ইভিল মিস্ট্রি,( পর্ব-০৩ ও শেষ)
লেখক- Riaz_Raj
রিয়াজের ঠোটের উপর থেকে,দুইটা দাত বের হয়ে এসেছে।দেহের সাইজ আগের থেকে বড় হয়ে গেছে।৬ ফুটের উপরে থাকা রিয়াজ হটাৎ প্রায় ১২ ফুট লম্বা হয়ে গেছে।রশনী ভয়ে কপতে লাগলো।রিয়াজ ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে রশনীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।এক মুহূর্তের জন্য রশনীর মনে হচ্ছে,একটা নেকড়ে মানব তার দিকে তেড়ে আসছে।
রশনী চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিতে লাগলো।তার গলার স্বর পুরো গুহা জুড়ে ছুটাছুটি করছে। এর মধ্যেই একটা বিকট শব্দ রশনীর কানে বাধে।রশনী বুঝতে পারে পুরো গুহা স্তব্ধ হয়ে গেছে।ধীরে ধীরে রশনী চোখের পাতা খোলে। আর দেখতে পায় শুধু একটা প্যান্ট পরিহিত মানব তার সামনে শুয়ে আছে। যেনো উপর থেকে কেও পড়েছে।রশনী বুঝতে পারে এইটা রিয়াজ। এগিয়ে যাবে নাকি পালাবে সেটাই ভাবছে সে। কিন্তু রিয়াজ মাটিতে কেনো শুয়ে আছে। রশনী মনে সাহস নিয়ে রিয়াজের দিকে এগিয়ে যায়। রিয়াজ মাটিতেই শুয়ে আছে। এদিকে গুহার দেয়ালে আগুন জ্বালিয়ে থাকায়,স্পষ্ট দেখা যায় সব। রশনী গিয়ে রিয়াজের পিট স্পর্শ করতেই অনুভব করে তার পুরো দেহ গরম হয়ে আছে।অতিরিক্ত গরম। রশনী আবার ছুটে যায় সেই পুকুর পাড়ে।আর হাতের খোলসে করে একটু পানি নিয়ে আসে। রিয়াজের সামনে বসে রশনী সব পানি রিয়াজের মুখে ফেলে।কিছুক্ষণ পর লাফ মেরে উঠে রিয়াজ।রিয়াজের এমন হটাৎ জেগে উঠাতেও ভয় পায় রশনী। এরপর রিয়াজ বলল,
– কি হয়েছিলো।দানবটা শুয়ে আছে কেন? আপনি মেরেছেন?
– দানবকে দানব শুইয়েছে।
– বুঝলাম না।
– অভিনয় করছেন? আমি দেখেছি আপনার রুপ। এখন মিথ্যে বলে লাভ কি।
– অদ্ভুত তো! কিসের মিথ্যে আর কিসের রুপ।
রশনী রিয়াজের কথায় কিছু রহস্য বুঝতে পারে।হয়তো নিজের সেই ভয়ংকর রুপের কথা রিয়াজের অজানা।তাই রশনী আবার বলল।
– আপনার সত্যি কিছু মনে নেই?
– আছে। দেখেছি একটা দানব।আর তারপর চোখ মেলে দেখি আপনি সামনে।এর বাহিরে কি হয়েছে।
– আপনি কি জানেন? আপনি নিজে একটা দানব?
– হাহাহা। এতো সুন্দর জোক্স পারেন আপনি? কিন্তু সরি। পকেটে এখন একটাও কানাকড়ি নেই। ইনাম দিতে পারলাম না।
– আজব তো।মজা করছেন আপনি? সত্যিই আপনি দানব।হটাৎ দানব হয়ে গিয়েছিলেন।আপনার শার্ট ছিড়ে গেছে।
– শার্ট নেই তা তো আমিও দেখছি।কিন্তু আপনি ছিঁড়েন নি তো?
– কিসব বলছেন।আমি সত্যিই দেখেছি আপনার দানব রুপ।
– আচ্ছা মেনে নিলাম আমি দানব হয়েছি।তো আপনাকে ছেড়ে দিলাম কেন।
– আমিও বুঝতে পারছিনা।
– শার্ট ছাড়া ভালো লাগছেনা।আপনার গেঞ্জিটা দিন।
– মানে? আমি কি পড়বো?
