#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১৭
– মাটিতে কাঁদা জলের উপর মোটা মোটা ফোঁটা ফোঁটা জল আকাশ থেকে গোল হয়ে পড়ে চারেদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে,,,আর সেই সাথে কালো কুচকুচে আকাশের ওই গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে আলোর ঝলকানি শুরু হয়েছে সেই সন্ধ্যে থেকে,,,প্রকৃতির এমন রূপ দেখে পেখমের মনে পড়ে যায় সেদিনের সেই রাতের কথা,,ভাবলেই শরীর শিহরিত হয়ে যাচ্ছে পেখমের,,, সে কখনোই ভুলতে পারবে না তাদের সেই ঘনিষ্ঠতার কথা,,,লজ্জায় নামিয়ে নেওয়া চোখে ভেসে ওঠে সেই মুহূর্ত গুলো,,,
_____________
-আবির চলে যেতে বলার পরেও পেখমের বেহায়া মন ওখান থেকে এক পা নাড়াতেই দেইনি,, ওই মাহেন্দ্রক্ষণে পেখমের কি হয়েছিল সে নিজেও জানত না,,চলে যেতে গিয়েও তার পা থেমে গিয়েছিল,,, বৃষ্টির দাপটে চারপাশে সব সাদা সাদা লাগছিল আর তারই মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল তার মন-পুরুষ,,,,,,মনটা তখনই বেহায়া হয়ে ছুটে গিয়েছিল তার কাছে,,,,পিছন থেকে জাপটে ধরে ছিল তাকে,,,
-আচমকা পেখমের স্পর্শ পেয়ে আবিরও পারিনি নিজেকে ধরে রাখতে,,,বুকের উপর থেকে পেখমের হাত দুটো সরিয়ে পিছনে ফিরলো সে,,,পেখম তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,,, তুমুল বর্ষণে পেখমের ভিজে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে রয়েছে সারা মুখে,,,,শাড়িটাও এলোমেলো হয়ে লেপ্টে আছে ওই নরম শরীরে,,, আবির আচমকাই পেখমকে নিজের বুকে জাপটে জড়িয়ে ধরে,,,,প্রেমের এই প্রবল বর্ষণে দুজনেই ভিজে একাকার হয়ে যায়,,আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় ওদের হৃদস্পন্দন, যা তারা উভয়ই একে অপরের টা শুনতে ব্যস্ত ছিল তখন,,,,
-তারপর হঠাৎ পেখম যখন বুঝতে পারে সে কি করে ফেলেছে ঘোরের মধ্যে, তখনই লজ্জায় সরে চলে আসতে চাই আবিরের বুক থেকে,,,কিন্তু আবির তাকে বাঁধা দিয়ে শক্ত করে কোমড় ধরে রাখে। আবিরের হাতের শীতল স্পর্শে কেঁপে ওঠে পেখমের সারা শরীর,,, ওমনি ঘোষিত হয়ে যায় দুজন মানব-মানবীর শরীরের উত্তেজনার আভাস,,,আবির আস্তে করে পেখমের মুখে উপর পড়ে থাকা অবাধ্য চুল গুলো পরম যত্নে কানের লতিতে গুজে দেয় আর তারপরেই পেখমের চোখের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে,,,,,
Yuhi Baras Baras Kaali Ghata Barse
Hum Yaar Bheeg Jaaye Is Chaahat Ki Baarish Mein
– আবিরের সাথে একসময় তাল মিলিয়ে পেখম গেয়ে ওঠে,,
-meri Khuyli Khuli Lato Ko Suljaaye
Tu Apni Ungliyon Se Main To Hoon Isi Khwaayish Mein
-তারপর আবার আবির গান ধরে,,,
Sardi Ki Raaton Mein Hum Soye Rahe Ek Chaadar Mein
Hum Dono Tanha Ho Na Koi Bhi Rahe Is Ghar Mein
Zara Zara Behekta Hain Mehekta Hain
Aaj To Mera Tan Badan
Main Pyaasi Hoon Mujhe Bhar Le Apni Baahon Mein
Aaja Re Aa Re
-তারপর দুজন দুজনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে একে অপরকে অনুভব করেছিল সেদিন,, বৃষ্টির বেগ একটু কমলে আবির পেখমের কপালে অধরের উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে আবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে মাদকতা কন্ঠে বলে ওঠে,,
-” সে কি জানে না তাকে এভাবে এলোমেলো অবস্থায় দেখে আমি যে বেসামাল হয়ে পড়ি বারবার,,,মন যে চাই কিছু অন্যায় কাজ করে ফেলি,হোক সে যতই নিষিদ্ধ,,, আজ যদি সে আমার অসহায়ের কথা জেনেও না আটকায় তাহলে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারবো না,,, হয়ে যাবে কোনো এক নিষিদ্ধ কাজ “।
