#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- (অন্তিমপাতার প্রথমাংশ)
– ভোর রাতে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও বাইরে শীতল বাতাস বইতে থাকে,,,,,অর্কিড ফুলের উপর বিন্দু বিন্দু জল জমা হয়েছে,,,, রাস্তা গুলো যেন বৃষ্টির জলে ধুয়ে নতুন রূপে সজ্জিত হয়েছে,,,, থেকে থেকে পাখির কোলাহল শোনা যায়,,, আকাশে উড়তে থাকে রঙ বেরঙের পাখি,,,,ধিরে ধিরে আকাশের অন্ধকারকে ম্লান করে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে,,,,,
– আর সকালের সেই কোমল রোদ ব্যালকনির থাইগ্লাসকে ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করে, এবং সারাঘরকে মৃদু আলোয় ভরিয়ে দেয়,,,হঠাৎ চোখের উপর আলোর আভাস পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে পেখম,, তারপর কিছু সময় পর আস্তে আস্তে চোখ খোলো,,,চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে সামনে তাকতেই নিজেকে আবিরের উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করে,,, তারপর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় গুটিয়ে নেয় বিছানার চাদরে নিজেকে,, কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠছে ওর,,,,কি করে আবিরের সামনে যাবে??তার চোখে চোখ রাখবে,,,ও তাড়াতাড়ি করে নিজের শরীরে বিছানার চাদর টা ভালো করে জড়িয়ে উঠে যেতে চাই,, কিন্তু পারে না,,, তার আগেই দুটো শক্ত হাত ওকে পিছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে,,, ও লজ্জায় পিছনে তাকাতে পারে না,,,, হঠাৎ অনুভব করলো এই ঠান্ডা ওয়েদারের মধ্যেও ও ঘেমে যাচ্ছে,,,আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,,,প্লিজ ছাড়ুন না,,,আমি ওয়াশরুমে যাবো,,
– ওয়াশরুমে যাবে তা ঠিক আছে,, কিন্তু এই ভাবে পিছনে ফিরে আছো কেন?? আমার দিকে ফিরে তাকাও,,,
– আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, প্লিজ ছেড়ে দিন না,,,
– সত্যিই কি ছেড়ে দেবো??? ভেবে বলো??
– আবির কথাটা বলার সাথে সাথেই পেখম আবিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,,, আর তাই দেখে আবির ঠোঁট কামড়ে হাসে,,,,তারপর পেখমের কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বলে,,,
– ” সে কি জানে এবারের জন্মদিনের সব থেকে সেরা উপহার টি সে আমাকে দিয়েছে?? সে কি জানে আমার জীবনের সব থেকে সেরা রাতটি কাল ছিল”??
– আবিরের কথায় পেখম কোনো উত্তর দেয় না,,,,আবির পেখমের অগোছালো চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আবার বলে,,,,
– “তার তো আমার সামনে এত লজ্জা পাওয়ার কথা নয়,,,কারণ তার লজ্জা তো আমি কাল রাতেই সব নিবারণ করে দিয়েছি,,,( কথা গুলো বলে পেখমের মুখটা উচু করে কপালে ভালোবাসার পরশ দেয়)
_________________________________________
– আরে ছবি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে,,কিন্তু তুই একটাও তুললি না ওর সাথে???
– উফফ বৌমনি একটু আস্তে কথা বলো,,,এত উত্তেজিত ভালো না এখন তোমার শরীরের পক্ষে,,,দাদুন কেমন আছে এখন??
– এখন একটু ভালো,,, তবে ডাক্তার সকালে এসেছিল,,,,
– আমি বরং একটা কাজ করি,,,উনাকে বলে আমি আজকেই কলকাতায় চলে যায়,,,, তোমারো শরীর টা ভালো যাচ্ছে না,,,আমি এখানে শান্তি মতো ঘুরতে পারবো না,,,
– ওরে আমার পাকা গিন্নি ,,তোমাকে অত চিন্তা করতে হবে না,,, মা ,মামনি,,, বাবা,পাপা সবাই আছে ,,আর তোর দাভাই তো আছে,,,অত চাপ নিস না,,,
– ডাক্তারের চেকআপ কবে??
