অবশেষে বৃষ্টি পর্ব ২

0
777

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ২
#নীলাভ্র_নেহাল
.
সায়ানের ফোনে টেক্সট এলো রিদির নাম্বার থেকে। মেসেজ দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো সায়ানের। রিদি লিখেছে, toke aj khub hot lagchilo. Ekta chumu khawyar jonno pagol hoye jacchilam.

আজকাল কার মেয়েদের একেবারেই লাজলজ্জা নেই। সায়ানও মেয়েদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে মেশে। তবে শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে এখনো অনেক দূরত্ব বজায় রেখে চলে। মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কেন যেন এই একটা বিষয়ে সায়ানের আগ্রহ কম। যার তার সাথে ঠিক ঘেষতে ইচ্ছে করে না ওর।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেক্ষণ মেসেজিং চললো অর্পার সাথে। অর্পা দিনদিন সায়ানের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা দেখতে মারাত্মক। ফর্সা গাল দুটো রোদে গেলে একেবারে লাল হয়ে যায়। যা হ্যান্ডসাম লাগে, একেবারে সিনেমার নায়ক। সিনেমায় গেলে নিশ্চয়ই খুব যশ খ্যাতি হতো সায়ানের।

অর্পা সায়ানের কণ্ঠ শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। বললো, তোকে একবার কল দিই?
– ভিডিও কল দে, তোকে দেখবো।
অর্পা গেঞ্জি পরে শুয়ে আছে। ভিডিও কলের কথা শুনে বুকের মাঝখান থেকে গেঞ্জিটা সরিয়ে ক্লিভেজ বের করে রাখলো। যাতে সায়ানের নজর সেখানে চলে যায়। পরক্ষণেই আবার উপরের গেঞ্জিটা খুলে হাতা কাটা গেঞ্জি পরে ভিডিও কল দিলো সায়ানকে।

সায়ান অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলছিল। যখন খেয়াল করল অর্পার গায়ে হাতা কাটা গেঞ্জি, গলাটাও উন্মুক্ত। তখন শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো সায়ানের। ও মুচকি হেসে বলল, শুয়ে পরেছিস?
– হ্যাঁ। বড্ড একা একা লাগে বিছানায় রে।
– তাহলে মাকে বল বিয়ে দিয়ে দিক। আমাদেরও একটা বিয়ে খাওয়া হবে।
– যা, ফাজিল।
– সত্যি তোর বিয়েতে আমি অনেক মজা করবো।
– অফ যা। তুই কি করছিলি?
– রিদি আমাকে বড্ড জ্বালাচ্ছে রে।
– কেন?
– কি সব আবোলতাবোল মেসেজ পাঠায়।
– আমাদের রিদি? কি মেসেজ দিয়েছে দেখি।

সায়ান মুহুর্তেই মেসেজের স্ক্রিনশট নিয়ে অর্পার নাম্বারে পাঠিয়ে দিলো। রিদির পাঠানো টেক্সট দেখে শরীরে জ্বালা শুরু হয়ে গেলো অর্পার। ও রেগেমেগে আগুন হয়ে বলল, ওই কুত্তির এত বড় সাহস? ওকে কালকে এমন ধোলাই দেবো না..
– তুই এত জ্বলছিস কেন?
– তোর কি খুব ভালো লাগছে?
– মেয়েরা এমন মেসেজ পাঠালে ভালো লাগবে না বল?
– তাহলে যা না গিয়ে রোমান্স কর ওর সাথে।

হেসে উঠলো সায়ান। হাসতে হাসতে বলল, তুই দেখি মহা খেপেছিস। যাক গে ওসব, আমার এক ফ্রেন্ড কল দিচ্ছে এখন রাখি রে।

অর্পার কল কেটে দেওয়ায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ওর। বিষন্ন মনে ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলো। মেয়ে ফ্রেন্ড দের সাথে সায়ান কথা বলে কি না এসব ভেবে টেনশনও করতে লাগলো। কিন্তু সায়ানের অর্পার কথা ভাবারও অবকাশ নেই।


