প্রেমে পড়া বারণ পর্ব ১

0
1149

তোর-আমার বয়সের ডিফারেন্স জানিস?বাচ্চা একটা মেয়ে!
-আমি বাচ্চা মেয়ে!! আমি??!!
২১ পেরিয়ে ২২ এ পা দিয়েছি।আমাকে বাচ্চা মনে হয় আপনার?
– বাচ্চা নয়তো কি? মাত্র ২২! আমার এইজ সম্পর্কে ধারণা আছে তোর?
-‘ আজিব তো! আমি কি করলাম!!আর আপনি এইজের ডিফারেন্স দেখাচ্ছেন কেন বলুন তো?’
কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম। আমাকে উনি বাচ্চা মনে করেন! আমাকে!?? হুহ।
রেহান ভাই আর কিছু না বলে আবার বইয়ে মুখ গুজলো।
এই লোকটা সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুজিয়ে থাকে। আর ইদানীং একটু বেশিই থাকছে।
আমি যতই কথা বলার চেষ্টা করছি উনি হু- হা- ভালো! এই বলেই খালাস!
ভাব দেখলে গা জ্বলে যায়।
সেই কখন থেকে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে আছি।একবার বসতেও বলেনি।
আমি বকবক করেই যাচ্ছি অথচ উনি বই পড়ছেন!!
লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ? কোনটা ভালো,জিজ্ঞেস করতেই এত্তো গুলো কথা শুনালেন? এইজ ডিফারেন্স দেখালেন। কি এমন বলেছি আমি?
– যেন উনাকে বিয়ে করতে বলেছি! হুহ। আমার ঠেকা পড়েছে আধবুড়ো লোককে বিয়ে করতে! ” বিড়বিড় করে বললাম।
– উহহফ! এই, তুই একটু চুপ করে থাকতে জানিস না? সারাক্ষণ এতো কথা বলিস কেন শুনি?’
রেহান ভাই বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বইটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– ঠিক আছে আর কথা বলবো না।আর আসবোও না আপনার কাছে। কফি দিতে এসেছিলাম।এখন থেকে নিজের কফি নিজে করে নিবেন।
কথাগুলো বলে হনহন করে চলে আসলাম।
আর যাবো না।জীবনেও যাবো না এই লোকটার কাছে।

রাগে,দুঃখে চোখে পানি চলে এসেছে। এই লোকটা এমন কেন? উনি কি……
আমিও ঠিক করে ফেলেছি। আর যাবোনা উনার কাছে।
পরদিন ভার্সিটিতেও যাইনি। রোজ সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে বাগানে যেতাম। সেটাও যাইনি।
রাতে ফুপি এসে বললো – কিরে হিয়া…. আসিসনি কেন আজ?তোর শরীর খারাপ?
– না ফুপি।বের হতে ইচ্ছে করেনি।সারাদিন রুমেই ছিলাম।
– অহহ.. তাই বল।আমি ভাবলাম শরীর খারাপ করলো কিনা।সারাদিন আজ অবসর পাইনি আসার জন্য।
পরদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে ঘুমাচ্ছিলাম।
বিকেলবেলা ফোনে ঘুম ভাঙলো।
– হ্যালো।
– এখনো পড়ে ঘুমুচ্ছিস?
– কেন? ঘুমাতেও মানা আছে নাকি?
– হা আছে বৈকি!! চট করে চলে আস।তাড়াতাড়ি আসবি।
বলেই রেহান ভাই ফোন রেখে দেন।

