মন পিঞ্জর পর্ব ৩৩

0
910

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৩

পার্বত্য অঞ্চলে আঁখি আদৃত দুজনেই পিলু পায়ে হাঁটছে, আর মন খুলে গল্প করছে,দুজনেরই মুখে হাসি বিদ্যমান,আঁখি এটা ওটা বলছে যার পরিনামে আদৃত মৃদ্যু হাসি উপহারে দিচ্ছে,আঁখি বার বার আদৃতের হাত ধরে এদিকে ওদিকে নিয়ে ছুঁটছে উক্ত বিষয় আদৃতের মনে অজানা এক ভালোলাগার অনুভুতি জাগিয়ে দিলেও, সে দৃশ্য তিক্ত এক অনুভূতির সৃষ্টি করছে আয়ানের মনে,দূর থেকে ওদের উপর নজর রেখে যাচ্ছে আয়ান,আঁখি আদৃতকে এভাবে একসাথে মেনে নিতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ানের মন,মন পিঞ্জরে যেনো আগুন লেগেছে ওর,ইচ্ছে করছে আদৃতকে শেষ করে দিতে আর আঁখিকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে,তবে কোন অধিকারে তা করবে আয়ান।একদিন নিজেও তো আঁখিকে রেখে অন্যত্র চলে গেছিলো আয়ান,মাহি নামক রমনীর সাথে রাতের পর রাত দিনের পর দিন কাটিয়েছে অথচ ওর পথ চেয়ে বসে থাকতো আঁখি সারাদিন সারারাত,এমনকি আঁখি সত্যটা জানার পর ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে মাহির সাথে প্রেম করতো,তখন তা অনেক মজার জিনিস মনে হতো আয়ানের কাছে, তারপর তো আঁখিকে সোজা ছুঁড়েই ফেলে দিলো, তবে আজ কেনো আঁখিকে অন্য কারো সাথে দেখে খারাপ লাগছে?আজ অন্যের হাত ধরা অবস্থায় আঁখিকে দেখে বড়ই হৃদয় পুড়ছে আয়ানের কিন্তু নিজেও তো মাহিকে নিয়ে কতো রঙ্গরসে পরে থাকতো আঁখির সামনেই সেদিন আঁখি কি করে তা মেনে নিতে পারলো,হয়তো সেদিন এতোটা পীড়া আঁখিরও হয়েছিলো, হয়তো তার থেকেও বেশি।ও তো মাহিকে চেয়েছিলো জীবনে ওকে তো পেয়ে গেছে তবে কেনোই বা আঁখির জন্য ওর মন কাঁদছে এবার,আঁখি তো আর নিজে থেকে অন্যের জীবনে পদার্পন করে নি, ওকে তো ধোকা দিয়ে যায় নি,আয়ান তো ছুঁড়ে ফেলেছিলো ওকে কিন্তু ওর কি আবার উঠে নিজের জীবনে এগুনোর অধিকারটুকুও ছিলো না,এগিয়ে যাক না আঁখি,ওর জীবনে কেনো এখন হস্তক্ষেপ করতে চাইছে আয়ানের বেহায়া মন,মনের সাথে এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত আয়ান,পারছে না নিজের বেহায়া মন কে আটকাতে,পারছে না আঁখিকে অন্যের সাথে মেনে নিতে,আঁখি যে একদিন ওর ছিলো তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে কি করে দেখতে পারবে সে।তিক্ত ভাবনাগুলো চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার কারন হয়ে দাঁড়ালো আয়ানের।

আয়েশা নোমানকে নিয়ে যাচ্ছে এক পাহাড়ের চূড়ায়,পাহাড় টা অনেক উঁচু,নোমান উঠতে গিয়ে হয়রান।

আরে আয়েশা তুমি দেখছি এমনভাবে ছুঁটছো যেনো রোজ পাহাড়ে চড়ে বেড়াও,আমার তো হাঁটতে হাটতে বেহাল দশা।

আরে নোমান সাহেব এটাতো কম আমি আর আঁখি জীবনে কতো পাহাড় চড়েছি,স্কুল টাইমে আমরা স্কাউটে ছিলাম,অনেক জায়গায় যেতাম তখন, বেশিরভাগ পাহাড় অঞ্চলে, আমার আর আঁখির পাহাড় আর পার্বত্য অঞ্চল বরাবরই প্রিয়,স্কুল থেকে বেড়িয়েও দুজন কতো ভ্রমন করেছি পাহাড় পর্বতে,আমাদের ভ্রমন বলতেই নাম আসতো পার্বত্য অঞ্চলের,চলেন আমার হাত ধরে চলে আসেন কষ্টটা একটু কম হবে,জানেন পাহাড়ের চূড়া থেকে আকাশটাকে দেখতে অনেক ভালো লাগে,মনে হয় যেনো ওটা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে,চলেন না অনেক ভালো লাগবে আপনার।।

