প্রেমে পড়া বারণ পর্ব ২

0
765

# প্রেমে পড়া বারণ #
# পার্ট- ২
Writer: Taslima Munni

রেহান ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখে সবাই খুব খুশি মনে ফিরে আসলো। মেয়ে সবার পছন্দ হয়েছে।
আগামীকাল মেয়ের বাড়ি থেকে লোক আসবে। আম্মু-ফুপিকে দেখলাম এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কি কি আয়োজন হবে তার লিস্ট তৈরি করছে।
দিয়া আরিফ মেয়ের ছবি নিয়ে গবেষণা করছে।
– আপু,মেয়ের ছবি দেখবি না?
আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না,আবার আগ্রহ ও হচ্ছে। ভদ্রতার খাতিরে নাহয় দেখলাম ই!!
– সুন্দর না?
ছবি দেখার সময় বুঝলাম রেহান ভাই এসেছে। উনাকে শুনিয়েই বললাম –
– বাহ! খুব সুন্দর তো! খুব মানাবে।
রেহান ভাই কিছু বললো না।
আরিফকে ইশারা করতেই আরিফ উঠে চলে গেলো উনার সাথে।
দিয়া আবারও ছবি দেখায় মনোযোগ দিয়ে বললো – আপু, দেখ এই ছবিটা।
– ধুর,তুই দেখ।
বলেই আমি উঠে চলে গেলাম।
আরিফ আর দিয়া আমার ছোট হলেও আমাকে তুই তুই করেই ডাকে।আব্বু আম্মু অনেক চেষ্টা করেছে চেঞ্জ করতে। কিন্তু আমার ভালোই লাগে। তাই চেঞ্জ করতে দেইনি।
রাতে ফুপি আর রেহান ভাই আমাদের সাথেই খেলেন।
খেতে বসে আব্বু বললো – রেহান,কাল দুপুরে কিছু মেহমান আসবে।তুই কোথাও বের হবি না।
রেহান ভাই শুধু ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলো।

পরদিন সকালে গরমে ছটফট করতে করতে ঘুম ভাঙলো। ভেবেছিলাম ইলেক্ট্রিসিটি নেই। পরে দেখি না! আমার রুমের ফ্যান অফ!!
এই কাজ আম্মু ছাড়া কেউ করেনি।আমাকে ঘুম থেকে তোলার এই টেকনিক আম্মুর ভালো জানা আছে।
কিন্তু এতো সকাল সকাল কেন?? উঠে বসলাম। কিন্তু চোখ খুলতে পারছিনা।
ফ্যানের সুইচটা দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।
– আম্মু! আম্মু!! দেখে যাও।
চিল্লানি শুনে ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। ভাবলাম কি বিপদ হলো!!
তাকিয়ে দেখি বিপদ আমার সামনে।
– কি হয়েছে? কি হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?
এর মধ্যে আম্মুও হাজির।
– আম্মু দেখো, আপু ফ্যান অন করে আবার ঘুমাচ্ছে।
– আম্মু, এতো সকাল সকাল কেন এমন করো? শান্তিতে একটু ঘুমাতে দিলে না।
– সাতটা বাজে!! আরও ঘুম বাকি আছে?
সারারাত ঘুমাসনি? ঘুমাবি কি করে? আজ থেকে তোর মোবাইল আর ল্যাপটপ আমার কাছে জমা দিয়ে ঘুমাতে আসবি।আমি খেটে মরি,উনার ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত! সারাবছর ঘুমিয়ে…..

শুরু হয়ে গেছে আমার আম্মুর রেকর্ডিং!! সেই একই কাহিনী!!
– আচ্ছা! আচ্ছা ঠিক আছে।
এখন বলো আজ এতো সকাল সকাল তুললে কেন?
– আজ যে গেস্ট আসবে খবর আছে তোর?
– তো?আমি কি করবো?
– তুই কি করবি মানে?
– আমি কি করবো মানে উনারা জামাই দেখতে আসবে!!
কনে দেখতে আসলে বুঝতাম! সকাল সকাল উঠে রূপ চর্চায় লেগে পড়তাম!
– দেখ হিয়া, সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করবি না আমার।
এতোগুলো মানুষের রান্না করা বাকি।কখন শেষ করবো আল্লাহ ই জানেন। আর এইসব গোছগাছ কে করবে? তোর ফুপিকে দিয়ে করাবি?
– ফুপি কেন করবে? মানুষ তো আছেই।তারা করুক।আমি ঘুমাবো, যেতে পারবো না।
আম্মু আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকালেন!!
– আচ্ছা বলো কি করতে হবে।
আম্মু সব কাজ বুঝিয়ে দিলেন। আমি আর দিয়া সুমি আপাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমসহ সারা বাড়ির সব গোছগাছ করবো।
সুমি বয়সে দিয়ার কাছাকাছিই প্রায়। আমাদের বাড়িতে থাকে।

মা জননীর কথা মতো কাজে লেগে পড়লাম।
রেহান ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা!!
আম্মু আর ফুপি কিচেন সামলাচ্ছে।
প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। এমন সময় আব্বু কোথা থেকে এসে আম্মুকে আর ফুপিকে থাকলেন।
আমি কিচেনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখেই আম্মু ডাক দিলেন।
– এই হিয়া, একটু এদিকে আয়।
– হা,বলো।
– তোর আব্বু ডাকছে।তুই একটু মাছটা উল্টে দিস।না হলে পুড়ে যাবে।
– আচ্ছা।,আমি দিচ্ছি।যাও তোমরা।
আম্মু আর ফুপি চলে গেলো।