রেহান ভাই আমার কাজিন।আমাদের বাড়ি একদম পাশাপাশি । বিশাল এরিয়ায় পাশাপাশি দুটো বাড়ি। উনি একজন ভার্সিটির টিচার।তবে আমি উনার ছাত্রী নই।
মিজান আঙ্কেলের সাথে আমার একমাত্র ফুপির বিয়ে হয়।আব্বু আর মিজান আঙ্কেল দুজনেই এক সাথে আর্মিতে ছিলেন। দুজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। মিজান আঙ্কেলের তেমন কেউই ছিলো না।দাদু চেয়েছিলেন উনার দুটো ছেলে-মেয়ে উনার কাছেই থাকুক। উনার সব কিছু আব্বু আর ফুপির নামে লিখে দেন।
মিজান আঙ্কেল প্রথমে আপত্তি করলেও দাদুর অনুরোধে রাজি হন।তারপর দাদু ফুপির নামে যে অংশ লিখে দিয়েছেন সেখানেই একটা বাড়ি করে দিতে চান।
কিন্তু মিজান আঙ্কেল সেটা করতে দেননি। নিজে বাড়ি করেছেন।
মিজান আঙ্কেল অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।উনাদের দুটি সন্তান। রেহান ভাই আর মাহি আপু। রেহান ভাই দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন। আঙ্কেল যখন মারা যান তখন রেহান ভাই এসেছিলেন। মাস দুয়েক দেশে থেকে উনি আবার চলে গেছেন। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম।
এর মধ্যে বেশ কিছু বছর পেরিয়ে গেছে। মাহি আপু যখন মেডিকেলে চান্স পেয়ে চট্টগ্রাম চলে গেলো ফুপি তখন একা হয়ে পড়েন; যদিও আমরা ছিলাম। আমি ফুপির কাছেই বেশি থাকতাম। আর সারাদিন সবাই এবাসা- ওবাসা আসা-যাওয়া হতো।দুটো বাড়ি যে আলাদা কখনো মনেই হয়নি। কিন্তু একটা সময় ফুপি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েন।মেয়ের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ে,আসার খুব একটা সুযোগ পায় না।আর ছেলেটা সেই যে বিদেশে পড়ে আছে!!
রেহান ভাই পড়াশোনা শেষ করে সেখানে একটা ভার্সিটিতে জয়েন করে। উনার না ফেরার চিন্তা ছিলো তাই ফুপিকে নিয়ে যাবার অনেক চেষ্টা করেছে।কিন্তু ফুপি কিছুতেই রাজি হয়নি। সেই চিন্তায় চিন্তায় ফুপির এই অবস্থা। যার জন্য বাধ্য হয়েই রেহান ভাই দেশে ফিরে আসেন।
তারপর আর ফিরে যাননি।প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে।দেশে ফিরে উনি একটা ভার্সিটিতে জয়েন করেছেন। রেহান ভাইয়ের বয়স ৩৪।উনার ধারণা আমি উনার হাঁটুর বয়সী!!!

রেহান ভাইয়ের ফোন পেয়ে যাবো কি যাবো না, ভাবতে ভাবতে চলেই গেলাম। দেখা যাক কেন ডেকেছেন!!
কলিং বেল চাপার সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো।
– ভেতরে আয়।
ভেতরে ঢুকতেই উনি আমাকে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন।
– বস।
আমাকে বসিয়ে উনি ভেতরে চলে গেছেন।কিছুক্ষন পরেই ফিরে আসেন।
হাতে দুটো কফির মগ।একটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। হাতে নিতে নিতে বললাম-
– বাহবা! সুর্য আজ কোন দিকে উঠলো??
– কেন বল তো??
– না, এমনি। আপনি কফি করে খাওয়াচ্ছেন।তাই বললাম।
– কেন আমি কি কফি করে খাওয়াতে পারিনা? প্রতিদিন তো তুই কফি করে আমাকে খাওয়াস।আজ না হয় আমি করলাম।’
বলেই একটু মুচকি হাসলো।

ইসসস! এই লোকটা এভাবে কেন হাসে? এই হাসিটা….
ধুর! আমার কি?
– সবই বুঝলাম। কিন্তু ঘটা করে ডেকে আনা হয়েছে কেন? কফির জন্য?
– শুধু কফির জন্য বললে ভুল হবে।
– শুদ্ধটা কি শুনি?
– দাঁড়া কফিটা শেষ করে নিই।
কফি শেষ করে উনি আবার রুমে গেলেন।
– দেখ কি এনেছি।
উনার হাতের দিকে তাকিয়ে আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।
– ইসস কত্ত সুন্দর!!
রেহান ভাইয়ের হাতে একটা পিঞ্জিরায় দুটো দবদবে সাদা খরগোশের বাচ্চা। কিযে সুন্দর!!
আমি হাতে নিলাম।
– কি সফট সফট!!!
– তোর পছন্দ হয়েছে?
– হয়েছে মানে! খুব হয়েছে।
– নিয়ে যা।
– আমার জন্য???
– দেখে ভালো লাগলো তাই নিয়ে আসলাম। তোর ভালো লেগেছে যখন তুই নিয়ে যা।
আমার এখানে দেখাশোনা করা প্রব্লেম। আম্মু এসব করতে পারবে না। আর আমার সময় কই?
আমি খরগোশ গুলোকে নিয়ে বাগানে ছেড়ে দিলাম। সারা বাগানে ছুটছে, লুকাচ্ছে!!
কচি কচি ঘাস খাচ্ছে! সত্যিই অনেক ভালো লাগছে আমার।
রেহান ভাই জানালা দিয়ে দেখছেন।