– কালকে বিকেলে,,,,তোর দাভাই নিয়ে যাবে,,,
– তুমি একটু সাবধানে থাকবে,,,আর মাকে বলো আমি ফোন করেছিলাম,, এখন রাখছি,,দেখি কি রান্না করি,,,
– এই শোন তার আগে দেখ ফ্রিজে কি আছে??
– তেমন কিছুই নেই বৌমনি,,, ৫০০ মতো মটন আছে,,,আর অল্প চিংড়ি মাছ আছে,,,একটা ভাড়ে অল্প টক দই আছে,,,আর স্যালাটের সব সবজি আছে,,, আটার ব্রেড আছে,,ফল আছে,,ডিম আছে,,,
– তাহলে কি রান্না করবি??
– কি আর করবো,,উনি তো আবার আমাদের মতো খান না,,,তাই ভেবেছি,,,এখন জুস আর আফ বয়েল ডিম সিদ্ধ মরিচ গুঁড়ো দিয়ে আর একটা ব্রেড দেবো,,,দুপুরে মটন স্টু আর সবজি ও ফ্রুটস স্যালাট দেবো আর পায়েস ,,,রাতের টা এখনো ভেবে দেখিনি,,
– এইগুলো তো দাদাভাই কে দিবি,,,কিন্তু তুই কি খাবি??
– ও আমি,,কেন গরম গরম ভাত আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি,,, আর তার সাথে টক দইতে একটু চিনি মিশিয়ে নেবো,,ঠিক আছে এখন রাখছি,,,
-ঠিক আছে রাখ,,,আমিও কিছু খায়,,,কেমন যেন খিদে খিদে পাচ্ছে,,,
________________________________________
– আবির রেডি হয়ে লিভিং রুমে এসে দেখে পাখি রান্নাঘরে রান্না করছে আর বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের মুখ মুছছে,,,, তাই দেখে আবির পেখমের কাছে গিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে,,,
– নিজের কোমড়ে হঠাৎ কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে পেখম,,, ওর আর বুঝতে বাকি থাকে না এটা কার স্পর্শ হতে পারে কারণ এটা যে ওর চিরচেনা স্পর্শ,,, আর তার থেকে বড়ো কথা হলো সেই মানুষটির শরীরের ঘ্রাণ, ও কাজ করতে করতে বলে,,,
– আপনি টেবিলে গিয়ে বসুন,,, আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি,,, এখন একদম জ্বালাতন করবেন না,,,
– আমি তো ভাবলাম বাইরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে ,,,তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,,,
– ঘুরতে যাবো কিন্তু বিকেলের দিকে,,,এখন না,,,এমনিতেই কালকে আপনি ঘুমাতে দেননি সারারাত,,, ভোরের দিকে যদিও বা ঘুমালাম কিন্তু সকালের আলোর জন্যে ঘুম টা ভেঙে গেল,,,তাই আমি আজ সারা দুপুর ঘুমাবো,,,,
– সে তুমি ঘুমাতেই পারো কিন্তু যে কটা দিন এখানে আছো আমি কিন্তু একটা রাতও তোমাকে ঘুমাতে দেবো না,,,,বরং জ্বালাতনের মাত্রাটা একটু বারিয়ে দেবো,,,,
– আপনি ভীষণ লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন,,,, মুখে কিন্তু কিছুই আটকাচ্ছে না আপনার,,,,ছাড়ুন আমাকে কাজ করতে দিন,,,
– হমমম হুহুউউ প্রথম কথা আগে আটকাতো কিন্তু কাল রাতের পর থেকে কিছু আটকাবার কথা না,,,আর দ্বিতীয়ত এখন ছেড়ে দিচ্ছি পরে কিন্তু ধরলে কোনো ছাড়াছাড়ি হবে না,,,( কথাটা বলেই পেখমের গালের পাশে অধর ছোঁয়ায়,,, আর সেই ছোঁয়ার আবেশে পেখম চোখ বন্ধ করে দেয়,,,, তাই দেখে আবির জোড়ে পেখমের কোমড়ে চিমটি কাটে,,,পেখম আওয়ুচচ করে শব্দ করতেই আবির ওকে ছেড়ে দৌড় দেয়,,,আর পেখম ওর পিছনে পিছনে দৌড়ায়)