ভার্সিটিতে সায়ানের বন্ধুরা গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রচুর হাসাহাসির শব্দ আসছে সেখান থেকে। সায়ান ও তাদের সাথে গিয়ে যোগ দিলো। ওরা একটা মেয়েকে র‍্যাগ দিয়েছে সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। আজকে মেয়েটাকে পাঠিয়েছে অন্য আরেকটা ছেলের কাছে। সেদিন সায়ানকে যে মেয়েটা প্রপোজাল দিয়েছে সেই মেয়েটাই। কথাটা শুনে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না সায়ান। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। অজানা অচেনা এক মানুষের জন্য এরূপ হওয়ার কারণই বা কি তাও বুঝতে পারলো না। তবুও ছুটে গেলো সেই বন্ধুর কাছে।

গিয়ে দেখলো পৃথা নামের মেয়েটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তিনটা ছেলে মিলে হাসছে। তিনটা ছেলের একজনেরও চরিত্র ভালো না। সায়ান ছুটে এসে ওদের হাত থেকে রক্ষা করলো পৃথাকে।

পৃথা সায়ানকে দেখে কিছুটা ভরসা পেলেও সায়ানের দিকে তাকালো না। সায়ান বন্ধুদেরকে বিদায় দিয়ে পৃথাকে বলল, তুমি আবার ওদের ফাঁদে পা দিয়েছো?
– কি করবো বলুন? ওরা যে আমাকে থ্রেড দেয়। বলেছে যদি ওদের কথা না শুনি তাহলে সিনিয়রদের সামনে আমাকে অপমান করবে।
– তুমি আর ওদেরকে নিয়ে ভাব্বে না। ওদের ব্যবস্থা আমি নিচ্ছি। আমার সাথে আসো।
পৃথা সায়ানকে অতটাও ভরসা করতে পারছে না। একটা নেগেটিভ চিন্তা সায়ানের সম্পর্কে মনে গেঁথে গেছে। সায়ান এক রকম জোর পূর্বক পৃথাকে ওর বন্ধু মহলে নিয়ে এসে দাঁড় করালো। সবাই মজার ছলে নানান কথা বলতে শুরু করেছিল। সায়ান রীতিমতো রেগে বললো, শোন সবাই। এই মেয়েটা আমার পরিচিত।
গতকাল তোরা ওকে র‍্যাগ দিয়েছিস তবুও আমি কিছু বলি নি। কিন্তু আজকে আর না বলে পারলাম না। ওকে ফার্দার কেউ কখনো কোনোরকম র‍্যাগ দেবে না। মনে থাকবে?

রিদি বলল, তোর পরিচিত? তাই তো বলি তুই যেমন ছেলে। একটা সুন্দরী মেয়ে চুমু খেতে চাইলো আর তুই কি করে রিজেক্ট করলি? হা হা হা।

সবাই হেসে উঠলো রিদির কথা শুনে। কথাটাতে সবাই মজা পেলেও পৃথার কানে বিষের মত লাগলো। বিশেষ করে ‘তুই যেমন ছেলে’ লাইনটি। বন্ধু মহলে এই ছেলেটা কি তাহলে সেভাবেই পরিচিত? নাকি মজা করছে!

মনের প্রশ্ন মনেই রয়ে গেলো পৃথার। সায়ান ওকে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে এলো। দু কাপ কফি অর্ডার দিয়ে পৃথার দিকে তাকালো। মুখটা শুকিয়ে গেছে পৃথার। চোখের টানা টানা কাজল দেখে পুলকিত হতে ইচ্ছে করে। সায়ান থাকতে না পেরে বলেই ফেলল, তুমি কি কাজল পরতে খুব ভালোবাসো?