আয়েশা হাত বাড়িয়ে দিলে নোমান ওর হাত ধরে নিলো,আয়েশা ওকে টেনে নিয়ে ছুঁটছে ভালোলাগার এক অজানা সন্ধ্যানে।

আঁখি হেসে হেসে কথা বলছিলো আদৃতের সাথে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলো আদৃতের উপর,যাতে আদৃতের মধ্যে অল্পতেই অস্থিরতা ধরা দিলো,আদৃতের মনে আঁখিকে হারিয়ে যাবার ভয় আবারও কাজ করতে শুরু করলো, গালে হাত রেখে ডাকতে শুরু করেছে ওকে অনেকটা অস্থির হয়ে,আঁখির কোনো সারা না পেয়ে ওকে কোলে তুলে নিবে তখনি আঁখি হেসে উঠে।আদৃত হতবাক হয় আঁখির এমন কান্ডে,আঁখি খিল খিল করে হাসছে।

আরে ড.আদৃত আপনি কি মনে করেছিলেন আমি আবার অজ্ঞান হয়ে গেছি?না কি মনে করেছিলেন মরেই গেছি?হা হা হা।

আপনার কাছে সবকিছুই মজা মনে হয় মিস আঁখি?এমনকি অন্যের অনুভুতিগুলোও মজা তাই না?জীবন মরন সবকিছুই খেলা না আপনার কাছে?পাগলকে নিয়ে মানুষ এমনই মজা করে আর আমিও তো পাগল তাই মজা নেওয়াটা আপনার মানায়,বেরি ওয়েল।

কথাগুলো ধমকের স্বরে বলে আদৃত স্থান ত্যাগ করলো।আঁখিতো একটু মজা করেছিলো কিন্তু আদৃতের এতোটা খারাপ লাগবে ভাবে নি আঁখি,আঁখি আদৃতের সাথে এখন প্রায়ই এটা ওটা নিয়ে এমনি মজা করে তবে আদৃত ওকে এতে তেমন কিছু বলে না,কিন্তু আঁখি আন্দাজ করতে পারছে আঁখির এই অসুখটাকে নিয়ে আদৃতের প্রতিক্রিয়া অন্যরকম,আঁখির অসুখ নিয়ে আদৃতকের ভাবনাটা মোটেও সহানুভূতি থেকে না,সেটা যেনো অন্য কোনো অনুভুতি থেকে তবে সেটা কি তা বুঝতে ব্যার্থ আঁখি।
____________________

সত্যিই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অনেক ভালো লাগছে নোমানের,যেনো আকাশটা নিচে নেমে এসেছে,হাত বাড়িয়েই যেনো মেঘ ছুঁতে পারবে, ভালোই লাগছে দৃশ্যটা অনুভবে নিতে পেরে আর তার থেকেও বেশি ভালো লাগছে পাশে দাঁড়িয়ে অপরুপ এই সৌন্দর্যের ধিদ্বার করতে থাকা সে মায়াবী রমণীকে, পড়ন্ত বিকেলের মৃদ্যু রোদের ছোঁয়ায় রমণীর চেহারার মায়াবী ভাবটা যেনো ফুঁটে উঠেছে আলাদা এক রুপে,যার ফলস্বরূপ রমনীর উপর থেকে চোখ সরাতে বড্ড অক্ষম হচ্ছে নোমান,ইচ্ছে করছে যেনো তাকে দেখেই যেতে। মুহুর্তটা এখানে থমকে গেলে কি বড্ড খারাপ কিছু হতো এমনই এক আচমকা নাম না জানা অনুভুতি ধরা দিলো নোমানের মনে।

