তবুও এই অবেলায় সে গোসল করতে গেল। তাদের সাথে গিজার আছে। তাই গরম পানি দিয়ে বেশ লম্বা সময় নিয়ে হট শাওয়ার নেয় সে। চুলে দশ মিনিট ধরে শ্যাম্পু ও করে৷
আলিয়া গোসল সেরে বের হতেই দেখল, বাবা তার রুমে বসে আছে৷
সে খানিকটা চমকে গেল। বাবা তো কখনোই তার রুমে আসে না তেমন একটা। আসলে ও এভাবে বসে থাকে না৷
মেয়েদের বিয়ে ঠিক হলে, বিয়ের দিন-তারিখ যতো ই ঘনিয়ে আসে তারা বিভিন্ন আজব এবং অস্বাভাবিক দৃশ্য বা ঘটনার মধ্যে দিয়ে যায়।এটা মূলত তাদের পরিবারের সদস্য করে থাকে। সহজ ভাষায় তাদের ফেয়ার ওয়েল দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি।
জসীম সাহেব মেয়েকে বের হতে দেখে, কিরে? এই বেলায় গোসল করলি কেন? শীতের দিন! জ্বর চলে আসবে তো রে মা।
–মাথা ব্যথা করছিল তাই শাওয়ার নিলাম৷ এখন ভালো লাগছে।
–আয় বস। তোর জন্য নাস্তা নিয়ে এলাম৷ মিস্টি আর ফুলকপির বড়া। ফুলকপির বড়া বেসন দিয়ে তেলে ডুবিয়ে ভাজা হয়েছে। গরম আছে৷ এখন ই খেয়ে নে।
আলিয়া বাবার পাশে বসে বড়া তুলে নিল। সত্যি খেতে অসাধারণ হয়েছে এই ফুলকপির বড়া!
আলিয়ার মাথায় একটা অদ্ভুত বিষয় হানা দিচ্ছে তা হলো,
এতো বছরে বাবা কোন দিন তার রুমে আসেনি৷ এভাবে নাস্তা-পানি দেয় নি। আজকে হুটহাট এমন ধরনের একটা কাজ করলেন কারন বাবার মনে হলো, তার মেয়ের বিদায় হয়ে যাবে কিছুদিন পর। তাই একটু বেশি আদিখ্যেত করি৷ কিন্তু অনেক মা-বাবা ই বুঝতে অক্ষম এই এক্সট্রা কেয়ারটা মেয়ের মনে কাটা গায়ের নুনের ছিটার মতো লাগে। নিজেকে মেহমান ভাবতে শুরু করে ফেলে তারা।
জসীম সাহেব গলা খাকিয়ে বলে, মা শোন?।
বাবার গলায় আলিয়া অনুরোধ খুজে পেল। সে খাওয়া থামিয়ে বাবার দিকে তাকালো।
তিনি বিনীত গলায় বলে, আয়ানের ইউএসএ তে স্কলারশিপ হয়েছে৷ ওর ভিসা-পাসপোর্ট সব রেডি। তিন মাসের মধ্যে ই ও চলে যাবে। আয়ান চাচ্ছে বিয়েটা এই তিন মাসের মধ্যেই হোক। তারপর ও তোর একটা ব্যবস্থা করবে।
আলিয়া ভ্রু কুচকে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, আমার কি ব্যবস্থা করবে?
–আয়ান চাচ্ছে তোকে নিয়ে ইউএসএ শিফট হবে পারমানেন্টলি।
আলিয়া থ মেরে গেল। সে রিনরিনে গলায় বলে, আমি না এর আগেও বলেছি দেশের বাইরে যাবনা। ও তো আমার শর্তে রাজী ছিল। তাহলে এখন এমন নাটক করছে কেন? আমি ওর সাথে বিদেশে গেলে আমার ডিগ্রি কি ও নিবে?
–ওইখানে গিয়ে পড়বি!