-আবিরের কথা শ্রবণ হতেই পেখম নিজেকে সময় নিয়ে ধাতস্থ করে,,তারপর আস্তে আস্তে করে আবিরের বুক থেকে মাথা তুলে আবিরের চোখের দিকে তাকায়,, তাকিয়ে দেখে আবির তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,পেখম অতি সন্তপর্ণে আবিরের বাম গালে একটা উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে মুখ নামিয়ে নেয় লজ্জায়। তারপর আবিরের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে টেরিস থেকে দৌড়ে চলে যায় নিজের ঘরে,,,,আবির তখনো লজ্জায় মাখামাখি সেই রমনীতেই আটকে আছে,,,আবার ঝুপ করে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে গিয়ে ওকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো ভালোবাসার অনুভূতিতে।
____________
-মুহূর্তেই পেখমের চোখ ভরে ওঠে অভিমানের বারিধারায়,,,সেইদিনের ঘটনার পর থেকে আবিরের সাথে আর কথা হয়নি পেখমের,,, কথা হয়নি বললে ভুল হবে,,, আবিরের দেখাটাও পাইনি পেখম। বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকি,,,পেখমের মনে হঠাৎ হঠাৎ নানা প্রশ্ন জাগে, তবে কি মানুষটা তাকে ভালোবাসে না?? ভালোই যদি বাসবে তবে আসছে না কেন তার সামনে,,,এখন যেন ওর মনে হয় আবির দা ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে,,,, নিজেকে মাঝে মধ্যেই পাগল পাগল লাগে। ও তো ভেবেছিল আবিরদার রাগ কমে গেলে ঠিক এই বাড়িতে আসবে আর দাদুনের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নেবে,,,,কিন্তু কোথায় সেই মানুষটা? তবে কি আমার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তার কোনো যাই আসে না??
-বিষাদ বিষাদ বিষাদ,চারপাশ শুধু বিষাদে ছেয়ে গেছে পেখমের মনে হচ্ছে,,, নিজেকে খুব একা লাগছে,,,এই যে ও এই এক সপ্তাহের প্রায় বেশিরভাগ সময় ব্যালকনিতে বসে থাকে শুধুমাত্র আবিরের জন্যে সেটা কি ওই মানুষটা বোঝে না?? আমি যে কষ্ট পাচ্ছি,,, আমার যে মরে যেতে ইচ্ছা করছে সেই খবর কি সে রাখে?? এমন হৃদয়হীন মানুষকে কেন ভালোবাসলাম ভগবান? কথা গুলো নিজের মনে বলে কেঁদে ওঠে পেখম,,,,আজ রাতটাও ও নির্ঘুম কাটাবে,,,,তবুও এই ব্যালকনিতে থাকবে ,,,,,
__________________________________________
-পেখু তুই এখানে ঘুমিয়েছিস কেন?? ঠান্ডা লেগে যাবে তো,,,চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস?? পেখু ওঠ,,(বৌমনি)
-পেখম আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে তীয়া ওর সামনে বসে,,,,
-কি রে বল,,এখানে শুয়ে ছিলি কেন কথাটা বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখে ওর দাদাভাই রকিং চেয়ারে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটপে কি সব কাজ করছে,,,, ও সেদিক থেকে নজর সরিয়ে পেখমের দিকে তাকায়,,,
-বৌমনি আসলে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না,,, ঠিক আছে তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,,,
-তীয়া চলে যাওয়ার পর পেখম একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়,,তারপর নিজের মনে বলে ওঠে “আমি তো ভেবেছিলাম এই বুঝি আপনি এলেন আর আমাকে ধমক দিয়ে বলবেন- পাখি তুই এখানে কেন ঘুমিয়েছিস,,, যা ঘরে যা,,,নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে,,, তখন আবার মাথা ব্যথা করবে” কোথায় আপনি তো এলেন না,,,,,কেন আসছেন না আমার সামনে,,, কথা গুলো বলে বেশ জোড়েই কেঁদে ওঠে পেখম,,, বেশ কিছুক্ষণ কান্না করার পর শোয়া থেকে ওঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্যে,, আর ঠিক তখনই আবিরকে দেখে ল্যাপটপে কাজ করতে,,,আবিরকে দেখে আবার অভিমানী চোখে অশ্রুরা এসে জমা হতে থাকলো পেখমের। অশ্রুসিক্ত নয়নে একবার আবিরকে দেখে ব্যালকনি থেকে দৌড়ে চলে যায় ঘরে,,,,,না ওর সত্যিই মরে যেতে ইচ্ছা করছে,,,,,,আবিরের এই অবহেলা সহ্য করতে পারছে না,,,
________________________________________
-পেখম ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখলো যে ডাইনিং টেবিলে ঋষি বসে আছে,,, ও ওইদিকে না তাকিয়ে সোজা রান্নাঘরে গেল,,,
-মা খিদে পেয়েছে,, কিছু খেতে দাও,,,
-হ্যাঁ দিচ্ছি যা বস টেবিলে,,, আর শোন খেয়ে রেডি হয়ে নিবি ঋষি এসেছে তোকে নিয়ে শপিং মলে যাবে তাই,,,
-মা আমি যেতে পারবো না,,,