পৃথা লজ্জা পেয়ে বলল, হুম।
– ওহ হো, তোমার নাম তো জানাই হয়নি। কি নাম তোমার?
– পৃথা।
– আমি সায়ান। আমার ফ্রেন্ড দের কথায় কিছু মাইন্ড কোরো না। ওরা এমনিই ওরকম দুষ্টুমি করে। নিউ কামার দেখলে আরো বেশি করে।
– আমি কিছু মনে করি নি।
– আমি কি তোমার ফেসবুক আইডি পেতে পারি পৃথা?

চমকে উঠে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো পৃথা। চেনাজানা নেই, হুট করে কারো কাছে ফেসবুক আইডি চাইছে। ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারলো না পৃথা। চুপ করে রইলো ও। সায়ান বলল, তোমার প্রবলেম থাকলে দিতে হবে না। আমার আইডি নেম ইংলিশে সায়ান চৌধুরি। তোমার কখনো ইচ্ছে হলে একটা রিকুয়েষ্ট পাঠিও।

পৃথা চুপ করে রইলো। এবারও কোনো উত্তর দিতে পারলো না। গ্রামের মেয়ে পৃথা। গ্রামের কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শহরের একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে। এখানে পড়ার ইচ্ছে ওর ছিল না। পৃথার বাবা মেয়েকে ঢাকা শহরেই পড়াবেন। ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স হয়নি বলে আর কোথাও পরীক্ষা দিতে দেন নি। প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। পৃথা শহরের ছেলেদের সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে কিন্তু কখনো সামনা সামনি কারো সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয় নি। তাই ও খুব বেশি জানেও না এসব ছেলেরা কেমন স্বভাব চরিত্রের হয়। শুধু লজ্জা পায় আর ইতস্তত বোধ করে।

সায়ান বললো, তুমি কি ভয় পাচ্ছো আমাকে?

পৃথা মনেমনে বলল, কি করে বুঝে গেলো আমি ওনাকে ভয়ই পাচ্ছি। তবুও মুখে প্রকাশ করল না। এমনকি ভাব ভঙ্গিতেও বুঝতে দিলো না পৃথা ভয় পাচ্ছে সায়ানকে।

সায়ান বললো, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছো। ভাবছো আমিও আমার ফ্রেন্ড দের মত করবো কিনা। আরে বোকা মেয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমি ওরকম কিছু করবো না। বিলিভ মি, আমি তোমাকে ভালো মেয়ে মনে করেই তোমার পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি আর কোনো কান্ডই তোমার সাথে ঘটতে দিবো না।

পৃথা এবারও কিছু বলল না। সায়ান জিজ্ঞেস করল, তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?

পৃথা দুদিকে মাথা নাড়াল। সায়ান হেসে বললো, বিরক্ত না হও এটাই তো চাই। আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো?
– বসুন্ধরায়।
– ওহ আচ্ছা। বাবা মায়ের সাথে?
– না। খালার বাসায়।
– যাতায়াতে কোনো প্রবলেম হয় না তো?
– না।
– হলে আমাকে বোলো কিন্তু।
– জ্বি।
পৃথা মুখে জ্বি বললেও মনেমনে ভাবতে লাগল কোনো সমস্যা হলেও ওনাকে বা কিভাবে বলবে? ওনাকে খুঁজে পাবে কোথায়? তাছাড়া ওনাকেই কেন বলবে? কিছু তো প্রয়োজন নেই। উনি কে পৃথার! মনেমনে এসবই ভাবছিল পৃথা। সায়ান কফির কাপে একটা টোকা দিয়ে বলল, ওই হ্যালো, খাচ্ছো না কেন?
– জ্বি খাচ্ছি।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে কফির কাপে চুমুক দেয় পৃথা। কফি খাওয়া শেষ হলেও অনেক্ষণ পৃথাকে কথার জালে আটকে রাখে সায়ান। কথা শেষ হলে পৃথা চলে যাওয়ার জন্য উদ্দ্যত হয়েছে এমন সময় অর্পা এসে সামনে দাঁড়ালো। সায়ানের কাছে এসে বলল, তুই এখানে? তুই জানিস না তোকে না দেখলে আমার কত চিন্তা হয়?