-দাঁড়ান আপনি,, যদি সাহস থাকে তো একবার দাঁড়িয়ে যান,,,( সোফার পাশ দিয়ে গোল করে ঘুরছে দুজন,,)
– ক্ষমতা থাকলে ধরে দেখাও,,,
– তবে রে ( সোফা থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারে আবিরকে)
– তুমি আমাকে বালিশ দিয়ে মারলে তো,,,ঠিক আছে এবার দেখো কি করি তোমাকে বলেই উল্টে পেখমকে ধরতে যায়,,,আবিরকে এইভাবে আসতে দেখে পেখম ছুটে বেডরুমে চলে যায় তারপর দরজা লক করার আগেই আবির পৌঁছে যায়,, আর পেখমের বাহু দুটো ধরে ফেলে,,,
– বলো কি করবে এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি??? বালিশ ছুড়ে মারলে কেন??( গম্ভীর হয়ে)
– পেখম কিছুটা ভয় পেয়ে বলে সরি,,আর কোনো দিন এরকম হবে না,,,(মাথা নিচু করে)
– পেখমের চুপসানো মুখটা দেখে আবির মিটিমিটি হাসে,,,তারপর নিজেকে সামলে বলে “এরকম টা বার বার হবে” বলেই পেখমের গালে চুমু খায় তারপর পেখমের কোমড়ে গোজা শাড়ির আঁচল খুলে দিয়ে জোড়ে চিমটি কাটে তারপর খুব জোড়ে হাসতে হাসতে দৌড়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে,,,,
– পেখম কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,, তারপর পুরো বিষয়টা বোধগম্য হতেই ও বলে ওঠে” দাঁড়ান আপনি,,আজকে আপনাকে আমি ছাড়বো না,,,বলেই দৌড়ে যায় আবিরের দিকে,,, আর আবির ওর থেকে পালাতে পালাতে বলে,,
– কে বলেছে তোমাকে ছাড়তে,,,আমি তো বলছি আমাকে ধরে রাখো,,,আমাকে ছেড়ো না( চোখ টিপ দিয়ে)
– আবিরের এইরকম কথা শুনে পেখম বলে” আপনি একটা অসভ্য লোক,,,খেতে আসুন,, অনেক দেরি হয়ে গেছে,,,
___________________________________________
– তুই কিন্তু ভীষণ দুষ্টু হয়ে যাচ্ছিস বাবা,,,,মাকে কেউ এভাবে কষ্ট দেয়,,,,তুমি দেখতে পাচ্ছো না মা কত কষ্ট পাচ্ছে তোমার লাথি দেওয়াতে,,,তীয়া খুব কষ্ট হচ্ছে??(পুলক)
– হমম ভীষণ দুষ্টু হয়েছে ঠিক তোমার মতো,,,
– আমি আবার কি করলাম,,, চ্যাম্প দেখেছিস তো তোর মা আমাকে দোষ দিচ্ছে,,,
– তা ছাড়া কি করবো ,,আপনিও আমাকে ভীষণ জ্বালাতন করেন,,, সব সময় জোড় করে খাওয়ান,,,
– আবার আপনি,,,,তুমি করে বলতে বলেছি না,,,
– দশ বছরের অভ্যাস কি করে পাল্টাবো বলো,,,
– অনেক কথা হয়েছে এখন এই গরম দুধ টুকু খেয়ে নাও,,,হলুদ মেশানো আছে,,,
– আমার খেতে ইচ্ছা করছে না,, প্লিজ ,,
– একদম চুপ করে আমার কথা শুনবে,,,দুপুরে যা খেয়েছিলে সব বমির করে দিয়েছো,,, ওষুধ গুলো তো খেতে হবে,,তাড়াতাড়ি ফিনিশ করো তীয়া,,,
– বুঝলি চ্যাম্প তোর বাবা আমাকে একটুও ভালোবাসে না,,,,জোড় করে সব সময়
– আচ্ছা ভালোবাসি তাই সব সময় জোড় করি,,,বুঝলি চ্যাম্প তোর মা পুরো পাঁচ- ছয় বছরের বাচ্চা হয়ে গেছে ,,,জোড় করে তাকে খাওয়াতে হয়,,,আর একটু কিছু হলে সে রাগ করে,,,,
– এই একদম আমাকে পঁচাবেন না,,,
-ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,,আবার আপনি???