রাতের খাবার টেবিলে আব্বু আম্মুকে বললেন – একটা ভালো মেয়ের সন্ধান পেয়েছি।
– তাই নাকি?
– আব্বু, আরিফ তো এখনো বাচ্চা! ওকে এখনি বিয়ে দিয়ে দিবে?বাল্যবিবাহ হয়ে যাবে না??
আরিফ আমার দিকে তাকিয়ে কটমট করছে। আমিও চোখে টিপ্পনী কাটলাম।
– গাধী! আমার জন্য না,রেহান ভাইয়ের জন্য।
দিয়া হাসতে হাসতে বললো – তুই তো মনে মনে আফসোস করছিস! রেহান ভাইয়ার যায়গা কেন তোর হলো না!!
দিয়া, আরিফ দুজনে জমজ। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ডে ইয়ারে পড়ে।
– একটু থামবি তোরা?? সারাক্ষণ বাসা মাথায় করে রাখে।শান্তিতে কথা শুনবো তার উপায় নেই।
আম্মু আমাদের ধমকে থামিয়ে দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলেন ।
– মেয়ে কি করে? বিস্তারিত বলো তো।
– মেয়ে একটা কলেজে চাকরি করে। ভালো ফ্যামিলি। রেনু আপা আগামীকালই মেয়ে দেখতে যেতে চাইছেন।
– তাহলে ভালোই হয়েছে। যাক বাবা।এবার যদি রেহান বিয়ে টা করতে রাজি হয়।
এসব আলোচনা শুনতে আমার ভালো লাগছে না। আমি উঠে পড়লাম।
– কিরে উঠে পড়লি কেন? খাওয়া শেষ কর।
– আমার খাওয়া শেষ আম্মু।
– আমারও শেষ।
বলে দিয়াও উঠে পড়লো।
আমি রুমে চলে আসি।রেহান ভাই এবার সত্যিই বিয়ে করে ফেলবেন??
করুক। আমার তাতে কি?

পরদিন বিকালে আব্বু-আম্মুসহ সবাই মেয়ে দেখতে চলে গেলেন।আমি যাইনি। আম্মু,ফুপি অনেক জোর করেছেন, কিন্তু সকাল থেকে আমার খুব মাথা ধরে আছে। তাই আর যেতে পারিনি। বাসায় থেকে গেলাম।
সারাদিন শুয়ে থেকে আর ভালো লাগছে না। একটু বাগানে গিয়ে খরগোশ দুটোকে ছেড়ে দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে আছি। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠি। তাকিয়ে দেখি রেহান ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
– কিরে, কখন থেকে ডাকছি।শুনতে পাস না?
ওহহহ..এটা লাগিয়ে বসে আছেন উনি!! আমার কান থেকে হেডফোন টেনে খুলে ফেললেন।
-আপনি এখানে কেন? যাননি?
– কোথায়?
-অই যে তারা সবাই গেলো মেয়ে দেখতে….
– নাহ।তুই যাসনি কেন?
বসতে বসতে বললেন।
– আমার মাথা ধরে ছিলো, তাই।
– হুম।
কিছু সময় চুপচাপ বসে দুজনেই।
– তোর পড়াশোনা কেমন চলছে রে?
– ভালো।
– পরীক্ষার বেশি দেরি নেই।ভালো করে পড়াশোনা কর।আর আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
– হুম।
– হুম কি?
– ঝেড়ে ফেলবো।
– গুড।
রেহান ভাই আর কিছু না বলে কিছু সময় চুপচাপ বসে থেকে চলে যাচ্ছেন।
কিছু দূর যাবার পর থেমে গেলেন।
আমি একটা খরগোশ কোলে নিয়ে ঘাস খাওয়াচ্ছি।
– হিয়া।
রেহান ভাইয়ের ডাক শুনে সামনে তাকালাম।
– খরগোশ দুটো তোর জন্যই এনেছিলাম।
বলেই বাসার ভেতরে চলে গেলেন।

চলবে…………….