–বাবা৷ ইউরোপ কান্ট্রি তে ওদের মাদার ল্যাংগুয়েযে ডাক্তারি পড়ায়। আমি ওখানে গিয়ে কুল পাব না। হয় এমবিবিএস পড়ে যেতে হবে নাহলে ইন্টারমিডিয়েট এর পর যেতে হত। এই সময় আর সম্ভব না৷ ওকে বলে দিও আমি যাব না।
— আয়ান বলছিল যে ও যেহুতু স্কলারশিপ পেয়েছে তাই ওই দেশে একটু চেষ্টা করলেই ভালো চাকরি পেয়ে যাবে। ভালো স্যালারি ও হবে নিশ্চয়ই। তখন আর তোকে জব করতে হবে না।
— ডাক্তার রা জব করে না। অসুস্থ মানুষ কে সেবা দান করে। জব করা আর ডাক্তাররা ওয়াডে ওয়াডে গিয়ে যেই সার্ভিস দেয় –এই দুইটার মধ্যে অনেক পাথক্য আছে। আর ওকে বলো যে কোন গার্মেন্টস এর মেয়েকে বিয়ে করতে। তাইলে সেই মেয়ে ইজিলি সব ছেড়ে ওর পিছে পিছে দৌড়াবে৷ আমি পারব না যেতে বিদেশ। এখন তুমি যাও। কালকে কথা হবে।
জসীম সাহেব নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। একটা বয়স আসে যখন বাবা দের কে ছেলে-মেয়েদের কথা শুনতে হয়!
সে চাইলেই আলিয়ার গালে কষে দুটো থাপ্পড় মারতে পারত। কিন্তু তিনি এটা করতে পারেননি। বরং চুপ থাকলেন। সম্ভবত সেও ওই বয়সটায় চলে এসেছেন।
আলিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। তার গা কাপছে। রাগে গা কাপছে। সে আচমকা কেদে দিল।
আলিয়ার এই স্বভাবটা ছোটবেলার। রাগ-ক্ষোভ, দুঃখ-সুখ, অভিমান, সবকিছুরই পরিনামেই সে কেদে দিবে। রাগ লাগলে কাদবে, কষ্ট লাগলেকেও কাদবে। মেডিকেলে যেদিন চান্স পেল, রেজাল্ট শিটে নিজের নাম দেখে ভ্যা করে কেদে দিয়েছিল সে!
আলিয়া চোখ মুছল। আপাতত সে আয়ানকে মাথা থেকে সরাতে চাচ্ছে। ভালো কিছু, মজার কিছু ভাবা যায়।
কি ভাববে? মাথায় কিছুই আসছে না৷ হুট করে সকালের কথা মনে পড়ে গেল। শ্রাবণের আকা স্কেচটার কথা মনে পড়তেই কেমন যেন মরিয়া হয়ে উঠে আলিয়ার মন!
আচ্ছা মেয়েটা যদি সে হয়, তাহলে ছেলেটা কি শ্রাবণ?
এই চিন্তা মাথায় আসতেই আলিয়া বিছানার চাদর খামচে ধরে। শ্রাবণ তাকে নিয়ে কি ভাবে? শ্রাবণের কল্পনায় আলিয়া কেমন? ওর প্রেমিকা?
আজকে যেই মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল, ওরা খুব দরিদ্র ছিল। আলিয়া যখন পেমেন্ট পে করে তখন মহিলার স্বামীটা কৃতজ্ঞতায় কেদে দিয়েছিল। সে এর আগে কোন পুরুষকে কোন নারীর জন্য এভাবে কাদতে দেখে নি। আলিয়া মনে মনে ভেবেই নেয়, অসুস্থ মহিলাটার স্বামী ভাগ্য চব্বিশ ক্যাডেট সোনার মতো!
লোকটা তার সদ্য জন্মানো পুত্র সন্তান কে আলিয়ার কোলে তুলে দিয়ে বলে, আপা আপনি আমার ছেলের একটা নাম দিয়ে আমাদের ধন্য করুন।
আলিয়া কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা না করেই বলে দিয়ে আসল, তাদের ছেলের নাম শ্রাবণ রাখতে!
★★★
তিন দিন পর,
দুপুরে ভাত ঘুম দিয়েছে শ্রাবণ। হুট করে সোনা দাদি এসে তাকে ডাকতে লাগলো।
–এই শ্রাবণ এই! উঠ।
শ্রাবণ ঘুম ঘুম চোখে দাদির দিকে তাকিয়ে বলে,কি হইসে? ডাকছো কেন?
— তোর ফোন আসছে।
— কি আসছে?