রাত হয়ে গেছে, আঁখি আদৃতকে খুঁজছে পাচ্ছে না তবে,তখনকার পর আর ওকে দেখে নি আঁখি,ফোন করছে উঠাচ্ছে না,সবাইকে জিজ্ঞেস করেছে কেউই ওর খোঁজ জানে না,হটাৎ সায়েদা বললো আদৃতকে ও পাশেই ছোট্ট একটা পাহাড়ে চড়তে দেখেছে,সায়েদার কথামতো আঁখি সেদিকে হাঁটতে শুরু করে,এদিকে আয়ানের কেনো যেনো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আঁখি আদৃত স্বামী স্ত্রী, হয়তো মনের শান্তির খোঁজেই এখন সবসময় ওদের উপরই নজর রাখছে যদি কোনো দিক থেকে এটা জেনে যেতে পারে যে আদৃত আঁখি স্বামী স্ত্রী না তবে যেনো ও খুব বড় সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যাবে,এই আশাতেই নজর রাখছে ওদের উপর,আঁখি হেঁটে চলেছে পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে আয়ানও ধিমি পায়ে ওর পিছু আসছে,আঁখি ওকে দেখেছে ওর পিছন আসতে তবে ওকে কিছু বলে নি যথারীতি অদেখা করে চলেছে,এদিকে ছোট্ট সে পাহাড়ের নিচ দিয়ে নদী বসে চলেছে,বেশ পাশেই নদীর পাড়, আয়ানের দৃষ্টি শুধু আঁখির উপরই বিদ্যমান,তাই নিজের দিকে খেয়াল একটু কমে গেলো ওর যার পরিনামস্বরুপ পাহাড়ের অনেকটা কাছে থাকায় পা পিছলে ভুলবশত আয়ান নদীতে পড়ে যায়, দৃষ্টির অগোচরে যায় না আঁখির মুহুর্তটা,আঁখি আয়ান বলে চিৎকার করে উঠে,সাথে সাথে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দেয়,আঁখির চিৎকার আর কিছু জলে পড়ার শব্দ শুনে আশপাশে থেকে ২-৩ জন লোক এগিয়ে আসে আদৃতও পাশেই ছিলো তাই আঁখির চিৎকার ওর কানেও পৌঁছালো যাতে ছুঁটে আসলো আদৃতও,আঁখিকে জলে দেখে নিজেও ঝাঁপ দিলো,এদিকে লোকগুলোও পর্যটক তবে ওরা কেউই সাঁতার জানে না আর তাই কয়েকজন রিসোর্টের দিকে গেলো সাহায্য আনতে।

আঁখি আয়ানকে জলের বাইরে আনার চেষ্টা করছিলো তখন আর আয়ান হাত ঝাঁপটাচ্ছিলো কারন ও সাতার জানে না আর আদৃতের দুঃশ্চিন্তা আঁখিকে নিয়ে।

মিস আঁখি আপনি নদীর পাড়ে যান আমি উনাকে নিয়ে আসছি।

আপনি কি বলছেন ড.আদৃত?ও সাতার জানে না,আয়ান একটু হাত নাড়াও পানিতে আমার সাথে চলার চেষ্টা করো।

মিস আঁখি আমি সাতার জানি,আর আমি ড.আয়ানকে কিছুই হতে দিবো না আপনি যান প্লিজ, আপনার জন্য এতো ঠান্ডা জ্বলে থাকা একদম ঠিক না,প্লিজ গো,ড.আয়ান,আমি আপনার হাতটা নিজের কাধে নিয়েছি,আপনাকে পানিতে ভেসে থাকার জন্য আমি যথেষ্ট হেল্প করছি আপনিও চেষ্টা করুন,আর আমার সাথে এগুন,মিস আঁখি আপনি যান।

আমি যাবো না,আয়ান জ্ঞান হারাচ্ছে, হয়তো কিছু পানি ওর ভিতরে গেছে। আমাদের দুজনকেই ওকে পাড়ে নিতে হবে।

তারপর দুজন মিলে ওকে পাড়ে নিয়ে আসে।
আয়ান জ্ঞান না হারালেও পুরো জ্ঞানে নেই,আঁখি ওর ভিতর থেকে পানি বের করার সমস্ত চেষ্টা করছে,এমনকি আদৃতও, ততক্ষণে রিসোর্ট থেকে সাহায্যের জন্য সেখানের দায়িত্বে থাকা অনেকে চলে আসে,একটা মেডিক্যাল টিমকেও ওরা এতোক্ষণে আনিয়ে নিয়েছে,যেহেতু আদৃত একজন দক্ষ ডাক্তার তাই আয়ানকে কমসময়েই স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়, আঁখি অনেকটা অস্থির হয়ে আছে আয়ানের জন্য,আয়ান স্বাভাবিক হয়ে আঁখিকে সামনে দেখতেই ওকে জড়িয়ে ধরে, তারপর অতি আবেগে বলতে লাগে।