# প্রেমেতোর-আমার বয়সের ডিফারেন্স জানিস?বাচ্চা একটা মেয়ে!
-আমি বাচ্চা মেয়ে!! আমি??!!
২১ পেরিয়ে ২২ এ পা দিয়েছি।আমাকে বাচ্চা মনে হয় আপনার?
– বাচ্চা নয়তো কি? মাত্র ২২! আমার এইজ সম্পর্কে ধারণা আছে তোর?
-‘ আজিব তো! আমি কি করলাম!!আর আপনি এইজের ডিফারেন্স দেখাচ্ছেন কেন বলুন তো?’
কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম। আমাকে উনি বাচ্চা মনে করেন! আমাকে!?? হুহ।
রেহান ভাই আর কিছু না বলে আবার বইয়ে মুখ গুজলো।
এই লোকটা সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুজিয়ে থাকে। আর ইদানীং একটু বেশিই থাকছে।
আমি যতই কথা বলার চেষ্টা করছি উনি হু- হা- ভালো! এই বলেই খালাস!
ভাব দেখলে গা জ্বলে যায়।
সেই কখন থেকে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে আছি।একবার বসতেও বলেনি।
আমি বকবক করেই যাচ্ছি অথচ উনি বই পড়ছেন!!
লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ? কোনটা ভালো,জিজ্ঞেস করতেই এত্তো গুলো কথা শুনালেন? এইজ ডিফারেন্স দেখালেন। কি এমন বলেছি আমি?
– যেন উনাকে বিয়ে করতে বলেছি! হুহ। আমার ঠেকা পড়েছে আধবুড়ো লোককে বিয়ে করতে! ” বিড়বিড় করে বললাম।
– উহহফ! এই, তুই একটু চুপ করে থাকতে জানিস না? সারাক্ষণ এতো কথা বলিস কেন শুনি?’
রেহান ভাই বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বইটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– ঠিক আছে আর কথা বলবো না।আর আসবোও না আপনার কাছে। কফি দিতে এসেছিলাম।এখন থেকে নিজের কফি নিজে করে নিবেন।
কথাগুলো বলে হনহন করে চলে আসলাম।
আর যাবো না।জীবনেও যাবো না এই লোকটার কাছে।

রাগে,দুঃখে চোখে পানি চলে এসেছে। এই লোকটা এমন কেন? উনি কি……
আমিও ঠিক করে ফেলেছি। আর যাবোনা উনার কাছে।
পরদিন ভার্সিটিতেও যাইনি। রোজ সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে বাগানে যেতাম। সেটাও যাইনি।
রাতে ফুপি এসে বললো – কিরে হিয়া…. আসিসনি কেন আজ?তোর শরীর খারাপ?
– না ফুপি।বের হতে ইচ্ছে করেনি।সারাদিন রুমেই ছিলাম।
– অহহ.. তাই বল।আমি ভাবলাম শরীর খারাপ করলো কিনা।সারাদিন আজ অবসর পাইনি আসার জন্য।
পরদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে ঘুমাচ্ছিলাম।
বিকেলবেলা ফোনে ঘুম ভাঙলো।
– হ্যালো।
– এখনো পড়ে ঘুমুচ্ছিস?
– কেন? ঘুমাতেও মানা আছে নাকি?
– হা আছে বৈকি!! চট করে চলে আস।তাড়াতাড়ি আসবি।
বলেই রেহান ভাই ফোন রেখে দেন।