-পেখম মাথা গরম করাবি না আমার,,, যা বলছি তাই কর,,,ভুলে যাস না দাদুন আছে এই বাড়িতে,,,
-মায়ের কথায় পেখম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের দিকে যায়,,,
___________________________________________
– নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শপিং করতে গেল পেখম,, যেখানে বিয়েটাই হয়ে যাচ্ছে সেখানে ওর আর কি করার আছে,,শপিং মলে গিয়ে ঋষি আর পেখমের মধ্যে তেমন কথা হয়নি প্রয়োজন ছাড়া,,,ঋষি মনে মনে ভাবে পেখম হয়তো লজ্জা পাচ্ছে তার সামনে,,
-পেখম দেখো এই শাড়িটা,, এটা তোমাকে খুব মানাবে,,,
-পেখম দেখলো ঋষি কালো কালারের একটা মসলিন শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,
-আমাদের বিয়ের পর প্রথম যেদিন ঘুরতে যাবো, তখন তুমি এটা পড়ো,,,
– ঋষির মুখে এই কথা গুলো শুনে পেখমের খুব করে বলতে ইচ্ছা হলো” এই কালারের কোনো শাড়ি পড়ে আপনার সামনে কেন কারোর সামনেই আমি যাবো না,,, এই রঙের শাড়িতে আমাকে দেখার অধিকার তার শুধুমাত্রই তার,,,,,,কিন্তু বলা হলো না কথাটা,,একটু হেসে সম্মতি দিয়ে দিলো,,,পৃথিবীতে এমন অনেক কাজ করতে হয় যা নিজেদের অপছন্দ,,, ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও করতে হয় ,হয়তো পরিবারের জন্য,,,,ঠিক তেমনই এখন শপিং এরপর রেস্টুরেন্টে খাওয়া সব ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হবে পেখমকে,,,
-রেস্টুরেন্টের ভিতরে চুপচাপ বসে আছে ঋষি আর পেখম,,,ঋষি ওকে খাবার অর্ডার করতে বললে ও শুধু স্যুপ অর্ডার করে,,,
-শুধু স্যুপে হবে পেখম??
-হ্যাঁ , আমি বাইরের খাবার তেমন খায় না ,,,
-ও ঠিক আছে,,,ঋষি ওয়েটার কে দুটো স্যুপ আর পেখমের জন্যে একটা আইসক্রিম,,নিজের জন্য একটা জুস অর্ডার করলো,,,
-খাওয়ার সময় টুকটাক কথা বলার মাঝেই ঋষি পেখমকে বলে” মিস পেখম”
-পেখম স্যুপ খাচ্ছিল ঋষির ডাকে ওর দিকে তাকায়,,
-একবার ডাক্তার বলে ডাকোতো আমাকে,,,তোমার মুখে ডাক্তার ডাক টা বেশ ভালোই মানায়,,,
-সেটা না হয় সময় হলেই শুনিস,,,,তার জন্য একটু অপেক্ষা কর ব্রো,,,,
-হঠাৎ সেই চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পেখমের হৃদয় কেঁপে ওঠে,,, মস্তিষ্ক জানান দেয় সেই মানুষ টা তোর ঠিক পিছনে পেখম,,, পেখমের ধারণা কে সত্য করেই ঋষি বলে ওঠে”আবির তুই এখানে?? মানে কখন এলি”??
-আবির ওদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পেখমের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ঋষিকে বলে”এই তো ঘন্টা খানেক হচ্ছে,,, তারপর বল তোরা এখানে,, একসাথে সময় কাটানোর জন্যে এসেছিস??
– তা ঠিক নয় আমরা একটু শপিং করতে গিয়েছিলাম,, দেরি হয়ে গেল তাই একেবারে lunch করে নিচ্ছি,,তুইও আমাদের সাথে জয়েন কর,,
– সরি বন্ধু এখন আমার সময় হবে না,,, এখানে মিটিং ছিল তাই এসেছিলাম,,, এখন আবার অফিস যেতে হবে,,, তোরা কন্টিনিউ কর,,বাই( বলেই আবির চোখে সানগ্লাস পড়ে বেরিয়ে আসে)
– পেখমের খুব কষ্ট হচ্ছে,, যেই মানুষ টা ওকে ভালোবাসে,,আজ সেই মানুষটা তাকে এত অবহেলা করছে,,,,একটা বারের জন্যেও তাকায়নি ওর দিকে আবির,,,এই ভেবে গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না পেখমের,,, ও কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে ঋষিকে বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতে,,,
__________________________________________
-আজ সারাটা দিন পেখম নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছিল,,, দেবেন্দ্র আর পুলক বাড়ি না থাকায় মনোরমা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল,,, সন্ধ্যের পরে গিয়ে অনেক ডেকে তাই ঘর থেকে বের করেছে তীয়া পেখমকে।
-কি হয়েছে তোর?? আর মাত্র এক সপ্তাহ পর তোর বিয়ে,,, তুই যদি বিয়েতে রাজি না থাকিস তাহলে বল এখনো সময় আছে পেখু,,,(তীয়া)
-বৌমনির কথায় পেখম মুখ তুলে তাকায়,,, তার পর খুবই শান্ত কন্ঠে বলে”আমার কিছু হয়নি, চিন্তা করো না,,বৌমনি দাদুন কোথাও গো”??