– তাও তো কথা।আচ্ছা চলুন।এগিয়ে যাই।এখান থেকে বের হতে হবে।
রিয়াজ আর রশনী আবার এগিয়ে যেতে লাগলো।রশনীর কথা রিয়াজ মোটেও বিশ্বাস করেনি।রিয়াজ ভাবছে রশনী নিজেই হয়তো দানব মেরে এখন নিজের পরিচয় লুকাচ্ছে।যাইহোক, বেচে গেছে এইটাই বেশি। তাই রিয়াজ চুপচাপ হেটে চলছে। কিছুদূর যাওয়ার পর ওরা দেখে সামনে আরেকটা দরজা। রিয়াজ বলল,
– আবার কোন দানব আছে কে জানে। আপনি দরজা খোলেন।আমি তো ভুলের মনেও যাচ্ছিনা।
– আরেহ,কেমন মানুষ আপনি? আমাকে একা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন?
– একা কই।দৌড়ে পালানোর জন্য তো আমি আছিই।
রশনী এইবার শিওর। রিয়াজ হয়তো তার অলৌকিক সেই শক্তির কথা জানেনা।তবে রশনী নিজে এইবার সাহস পেয়েছে।বিপদ আসলে হয়তো রিয়াজ এমনিই দানব হয়ে যাবে।তাই নিজে গিয়ে দরজা খুলতে যাচ্ছে রশনী।কিন্তু সিস্টেম এবার অন্য রকম। কোনো পুতুল বা পাথর নেই। রশনী রিয়াজকে ডাক দেয়।রিয়াজ আসার পর বলল,
– দরজা যেহেতু আছে,সিকিউরিটি নিশ্চয় আছে। আর আনলক করার একটা উপায় তো আছেই। খুঁজুন। রহস্য এখানেই কোথাও।
– কিসের রহস্য?
– আমার বাবার ডায়েরিতে একটা প্রবাদ আছে।
– কেমন।
– কিছু মুহূর্তে এমন কিছু ঘটনা সামনে ভেসে উঠে,তা বুঝে নিতেই লাগে রহস্য। রহস্য দিয়ে শুরু কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে রহস্য দিয়েই।আবার রহস্য দিয়ে চলতে থেকে,হটাৎ রহস্য নিয়েই শেষ হয়। রহস্য নিয়ে শেষ হওয়া ঘটনা কোনো একদিন আবার রহস্যরুপে শুরু হয়। আবার চলতে থাকে রহস্য।নিয়তি এমনই।শেষ থেকে শুরু আর শুরু থেকে শেষ করে।তার অস্তিত্ব নামক একটা শব্দ হচ্ছে রহস্য।
– এইটার সাথে দরজার কি মিল?
– রহস্য এখানেও। আমাদের এখানে আসাটা একটা রহস্য।যা এখনো জানিনা আমরা।রহস্য নিয়েই চলছি আমরা।আবার রহস্যের মধ্যেই শেষ হবে। তা খোঁজে বের করাই সফলতা। নিশ্চয় আশেপাশে একটা ক্লু আছে।খুঁজুন।
– হতে পারে এই দরজার সিকিউরিটি ওপাশ থেকে সেট করা।
– গুহা দেখে সাধারণ তো মনে হচ্ছেনা। দুইদিকেই সিকিউরিটি আছে।চলুন এক সাথে খুঁজি।
রিয়াজ আর রশনী দরজার দুইপাশ খুঁজতে শুরু করে। তখনি রিয়াজ বলল,
– দেখো,এখানে কিসের যেনো একটা চিত্র আছে।
রশনী দৌড়ে আসে চিত্র দেখার জন্য।এসেই রশনী অবাক হয়ে যায়। চিত্রটা একটা দানবের মুখের। বড় বড় দাত আর ভয়ংকর চোখের চিহ্ন। রশনী বলল,
– এইটা কিভাবে হতে পারে?
– কেনো? কি হয়েছে?
– আমি বুঝে গেছি।আমাদের এখানে আসাটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।অর্থাৎ কেও একজন আমাদের এসব পরিস্থিতিতে ফেলেছে। কারো ইশারায় হচ্ছে এসব।আপনার কথা সত্য। রহস্য আছে এখানে।
– চিত্রটা দেখে অবাক হচ্ছেন কেন?
– কারণ এই একই রকম চিহ্ন আমার বুকে আছে।
– মানে? দেখি?