– বেশ করবো আপনি বলে ডাকবো,,,,আপনি তো আমার ” আপনি ময় তুমি,,,,খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি”।
– আমিও খুব ভালোবাসি তোমাকে,, আর হ্যাঁ চ্যাম্প কেও,,,
__________________________________________
-আমি তো মাত্রই বায়না করতে যাচ্ছিলাম তখন আপনি কি করে বুঝলেন আমার তখন আইসক্রিম আর ভুট্টা খেতে ইচ্ছা করছিল???
– আমি তোমার নাড়ি নক্ষত্র সব জানি পাখি ,,,সুতরাং এইসব জানা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না,,,( ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে)
– এখন এসব কাজ ফাজ রাখুন না,,,চলুন একটু ব্যালকনিতে গিয়ে বসি,,,আমি আপনার জন্য কফি করে আনছি,,,
– না তার আর দরকার নেই,,, এমনিতেই তোমার জন্য আজকে আমার খাওয়ার রুটিন উলোট পালোট হয়ে গিয়েছে,,, তার উপরে অত দুধ,মিষ্টি, বাদাম কিসমিস দিয়ে পায়েস করে জোড় করে খাওয়ালে আমাকে,,, পেটে আর একফোঁটা জায়গা নেই,,,
– অত মেইনটেইন করে কি হবে,,,সেই তো আপনি বুড়োই থেকে যাবেন,,,
– আমি বুড়ো?? আমাকে দেখে কি তোমার বুড়ো মনে হয় পাখি???
– তা নয় তো কি?? এমন সুন্দর সময়ে কেউ ল্যাপটপ মুখের সামনে রেখে কাজ করে?? কোথায় আমি ভাবলাম আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে দেখবো,,,তা না,,,আপনি সত্যিই একটা বুড়ো লোক,,( বলেই ব্যালকনির দিকে চলে যায় পেখম)
__________________________________________
– আকাশের চাঁদটা আজ সম্পূর্ণ গোলাকৃতি,,, মিটিমিটি তারা ভর্তি আকাশে আজ চাঁদটাকে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে পেখমের কাছে,,,থেকে থেকে মৃদু হাওয়া এসে ওর অবাধ্য চুল গুলোকে আরো অবাধ্য হতে সাহায্য করছে,,,,পাশে থাকা ঠান্ডা জলের বতল থেকে এক ঢোক জল পান করলো পেখম,, জল পান করার সময় কিছু জল ঠোঁট দিয়ে গড়িয়ে গলায় পৌঁছে যায়,,, জলের বতল টা রেখে ওড়না দিয়ে সেটা মুছে নিতেই আচমকা কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে,,,পেখম একটুও চমকায় না কারণ ও জানে আবির ছাড়া আর কেউ না,,তাই ও নড়াচড়া না করে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,
– এই পাখি সরি,,,চলো আমি কফি করে আনছি,,,তারপর একসাথে বসে গল্প করবো,,,
– তার দরকার নেই,,, এখন আমার কফি খাওয়ার মুড নেই,,,
– প্লিজ পাখি রাগ করো না,,, আচ্ছা বাবা সরি বলছি তো,,,ঠিক আছে তোমার যখন যা ইচ্ছা হবে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে আমি একদম মানা করবো না,,, এবার আর রাগ করে থেকো না,,,
– কে বললো আমি রেগে আছি?? আমি রাগ করে নেই,,,,
– সে কি জানে ,সে যখন রেগে থাকে তখন তার নাক লাল হয়ে যায়?? সে কি জানে, সে যখন রেগে থাকে তখন এই হৃদয় ব্যাকুল হয়ে যায় তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে??
– আবিরের কথায় পেখম মাথা নিচু করে নেয়,,আর তাই দেখে আবির বলে ওঠে,,
– ভালোবাসি তো,,,কেন সে বোঝেনা আমাকে??