-দাদুন তো তার ঘরেই আছে,,,
-ঠিক আছে,,(বলেই পেখম চলে যায় ওর দাদুনের ঘরে,,,নরেন্দ্র বাবু তখন গোয়েন্দার বই পড়ছে,,,আর বিমলা দেবী পান সাজছেন,,,)
-দাদুন আসবো??
-আরো এসো দিদিভাই,,,(বই থেকে মুখ তুলে) আজকাল তো এই বুড়োটার খোঁজ খবর নিচ্ছোনা,,,তা কিছু দরকার দিদিভাই??
-তেমন কিছু না দাদুন বলেই নরেন্দ্র বাবুর পায়ের কাছে গিয়ে বসলো পেখম,,,
-কি হয়েছে দিদিভাই বলো আমাকে,,,,(মাথায় হাত রেখে পরম স্নেহে জিজ্ঞাসা করলেন নরেন্দ্র বাবু)
-দাদুন এই বিয়েটা কি খুব জরুরি?? মানে আমি তো এখনো ছোট,,,
-তার আগে তুমি আমার কটা প্রশ্নের উত্তর দাও দিদিভাই,,, তুমি কি পড়াশোনার জন্য এমন বলছো,,,পেখম মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়,,,,তখন ওর দাদুন বলে”তাহলে তো আমি বলবো তোমাকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,,, পড়াশোনা তোমার যতদূর ইচ্ছা ততদূর করতে পারবে”। আচ্ছা ঋষি কি ছেলে হিসেবে খারাপ দিদিভাই?? তখন পেখম বলে” না দাদুন,,,।
-তাহলে তোমার বিয়ে করতে আপত্তি কোথাও?? ঋষি একজন প্রতিষ্টিত ডাক্তার,,, তার পরিবার ভালো,,, বিয়ের পরেও তোমাকে পড়াবে। আমরা প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি দিদিভাই,, আর আমি আশা করছি তারাও তোমাকে এইভাবে আপন করে নেবে,,,তাহলে সমস্যা কোথায়??
– সমস্যা নেই দাদুন,, শুধু তোমাদেরকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে (বলেই হু হু করে কেঁদে ফেলল)
-বিমলা দেবী এসে পেখমকে জড়িয়ে ধরলেন,, তারপর বললেন” কাঁদে না দিদিভাই,,, বিয়ের পর তখন আমাদের থেকে তারাই বেশি আপন হয়ে উঠবে,,,
-নরেন্দ্র বাবু বলেন” আমি তোমার বিয়ে এত তাড়াতাড়ি দিতাম না,,, কিন্তু তুমি তো নিজেই দেখতে পারছো আমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন,,,আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি,,,তাই আমার শেষ ইচ্ছা ছিল তোমার বিয়ে দেখে যাওয়া,, তুমি কি আমার শেষ ইচ্ছে রাখবে না দিদিভাই??আর সব থেকে বড়ো কথা হলো আমি ওদের কথা দিয়েছি দিদিভাই এখন যদি এই বিয়ে আমি ভেঙ্গে দি,,তাহলে আমার কথার দাম থাকলো কোথায়?? তাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না,,,,
-দাদুনের কথা শুনে পেখম দাদুন কে জড়িয়ে ধরে জোড়ে কান্না করে দেয়,,,,তারপর বলে ” না দাদুন তুমি প্লিজ এইভাবে বলো না,,, আর এই সব শেষ ইচ্ছা টিচ্ছা কি,,,আমি তোমার সব ইচ্ছায় পূরণ করবো,,,তবুও তুমি মরে যাওয়ার কথা বোলো না,,,,
-তোমার কি কাউকে পছন্দ দিদিভাই??
-কথাটা শুনে পেখমের বুকটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে,, তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে, চোখের জল মুছে বলল”না দাদু আমার কোনো পছন্দ নেই ,তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।
চলবে,,,,,,,
#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১৮
– দাদুনের ঘর থেকে বেরোতেই পেখম দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে,,, ও মাকে দেখে একটু হাসলো,,,মনোরমা এগিয়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,,,,
-কি হয়েছে মা??