–ফোন। একটা মেয়ে কল দিসে৷
শ্রাবণ লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। কে সে ই মেয়েটা? তার তো ফোন নেই। কে তাকে কল দিল?
শ্রাবণ প্রশ্ন করে, কার ফোনে কল দিসে?
দাদি ফোন এগিয়ে দিল আর বলে, রুনা দের নাম্বারে৷
শ্রাবণ বুঝে যায় মেয়েটা সম্ভবত আলিয়া। কারন রুনার নাম্বার আলিয়া নিতে পারে। রুনা হলো সেই মহিলা যাকে আলিয়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল৷
শ্রাবণ কল ব্যাক করে। তিন বার রিং হতেই আলিয়ার মধুর কন্ঠ শ্রাবণের কানে আসল৷
সে চোখ বুঝে নেয়৷ অতিরিক্ত সুন্দর কোন জিনিস যখন চারপাশে থাকে তখন চোখ খোলা রাখা দায় হয়ে পড়ে!
–হ্যালো? শুনতে পাচ্ছো? (আলিয়া)
–হুম। (শ্রাবণ)
–ঘুমাচ্ছিলে কি? ( আলিয়া)
–হ্যা৷
–ডিস্টার্ব করলাম?
–না। কেমন আছো আলিয়া?
আলিয়া ফোনের ওপাশ থেকে চমকে উঠে। শ্রাবণ কতো সহজ গলায় তাকে নাম ধরে ডাকছে। যেন তারা কতো দিনের পূর্ব পরিচিত!
আলিয়া বলে, ভালো। তুমি?
–আমিও ভালো। কি মনে করে আমাকে কল দিলে?
–এম্নি! ব্যস্ত তুমি?
–কিছুটা।
— কি কাজ তোমার?
–কেন পাগলদের কাজ থাকতে পারে না?
–সেটা মিন করিনি। আমি তোমার বাসায় আসতে চাই। আসব?
— তোমার জন্য কুঞ্জি ভিলার দরজা আজীবন খোলা। যদিও বা এই বাসার কোন মেইন গেট নেই। কথার কথা বললাম।
— তোমার ওই আত্মীয় যেন থাকে৷ ওনার সাথে ও দেখা করতে চাই৷
— ভালো কথা মনে পড়েছে।
–কি?
–আসার সময় স্ফিগম্যামোমিটার এনো।
–কার প্রেশার? তোমার?
–না। আমার দাদির। যার বাসায় আছি৷
–ওহহ।
— আরো একটা কথা, আসার সময় দই আনতে পারবে? আমার খুব দই খেতে মন চাচ্ছে। তাও আবার ভাত খাওয়া প্লেটে দই খেতে ইচ্ছা করছে৷
–ভাত খাওয়া প্লেটে দই খাওয়ার ব্যাপার টা বুঝলাম না!
— আসো। লাইভ দেখায় দিব৷
–আচ্ছা। বিকেলে আসব।
–শোন? (শ্রাবণ)
–কি?
–আসার সময় মাথায় ওড়ান দিয়ে আসবে। রাখলাম।
শ্রাবণ ফোন কেটে দেয়। তারপর শ্রাবণ মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
সূর্য থাকতে থাকতেই আলিয়া কুঞ্জি ভিলা পৌছে যায়। আজকের পরিবেশটা এতোটা নোংরা লাগছে না। সে ১৮ নং বাসায় গেল। প্রথমেই চোখ পড়ল গাছ তিনটার দিকে৷ অদ্ভুত ব্যাপার! গাছ তিনটা একদম তরতাজা হয়ে আছে৷ তিন আগেই কেমন শুকিয়ে গিয়েছিল।
আলিয়া ভিতরে ঢুকে পড়ে। আজকেও গেট খুলা। শ্রাবণ বসে ছিল। আলিয়াকে দেখে উঠে দাড়ালো এবং বলল, আজকে গাছে পানি দিবে না?