তুমি আমার প্রাণ বাঁচালে আঁখি,তুমি আজ আবারও প্রমাণ করে দিলে আমি যাই করি না কেনো তুমি সর্বদাই আছো আমার জন্য।

কিন্তু আজ আর আঁখির মনে আয়ানকে নিয়ে আলাদা কোনো অনুভুতি কাজ করছে না,বরং আয়ানের হঠাৎ ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরায় ওর মাথায় সবার আগে আদৃতের চিন্তাই খেলা করলো,কেনো যেনো মনে হলো উক্ত দৃশ্য আদৃতের আঁখিযোগল মেনে নিতে পারবে না,আর ঠিক যেনো তাই আন্দাজ করতে পারলো আঁখি আদৃতের দিকে আলতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

আয়ানের আঁখিকে এভাবে জড়িয়ে ধরা মেনে নিতে পারছে না আদৃত,বুকে দহন অনুভব করতে পারছে,হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আঁখি এক মুহুর্তের জন্য এবার আদৃতের চিন্তা একসাইড করে আয়ানকে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।

ঠিক আছো তুমি?কোথাও লাগে নি তো?দেখি।

আঁখি ভালো করে আয়ানকে দেখতে লাগলো।

আঁখির আয়ানকে তুমি করে বলা ওকে নিয়ে চিন্তা করা বড্ড বিরক্তিকর লাগলো আদৃতের আর পারছে না আদৃত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে,আয়ানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের হাতেও অনেকটা জখম হয়েছে তবে আদৃতের খোঁজটাও কি একবার নেওয়ার কথা মাথায় এলো না আঁখির,অনুভুতিটা বড্ড কষ্ট এঁকে দিলো আদৃতের হৃদয়ে,চোখ ছলছল করতে নিলো তবে কিছুই বলছে না ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সে,এদিকে আয়ান আবার বলছে।

আমার জন্য চিন্তা একটুও কমে নি তোমার তাই না?

আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে বললো।

আসলে তা না,হয়তো আপনার জায়গায় এখন অন্য কেউ হলেও আমি তাই করতাম,ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হতে চলেছি তাই এসব কিছু আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
প্লিজ আপনারা উনাকে নিয়ে যান,উনার বর্তমানে চেকআপ দরকার।

মেডিক্যাল টিমকে কথাটা বললে উনারা ওকে নিয়ে গেলেন।

আদৃত আঁখির হাত ধরে নিয়ে এলো রুমে তারপর ভালো করে ওর হাত পা দেখে বললো।

কোথাও লাগে নি তো।

না

ঠিক আছে।তারপর আলমারি থেকে ওর কাপড় এনে হাতে দিয়ে বললো।

জলদি চেঞ্জ করে নিন আর মাথাটা ভালো করে মুছে নিবেন,নিজের প্রতি যত্নবান হোন,অন্যের যত্নতো আবার পছন্দ হয় না।

গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে রুম ত্যাগ করলো আদৃত আঁখির দিকে তাকালোও না,আঁখি বুঝতে পারলো আদৃত ওর উপর অভিমান করে আছে তবে অভিমানে থাকা সত্ত্বেও লোকটা ওকে নিয়ে কতোটা ভাবে ভেবেই ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির এক ঝলক হাসি ফুঁটে উঠে আঁখির,আয়ান বরাবরের মতো আজও একবার জিজ্ঞেস করলো না আঁখির কিছু হয় নি তো,ওর কোথাও লাগে নিতো,বরং আজও সবার প্রথম নিজের টাই দেখলো,এদিকে আদৃত আয়ানকে সহ্য করতে না পারলেও আজ আয়ানকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিলো,সেখানে থাকা অবস্থায়ও আঁখির কথা ভাবছিলো,আদৃত লোকটা যেনো সবসময়ই আঁখির ভাবনা থেকেও অতিরিক্ত ভালো ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়,যে ব্যক্তিত্ব আজকাল সবার মধ্যে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে।
__________________

আঁখি চেঞ্জ করে এসে দেখে আদৃত রুমের সাথে সংযুক্ত ছোট্ট বারান্দায় বসে আছে কাপড় এখনও চেঞ্জ করে নি।