-কিছু হয়নি,,,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার ঘরে চল,,,তারপর ঘরে এসে মনোরমা পেখমের হাত দুটো ধরে জিজ্ঞাসা করে,,
-কি হয়েছে পেখু?? তুইকি বিয়েটা করতে চাস না?? বল আমাকে,,, তেমন হলে আমি এই বিয়ে আটকে দেবো,,,,
-উফফ মা পাগল হয়েছো নাকি,,,তেমন কিছুই না,,,শুধু তোমাদেরকে ছেড়ে থাকতে হবে তাই কষ্ট হচ্ছিলো,,, খুব কষ্ট হচ্ছিলো,,,এই বুকটা ভীষণ ভারী হয়ে উঠছিল,,,,
-এই জন্যে কি তখন তীয়াদের বাড়ি থেকে আসার পর মুখ গোমড়া দেখি তোর???আর সেই যে দরজা দিলি,,,একটু আগে খুললি,চিন্তা হয় না আমাদের??,,,জানিস তোর বৌমনি কেমন পাগলের মতো করছিলো আর বলছিলো মা এই বিয়েটা কি এখন না দিলেই নয়,,,,দেখো পেখুর যবে থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছে,, তবে থেকেই ও মুড অফ করে বসে থাকে,,,আমি যার জন্যে কাল রাতে ওর বন্ধুদের নিয়ে আসলাম বাড়িতে সন্ধ্যেবেলায় যাতে ওর মন ভালো থাকে,,কিন্তু দেখো সেই ওর মন খারাপ,,,,
– মার কথায় পেখম হাসলো,,সেই হাসিতে না আছে আনন্দ আর না আছে দুঃখ,,,,ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাকে বলে” বৌমনি অযথাই চিন্তা করছে মা,,,আমি ঠিক আছি,,,”।
– তুই কি কাউকে পছন্দ করিস মা?? আমাকে সত্যি করে বলবি,,,,
-মায়ের কথা শুনে পেখম কেঁদে ফেলল,,,তারপর চোখের জল মুছে ,নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,, “একজন ভুল মানুষকে পছন্দ করতো তোমার এই মেয়ে মা,,,যেই মানুষটাই ভুল ছিল তাহলে তো আমার অনুভূতি, পছন্দ সব ভুল মা,,সব ভুল,,,, বলে আবার কেঁদে ফেলল।
– মেয়েকে এই ভাবে কাঁদতে দেখে মনোরমা পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে নেয় পেখমকে,,, তারপর বলে ওঠে কাঁদ যত ইচ্ছা হয় কাঁদ,,কেঁদে নিজেকে হালকা কর। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি,,,যাতে,,,
-মনোরমার কথা শেষ করতে না দিয়ে পেখম বলে ওঠে না মা না,,,ভুলেও বাবার সাথে আলোচনা করতে যেও না,,,আর আমি তো বলছি আমি একজন ভুল মানুষকে পছন্দ করতাম,,, এখন আর আমার এই বিয়েতে আপত্তি নেই মা,,,
-পেখম বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা না,,,
-আমি জানি মা,,,সত্যি বলতে কি আমার আর এখানে মন টিকছে না,,,আমি এবার ডাক্তার কে বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাই,,,, তুমি ঐ দিন গয়না দেখাচ্ছিলে,আমি তখন দেখিনি,,, আজকে রাতে দেখবো কেমন,,,এখন আমি আসছি,, ঘুম পাচ্ছে ভীষণ,,,,একটু ঘুমাবো,,,
__________________________________________
– এতক্ষণ মা মেয়ের কথা চুপ করে শুনছিলো তীয়া,,,পেখম বেরিয়ে আসতে দেখে তীয়া এগিয়ে যায় ওর কাছে,,, তারপর কোনো কথা ছাড়াই পেখমের রুমের দিকে পা বাড়ায়। পেখমের ঘরে এসে পেখমকে বিছানায় বসিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে তীয়া,,,
-বৌমনি কি করছো এসব,,,আর এইভাবে বসে আছো কেন?? ওঠো,,,
-তার আগে তুই বল আজ সকালে কি হয়েছে ও বাড়িতে??
-কিছুই হয়নি,,,
-তাহলে দাদাভাই এর ঘর থেকে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলি তখন কাঁদছিলিস কেন?? মা বললো আমাকে,,,আর এই ভাবেই বা কেন নিজেকে আটকে রেখেছিস ঘরে???
– তুমি ভুল ভাবছো বৌমনি,,, আর আমি কাঁদতে যাবো কেন?? তখন চোখে কি একটা পড়ে ছিল,,, আর মলম দেওয়া হাত ছিল তাই,,,আর তোমাদের খুব মিস করবো তাই চোখে জল চলে আসছে বারবার,,(অন্য দিকে ফিরে কথা গুলো বলে,,,তারপর বিছানা থেকে উঠে আসতে নিলে তীয়া ওর হাত ধরে)
– এই ভাবে চোরের মতো নজর লুকাচ্ছিস কেন?? দাদাভাই কে ভালোবাসিস???
-বৌমনিকে কথায় পেখম অবাক নয়নে চেয়ে থাকে তীয়ার দিকে,,,
-কি হলো বল??