আলিয়া শ্রাবণের দিকে তাকালো। ছেলেটা দেখতে সুন্দর। কিন্তু চেহারায় রোদে পোড়ার দাগ লেগে গেছে। আগে ফর্সা ছিল তা বোঝা যায়। কিন্তু এখন গায়ের রঙ ময়লাটে। সম্ভবত যত্নের অভাবে এই দশা! ডান চোখের একদম পাশেই একটা ছোট্ট কাটা দাগ। সম্ভবত ছোট্ট বেলায় পড়ে যাওয়ায় ব্যথা পেয়ে লেগেছিল৷ সিলাই না করার জন্য দাগ রয়ে গেছে৷
শ্রাবণ আলিয়ার কাছে এসে দাড়ালো। এবং আস্তে করে বলে, ওড়না মাথায় দেওয়ায় তোমার মধ্যে গিন্নি গিন্নি ভাব চলে এসেছে। যেটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। এক কাজ করো মাথা থেকে ওড়ান সরিয়ে দাও।
আলিয়া ভ্রু কুচকে বলে, কেন?
— তোমার চেহারায় ডাক্তার ভাবটাই ভালো লাগে।
আলিয়া স্মিত হেসে ব্যাগটা চেয়ারে রেখে গাছে পানি দিতে গেল৷ কিন্তু ওড়না সরালো না।
শ্রাবণ তাকে অনুসরণ করল৷।আলিয়া গাছে পানি দিল এবং গাছের শুকনা পাতা আস্তে করে ছিড়ে ফেলে শ্রাবণ কে উদ্দেশ্য করে বলে, তিন দিন আগেই গাছ গুলো মরতে বসেছিল। আজকে দেখো গোলাপ গাছে দুইটা কলি ধরছে!
শ্রাবণ আলিয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, প্রত্যেক টা বাড়ির আনাচে-কানাচেতে একটা করে যুবতী মেয়ের স্পর্শ, ছোয়া প্রয়োজন, নাহলে বাড়ির দেয়াল গুলোও ঝিমায়, গাছ গুলোও মরে যায়।
আলিয়া বলে, যতোসব ফালতু কথা!
–সত্যি! দেখ, তুমি এসে এসে গাছ গুলোয় ছোয়া দিচ্ছো জন্য গাছ গুলো তরতর করে জান ফিরে পাচ্ছে।
আলিয়া বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলল, তোমার দাদি কোথায়?
–বিরিয়ানি রান্না করে। গরুর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি। সাথে বয়লার মুরগীর মিস্টি রোস্ট৷ দাদি ঝাল বেশি দেয়। তুমি তো ঝাল খাও না৷ এজন্য মিস্টি রোস্ট বানাতে বলেছি।
–তুমি কিভাবে জানলে আমি ঝাল ঝাই না?
–আমরা যাকে ভালোবাসি তার সম্পর্কে সব খবরা-খবর অটোমেটিক্যালি পেয়ে যাই৷ আলিয়া?
–হুম?
— তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি।
–কিহ?
— আমি ভবিষ্যত দেখতে পাই না তবে আমার মনে হয় আমার মধ্যে হিপনোটিজম ক্ষমতা আছে৷ ক্ষমতা আছে বললে ভূল হবে। আমি এটা সাধনা করে পেয়েছি৷ সিংগাপুরে এক নামকরা নিউরোসার্জনের সাথে আমার পরিচয় ছিল। উনি হিপনোটিজম পারত৷ আমি তার কাছ থেকে এই বিদ্যা ধার নিয়েছি। তবে আমার সময় সীমা খুব কম থাকে। দশ থেকে পনের মিনিটের বেশি কার্যক্ষমতা থাকে না। আমাকে মাফ করে দাও মিথ্যা কথা বলার জন্য।
— আমি জানতাম তুমি ফিউচার প্রেডিক করতে পারো না। এটা সম্ভব না৷ এজন্য আমি এই নিয়ে চিন্তাও করি নি। আর কিছু মনেও করি নি।
— ধন্যবাদ আলিয়া।
–হুম। তোমার জন্য গিফট এনেছি। গ্রহণ করবে?
— প্রিয়জনের দেওয়া একটা সুতার দানাও যত্নে রাখতে হয়!