এই যে আপনি এখনও বসে আছেন চেঞ্জ করেন নি?উঠুন, উঠে গিয়ে চেঞ্জ করুন।

আদৃত জবাবে কিছুই বললো না, বসেই আছে।

এই যে শুনতে পাচ্ছেন না উঠুন?উঠুন বলছি।

আঁখি এবার আদৃতকে হাত ধরে উঠাতে গেলে দেখতে পেলো আদৃতের হাত অনেকাংশে কেটে আছে,আঁখি আন্দাজ করতে পারলো হয়তো আয়ানকে বাঁচাতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।

ও মা একি অনেকটা কেটে গেছে দেখছি?দাঁড়ান আমি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসি।
ফাস্ট এইড বক্স এনে আঁখি আদৃতের হাত দেখতে নিলে আদৃত টান দিয়ে হাত সরিয়ে নিলো।

আ আমি একদম ঠিক আছি মিস আঁখি, আপনাকে আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না।

কচু ঠিক আছেন আপনি,আপনি মিথ্যে বলতে পারেন না তবে বলেন কেনো?আপনি মিথ্যে বললে আপনার চোখের পলক বার বার পরে আর ঠোঁটগুলোও কেমন কাঁপে,যেমন এখন এই কথাটা বলতে গিয়ে হলো, তাই আমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছি আপনি ঠিক নেই।

আঁখি আদৃতের হাত টেনে নিয়ে এবার ওষুধ লাগাতে ব্যস্ত হলো,আদৃত অপলকে তাকাচ্ছে আঁখির দিকে,আঁখি আদৃতের খেয়াল করছে জিনিসটা যতোটা প্রশান্তি ওর মনে এনে দিচ্ছে ততোটাই উতলা করছে ওকে তখন আঁখির আয়ানের জন্য দেখানো অস্থিরতা, মনের ভিতর চলা একটা প্রশ্ন বড়ই অশান্ত করে তুলছে ওকে তাই মুখ ফুঁটিয়ে প্রশ্নটা করেই বসলো এবার আদৃত।

ভালোবাসেন না আয়ানকে এখনও?আর আমার জন্য যেটা করছেন সেটা শুধুই সহানুভূতি তাই না?

আঁখি নয়ন তুলে তাকালো আদৃতের দিকে, চোখের অল্প জল ছলছল করছে ওর তা স্পষ্ট অনুমানে গেলো আঁখির।

আপনি যেটা মনে করছেন তেমন কিছু না।

তবে তখন ওর জন্য এতো অস্থির হয়ে কেনো পড়েছিলেন?

দেখেন ড.আদৃত, হ্যাঁ এটা ঠিক আমি ওকে একসময় ভালোবাসতাম,তবে ওর করা অন্যায় অবিচারগুলো আমার মনে ওকে নিয়ে একটা ঘৃণাও সৃষ্টি করেছে,যে ঘৃণার রেশ ভালোবাসাকে অনেকাংশে কাটিয়ে দিয়েছে,প্রথম ভালোবাসার জায়গা হয়তো কখনো মুছা যায় না তবে এজন্য যে সে ভালোবাসার আশায় থেকেই জীবন কাটাতে হবে তা তো নয়,আয়ানের জন্য এখনও একটা টান আমার মনে থাকলেও তা আবার ওর সাথে আমার সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয়,আজকে আমি ওকে বাঁচিয়েছি শুধু মনুষ্যত্বের খাতিরে, আর ওর জন্য চিন্তা হয়তো সে টান থেকেই এসেছে কিন্তু এর মানে এটা নয় আমি ওকে এখনও ভালোবাসি।আর আমার আপনার খেয়াল করার একটাই কারন,আপনি তার যোগ্য,যে আমাকে বুঝে,আমাকে সাপোর্ট করে,আমাকে নিয়ে ভাবে তার যথেষ্ট অধিকার আছে আমার কাছ থেকে প্রতিদানটা পাওয়ার।

তবে কি আপনি শুধু প্রতিদানের জন্যই আমার খেয়াল রাখছেন?