– আমি যথেষ্ট বুঝি আপনাকে,,, আর আপনার থেকেও বেশি আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,কিন্তু আপনি সেটা বোঝেন না,,,,
– আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে,, এবার তো ক্ষমা করে দাও,,,ঠিক আছে ফ্রিজে আরো এক বাটি পায়েস আছে না,,,ওটাও খেয়ে নেবো,,তারপর তোমার ওই আইসক্রিম গুলোও খাবো এবার একটু হাসো,,,,
– আবিরের এমন কথা শুনে পেখম হেসে ফেলল,,,তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে বলে,,,আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,, আমি একটা অন্যায় করেছি,,,,
– পেখমের কথায় আবির ভ্র-যুগল কুঁচকে বলে,, কি অন্যায় করেছো???
– আমি সোহিনীকে নিয়ে আপনাকে সন্দেহ করেছিলাম আর তাই সেদিন আপনাকে ওইভাবে খারাপ খারাপ কথা বলে কষ্ট দিয়ে ছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি যতটা না কষ্ট পেয়েছেন তার থেকে বেশি কষ্ট আমার হয়েছে,,,আপনি রাগ করে চলে আসার পর প্রতিটি রাত আমার নির্ঘুমে কেটেছে,,,
-,,,,,,,( নিশ্চুপ)
– আবির চুপ করে থাকায় পেখম আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,প্লিজ আমার উপর রাগ করে থাকবেন না,,, আমি অন্যায় করেছি তার জন্য ক্ষমাও চাইছি,,,,
– তা ভুলটা ভাঙ্গলো কি ভাবে??( গম্ভীর হয়ে)
– সোহিনী যখন ওর বিয়েতে ইনভাইট করতে এসেছিল,, তারপর রাজিব এর কথা বললো,,,তখন,,,( পেখমের কথা গুলো শুনে আবির ওকে বুক থেকে ছাড়িয়ে দিতে চাই,,কিন্তু পারে না,,, পেখম ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,,)
– প্লিজ ক্ষমা করে দিন আমাকে,,, ঠিক আছে আমাকে আপনি যা শাস্তি দেবেন তা আমি মাথা পেতে নেবো,,,তবুও কথা বলুন আমার সাথে,,,চুপ করে থাকবেন না,,, রাগ করে আবার আমাকে ছেড়ে যাবেন না,,, আমার ভীষণ কষ্ট হয়,,,, মনে হয় আমি বোধহয় মরে যাচ্ছি,,,,(এতক্ষণ চুপ করে পাখির কথা শুনলেও শেষের কথাটা শুনে আবির আর চুপ করে থাকতে পারে না,,, ও শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,)
– আহহঃ পাখি চুপ করো,,,তোমার মুখে যেন আর কোনো বাজে কথা না শুনি,,,,তারপর কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,,,আমি রাগ করে নেই,,সব কিছু শুনে একটু কষ্ট পেয়েছি,,তুমি আমাকে এতটা ছোট না ভাবতেও পারতে,,,( আবিরের মুখে এরকম কথা শুনে পেখম কেঁদে ফেলে বলে সরি,,,আর কোনো দিন হবে না,,)
– ঠিক আছে আমি রাগ করে নেই আর,,,প্লিজ কান্না করো না,,, তুমি জানো না তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না,,,, আর তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো,,,আর তুমি মরার কথা বললে কি করে,,,যতদিন এই আবির চৌধুরী জীবিত থাকবে ততদিন সে তার পাখিকে আগলে রাখবে,,,,
– সত্যিই আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন??
– তার আগে তুমি বলো আর কোনো দিন ভুল বুঝবে না ,,,আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবে না নিজের থেকে,,,,
– না রাখবো না,,,এই ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবো,,,
– তাহলে আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম,,, কিন্তু তোমাকে তোমার অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে,,,
– শাস্তির কথাটা শুনে পেখমের মুখ চুপসে যায়,,,তবুও নিজেকে সামলে বলে ,,,কি শাস্তি,,,
– আবির পেখমকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,,ভালোবাসার শাস্তি,,,
– পেখম লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ গুজে বলে,, আপনি কোনো দিনো শুধরাবেন না,,,
– সত্যি বলতে কি আমি শুধরাতে চাইও না,,,,(বলেই ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়,,,মেতে ওঠে পাখির সাথে দুষ্টুমিতে)
_________________________________________
– প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়িটা চালান,,,আমার খুব টেনশন হচ্ছে,,,, না জানি বৌমনি কেমন আছে??
