# প্রেমে পড়া বারণ
# পার্ট- ১২
# Taslima Munni
মন ভালো করার মেডিসিন কিন্তু আছে আমার কাছে।
– তাই বুঝি?
– হুমম। আছেই তো।
এখন দুদিন পরে তুই বাচ্চার মা হবি,আর কই এখন নিজেই বাচ্চামি করিস!!
বিষয়টা কেমন হবে জানিস?
– কেমন?
– এক বেবি আরেক বেবির মা!
– ধুর! তোমার যে কি কথা!!
– সত্যিই তো বলছি।
– হয়েছে হয়েছে আর সত্যি বলা লাগবে না আপনার।
– কেন কেন? লজ্জা পাচ্ছিস? দেখি দেখি… ভালো করে তাকা তো…
-উফফ! তুমি না…
– ওরে আমার লজ্জাবতী লতারে…
আমার মন ভালো হয়ে গেছে। রেহানের উপর রাগ করার প্রশ্নই আসেনা।
ফালতু একটা কারণে মন খারাপ করেছি ভাবতেই নিজের উপর রাগ হচ্ছে।
হিয়া শুন।
– হুম, বলো।
– আমি না একটা স্বপ্ন দেখেছি।
– কি স্বপ্ন?
– দেখলাম তুই একটা পরীর সাথে হেঁটে যাচ্ছিস।
জানিস পরীটা ভীষণ ভীষণ মিষ্টি দেখতে।
রেহানের কথা শুনে ভিতরে একটা অদ্ভুত শূন্যতা বোধ করছি।
কতদূরে থেকেও সারাক্ষণ একজন আরেকজনের ছোটখাটো প্রতিটি জিনিসের খেয়াল রাখছি।
রেহান সকালে ভার্সিটিতে কোন কাপড় পড়ে যাবে সেটা এখনো আমিই সিলেক্ট করে দেই।
সকালে ওর ঘুম ভাঙাই।
দূরে থাকলে নাকি দূরত্ব বাড়ে,কিন্তু আমরা যেন আরোও কাছে এসেছি।
দুজন দুজনকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।আর কাছে আসার আকাঙ্খা আরও তীব্র হয়েছে।
অবসরের সময় টুকু কি রাত,কি দিন! আমরা দূরে থেকেও কাছে থেকেছি।
এমনও সময় গেছে আমি কিচেনে কাজ করছি আর ও ফোনে!
ফোন সামনে রেখেই কাজ করতে হয়েছে!।
এর মধ্যে আমি নতুন এপার্টমেন্টে শিফট করেছি।
নতুন বাসা সাজিয়েছি।ওকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতাম এটা কিভাবে করবো? ওটা ঠিক আছে কিনা!!
প্রবাসে দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছে।।
দেখতে দেখতে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে।
রেহানের ছুটি হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে ও আসছে।
কতদিন পরে ওকে দেখবো।
এক সপ্তাহ! না এক বছর!!
সময় যেন কাটছেই না।তবুও দিন গিয়ে রাত আসে।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রেহান আজ আসছে।
আমি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছি।
রেহান দেখে এতোটাই খুশি হলাম যে প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
রেহানকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
একেবারে ওর বুকে মিশে গেছি।
– হিয়া মন পাখি।
কপালে একটা চুমু দিলো।
তারপর দুজন বাসায় ফিরলাম। রেহান আবার আমার কাছে। একাকিত্ব ঘুচে আমার স্বপ্নের দিনগুলো আবার ফিরে এলো।
একজোড়া চড়ুই পাখির সংসার।।
রেহানের বুকে লেপ্টে আছি। একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
রেহানও এমন ভাবে আঁকড়ে রেখেছে।
– আজকে তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।।
– ওও..
– ও কি?
– তারমানে আগে সুন্দর ছিলাম না!!
– আজকে সত্যিই অনেক বেশি সুন্দর লাগছো গো।
ইচ্ছে করছে…
– কি?
– বলবো না।
– বলো না।
– নাহ বলা যাবে না।
– ধুর! ভাল্লাগেনা!
– ইচ্ছে করছে একেবারে এইখানটায় ভরে রেখে দেই। যেন কেউ দেখতে না পারে।
বুকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো।
আমি চুপচাপ একটা চুমু দিয়ে দিলাম।
মুচকি হেসে ও আমাকে আরও গভীরভাবে আঁকড়ে ধরলো।
এতদিন দূরে থেকে আজ এতো কাছে!!
একটু পাগল পাগল লাগছে!!
একজোড়া চড়ুই পাখির দিনগুলো কিভাবে কেটে যাচ্ছে!!
একসঙ্গে কত যায়গায় ঘুরাঘুরি করলাম!
একদিন দুজন একসাথে বের হলাম।
আমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে ও বের হলো কিছু পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করবে বলে।
যথারীতি আমি বাসায় ফিরছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়লো রেহান আর আফরিন এক সাথে হেঁটে যাচ্ছে।।
এটাই চোখে পড়ার ছিলো!!
ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেছে। কান্না পাচ্ছে আমার।
রেহান কেন ওর সাথেই দেখা করতে গেলো!
স্বামী তার পুরনো প্রেমিকার সাথে দেখা করছে! বিষয়টি অনেক যন্ত্রণার।
অনেক বেশিই পুড়ে।
রেহান বেশ দেরি করেই ফিরলো।
– হিয়া মন পাখি।
কি করছিস?
– কিছু না।।
– এই অসময়ে শুয়ে আছিস! শরীর ঠিক আছে তো?
– হুম। এতো দেরি করলে যে!
– আরে সবার সাথে এতো দিন পরে দেখা! চলে আসবো তখন আফরিন হাজির। তখনই দেরি হয়ে গেছে।
– ওহহহ.!
– এই দেখি তো। তাকা এদিকে।
আবার মন খারাপ হয়ে গেছে!?? শুন হিয়া আমি স্ট্রেইট কথা বলি তুই জানিস।
একটা কথা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নে।
আমার মনে যদি আফরিনের জন্য এখন কোনো ফিলিং থাকতো তবে ওর মুখই দেখতে চাইতাম না!
– কিছু নেই মনে ওর জন্য?
– ছিলো। কিন্তু এখন ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
-কৃতজ্ঞ!!কিভাবে?
-কারন ও এমন টা করেছে বলেই আমি তোকে পেয়েছি।তাই।
নাহলে ভুল মানুষকেই চাইতাম।
এবার আমি সত্যিই কেঁদে ফেললাম।।
ওকে আঁকড়ে ধরলাম।
চলবে…
# আজকের একস্ট্রা পার্ট!?