– না না,,,তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে বুঝতে,,,আর আমি ভালোবাসলেও কি সে ভালোবাসবে নাকি আমাকে?? কি যে বলো না বৌমনি,,,,আচ্ছা তুমি এখন যাও,,আমি একটু ঘুমাবো,,,
-তীয়ার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে,,, ওর শুধু মনে হচ্ছে কোথাও কোনো গন্ডগোল আছে,,,কিন্তু কি সেটা ঠিক ধরতে পারছে না,,,ও আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়
___________________________________________
-পেখম শুয়ে শুয়ে কালকের কথাই ভাবছিলো,,ওর হঠাৎ মনে হলো প্রিয়া যদি কথা গুলো না বলতো ,তাহলে জানতেই পারতো না ওই হৃদয়হীন মানুষটার মনের কথা,,হঠাৎ চোখ জ্বালা দিয়ে ভেসে ওঠে কাল রাতের থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সব কথা,,,,,
– তুই কেন চুপ করে আছিস?? আর কেনোই বা এই বিয়েটাকে মেনে নিচ্ছিস চুপচাপ করে??( রুশা)
– কি করবো আমি তোরা বল???কোন ভরসাতে আমি বাড়িতে কথা বলবো,??? যেখানে মানুষটাই আমার সাথে যোগাযোগ রাখছে না?? আমি তো আর বাবা মার সামনে গিয়ে বলতে পারি না যে ,আবির দাকে আমি ভালোবাসি,,,কারণ উনার এই কদিনের ব্যবহারে আমি পুরোই অবাক,,এতটা হৃদয়হীন মানুষ আমি দেখেনি,, মানে আমার বিয়ে হয়ে গেলেও তার কোনো যায় আসে না,,,,
– তুই একবার আবির দার সাথে সরাসরি কথা বল পেখু,,, কেন এমন করছেন উনি শোন,,,,(প্রিয়া)
– আমি এবার সত্যি সত্যি সেই হৃদয়হীন মানুষটার কাছে যাবো,,গিয়ে সেই মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করবো কি দোষ আমার??
-তুই প্লিজ কাঁদিস না,,তেমন হলে আমরা সবাই কথা বলবো,,,(অর্নব)
– রাতে মনোরমা ওদের না খাইয়ে পাঠালেন না,,,সবাই ফিরে গেলে পেখম সারারাত অনেক চিন্তা করে,,,শেষে একটা উপায় থাকে আর সেটা হলো আবিরের সাথে সামনা সামনি কথা বলা,,,কি চাই জানা,,,তারপর পেখম নিজে সিদ্ধান্ত নেবে,, কারোর সিদ্ধান্ত ওর উপর চাপাতে দেবে না,,,
-পরেরদিন সকালে পেখম ডাইনিং রুমে যেতেই দেখে তীয়া হাতে কি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছে,,,
-বৌমনি কোথায় যাচ্ছো??
-একটু ও বাড়িতে যাচ্ছি,,
– হ্যাঁ সে ঠিক আছে,, কিন্তু এই রকম ভাবে কেন যাচ্ছো,,,মানে তাড়াতাড়ি কেন করছো??
– আরে কড়াইতে মাছ ভাজা বসিয়েছি,,,আর এইদিকে আবিরের নাকি ভীষণ মাথা ব্যথা করছে,,,তাই ভাবলাম এই মলমটা দৌড়ে গিয়ে দিয়ে আসি,,,,
– ও এই ব্যাপার,,, আচ্ছা তুমি আমাকে দাও,,আমি যাচ্ছি,,, বলেই পেখম মলমটা নিয়ে ও বাড়িতে যায়,,,,বেল বাজাতেই অনু দরজা খোলে,,,
-আরে পেখু আয় আয়,,,ভিতরে আয়,,,এই কদিন আসিস নি কেন??
– ব্যস্ত ছিলাম কাকিমনি,,, বলছি যে এই মলমটা আবিরদাকে দিতে বলল বৌমনি,,,
– ও ঠিক আছে তুই উপরে যা আবির ওর ঘরেই আছে।
-পেখম ওষুধ নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যায় সেই ঘরে,,তারপর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে চারপাশে নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া,,, ওর কাশি পেল,,কাশতে কাশতে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো আবির বাইরের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানছে আর মনের সুখে ধোঁয়া গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে,,,
-কেন এসেছিস এখানে???( আকাশের দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল আবির)
-শুনলাম আপনার নাকি মাথা ব্যথা করছে তাই,,,
-তাই কি পাখি?? দেখতে এলি আমাকে?? মরে যায় নি,,দেখ বেঁচে আছি,,,
-এ সব কি বলছেন আপনি??
-কেন ঠিকই তো বলছি। ভুল কি বললাম??
– আমার কি দোষ আবির দা?? আপনি আমার সাথে কেন এই রকম করছেন??
-কি করছি পাখি??
-আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আছে আমার বিয়ের ,,,,
-হমম জানি তো,,,কিন্তু কথা হচ্ছে এই গুলো তুই আমাকে বলছিস কেন??