আদৃতের প্রশ্ন বড্ড মুশকিলে ফেলে দিলো এবার আঁখিকে,নিবার্ক হয়ে গেলো অল্পতে ,জানা যে নেই ওর এই প্রশ্নের জবাব।

আদৃত খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো আঁখির জবাবের, কিন্তু জবাব না পেয়ে নিরাশা ভরা অনুভুতি নিয়ে উঠে চলে গেলো ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে বলে,আঁখি ঠায় বসে রইলো।

অনেকক্ষণ চলে গেছে আদৃতের কোনো খবর নেই,ঘটনাটার খবর শুনে পরিবারের সবাই এসে আঁখিকে দেখে গেছেন,এদিকে আদৃতকে কেউই পেলেন না,ফোনও ধরছে না,আঁখি বললো ইমপোর্টেন্ট কাজে গেছে যা শুনে পরিবারের সবাই চিন্তামুক্ত হলেও চিন্তামুক্ত হতে পারলো না আঁখি।অনেকক্ষণ আঁখির পাশে থেকে এই মাত্র রুম ত্যাগ করলেন সবাই,এদিকে আঁখি দরজার পানে তাকিয়ে আছে আদৃতের অপেক্ষায়, আদৃতকে ফোন করছে কিন্তু ওর কোনো খবর নেই,আঁখির মনে এখন দুঃশ্চিতা কাজ করছে ওকে নিয়ে।ভিজে থাকা অবস্থায় চলে গেছে চেঞ্জও করে নি,জল তখন প্রচুর ঠান্ডা ছিলো,প্রতিদানের খাতিরে আদৃতকে নিয়ে আঁখিকে যতোটুকু ভাবা দরকার তার থেকেও বেশি ভাবনা আঁখির মনে আদৃতকে নিয়ে তা আঁখি জানে,আর তাই হয়তো তখন আদৃতকে সে জবাবটা দিতে পারে নি,কারন আদৃতের চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলার ক্ষমতা আঁখির নেই আর সত্যটা যে আঁখির এখনও অজানা,আর হয়তে আঁখি তা জানতেও চায় না।

চলবে………

সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা,আদৃত ব্যক্তিত্ব পুরোই কাল্পনিক যা আজকাল সমাজে খুঁজে পাওয়া দূরুহ,ওর মতো ভালো মানুষিকতার মানুষ আজকাল সমাজে যে খুব বেশি কেউ নেই সেটা সবারই জানা আছে,আর কথা রইলো আয়ান আর আরোহীর, ওদের মতো স্বার্থপরদের অভাব নেই এই সমাজে, বাস্তবে সমাজে ওদের মতো অনেক লোকের স্বার্থপরতার কারনে অনেকেই সুইসাইড করে মারা যায়,তাছাড়া অনেকে জীবনে দ্বিতীয়বার এগিয়ে যেতেও ভয় পায়,আঁখিকে ছেঁড়ে দেওয়ার আগে কি আয়ান কখনো ভেবেছে আঁখি ওর জীবন থেকে সরে গিয়ে কি করবে কোথায় যাবে আদোও কি বাঁচবে,তখন তা ও ভাবে নি তখন যদি আঁখি সুইসাইড করতো তবে কি আয়ান পারতো ওকে ফিরিয়ে আনতে,এমনকি এখন ভাবুন মাহি যদি ভালো হতো আর তখন আয়ান বুঝতে পারতো ও আঁখিকে ভালোবাসে মাহিকে না তখন কি হতো?তখন তো মাহির জীবনও নষ্ট হতো?ভুল তো সামান্য কিছু হয়ে থাকে আয়ান আর আরোহী যা করেছে সেটাকে পাপ বলে আর পাপের সাজা হয় ক্ষমা না,আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে আমি দুঃখীত তবে গল্পটা পুরো সত্য না হলেও এটা সত্য যে আজ আয়ান আরোহীর মতো লোকের জন্য সমাজটা বিলুপ্তির দিকে,একবার ভালো করে ভেবে দেখুন বিষয়টা, নিজের সাথে এমন হলে কি মেনে নেওয়া যেতো,এমনকি নিজের কোনো আত্নীয়ের সাথে,পারতেন কি আপনারা আয়ান আর আরোহীর মতো মানুষকে ক্ষমা করে দিতে,আজকাল প্রায়ই লোকই মরিচিকা প্রিয় এই গল্পটা লিখতে গিয়ে জানতে পারলাম,কেউ মন খারাপ করবেন না আমার কথায় আবারও ক্ষমা চাইছি, আনেকের মন্তব্য পড়তে পড়তে কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম,নিজেদের বিবেক কাটিয়ে ভেবে দেখবেন এমন মানুষকে কি ক্ষমা করে সত্যিই যুক্তিযুক্ত, ভালো থাকবেন সবাই আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে রামাদান মোবারাক।পর্বটা দেড়িতে দেওয়ার জন্য দুঃখীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here