আচ্ছা,সত্যিই কি রেহান ভাই বিয়ে করবেন? অন্যবার তো মেয়ে দেখতে যাবার কথা শুনলেই রেগে যেতেন। এবার… ইদানীং একটু বেশিই এভয়েড করছেন আমাকে। নিজে থেকে যেন একটা গ্যাপ রেখে চলছেন।
আমার সাথে কেন এমন করে? আমার ভেতরটা কেমন করছে।
– আহহ!
গরম ফ্রাইপ্যানটা হাতে লেগে অনেকটা পুড়ে গেছে। খুব জ্বালা করছে।চোখে পানি এসে গেছে।
– কিরে হয়েছে?
– হা ফুপি।এই তুলে নিচ্ছি।
মাছগুলো তুলে রাখলাম। এগিয়ে হাত জ্বলে যাচ্ছে, সেটা ফুপিকে আর দেখাইনি।একদিকে পোড়ায় আগুনের আঁচ লেগে আরও বেশি জ্বালা করছে।

দুপুরে মেহমান আসলো। সারাদিন রেহান ভাই উনার রুমেই ছিলেন।
উনারা আসার পরেও বের হয়নি।লাঞ্চের সময় বের হয়ে আসলেন।আব্বু,আম্মু,ফুপিসহ মেহমানদের সাথে লাঞ্চ করলেন।
তারপর জরুরি কাজ আছে বলে উঠে পড়লেন।
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রুমে যাবার সময় যখন দেখলেন আমি এখানে, উনি আসলেন।
– এখানে কি করছিস?
– কিছু না।
– হাতে কি হয়েছে?
আমার হাতটা একটু আড়ালেই ছিলো।
– তেমন কিছু না।একটু পুড়ে গেছে।
-দেখি
বলেই টেনে আমার হাত দেখলেন।
– এটা তোর একটু মনে হচ্ছে? কিভাবে পুড়লো?
– ফ্রাইপ্যান লেগেছিলো।
– আয় আমার সাথে।
– কোথায়?
– জাহান্নামে। কেন যেতে আপত্তি আছে?
এই লোকটা সোজা করে মনে হয় কথা বলতে শিখেনি।
আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে ফার্স্টএইড বক্স খুলে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে।
– কই থেকে কাজ করিস? হাতে লাগে কিভাবে? করতে পারিস না তো যাস কেন?
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি উনি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছেন।
– করতে পারি না কে বললো?
আমি খুব ভালোই রান্না করতে পারি।
– জানি, জানি। একটু সাবধানে করতে পারিস না! কতটুকু পুড়ে গেলো!! নিশ্চয়ই খুব জ্বালা করছে!
– হুম। করছে তো।খুব জ্বালা করছে।
রেহান ভাই একবার শুধু তাকালেন আমার দিকে।
– রেডি হয়ে নে।
– কেন?
– আমার সাথে বের হবি।
– এখন?
– তো কখন?
– বাসায় গেস্ট আছে। এখন বের হবো কিভাবে?.
– গেস্ট আছে তো তোর কি প্রব্লেম? তোকে দেখতে আসছে? সেজেগুজে সামনে যাবি?

আবার ত্যাড়া ত্যাড়া কথা শুরু করেছে!! সোজা কথা কি বের হয়না মুখ থেকে?!!
– আমার কিছু না।তবে আমার পেটেও জ্বালা করছে।
– পেটে জ্বালা করছে কেন?
– খিদে পেয়েছে। আমি খাইনি এখনো।
– এতো সময় হয়ে গেছে খাসনি?? যা তাড়াতাড়ি খেয়ে আয়।
গেস্ট এসেছে রেহান ভাইকে দেখতে। এখন উনাদের সামনে আমাকে নিয়ে উনি বেরিয়ে যাবেন, এটা ভালো দেখায় না।উনার কি না কি ভাববেন।
যদিও রেহান ভাই কখনো কারো ভাবনার তোয়াক্কা করেন না।
কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগবে না,তাই ইচ্ছে করেই লেইট করলাম।
গেস্টরা চলে গেছেন।উনাদের অনেক পছন্দ হয়েছে উনাদের।এখন শুধু রেহান ভাই মেয়েকে দেখবেন।তারপরই এনগেজমেন্ট হবে, আর সেই দিনই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।

রেহান ভাই আমাকে নিয়ে বের হবার সময় বললো – মা, হিয়াকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।
সবাই চমকে উঠলো।
– হিয়ার কি হয়েছে?
– হাত পুড়ে গেছে। কাউকে দেখায়নি?
– ওমা! কখন পুড়লো।
আম্মু আর্তনাদ করে উঠলো।
– কিরে বললি না কেন? কিভাবে পুড়লো?
– মাছ উল্টাতে গিয়ে।
– দেখেছো! কই আমাকে তো তখন বললি না!
সবাই খুব বকাঝকা করলো।
ডাক্তার ড্রেসিং করিয়ে আরও অনেক ঔষধ দিয়ে দিলেন।
হাতের কব্জির ঠিক নিচে পুড়েছে।

ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময় আমি চুপচাপ বসে আছি। রেহান ভাই ড্রাইভ করছেন।
– তোকে কিছু কথা বলা দরকার।
– বলেন।
রেহান ভাই গাড়িটা রাস্তার পাশে সাইড করে রেখে,কিছু সময় চুপচাপ বসে থাকে।
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আগ্রহ নিয়ে কথা শোনার জন্য।
উনি একবারও আমার দিকে তাকাননি।
– হিয়া,তুই বড় হয়েছিস।অনেক কিছুই বুঝিস।
– হুম।
– আমি বুঝি তোর মনে কি চলছে। তুই আমাকে নিয়ে কি ভাবিস।
– সত্যিই আপনি বুঝেন?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here