– কি? লজ্জা নেই নাকি আপনার।
– ও সরি।এতো গভীরে চিত্র থাকবে আমি জানতাম নাকি।কিন্তু আপনি লাগিয়েছেন কেন এইটা।
– এই চিহ্ন জন্মের পর থেকেই এখানে।বুকের ডান পাশে। তবে একেবারে গভীরে না।উপরেই আছে।
– তো এখন এর কাজ কিভাবে করবেন।
– আমি বুঝতেছিনা।
এইটা বলে রশনী আবার সেই চিহ্ন দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে এক পর্যায় চিহ্নটির কাছে যায় রশনী। তখনি অদ্ভুত ভাবে রশনীর বুকের চিহ্নটি জ্বলে উঠলো।সাথে সাথে দেওয়ালের চিহ্নটিও জ্বলে উঠে।যেনো জেগে উঠেছে চিত্রটা।রিয়াজ বলল,
– কিছু একটা হতে যাচ্ছে।সরবেন না। এক কাজ করুন।আপনি বুকের চিত্রটা দেওয়ালের চিত্র বরাবর করুন।দেখুন কি হয়।
রিয়াজের কথায় রশনী দুইটা চিত্র বরাবর করে।আর অদ্ভুত ভাবে দরজা খুলে যায়। দরজার বাহিরে তাকাতেই রিয়াজ আর রশনী খুশিতে লাফ মেরে উঠেছে।ওপাশে জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ গুহার শেষ এইটাই। ওরা পাগলের মতো ছুটে বের হয় গুহা থেকে।দরজা পেরিয়ে দুজন নাচতে শুরু করে।এরপর পিছনে গুহার দিকে তাকিয়ে দেখে,পিছনে কোনো গুহা নেই।শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল।অবাক হয়ে যায় ওরা দুজন। মাত্র তারা গুহা থেকে বের হয়েছে।গুহাটা গেলো কোথায়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।তখনি তারা শুনতে পায়,গাড়ির হর্ন বাজতেছে আশেপাশে। তড়িঘড়ি করে দুজনেই শব্দ বরাবর ছুটতে লাগলো।কিছুদূর গিয়ে তারা দেখে,সামনে হাইওয়ে রোড ।যেখানে গাড়ি চলাচল করছে।মুচকি হাসি দিয়ে উঠে দুজনেই।
– হ্যা মা।সত্যি বলছি।এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে।যা কল্পনার বাহিরে ছিলো।
– তুই কেনো গিয়েছিলি ঝগড়া থামাতে।
– মা তুমি বুঝোনা কেন।যা হয়েছে,সব হবারই কথা ছিলো।কেও একজন করেছে এসব।সে সব জানে।কিন্তু কে সে..?
– শুন বাবা।এসব কিছু নয়। হতে পারে কোনো যাদুকর ভুল করে তোদের নিয়ে গেছে।দেখ,তুই এখন আবার বাড়িতে চলে এসেছিস।আজ দুইদিন থেকে তো কিছুই হয়নি। আর রশনী নামক মেয়েটাকে আমার সুবিধা মনে হচ্ছেনা।সে হয়তো করেছে এসব।
– না মা।মেয়েটা নিজেও ভয় পাচ্ছিলো। সেও হয়তো আমার মতো মিষ্টেকে চলে গেছে।আজকাল যাদুকররা এতো ভুল কিভাবে করে।
মেঘা চলে যায় উপরে।রিয়াজ সোফায় বসে আছে।সেদিন গাড়ি পেয়েই রিয়াজ বাসায় চলে আসে।আর রশনীও চলে যায় তার বাসায়।কেও কারো ঠিকানাটাও জানতে চায়নি। কিন্তু যতই মেঘা রিয়াজকে ভুল প্রমাণিত করুক।রিয়াজ জানে,এসব কেও একজন ইচ্ছে করেই করেছে।কারো ইশারায় হয়েছে এসব।কিন্তু রশনী মেয়েটা অদ্ভুত ছিলো।তার গায়ে শক্তি।আবার বুকের চিহ্ন আর গুহার চিহ্নের মিল।হটাৎ ভাঙ্গা বাড়িতে প্রবেশ।সব অদ্ভুত। তবে তার একটা কথা রিয়াজকে খুব হাসাচ্ছে।রিয়াজকে দানব দাবী করাটা হাস্যকর রিয়াজের কাছে।রিয়াজ ভাবলো,মেয়েটা হয়তো রহস্য বাড়াতে গিয়ে বেশিই অবিশ্বাস্য কথা বলে ফেলেছে।কিন্তু বাকি গুলা হিসেব করলে এইটাও সত্য লাগে। কিজানি, রিয়াজ চিন্তা করা বন্ধ করে ফোন টিপছে।
অন্যদিকে রশনী তার বাসায় বসে বসে চিন্তা করছে। একটা মানুষ দানব হয় কিভাবে।
অন্যদিকে মেঘা নিজের রুমে গিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে যায়। ডিওএমএম এর নজর আবার রিয়াজের উপর পড়েনি তো?
সমাপ্ত