রেহান ভাই আমার কাজিন।আমাদের বাড়ি একদম পাশাপাশি । বিশাল এরিয়ায় পাশাপাশি দুটো বাড়ি। উনি একজন ভার্সিটির টিচার।তবে আমি উনার ছাত্রী নই।
মিজান আঙ্কেলের সাথে আমার একমাত্র ফুপির বিয়ে হয়।আব্বু আর মিজান আঙ্কেল দুজনেই এক সাথে আর্মিতে ছিলেন। দুজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। মিজান আঙ্কেলের তেমন কেউই ছিলো না।দাদু চেয়েছিলেন উনার দুটো ছেলে-মেয়ে উনার কাছেই থাকুক। উনার সব কিছু আব্বু আর ফুপির নামে লিখে দেন।
মিজান আঙ্কেল প্রথমে আপত্তি করলেও দাদুর অনুরোধে রাজি হন।তারপর দাদু ফুপির নামে যে অংশ লিখে দিয়েছেন সেখানেই একটা বাড়ি করে দিতে চান।
কিন্তু মিজান আঙ্কেল সেটা করতে দেননি। নিজে বাড়ি করেছেন।
মিজান আঙ্কেল অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।উনাদের দুটি সন্তান। রেহান ভাই আর মাহি আপু। রেহান ভাই দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন। আঙ্কেল যখন মারা যান তখন রেহান ভাই এসেছিলেন। মাস দুয়েক দেশে থেকে উনি আবার চলে গেছেন। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম।
এর মধ্যে বেশ কিছু বছর পেরিয়ে গেছে। মাহি আপু যখন মেডিকেলে চান্স পেয়ে চট্টগ্রাম চলে গেলো ফুপি তখন একা হয়ে পড়েন; যদিও আমরা ছিলাম। আমি ফুপির কাছেই বেশি থাকতাম। আর সারাদিন সবাই এবাসা- ওবাসা আসা-যাওয়া হতো।দুটো বাড়ি যে আলাদা কখনো মনেই হয়নি। কিন্তু একটা সময় ফুপি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েন।মেয়ের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ে,আসার খুব একটা সুযোগ পায় না।আর ছেলেটা সেই যে বিদেশে পড়ে আছে!!
রেহান ভাই পড়াশোনা শেষ করে সেখানে একটা ভার্সিটিতে জয়েন করে। উনার না ফেরার চিন্তা ছিলো তাই ফুপিকে নিয়ে যাবার অনেক চেষ্টা করেছে।কিন্তু ফুপি কিছুতেই রাজি হয়নি। সেই চিন্তায় চিন্তায় ফুপির এই অবস্থা। যার জন্য বাধ্য হয়েই রেহান ভাই দেশে ফিরে আসেন।
তারপর আর ফিরে যাননি।প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে।দেশে ফিরে উনি একটা ভার্সিটিতে জয়েন করেছেন। রেহান ভাইয়ের বয়স ৩৪।উনার ধারণা আমি উনার হাঁটুর বয়সী!!!

রেহান ভাইয়ের ফোন পেয়ে যাবো কি যাবো না, ভাবতে ভাবতে চলেই গেলাম। দেখা যাক কেন ডেকেছেন!!
কলিং বেল চাপার সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো।
– ভেতরে আয়।
ভেতরে ঢুকতেই উনি আমাকে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন।
– বস।
আমাকে বসিয়ে উনি ভেতরে চলে গেছেন।কিছুক্ষন পরেই ফিরে আসেন।
হাতে দুটো কফির মগ।একটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। হাতে নিতে নিতে বললাম-
– বাহবা! সুর্য আজ কোন দিকে উঠলো??
– কেন বল তো??
– না, এমনি। আপনি কফি করে খাওয়াচ্ছেন।তাই বললাম।
– কেন আমি কি কফি করে খাওয়াতে পারিনা? প্রতিদিন তো তুই কফি করে আমাকে খাওয়াস।আজ না হয় আমি করলাম।’
বলেই একটু মুচকি হাসলো।

ইসসস! এই লোকটা এভাবে কেন হাসে? এই হাসিটা….
ধুর! আমার কি?
– সবই বুঝলাম। কিন্তু ঘটা করে ডেকে আনা হয়েছে কেন? কফির জন্য?
– শুধু কফির জন্য বললে ভুল হবে।
– শুদ্ধটা কি শুনি?
– দাঁড়া কফিটা শেষ করে নিই।
কফি শেষ করে উনি আবার রুমে গেলেন।
– দেখ কি এনেছি।
উনার হাতের দিকে তাকিয়ে আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।
– ইসস কত্ত সুন্দর!!
রেহান ভাইয়ের হাতে একটা পিঞ্জিরায় দুটো দবদবে সাদা খরগোশের বাচ্চা। কিযে সুন্দর!!
আমি হাতে নিলাম।
– কি সফট সফট!!!
– তোর পছন্দ হয়েছে?
– হয়েছে মানে! খুব হয়েছে।
– নিয়ে যা।
– আমার জন্য???
– দেখে ভালো লাগলো তাই নিয়ে আসলাম। তোর ভালো লেগেছে যখন তুই নিয়ে যা।
আমার এখানে দেখাশোনা করা প্রব্লেম। আম্মু এসব করতে পারবে না। আর আমার সময় কই?
আমি খরগোশ গুলোকে নিয়ে বাগানে ছেড়ে দিলাম। সারা বাগানে ছুটছে, লুকাচ্ছে!!
কচি কচি ঘাস খাচ্ছে! সত্যিই অনেক ভালো লাগছে আমার।
রেহান ভাই জানালা দিয়ে দেখছেন।