– বলছি কেন আপনি বুঝতে পারছেন না??
– হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে ,সেটাকে পা দিয়ে পিষে নিভিয়ে দিলো,,তারপর বলে ওঠে”আমার কি বোঝার কথা”??
– আপনি কি চান আমি এই বিয়েটা করি??
– আমার চাওয়াতে আর কিছু আটকাবে না,,,সব থেকে বড়ো কথা হলো আমি মনে প্রাণে চাই তুই এই বিয়েটা কর,,,
– কি বলছেন আপনি?? আপনার মাথা ঠিক আছে??( ভাঙা গলায়)
– হ্যাঁ আমার মাথা একদম ঠিক আছে,,,
– তাহলে যে সেদিন রাতে আপনি আমাকে,,,(পেখমের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আবির বলে,,)
– ওটা একটা মিসটেক ছিল পাখি,,,(আবিরের কথা শুনে পেখমের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে,,, দু চোখে অশ্রুরা এসে জমাট বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে,,, তবুও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,)
– মিসটেক?? তবে যে ওই সব কথা,,,অনুভূতি,,( কাঁপা কাঁপা গলায় আর বলতে পারলো না পেখম কেঁদেই ফেলল)
-হ্যাঁ,,, ভুল,,, আমার জীবনের সব থেকে বড়ো ভুল ,,,আর সেটা হল তুমি পাখি,,,আকর্ষণ বলে একটা বস্তু আছে,,,তোমার প্রতি আমার সেই আকর্ষণ ছিল,,, মোহ ছিল,,, কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি কিন্তু তোমাকে এখন বিয়ে করতে পারবো না,,, আমার নিজের একটা জীবন আছে,,এই জীবন টাকে ভালো করে উপভোগ করতে চাই,,
-আবিরের কথার মাঝেই পেখম বলে ওঠে” চুপ করুন আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, এসব আপনি কি বলছেন???
– আমার কথার মাঝে কথা বলা আমি পছন্দ করি না,,, আর সত্যি বলতে আমি ভেবেছি অনেক,,,আমি যদি তোমার বিয়েটা আটকে দি, তাহলে আমার এখন তোমাকে বিয়ে করতে হবে,,, কেননা তোমার দাদুনের খুব ইচ্ছে নাত জামাইকে দেখার,,, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা possible না,,,
– তবে কি সব মিথ্যে ছিল আবির দা,,(হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললো পাখি )
-হমম হু মিথ্যে না,,,বললাম তো একটা আকর্ষণ আছে,,,তুমি চাইলে বিয়ের পরেও আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারো,,,আর সেটা সম্ভব, কেন যেন?? কারণ ঋষি বিয়ের পর বিদেশে চলে যাবে,,,কিন্তু তুমি তো এখানে থাকবে পড়াশোনার জন্য,,, তখন না হয় আমরা continue কলবো,,,you understand what I say??
– এতক্ষন আবিরের কথা গুলো শুনছিলো পেখম,,, ও ওর নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে এই কি সেই মানুষ?? যাকে ও এতদিন চিনতো,,,না না চিনতো না,,,তারপর নিজেকে সামলে বলে” আপনি তাহলে মুখোশ পড়ে থাকতেন আমার সামনে,,, ভাগ্যিস আমার বিয়েটা ঠিক হয়েছিল তা না হলে তো আপনার এই মুখোশের আড়ালে কুৎসিত রূপ টা দেখতে পারতাম না,,,(বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল)
– পাখি এখানে কেঁদো না,,,বাড়ি যাও,,তোমার একটা আলাদা ঘর আছে,,,সেখানে গিয়ে যত ইচ্ছা কাঁদো,,,,ঠিক আছে এখন তুমি আসতে পারো,,,, আর হ্যাঁ ভেবে দেখো আমার প্রস্তাব টা,,,,
– পেখম অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে,, ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এ কি সেই মানুষ টা যে ওকে একদিন বলেছিল “যে আমি তোমার ওই চোখে জল সহ্য করতে পারি না,”,, আর আজ বলছে ঘরে গিয়ে কাঁদো,,,তারপর আবার আমাকেই কুৎসিত প্রস্তাব দিচ্ছে,,,,নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছে না,,, তবুও চোখের জল টুকু মুছে উঠে দাঁড়ালো পেখম,,,তারপর আবিরের উদ্দেশ্যে বলে ” আপনার মতো নীচু মনের মানুষটার জন্য আমি এই এক সপ্তাহ কেঁদেছি,, এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি,,, আপনাকে আমি ভালোবেসেছি,, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি,,, আমার জীবনের সবথেকে বড়ো ভুল আপনি,,, আমি আপনার ওই মুখটাও আর দেখতে চাই না বুঝেছেন আপনি,,,আমি এখানে আর থাকবো না,,ঋষি বাবুর সাথেই চলে যাবো,,,