– উফফফ পাখি টেনশন করা বন্ধ করো,,,ফ্লাইট আমাদের আধাঘণ্টা পর,, মা কি বললো সেটা আগে বলো,,,
– বৌমনির লেবার পেইন উঠেছে,,, ওরা নার্সিংহোমে নিয়ে গেছে,,,দাভাই ভীষণ চিন্তা করছে,,,কারণ ডেলিভারি ডেট এখনো কুড়ি দিন পর ছিল,,,
– ঠিক আছে,, চিন্তা করো না,,, কিছু হবে না তীয়ার,,, আমরা যাচ্ছি তো,,,ইমারজেন্সি দুটো টিকিট বুক করে দিয়েছি,,,
-কখন থেকে আপনার ফোন বাজছে,, রিসিভ করুন,,,
– হ্যালো( ফোন রিসিভ করে)
– হ্যালো স্যার,, এদিকে একটা সমস্যা হয়েছে,,, আপনাকে একবার অফিসে আসতে হবে,,,( ম্যানেজার)
– মানে কি অসুবিধা?? আর আমি এখনই কলকাতায় ব্যাক করছি ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য,,,
– কিন্তু স্যার এইদিকে ডিল ফাইনাল করার জন্য ক্লাইন্ট রা চলে এসেছে বিনা নোটিশে,,,এখন বারণ করে দিলে এই ডিলটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে,,রাজিব স্যার থাকলে কোনো সমস্যা হত না,,,,
– ঠিক আছে রাখো,,আমি যাচ্ছি,,,( ফোন রেখে দেয়)
– পেখম এতক্ষণ সব কথা গুলো শুনেছে,,,তাই ও আবিরকে বললো,,, আমি যাবো কলকাতায়,,, আপনি অফিসে যান,,,
– তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?? আমি তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না,,,আমার মিটিং শেষ হয়ে গেলে তারপর যাবো,,,নয়তো কাল যাবো
– প্লিজ যেতে দিন আমাকে,,আমি এখানে থাকলে টেনশনে শেষ হয়ে যাবো,,আর মাত্র তো আড়াই ঘন্টার পথ,,,আর এটা ভুলে যাবেন না যে আমি কিন্তু একাই এসেছিলাম,,,, প্লিজ,,,,
– উফফফ ঠিক আছে,, কিন্তু তুমি কলকাতায় পৌঁছে আগে আমাকে ফোন করবে,,,এখন বাজে সাড়ে দশটা,,, তোমার ফ্লাইট এগারোটার সময়,,,ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিচ্ছি,,,
– আর আপনি ভালো করে মিটিং টা শেষ করবেন,,, দেখবেন এই ডিলটা আমরা পাবো,,,
__________________________________________
– হ্যালো আবির,,,( অনুপমা)
– হ্যাঁ মা বলো,,তীয়া কেমন আছে??
– ও ভালো আছে,,,আর আমাদের তীয়ার ছেলে হয়েছে,,,ওরা দুজনেই ঠিক আছে,,, পেখম কোথায় ওকে একটু দে,,,ওর ফোন অফ বলছে,,,,
– মা ও এখন প্লেনে,,,আর আমি অফিসে,,জুরুরী মিটিং থাকায় আমি যেতে পারিনি,,,ও গেছে,,,
– তুই ওকে একা ছাড়লি কেন??
– তার আগে এই প্রশ্নটা আমি তোমাকে করি,,,,তুমি ওকে আগের দিন একা ছেড়েছিলে কেন??
– আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে,,,
– হমম,,শোনো ওর ফ্লাইট মেইবি দেড়টার দিকে ল্যান্ড করবে,,,তুমি এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠিয়ে দাও,,,আমি মিটিং থাকবো,,,ও যেন পৌঁছে আমাকে ফোন বা ম্যাসেজ করে দেয়,,,আর শোনো আমি কালকে যাবো,,,তুমি চ্যাম্পের কটা ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দাও,,,,
– ঠিক আছে,,,,
___________________________________________
– প্রায় দুটোর দিকে আবিরদের মিটিং শেষ হয়,,, ও নিজের কেবিনে এসে বসে,,,তারপর গ্লাস থেকে জল পান করে ফোনটা হাতে নেয়,,,ফোনটা অন করে দেখতেই ও ভ্রু কুঁচকে ফেলে,,,ওর ফোনে ১০০ টার বেশি মিসডকল,,, সব মা,মামনি, পুলক,,,বাবার ফোন থেকে,,, ও দ্রুত পুলকের ফোনে ফোন করে,,,ফোন রিসিভ হওয়ার পর
– হ্যালো পুলক?? কি হয়েছে এত বার ফোন করেছিস,,,,
– ,,,,,,
– কি হলো কথা বলছিস না কেন??
– আবির,,,পেখু,,,
– হ্যাঁ পাখির,,,কি হয়েছে?? ও কোথায়??
– আবির পাখিদের ফ্লাইট ক্রাশ করেছে,,, তুই একটু টিভি অন করে দেখ,,,আমি এখন এয়ারপোর্টে,,,আর বাবারা হাসপাতালে গিয়েছে যেখানে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,,,
– পুলকের কথা শুনে আবিরের হাত থেকে ফোন পরে যায়,,,,দ্রুত নিজেকে সামলে টিভি অন করে আবির,,,নিউস চ্যানেলে দিতেই দেখে,,,
– নমস্কার এই মুহূর্তে জানা যাচ্ছে ব্যাঙ্গালোর টু কলকাতা ফ্লাইট নম্বর AK12267 কলকাতার মাটিতে ল্যান্ড করার পাঁচ মিনিট আগেই ক্রাশ হয়ে যায় শূন্যে,,, গোপন সূত্রে জানা যাচ্ছে যে হঠাৎ ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে পাইলট প্লেনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে,,,,৯৯% যাত্রী নিহত,,,কিছু সংখ্যক যাত্রীকে প্যারাসুটের মাধ্যমে বাঁচানো গেলেও তারা বেশ গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন,,,
– নিউসটা শোনার পর আবিরের চোখ থেকে অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়লো,,,ও খুব জোড়ে পাখি বলে চিৎকার করে উঠলো,,,আর সেই চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো ওর কেবিনে,,,,
– এরই মধ্যে খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,,, রাজিব আর সোহিনী শোনা মাত্রই চেন্নাই থেকে ওরা আধাঘন্টার মধ্যে চলে আসে,,,
– পুলকরা পেখমের কোনো সন্ধান পায়নি,,,অনুপমার অবস্থা শোচনীয়,,, মনোরমা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন,,, তীয়াকে এখনো জানানো হয়নি,,, একটা খুশির সময় যেন খারাপ সংবাদে বিষাদে পরিণত হয়েছে,,,,
– তবে কি আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না ,,,আমার জীবন থাকতেও আমি তোমাকে আগলে রাখতে পারলাম না,,, ভগবান তুমি এত নিষ্টুর কেন?? আমাকেও তুলে নাও,,,,(আবির)
– আবিরকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে,,,, এয়ারপোর্ট থেকে বিমান সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে,,, আপাতত এক সপ্তাহ কোনো বিমান আকাশে উড়বে না,,,এইদিকে আবির পাগলামো করছে কলকাতায় যাওয়ার জন্য,,, আর সমানে বলে যাচ্ছে কেন আমি যেতে দিলাম তোমাকে,,,,কেন কেন কেন????জোড়ে চিৎকার করে কাঁদছে,,,আর ভাঙচুর করছে,,, না পেরে রাজিব ডাক্তার ডেকে আনে,,, ডাক্তার এসে ঘুমের ইনজেকশন দিতেই আস্তে আস্তে আবিরের দেহটা নিস্তেজ হয়ে যায় আর ঘুমিয়ে যায় গভীরতায়,,,,,
– আজ আবিরের কষ্টে তাল মিলিয়ে আকাশ ভেঙ্গে কাঁদছে,,,তবে কি এই পরিণতি ছিলো এই ভালোবাসায়???
চলবে,,,,,,
(রিয়্যাক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন,,,,কপি পেস্ট করবেন না)