আলিয়া মাথা নিচু করে হাসল। তারপর বাসায় ঢুকল৷
শ্রাবণের জন্য সে ক্যাটস আই থেকে পাঁচটা দামী শার্ট, গেঞ্জি, প্যান্ট এনেছে৷প্রতি শার্টের দাম পনের শ থেকে দুই হাজার। এর মধ্যে একটা মেরুন রঙের শার্ট আছে যেটা এক দেখায় আলিয়ার পছন্দ হয়ে যায়। সেটার দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। সোয়েটার, জ্যাকেট ও এনেছে। সাবান, শ্যাম্পু ও এনেছে। শ্রাবণের দাদির জন্য আড়ং থেকে তিনটা শাড়ি কিনে এনেছে। আরো একটা জিনিস এনেছে তাহল, একটা দামী স্মার্ট ফোন। ওয়ান প্লাসের নতুন মডেল। সঙ্গে একটা সীম। সীমে তার নাম্বার সেইভ করা আছে। ডাক্তার আলিয়া নামে।
সে একে একে সব কিছু শ্রাবণ কে দিল। শ্রাবণ কে বেশ খুশিই লাগছে। উপহার পেয়ে যে শ্রাবণ খুব খুশি তা শ্রাবণের চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আলিয়া ভাগ্যকূল থেকে দই ও এনেছে তিন কেজি। এই দই কচুক্ষেত থেকে কিনেছে। ভাগ্যকূলের মেইন ব্রাঞ্চ কচুক্ষেতে। আলিয়া অনেক দোকানের দই খেয়েছে। কিন্তু ভাগ্যকূলের দইয়ের স্বাদের মতো মজার দই অন্য কোথাও পাই নি। দই আলাদা ব্যাগে ছিল। শুধু দই না, শুকনা নাস্তা, ফল-মুল ও আছে।
সন্ধ্যার দিকে দাদি বাসায় ঢুকলেন। দাদিকে দেখে আলিয়া সালাম দিল।
দাদি শ্রাবণের পাশে বসে বলে, আজকে আকাশেতে চাঁদ নাই রে!
শ্রাবণ উৎসাহের সাথে বলে, আজকে কি অমবস্যা?
— নারে গাধা। জগতে দুইটা চাঁদ থাকে না। আজকে চাঁদ আমার বাসায় বসে আছে তাই আকাশে নেই!
আলিয়া লজ্জা পেল।
শ্রাবণ বলল, মঙ্গল গ্রহে দুইটা চাঁদ!
দাদি বলল, আমি পৃথিবী কথা বলছিলাম। আয় খেয়ে নিই। খিদা লাগছে।
— ঠিক আছে৷
আলিয়াকে নিয়ে খেতে বসা হলো। শ্রাবণ তৃপ্তি করে বিরিয়ানি খেয়ে সেই বিরিয়ানি মাখা প্লেটে দই নিল এবং চেটেপুটে দই খেয়ে নিল৷
খাওয়ার পর আলিয়া দাদির প্রেশার মাপল। প্রেশার হাই। ১২০/৯০।
আলিয়া দ্রুত শ্রাবণের কাছে এসে বলে, উনি তো অসুস্থ।
–শেষ বয়সে সবাই অসুস্থ ই থাকে ডাক্তার সাহেবা।
–মেডিসিন লিখে দিচ্ছি৷ প্রেশারের ঔষধ। ওলমিসন প্লাস। বিশ এমজি। রাতে খাইয়ে দিও। চব্বিশ ঘণ্টায় একটা করে খাওয়াবে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও খাওয়াতে হবে।
–আচ্ছা। রাত হয়ে আসছে। তুমি বাসায় যাও। বাসায় চিন্তা করবে নাহলে।
— ঠিক আছে।
বলে আলিয়া বাড়ি ফেরার পথে নামল। তার যেতে মন চাচ্ছে না৷ চোখ ভিজে উঠতে লাগে। মনে হচ্ছে এটাই তার সংসার! সে স্বামী-সংসার ছেড়ে যাচ্ছে এমন অনুভূতি আসছে তার মধ্যে।মনে হচ্ছে কুঞ্জি ভিলা থেকে বের হওয়ার আগেই একটা চার-পাঁচ বছরের লাল হাফ প্যান্ট পড়া ফুটফুটে ছেলে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, আম্মু যেও না৷ আমি তোমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারি না।
ছেলেটা দেখতে ফুটফুটে হলেও তার নাকে সর্দি থাকবে৷ আলিয়া পরম যত্নে তার ওড়ানা নিয়ে বাবুর সর্দি মুছে দিবে।
তার এখান থেকে যেতে মন চাচ্ছে না৷ অবাস্তব সবকিছুর জন্য মায়া লাগছে তার।
কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত মানব মন!
চলবে৷