পৃথা দ্রুত সরে যেতে চাইলো। সায়ান ডেকে বলল, পৃথা ও হচ্ছে অর্পা। আমার ফ্রেন্ড। ইনফ্যাক্ট বেস্ট ফ্রেন্ড।

পৃথা স্বাগত হাসি জানিয়ে বিদায় নিলো সেখান থেকে। যাওয়ার সময় মনেমনে ভাবছিল, শুধুই কি ফ্রেন্ড? নাকি অন্য কিছু? একটু না দেখলেও টেনশন হয়, এমন ফ্রেন্ড থাকাটাও তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। বলেই মনেমনে হাসলো।

পৃথা রাত্রিবেলা সায়ানের ফেসবুক আইডি সার্চ করে ঘুরে ঘুরে ওর প্রোফাইল দেখতে লাগল। একেকটা ছবি কি চমৎকার! ছবিতে হাজার হাজার লাইক, রিয়েক্ট। আর কমেন্টের বন্যা বইছে। বেশিরভাগ কমেন্টই মেয়েদের। সায়ানের আইডিতে মেয়েদের সংখ্যাই যে বেশি সেটা নিশ্চিত হওয়া গেলো। তারা হোক বা বন্ধু কিংবা অন্যকিছু। কিন্তু এতগুলো মেয়ের কমেন্ট দেখে আর কথা বলা কিংবা রিকুয়েষ্ট পাঠানোর আগ্রহ পেলো না পৃথা। সায়ানের প্রত্যেকটা ছবিতেই অর্পার কমেন্ট। তাও আবার গার্ল ফ্রেন্ডদের মতন। অবশ্য আরো অনেক মেয়েরই ওরকম গায়ে পরে পুতুপুতু করতে আসা কমেন্ট চোখে পড়লো।

তবুও সায়ানের প্রোফাইলে থাকা সমস্ত ছবি দেখতে লাগল পৃথা। কোনো কারণ নেই, তবুও দেখতে লাগলো। সায়ান নিঃসন্দেহে অনেক হ্যান্ডসাম কিন্তু ওকে কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে পৃথার। কোনো এক অজানা কারণেই হচ্ছে, বুঝতে পারছে না পৃথা।

দুদিন ভার্সিটিতে আসে নি পৃথা। দুদিন পর ভার্সিটি আসার পথে সায়ানের সাথে দেখা। পৃথা সায়ানকে দেখতে পায় নি। সায়ান দূর থেকে দেখে বাইক নিয়ে এসে রিকসার পাশে দাড় করালো। পৃথা চমকে উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

সায়ান বললো, হাই পৃথা, কেমন আছো?
– জ্বি ভালো।
– রিকসা থেকে নামো।
– কেন?
– আহা নামো না। নামতে বলছি তো।
– না।
– তোমার ভালোর জন্যই বলছি। প্লিজ নামো।
– আমি যাবো কি করে?
– আমি বাইকে করে রেখে আসবো। তবুও প্লিজ নামো।

সায়ান কিছুতেই পথ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না। পৃথা ভয়ে ভয়ে রিকসা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রইলো। সায়ান এগিয়ে এসে পৃথার কানে কানে বলল, তোমার কাঁধের উপর ফিতা দেখা যাচ্ছে। ওটা ঠিক করে নাও।

লজ্জায় লাল হয়ে গেলো পৃথা। মাথাটা নিচু করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল। সায়ান বলল, বাইকে ওঠো ভার্সিটিতে নামিয়ে দিবো।

পৃথা ইতস্তত করছিল। সায়ান জোর পূর্বক পৃথাকে বাইকে তুলে বাইক স্টার্ট দিলো। লজ্জার রঙে লাল হয়ে ওঠা পৃথা কেবল চুপ করে বাইকের পিছনে বসে রইলো। সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে বাইক। পৃথার চুল উড়ছে। সায়ানের কাঁধে হাত রাখতে হলো এক রকম বাধ্য হয়েই। লজ্জার আভা এখনো কাটছে না পৃথার।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here