– তাহলে তো সব সমস্যা মিটে গেল পাখি,,, আর আমি তো তোমাকে কোনো দিন বলিনি যে “আমি তোমাকে ভালোবাসি”
– হ্যাঁ বলেন নি,,,ওটা আমি আপনার আচরণ ব্যবহার দেখেই বুঝেছিলাম,, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল ভুল ভুল,,,সব ভুল,,,,আমি এত বড়ো ভুল কি করে করতে পারলাম,,,, জানেন আমার এখন কি করতে ইচ্ছা করছে,, ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে,,, কিন্তু আমি পারবো না,,, একজন ভুল মানুষের জন্য আমি পারবো না,, কারণ আমার ভালোবাসার মানুষ অনেক,তাদের কে কষ্ট দিতে পারবো না,,,,এই যে এখানে আপনার ছোঁয়া আছে কপাল দেখিয়ে,,, এই যে এখানে আপনার ছোঁয়া আছে কোমড় দেখিয়ে,,, ঠোঁট দেখিয়ে,,, আমার এখন সেই ছোঁয়া গুলো বিষাক্ত লাগছে,,, গা ঘিনঘিন করছে,,,,(বলেই আবার কেঁদে ফেলল)
– শোনো পেখম তোমার এসব ফালতু কথা শোনার মতো সময় এখন আর আমার নেই,,,এখন তুমি আসতে পারো,,,
-চলেই যাচ্ছি,, শুধু যাওয়ার আগে এইটুকু বলবো আমার বিয়ের সময় যেন আমি আপনাকে না দেখি,,,,আজকের পর থেকে যেন আমি আপনাকে না দেখি,,,ভালো থাকবেন আপনি( বলেই দৌঁড়ে চলে যায় পাখি,,,আর আবির তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-বাড়ি এসে পেখম নিজের ঘরে দরজা আটকে দিয়ে খুব কাঁদে,,,আর বলে” ভগবান এত কষ্ট কি আমার কাম্য ছিল,,, হয়তো ছিল তা না হলে আমার সাথেই কেন এমন হবে,,,, আমি আপনাকে খুব ঘৃণা করি আবির দা। আপনি দেখবেন,, নিজের চোখের সামনেই দেখবেন ঋষির সাথে আমার সুখের সংসার,,, আমি জানি একদিন আপনি আফসোস করবেন,,, করতে আপনাকে হবেই,,,
___________________________________________
-দীর্ঘ আধা ঘন্টা ধরে এই রেস্টুরেন্টে বসে আছি,,কি জন্যে ডেকেছিস তোরা আমাকে?? যদি কিছু বলার না থাকে তো আমি যেতে পারি??
-কেন করছিস এই রকম?? কেন কষ্ট দিচ্ছিস ওকে??(পুলক)
– আর সব থেকে বড়ো কথা তুই নিজেও তো কষ্ট পাচ্ছিস দাভাই,,(তীয়া)
– তোরা কি সব বলছিস?? আমি কিছু বুঝতে পারছি না,,(আবির)
-আমি অত কথায় যেতে চাইছি না আবির,, যেখানে কথা হচ্ছে আমার বোনকে নিয়ে,,, কেন করছিস এটা,,, তেমন হলে আমরা বাড়িতে কথা বলবো,,,,(পুলক)
– কি চাস কি দাভাই,,, পেখু বেঁচে থেকেও মরে যাক,,,(তীয়া)
-তোরা কি এই কথা গুলো বলার জন্য আমাকে ডেকে এনেছিস,,, তাহলে আমি বলবো ভুল করেছিস,,,,
-মানে(পুলক)
-মানে আমার পক্ষে সম্ভব নয় পাখিকে বিয়ে করা সিম্পল,,,,
– আবির আমাকে রাগতে বাধ্য করিস না,,( পুলক কথাটা বেশ জোড়েই বললো, যার কারণে রেস্টুরেন্টের সব লোক ওদের দেখছে)
– প্লিজ তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করো না,,, সমস্যাটা কোথায় দাভাই তোকে আমার মাথার দিব্যি বল আমাদের( আবিরের হাতটা তীয়া নিজের মাথার উপর রাখলো জোড় করে)
– প্লিজ ভাই বল,,,একজন ভাই হিসেবে তোর কাছে আমার বোনের হাসি ভিক্ষা চাইছি,,,(পুলক)
***************
– বেশ কিছুক্ষণ পর পুলক রাগারাগি করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়,,, তীয়া তখনও থাকে,,,
– সব কিছু শুনে তীয়া বলে” এছাড়া কি আর কোনো উপায় ছিল না দাভাই(ছলছল চোখে)
– না,,আমি চাই পাখি ভালো থাকুক,,,সেটা না হয় না হল আমার সাথে,,, কিন্তু ঋষির সাথে ভালো থাকুক (বলেই রেস্টুরেন্ট থেকেই বেরিয়ে যায়,,, আর তীয়া হতভম্ব হয়ে বসে থাকে সেখানে)
________
চলবে,,,,,,