রাতের খাবার টেবিলে আব্বু আম্মুকে বললেন – একটা ভালো মেয়ের সন্ধান পেয়েছি।
– তাই নাকি?
– আব্বু, আরিফ তো এখনো বাচ্চা! ওকে এখনি বিয়ে দিয়ে দিবে?বাল্যবিবাহ হয়ে যাবে না??
আরিফ আমার দিকে তাকিয়ে কটমট করছে। আমিও চোখে টিপ্পনী কাটলাম।
– গাধী! আমার জন্য না,রেহান ভাইয়ের জন্য।
দিয়া হাসতে হাসতে বললো – তুই তো মনে মনে আফসোস করছিস! রেহান ভাইয়ার যায়গা কেন তোর হলো না!!
দিয়া, আরিফ দুজনে জমজ। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ডে ইয়ারে পড়ে।
– একটু থামবি তোরা?? সারাক্ষণ বাসা মাথায় করে রাখে।শান্তিতে কথা শুনবো তার উপায় নেই।
আম্মু আমাদের ধমকে থামিয়ে দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলেন ।
– মেয়ে কি করে? বিস্তারিত বলো তো।
– মেয়ে একটা কলেজে চাকরি করে। ভালো ফ্যামিলি। রেনু আপা আগামীকালই মেয়ে দেখতে যেতে চাইছেন।
– তাহলে ভালোই হয়েছে। যাক বাবা।এবার যদি রেহান বিয়ে টা করতে রাজি হয়।
এসব আলোচনা শুনতে আমার ভালো লাগছে না। আমি উঠে পড়লাম।
– কিরে উঠে পড়লি কেন? খাওয়া শেষ কর।
– আমার খাওয়া শেষ আম্মু।
– আমারও শেষ।
বলে দিয়াও উঠে পড়লো।
আমি রুমে চলে আসি।রেহান ভাই এবার সত্যিই বিয়ে করে ফেলবেন??
করুক। আমার তাতে কি?

পরদিন বিকালে আব্বু-আম্মুসহ সবাই মেয়ে দেখতে চলে গেলেন।আমি যাইনি। আম্মু,ফুপি অনেক জোর করেছেন, কিন্তু সকাল থেকে আমার খুব মাথা ধরে আছে। তাই আর যেতে পারিনি। বাসায় থেকে গেলাম।
সারাদিন শুয়ে থেকে আর ভালো লাগছে না। একটু বাগানে গিয়ে খরগোশ দুটোকে ছেড়ে দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে আছি। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠি। তাকিয়ে দেখি রেহান ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
– কিরে, কখন থেকে ডাকছি।শুনতে পাস না?
ওহহহ..এটা লাগিয়ে বসে আছেন উনি!! আমার কান থেকে হেডফোন টেনে খুলে ফেললেন।
-আপনি এখানে কেন? যাননি?
– কোথায়?
-অই যে তারা সবাই গেলো মেয়ে দেখতে….
– নাহ।তুই যাসনি কেন?
বসতে বসতে বললেন।
– আমার মাথা ধরে ছিলো, তাই।
– হুম।
কিছু সময় চুপচাপ বসে দুজনেই।
– তোর পড়াশোনা কেমন চলছে রে?
– ভালো।
– পরীক্ষার বেশি দেরি নেই।ভালো করে পড়াশোনা কর।আর আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
– হুম।
– হুম কি?
– ঝেড়ে ফেলবো।
– গুড।
রেহান ভাই আর কিছু না বলে কিছু সময় চুপচাপ বসে থেকে চলে যাচ্ছেন।
কিছু দূর যাবার পর থেমে গেলেন।
আমি একটা খরগোশ কোলে নিয়ে ঘাস খাওয়াচ্ছি।
– হিয়া।
রেহান ভাইয়ের ডাক শুনে সামনে তাকালাম।
– খরগোশ দুটো তোর জন্যই এনেছিলাম।
বলেই বাসার ভেতরে চলে গেলেন।

চলবে…………….

# প্রেমে পড়া বারণ #
# পর্ব- ১
# Taslima Munni # #
# পর্ব- ১
# Taslima Munni #

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here